লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ৩৬ (শেষ পর্ব)

লাভার নাকি ভিলেন - সিজন ২

আবির মেঘলাকে নিয়ে চলে গেল।
আত্মীয়দের সবার মুখে একেই কথা ২ জন ২ জনকে এত ভালবাসে তাহলে এই বিয়ে কেন দেয়া হল?

নাবিলঃ বেশি জেদ থাকলে এমনেই হয় আকাশ সারা জীবন নিজের পছন্দ মত সব করতে চেয়েছে বিপরীত পাশের মানুষটার কথা কখনো ভাবে নি।নিজে যেভাবে চেয়েছে তাই করেছে অন্য কাউকে কিছু বলে না।আসলে সব প্লেন তার মাথায় থাকে মুখে আসে না তাই কাউকে কিছু বলে না হটাৎ করে করে এসে একটা ক্লাইমেক্স দেখিয়ে দেয় ততদিনে বিপরীত পাশের মানুষটার যে কি অবস্থা হয় ভাবে না।
কিরে আকাশ এবার শান্তি হয়েছো তোর? হয়েছে মেঘলাকে শাস্তি দেয়া?এবার বসে বসে কাঁদতে থাক।

আকাশ চোখ মুছে দাড়াল শাস্তি…?? কে কাকে শাস্তি দিয়েছে?আমি কোন শাস্তি দেই নি মেঘলা আর তুই আমাকে দিয়েছিস তবে গেম টা এখানে শেষ হবে না খেলা তো এবার শুরু হবে মেঘলার কপালে কতটা দুঃখ লিখা আছে তোদের কারোর কোনো ধারনাই নেই। ছোট থেকে যাকে ভালবাসলাম আজ সে অন্যের হয়ে যাবে? না নাবিল ব্যাপার টা এতটাও সহজ না।আমি এটা হতে দিব না ওকে আমি তুলে আনব আর বিয়ে করার কত মজা তা হাড়ে হাড়ে বুঝাব।

নাবিলঃ কি সব বলছিস?

আকাশঃ যা ঘটবে তাই বল্লাম নিজে বাঁচলে বাঁচব না হলে নাই কিন্তু মেঘলাকে নিজের করে ছাড়ব।দরকার হলে নিজের হাতে ওকে খুন করব কিন্তু অন্যকারো হতে দিব না বলে আকাশ বের হয়ে যেতে চাইল।

নাবিল এসে আকাশ কে ধরে বলল দোস্ত মাথা ঠান্ডা কর কি সব বলছিস?দেখ তুই যা করেছিস তার জন্যেই আজ এসব হয়েছে। মেঘলার কি দোষ তুই আগে বিয়ে করেছিস তারপর মেঘলা করেছে ও তো বারবার তোকে বলেছিল মাফ করে দিয়ে ওকে বিয়ে করতে তুই করিস নি। দোষ যদি কারো হয়ে থাকে সেটা তোর হয়েছে মেঘলার নয় তাই যা হয়েছে মেনে নে।

আকাশঃ কোনটা মানতে বলছিস?আমি মেঘলাকে ছাড়াব বাঁঁচব কি নিয়ে? ক্যারিয়ার বল স্বপ্ন বল যাই বল সবি তো মেঘলাকে ঘিরে ছিল আজ আমার না আছে বেঁচে থাকার কোন উদ্দেশ্য আর না আছে কোন স্বপ্ন।কি নিয়ে বাঁঁচব আমি?

নাবিলঃ তুই অবনীর জন্য বাঁচবি আকাশ। ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত যার দায়িত্ব নিয়েছিস পালন তো করতেই হবে তাই না? জীবনে অনেক পাগলামি করেছিস আর না আকাশ।ভালোবাসার মানুষকে ভাল রাখাটাও ভালবাসার অংশ তুই চাস না মেঘলা সুখি হোক? এখন ওকে তুলে আনলে সমাজ সেটা মেনে নিবে না আর অবনীও আইনের আশ্রয় নিবে একসাথে ৪ টা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। একটু চিন্তা কর প্লিজ। উঠ আকাশ অবনী তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

আকাশঃ আমাকে মাফ কর নাবিল আমি পারব না অবনীকে মেনে নিতে আমাকে একটু একা থাকতে প্লিজ যা এখান থেকে…

নাবিলঃ ঠিক আছে কিন্তু আমাকে কথা দে তুই কোন অঘটন ঘটাবি না।

আকাশঃ ঠিক আছে স্মি কিছু করব না যা তুই।সামিরা তোর জন্য অপেক্ষা করছে…

আকাশের ভাই মা আকাশকে শান্তনা দিতে যেতে চেয়েছিল কিন্তু নাবিল বাঁধা দিয়ে বলল আকাশকে একা থাকতে দিতে।নাবিল সব আত্মীয়দের বিদায় করে দিল।আকাশের ভাই আর মাকেও রিকুয়েষ্ট করে পাঠিয়ে দিল।

সবাই চলে যাওয়ার পর আকাশ ছাদে গেল বেশ অনেক্ষন কান্নাকাটি করেও আকাশের মন শান্ত হল না।

আকাশঃ একমাত্র মৃত্যুই পারে আমাকে যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিতে আর কোন উপায় নেই আমি আর পারছি না।ভাবতে ভাবতএ ছাদের কার্ণিশে গিয়ে দাঁড়াল আকাশ।
কিন্তু লাফ দেয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে নাবিল এসে আকাশ কে ধরল আর সাথে সাথে আকাশ কে থাপ্পড় মারল নাবিল।

নাবিলঃ কি বলেছিলাম কোন অঘটন ঘটাবি না তাহলে..???চল এখনি তুই অবনীর কাছে যাবি।

আকাশ নাবিল কে জড়িয়ে ধরে বলল কেন এমন হল নাবিল..?? এত ঝামেলার কি সত্যিই খুব প্র‍য়োজন ছিল? কেন আমি এমন করলাম?

নাবিলঃ এখানে কারো দোষ নেই সবটাই ভাগ্যের লিখন চল আকাশ মেয়েটাকে যখন বিয়ে করেছিস ওর কিছু চাওয়া পাওয়া আছে তোর কাছে প্লিজ চল আকাশ।আকাশ যেতে চায় নি কিন্তু নাবিল জোর করে আকাশকে অবনীর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিল।

আকাশ ঘরে ঢুকে অবনির দিকে না তাকিয়ে উদাসীন হয়ে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে চোখ রেখে বলতে শুরু করল।

যানো অবনী আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার একমাত্র খেলার সাথী ছিল মেঘলা তখন ভালোবাসা কি বুঝতাম না শুধু এইটুকু বুঝতাম মেঘলাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।ছোট থেকেই ওকে খুব আদর করতাম কিন্তু ও বুঝত না শুধু শুধু গাল ফুলিয়ে বসে থাকত।
তবে আমি ওকে যতই খারাপ ব্যবহার করি না কেন মেঘলা আমার মুখের উপড় কোনো কথা বলত না ওকে কেউ কিছু দিলে আমার জন্য লুকিয়ে রাখত আমাকে না দিয়ে কখনো একটা চকলেটও খেত না। খুব ভালবাসত আমায় আজ যে আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটাও মেঘলার জন্যেই। ওকে দেয়া সব সম্পত্তি বিক্রি করে আমার জন্য ঘুষ দিয়েছিল।কত অপমান কত মার যে মেরেছি ওকে হিসাব নেই তবুও কোনদিন মুখ ফোটে একবার বলে নি কেন এমন করছি…?? আমি ভাবতেও পারছি না সেই মেঘলা আজ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।

মেঘলাটা না এমনেই সবসময় না বুঝেই আমায় কাঁদায় ছোট বেলায়ও একবার এভাবেই আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল কতবার পিছন থেকে ডেকেছিলাম তবুও চলে গিয়েছিল সেবার আমি অসুস্থ হয়ে গেছিলাম অনেকদিন হাসপাতালে ছিলাম আজও ওকে ডাকলাম কিন্তু আমার কথা শুনল না।এবার তো মনে হচ্ছে আমার আত্মাটা নিয়েই চলে গেছে।
একবারো বুঝল না ওকে ছাড়া যে আমি থাকতে পারব না। ও কিভাবে আমাকে অবিশ্বাস করল? যে ছেলেটা ১২ টা বছর ওর জন্য অপেক্ষা করেছিল ১২ বছর ধরে ওর ব্যবহার করা প্রতিটা জিনিস যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছিল সে আজ হটাৎ করে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলল…!!
একটা বারো কি ওর জানতে ইচ্ছে হল না কেন আমি বিয়ে করলাম? আমি কখনো কোন মেয়ের দিকে ভাল করে দেখি নি পর্যন্ত শুধুমাত্র ওর জন্য।আর সেই মেঘলা আজ আমাকে ভুল বোঝল।যানো পৃথিবী কেয়ামত হয়ে গেলেও ওকে ছাড়া আমি কখনো বিয়ে করতাম না কিন্ত নাবিল….ওকেও যে আমি ভালবাসি আমি পারিনি নিজের ভালবাসার জন্য নাবিল কে বিসর্জন দিতে আজ বন্ধুত্বের কাছে হেরে গেল আমার এতদিনের ভালবাসা। যানি হয়ত মেঘলা আবিরের সাথে খুব ভাল থাকবে কারন আবির সত্যিই ভাল ছেলে হয়ত তুমিও ভাল মেয়ে কিন্তু আমাকে ক্ষমা করো অবনী মেঘলা ছাড়া আমি কাউকে আমার জীবনে জায়গা দিতে পারব না। তুমি আমাকে মুক্তি দাও প্লিজ।তোমার সারাজীবনের ভরন পোষনের দায়িত্ব আমি নিব কিন্তু স্ত্রীয়ের মর্যদা দিতে পারব না।
আমি শুধু মেঘলাকেই ভালবাসি।

ছোট বেলায় মেঘলা চলে যাওয়ার পর যেভাবে ছাতকের মত ওর ফিরে আসার অপেক্ষায় চেয়ে থাকতাম এখনো সেভাবেই থাকব যানি মেঘলা আর কখনো আসবে না কিন্তু আমি এই একটা আশা নিয়েই বেঁচে থাকব যে জীবনের শেষ মুহুর্তে হলেও মেঘলা তার আকাশের কাছে ফিরবে….

আকাশ কথাগুলি বলতে বলতে কাঁদছে তখন অবনী এসে আকাশের কাঁধে হাত রাখল।

আকাশঃ আমাকে শান্তনা দেয়ার বৃথা চেষ্টা করোনা আকাশের এই রোগ কোন ওষুধেই ভাল হবে না আমি খুব খুশি হব যদি তুমি চলে যাও।

____সত্যি চলে যাব…??

আকাশ কন্ঠটা শুনে চমকে উঠল আর পিছন ফিরে তাকাল…আর দেখে অবাক হয়এ গেল কারন কাঁধে হাত রাখা মেয়েটা অবনী নয় মেঘলা…

আকাশঃ তুই….???

মেঘলাঃ লাল ড্রেসে কি আমাকে খুব খারাপ লাগছে যে চিনতেই পারছো না?আমি বলেছিলাম নিজের ড্রেসেই থাকতে অবনী জোর করে এটা পরিয়ে দিল।

আকাশ আর কিছু না ভেবেই মেঘলাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল।আর বলল কখনো যদি পাগলও হয়ে যাই তবুও মেঘলাকে চিনতে আকাশের ভুল হবে না তুই কিভাবে আসলি মেঘলা ….??

মেঘলার চোখেও পানি… মেঘলাও আকাশকে জড়িয়ে ধরে বলল আকাশ কে ছেড়ে যাওয়ার সাধ্য কি আমার আছে বলো…??তাই আবারো ফিরে এসেছি।

তখনি ঘরে নাবিল সামিরা আবির অবনীর আগমন ঘটল…

নাবিলঃ ছি ছি বড় সালার সামনে এসব করতে নাই একটু সংযত হোন মিঃ আকাশ।

আকাশ অবাক হল…
আকাশ মেঘলাকে জরিয়ে রেখেই বলল মানে কি?

নাবিলঃ আগে তো স্বাভাবিক হ তারপর বলছি।

আকাশঃ না ছাড়ব না তোরা মেঘলাকে নিয়ে যেতে এসেছিস তাই না? না আমি আর ওকে নিয়ে যেতে দিব না।ওকে নিতে হলে আমার লাশের উপড় দিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

নাবিলঃ না নিব না। ছাড়…আমার মাথা এতটাও বিগড়ে যায় নি যে নিজের বোনের ঘর পোড়ে অন্যের ঘর তৈরি করব।

আকাশঃ কি বলছিস মাথায় ঢুকছে না বুঝিয়ে বল…

মেঘলা আকাশের বুকের সাথে মিশে থেকেই খরগোশের মত মুখ বের করে শুনতে লাগল।

নাবিলঃ তাহলে সবটা খোলেই বলি। শোন আকাশ আজ তোর সাথে অবনীর নয় মেঘলার বিয়ে হয়েছে মেঘলা যে পেপারটায় সাক্ষি হিসেবে সাইন করেছিল সেটা সাক্ষির পেপার ছিল না বরং ও বউ হিসেবে সাইন করেছে। তোরা ২ জন এতই ডিপ্রেশনে ছিলি যে কাগজের লিখা খেয়াল করিস নি আর এটাও খেয়াল করিস নি যে আমাদের কারোর বিয়েই ধর্মিয় মতে মান্দ কবুল বলে পড়ানো হয় নি।
শুধু রেস্ট্রি করা হয়েছে কাজি কে আগে থেকেই বলে রাখা ছিল।আসলে তোরা একে অন্যকে এত ভুল বুঝিস এত ঝগড়া ঝামেলা করিস তাই তোদের শিক্ষা দিতেই এই ব্যবস্থা।

তবে সব ক্রেডিট অবশ্য আমার না এতে আবিরের কৃতিত্বই বেশি।
আমি যখন বল্লাম তুই বিয়ে করতে চাস তখন আবিরেই আমাকে বুদ্ধি দিল। আর অবনীকে নিয়ে আসল। অবনী আবিরের জিএফ।আবির বলল বিয়ে ঠিক করে এভাবে তোকে আর মেঘলাকে শিক্ষা দিতে। আজ তোদের মত আবির আর অবনীরো বিয়ে হয়েছে।

আকাশঃ নাবিল এসব সত্যি…?? আমি স্বপ্ন দেখছি না তো।

নাবিলঃ তুই ভাবলি কি করে সামান্য অপমানের জন্য তোর ভালবাসাকে আমি তোর কাছ থেকে কেড়ে নিব?
আমি কি তোকে ভালবাসি না?
আরে যে আকাশ নাবিলের মান রাখতে নিজের ভালবাসাকে ত্যাগ করতে পারে সেই আকাশকে আমি কখনো কাঁদাতে পারি বল? আমার শেষ নিশ্বাস থাকতে আমি মেঘলাকে আকাশের কাছ থেকে আলাদা হতে দিব এটা তুই কি করে ভাবলি?সেই ছোট বেলা থেকে জেনে আসছি তুই মেঘলাকে ভালবাসিস তুই কি ভুলে গেছিস মেঘলার যখন কিডনী লাগবে বলেছিল আমি বলেছিলাম আমার কিডনী দিয়ে হলেও তোদের ভালবাসাকে আমি বাঁচাব আর আজ আমিই কিনা তোদের আলাদা করে দিব?তবে তুই আজ প্রমান করলি নাবিল তোর কাছে কি? তুই মেঘলাকে আমার জন্য ছেড়ে দিলি আকাশ?তোর মত বন্ধু পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার…

নাবিল এসে মেঘলাকে সরিয়ে দিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরল।তোকে অনেক ভুল বুঝেছিলাম রে আকাশ তুই আমাকে এত ভালবাসিস আর আমি কিনা তোকে ছি ছি… আমাকে তুই ক্ষমা করে দে আকাশ।

আকাশঃ আমিও অবাক হয়েছিলাম নাবিল সব যেনেও কি করে এত শান্ত ছিল এটা ভেবে…

নাবিলঃ তবে যাই বল এই আবিরের বাচ্চা কিন্তু কামাল করে দিয়েছে পাশার একটা চালে আমার প্রতি তোর ভালবাসাটাও প্রমান করে দিয়েছে আবার তোর জেদ,মেঘলার বোকামি সব দূর করে দিয়েছে এই এক বিয়ের আয়োজন করে। অবনীও অনেক ভাল অভিনয় করেছে এই প্লেনে সামিরাও সামিল ছিল।সবাই মিলে তোকে আর মেঘলাকে একদম সোজা করে দিয়েছে।

আকাশ নাবিলকে একহাতে জড়িয়ে রেখেই আবিরের দিকে অন্যহাত বাড়িয়ে দিল আবিরও সাথে সাথে এসে আকাশক আর নাবিলকে একসাথে জড়িয়ে নিল।

আবিরঃ ভাই তুমি যেদিন বিশ্বাস করে মেঘলাকে কোলে নেয়ার কথা বলেছিলে তোমাকে কথা দিয়েছিলাম বেঁচে থাকতে এই বিশ্বাসের অমর্যাদা করব না আজ কি করে করি বলতো?
আমি তোমাদের সব ভুল বোঝাবুঝি গুলি নিজের চোখে দেখেছি তাই চেয়েছিলাম এবার এগুলির শেষ হোক তাই এই বুদ্ধি।

এবার মেঘলা গাল ফুলিয়ে বলল তোরা না সবাই খুব খারাপ আকাশকে শিক্ষা দিতে গিয়ে আমাকে কাঁদাতে কাঁদাতে শরীরে পানি শুন্যতা বানিয়ে দিয়েছিস তোদের জীবনে ভাল হবে না দেখে নিস? আরে ওকে শাস্তি দিতি আমাকে বলে দিতি।

আকাশঃ ওই যে শুরু হয়ে গেছে।কেন রে ভুল কি শুধু আমি বুঝি তুই বুঝিস না?সব ঝামেলা তো তুই শুরু করিস শোন মেগলা তুই যদি আবার এমন গাল ফুলাস আর বোকামি করিস তোকে না আমি দেখে নিব….

মেঘলা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল কচু করবা তুমি আমার….

নাবিলঃ তোরা না মরার পরেও ঝগড়া করেই যাবি..এ জীবনে শিক্ষা হবে না তোদের।

আবিরঃ একদম ঠিক বলেছো ভাই।এই ঝগরার জন্য কত কিছু করলাম আর এখন কিনা আবারো ঝগরা।
চলো ভাই আমরা এখন যাই এবার আকাশ ভাই মেঘলাকে স্যালাইন খায়িয়ে পানি শুন্যতা দূর করবে নাকি আরো শুন্যতা বানিয়ে দুবস সেটা আকাশ ভাই বুঝক।

নাবিলঃ হুম চল…
নাবিলরা চলে যাওয়ার পর।

মেঘলাঃ যাও আমার জামা কাপড় বের করে নিয়ে এসো…তুমি আমার স্বামি তাই এখন থেকে আমি যা বলব তাই করতে হবে…অনেক জ্বালিয়েছো আজ থেকে আমি সব শোধ নিব আমার সব কাজ তোমাকে দিয়ে করাব…

আকাশঃ তাই নাকি? কি ভেবেছিস তোকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি?

মেঘলাঃ ওমা আমি কোন ভুল করেছি নাকি যে ক্ষমা করবা?

আকাশঃ তাই বুঝি? আমি না হয় নাবিলের জন্য সাইন করেছিলাম কিন্তু তুই তো জিদ দেখিয়ে সাইন করে ফেলেছিলি এটা দোষ না?

মেঘলাঃ আ আ আমি মানে…বলেই দৌড়

আকাশঃ পালাবি কোথায় আজ তো তোর কপালে বহুত দুঃখ আছে।

মেঘলা সারা ঘর জুড়ে দৌড়াচ্ছে আকাশো পিছন পিছন ছুটছে…
কিন্তু মেঘলা আকাশের সাথে পেরে উঠল না আকাশ গিয়ে মেঘলাকে ধরে ফেলল।
সাথে সাথেই মেঘলা চেঁচিয়ে উঠল

মেঘলাঃ ভাইয়া… এই ভাইয়া কোথায় তুই দেখ জল্লাদ টা আমাকে মেরে ফেলছে…

আকাশঃ হ্যা হ্যা ডাক দাঁড়া আমিও ডাকি নাবিল ওই নাবিল…দেখ কি জিনিস আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিস।

মেঘলাঃ ফাউল ছেলে…

নাবিল ছুটতে ছুটতে এসে দরজায় নক করল।

আকাশঃ খোলায় আছে আয়।এই মেয়ে যে ঘরে থাকবে তার দরজা লক করার উপায় নেই।

নাবিলঃ উফফ কি শুরু করেছিস বল তো?
তোদের যন্ত্রনায় নাতো ভালমত একটা প্রেম করতে পারলাম, নাতো বিয়ের অনুষ্টান উপভোগ করতে পারলাম এবার ফুল সজ্জাটাও করতে দিবি না দেখচহি এটা তো অন্তত করতে দে ভাই…তানাহলে না বেচারি বউ আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবে…

মেঘলাঃ দেখো দেখো বউ কে কত ভালবাসে দেখে তো একটু শিখতে পারো নাকি…নাহলে আমিও ডিভোর্স দিব।

আকাশ মেঘলার মুখ চেপে ধরে বলল কি দিবি? আজ তোর একদিন তো আমার একদিন।

নাবিলঃ থামবি তোরা? খোদা দড়ি ফেলো উপরে উঠে যাই আর পারছি না। এবার যদি তোরা ঠিক না হোস আমি কিন্তু বনবাস নিব।

মেঘলাঃ আমাকে বলছিস কেন তোর হারামি বন্ধুকে বল।

আকাশঃআবার বাজে কথা? দেখ শুধু মাত্র নাবিলের ফুল সজ্জার জন্য তকে এবারের মত ক্ষমা করছি এরপর যদি আমার কথার বাইরে এক পা রেখেছিস মেরে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিব মনে রাখিস।

নাবিলরা কথা বলতে বলতেই আবির আসল।

আবিরঃ ভাই চলো নিচে কাজী অপেক্ষা করছে ধর্ম মতে বিয়ে টা হয়ে যাক।

নাবিল হুম ঠিক বলেছিস অবনি আর সামিরাকেও ডাক।

সবাই মিলে গেল কাজী সব বিধি মেনে বিয়ে পড়িয়ে দিল নাবিল সামিরা আবির অবনির বিয়ে পড়ানোর পর কাজী আকাশকে বলল আপনি কি মেঘলা ওরফে নাদিয়া খান কে বউ হিসেবে কবুল করছেন?

আকাশ হাসতে হাসতে বলল শুধু ওকে নয় ওর সব অভিমান,রাগ,পাগলামি,বোকামি সবকিছুকেই নির্দ্বিধায় কবুল করছি,কবুল করছি,কবুল করছি..

কাজীঃ মেঘলা আপনি করছেন?

মেঘলাঃ জ্বি কবুল করছি,কবুল করছি,কবুল করছি।

আকাশঃ এটাও বল আর কখনো ছেড়ে যাবি না তো?

মেঘলা বলার আগেই নাবিল বলতে লাগল এবার গেলে আমি আর ফিরিয়ে আনতে পারব না বাবা।আজ থেকে আমার সব দায়িত্ব শেষ এবার তোমরা মারামারি করো কাটাকাটি করো আমি আর এগুলায় নেই।

আকাশঃ তুই ছাড়া যে আমার চলে না..ফুলসজ্জাতেও তোমাকে আমার চাই।

নাবিলঃ তুই আর মানুষ হবি না।শোন তাহলে মেঘলার ভাই হিসেবে না বন্ধু হিসেবে একটা বুদ্ধি দেই তোকে

আকাশঃ কেন নয় এখনি দে..

নাবিলঃ আজকেই আমাকে মামা বানানোর ব্যাবস্থা কর তাহলেই বউ আর তোকে ছেড়ে যেতে পারবে না।

আকাশঃ বুদ্ধিটা ভালই দিয়েছিস।

মেঘলা লজ্জা পেল…

সামিরাঃ উফফ তুমি কি মেঘলার ভাই নাকি অন্যকিছু?

আকাশঃ নাবিল আগে আমার বন্ধু তারপর মেঘলার ভাই তাই না দোস্ত?

নাবিলঃ একদম তাই আকাশ আমার বুকের পাঁজর আর ওটা তো বোন।

মেঘলাঃ ভাইয়া…কেঁদে দিব কিন্তু..

নাবিলঃ আকাশ ওকে নিয়ে রুমে যা নাহলএ এখনি হয়ত কালবৈশাখী শুরু করবে।

আকাশঃ সামিরা অবনী আবির তোমাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করব না আমি সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ এই ঋন কখনো শোধ করতে পারব না। তোমাদের জন্যেই আজ আমার পাগলি টাকে নিজের করে পেলাম।আর তোমাদের জন্যেই বুঝতে পারলাম রাগ করে কোন সিধান্ত নেয়ার ফল কতটা ভয়ানক হতে পারে।

নাবিলঃ এবার ঘরে যা আমাদেরকেও যেতে দে…

আকাশঃ দোস্ত…

নাবিলঃ আমাকে বলে বুঝাতে হবে না আমি আপনার কি সেটা তখনি বুঝে গেছি যখন সাইন করেছিলি যা ঘরে যা।

আকাশঃ ম্যাডাম লজ্জাবতি চলুন।

কিন্তু মেঘলা সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল এই যাও তো বিরক্ত করো না সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে এবার আমি রেস্ট নিব।

আকাশঃ দাড়া তোর রেস্ট নেওয়াচ্ছি বলেই মেঘলাকে কোলে তুলে নিল..

নাবিল হাসতে হাসতে সামিরাকে নিয়ে ঘরে গেল আবিরো অবনীকে নিয়ে রুমে গেল।

মেঘলাঃ গাধা…

আকাশঃ কে গাধা

মেঘলা গোবেচারা মুখ করে বলল কোলে উঠার জন্যেই রেস্টের কথা বলেছিলাম।

আকাশঃ আমিও সেটা বুঝেই কোলে নিয়েছি।রুমে নিয়ে সব শোধে আসলে শোধ করে নিব
আকাশ মেঘলাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে পাশে বসল…

আকাশঃ অবশেষে তোকে নিজের করে পেলাম।

মেঘলার কোন সাড়া শব্দ নেই..

আকাশঃ কিরে বেঁচে আছিস নাকি মরে গেঁছিস

মেঘলাঃ হুম…

আকাশঃ কি ভাবছিস?

মেঘলা বিছানা থেকে নেমে এদিক ওদিক খোঁজতে লাগল।

আকাশঃ পাগল হয়ে গেছিস নাকি? কি খুঁজছিস?

মেঘলাঃ ফুল সজ্জায় নাকি বিড়াল মারতে হয় ত বিড়াল টা কোথায়…??

আকাশ মেঘলার কথা শুনে হাসতে শুরু করল।

মেঘলাঃ হাসছো কেন?

আকাশঃ ওটা আমি মারব তোর ধারা হবে না।

মেঘলাঃ এ না না তা হবে না আমি শুনেছি যে বিড়াল মারে তার মত বাচ্চা হয় পরে আমার মেয়ে তোমার মত বজ্জাত হবে।

আকাশঃ কি আমি বজ্জাত?দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি।
মেঘলাঃ ভাইয়াকে ডাকব
ভাই…….

আকাশ মেঘলার মুখ চেপে ধরে বলল এবার ডাকলে ও বেচারা সোসাইড করবে…ও এখন ব্যাস্ত আছে। চল আমরাও তাহলে একটু ব্যাস্ততায় হারিয়ে যাই…
বলেই আকাশ লাইট অফ করে দিল।

মেঘলাঃ ভালো হচ্ছে না কিন্তু…!!!এগুলা কি ধরনের অসভ্যতা…

আকাশঃ অনেক প্যারা দিয়েছিস এবার আমার পুষিয়ে নেয়ার পালা।

সমাপ্ত
———-

লেখকের কথা: রাগ করে নেওয়া সিধান্ত সবসময় ভুল হয় তাই রাগ বর্জন করুন নিজে ভাল থাকুন অন্যকে ভাল রাখুন আমার জন্যে দোয়া করবেন যেন রাগ কমাতে পারি।
ব্যাস্ততার মধ্যে লিখেছি তাই ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখুন যাই ভুল থাকুক ধরার দরকার নেই ????????

☞গল্প টা যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ । সম্পূর্ণ গল্প টা পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই সুন্দর একটা কমেন্ট করে জানাবেন।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।