লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ৩৩

লাভার নাকি ভিলেন - সিজন ২

আকাশঃ মানে টা খুবি সহজ ছোট থেকে মেঘলাকে আমি বড় করেছি ওর উপড় আমার ১০০% অধিকার আছে। তাই ওকে কার কাছে বিয়ে দিব কার কাছে দিব না সেটা ঠিক করার রাইট আমার আছে তোর সাথে আমি মেঘলার বিয়ে দিব না।

নাবিলঃ তাই নাকি

আকাশঃ হ্যা তাই…

নাবিলঃ কিন্তু কেন বিয়ে দিবি না..

আকাশঃ আবিরের চরিত্র ভালো না তাই দিব না বিয়ের আগেই কতকিছু শুরু করে দিয়েছে আবার সে জানে যে সে যাকে বিয়ে করছে সেই মেয়ে অন্য ছেলেকে ভালবাসে তবুও বিয়ে করছে তোর কি মনে হয় কোন স্বার্থ ছাড়া করছে নাকি..

আবিরঃ স্বার্থ ছাড়া কে বলল? স্বার্থ আছে তো ১ম সার্থ মেঘলা দেখতে পরীর মত সুন্দরী,২য় কারন ও নাবিল ভাইয়ের বোন ৩য় কারন ভালবাসা মানে কি ও বুঝে এমন মেয়েকে শুধু আমি কেন যে কেউই বিয়ে করতে চাইবে আর এমন ১,২ টা প্রেম সবাই করে এগুলা কোন ব্যাপার না আর সবচেয়ে বড় কথা এই কয়েকদিন ওর সাথে থাকতে থাকতে আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি কথা আছে না
ডুবে ডুবে ভালবাসি সে না বাসলেও আমি বাসি…
আমার বেলায় ও তাই হয়েছে আমি মেঘলাকে ভালবেসে ফেলেছি আর ভালবাসার জন্য কতজন মরে পর্যন্ত যায় আর আমি একটা প্রেম মেনে নিতে পারব না…??

কথা শেষ করার আগেই আকাশ আবিরের কলার টেনে ধরল…

আকাশঃ চরিত্রহীন,আমি তোকে বিশ্বাস করে মেঘলাকে তোর কাছে দিয়েছিলাম..আর তুই.. বলেই আকাশ আবিরকে মারতে গেল ঠিক তখনি মেঘলা এসে আকাশের হাত ধরল।

আকাশ অবাক হল…

মেঘলাঃ মেনে নিলাম আবিরের চরিত্র ভাল না তা আকাশ তোমার চরিত্র ভালো তো…?? ১ যুগ ধরে ১ টা মেয়েকে ভালবেসে আজ অন্য একজন কে বিয়ে করছো…তুমি আবার কোন সাহসে অন্যের চরিত্র নিয়ে কথা বলো।আমার তো বরং এটা জেনে ভাল লাগছে যে আবির আমাকে করুনা করে নয় ভালবেসে বিয়ে করছে। ছাড়ো ওকে বলে মেঘলা আবিরকে ছারিয়ে নিয়ে চলে গেল।

আকাশ রাগে ফুঁসফুঁস করতে করতে বলল

আকাশঃ নাবিল তুই কিছু বলছিস না কেন? আমি কিন্তু আর সহ্য করতে পারছি না এই আবিরকে সোজা উপড়ে পাঠিয়ে দিব।

নাবিলঃ তুই কি মেঘলা কে বিয়ে করবি?

আকাশঃ প্রশ্নই উঠে না।এই তো ১ ঘন্টায় অন্য ছেলের প্রেমে পড়ে গেছে ওকে আমি কেন বিয়ে করব।

নাবিলঃ পাগল কত প্রকার আছে একে না দেখলে জানতেই পারতাম না (ফিসফিস করে)

আকাশঃ ফিসফিস করে কি বলিস..??

নাবিলঃ ছাড় তো কে কার সাথে কি করছে এসব দেখা বাদ দিয়ে তোর বউ কি করছে সেটা দেখ গিয়ে…একটু পর সবাই মার্কেটিং এ যাব। দেখ ভাই তুই বিয়ে না করলে এখনি বলে দে সবার সামনে তামাশা করিস না মেয়েটা আমার পরিচিত তাই তুই শেষ মুহূর্তে এসে তাল বাহানা করলে সেটা কিন্তু খারাপ হবে।

আকাশঃ আমি ওকেই বিয়ে করব মেঘলা একটা ফাউল মেয়ে কখনো আমাকে বুঝে না দরকার নাই আমার পরীর মত সুন্দরী মেয়ের লাগবে না মেঘলাকে।বলে হন হন করে হেঁটে আকাশ চলে গেল।

এদিকে মেঘলাঃ কি মনে করে নিজেকে? প্রেসিডেন্ট? আমি যেন তার হাতের পুতুল নিজে ঠিকি বিয়ে করবে অথচ আমার বিয়ে দিবেনা। ও গাছের টাও খাবে আবার তলার টাও কুঁড়াবে…

২ জনেই ২ জনের ঘরে বসে একে অপরের উপড় রাগ ঝাড়ছে…

কিছুক্ষন পর নাবিল এসে সবাই কে ডাকল।

নাবিলঃ চল সবাই…

মেঘলাঃ আমি যাব না,আবির যা আনবে আমার তাই পছন্দ…

আকাশঃ ওরে ভালবাসারে… সব দেখি উতলিয়ে পড়ছে আজীবন তো আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছিস এটা পছন্দ না ওটা লাগবে আর আজ সাধু হয়ে গেলি…

নাবিলঃ থাক থাক ঝগড়া ঝাটি আর দেখতে চাউ না সবাই চলো মেঘলাও যাবি।

নাবিলঃ এতজন তো গাড়িতে যাওয়া যাবে না আকাশ অবনী আবির মেঘলা তোরা গাড়িতে যা আমি আর সামিরা বাইকে আসছি।

আবিরঃ বাহ কি রোমাঞ্চকর…

নাবিলঃ আকাশের প্যারায় বেচারির সাথে প্রেম টাও ভালমত করতে পারি নি এখন একটু করি।

সামিরাঃ উফফ তুমি না চলো তো..

নাবিল আর সামিরা চলে গেল…

আবিরঃ আমি ড্রাইভ করি…

আকাশঃ না আমি করছি সর…

আবির আর মেঘলা পিছনে বসেছে অবনী সামনে আকাশের সাথে।

মেঘলার গা জ্বলে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর যাওয়ার পর আকাশ হটাৎ গাড়ির ব্র‍্যাক চাপল।

আবিরঃ কোন সমস্যা ভাই..??

আকাশঃ না সমস্যা না… আসলে সামনেই একটা ফুচকার গাড়ি আমি যতদূর যানি অবনীর ফুচকা পছন্দ তাই গাড়ি থামালাম।
অবনী খাবে তো নাকি…??

অবনী মনে মনে ভাবছে তার ফুচকা পছন্দের ঠিকি কিন্তু ততটাও না আর আকাশকে সে ফুচকার কথা বলেও নি তাহলে ও কি করে জানল?
তারপর ভাবল সব মেয়েরেই পছন্দের তাই হয়ত বলেছে…

মেঘলাঃ আমার যে ফুচকা কত প্রিয় সেটাও ভুলে গেছে ভুলবেই তো বউ পেয়েছে না (মনে মনে)

আকাশঃ মামা ফুচকা দেন তো..

ফুচকা ওয়ালাঃ কয় প্লেট?

আকাশঃ চার প্লেট

মেঘলাঃ তিন প্লেট দিন মামা আমি খাব না।

আকাশঃ তাই নাকি?খাবি না বলছিস।

মেঘলাঃ খাব না বল্লাম তো কথা কানে যায় না?

আকাশঃ ঠিক আছে খাস না।

ফুচকাওয়ালা ফুচকা বানিয়ে দিল সবাই গাড়ি থেকে নেমে খেতে শুরু করেছে মেঘলা একবার এর দিক আবার ওর দিক দেখছে… খেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু বলতে পারছে না।

মেঘলা রাগে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়াল তখনি

আকাশ বলতে লাগল আবির তুই কেমন বর বউ কে রেখে খাচ্ছিস দেখ আমি আমার বউ কে খাওয়ানোর জন্য গাড়ি থামালাম এখন আবার খায়িয়েও দিব বলে আকাশ অবনীকে খায়িয়ে দিল।

মেঘলার খেতে ইচ্ছা করছিল আর আকাশ এটা বলায় রেগে আবিরের প্লেট থেকে নিয়ে খেতে খেতে মেঘলা বলল আমি তোমার বউ এর মত প্রতিবন্ধী নই আমি নিজেই খেতে পারি খাওয়াতে হয় না বলতে বলতে খাচ্ছে।

আকাশঃ যানি ত তোর প্রিয় দেখলেই খেতে চাস তাই তোর জন্যেই থামলাম আর তুই ই খাবি না তা কি করে হয় (মনে মনে)

খেয়ে সবাই মিলে শপিং মলে গেল।

নাবিলরাও চলে এসেছে।

সবাই মিলে বিয়ের ড্রেস দেখছে।তখন আকাশ একটা ড্রেস নিয়ে বলল মেঘলা তুই এটা নে।

মেঘলাঃ নিজের বউ কে দাও আমার টা পছন্দ করার জন্য আমার বর আছে।

কথাটা শুনেই আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।

আকাশঃ আরে আমার বউ তো সুন্দরী ও যাই পরবে তাতেই মানাবে তুই ত ওর পায়ের ও যোগ্য না কিন্তু যেহেতু একি মঞ্চে বিয়ে হবে তোকে পেত্নির মত লাগবে তাই বলেছিলাম।

মেঘলাঃ আকাশ….

নাবিলঃ এটা পাবলিক প্লেস ২ জনেই সংযত হও।

মেঘলা চুপ চাপ ড্রেস দেখতে লাগল।

আকাশ মেঘলাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগল যানো অবনী আমার না পিংক কালার খুব ভাল লাগে তাই তুমি এই পিংক গাউন টা নাও।

মেঘলা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল না….

আকাশঃ কি না…??

মেঘলাঃ আমি পিংক ড্রেস নিব তোর বউ অন্য রং নিক।

আকাশঃ না তুই অন্য রং নিবি আমার বউ পিংক নিবে।

মেঘলা আকাশের হাত থেকে ড্রেস টা কেড়ে নিয়ে বলল এটা আমি নিব।

আকাশঃ না দে ওটা…

দোকাদারঃ স্যার ওই রকম সেইম আরো আছে দেই?

আকাশঃ না আমার বউ কি ফালতু নাকি যে সবার মত সেইম ড্রেস পরবে ওকে অন্য কোন ড্রেস দিন।

আকাশঃ পিংক রং টা শুধুই মেঘলার জন্য ও ছাড়া আর কাউকে মানায় না এই কালারে।ওকে খুব মিষ্টি লাগে এই কালারে কিন্তু আমি জোর না করলে ত ও ড্রেস টা নিবে না তাই জোর করছি আমি তো চাই না মেঘলা ছাড়া অন্য কেউ এই ড্রেস টা নিক মনে মনে।

মেঘলাঃ উম আসছে আমাদের মহারানী…যাই পড়াও না কেন আমাকেই বেশি সুন্দর লাগবে হুম…

অবশেষে সব শপিং শেষ করে সবাই মিলে শপিং মলের ফুড কোডে গেল খেতে।

সবারেই ক্ষুদা পেয়েছিল তাই খেয়ে নিল।কিন্তু মেঘলা তেমন কিছু খায় নি।অল্প কিছু খেয়েছে। সবাই খাওয়া নিয়ে ব্যাস্ত ছিল তাই খেয়াল করে নি।খাওয়া শেষে,নাবিল বিল দিয়ে বলল চলো যাওয়া যাক।
সবাই যাওয়ার জন্য বের হতে নিল।কিন্তু মেঘলা বসেই আছে।
সবাই হাঁটা শুরু করেছে কিন্তু মেঘলা আসছে না।

আকাশ একটু গিয়ে ফিরে তাকাল আর মেঘলার কাছে গেল।

আকাশঃ মুখ টা এমন প্যাঁচার মত করে বসে আছিস কেন বাসায় যাবি না? সবাই বেরিয়ে গেছে তো।

মেঘলাঃ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে এই বুঝি কেঁদে দিবে এমন অবস্থা।

আকাশঃ আরে কাঁদার মত কি হল…?? আচ্ছা যাই হয়েছে আগে উট বাসাই যাই তারপর বলিস।

মেঘলাঃ এখনো বাচ্চাদের মত তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।

আকাশ কি যেন ভাবল তারপর নাবিল কে ফোন দিল।

আকাশঃ নাবিল তোরা যা আমি মেঘলাকে নিয়ে একটু পর আসছি বাইক রেখে যা।

নাবিলঃ কিন্তু কেন?

আকাশঃ বাসায় এসে বলছি তোরা চলে যা…
বলে আকাশ ফোন কেটে দিয়ে মেঘলার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে নিজের জ্যাকেট খুলে মেঘলার কোমড়ে বেঁধে দিল তারপর সবার সামনেই মেঘলাকে কোলে তুলে নিয়ে শপিং মলের ২ তলায় উঠে গেল।

আকাশঃ মেঘলা একটু দাঁড়া আমি আসছি
মেঘলাকে দাঁড় করিয়ে রেখে গিয়ে আকাশ একটা প্যাড এনে মেঘলার হাতে দিয়ে ওয়াশ রুম দেখিয়ে দিল।

মেঘলা কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।কিছুক্ষন পর ফিরেও এল।

মেঘলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মুখে কোন কথা নেই।
আকাশঃমন খারাপ বা কাঁদার মত কোন বিষয় না এটা। খুবি সাধারন আর ন্যাচারাল বিষয়।মিস্টেক হতেই পারে আমর এতগুলি আপজন থাকতেও তুই নার্ভাস হয়ে গেলি কি করে। জাস্ট একবার বল্লেই তো হত আমাকে নাই বা বললি সামিরা বা অবনীকে তো বলতে পারতি। এত নার্ভাস হওয়ার কি ছিল?

মেঘলাঃ আ আ আমি মানে? আচ্ছা আমি তো তোমাকে বলি নি তুমি কি করে বুঝলে?

আকাশঃ তোকে চিনি তাই বুঝলাম। কোন গুরুতর সমস্যা না হলে এত চুপ থাকার মেয়ে তুই না সেটা আমি ভাল করেই যানি।
আর এক মুহুর্তে কি এমন হতে পারে? চিন্তা করব এটাই পেলাম।
যাই হোক কথা বাড়িয়ে লাভ নেই সমস্যার সমাধান হয়েছে এবার চল বাসায় যাই সবাই চলে গেছে।

আকাশ বাইকে চেপে বলল উঠ মেঘলা…
মেঘলাও এসে আকাশের পিছনে বসল কিন্তু কিছুটা দূরে…তাই আকাশ নিজেই মেঘলা হাত টেনে এনে মেঘলার সাথে নিজেকে জরিয়ে নিয়ে বলল আজ বাদে কাল বিয়ে পরে গিয়ে কোমড়টা ভাংলে জামাইকে কি জবাব দিব? তাই একটু ধরে বস বলে আকাশ ড্রাইভ করতে শুরু করল।

মেঘলা আকাশকে জ মড়িয়ে ধরে আকাশের গাঁয়ে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবছে কেউ কি কখনো আমাকে আকাশের মত করে বুঝবে কেউ কি আমাকে এত কেয়ার করবে…??
আকাশ তোমার আচারন তো বলছে তুমি আমায় ভালবাসো তাহলে কেন অবনীকে বিয়ে করছো..??? আমি যে জীবনের শেষ দিন অবধী তোমার সাথে থাকতে চাই…তুমি কি সেটা বুঝো না

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।