১৬ বছর বয়স | পর্ব – ৩৮ (আবার ফুলসজ্জা)

18 Min Read

শাওন বলল, “দুইদিনের মধ্যে কিভাবে বাচ্চা হবে? আমি ত এখনো কিছুই করি নি?”
আমি ওনাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চলে যেতে লাগলাম কিন্তু উনি আমার হাত ধরে নিলেন।
আমি দ্বিধায় পরে গেলাম আর ওনার দিকে ঘুরলাম। উনি সত্যিই অনেক জ্বালাচ্ছেন আমাকে।
উনি আমাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলেন। এভাবে টেনে আনার কারণে আমি ওনার কাধে এক হাত রাখলাম আর চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম, “ছাড়ুন, কি শুরু করেছেন আপনি?”
উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললেন, রেডি হও, আমরা আজ আবার ফিরে যাচ্ছি।
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, “কেন?”
শাওন আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “তোমার জামাকাপড় না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু স্নোবেল? নাকি ওকে আর লাগবে না?”
“না। অবশ্যই লাগবে।” বলে উঠলাম আমি।
শাওন নিঃশব্দে হেসে আমাকে ছেড়ে দিল আর বলল, রেডি হও।
আমি থ্রিপিস টা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।

বিকালেই আমরা বাসায় ফিরে এলাম। বাসায় এখনো লোক জন অনেক। আমাদের দেখে সবাই খুশিতে আটখানা হয়ে গেল। স্নোবেলও লাফাতে লাগলো। বেচারা অনেক শুকিয়ে গেছে।
পিশামনি আমার দিকে ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে বললেন, “তুই ওর কাছে চলে গিয়ে আমার মান সম্মান কিছু রাখলি??”
সবাই হাসতে লাগল। আমি মাথা নিচু করে নিলাম।
“এখন থেকে মিলা আমার কাছেই থাকবে।” শাওন সিরিয়াস হয়ে সবার সামনে বলল।
ওর কয়েকজন কাজিন সুর টেনে বলে উঠল, “অহো~~”
“আমি উপরে যাচ্ছি।” গম্ভীর গলায় বলেই শাওন আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে উপরে উঠে গেল।
সবাই অনেক খুশি হয়ে দেখছে। আর আমি লজ্জায় মাথা নিচু করেই আছি।
ফ্রেস হয়ে নেমে আমি রান্নাঘরে গেলাম। যদিও এখনো অনেক লজ্জা লাগছে। উনি সবার সামনে এমন না করলেও পারতেন।
আমার শাশুড়ী আমাকে দেখে কিছুই বললেন না। কিন্তু অন্য মেয়ে কাজিনরা আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসতে লাগলো। কি একটা পরিস্থিতিতে পরলাম রে বাবা!
“ফুলসজ্জায় ত ছেলে আমাদের তোমাকে রেখে চলে গেল, না হলো বউ ভাত, না হলো হানিমুন।” একজন বয়স্ক মহিলা বললেন।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে তাকালাম। বিয়েতে হয়ত ছিলেন উনি। কিন্তু আমার ওনার পরিচয় ঠিক মনে নেই।
সবাই চুপচাপ হয়ে গেল। মনে হয় ওনাকে সবাই ভয় পায়।
“ফুলসজ্জার রাতে বরকে ধরে রাখতে পারলা না সারাজীবন কিভাবে সংসার করবা।” বললেন উনি।
আমার এখন কেমন কেমন অসস্তি লাগছে এসব শুনতে।
“সব হবে।” শাওন বলতে বলতে আমার পাশে এসে দাড়ালো।
আমি চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম।
“ফুলসজ্জাও হবে, বউভাতও হবে আর হানিমুনও হবে।” শাওন ওই মহিলার চোখে চোখ রেখে বলল।
ওই মহিলা একটু থতমত খেয়ে গেলেন।
আশেপাশের সবার থমথমে মুখে এখন হালকা হাসি।
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”যেমন আজ হবে ফুলসজ্জা।”
আমি ধীরে ধীরে সরু চোখে ওনার দিকে তাকালাম। উনি কি বলছেন এসব। এখন কিভাবে হবে ফুলসজ্জা? আমি ত এখন…।
নিপা হাতে একটা তালি দিয়ে অন্য কাজিন দের বলল, “ওকে, আমি বউ সাজাবো। তোরা খাট সাজা এখনি।”
নিপার খুশি দেখে মনে হচ্ছে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।
নিপা আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো আর বলতে লাগল,”আসো আসো। শুভো কাজে দেরি করতে নেই।”
আমি অনেক বেশিই অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।
ওরা সত্যি সত্যিই আমাকে সাজাতে লাগলো। লাল শাড়ি পরিয়ে, কত কি গহনা গায়ে গিয়ে দিলো। আজ শাওনের মা স্বাভাবিক ভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও কোনো কথা বলে নি এখনো।
“ও কি খেয়েছে?” শাওনের মা প্রশ্ন করলো নিপাকে।
অর্থাৎ আমি খেয়েছি কিনা জানার জন্য নিপাকে প্রশ্ন করলেন।
নিপা কপালে হাত দিয়ে বলল,”অহো, তাই ত। খায় নি ত! কিন্তু এভাবে ত ওকে শাওন ভাইয়ার সামনে নেওয়া যাবেনা। এখনি দেখে ফেললে সমস্যা।”
কাকিমনি বললেন,”এক কাজ কর এখানেই নিয়ে আয় খাবার।”
“আমি খাব না, বিকালের নাস্তাতেই পেট ভরে আছে।” আমি বলে উঠলাম।
শাওনের আরেক কাজিন দিপা বলে উঠল,”হ্যা, একটু অপেক্ষা করো আজ মনও ভরে যাবে।”
সবাই হেসে দিলো। শাওনের মা শক্ত মুখে বলল, “অনেক হয়েছে। দিন দিন তোদেরও লজ্জাশরম হ্রাস পাচ্ছে।”
ওরা তাও মিটমিট করে হাসতে লাগলো।
নিপা বলে উঠল, “এখন ভাইয়াকে ধরবো। যতক্ষণ না যথেষ্ট টাকা দিচ্ছে বউকে পাবে না।”
“বেশি করে চাস।” কাকিমনি হেসে বলে উঠল।
“তা আর বলতে?!” দিপাসহ সবাই বলে উঠল।
আমাকে রেখে একে একে সবাই চলে গেলো। আজ আর আমাকে কোনো উল্টোপাল্টা কথা কেউ বলল না। যাক ভালো। কিন্তু ঘর অন্ধকার করে রেখে গেল। যদিও মোম জ্বালিয়ে রেখে গেছে অনেক গুলো।
ওরা যাবার কয়েক মিনিটের মধ্যে শাওন রুমে চলে এলো। এত জলদি ছাড়া পেয়ে গেল কিভাবে উনি? এখন ত আমার ভয় লাগছে। যদিও তেমন কিছু এখন হবেনা। তাও আমার ভয় করছে।
শাওন দরজা বন্ধ করে দিলো। আমি ওর দিকে তাকালাম না। আমি দুই হাটু ভাজ করে আলতোভাবে দুই হাতে ধরে যেভাবে বসে ছিলাম সেভাবেই রইলাম। শুধু মাথা নিচু করে ফেললাম।
শাওন আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি একটা ঢোক গিলে নিলাম। ঘোমটা বড় একটা দিয়ে রেখেছিল নিপা কিন্তু সেটা নামিয়ে ফেলেছি ওরা যাবার সাথে সাথে।
শাওন আমার কাছে এসে আমার দুই পাশে ওর দুই হাত রেখে আমার দিকে ঝুকতেই আমি মাথাটা হালকা পিছিয়ে ভীত চোখে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি মুচকি হেসে আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে কাবাড খুললেন। তারপর একটা কালো টিশার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেল।
আমি জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।
এখন যেহেতু উনি ফ্রেস হচ্ছেন আমি ঘুমিয়ে পরলেই ভাল। তাহলে উনি আমাকে জ্বালাতে পারবেন না।
যেই ভাবা সেই কাজ। আমি গায়ে চাদর টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ত পরলাম কিন্তু ঘুম আর আসছে না।
একটু পরেই উনি ফ্রেস হয়ে বের হলেন। আমি উলটো দিকে ঘুরে ছিলাম। কিন্তু তাও নাক মুখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।
চাদরটা কাধ পর্যন্ত না দিয়ে পুরো মাথা অব্দি দিলে ভাল হত। বোকার মত কাজ করে ফেলেছি।
স্থির ভাবে শুয়ে থাকতেও অসস্তি হচ্ছে। গহনাগুলো খুলতে হত! ধুর!
উনি আমার পাশে এসে শুয়ে পরলেন। আমি চোখ খুলে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এখন আমার হার্ট বিট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। শ্বাস নিতেও পারছিনা ঠিক মত।
শাওন এক টানে আমার ব্লাউজের ফিতা খুলে দিল। আমি চমকে কেপে উঠলাম। কিন্তু ওনার দিকে ঘুরলাম না।
“আমি জানি তুমি ঘুমাও নি।” গম্ভীর গলায় বলল শাওন।
আমি হকচকিয়ে গেলাম।
“উঠে বসো।” শাওন বলল।
এখন কি হলো আবার কে জানে! আমি একটা ঢোক গিলে উঠে বসলাম। কিন্তু ওনার দিকে তাকালাম না।
উনি উঠে বসে আমার হাত ধরে আমাকে ওনার দিকে ঘুরালেন।
আমি ওনার দিকে তাকিয়েও চোখ নামিয়ে নিলাম। উনি আমার চুলগুলো এক সাইডে সরিয়ে দিলেন। আমি চমকে গেলাম আর ওনার দিকে তাকালাম। উনি স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে নিজের হাতে আমার গলার হার খুলতে লাগলেন। আমি চোখ বন্ধ করে বিছানার চাদর খামচে ধরলাম।
উনি আমার কানে হাত দেওয়ার সাথে সাথেই আমি ওনার হাত ধরে নিয়ে বললাম, “আ…আমি পারব।”
“ত এত সময় কি করছিলে?” বলল শাওন।
আমি কিছু না বলে অন্যদিকে ঘুরে সব গহনা খুলতে লাগলাম।
খুলে বিছানার বালিশের পাশে সব রাখলাম।
সাথে শাওন আমাকে এক টান দিয়ে কাছে নিয়ে এলো।
আমি চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি আমার কপালে গভীর ভাবে কিস করলেন।
আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি যেন এখন শান্তি পেলাম। আমি ওনার হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি। তারমানে শুধু আমার একার এমন হয় না।
উনি আমাকে অনেক সময় ওভাবেই ধরে রাখলেন।
আমি নিরবতা ভেঙে প্রশ্ন করলাম, “আপনি হঠাৎ করে এইসময় আমাদের ফুলসজ্জা.. ”
এটুকু বলেই আমি চুপ করে গেলাম।
শাওন সিরিয়াস হয়ে বলল, “কারণ সবার সামনে সেই রাতে আমি তোমাকে ফেলে চলে গিয়ে ছিলাম। তাই আবার সবার সামনেই এটা ঠিক করে নেওয়াটা দরকার ছিল। যাতে দ্বিতীয় বার কেউ তোমাকে এসব কথা বলতে না পারে। আমি একটু আগে তোমার বাসাতেও বলে এসেছি যে আজ ফুলসজ্জা আর কাল বউ ভাত।”
আমি অবাক হয়ে মাথা তুলে শাওনের দিকে তাকালাম। তারপর নিঃশব্দে হেসে এগিয়ে গিয়ে ওনার গালে কিস করলাম। উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি পরক্ষণেই লজ্জায় চোখ বন্ধ করে সাথে সাথে ওনাকে আবার জড়িয়ে ধরলাম।
উনি নিঃশব্দে হেসে বললেন,”আগে এত ঝগড়া করতা, এখন এত লজ্জা পাও, এর পরে আর কি কি নতুন দেখব কে জানে!”
আমি মাথা তুলে শাওনের দিকে তাকালাম তারপর চোখ পাকিয়ে বললাম, “আমি একা ঝগড়া করতাম? শুরু কে করত? সারাদিন খেচখেচ করতেন আপনি!”
শাওন কিছু না বলে ম্লান চোখে তাকিয়ে রইল। আমি বুঝলাম যে উনি আগের কথাগুলো চিন্তা করছেন যেসব উনি আমার সাথে করেছেন। কিন্তু আমি ওনাকে ওসব ভেবে কষ্ট পেতে দিতে চাই না।
তাই আমি ওনার গলার দুই পাশের টি শার্টে দুইহাতে ধরে ওনাকে ঝাকিয়ে বলল, ”ওই, কি চিন্তা করেন এত!”
শাওন আমার হাতের দিকে তাকালো। আমি শার্ট ধরেই ভাব নিয়ে তাকালাম আর বললাম,”ছাড়ব না।”
উনি দুষ্টু হাসি দিয়ে আমার গলার কাছে হাত বাড়াতেই আমি লজ্জায় ওনার শার্ট ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলাম।
শাওনও এগিয়ে এসে আমার দুইপাশে দুই হাত রাখল। আমি ভয়ে একটা ঢোক গিলে নিলাম।
উনি গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আমার দিকে ঝুকতে লাগলেন। আমি চোখ নামিয়ে নিয়ে পিছনে ঝুকতে লাগলাম। আর এক পর্যায়ে পুরো শুয়েই পরলাম। আমার হার্টবিট অনেক বেড়ে গেছে।
উনি আমার আরো কাছে আসতেই আমি ভয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলতে লাগলাম, “আ…আপনি…”
শাওন আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “নাম আছে আমার একটা।”
আমি মুখ ঘুরিয়ে অবাক চোখে ওনার দিকে তাকালাম। উনি গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছেন।
“আমার নাম বলো।” শাওন বলল।
আমার মধ্যে কেমন যেন দ্বিধা বোধ কাজ করছ ওনার নাম বলতে। তাও আবার এমন ভাবে শুয়ে! আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
“বলো।” শাওন বলল।
উফ উনি না শুনে ছাড়বেই না। এত জেদ কেন ওনার!
আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম তারপর আস্তে করে বললাম,”শাওন।”
“উহু, চোখ খুলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো।” শাওন বলল।
ওনার এই নতুন নতুন অত্যাচার আমি আর সহ্য করতে পারছি না। কি করব এখন!
“পারব না আমি।” আমি চোখ বন্ধ অবস্থায় নাক মুখ কুচকে না সূচক মাথা নাড়িয়ে বললাম।
“তাহলে আজ সারারাত এভাবেই থাকতে হবে তোমাকে।” শাওন বলল।
আমি হতভম্ব হয়ে চোখ খুলে ওনার দিকে তাকালাম।
এভাবে মানে! ওনার কি মাথা গেছে?
কিছু একটা করা লাগবে। কি করি?
“উফ আমার পেট প্রচুর ব্যথা করছে।” বলেই আমি এক হাত পেটের কাছে নিয়ে নাটক শুরু করে দিলাম।
শাওন সাথে সাথে আমার কাছ থেকে সরে উঠে বসলো আর ব্যস্ত হয়ে আমার পেটে হাত দিল। সাথে সাথে আমি শিউরে উঠলাম আর ওনার হাতের উপর হাত দিয়ে বলে উঠলাম, “কি করছেন আপনি?”
শাওন আমার কথায় কান না দিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলল, “পেইনকিলার ছিল হয়তো, wait.”
বলেই বিছানা থেকে নামতে লাগলেন। কিন্তু আমি ওনার নাম ধরে ডেকে উঠলাম, “শাওন….আমি মজা করছিলাম।”
উনি অবাক চোখে আমার দিকে ঘুরে তাকালেন। আমি হাসিমুখে উঠে বসলাম।
“এই ধরনের মজা করো কিসের জন্য?” শাওন রেগে বলল।
“এত রেগে যান কেনো!” আমি অভিমান করে বললাম।
শাওন কিছু না বলে গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
উনি আবার আমার কাছে চলে আসলেন। আমি এক হাত ওনার কাধে রেখে ওনাকে থামিয়ে দিয়ে চোখ পাকিয়ে বললাম,”কি শুরু করেছেন আপনি! আমি ত নাম ধরে ডেকেছি!”
“আমি অন্য কিছু চাচ্ছি এখন।” শাওন আমার ঠোঁটের দিকে ইশারা করল।
আমি একটা ঢোক গিলে চোখ সরু করে বললাম, “মোটেও না, আমি পারব না।”
শাওন মুচকি হাসি দিয়ে বলল,”তুমি দিলে ত ভাল। না হলে আমি এখনি তিরিশটা আদায় করে নিব। দুপুরের দশ, রাতের বিশ। রিমেম্বার?”
আমি চমকে গেলাম। তিরিশটা মানে? আমাকে মেরে ফেলতে চায় নাকি?
“অসম্ভব, এটা আমি করতে পারব না।” বলেই আমি মাথা নিচু করে ফেললাম।
“তাহলে চিন্তা করে দেখো একটা দিবা নাকি আমি তিরিশটা নেব?” শাওন বলল।
কি করব এখন! পেট ব্যথার নাটক চালিয়ে গেলেই ভাল হত।
“ওকে টাইম আপ। এখন দেখো আমি কি করি।” শাওন ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে বলল।
উনি আমার কাছে চলে আসার সাথে সাথে আমি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে উঠলাম, “বাথরুম যাব।”
“বাহানা বানাচ্ছ বানাও। কিন্তু আজ আমি তোমাকে ছাড়বো না। আবার ত আমার কাছেই আসতে হবে।” বলেই শাওন আমার কাছ থেকে একটু সরে গেল।
আজ কপালে শনি রবি সোম সবই আছে আমার। উনি বাকা হাসির সাথে আমার দিকে তাকিয়ে বাথরুমে যেতে ইশারা করলেন।
গা, হাত, পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার। আমি ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।
মনে হচ্ছে যেন সার্কাস দেখছেন উনি।
সত্যি সত্যিই আমার ফুলসজ্জার সাধ মিটে গেছে। সব ওই উটকো বুড়ির জন্য। বাথরুমের মধ্যেই থাকতে ইচ্ছে করছে এখন। অসভ্য উটকো মহিলা যেমন অসভ্য গরিলাও তেমন।
আমি বাথরুমের মধ্যে পায়চারি করতে লাগলাম। কি করব? একটা দিলে কি উনি আমাকে সত্যিই ছেড়ে দেবে? মনে ত হয়না।
‘আরেকটা দেও।’ বলেও বসতে পারে। আসলে বসতে পারে না, বলে বসবে। বসবেই।
আমি সত্যিই বাথরুমে বিছানা পেতে শুয়ে পরতে চাই।
আমি অনেক সময় নিয়ে বাথরুম থেকে বের হলাম। মোমগুলো সব নিভানো। শুধু একটা জ্বলছে। আবছা আলোয় যা বুঝলাম তা হলো বিছানায় উনি নেই। গেলেন কোথায় উনি? রুমও ত ফাকা। বেলকনিতে?
আমি এগিয়ে গিয়ে বেলকনিতে ঢুকলাম। কিন্তু উনি নেই। উনি কি আমার সাথে মজা করছেন এত রাতে!
আমি বিছানার দিকে এগিয়ে গেলাম।
প্রায় পাঁচ মিনিটের বেশি ক্ষণ ধরে বসে আছি কিন্তু উনি আসছেনই না। এখন আমি আর থাকতে পারছি না।
আমি আর না পেরে বলে উঠলাম, “কোথায় আপনি? যথেষ্ট হয়েছে এবার সামনে আসুন।”
কোনো সারাশব্দ নেই।
উনি কি রুমে আছেন নাকি বের হয়ে গেছেন! আমি সাথে সাথে দরজার দিকে তাকালাম। দরজার হুক খোলা কিন্তু দরজা পুরো এগিয়ে রাখা। অর্থাৎ উনি বাহিরে চলে গেছেন! আমার উপর রাগ করে?
আমি বিছানা থেকে নেমে বাহিরে যাবার আগেই উনি পিছন থেকে হাত ধরে টেনে আমাকে ওনার কাছে নিয়ে আসলেন।
উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, “বের হচ্ছো কেনো, গাধা?”
আমি অনেক চমকে গেলাম। কিন্তু ওনাকে দেখার সাথে সাথে কেন জানিনা চোখে জল চলে এলো।
আমি ওনাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম। কারণ অনেক রাগ হচ্ছে আমার।
“পাচ মিনিটও সহ্য হচ্ছে না? অথচ আমাকে বিশ মিনিট তেইশ সেকেন্ডে বসিয়ে রেখে দিয়েছিলা একটু আগে।” শাওন মুচকি হেসে বলে উঠল।
আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম আর ঘুরে ওনার দিকে তাকালাম।
তারপর চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম,”কোথায় লুকিয়ে ছিলেন আপনি? দরজা খোলা দেখে আমি মনে করেছি…।”
শাওন আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, দরজা ত আটকানোই।
তারপর দরজার দিকে ইশারা করল।
আমি দরজার দিকে তাকালাম। সত্যিই লাগানো। উপরের হুকটা। আমি গাধার মতো মাঝখানের দিকে খেয়াল করে মনে করেছি উনি বের হয়ে গেছেন কারণ মাঝেরটা খোলা। আমি বোকা সেজে শাওনের দিকে তাকালাম।
“আজ রাতে আমি তোমাকে রেখে এই রুম থেকে বের হবই না।” শাওন গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি শুনে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।
শাওন আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, “আমার কিস?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর পিছিয়ে যেতে লাগলাম।
উনি হঠাৎই আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিল। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম।
উনি আমাকে ওভাবেই ধরে রাখলেন। কিছুই করার নেই আমার। দিতেই হবে। ভেবেই হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগল।
আমি আস্তে আস্তে মাথা তুললাম কিন্তু চোখ বন্ধ করে রাখলাম। আমার ঠোঁট কাপতে লাগল।
শাওন নিঃশব্দে হেসে আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি আমাকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলেন আর গায়ে চাদর টেনে দিলেন।
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে শাওনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন হাসিমুখে বলল, “You Don’t have to force yourself. It’s ok.”
শাওন ঘুরে এসে আমার পাশে শুয়ে পরলো। কিন্তু এখন আমার নিজের উপর রাগ লাগছে।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। উনি রাগ ত করেনি কিন্তু তাও… উফ অসহ্যকর। এখন নিজের উপর বিরক্ত লাগছে।
শাওন চোখ বন্ধ অবস্থাতেই আমাকে বললেন, “বেশি চিন্তা না করে ঘুমাও। নাইলে আমি এখনি তিরিশটা কিস করে দেব।”
শুনেই আমি হকচকিয়ে উল্টোদিকে ঘুরলাম। ওনার মুখটা সেলাই করে দেওয়া উচিত। যখন তখন যা ইচ্ছে বলতেই থাকে।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।