মৈত্রী কাঁ*দছে। চকচকে অশ্রুতে গাল ভেজা। জীবনের এতগুলো বছর কেটেছে,অসংখ্য ছেলের থেকে পেয়েছে প্রেমের প্রস্তাব। কখনও ফিরে তাকায়নি অবধি। অথচ এই প্রথম বার কাউকে ভালো লাগল,ভালোবাসল,কিন্তু মানুষটা রইল অধরা।
সাদিফ অন্য কাউকে পছন্দ করে জেনে বুক ভা*ঙছে ক*ষ্টে। এতটা ক*ষ্ট হয়ত মানুষটা ওকে নাকচ করলেও হতোনা। যদি সে ফিরিয়ে দিত,মৈত্রী ছাড়ত কী? পিছু এঁটে একদিন না একদিন আদায় করত ভালোবাসা। কিন্তু যার হৃদয় অন্য কারো দখলে তাকে কী করে পাওয়া যায়?
মৈত্রী চোখ মুছতে মুছতে দৌড়ে ঘরে ঢুকছিল। তখনি সামনে পরল পুষ্প। বর্ষাকে সাজানো শেষ করেছে কেবল। সে তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছিল প্যান্ডেলে। মৈত্রী কে কাঁ*দতে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। অবাক হয়ে বলল,
‘ কাঁদছো কেন মৈত্রী? কী হয়েছে?’
মৈত্রী থমকায়। পুষ্পকে দেখে তার অশ্রু জল উপচে আসে। দুঃখ বাঁ*ধ ভাঙে।
যত্রতত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাদিফ-পুষ্পর পাশাপাশি চিত্র। মানস্পটে একেক করে স্পষ্ট ধরা দিল সব। মিলে গেল হিসেব।
সেদিন জবা বেগম সাদিফকে টেনে নিয়ে গেলেন,দাঁড় করালেন পুষ্পর ছবি তোলার জন্যে। তারপর কাল রাতে,অনেক জায়গা ফেলেও সাদিফ গিয়ে বসল পুষ্পর পাশে। পিউই সঠিক,মিথ্যে বলেনি মেয়েটা। মৈত্রী ডুকরে কেঁ*দে উঠতেই চমকে গেল পুষ্প। অস্থির হয়ে বলল,
‘ এই মৈত্রী, কী হলো তোমার?’
মৈত্রী নিজেকে সামলায়। টলমলে চোখে তাকায়। কান্নায় বুজে আসে তার কণ্ঠ। পুষ্পর গাল ছুঁয়ে বলে,
‘ তুমি অনেক ভাগ্যবতী আপু! তোমার কপাল সোনায় বাঁধানো। যে মানুষটাকে আমি গত তিন দিনে তিনশ হাজার কোটি বার চেয়েছি সে আপোষে ধরা দিল তোমায়।’
বলে দিয়েই ছুট্টে কামড়ায় ঢুকে গেল সে। এটা শান্তা আর সুপ্তির ঘর। পুষ্পর মাথার ওপর দিয়ে গেল সব। কী বলে গেছে মেয়েটা,সে আদৌতেই কিছু বোঝেনি। মৈত্রী দোর বন্ধ করে দিল তার মুখের ওপর। পুষ্প চাইল একবার দেখবে ওর কী হয়েছে! পরমুহূর্তে বন্ধ দরজার দিক চেয়ে ভাবল ‘ না থাক, এখন দরজা ধাক্কালে বিষয়টা পাঁচ কান হবে। গিজগিজে মানুষের একেকজন একেক রকম কথা বানাবে। থাক বরং! ‘
ওদিকে পাত্রপক্ষ এসেছে,গেট ধরার মূল দায়িত্বটাও তার ওপরেই। সে ঝেড়ে ফেলল মৈত্রীর চিন্তা। দ্রুত পায়ে চলল উঠোনের দিকে।
***
সাদিফ ঘরে ঢুকেই গায়ের পাঞ্জাবি খুলে ছু*ড়ে মারল ফ্লোরে। এতটুক পথ আসতেই চুল্কাতে চুল্কাতে অবস্থা করুণ। সাদা চামড়া রক্তিম। স্থানে স্থানে ফুলেফেঁপে গিয়েছে। সাদিফ ‘উফ’ উফ’ করতে করতে পড়নের প্যান্টটাও খুলে ফেলল। তারপর পুরো দমে শুরু করল চুল্কানো। নখ বিঁধে রঁক্ত বের হলেও কমছেনা।
সে হাঁসফাঁস করতে করতে একবার কোমড়ের ওপর দিক চুল্কায় একবার নিচের দিক। অথচ কমার নাম নেই।
সাদিফ বেগবান পায়ে ওয়াড্রবের কাছে এলো। ওপরে রাখা সরিষার তেলের বোতল নিয়ে ছিপি খুলে গলগল করে ঢেলে দিল গায়ে। সারা শরীরে মেখে মেখে চুপচুপে বানাল।
সময় নিয়ে,দম ফেলে ছুটল ওয়াশরুমে।
কমপক্ষে কয়েক-বার গায়ে সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে গোসল সাড়ল। ঘষামাজার তোপে ছাল উঠে যাওয়ার যোগাড়। অনেক কষ্টে চুলকানি সহনীয় হয়। সাদিফ দুহাত তুলে শুকরিয়া আদায় করল,এ যাত্রায় প্রানে বাঁচার।
পাক্কা বিশ মিনিট পর কোমড়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে ওয়াশরুম ছাড়ল। বের হতে না হতেই ফোনের রিংটোন বাজে। বিছানায় রাখা ছিল,জবা বেগমের কল। সাদিফ কানে গুঁজে বলল
‘ হ্যাঁ বলো।’
‘ কী রে বাবা,কই তুই?’
‘ এইত ঘরে।’
‘ ঘরে কী করছিস? আসবিনা এখানে? পাত্রপক্ষ এসে গেছে তো।
‘ হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি। রাখো।’
কথা বলতে বলতে দরজার দিক ঘুরল সাদিফ। প্যাচানো তোয়ালের ভাঁজ খুলল বেখেয়ালে।
ওমনি সামনে থেকে স্বজোরে ‘ আআআ ‘ বলে চিৎকার ছুড়ল মারিয়া। চোখ চে*পে ধরে ঘুরে গেল পেছনে। সাদিফ চমকে গেল,হকচকাল।
চোখদুটো মারবেল সাইজ। একবার নিজের দিক তাকাল,একবার মারিয়ার দিক। ঘটনা বুঝতেই হুড়মুড়িয়ে তোয়ালে জাপ্টে নিলো সাথে। পরপর খেকিয়ে বলল,
‘ অ্যাই মেয়ে অ্যাই,আমার ঘরে কী করছেন আপনি?’
মারিয়া ফিরল না। সে লজ্জ্বায় মিশে যাচ্ছে মাটিতে। চোখ দুটো খিঁচে বুজে রাখা।
‘ আপনি প্লিজ প্যান্ট পরুন আগে।’
সাদিফের রা*গ সপ্তম আকাশে উঠে গেল। প্যান্ট পরুন মানে? সে কী ন্যা** দাঁড়িয়ে আছে?
এমন ভাব করছে যেন কী না কী দেখে ফেলেছে!
কথাটা ভাবামাত্র নিজেই সজাগ হলো। সন্দেহী কণ্ঠে বলল,
‘ আপনি কি কিছু দেখেছেন?’
মারিয়া ঘুরে থেকেই ঘনঘন মাথা নাড়ল,
‘ না না কিছু দেখিনি।’
‘ শিওর?’
‘ হ্যাঁ হ্যাঁ শিওর।’
সাদিফ মুখ ফুলিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল ‘ যাক।’
এরপরই ক*র্কশ কণ্ঠে বলল ‘ কিন্তু আপনি আমার ঘরে কেন?’
মারিয়া কী বলবে বুঝল না। সাদিফ কে ওমন একে বেঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে ভীষণ আনন্দ পেয়েছিল। তার ওষুধ কাজ করেছে বুঝতে বাকী নেই। আরো বেশি মজা দেখতে এসেছিল এখানে। লুকিয়ে চুরিয়ে দেখবে চুলকে চুলকে ব্যাটার মর্মান্তিক দৃশ্য।!
কিন্তু কে জানত এই লোক ঘরের ভেতরে জামা- প্যান্ট খুলে চুলকাবে? ইশ! কী কেলে*ঙ্কারি হয়ে যেত আরেকটু হলে।
কিন্তু এখন বলবে কী?
সাদিফ অধৈর্য হয়ে বলল ‘ কী ব্যাপার? এসেছিলেন কেন বলছেন না যে!’
মারিয়া ঠোঁটের আগায় যা এলো তাই বলল ‘ ধূসর ভাইয়াকে খুঁজতে এসেছিলাম।’
সাদিফ টেনে টেনে বলল ‘ ধূসর ভাইয়া? কেন,শ্রদ্ধেয় আপু,আপনি না তার বন্ধু? বন্ধুকে কেউ ভাইয়া বলে? ‘
মারিয়া ভেঙচি কাট*ল, কট*মট করল। এ লোক সব জেনেশুনেও নাটক করছে। সাদিফ বলল,
‘ তা ধূসর ভাইয়া বুঝি আপনার আশায় পথ চেয়ে বসে থাকবেন এখানে? যে কখন আপনি আসবেন,আর তাকে কোলে করে নীচে নামাবেন? ভাইয়া প্যান্ডেলের ওখানে আছে, যান যান ঘর ফাঁকা করুন আমার।’
মারিয়া নাক ফোলায়। অভ্রদ্র লোক এমন ভান করছে যেন কক্ষ কিনে নিয়েছে। তার সাদিফকে কঠিন কিছু শোনাতে মন চাইল। কিন্তু দমে গেল পরক্ষনে। এই লোকের সাথে তর্কে জড়িয়ে লাভ নেই। এমন এমন কথা বলে, নিজেই অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
তাই মনে মনে হার মেনে চুপচাপ হাঁটতে নিলেই সাদিফ ডাকল,
‘ এই শুনুন…’
মারিয়া দাঁড়াল, ঘুরল না। ওভাবেই বলল
‘ কী?’
‘ পরেরবার আমার ঘরে নক করে ঢুকবেন। না না, নক টক বাদ, ঢুকবেনই না। এসব ম্যালেরিয়া,ট্যালেরিয়া ধারে-কাছে না আসাই ভালো। শ্বাসক*ষ্ট হবে।
মারিয়া ত্রস্ত ঘুরে গেল। রে*গে বলল ‘ দেখুন!’
পরপর নিজেই মিইয়ে এলো সাদিফের বেশভূষায়। ওর উন্মুক্ত বুক সরাসরি বিঁধে গেল চোখে। জায়গায় জায়গায় র*ক্তলাল দাগ। নখের আচ*ড়ে হিজিবিজি। ঘাড় গলা,মুখ সবস্থানে এমন দেখে, তার কোমল মন পরিতাপে ভরে গেল। অনুশোচনা করে ভাবল,
‘ আহারে! লোকটার কী অবস্থা হয়েছে! একসাথে এতগুলো বিচুটি পাতা দেয়া ঠিক হয়নি বোধ হয়। ‘
সে নরম কণ্ঠে বলল,
‘ আপনি বারবার আমার নাম ভ্যাঙাবেন না। আমার খারাপ লাগে।’
সাদিফ পাত্তাই দিলোনা তার ভদ্রতার। নিরুৎসাহিত জবাব ছুড়ল,
‘ হু কেয়ারস? তাতে আমার কী? আপনার খারাপ লাগা একান্তই আপনার।
মারিয়া চোখ রাঙিয়ে তাকায়। দৈবাৎ আক্ষেপটুকু গি*লে ফেলে রু*ষ্ট কণ্ঠে বলল,
‘ আপনাকে বলার মত আমার কাছে কোনও ভাষাই নেই। শুধু শুধু খা*রাপ লাগছিল এতক্ষণ । আসলে একদম ঠিক কাজ করেছি আপনার জামায় বিচুটি পাতা দিয়ে। তবে আমার উচিত ছিল, আস্ত আপনিটাকে নিয়েই বিচুটি বাগানে ছেড়ে দেয়া। চুলকাতে চুলকাতে ওখানেই শহীদ হয়ে যেতেন। আমি দেখতাম,আর হাত তালি দিতাম। অসহ্য লোক কোথাকারে!’
ক্ষো*ভ টুকু গলগল করে উগড়ে দিল মারিয়া। হনহনে পায়ে চলে গেল তারপর । সাদিফ আহাম্মক বনে থাকল কিছুক্ষন। পুরো কথা মাথায় ঢুকতেই ব্রক্ষ্মতালু অবধি দাউদাউ করে জ্ব*লে উঠল। এই মেয়েই আসল কাল*প্রিট? ওই তাহলে পাঞ্জাবিতে বিচুটি পাতা লাগিয়েছে?
সাদিফ চিবুক শ*ক্ত করল।
ঠিক আছে,ব্যপার না। শপথ করল,
‘ মিস ম্যালেরিয়া! আমি সাদিফ কথা দিচ্ছি, এর দ্বিগুন প্রতিশো*ধ আমি তুলব। ‘
____
ধূসরের অমসৃণ,খড়খড়ে হাতের মূঠোয় বন্দী হয়েও কোমল হস্তের কোনও হেলদোল নেই। সে দিব্যি আছে আনন্দে। এই ছোট্ট ছোট্ট স্পর্শ অনেক চাওয়ার পরে মিলছে যে! পিউ মোহময়ী হেসে আড়চোখে ধূসরের দিক চাইল। লম্বা মানুষটার গালের এক পাশ দেখে মনে মনে আওড়াল,
‘ আপনাকে ভালোবাসার পর থেকে আমিতো এক মুহুর্তও একা ছিলাম না ধুসর ভাই। সর্বক্ষন যে মানুষ আপনাকে হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে আর মস্তিষ্কের নিউরনে নিয়ে ঘুরেছে,সে একা হতে পারে?’
ধূসর তাকাল তখনই। পিউ দ্রুত চোখ ফেরায়,এনে ফেলে পায়ের পাতায়। ধূসর বললনা কিছু। বরং আরেকটু শক্ত করে হাত আকড়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
গেটের কাছে হৈচৈ বেঁধেছে। টাকা নিয়ে তর্ক লেগেছে দুই পক্ষের। দাবি মানছেনা ছেলেপক্ষ। এদিকে টাকা আদায় না হলে গেইট খুলবেনা স্পষ্ট কথা মেয়েপক্ষের। শোরগোল কানে আসতেই পিউ উৎসুক হয়ে তাকাল। গলা উঁচিয়ে উঁচিয়ে চেষ্টা করল দেখার। তার ভীষণ ইচ্ছে করছে ওখানে যেতে। গ্রামের বিয়েতে গেট ধরার মজাই আলাদা। আজ অবধি সৌভাগ্য হয়নি এসবের। কিন্তু শত প্রয়াসেও লাভ হয়না। এত মানুষের ভীড় ঠেলে তার চোখ পৌঁছাতে পারল না কাঙ্ক্ষিত জায়গায় । ব্যর্থ হয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। অনুরোধ করল,
‘ একবার যাইনা ধূসর ভাই!’
‘ না।’
নিম্নভার কণ্ঠে দীর্ঘশ্বাস ফেলল পিউ। মন খা*রাপ করে বলল,
‘ ছেলে তো সব জায়গায়ই থাকে। এরকম হলে তো নিজের বোনের বিয়ের গেটটাও ধরতে পারব না।’
ধূসর বাঁকা চোখে চাইল। পিউ মিনমিন করে বলল,
‘ না আসলে বলছিলাম যে….’
ধূসর আবার সামনে তাকায়। অকপট উত্তর দেয়,
‘ এখানকার ছেলেরা ভালো নয়। গতকালকের কথা মনে নেই? তোর নেই জানি,কিন্তু আমার আছে। আর তাই,কোনও রিস্ক আমি নেব না। যা বলছি, ভেবে-চিন্তেই বলছি। আমার সাথে একদিন দাঁড়িয়ে থাকলে তোর জাত যাবেনা নিশ্চয়ই?’
ধূসরের গমগমে কণ্ঠস্বর, তার জড়োতাবিহীন নিরুত্তাপ আচরন পিউয়ের ভেতরে আরো ভারী করে দোলা দিলো। আবডালে লুকানো এই অদেখা অধিকারবোধ শিরশির তুলল হৃদয়ে। সে বিমোহিত চেয়ে থেকে ভাবল,
‘ একদিন কেন,এক শতাব্দি আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেও প্রস্তুত আছি আমি। ‘
কোত্থেকে মুত্তালিব এসে হাজির হলেন। হাতে ভারী স্টিলের গামলা। পুরোটা ভর্তি মশলাদার চিকেন রোস্ট দিয়ে। ধূসরকে দেখেই আমুদে কণ্ঠে বললেন,
‘ আরে এই দেখো, তুমি এখানে? আমি সারা প্যান্ডেল খুঁজছিলাম।’
পিউয়ের চোরের মন,ছোট মামাকে দেখেই ঘাবড়াল। ধূসরের মূঠোয় থাকা হাতটা মোচড়ানো শুরু করল ওমনি। যাতে ধূসর ছেড়ে দেয়। নাহলে কী না কী ভেবে বসবেন উনি। মুরুব্বি মানুষ, এভাবে একজোড়া সমর্থ মেয়ে-ছেলে একে অন্যের হাত ধরে রাখলে কী ভালো ভাববে? কোনও দিন না। অথচ ধূসর ছাড়লই না। পিউ অসহায় লোঁচনে তাকালেও না।
মুত্তালিব ব্যস্ত ভীষণ। এক পলক ওদের হাতের দিকে দেখেননি অবধি। অমন তাড়াহুড়ো কণ্ঠেই ধূসরকে বললেন,
‘ কাল বললেনা, তোমরা সবাই পরিবেশন করবে? চলো,আমিতো শ্বাসও ফেলতে পারছিনা। এই দেখো রোস্ট সার্ভিস দিচ্ছি। ‘
ধূসর মৃদূ হেসে বলল ‘ হ্যাঁ করব। আপনি যান আঙ্কেল, আমি আসছি।’
‘ আচ্ছা বেশ বেশ। আমি যাই। এই পিউ বরযাত্রীর সাথে খেতে বসিস কেমন?’
পিউ ভী*ত হয়েই মাথা দোলাল। শ*ঙ্কিত নজরে ধূসরের দিক চেয়ে বলল,
‘ ছোট মামা কী ভাবলেন কে জানে!’
‘ কী ভাববেন?’
‘ না মানে,এই যে আপনি আমার হাত ধরে আছেন সে নিয়ে।’
ধূসর কপাল বাঁকাল। পরপর শিথিল করে বলল,
‘ পৃথিবীতে সবার মাথায় তোর মতো গোবর নেই।’
পিউয়ের মুখটা চুপসে গেল। বিড়বিড় করে বলল,
‘ বলেছে ওনাকে।’
কিছুক্ষন পর ধূসরের ফোন বাজল। বাম হাত দিয়ে পকেট থেকে বের করে রিসিভ করল। ওপাশ থেকে ইকবাল আহাজারি করে বলল,
‘ ধূসর! ভাই, আমাকে বাঁচা।’
ধূসরের মুখভঙ্গি পাল্টে গেল তৎক্ষনাৎ ।
‘ কী হয়েছে?’
সে যতটাই উদ্বীগ্ন হয়, ইকবাল ততটাই বোকা বোকা কণ্ঠে জানাল ‘ আমি হারিয়ে গিয়েছি।’
ধূসর ভ্রুঁ গোঁটাল,বুঝতে না পেরে বলল,
‘ হারিয়ে গেছিস মানে?’
সেকেন্ডে ভেসে এলো ইকবালের কাঁ*দোকাঁ*দো স্বর।
বলল,
‘ এক লোককে জিজ্ঞেস করেছিলাম মজুমদার বাড়িটা কোথায়। উনি একটা রাস্তা দেখালেন। সে রাস্তা দিয়ে এসে দুটো বাড়ি দেখতে পাচ্ছি। দুটোতেই বিয়ের গেট সাজানো। এখন আমি কোনটায় ঢুকব?’
ঘটনা বুঝতে ধূসরের মিনিট খানিক সময় লাগল। সতর্ক কণ্ঠে বলল,
‘ ওয়েট ওয়েট,তুই কি কোনও ভাবে গ্রামে….’
‘ হ্যাঁ রে ভাই হ্যাঁ ।’
ধূসর বিস্ময় নিয়ে বলল ‘ কিন্তু কেন?’
‘ সেসব পরে শুনিস বন্ধু।আপাতত আমাকে এসে নিয়ে যা। হাঁটতে হাঁটতে আমার পা দুটো খুলে যাচ্ছে ব্য*থায়।’
ধূসর বিদ্বিষ্ট শ্বাস ফেলে বলল ‘ তুই ভালো হবিনা ইকবাল?’
‘ হব হব,কালকেই হব। প্রমিস! এখন তো আয় মেরে ভাই।’
‘ আসছি,রাখ।’
লাইন কে*টে ধূসর আশেপাশে তাকাল। দূরে তুহিনকে দেখে ডাক ছুড়ল,
‘ তুহিন! তুহিন!’
দ্বিতীয় ডাক কানে গেল তার। ধূসরকে দেখেই ছুটে এসে বলল ‘ হ্যাঁ ভাই?’
‘ দুটো চেয়ার এনে দেবে?’
‘ এক্ষুনি দিচ্ছি।’
ছেলেটা আবার ছুটে গেল। দুহাতে দুটো লাল রঙের প্লাস্টিকের চেয়ার এনে বলল,
‘ এই যে ভাই।’
‘ আচ্ছা,তুমি যাও,রাদিফকে দেখলে একটু ডেকে দিও।’
‘ ঠিক আছে। ‘
তুহিন যেতেই ধূসর ইশারা করল ‘ বোস ‘
পিউ বসতে বসতে শুধাল ‘ ইকবাল ভাইয়ের কোনও সমস্যা হয়েছে? ‘
‘ না।’
‘ আমরা কি এখন বসে থাকব? ‘
‘ হু।’
‘ খাব না?’
ধূসর বিরক্ত চোখে চাইল।
‘ এত কথা বলিস কেন?’
পিউ ঠোঁট টিপে চুপ করল। একটুপর হাজির হলো রাদিফ। ছোট্ট ছেলেটাও পাঞ্জাবি- পাজামা পরেছে আজ। চমৎকার লাগছে দেখতে। গুরুতর ভঙিতে বলল,
‘ বড় ভাইয়া ডেকেছো?’
‘ হ্যাঁ।’
ধূসর পকেট থেকে ওয়ালেট বার করল। একশ টাকার তকতকে নোট নিয়ে বাড়িয়ে দিল ওর দিকে। বলল,
‘ এটা তোর।’
রাদিফ ঝলমলে হেসে হাতে নিল। কোঁকড়া চুল দুলিয়ে বলল ‘ থ্যাংক ইউ।’
ছুট লাগাতে গেলেই ধূসর ধরে ফেলল হাত।
‘ এমনি এমনি দিইনি,কাজ আছে।’
ছেলেটা ভড়কে গেছিল ধূসর টেনে ধরায়। কথাটা শুনে আগ্রহভরে বলল
‘ কী কাজ?’
ধূসর পিউকে দেখিয়ে বলল
‘ ওকে পাহারা দিবি। যতক্ষন না আমি আসব ও যেন কোথাও না যায়।’
পিউ হা করে বলল ‘ এটা কী হলো?’
ধূসর সেই উত্তর দেয়না। উলটে রাদিফকে বলল ‘ বুঝেছিস?’
রাদিফ মাথা ঝাঁকায়, বুঝেছে। পরপর পাশের চেয়ারখানা দখল করে বসে। ধূসর চলে গেল গেটের দিকে। জটলা ছেড়েছে। বরপক্ষ হার মেনেছে । টাকা বুঝিয়ে দিয়ে সক্ষম হয়েছে ভেতরে ঢুকতে।
***
বেলাল হুটোপুটি করছে বাড়িময়। বন্ধুবান্ধবের অভাব নেই। সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে বোনের বিয়েতে। এত বড় আয়োজন এ গ্রামে আগে হয়নি।
সে বাড়িতে ঢুকল সাদিফকে ডাকতে। কদিনে বেশ জমেছে দুজনের। সারা প্যান্ডেলে ওকে না পেয়েই এলো খুঁজতে।
বসার ঘর পেরিয়ে যাওয়ার সময় ডাকলেন রূম্পা বেগম। তিনি যাচ্ছিলেন উল্টোপথে।
‘ কীরে এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাস?’
‘ ওপরে।’
রূম্পা ভাবলেন বর্ষার ঘরের কথা বলছে। মৃদূ হেসে বললেন,
‘ ও বোনের কাছে যাচ্ছিস? যা যা আর কিছুক্ষন পরতো সারাজীবনের মতই চলে যাবে মেয়েটা।’
বলতে বলতে দীর্ঘশ্বাস ও ফেললেন। শেষ কথাটা শুনেই থেমে গেল বেলাল।
‘ চলে যাবে বলতে?’
‘ ওমা,বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি যাবেনা?’
বেলাল নেমে আসতে আসতে বলল,
‘ সেত যাবে,কিন্তু সারাজীবনের মত বললেন কেন খালামনি?’
তিনি মৃদূ হেসে বললেন ‘ বোকা! বিয়ে হলে মেয়েরা কী আর বাপের বাড়ি থাকে? শ্বশুর বাড়িই তো স্থায়ী ঠিকানা। ‘
‘ কী যে বলেন! আপুতো আসবে আবার তাইনা?’
‘ সেত আসবেই। কিন্তু মেহমান হয়ে। এই যেমন আমরা এলাম? বা ধর তোর বড় ফুপি এলেন? এরকম। কিন্তু এভাবে একসঙ্গে আর যে থাকতে পারবেনা। ম*রলেও মাটি পাবে সেই স্বামীর বাড়ির আঙিনায়।
বেলাল স্তব্ধ হয়ে বলল ‘ কী?সত্যি বলছেন?”
‘ তবে কী মিথ্যে বলি পাগল ছেলে? মেয়েদের জীবনটাইত এরকম। তারা বাবার বাড়ির অতিথি। চাইলেও যখন তখন বাপের বাড়ি আসতে পারেনা। মন ভরে থাকতে পারেনা। দেখবি একটা সময় আসবে,বছর হয়ে যাবে কিন্তু বর্ষা সংসার সামলাতে গিয়ে এ বাড়িমুখোও হতে পারছেনা আর। ‘
বেলালের মুখ বিবর্ন হয়ে এলো। এতদিন বিয়ে মানে হৈচৈ, আনন্দ,উল্লাস ভেবে আসা সে হঠাৎই বাস্তবটাকে পরতে পরতে চিনে ফেলল। চোখের সামনে জেগে উঠল বর্ষার সাথে তার সমস্ত খুনশুটি। আজকের পর ও এ বাড়ির মেহমান হবে? চাইলেও আসতে পারবেনা? ওখানেই থাকবে? এই সহজ, গতানুগতিক বিষয় গুলো দুর্বোধ্য ঠেকল ভীষণ । বোনের জন্যে আচমকা হুহু করে উঠল ভেতরটা। বেলাল ঢোক গিলে ওপরে তাকায়। পরপর ত্রস্ত পায়ে ছুট লাগায়।
রূম্পা হেসে বললেন ‘ দেখো ছেলের কান্ড,আস্তে যা পরে যাবি।’
বেলাল শুনল তবে থামল না। এক ছুটে এসে বোনের ঘরের সামনে দাঁড়াল। বর্ষা খাটেই বসে। পড়নে বেনারসি,গা ভর্তি গয়না। সাজগোজের ঝলকে ঘরটাও উজ্জ্বলতায় জ্ব*লছে। বেলালের চোখ ভরে ওঠে। ছলছল চোখে চেয়ে রয়। বর্ষার রুমে মারিয়া একাই। বাকীরা সবাই নীচে। কথা বলতে বলতে হঠাৎ সে তাকাল এদিকে। বেলাল কে দেখে স্বভাবসুলভ কণ্ঠে বলল
‘ এখানে কী চাই?’
বেলাল উত্তর দিলোনা। মারিয়া বলল,
‘ বর্ষাকে কেমন লাগছে বেলাল? ‘
বর্ষা চোখ পাকাল ওর দিক চেয়ে। মারিয়া ঠোঁট টিপে হাসছে। ওরা দুজনেই জানে বেলাল প্রসংশা করবেনা। উলটে বলবে রাক্ষ*সীর মতো লাগছে।
অথচ ছেলেটা উত্তর দিলোনা। নরম চোখে তাকিয়ে রইল। কোটর ভর্তি জল খেয়াল করতেই বর্ষার হাসি মুছে গেল। উদ্বেগ নিয়ে বলল,
‘ কী হয়েছে তোর?’
বেলাল নিরুত্তর। আচমকা দ্রুত বেগে এসেই জাপটে ধরল তাকে। শব্দ করে কেঁ*দে উঠল। বর্ষা চমকে যায়,মারিয়া অবাক হয়। বেলাল বাচ্চাদের মত কেঁ*দে কেঁদে জানাল,
‘ আপু তুই যাস না। আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারব না।’
বর্ষা ঠোঁট ফাকা করে মারিয়ার দিক তাকায়। জীবনে একটা ভালো কথা না বলা ভাইয়ের মুখে এসব শুনে হতবিহ্বল সে। কিন্তু ভালোবাসা কী কম ছিল? সেই ভালোবাসার জোরেই গলায় কা*ন্নারা দলা পাঁকায় এসে। নিজেও আর্ত*নাদ করে কেঁ*দে ওঠে। দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বেলালকে। দুভাই-বোন পাল্লা দিয়ে কাঁ*দে। মারিয়া টলটলে নেত্রে চেয়ে চেয়ে দেখে সব। নিজের ভাইটার স্মৃতিও নাড়া দিল মনে। তার সাথে সাথে ঘরের চারদেয়ালও সাক্ষী রইল ভাই বোনের এই আবেগঘন মুহুর্তের।
****
পিউ আ্শাহত শ্বাস ফেলে ফেসবুক খুলে বসে। আপাতত সে যে নড়তে পারবেনা, জানা কথা। তক্ষুনি রাদিফ সন্দিহান কণ্ঠে বলল,
‘ তুমি নিশ্চয়ই ভালোনা পিউপু। পুষ্প আপু মনে হয় অনেক ভালো তাইনা?’
পিউ ভ্রুঁ গুছিয়ে তাকায়। রাদিফ তো পুষ্পর থেকে ওকে বেশি পছন্দ করে। হঠাৎ এই ছেলে উলটো গান গাইছে কেন? সংশয় নিয়ে শুধাল,
‘ আমি ভালোনা?’
রাদিফ দুপাশে মাথা নাড়ল ‘ না।’
পিউ ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ তুই এই কথা বলতে পারলি?’
‘ আমার কী দোষ? এমনি এমনি কী বলছি? এই দ্যাখো,বড় ভাইয়া সবসময় তোমাকে চেক দেয়। খেয়েছ কী না,পড়ছো কী না,রাত জেগে ফোন টিপছো কী না,এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছো কীনা,কলেজ ফাঁকি দিচ্ছো কী না,এমনকি টেলিভিশনে সিরিয়াল দেখলেও বঁকা দেয় তোমাকে। কই, পুষ্প আপুকে তো দেয়না। তুমি নিশ্চয়ই কিছু করছো যেটা পুষ্প আপু করেনা। আর তাই ধূসর ভাই ওনার সাথে এসব করেনা। তুমি ভালো হলে ভাইয়া এমন খবরদারি করতেন না আমি নিশ্চিত।’
পিউ মনোযোগ দিয়ে শুনলো। নিজেও ভাবুক হয়ে বলল
‘ আমারও তো একই কথা। উনি এমন করেই আমায় বিভ্রান্ত করছেন। আর আজকাল যা করে বেড়াচ্ছেন তাতে তো….’
পিউ আনমনে বলছিল। হুশ ফিরতে থেমে গেল। রাদিফ বলল, ‘ তাতে তো কী?’
‘ কিছুনা। ‘
পরমুহূর্তে মুচকি হেসে বলল,
‘ আমার যে তোর ধূসর ভাইয়ার এই খবরদারি, এই বকাঝকা গুলোই ভীষণ ভালো লাগে,আদুরে লাগে সে কি তুই বুঝবি রাদিফ? বুঝবিনা।’
রাদিফ বিস্মিত হয়ে বলল ‘ বকা খেতে কারো ভালো লাগে?’
‘ আমার লাগে।’
‘ কেন?’
‘ বড় হলে বুঝবি।’
‘ আর সাত বছর পরেই হব তোমার মত। তখন বুঝব?’
‘ হ্যাঁ। ‘
রাদিফ মেনে নিল,
‘ আচ্ছা।’
পিউ হঠাৎ উঠতে গেল,
রাদিফ ধড়ফড় করে হাত চেপে ধরে বলল ‘ কোথায় যাচ্ছো?’
‘ ওয়াশরুমে।’
রাদিফ ঘনঘন মাথা নেড়ে বলল ‘ না না না,কোত্থাও যাওয়া যাবেনা। বোসো,বোসো।’
‘ ওয়াশরুমেও যাবনা?’
‘ না। বড় ভাইয়া কী বলে গেছেন শোনোনি? তোমার ওঠা নিষেধ।’
পিউ আশ্চর্য বনে বলল,
‘ আরে,আমিত আসব আবার।’
‘ কোনোও আসা আসি নেই। বোসো। ‘
‘ রাদিফ,আমার ওয়াশরুম পেয়েছেতো।”
রাদিফ সিরিয়াস ভঙিতে বলল,
‘ এখানে করে দাও। কিন্তু নো ওঠা-উঠি। বড় ভাইয়ার হুকুম অমান্য করাই যাবেনা। উহু,নেভার। ‘
পিউ বিহ্বল হয়ে চেয়ে থাকল কিছুক্ষন। তারপর ধপ করে চেয়ারে বসে বলল,
‘ তুই বড় হলে খুব বাজে ডিটেকটিভ হবি।’
‘ তুমি নিজেকে নিয়ে ভাবো। আরেকটু বড় হলেইতো চাচ্চু বিয়ে দিয়ে দেবেন তোমাকে। ‘
পিউ চোখ ঘুরিয়ে তাকাল ‘ তোকে বলেছে?’
‘ বলবে কেন? এটাইত হবে। এইযে,বর্ষা আপুর হচ্ছে। তারপর অন্যের বাড়ি গিয়ে হাড়ি-পাতিল মাজবে,কাপড় কাঁচবে,ঘর মুছতে মুছতে সর্দি বাধাবে। আর টিস্যু দিয়ে ফ্যাচফ্যাচ করে মুছবে।’
পিউ বিরক্ত হয়ে বলল ‘ এইটুকু বয়সে এত কথা কে শেখায় তোকে?’
‘ কেউ না। আমি ছোট থেকেই এমন।’
‘ ধুর,এর থেকে বাড়িতে বসে থাকলেই ভালো হতো। কেন এলাম বাইরে? ‘
রাদিফ বলল,
‘ এসে যখন গেলেই,বসে থাকো। বড় ভাইয়া এলে চলে যেও বাড়িতে।’
পিউ মৃদূ ধম*ক দিল,
‘ চুপ কর ধূসর ভাইয়ের চামচা।’
রাদিফ প্রতিবাদ করে উঠল,
‘ আমি ভাইয়ার চামচা নই,আমি ওনার লেফট হ্যান্ড। আর পুষ্প আপু রাইট হ্যান্ড।’
পিউ কৌতুহলী হয়ে বলল ‘ মানে?’
‘ ওইত ভাইয়া এসে গেছেন।’
রাদিফকে অনুসরন করে পিউ সামনে তাকাল। ধূসরের সাথে ইকবালকে দেখে ঝটকা খেল। চোখ কঁচলে আবার তাকাল। না,ইকবাল ভাইয়াই তো। উনি এখানে কী করে এলেন?
ততক্ষনে দুজন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ইকবাল ডগমগ হয়ে বলল
‘ এই পিউপিউ,কী অবস্থা আপু?’
পিউ নিশ্চিত হতে বলল ‘ ইকবাল ভাইয়া?’
ইকবাল তটস্থ হয়ে বলল ‘ এমা,তুমি আমায় চিনতে পারছোনা? এই যে আমি ইকবাল,তোমার প্রিয় ধূসর ভাইয়ের এক মাত্র কলিজার টুকরা বন্ধুটি।’
পিউ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। রাদিফ ধূসরকে শুধাল ‘ আমি এখন যাব ভাইয়া?’
‘ যা।’
সে ছটফটে পায়ে প্রস্থান নেয়। পিউ হতবাক হয়ে বলল
‘ আপনি এখানে কী করে এলেন?’
ইকবাল ধূসরের কাঁধ পেচিয়ে ধরে বলল
‘ জানের জিগার বন্ধু টাকে মিস করছিলাম খুব। রাতে ঘুম আসতোনা,কাজে মন বসতোনা। খেতে,চিবোতে ,গিলতে,শুতে সবেতে এত সমস্যা হতে থাকল তাই আর টিকতে পারলাম না। চলে এলাম।’
ধূসর বিরক্ত হয়ে বলল ‘ চুপ করবি তুই? যত্তসব বানানো কথা। ‘
ইকবাল দুঃখী কন্ঠে বলল ‘ ভালোবাসার দাম কোনও দিনই দিলিনা ধূসর। তাইনা পিউ?’
পিউ কিছু বলল না। তার শৈলপ্রান্ত এক জায়গায় গোঁটানো। গতকাল রাতের কথা ঘুরছে মাথায়। এরকম হুবহু আওয়াজই তো শুনেছিল ফোনে। তবে আপু আড়াল করল কেন? ইকবাল ভাইয়া ফোন করলেও বা,সেটা লুকানোর কী ছিল?
চলবে,
দুটো কথা বলি:
১, আমি কাজিন লাভ স্টোরি লিখছি। এটা থ্রিলার নয়,যে প্রতি পর্বে একটা টুইস্ট পাবেন। হ্যাঁ পাবেন,তবে স্বল্প ধারাল, আর অপেক্ষা করতে হবে সেজন্যে।
পঁচিশ পর্ব গেল ওদের মিল করিয়ে দেন,বিয়ে দেন, প্রেম দেন, এসব বলা পাঠকদের অনুরোধ আপনারা শেষ পর্ব পড়বেন। আমি তাড়াহুড়ো করে লিখতে পারিনা। যারা আমার রেগুলার পাঠক বিষয়টা তারা জানেন। সবাইকেই বলছি,গল্প ছড়িয়েছি মানে শেষ দাঁড়িটাও আমিই দেব। একটা একান্নবর্তী পরিবারের প্রত্যেকের একটা একটা করে ডায়লগ লিখলেও কতগুলো শব্দ হয় বলুন তো? অনেক হয়। আর এটাত একটা মজার,রোমান্টিক গল্প। আপনারাই বা এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন? গল্প দরকার পরলে শত পর্ব হোক,আমার চার ঘন্টা বসে লিখতে যদি কষ্ট না হয়,আপনাদের চার মিনিট ধরে পড়তে এত সমস্যা কীসের?
২. রেগুলার দেন না কেন?
ভাই আমার একটা পেশা আছে। একটা হাসপাতালে ডিউটিরত থাকি। ১২ ঘন্টা খেটে এসে যে লেখে সে বোঝে কত ধানে কত চাল। তাও দিচ্ছি। আপনারা এইটুকু ধৈর্য রাখুন। বহুবার এ কথা বলার পরেও যখন কিছু মানুষ বলে ‘এত দেরি করে দিলে পড়ার আগ্রহ কমে যায়’। এতে আমার কিছু আসে যায় না। কারণ বিশজন আমাকে ভালোবেসে,ধৈর্য নিয়ে পড়লে আমি সেই বিশজনের জন্যেই লিখতে প্রস্তুত। প্রত্যেক রাইটার শূন্য থেকে পূর্ন হয়। আমিও তাই হব ইনশাআল্লাহ!
৩. বিয়ে বাড়ির পর্ব শেষ করুন।
‘ হ্যাঁ করব। নিশ্চয়ই করব। কিন্তু কাহিনী আরো বাকী,সেগুলো হয়ে যাক,তারপর। আমার তো মনে হয় বিয়ে বাড়ির পর্ব গুলো সংখ্যাতীত মানুষই এঞ্জয় করছেন। আমিও এঞ্জয় করছি লিখতে গিয়ে। যারা করছেন না তাদের বলি,আগামী দুতিনটে পর্ব পর ওরা বাড়ি ফিরলে আপনারা আবার সেখান থেকে পড়া ধরবেন কেমন?
৪.
আজকের পর্বে ধূসর পিউয়ের মুহুর্ত এত কম কেন?
” কারণ এখানে প্রতিটা জুটিই গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ হাইলাইটস হয়ত ওরা,কিন্তু বাকীদের বর্ননাও আসবে। আবার বলছি,একান্নবর্তী পরিবার যেহেতু, সবার বিবরন আমি দেব।’
আজকের মতো এগুলোই। পরে মনে পড়লে আরো বলব????