নিশির তৃতীয় প্রহর। সাদিফ চিৎ হয়ে শুয়ে আছে ছাদের খোলা মেঝেতে। চতুর্দিকে নির্মল প্রভঞ্জনের ছোঁয়ায়, চোখ মুঁদে আসতে চাইছে। মাথার নীচে আড়া-আড়ি বাম হাত রেখে, উন্মুক্ত আকাশের দিক চেয়ে ও। একটা তারা নেই,না আছে চাঁদ হতে ছুটে আসা জ্যোৎস্নার কোনও অংশ। বরং গভীর অমানিশার তোপে সব কিছু অন্ধকার৷ ভালো লাগার,মুগ্ধ হওয়ার মতন কিচ্ছু নেই ওই অম্বরে। তবু সাদিফ নিষ্পলক চেয়ে। তার চোখের সামনে পরিচ্ছন্ন কিছু দৃশ্যপট। এইত,আজকের সব কথাগুলোই। তার বড় মায়ের বকা-ঝকার হাত থেকে পিউকে, ধূসরের বাঁচিয়ে নেওয়ার মুহুর্তরা৷ সবার মধ্যে ওকে আগলে, নিজের ঘরে চলা। এই এতটা সাহস আদৌ ওর আছে? সে হলে পারতো,সব কিছুতে পিউয়ের ঢাল হতে? পারতো ওকে রক্ষা করতে?
সাদিফের সকল প্রশ্নের জবাব এলো তাৎক্ষণিক ‘ না।’
সত্যিই পারতো না। ওর যে এই স্পর্ধা নেই। আজ অবধি বাবার চোখের দিক চেয়ে কথা বলেনি। মায়ের কথার অবাধ্য হয়নি। এই যে, সে ব্যবসা না দেখে চাকরি করছে,সেওত অনেক কাঠখড়ের ফল। প্রথম দিকে সায়েন্স নিয়েছিল পরিবারের কথায়। বাঙালী পরিবার,ছেলেমেয়ের উচ্চ পদের পড়াশুনা বলতে সায়েন্স বোঝে। বাকী দুটো বিভাগ যেন গোনাতেই পড়েনা। সেবারেও সাদিফ চুপচাপ মেনে নিলো। কিন্তু কী হলো? পড়াশুনায় খারাপ করল,অত্যাধিক মানসিক চাপে গড়মিল লাগিয়ে গায়ে এলো তূখোড় জ্বর। তবু টু শব্দ করেনি। ভাগ্যিস জবা ছেলের ভাবগতি বুঝেছিলেন! প্রথম বর্ষ পরীক্ষার পরেই পালটে দিলেন বিভাগ। সে অঙ্কে ভালো বিধায়,কমার্সে গেল। তারপর সেই মোতাবেক আচমকা একটা চাকরী হয়৷ ভালো বেতন,নামী-দামী কোম্পানি বলে কেউই দ্বিমত করেনি। করলে ওটাও হতোনা বোধ হয়। আচ্ছা,সে কী কাপুরুষ? এই যে সব মুখ বুজে মেনে নেয়,এদের কী মেরুদণ্ডহীন বলে?
এরকম একটা মেরুদণ্ডহীন মানুষকে কি পিউ ভালোবাসতো? হয়ত না। পিউয়ের যে তার বিপরীত মানুষটাকে পছন্দ। ধূসরের মত বীর! যে সবার চোখে চোখ রেখে ‘ হ্যাঁ’ কে ‘না’ বানানোর দুঃসাহস রাখে। সেবার পুষ্পর বিয়েতেই তো হাতে-নাতে পেলো প্রমাণ। ওই যোগ্যতা যে ওর নেই।
সাদিফ মাথা নাড়ল দুপাশে। না, এসব নিয়ে আর ভাববে না । পিউ ভালো আছে,ভালো থাকুক। এটাই তো ও চায়। সম্পর্কে ওর ভাবি হওয়ার পথে মেয়েটা, ওকে নিয়ে এত ভাবাভাবি ঠিক নয়। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নিষ্প্রভ সমীরণে মিলিয়ে গেল তা। তার সদ্য ফিরে আসা মেজাজটুকু, ধূসরের সঙ্গে পিউকে দেখে নিভে গেছিল। আর তারপর থেকে মস্তিষ্কের নড়চড় শূন্যে ৷ সাদিফ নিজেকে বোঝাল,
‘ যাদের নিয়ে ভাবলে,যা নিয়ে ভাবলে তোর মন খারাপ হয়,কষ্ট লাগে,কেন সেসব ভাবছিস সাদিফ? বরং এমন কিছু ভাব,যাতে মন ভালো হয়ে যায়। মন খারাপের লেশমাত্র না থাকে। ‘
আনমনা হলো ও। খুঁজতে বসল এমন কিছু কারণ,যা মনে করে ঠোঁটে হাসি ফুটবে৷ সহসা জাদুর ন্যায় মানস্পটে উদয় হলো মারিয়া। মেয়েটির প্রভাময় মুখখানি উঁকি দিলো। সাদিফ চমকে উঠল। অগোছালো পল্লব আছড়ে আকাশ পথে চাইল। না,পরিষ্কার মারিয়াকেই দেখছে সে। ওইতো,শাড়ি পরে এগিয়ে আসছে। কুচি ধরে হাঁটার ভীষণ ব্যস্ততা তার। কাধের দুপাশের চুল দুলছে বায়ুতে৷ তারপর কাছে এসে চোখ তুলে ওর দিক চাইল। ওমনি কেশে উঠল সাদিফ। খুকখুক করতে করতে উঠে বসল। নিজের মস্তকে চাটি বসিয়ে ত্রস্ত এপাশ ওপাশ নাড়াল।
আড়চোখে আবার ফিরল আসমানে। ভেসে উঠল মারিয়ার সাথে কাটানো মধুর সময়েরা। যখন,সেবার লোডশেডিং এ ওকে জড়িয়ে ধরার চিত্রটা স্পষ্ট দেখল সে, হাঁসফাঁস করে ওঠে এক প্রকার।
বিড়বিড় করে বলে,
‘ কী হচ্ছে এসব? নিশ্চয়ই শয়তানের কারসাজি। আর থাকা যাবেনা এখানে।’
পাটি আর চায়ের ফ্লাস্ক বগলদাবা করে ফিরে আসতে রওনা করল সে। দরজায় আবার হঠাৎ থামল,কী মনে করে ফিরে তাকাল। আশ্চর্য! এখন তো কিছু নেই। সব আগের মতোই তিঁমিরে ডুবে। তাহলে ওসব ভ্রম ছিল? হতে পারে সারাক্ষণ মেয়েটার সাথে থাকে বলে, ওর কথাই মাথায় ঘুরছে। হ্যাঁ, তা নয়তো কী? সাদিফ বক্ষ টানটান করল। এসে আগের জায়গায়,পাটি বিছিয়ে বসল। এই গরমে এসির থেকেও প্রাকৃতিক হাওয়া স্বাস্থ্যকর। অহেতুক কারণে এসব থেকে বঞ্চিত হওয়ার মানে হয়না তো।
অথচ তাও, মস্তিষ্ক জুডে মারিয়ার কথা ঘুরছে। সেই তাদের প্রথম সাক্ষাৎ। ধা*ক্কা খেয়ে দু-দিকে ছিটকে পরার সময়টা। কোমড় বেধে ঝগ*ড়া,একে অন্যকে শায়েস্তা করতে কী সব ছেলেমানুষী! সব ভেবে সাদিফের হাসি পায়। সচকিতে ব্যস্ত হাতে ফোন তুলল সে। গ্যালারি ঘেটে,লুকিয়ে ছোট্ট মারিয়ার তুলে আনা ছবিটা বের করল। পোঁকা খাওয়া দাঁতগুলো দেখে ফের হাসি দীর্ঘ হলো, বাড়ল।
আচ্ছা, বাড়ি ফিরে মেয়েটার তো খোঁজ নেয়া হয়নি। আজ সে পৌঁছেও দেয়নি। বাড়িতে গিয়েছিল ঠিকঠাক? ফোন করবে একবার? সাদিফ সময় দেখল। দেড়টা পার হয়েছে। থাক, ঘুমোচ্ছে বোধ হয়। পরপর ভাবল,ঢাকার বুকে এই সময় কে ঘুমায়?তাদের রিক্তও তো চোখ মেলে বসে থাকে। ও-ও হয়ত জেগে। সে চটপট কল দেয়।
মারিয়া সত্যিই ঘুমে। রিংটোনের শব্দে তার বিরক্ত লাগে। ‘চ’ সূচক শব্দ করে নড়েচড়ে ওঠে। লাগাতার আওয়াজ একটা সময় বাধ্য করল গভীর ঘুম ভাঙ*তে৷ ও ফোন হাতিয়ে কোনও রকম কানের কাছে ধরে বলল,
‘ হ্যালো… কে?’
সাদিফ হা করেছিল,এর আগেই মারিয়ার আওয়াযে থমকাল। তন্দ্রাচ্ছন্ন শব্দগুচ্ছ্ব চিত্তাকর্ষণ করল নির্নিমেষ।
একটু চুপ থেকে বলল,
‘ ঘুমোচ্ছিলেন ম্যালেরিয়া?’
সুপরিচিত,বক্ষ ছিদ্র করা সেই সম্বোধন শুনে মেয়েটার নিদ্রা উবে গেল। প্রকান্ড রূপে চোখ মেলল। অনিশ্চিত নজরে স্ক্রিনে চোখ বোলাল আরেকবার। না উনিই ফোন করেছেন,এত রাতে? তড়াক করে উঠে বসে বলল,
‘ আপনি? ‘
‘ বিরক্ত করলাম?’
‘ না না, বলুন না!’
‘ পৌঁছাতে অসুবিধে হয়নি তো?’
‘ উহু।
এখন ও ঘুমোননি যে?’
সাদিফ বলল,
‘ ঘুম আসছিল না। আমি কোথায় আছি জানেন?’
‘ কোথায়?’
‘ ছাদে।’
মারিয়া ভীত স্বরে বলল, ‘ ভ*য় লাগছেনা?’
‘ ভ*য় কেন লাগবে? ভ*য় মেয়েদের জিনিস,আমি কি মেয়ে’
‘ তাও ঠিক।’
তারপর ক্ষন নীরবতা নামল। মারিয়ার লজ্জা লাগছে ভীষণ! অহেতুক, অকারণে। ঠোঁটের পাশে অল্প স্বল্প মৃদূ হাসির চিহ্ন। মনে হচ্ছে,এই মাঝ রাতে সে প্রেমালাপ করছে।
সাদিফ ডাকল তখন, ‘ ম্যালেরিয়া!’
সে আচ্ছ্বন্নের মত জবাব দেয়, ‘ হু।’
‘ তখন ওভাবে কাঁদলেন কেন? মারিয়া নাম এত অপছন্দ আপনার? ‘
মারিয়া ভণিতা করল না। সোজা-সাপটা বলল,
‘ আপনার মুখে পছন্দ নয়।’
সাদিফ থমকাল। তার পুরূ, র*ক্তাভ অধর ঈষৎ কম্পিত হতে দেখা যায়। পরপর, গলার শ্লেষা পরিষ্কার করে বলল,
‘ কাল দেখা হবে। গুড নাইট।’
মারিয়া ছোট করে জবাব দেয়, ‘ হু। ‘
সাদিফ ফোন কাটল। তবে ললাটের ঠিক মধ্যমণিতে গাঢ় ভাঁজ পরেছে। তীক্ষ্ণ চাউনী স্ক্রিনের ওপর। খানিক পর নিভে গেল ঐ আলো। কিন্তু তার দৃষ্টিতে পরিবর্তন এলো না। বরং অনুচিন্তনের অতি নিম্ন জলাশয়ে পা ডুবল যেন। মারিয়ার কিছু কথা অদ্ভূত। নাকী এর পেছনেও রয়েছে বিশেষ কারণ! যদি থাকে,কী সেসব?
_______
আমজাদ সিকদার কক্ষে ঢুকলেন। গলার টাই ঢিলে করে দাঁড়াতেও পারেননি, ব্যস্তভাবে ছুটে এলেন মিনা বেগম। ওমন দুরন্ত কদম দেখে তিনি সাবধান করলেন,
‘ আরে আস্তে,পরে যাবে।’
মিনা শুনলেন না। তার উদগ্রীব পদযূগল স্বামীর নিকটে এসে থামল। চোখে-মুখে উত্তেজনা নিয়ে শুধালেন
‘ গিয়েছিলেন? ‘
আমজাদ হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে জবাব দেন, ‘ হ্যাঁ।’
‘ কী, কী বললেন উনি? নেবে মেয়েটাকে?’
মিনার রুদ্ধশ্বাস। উত্তর না পাওয়ার আগে দম ছাড়বেন না। আমজাদ বললেন,
‘ আগে একটু পানি দাও। তেষ্টা পেয়েছে।’
‘ ও হ্যাঁ আনছি। ‘
পানির গ্লাস সমেত ঝড়ের গতিতে হাজির হলেন মিনা। এতটা তাড়াহুড়ো দেখে আমজাদ ফোস করে নিঃশ্বাস ফেললেন। ততক্ষণে জামাকাপড় পালটে নিয়েছেন উনি।
গ্লাস হাতে নিয়ে বললেন, ‘ বোসো।’
মিনা অধৈর্য কণ্ঠে বললেন, ‘ বসতে হবে না। এমন করছেন কেন? আগে বলুন,যে কাজে গিয়েছিলেন হয়েছে? মাস্টার কী বলল? মেয়েটা পরীক্ষা দিতে পারবে?
‘ হ্যাঁ। ‘
ভদ্রমহিলা এতক্ষনে সত্যিই বুক ভরে শ্বাস নিলেন। শুষ্ক চেহারায় রক্ত প্রবাহ দেখা গেল।
‘ যাক বাবা! বাঁচলাম। মেয়েটার একটা বছর গ্যাপ গেল না তাহলে। আচ্ছা,অনেক অনুরোধ করতে হয়েছে আপনাকে তাইনা? নিশ্চয়ই প্রথমে রাজী হতে চাননি। অত ভালো কলেজ,ফেইল করলে এমন করবে স্বাভাবিক। মেয়েটা যে কী করল!’
আমজাদ গ্লাস টেবিলে রাখতে রাখতে জবাব দেন,
‘ আমার কিছুই করতে হয়নি। কিছু বলতেও হয়নি। ওনারা আগে থেকেই পিউকে ফাইনালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ‘
মিনার ভ্রুযূগল গুছিয়ে এলো। ‘ তাই? ‘
‘ হু।’
একটু থেমে বললেন,
‘ আমার আগে ধূসর গিয়েছিল ওর কলেজে। ‘
মিনার গোঁটানো ভ্রু এবার উঠে গেল কপালে। অবাক হয়ে বললেন, ‘ ওমা তাই না কি! ‘
‘ হু। তাইত শুনলাম। যা কথা বলার সে-ই বলে এসেছে। আর, পিউ শুধু ইংলিশ ফার্স্ট পেপারে ফেইল করেছে। বাকী গুলোতে নম্বর ভালো বলে, প্রিন্সিপাল আর দ্বিমত করেননি।’
মিনার রঙহীন অধর দুপাশে সরে গেল। হৃষ্ট চিত্তে আওড়ালেন,
‘ ছেলেটার সব দিকে খেয়াল আছে দেখেছেন? কিছু বলিওনি, তার আগে নিজেই দায়িত্ব নিয়ে চলে গেল। সত্যি! স্বর্নের টুকরো ছেলেটা।’
আমজাদ চুপ রইলেন। আজ আর যুক্তি খন্ডাতে গেলেন না। পিউয়ের রেজাল্ট কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
‘ দ্যাখো।’
মিনা ভাঁজ খুললেন। সবটাতে চোখ বুলিয়ে আশ্চর্য বনে বললেন,
‘ একী! একটাতে চৌদ্দ পেয়েছে,বাকী সব গুলোতে আটের ঘরে নম্বর? ‘
‘ মেয়েটা মনে হয় ওইদিন সত্যিই অসুস্থ ছিল। বলছিল তো লিখতে পারেনি। নাহলে এমন আকাশ পাতাল তফাৎ কারো নম্বরে হয়?’
মিনার চেহারা তৎক্ষনাৎ কালো হয়ে যায়। পিউকে মা*রার কথা মনে পড়তেই চোখ ভিজে ওঠে। মা সুলভ হৃদয় হুহু করে বলে,
‘ আমি কী ওকে একটু বেশিই বকে ফেললাম?’
‘ তোমার কাজই-তো তাই। আদর যাকে করবে সেটাও বেশি,বকলে সেটাও বেশি।’
মিনা কেঁদে উঠলেন ওমনি। আমজাদ নির্বোধ বনে বললেন,
‘ আরে কাঁদছো কেন? এটাতো এমনি বললাম।’
মিন্নার কান্না কমল না,বরং বাড়ছে। তিনি মহা-বিপাকে পড়ে বললেন,
‘ আহা,শুধু শুধু কাঁদছে। তুমিতো মেয়েকে শাসন করেছ মিনা। তোমার জায়গায় থাকলে যে কোনও মায়েরাই তাই করবে। আর তুমি অত বকছিলে বলেই তো আমি কাল ওকে কিছু বলিনি। ‘
মিনা ফ্যাচফ্যাচে গলায় বললেন,
‘ না, আপনি জানেন না,মেয়েটার গায়ে খুব জোরে স্টিলের খুন্তিটা মে*রেছিলাম। লাগলে কে*টে-ছুড়ে যেতে পারত। আমি যাই হ্যাঁ, এখন গিয়ে ওকে একটু আদর করে আসি।’
উত্তরের প্রতীক্ষায় ও রইলেন না, ছুটে ঘর ছাড়লেন তিনি। আমজাদ সেদিক চেয়ে দুপাশে মাথা নেড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
______
ধূসরদের জেলা পার্টি অফিসে প্রতি তিন বছর পরপর সভাপতি পালটানো হয়। ওখানে যতজন সদস্য রয়েছেন,তাদের মধ্য থেকে কেউ দাঁড় হয় সেই পদের জন্য। বাকী সদস্যের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয় সেই নেতা। নিয়মটা ওদেরই বানানো। স্থানীয় এম-পির অনুমতি,তার সাপোর্টের মাধ্যমেই গড়া এটি। যাতে কেউ দোষারোপ করতে না পারে,ওমুকে পা চেটে সভাপতিত্ব পেয়েছে। লক্ষ্য, আঈন সর্বজনীন হোক।
হিসেব মোতাবেক সেই ঘরোয়া নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে প্রায়। খলিল কদিন ধরে বিশ্রাম পাচ্ছেন না। একইরকম শশব্যস্ত সকলে। জয়ের পরেও তাদের দলের স্লোগান থেমে নেই। সবার সাথে উল্লাস ভাগাভাগির দরুন, ঢাক-ঢোল নিয়ে রাজপথে নেমেছিল ওরা। হৈহৈ করে গলা ফাঁটিয়ে চেঁচিয়েছে। জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে দেখা করে এসেছেন খলিল। হাসিমুখে করেছেন কুশল বিনিময়। তারপর শপথ গ্রহণ, আনুষ্ঠানিক অভিষেক
আজকে সমাপ্তি ঘটল সেসব নিয়মনিষ্ঠের । তবে পার্টি অফিস মুখরিত। বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে,আনন্দ-ফুর্তির আমেজ কাটতে।
ধূসর সেখানে এলো বিকেলের দিকে। অফিসে যাওয়ার পর থেকে ওর প্রবেশের সময়সূচি এটাই।
সদর দরজা পার হয়ে যখন ভেতরের আলোচনা সভায় এলো,থেমে দাঁড়াল তখনি। সবাই সটান দাঁড়িয়ে। খলিলের ডানে-বামে ইকবাল আর সোহেল, পেছনে বাকীরা। সঙ্গপাঙ্গ নিয়ে রেডি, যুদ্ধে নামবেন যেন। দৃষ্টির ভাষা দূর্বোধ্য। জলদগম্ভীর চোখ-মুখ। ধূসর কপাল কুঁচকে সবাইকে একবার করে দেখল। কারো মুখে কথা নেই,শুধু তাকিয়ে। কিছু আঁচ করার উপায় ও পাচ্ছে না। সে বিভ্রান্ত হয়ে বলল,
‘ কী হয়েছে?’
ইকবাল পেছনে দুহাত বেধে দাঁড়াল। চেহারা পূর্বের থেকেও গম্ভীর বানাল। থমথমে কণ্ঠে জানাল,
‘ আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ‘
ধূসর একবার খলিলের দিক চোখ বুলিয়ে বলল,
‘ কী সিদ্ধান্ত?’
খলিল বললেন,
‘ শুধু আমরা নই,পুরো পার্টি অফিসের সিদ্ধান্ত এটা ধূসর। আর তোমাকেও মানতে হবে।’
কপালের রেখা গাঢ় হলো ওর। খলিল, ইকবাল মুখ দেখা-দেখি করল।
‘ পার্টি অফিসে এবার সভাপতি,সহ-সভাপতি কোনও নির্বাচন হবে না।’
ধূসর বিস্মিত হয়। তবে সেসব চাপা রেখে সাবলীল জবাব দেয়,
‘ বেশ, সবাই না চাইলে হবে না। তুই সভাপতি থাক সেটাতো আমিও চাই। কিন্তু সহ-সভাপতি নির্বাচনে কী ঝামেলা?’
কারো মুখের পরিবর্তন হলো না। খলিল প্রতাপী গলায় বললেন,
‘ ঝামেলা নয়, বললাম না সিদ্ধান্ত? আমরা সবাই চাই, এবারের সভাপতি এই পার্টি অফিসের সহ-সভাপতি হোক। ‘
ধূসর চকিতে তাকায়। স্তব্ধ কণ্ঠে বলে,
‘ মানে?’
সাথে সাথে হেসে উঠল সকলে। এতক্ষণের নাটকীয় রাশভারী ভাবমূর্তি নির্নিমেষ উধাও হলো। ইকবাল আনন্দ ধ্বনিতে বলল,
‘ মানে সহজ! আমরা সবাই চাই,আমাদের সভাপতি সিকদার ধূসর মাহতাব হবে। যে এই পদের পুরোপুরি যোগ্য। ‘
‘ কিন্তু তু….’
ইকবাল টেনে নিলো কথা,
‘ আমিই, আমিই এই প্রস্তাব রেখেছি খলিল ভাইয়ের কাছে। তিনি রাজী,বাকীদের জিজ্ঞেস করলে তারাও এক পায়ে রাজি,তাই এবার নির্বাচন হচ্ছেনা।’
ধূসর হতবাক। বলতে যায়,
‘ কিন্তু…. ‘
‘ কোনও কিন্তু নয়,তুমি এই পার্টি অফিসের সভাপতি হচ্ছো ধূসর। এটাই কিন্তু ফাইনাল। আমার এমপি সাহেবের অনুমোদন নেওয়া শেষ। ‘
তিনি আরেকবার পেছনে দাঁড়ানো সবার দিক ফিরলেন। শুধালেন,
‘ এতে কার কোনও দ্বিমত আছে? কোনও একজনও দ্বিমত হলে বলে দাও।’
সোহেল ওরা চেঁচিয়ে ‘ না’ ‘না ‘বলে জানাল। খলিল বিজয়ী হাসলেন। অথচ ধূসরের চেহারায় একইরকম বিস্ময়। তিনি এগিয়ে এসে ওর বাহু ধরে বললেন,
‘ এত অবাক হচ্ছো কেন ইয়াং ম্যান? যোগ্য লোককেই তো আমরা পদটা দিচ্ছি বলো।’
ধূসর কথা খুঁজে পাচ্ছেনা। সে বাকরুদ্ধ! খলিল ঘোষণা দিলেন,
‘ আমি এই জেলার মেয়র খলিলুল্লাহ শাহ,ঘোষণা দিলাম,আজ থেকে এই জেলা পার্টি অফিসের সভাপতিত্ব গ্রহণ করবে সিকদার ধূসর মাহতাব। আর সহ সভাপতি হবে আমাদের প্রিয় ইকবাল হাসান। আগামীকালই তার সমস্ত আনুষ্ঠানিক বন্দোবস্ত হবে।’
সকলে হাত তালি দিলো। চিরচেনা জয়ধ্বনি তুলল। কেউ একধাপ এগিয়ে মুখে আঙুল ঢুকিয়ে সিটি বাজাল। ছয় সাতজন ছুটে এসে ধূসরকে কাঁধে তুলে নেয়। ছেলেটা তখনও বিমূর্ত। অবাক দুটো লোঁচন বিক্ষিপ্ত ভাবে ছুটছে ইকবালের মুখমন্ডলে। এসব যে ওর কারসাজি তার বুঝতে বাকী নেই।
সে ছেলের ঠোঁটে তৃপ্তির, নির্ভেজাল হাসি। ধূসর যেমন চেয়ে,একইরকম তাকিয়ে সেও। অনবরুদ্ধ প্রঃশ্বাসে ওঠানামা করে ওর বিস্তর বক্ষপট। আজকে ওর মত খুশি কেউ নয়। ধূসর সভাপতি হবে,তারপর একদিন এইভাবে হবে এই জেলার মেয়র। এরপর আকাশ ছোঁবে তার রাজনৈতিক প্রতিভা। আর আমৃত্যু পাশে রইবে সে। বিপদে,আপদে কাধে কাধ মিলিয়ে চলবে। এটাই যে ওর একান্ত ইচ্ছে। সেচ্ছ্বায় সভাপতিত্ব ত্যাগ,প্রিয় বন্ধুর জন্য ওর পক্ষ হতে ক্ষুদ্র এক উপহার। যা দুজনের বন্ধুত্বের কাছে নগন্য, ভীষণই নগন্য!
_________
পিউ তখন পড়ার টেবিলে। আজ থেকে যা ওর ধ্যান ও জ্ঞান। সত্যিই সে মন দিয়ে পড়ছে। এতটা মনোযোগ কোনও দিন দেয়নি পুস্তকে। ধূসরের প্রেমে হাবু-ডুবু খাওয়ার পরে তো একদমই না। কিন্তু এখন পড়তে হবে। সামলাতে হবে এই উড়ুউড়ু হৃদয়। ধূসর ভাইয়ের বড় মুখ সে ছোট হতে দেবে না। তার কথা রাখবে। যে করেই হোক,ভালো রেজাল্ট করতে হবে এবার।
সেই সময় মাথায় একটি হাতের স্পর্শ পেলো। কেউ কোমল হস্ত খানা চুলে বোলাচ্ছে। পিউ বই থেকে মুখ তুলে তাকাল। মাকে দেখেই ঘাবড়ে যায়। আবার মারবে না কী?
শঙ্কিত গলায় বলল,
‘ আমিত পড়তে বসেছি আম্মু।’
মিনা বেগম হাসলেন। প্রসঙ্গ এড়িয়ে শুধালেন,
‘ কিছু খেতে মন চাইছে? বানিয়ে দেব কিছু? ‘
পিউ অবাক হলো। গতকালকের মায়ের ওই চন্ডী রূপখানা সে ভোলেনি। চ*ড় মা*রার সময় টাস করে ওঠা শব্দটাও না। কিন্তু আজকে,মায়ের এই অনাকাঙ্ক্ষিত হাস্যবদন তাকে ভ্রান্ত করে। অবিশ্বাস নিয়ে শুধাল,
‘ হ্যাঁ? ‘
‘ কী হ্যাঁ? কী খাবি বল,বানিয়ে দেই। ‘
পিউ দোটানায় ভুগল। ফেইল করার পর সে মাকে একটু সমঝে চলছে। একটু না,পুরোটাই। এই যেমন কাল থেকে কোনও বায়না-ই করেনি। এমনকি দুপুরে পাতে যখন ওর সবচাইতে অপ্রিয় ঢেড়স ভাজি দিয়েছিলেন তিনি,তখনও টা-টু শব্দ করেনি। সে যে চোর, অপরাধী। অপরাধীদের কী এত চোটপাট মানায়? যতদিন না,একখানা বাধাই করার মত ফল করবে পরীক্ষায়,সেই পুরোনো প্রতাপটা ফিরবেনা।
এখন কিছু খেতে চাইবে কী না! মুখ খুললে মা চেঁতে যাবেন কী না ভেবে,
ভালো মেয়ের মত, মিনমিন করে বলল, ‘ তোমার যা ভালো লাগে বানাও।’
‘ আচ্ছা। তাহলে তোর ফেভ্রেট চিকেন ফ্রাই করব কেমন? ‘
পিউ ঘাড় কাত করল। ওকে এখন পান্তাভাত খেতে দিলেও রাজী। শুধু চ*ড় না মারলেই হলো।
‘ মন দিয়ে পড় মা। ‘
বলে,মাথায় চুমু খেলেন মিনা।
পিউয়ের চক্ষু ভ্রু ছুঁলো। তিনি বেরিয়ে গেলেন৷ ও শুধু হা করে চেয়ে থাকল ওদিকে। মায়েরা কী এইরকমই হয়? কাল মে*রে, বকে, আজ আদর করে গেল!
_______
পিউকে কলেজ প্রাঙ্গনে দেখেই ছুটে গেল তানহা। দুটো ডানা থাকলে উড়ে যেত যেন। বলা-কওয়া ছাড়াই দুহাতে জড়িয়ে ধরল গলা। পিউ খেয়াল করেনি ওকে। আচমকা ধরায় একেবারে হকচকিয়ে যা তা অবস্থা। যখন তানহাকে দেখল, ধাতস্থ হলো।
সে সরে এসে, কণ্ঠে উদ্বেগ ঢেলে বলল,
‘ কী অবস্থা তোর? ফোন ধরছিলিস না কেন? তুই জানিস আমার কত টেনশন হচ্ছিল?’
পিউ চমৎকার হেসে জানাল,
‘ টেনশন হবে কেন? আমিতো একদম ঠিকঠাক। ‘
তানহা চক্ষু পিটপিট করল। হিসেব মতো পিউয়ের এই হাসি বেমানান। কিছুই জানেনা কী না! ইতস্তত করে বলল,
‘ ইয়ে, বাড়িতে কিছু বলেছে? ‘
‘ বলেনি আবার? মা*র ও খেয়েছি।’
তানহা কণ্ঠে দরদ নিয়ে বলল,
‘ আহারে! আর আঙ্কেল?’
‘ আব্বু কিছু বলেনি।’
তারপর ওর দিক চেয়ে বলল,
‘ কিন্তু তুই এত দেরি করে ফর্ম ফিলাপ করছিস কেন? তুইত পাশ করেছিস। তোদের র্যাংক না আগে ছিল?’
তানহা মুখ কালো করে বলল,
‘ বা রে! তুই নেই আর আমি আগে আগে ফর্ম ফিল আপ করে ফেলব? তুই ছাড়া আমি কোনও দিন কিছু করেছি?’
পিউ মুগ্ধ হলেও বলল,
‘ তাই বলে এতদিন ফেলে রাখবি? বাড়িতে কিছু বলেনি?’
তানহা ওর হাত ধরে এগোতে এগোতে বলল,
‘ বলেছে। তাড়া দিয়েছে। আমি শুনলেতো! আমি রেজাল্টের দিনই এমন মনমরা হয়ে বসেছিলাম যে আম্মু ধরে নিয়েছিল আমার ফেল এসছে। ‘
একটু চুপ থেকে বলল,
‘ তুই অনেক শক্ত রে পিউ! সবগুলোয় এত ভালো নম্বর পেলি, একটাতে এত কম এলো, অন্য কেউ হলে কেঁদে নদী বইয়ে দিতো।’
পিউ ফোস করে নিঃশ্বাস ঝাড়ল। দুঃখের নয়, মুক্ত,প্রানবন্ত।
চিত্তচাঞ্চল্যে বলল
‘ আমিও কেঁদেছিলাম। কিন্তু সেই কা*ন্না আমার প্রিয় পুরুষের যত্ন আর ভালোবাসা পেয়ে এক চুটকিতে হাওয়া হয়ে গিয়েছে।’
‘ ধূসর ভাই?’
‘ তা নয়তো কে! ‘
তানহা বিজ্ঞের মত মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
‘ সেইত। আমাদেরই যত পো*ড়া কপাল। জীবনে একটা ধূসর ভাই নেই। তাই কান্না-কাটি করে মাথা ব্য*থা বানালেও, কেউ যত্নের ‘য’ ও করেনা ভাই।’
প্রচুর দুঃখ আর আফসোস শুনেও পিউ শব্দ করে হেসে উঠল। তানহা
হঠাৎ মনে করার ভঙিতে ওর আঙুল তুলে অনামিকা দেখল। জিজ্ঞেস করল,
‘ এই আংটিটা দিয়েছেন ধূসর ভাই? কী সুন্দর রে!’
পিউ মাথা ঝাঁকায়৷ দৈনিক একবার করে এই আংটিতে চুমু খায় সে। তানহা সেটার গায়ে হাত ছোঁয়াতে গেলেই সে টান মেরে কাছে নিয়ে বলল,
‘ ধরিস না। ধূসর ভাইয়ের স্পর্শ উঠে যাবে।’
তানহা মাথায় হাত দিয়ে বলল,
‘ বাবাহ রে বাবাহ! কী ঢং! হুহ,হোক আমার একটা বয়ফ্রেন্ড, তোকে আর চিনবই না।’
‘ আচ্ছা,না চিনলে বাসায় গিয়ে পরিচয় পত্র দিয়ে আসব। এখন চল।’
দুজন ফর্ম তুলে বেরিয়ে এলো। কাল জমা করবে। তানহা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল
‘ এই আমাকে বাবা নিতে এসছেন। গেটে দাঁড়ানো। ‘
‘ ও, তাহলে চলে যা।’
‘ তুই? গাড়ি এসেছে?’
‘ না। মানা করেছি।’
‘ রিক্সায় যাবি?’
‘ এত ভাবিস না,চলে যাব। তুই সাবধানে যা।’
‘ ঠিক তো?’
‘ হ্যাঁ রে মুরুব্বি। যা এখন।’
তানহা মাথা দুলিয়ে চলে গেল। পিউ বসল বেঞ্চে। ভেবেচিন্তে ধূসরকে মেসেজ করল,
‘ একটু আমাকে কলেজে এসে নিয়ে যাবেন ধূসর ভাই?’
সেন্ড করে শ্বাস আটকে বসে রইল সে। রাগ করবেন না রাজী হবেন কে জানে? দুপুর বেলা সে যে প্রচুর ব্যস্ত লোক!
মিনিট খানেক পর স্ক্রিন জ্বলে ওঠে। মানুষটা সংক্ষেপে উত্তর পাঠিয়েছে,
‘ আসছি। ‘
পিউ চকচকে চেহারায় ঠোঁট ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো। কলেজ পেরিয়ে গেটের বাইরে এলো। ফুচকার ভ্যানের সামনের একটা টুলে বসল।
পনের মিনিটের মাথায় ধূসরের বাইক দেখা যায়। হেলমেট পড়ুয়া তাকে চিনতে একবিন্দু ভুল হলো না পিউয়ের। ধূসর বাইক থামিয়ে,ডাকার আগেই ছুটে গেল সে। দম টেনে বলল,
‘ আপনি এসেছেন?’
ধূসর হেলমেট খুলে সরাসরি তাকাল। পিউয়ের জবার মত স্নিগ্ধ ঠোঁটে কী মায়াময় হাসি! এত খুশি হলো শুধু ওর আসাতেই?
অথচ সে হাসেনি। বরাবরের মত মুগ্ধতা ঢাকা পরল রাশভারীতার প্রকোপে। আর পাঁচটা প্রেমিকের মত মধু মিশিয়ে বলেনি,’ তুমি ডেকেছো,আর আসব না?’
বরং বলল।
‘ ওঠ।’
পিউ ত্রস্ত বেগে উঠে বসে। ব্যাগ রাখে কোলে। নিজে থেকে ডান হাতটা কাঁধে রাখে ওর। ধূসর স্টার্ট দিতে যাবে,সে মুহুর্তে সম্মুখে এসে হাজির হলো একজন। হাত উঁচিয়ে সালাম ঠুকল,
‘ আসসালামু আলাইকুম। ‘
পিউ সহজ ভাবে চেয়েছিল। মৃনাল কে দেখতেই তার চোখ উঠল ললাটে।
সালামের উত্তর না করে, আতঙ্কে ঢোক গিল*ল। একে এখনি আসতে হলো? এখন এই ছেলে যদি ধূসরের সামনে ওকে ভাবি ডেকে ফ্যালে? স*র্বনাশ! ধূসর ভাই ফ্লাইওভার থেকে ছু*ড়ে ফেলবেন ওকে।
মৃনাল সব সময়ের মতো দাঁত কেলিয়ে হাসছে। যেন আস্ত এক দাঁতের দোকান।
পিউয়ের গা পিত্তি জ্ব*লে ওঠে। শিল নোরার এক ঘায়ে সব দন্তপাটি ভে*ঙে দিতে মন যায়। তার চিন্তার মধ্যেই ধূসর উত্তর করল,
‘ অলাইকুম সালাম। এখনও যাসনি?’
পিউ অত্যাশ্চর্যে তাকায় ওর দিকে। আরো চমকাল যখন মৃনাল বলল,
‘ যাচ্ছিলাম ভাই,আপনাকে দেখে এলাম। এরপর পিউয়ের দিক চেয়ে বলল,
‘ ভাবি কেমন আছেন?’
পিউ ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিল। মৃনালের কথায় ফিরে এলো স্তম্ভিত৷
ওমনি হুটোপুটি গলায় বলল,
‘ আপনি, আপনি ওনাকে চেনেন ধূসর ভাই?’
সে উত্তর করার আগেই মৃনাল জবাব দেয়,
‘ চিনবেনা কেন ভাবি? আজ চার বছর ধরে আমরা একই পার্টি অফিসে কাজ করি যে৷ আপনি ওই যে মাঝেমধ্যে আমার ভাইকে দেখতে চাইতেন না? ইনিইত আমার ভাই।’
পিউয়ের কেবল মাত্র এক হওয়া ওষ্ঠযূগল ফের ফাঁকা হয়ে গেল। বিস্মিত বনে চাইল ধূসরের পানে। মৃনাল বলল,
‘ ভাবির তো আর কলেজে কাজ নেই। তাই আমারও ডিউটি নেই। তাইনা ভাই?’
ধূসর বলল,
” বাসায় যা। কাল দেখা হবে। ‘
মৃনাল ঘাড় নাড়ে। ধূসর বাইক ছোটাল। এগিয়ে গেল চাকা দুটো। অথচ পিউ স্বাভাবিক হতে পারল না। সে হতবিহ্বল ভঙিতে পিছনে চেয়ে। মারবেল চাউনী দেখছে মৃনাল কে। ছেলেটা হাসতে হাসতে হাত নাড়িয়ে বিদেয় জানাল ওকে। সে নড়েচড়ে উঠল,সামনে ফিরল।
‘ ধূসর ভাই!’
পিউ খুব আস্তে করে ডাকল। সে উত্তর করে,
‘ হু।’
‘ ওই ছেলেটা….’
তারপর থামল। বিলম্ব করে বলল,
‘ ও যে আমাকে মাঝেমধ্যে খাবার দিয়ে যেত,সেসব কী আপনি পাঠাতেন?’
পিউ নীভু গলায় প্রশ্নটা করেছে। ভাবল,ত্যারা লোক উত্তর দেবেনা। কিংবা বলবে,তাতে তোর কাজ কী? অথচ সে জানাল,
‘ তো আর কে দেবে?’
পিউ সাহস পেলো ওমনি। ধূসরের কাধে রাখা হাতটা শক্ত হলো। বলল,
‘ এর মানে,উনি যে আমাকে ভাবি ডাকেন? ‘
ধূসর একদম মুখের ওপর বলল,
‘ আমাকে ভাই ডাকে,তুই আমার বউ হলে,তোকে কী নানী ডাকবে? ‘
পিউয়ের বুক ধড়াস করে উঠল। ছলাৎ ছলাৎ করে কৈ মাছের মত লাফ-ঝাপ করল অনুভূতিরা। আজকাল ধূসর ভাই কেমন ফটাস ফটাস উত্তর ছোড়েন৷ সে একদম ভার নিতে পারেনা। পিউ মুখ চুপসে বসে থাকে। যথাযথ উত্তর পায়না।
তাকায় বাইকের দুধারের, একটা লুকিং গ্লাসের দিক। ধূসরের শ্যামলা কপোল দেখা যাচ্ছে। কী মনোনিবেশে ড্রাইভ করছেন উনি! পিউ হাসল। ভালোবাসার স্মিত,ফুলের ন্যায় পবিত্র হাসি। এই মানুষটার শক্ত চিবুক আর দৃঢ়তা যে কাউকে বিভ্রান্ত করতে যথেষ্ট। অথচ কে বলবে,ওনার ওই প্রসস্থ বুকেই এত ভালোবাসা লুকিয়ে! অন্তস্থলে এত মায়া মিশে!
এই যে সে না খেয়ে বের হলেই কলেজের চৌকাঠে খাবার দেওয়া,পরীক্ষায় সে যাওয়ার আগে সিট খুঁজে রাখা,কলেজে কী করছে না করছে সব আগেভাগে জেনে যাওয়া,এসবের কারণ আজ সুস্পষ্টভাবে বুঝে নিলো পিউ। এতটাও পসেসিভ কেউ থাকে? তাও এত আড়ালে? এমন অপ্রকাশিত অধিকারবোধ কজনের হয়? না,কারো তো হওয়ার কথাও নয়। এমন যে শুধুই ওর ধূসর ভাই। তার ভালোবাসার, বহু সাধনার, প্রিয়তম পুরুষ।
পিউ মোহাচ্ছন্নতা হারিয়ে যায়। খানিক এগিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে৷ রাস্তাঘাট -মানুষজন ভুলে ধূসরের চওড়া পিঠে মাথা ঠেকায়। হাত দুটো বেড়ির মত পেচিয়ে ধরে পেট। কড়া সুবাসে, লম্বা শ্বাস নিয়ে বড় বড় আঁখিজোড়া বুজে ফ্যালে। শন শন বাতাস কানে লাগে। ঝুটি করা কেশরাশি দুলে চলে তাতে। স্পর্শ পেয়ে, ধূসর ঘাড় বাকিয়ে ফিরে, নরম গলায় শুধাল,
‘ শরীর খারাপ লাগছে?’
পিউয়ের ফিনফিনে চঞ্চুতে প্রাণচঞ্চল হাসি। পিঠের সাথে ওমন মিশে থেকেই জানাল,
‘ উহু,আপনাকে জড়িয় ধরতে মন চাইল।’
ধূসর তৎক্ষনাৎ ব্রেক কষল। গম্ভীর গলায় শুধাল,
‘ কী?’
আজকে আর ভ*য় লাগেনি। ঘাবড়ায়ওনি পিউ। উলটে আরো দৃঢ় করল বাধন । একরকম পেটের কাছের শার্ট খা*মচে ধরে মুখ গুজে রাখল। যেন পৃথিবীতে সুনামি বইলেও সে নড়বেনা,সরবেনা। ধূসর কিছু বলল না। ফের বাইক চালাল। সামনে ফিরে ভিউ মিররে চেয়ে একবার পিউকে দেখে নিলো। সাথে মুচকি হাসল সেও।
_______
অফিস শেষে দুই ভাই বাড়ি ফিরলেন। রাত প্রায় দশটা তখন। কথা বলতে বলতে ঢুকে দেখলেন বসার ঘর শূন্য। কেবল রিক্ত,রাদিফ টিভি দেখছে। রান্নাঘর ও চুপচাপ। অত না ভেবে, দুজন চলে গেলেন দুদিক। আফতাব নিজের কক্ষে ঢুকলেন। আমজাদ ও স্বীয় রুমে ঢুকতে গেলে,দেখলেন দরজা বন্ধ। বাইরে থেকে শিকল টেনে রাখা। কখনও তো বন্ধ থাকেনা এমন। বিন্দু বিন্দু কৌতুহল নিয়ে যেই শিকলে টান বসাতে যাবেন,হূলস্থূল বাধিয়ে পথরোধ করে দাঁড়ালেন মিনা। ভদ্রলোক ভড়কে গেলেন অল্প।
বললেন,
‘ কী হয়েছে? এভাবে ভূতের মত এসে হাজির হলে কেন?’
মিনা জ্বিভে ঠোঁট ভেজায়। আমতা-আমতা জবাব দেয়,
‘ রুমে ছারপোকার স্প্রে দিয়েছি। এখন ঢোকা যাবেনা।’
‘ ছারপোকা আবার কবে হলো?’
‘ হয়েছে কদিন ধরে। ‘
‘ আমিত দেখিনি।’
মিনা মেকি তেজ নিয়ে বললেন,
‘ আপনি দেখবেন কী করে? এসব মেয়েলী কাজ। আপনি এখন রুমে ঢুকতে পারবেন না ব্যাস। ‘
‘ এ আবার কী কথা মিনা? জানো এ সময় বাড়ি ফিরব,আর এখনই স্প্রে করতে হলো তোমার? ক্লান্ত লাগছে,ফ্রেশ হব, বিশ্রাম নেব, তা না। ধ্যাত!’
মিনা অথৈ জলে পরার মত নিঃসহায় বনে তাকালেন। বললেন,
‘ আমার,আমার খেয়াল ছিল না। আপনি একটু মেজো ভাইয়ের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হন না। ওখানে গিয়ে শুয়ে থাকুন। কিছুক্ষণ পর আমি ডাকছি আপনাকে।’
আমজাদ বিরক্ত শ্বাস নিলেন। তর্কে হার মেনে রওনা করলেন ভাইয়ের কামড়ায়। পেছন থেকে ঠোঁট ফুলিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন মিনা।
আফতাব লুঙ্গিতে গিট বাধছিলেন। আমজাদ কে ঢুকতে দেখে বললেন,
‘ কী ব্যাপার ভাইজান? কিছু বলবে না কী? ফ্রেশ হলেনা?’
আমজাদ বিছানায় বসতে বসতে বললেন,
‘ আরে আর বোলোনা,তোমার ভাবি কী সব পোকামাকড়ের ওষুধ দিয়েছে রুমে। ঢুকতে পারব না এখন।’
‘ ও, তাহলে আমার জামা পরে নাও। ‘
‘ রুবা কোথায়? নীচেও ত দেখলাম না।’
‘ আছে কোনও কাজে। নাও ফ্রেশ হও।’
এই বলে নিজের একটা লুঙ্গি আর ফতুয়া বের করে দিলেন আফতাব। আমজাদ ফ্রেশ হতে যেই বাথরুমের দিক পা বাড়ালেন,ওমনি খট করে শব্দ হলো। দুভাই উৎসের দিক তটস্থ নজরে চাইলেন। কে যেন হুট করে দরজা লাগিয়ে দিলো বাইরে থেকে। সচকিতে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন ওনারা।
‘ কী ব্যাপার? কে লাগাল দরজা? ‘
আমজাদ ছুটে এলেন দোরের নিকট। টানাটানি করলেন,মিনাকে ডাকলেন। কেউ জবাব দিলোনা। এমনকি সাড়াশব্দ ও এলোনা। দুই ভাই মহা চিন্তায় পড়ে গেলেন এবার। আফতাব শঙ্কিত গলায় বললেন,
‘ আমাদের আটকে রাখল কেন ভাইজান?’
আমজাদ বিরক্ত চোখে চাইলেন৷ এটা কী ওনার জানার কথা? বোকা বোকা প্রশ্নের জবাবে বললেন,
‘ পাঁচার করে দেবে, তাই।’
আফতাব ঘাড় চুল্কালেন। আমজাদ আবার উচু কণ্ঠে মিনাকে ডাকলেন,এরপর মেয়েদের। জবাব এলো না। শেষে গায়ের জোর ঠেকিয়ে ধা*ক্কা দিতেই ওপাশ থেকে বলল,
‘ এত ধা*ক্কা-ধাক্কি করবেন না,সময় হলে খুলে দেব।’
আমজাদ রে*গে বললেন,
‘ এসব কৌতুকের মানেটা কী মিনা? খোলো বলছি।’
আবার সব নিশ্চুপ। আমজাদ দাঁত চে*পে ফিরে এলেন। ধপ করে বসে পড়লেন। লুঙ্গি,ফতুয়া ছুড়ে মা*রলেন বিছানার ওপর। আফতাব আর কী করবেন,পিলপিল পায়ে সেও গিয়ে বসে রইলেন ভাইয়ের পাশ ঘেঁষে।
দোর খুলল ঠিক দেড় ঘন্টার মাথায়। ঘড়িতে তখন এগারটা পঞ্চান্ন। দুই ভাইয়ের ব্যস্ত, চিন্তিত পায়চারি তৎক্ষনাৎ থামল। আবার একইরকম সচেতন চোখে একে অন্যেকে দেখলেন। আমজাদ ভাবলেন মিনা ,হা করলেন ওনাকে কঠোর কিছু শোনাতে। কিন্তু উঁকি দিলো আনিসের হাস্যজ্জ্বল মুখ। সে সাদর আপ্যায়নের মত করে বলল,
‘ এসো ভাইজান।’
ছোট ভাইকে দেখে কথা গিলে নিলেন তিনি। তবে গজগজে রা*গ নিয়ে হনহনে পায়ে এগোলেন। আফতাব এলেন পেছনে। দরজা আটকে দেওয়ার রহস্যের মীমাংসা করা দরকার। আনিস পেছন থেকে বললেন,
‘ ভাবি ঘরেই আছে। ‘
আমজাদ ক্ষিপ্র চোখে তাকালেন। মনে মনে স্ত্রীকেই খুঁজছেন তিনি। দরজা বন্ধ করার মানে শুনবেন না? ভাইয়ের কথা মতো নিজের ঘরের সামনে এলেন। এখন দরজা খোলা,চাপানো, আলোটাও নেভানো ভেতরের। আমজাদ অধৈর্য হাতে দরজা ঠেলে যেই ঢুকলেন ওমনি বোম ফাটার মত আওয়াজ হলো। আচমকা হওয়ায় আফতাব ভ*য় পেয়ে আনিসকে জাপটে ধরলেন। আমজাদ নিজেও হকচকিয়েছেন। সেকেন্ডে গায়ে কিছু উড়ে উড়ে পরছে বুঝতেই, চটজলদি দেয়াল হাতড়ে সুইচ টিপলেন। ঘর আলোতে ভরে উঠল,সাথে সহসা দশাধিক কণ্ঠ চেঁচিয়ে বলল,
‘ হ্যাপি বার্থডে…….. ‘
পরিবারের সবাই আছে। মিনা,রুবা,জবা, সুমনা,ধূসর, সাদিফ,পিউ, পুষ্প,রাদিফ, রিক্ত এমনকি ইকবালও। ছোটদের মাথায় তিন কোনা পিরামিডের ন্যায় বার্থডে টুপি। আমজাদ স্তব্ধ। হা হয়ে সারা ঘরে চোখ বোলালেন। সমস্ত জায়গায় বেলুন,ফুল,আর লাইট দিয়ে স্বাজানো। টেবিলে কেক রাখা। ওপরে আবার কোর্ট -প্যান্ট পড়ুয়া এক ভদ্রলোকের অবয়ব। আমজাদ বিস্ময়াভিভূত। আফতাব তখনও আনিসকে পেচিয়ে। ওইভাবেই গোল গোল,মুগ্ধ চোখে ঘরটা দেখছিলেন। আনিস বলল,
‘ এবারতো ছাড়ো ভাইজান।
‘ ও হ্যাঁ হ্যাঁ। ‘
আফতাব সরে এলেন। সবার মধ্য হতে পিউ ছুটে আসে। নিজের মাথার উচু টুপিটা লাফ দিয়ে,বাবাকে পড়িয়ে দিলো। কোমড় আকড়ে ধরে বলল, ‘ শুভ জন্মদিন আব্বু।’
আমজাদ হতচেতন হয়ে বললেন,
‘ আজ আমার জন্মদিন?’
আফতাব ও একই রকম গলায় বললেন,
‘ আসলেই কী আজ ভাইজানের জন্মদিন? কে বলল তোমাদের? ভাইজান,সত্যিই তোমার জন্মদিন আজ? কখনও তো বলোনি।’
আমজাদ নিজেই বিমূর্ত। আজ ২৫ এপ্রিল? হ্যাঁ তাইত। এই দিনেই তো তিনি পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন৷ পরিবারে বটবৃক্ষ হতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছেন এসব। এখন যে ছেলে-মেয়েদের জন্মদিন মনে রাখতে হয়। নিজেরটার সময় কই ?
তিনি থেমে থেমে শুধালেন,
‘ তোমরা, তোমরা কী করে জানলে আমার জন্মদিনের কথা? কে বলল?’
মিনা সহাস্যে জানালেন,
‘ ধূসর বলেছে। আমিওতো জানতাম না। এইসব বুদ্ধিও ওর।
আমজাদ দৃঢ়ীভূত নজরে ধূসরের দিক চাইলেন। সবার মধ্যে,দুহাত বুকে বেধে দাঁড়িয়ে সে।
‘ তোমাকে কে বলল?
‘ অফিসে আপনার পার্সোনাল ডকুমেন্টসে দেখেছি।’
আমজাদ জ্বিভে শব্দই পেলেন না। এইজন্যেই ছেলেটা তাড়াহুড়ো করে আজও অফিস ছাড়ল? সেতো ভেবেছিল পার্টি অফিসে যাবে। সুমনা বললেন,
‘ ধূসর সন্ধ্যায় ফিরেছে এইসব কেক,ফুল,বেলুন হাতে করে। তারপর আমরা সবাই মিলে বসে বসে বেলুন ফুলিয়েছি। ইকবাল আর ও সারা ঘরে টানিয়েছে। অনেক কষ্ট হয়েছে কিন্তু ভাইজান! এবার সপরিবারে একটা হাইফাই ট্রীট না দিলে হবে না।’
আনিস বললেন, ‘ তোমার খালি ট্রীট!’
‘ তা নয়তো কী!’
আমজাদের ওসবে কান নেই। তার কোটরে টলটল করছে জল। এক ফোঁটা চুইয়ে পিউয়ের মাথায় পরল। সে তখনও বাবাকে জড়িয়ে কী না! অশ্রুজলের ছোঁয়া পেয়ে তাকাল, বিস্মিত কণ্ঠে বলল ‘ আব্বু তুমি কাঁদছো?’
আমজাদ কেঁ*দে ফেললেন শব্দ করে। এই ক্ষুদ্র জীবনে কোনও দিন কেক কাটেননি তিনি। ছোটবেলায় অভাব দেখেছেন,বড় বেলা দায়িত্বের কষাঘাত। এসব বিলাসিতার সময় কই? ওনাকে কাঁদতে দেখে মুখ শুকিয়ে এলো সকলের। আনিস,আফতাব মায়া মায়া চেহারায় ভাইয়ের দুপাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। কাঁধে রাখলেন আশ্বাসের হাত। ধূসর এগিয়ে এলো। সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলবে, এর আগেই আমজাদ বিদ্যুৎ বেগে জড়িয়ে ধরলেন ওকে।
সবাই অবাক হয়। এমনকি ধূসরও। পরপর হাসল সে। নিজেও জড়িয়ে ধরল ওনাকে। বাকীরা একে অপরকে দেখল পুলকিত হয়ে। ধূসরের প্রতি, আমজাদের মনের ভেতর পুষে রাখা অভিমানটুকু এবার মুছল তবে?