১৬ বছর বয়স | পর্ব – ৩৬ (সব প্রশ্নের উত্তর)

21 Min Read

আমি থমকে গেলাম আর স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম।
‘ও কি আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে!’
আমি চোখমুখ শক্ত করে বন্ধ করে নিলাম।
কিন্তু সুইটি আমার একদম সামনে এসে ব্রেক কষে থেমে গেল। আমি একটু সময় নিয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।
গেটের দারোয়ান দৌড়ে আমার কাছে এগিয়ে আসলো। সাথে আশেপাশের কয়েকজনও এগিয়ে আসল।
আমি চোখ মুখ শক্ত করে সুইটির দিকে তাকালাম। সুইটি রেগে বের হয়ে এলো গাড়ি থেকে।
কয়েকজন বলে উঠল, দেখে চালাতে পারেন না? মানুষ মেরে ফেলবেন নাকি!
দারোয়ান আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল, আপনি ঠিক আছেন ম্যাডাম!
আমি সুইটির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, হ্যা, ঠিক আছি। ধন্যবাদ।
সবাই একে একে সরে চলে গেল।
সুইটি রেগে বলে উঠল, ভেবোনা আজ তোমাকে মারি নি বলে অন্য কখনো মারবো না।
আমি উপহাসের হাসি দিয়ে বললাম, আমাকে মারলেও কি আদৌ শাওনকে পাবেন! উনি ত এখন আর আপনাকে ভালোবাসেই না।
সুইটি রেগে জ্বলে উঠলো। আর বলল, “ভুলেও ভেবো না শাওনকে তুমি পাবা।”
আমি এবার রেগে বলে উঠলাম, উনি আমার হয়েই গেছেন। আমি জীবনেও ওনাকে ছাড়বো না। তাই এসব ফালতু কথা বলা বন্ধ করেন।
সুইটি ঠোঁটের কোনে একটা হাসি এনে বলল, এত সহজে তুমি কিভাবে শাওনকে পাবা! আমি সেটা হতে দিবই না, never.
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটা দেখতে সুন্দর হলেও মনের দিক থেকে এত জঘন্য!
“শাওন আমার না হলে তোমারও হবেনা। তাই ওর ভালো চাও ত ওর লাইফ থেকে চলে যাও।” শয়তানি এক হাসি দিল সুইটি।
আমার ভিতরটা কেমন করে উঠল। ও কি শাওনের কোনো ক্ষতি করে দেবে!
সুইটি আর দাড়ালো না। গিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। আমি সত্যিই অনেক চিন্তায় পরে গেলাম। আমার জন্য ওনার ক্ষতি হয়ে গেলে!
আমি আবার ঘরে এসে ঢুকলাম। সত্যিই অনেক ভয় লাগছে। আমি ওনার থেকে দূরে যেতেই পারবো না, আর আমার জন্য ওনার ক্ষতি হলে আমি সহ্যই করতে পারব না। এখন কি করব আমি?
আমি সোফার উপর বসে স্থির দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে রইলাম।
সন্ধ্যার সময় দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। সাথে সাথে একটা হাসি মুখে চলে এল। আমি শাওনের রুমেই ছিলাম। জলদি রুম থেকে বের হয়ে এলাম। আমি বেডরুমের দরজা পর্যন্ত আসতে না আসতেই শাওন আমার দুই বাহু ধরে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলল, কোথায় লেগেছে তোমার!
বলেই আমার দিকে ভাল মত দেখতে লাগল। উনি রীতিমতো হাপাচ্ছেন। আর অনেক টেনশনেও পরে গেছেন আমার জন্য হয়ত।
আমি ওনার দিকে ম্লান চোখে তাকিয়ে রইলাম। আর চিন্তা করতে লাগলাম যে সুইটি কি সত্যিই ওনার ক্ষতি করে দেবে?
উনি ফট করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বেশ শক্ত করেই ধরলেন। ওনার নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে পরতে লাগলো। বুঝতে পারলাম যে উনি অনেক ঘাবড়ে গেছেন। অনেকক্ষণ ওভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখলেন। আমি হালকা হেসে ওনার পিঠে হাত দিয়ে বললাম, ঠিক আছি আমি। ছাড়ুন এখন।
শাওন আমাকে ছেড়ে আমার দুই বাহু ধরে টেনে নিজের কাছে এনে রেগে বলে উঠল, বের হতে গিয়েছো কেনো? কি লাগবে আমাকে বললেই ত হত?
আমি ওনাকে হাসানোর জন্য ঠোঁট উলটে বললাম, “আপনাকে লাগতো এজন্য বের হয়েছিলাম।”
কিন্তু কোনো কাজ হলো না। উনি রেগে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন।
আমি হা হয়ে বলে উঠলাম, “বাহ, এখন আমার বাহিরে যাওয়া আপনি আবার বন্ধ করে দিতে চান? খারাপ আপনি।”
“আমি খারাপ হই আর না হই তোমার বের হওয়া বন্ধ আর এটাই ফাইনাল।” রেগে বলল শাওন।
আমি হতবুদ্ধি হয়ে থেকে গেলাম।
শাওন আবার আমাকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।
“সত্যিই লাগে নি, রাইট?” শাওন বলল।
আমার সুইটির বলা কথাগুলো মনে পরে গেল। আর আবার ভয় হতে লাগল।
“আমার লাগলেও সমস্যা নেই শুধু যেন আপনার কখনো কিছু না হয়।” আমি কেদে দিলাম।
“হোয়াট! আমার কি হবে! আর তুমি কাদছ কিসের জন্য?” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি শাওনকে জড়িয়ে ধরলাম আর ভয়ে চুপসে গেলাম।
“কিছু হয়েছে! এমন কেনো করছ তুমি?” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
“আপনি কিভাবে জানলেন যে আমার এক্সিডেন্ট হতে যাচ্ছিলো?” আমি বললাম।
“গার্ডস বলল। সুইটি ছিল তাই না?” শক্ত গলায় বলল শাওন।
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
“কি কি বলেছে তোমাকে ও!” শাওন বলল।
আমি সাথে সাথে মুখ তুলে শাওনের দিকে তাকালাম।
“বলো!” শাওন ভ্রুকুচকে বলল।
“আপনার কোনো ক্ষতি করবে না ত ও, তাইনা?” আমি ছলছলে চোখে তাকিয়ে ভীত গলায় বললাম।
শাওন গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল, “না, আমি সবসময় তোমার কাছেই থাকবো।”
শাওন আমার চোখের জল মুছে দিয়ে কপালে গভীর ভাবে কিস করল।
আমি আবার শাওনকে জড়িয়ে ধরলাম।
অনেক ক্ষণ ওভাবেই রইলাম।
“বাই দ্যা ওয়ে, তোমার ল্যাগেজ কই?” শাওন প্রশ্ন করলো।
আমি ওনাকে ছেড়ে ওনার দিকে তাকালাম। তারপর ঠোঁট উলটে বললাম, “ভুলে নিয়ে আসি নি।”
“এখন?” শাওন ভ্রুকুচকে বলল।


নিরুপায় হয়ে শাওনের একটা শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে আমাকে ফ্রেস হয়ে ঢুকতে হলো। কিন্তু এখন হয়ে গেল আরেক ঝামেলা। পিরিয়ড শুরু হয়ে গেছে। কি করব এখন! নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে এখন।
আমি শার্টটা পরে বাথরুমের দরজা একটু খুলে উঁকি দিলাম। উনি ফোনে কিছু করছিলেন। আমি দরজার বাহিরে হাত নিয়ে দরজার টোকা দিলাম।
শাওন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। আমার ত বলতেও লজ্জা লাগছে। আমি চোখ সরিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকালাম।
শাওন প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বলল, কি?
“আ…আমার…” আমি অনেক দ্বিধায় পরে গেলাম।
“হ্যা, তোমার কি?” শাওন ভ্রুকুচকে বলল।
আমি চোখ মুখ বন্ধ করে বলে উঠলাম, “ওইটা হয়েছে।”
“মানে! ওইটা কোনটা?” শাওন না বুঝতে পেরে বলল।
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
“পিরিয়ড?” শাওন এবার বুঝতে পেরে বলে উঠল।
আমি মাথা নিচু করে মাথা নাড়লাম।
“গাধা, ত এত লজ্জা পাচ্ছ কিসের জন্য?” শাওন গম্ভীর গলায় বলে উঠল।
আমি মাথা নিচু করেই রইলাম।
“আমি আনছি থামো।” বলল শাওন।
আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম, সাথে প্লিজ আন্ডারওয়্যারও নিয়ে আসবেন।
বলেই সজোরে দরজা আটকে দিলাম। আর লজ্জায় দুইহাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলাম। এখন সত্যিই মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
বিশ পঁচিশ মিনিটের মাথায় উনি বাথরুমের দরজায় নক করলেন। আমি অল্প দরজা খুলে শুধু একটু উঁকি দিলাম।
উনি সিরিয়াস হয়ে তাকিয়ে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলেন।
আমি ব্যাগটা জলদি করে নিয়েই দরজা বন্ধ করে দিলাম।

এখন ত বাথরুম থেকে বের হতে লজ্জা লাগছে। আমি অনেক দ্বিধার সাথে দরজা খুলে বের হলাম। শাওন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি বুঝতে পেরেও ওর চোখের দিকে তাকালাম না।
আগে শুধু ওনার শার্ট পরেছি। কিন্তু আজ শার্টের সাথে ট্রাউজারও পরেছি। একদিকে শার্টের হাতা লম্বা অন্যদিকে ট্রাউজার এর পা লম্বা।
শাওন আমার কাছে এগিয়ে আসতেই আমি একটু পিছিয়ে গেলাম। কিন্তু উনি আমার হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে এসে কোলে তুলে নিলেন। আমি হকচকিয়ে গেলাম আর ওনার দিকে তাকালাম।
উনি আমাকে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে দিলেন। তারপর সিরিয়াস হয়ে আমার পাশে বসে আমার শার্টের হাতা গুটিয়ে দিতে লাগলেন।
আমি ওনার কাজ দেখতে লাগলাম আর ফাকে ফাকে ওনার দিকে তাকালাম। হাতা গুটিয়ে উনি উঠে পায়ের কাছে গিয়ে বসলেন আর ট্রাউজারে হাত দিলেন।
আমি পা সরিয়ে নেওয়ার আগেই উনি হাত দিয়ে ধরে নিলেন। আমি এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগলাম।
উনি ট্রাউজারও গুটিয়ে ঠিক করে দিলেন। তারপর আমার দিকে তাকালেন। আমি চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। হার্টও জোরে জোরে বিট করছে।
“আমি ডিনার রেডি করে নিয়ে আসছি।” শাওন আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল।
উনি উঠে চলে গেলেন।
যদিও আমি নিজেই ডাইনিং এ গিয়ে খেতে পারব কিন্তু তাও ওনাকে বাধা দিলাম না। কারন ওনার এসব কাজ গুলোকে অনেক ভালো লাগছে।
শাওন এক প্লেট খাবার নিয়ে রুমে চলে আসলো। তারপর আমার পাশে বসল।
আমি প্লেটের দিকে তাকালাম। ডিমভাজা দিয়ে ভাত। দেখেই খুশি হয়ে গেলাম। মুখে একটা হাসিও চলে এলো।
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এত খুশি!
আমি হাসিমুখে মাথা নাড়লাম তারপর ওনার হাত থেকে প্লেটটা নিলাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন।
আমি ভাত মাখিয়ে ওনার দিকে এক গাল ভাত এগিয়ে দিলাম। উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি ভ্রুকুচকে নেওয়ার জন্য ইশারা করলাম।
শাওন বলল, “লাগবে না। তুমি…”
আমি এক গাল ভাত ওনার মুখে দিয়ে দিলাম আর ওনার কথাও বন্ধ হয়ে গেল।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো। আমি হেসে দিলাম।
শাওন বলল, “বেশি না হেসে, এখন খাও।”
“আর আপনি?” আমি প্রশ্ন করলাম।
শাওন উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল, টেবিলে রাখা আছে।
“আমিও টেবিলে বসে খাবো আপনার সাথে।” আমি বলে উঠলাম।
শাওন আমার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “কেনো! এত কাছে আছি তাও মন ভরছে না?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম। আর এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম, আমি ত…।
শাওন ঝুঁকে এসে আমার গালে কিস করলো। আমি চোখ বড়সড় করে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আমার হার্ট আবার ঢোল পিটছে।

খাওয়া শেষে আমি চুপচাপ বিছানায় বসে রইলাম। শাওন একটু পরে এসেই রুমে ঢুকল। আমি এদিকে ওদিকে তাকিয়ে ওনাকে বললাম, “আপনি কোথায় ঘুমাবেন?”
শাওন শার্টের হাতার ভাজ খুলতে খুলতে বলল, “আজ থেকে আমরা একসাথে ঘুমাবো।”
আমি চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম। উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, “কি?”
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম।
আজ থেকে তারমানে উনি সবসময় আমার সাথে ঘুমাবেন! আমার মুখে একটা হাসি চলে এলো।
“হাসছো কেন?” শাওন ভ্রু উঁচু করে বলল।
আমি সাথে সাথে মুখ থেকে হাসি সরিয়ে ফেললাম আর বললাম, ক..কই না ত!
শাওন মুচকি হাসি দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে চলে গেল।
আমি বসে থেকেই অপেক্ষা করতে লাগলাম। খানিক বাদেই উনি বের হয়ে এলেন। নীল টি শার্টে ওনাকে অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে। আমি ওনার দিকে তাকিয়েই রইলাম। উনি আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, “কি?”
আমি চমকে গিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম আর বললাম, কিছু না।
শাওন এগিয়ে এসে আমার গায়ে চাদর টেনে দিলো আর বলল, “এখনো বসে আছ কেন? শুয়ে পরো।
আমার কিছু কাজ আছে আমি ড্রয়িং রুমে যাচ্ছি।”
বলেই শাওন চলে যেতে লাগল কিন্তু আমি ওনার হাত ধরে নিলাম।
শাওন ঘুরে তাকালো।
“আমার অনেক গুলো প্রশ্ন আছে আর আজ আপনাকে উত্তর দিতেই হবে।” আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম।
“কি প্রশ্ন?” শাওন বলল।
আমি আমার পাশের বালিশটা হেলান দেওয়ার জন্য পাতিয়ে দিলাম। তারপর হাত দিয়ে দেখিয়ে বললাম, “আপনি যা কাজ আছে এখানে বসে করবেন আর উওর দেবেন।”
শাওন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি ইশারায় বসতে বললাম।
উনি নিজের ল্যাপটপ আর ফাইল নিয়ে আমার পাশে এসে বালিশে হেলান দিয়ে বসলেন।
আর ল্যাপটপ চালু করতে করতে বললেন, বলো কি প্রশ্ন।
আমি বললাম, “আমি আপনার পেইন্টিং রুমে আজ গিয়েছিলাম।”
শাওন ল্যাপটপের ক্রিনে মনোযোগ আবদ্ধ রেখে বলল, “এখন থেকে তুমি সব রুমেই যেতে পারো, All yours.”
আমি ভ্রুকুচকে বললাম, এজন্য বলিনি। আমি আজ দেখেছি। আপনি যে ছবিগুলো এঁকেছেন সেগুলো।
শাওন আমার দিকে না তাকিয়ে নিজের কাজ করতে করতে বলল, হ্যা, ভাল করেছো।
আমি এবার রেগে ওনার এক বাহু ধরে টান দিলাম। উনি এবার আমার দিকে তাকালেন।
আমি রেগে বলতে লাগলাম, “এত ল্যাপটপে কি! আমার দিকে তাকিয়ে উওর দিতে পারেন না?”
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে নিজের ল্যাপটপের ক্রিন নামিয়ে ল্যাপটপ কোল থেকে সরিয়ে নিলো। আমি ভ্রুকুচকে তাকালাম।
উনি এবার আমার হাত ধরে টেনে আমাকে ওনার কাছে নিয়ে আসলেন। আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে বললাম, কি… কি করতে চাচ্ছেন আপনি?
শাওন গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল, তুমিই ত বলেছ তোমার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে।
আমি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম, তাই বলে এত কাছেও আসতে বলি নি।
শাওন কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি একটা ঢোক গিলে বললাম, “আ… আপনি যেভাবে ছিলেন ওভাবেই থাকুন। আ.. আমার দিকে না তাকালেও হবে। ছাড়ুন।”
শাওন আমার হাত ছেড়ে দিল। আমি সরে নিজের জায়গায় এসে বসলাম।
উনি আবার ল্যাপটপ খুললেন।
আমার হার্ট এদিকে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।
উনি কাজ করতে করতে বললেন,”কি হলো,বলো!”
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে থেমে থেমে বলতে শুরু করলাম, “আপনি… কবে থেকে… আমাকে…?”
“জানিনা।” শাওন ল্যাপটপের ক্রিনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠল।
আমি ওনার দিকে তাকালাম।
“নেক্সট?” শাওন সিরিয়াস হয়ে ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বলল।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, পিশামনি আমাকে যখন নিয়ে গেল তখন আপনি শুধুমাত্র স্নোবেলকে দিতেই এসেছিলেন?
“আমি মিস করছিলাম তোমাকে তাই গিয়েছিলাম।” শাওন এবারো আমার দিকে তাকালো না।
উনি এমন সোজাসাপটা উত্তর দিচ্ছেন যেন আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করছি “আপনার নাম কি! আপনার বাবার নাম কি! মায়ের নাম কি!”
তবে শুনে অনেক ভাল লাগছে। কারন আজ উনি সব সত্যিটা বলছেন। যদিও আমি জানি উনি আমার জন্য গিয়েছিলেন তাও ওনার মুখ থেকে শুনতে পেয়ে অনেক ভাল লাগলো।
“নেক্সট?” শাওন বলল।
এবার আমি যে প্রশ্নটা করতে চাই সেটা আগে করতে চেয়েও করতে পারিনি। কিন্তু আজ করেই ফেললাম।
“মিশুর ওই অবস্থা….”
শাওন এবার আমার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠল, “হ্যা আমি করেছি। ওর সাহস কি করে হয় তোমাকে টাচ করার!”
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি রেগে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে আবার ল্যাপটপে মনোযোগ দিলেন আর বললেন,”নেক্সট?”
আমি এবার শক্ত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সুইটির সাথে হোটেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন কেন?
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো আর বলল, তুমি কিভাবে…
আমি শাওনকে থামিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম, “নিজের চোখে দেখেছি আমি। সবটা দেখেছি, কিভাবে হাত ধরে কাদছিল আর কাধে মাথা দিয়ে…”
এটুকু বলেই আমার রাগে গা জ্বলে যেতে লাগল।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, এজন্য বলি এত চুপসে গেছো কেনো হঠাৎ, কারন তুমি ত চুপচাপ থাকার মতই না।
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম,”আমাকে বলতে থাকেন অথচ নিজে গিয়ে ওই সুইটির সাথে…”
এটুকু বলেই আমি মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
“You should have ased me then. আর ওই হোটেলে মিটিং ছিল, সুমনাও ছিল। সিনক্রিয়েট করছিল সুইটি তাই আমি আগে বের হয়ে এসেছিলাম।” শাওন সিরিয়াস চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি আড়চোখে তাকিয়ে বললাম,”তাই বলে আপনি ওকে কাধে মাথা রাখতে দেবেন?”
“দিলে কি সমস্যা?” শাওন বলল।
আমি রেগে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, কি বললেন?
ওনার দিকে তাকিয়েই বুঝলাম যে উনি মজা নিচ্ছেন আমার সাথে।
আমি বিরক্তির সাথে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন আমার হাত ধরে টেনে ওর কাছে নিয়ে আসলো আর বলল, Are you jealous?
আমি চোখ বড়সড় করে বললাম, আমি কেন jealous হব!
“তাহলে ত সমস্যা হওয়ার কথা না।” শাওন মুচকি হেসে বলল।
আমি রেগে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”হ্যা যান ওর সাথে গিয়ে থাকুন আমার কাছে কেন এসেছেন?”
বলেই আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু শাওন আমার হাত ধরেই রইল।
“ছাড়ুন কি করছেন!” আমি ক্ষোভের সাথে তাকিয়ে বললাম।
উনি আমাকে টেনে কাছে নিয়ে এসে সিরিয়াস হয়ে বললেন,”সুইটির সাথে আমার কিছুই নেই। তাই ওর জন্য insecure ফিল করা বন্ধ করো।”
বলেই উনি আমার কপালে কিস করলেন।
আমি শান্ত হয়ে গেলাম।
উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আবার ল্যাপটপের দিকে তাকালেন আর বললেন, “আরো আছে প্রশ্ন?”
আমি সরে নিজের জায়গায় বসলাম আর বললাম, “হ্যা আছে। আপনি তাহলে সেদিন আমার সাথে ঘুমান নি কেনো? এর আগের দুইদিন ত ঘুমিয়ে ছিলেন। সুইটির সাথে দেখা করে ওদিন অনেক রাতে ফিরেছিলেন আর…”
শাওন আমাকে থামিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে বলল,”ঘুমিয়ে ছিলাম ত! বাট তোমার আগেই উঠেছিলাম। আর রাতে দেরি হয়েছিল কারন অফিসিয়াল প্রজেক্টের কাজ ছিল।”
শুনে আমি হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম।
“তোমার সাথে ঘুমালে বলো ঘুমাই কেনো, আবার না ঘুমালেও সমস্যা?” শাওন কপাল কুচকে বলল।
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
“So complicated.” শাওন বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে কথাটা বলে ল্যাপটপের ক্রিনে তাকালো।
তারমানে উনি ঘুমিয়ে ছিলো আমার সাথে? উফ, কত কি চিন্তা করে বসে ছিলাম আমি!
শাওন বলল, নেক্সট?
“আপনি সৌরভকে মেরেছিলেন কেনো?” আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম।
শাওন এবারো রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ”মেরেছি ভালো করেছি। আর তোমার ওকে নিয়ে কিসের মাথা ব্যথা? তার চেয়েও বড় বিষয়, তুমি সেদিন লাফাতে লাফাতে ওর সাথে দেখা করতে চলে গেলা কিভাবে? মানা করেছিলাম না?”
আমি রেগে বলে উঠলাম, লাফাতে লাফাতে মানে? আমি কি যেতে চেয়েছিলাম নাকি! ওনার কিনে দেওয়া তিন হাজারের জুতোর জন্যই ত যেতে হলো।
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, জুতোর জন্য মানে! কে কিনে দিয়েছে?
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। এখনি ত উনি আবার চিল্লাতে শুরু করবে। আমি ভয়ে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
শাওন আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাছে এনে বলল, কি বললা মাত্র? জুতো কিনে দিয়েছে তোমাকে? কবে? কিসের জন্য?
শাওন রেগে গেল।
আমি ভয়ে ওনার চোখের দিকে তাকালাম না।
“কি হলো বলো?” শাওন রাগমিশ্রিত চোখ তাকিয়ে বলল।
এখন ত না বলা অব্দি উনি ছাড়বেনই না।
“বলো।” শাওন আবার বলল।
“সেদিন আপনি আমার গ্রামের বাসা থেকে হঠাৎ কোথায় গায়েব হয়ে গেলেন ওইদিন আমি রাস্তায় হাটতে গিয়েছিলাম তখন ওনার গাড়ির সামনে ভুলে পরে গিয়েছিলাম আর আমার সেন্ডেল ছিড়ে গিয়েছিল। তাই উনি জুতো কিনে দিয়েছিলেন ৩০০০ টাকার। আমার কাছে তখন টাকা ছিল না, তাই উনি বলেছিলেন পরের দেখাতে এক কাপ চায়ের ট্রিট দিলেই হবে। এজন্যই সেদিন…” আমি শাওনের দিকে না তাকিয়েই থেমে থেমে বললাম কথা গুলো।
জানিনা এখন কতটা রাগ করেছেন উনি। তাকাতেও ভয় লাগছে।
শাওন দাতে দাত চিপে বলল,”বললো আর তুমি ওর সাথে জুতো কিনতে চলে গেলা?”
আমি একটা ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি সত্যিই রেগে আছেন।
“কোন জুতো? এখনি বাহিরে ফেলবা আর ওর চেয়ে দামি জুতো আমি তোমাকে কিনে দেবো।” শাওন রাগী চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
“কিহলো?” শাওন ভ্রুকুচকে বলল।
এবার আমি এগিয়ে গিয়ে ওনার কপালে কিস করলাম। উনি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন।
তারপর শাওনের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললাম, “আমারো সৌরভের সাথে কিছু নেই। আর ওনার জন্য আপনি insecure ফিল করবেন না। কারন আমি আপনার ছাড়া অন্য কারো না।”
শাওন এগিয়ে এসে আমার ঠোঁটে কিস করে দিলো। আমি চমকে গেলাম।
তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমিও হাসিমুখে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম, এটা নিয়ে তিনবার।
“মানে?” শাওন বলল।
আমি বললাম, “কিস।”
“এটা নিয়ে seventh, আর তোমাকে এখন থেকে আর গুনতে হবেনা।” শাওন শান্তগলায় বলল।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। সাথে সাথে মুখ তুলে ওনার দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে বললাম, “সাতবার কিভাবে হলো?”
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, সেটা তোমার না জানলেও চলবে।
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম,”আপনি কখন কখন কিস করেছেন আমাকে? আমার অগোচরে? আর কি কি করেছেন আমার সাথে?”
শাওন বলল,”আর কি করেছি মানে?”
“আপনি ত অনেক খারাপ। বলেন কখন করেছেন?” আমি চোখ বড়সড় করে বললাম।
শাওন ল্যাপটপের ক্রিনের দিকে ফিরে তাকালো আর মুচকি হেসে বলল, I am not that decent যতটা তুমি (আর তোমার এই গল্প পাঠকেরা) মনে করো।
আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
“এখন ঘুমাবো আমি। লাইট অফ করো।” বলেই শাওন নিজের ল্যাপটপ বন্ধ করে রেখে বিছানায় শুয়ে পরলো।
আমি হা হয়েই রইলাম।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।