এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ২৮

10 Min Read

ঠাসসস শব্দে কেঁপে উঠলো রুম।আম্মুর হাতের পাঁচ আঙুল আমার গালে লেগে গেলো।আম্মুর যথেষ্ট বকাবকিতেও মন ভরে নি।তার ধারণা তার মেয়ে অন্য জগতে প্রবেশ করেছে।তার মেয়ে এমন মানুষদের সাথে ফোনে কথা বলে তারা ভিডিও কলে অশালীন জিনিস দেখায়।আম্মুর ধারণা তার মেয়ে শুধু অসভ্য হয়েছে সেটা নয় কয়েক হাজার মানুষ কে ফোন নাম্বার দিয়েছে।আর ভিডিও কলের নিম্ন জগতে প্রবেশ করেছে।লজ্জা আর অপমানে মরে যাচ্ছি আমি।চড়ের থেকে বেশী লজ্জা পাচ্ছি আম্মু আর কাকি আমাকে নিয়ে কি ভাবছেন।ছোট খাটো একটা ভূমিকম্পণ হয়ে গেলো আমার জীবনে।আম্মুর মন থেকে এই ধারনা বের করাও সম্ভব নয়।
টেনশনে আম্মুর প্রেসার বেড়ে গিয়েছে।বাবা আর ভাইয়া এসে বাড়ির গম্ভীর ভাব দেখে প্রশ্ন করলো কি হয়েছে।আম্মু বললো আমি নাকি সবাই কে ফোন নাম্বার দিয়ে বেড়াচ্ছি।ভাইয়া জিজ্ঞেস করলে বললাম,ফেসবুকের কথা।ভাইয়া আম্মুকে হাজার বার বোঝালেও কোনো কাজ হলো না।আম্মু বললো তোর লাই পেয়েই তোর বোন এত খারাপ হচ্ছে।দুইটা ছেলে মেয়ে মানুষ করতে পারলাম না।ভাইয়া আর আমি দুজনেই হতাস।
–এই সব কিছুর পেছনে বিহান ভাই এর হাত আছে।উনি ছাড়া এই কাজ আর কেউ করে নি।কারণ আইডির পাসওয়ার্ড তো উনার কাছেই আছে।উনি ছাড়া আর অন্য কারো কাছে আইডির পাসওয়ার্ড নেই।
একটা মানুষ কত বড় অসভ্য হলে এমন করতে পারে ভাবা যায়।মানুষ দেখেছেন এমন অসভ্য মানুষ দেখেছেন।এই রকম বয়ফ্রেন্ড থাকার থেকে না থাকাই অনেক ভালো।উনার সাথে আজ ই ব্রেক আপ আমার।
–আম্মু তো ফোন নিয়েই নিয়েছে উনার জন্য শুধু মাত্র উনার জন্য।আমার কাছে গোপন একটা সিম আছে।রিয়ার ফোনে সিম টা অন করে বিহান ভাই কে কলের উপর দিয়েই যাচ্ছি একবার ও রিসিভ করে না।সকাল থেকে বিকাল গড়ালো সে ফোন ই রিসিভ করে না।কত বড় অসভ্য হলে এইভাবে ফোন রিসিভ না করে থাকতে পারে।রাতে রিয়ার ফোনে আমার আইডি লগ ইন দিয়ে আইডির পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিলাম।আইডির পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করার দুই মিনিট পর দেখি কল ব্যাক দিয়েছেন।এবার উনি কল এর উপর কল দিয়েই যাচ্ছেন। আমি কোনোভাবেই রিসিভ করছি না।টুপ করে নাম্বার টাও ব্লক করে দিলাম।এই মুহুর্তে আমি কোনো বিহান টিহান কাউকেই চিনি না।রিয়ার ফোনেও ফোন দিচ্ছেন আমি রিয়ার ফোন ও অফ করে রাখলাম।
–সন্ধ্যার পর পর ই তোহা আপু খুশিতে নাচতে নাচতে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করলো।রিয়া আমাকে বলছে এই দিয়া তোহা আপুর এত খুশির কারণ কিরে।রিয়াকে বললাম সেটাই তো ভাবাচ্ছে আমাকে।তোহা আপু রুমের ভেতরে এসেই বিশাল ডান্স শুরু করেছেন কিন্তু কেনো?প্রশ্ন করলে ১৫ টা মিস কল দেখালো।নাম্বার সেভ মাই ক্রাশ নাম্বার টা বিহান ভাই এর।বিহান ভাই এর কল পেয়ে সে এতটাই খুশি।খুশিতে আত্মহারা হয়ে তোহা আপু কল ই রিসিভ করে নি।নিভৃত নয়নে তাকিয়ে ছিলো ফোনে ভেষে আসা নাম্বারের দিকে।আদিক্ষেতা দেখে যা রাগ হচ্ছিলো ঢং করে নাম্বার ই রিসিভ করা হয় নি।আবার ক্রাশ দিয়ে সেভ।দুনিয়াতে আর মানুষ পেলো না ক্রাশের জন্য।
–তোহা আপু ভেবেছে বিহান ভাই নিশ্চিত কোনো রোমান্টিক কথা বলতেই এতবার ফোন দিয়েছেন।বিহান ভাই এর রোমান্টিক কথা গুলো আমাকে আর রিয়া শোনাবে বলেই ছুটে এসেছে।
–তোহা আপু বিহান ভাই কে কল ব্যাক করতেই বিহান ভাই কল টা কেটে নিজে ব্যাক করলেন।বিস্মিত হয়ে গেলাম দেখে অথচ আমি কল দিলেই রিসিভ করেন।এইদিকে তোহা আপুর কল কেটে দিয়ে ব্যাক দেওয়া হচ্ছে।তোহা আপু উত্তেজিত মনে খুশি হয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশের মানুষ টা বলে উঠলেন,তোহা ইমারজেন্সি একটু দিয়াদের বাসায় যাও তো।দিয়ার কাছে গিয়ে ফোন টা দাও।বলবা ওর এক্সাম এর বিষয়ে ইমারজেন্সি কথা আছে।তোহা আপুর মুখটা চুপসে গেলো তার ক্রাশ এটা বলার জন্য ইমারজেন্সি কল দিয়েছিলো।তোহা আপু বললো,বিহান ভাই দিয়া আমার সামনেই আছে নিন না কথা বলুন।আমি জোরে বললাম,তোহা আপু আমি কোনো বিহান ভাই টিহান ভাই কে চিনি না বলে দাও।আর আমি কথা ও বলবো না।বলেই তোহা আপুর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে কেটে দিলাম।
–তোহা আপু,রিয়া আর আমি তিনজনে সুয়ে আছি বিছানায়।সকালের ঘটনার রিপিট করে তোহা আপু আর রিয়া হেসে যাচ্ছে।ওদের হাসি দেখে আমার আরো রাগ হচ্ছে।আমি তো আর বলতে পারছি না আমার আইডির পাসওয়ার্ড বিহান ভাই এর কাছে আছে।
তোহা আপু মহা চিন্তায় আছে,,বিহান ভাই আসলে কার সাথে রিলেশন করবেন।মেয়েটা কি তার থেকেও সুন্দর হবে।বিহান ভাই এর বিয়ের দিন সে কিভাবে সহ্য করবে।ব্যাপার টা খুব ই ভাবাচ্ছে তাকে।তোহা আপুর চিন্তা দেখে ডিপ্রেশন এ চলে গেলাম আমি।
___________________________________
লাল স্কার্ট আর লাল টি-শার্ট পরে ঠোঁটে খানিক টা লাল লিপিস্টিক পরে রওনা হলাম মামাদের বাসায়।বিহান ভাই নেই নিশ্চিন্তে যেতেই পারি।কারণ মামির শরীর খুব খারাপ রান্না করে দেওয়ার মানুষ নেই।বিভোর ভাই এর আম্মু মাঝে মধ্য রান্না করে খাবার দিয়ে আসছেন।বাসার ভেতরের সব কাজে তো আর একজন কে ডেকে ডেকে আনা যায় না।এইজন্য মামি অনেক রিকুয়েষ্ট করেছে আমি যেনো যায়।ব্যাগে কয়েক সেট জামা কাপড় নিয়ে রওনা হলাম।১৫ মিনিট পরে মামাদের বাসায় পৌছালাম।
মামা আজ বাড়িতেই আছেন?মামা কে দেখেই বললাম মামা কেমন আছেন?মামা স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বললেন,, তুই এসছিস মা।তুই থাকলে আমি একটু নিশ্চিন্ত হই।তোর মামির পায়ের ব্যাথা বেড়েছে আমি কি আর সব সময় বাসায় থাকতে পারি।মামাকে বললাম একদম চিন্তা করবেন না মামা এমি এসে গেছি।মামির কাছে গেলাম গিয়ে দেখি সুয়েই আছে।মামিকে বললাম তোমার ছেলে নেই তাই এসছি থাকলে আর আসতাম না বুঝলে।মামি বললো,আমার ছেলে কিন্তু তোর জন্যই বাড়িতে আসে।
তোমার ছেলের নাম ও শুনতে চাই না।এখন কি কাজ করতে হবে সেটা বলোতো।
ঘর ঝাড়ু দেওয়া হয় নি ঠিক ভাবে।পারলে কর না পারলে থাক মা।
সব গুলা রুম ঝাড়ু দিয়ে বিহান ভাই এর রুমে প্রবেশ করলাম।বিহান ভাই এর ঘর অনেক দিন মনে হয় ঝাড়ু দেওয়া হয় না।রুম টা ঝাড় দিয়ে বিছানা ঝেড়ে বিছানায় রেস্ট নিচ্ছি।
আমার জীবনের সব শান্তির বিনাশ ঘটাতে দেখি আমার মহা শত্রু হাজির।এটা কিভাবে সম্ভব বিহান ভাই এখন বাড়িতে।চোখ মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করেই রুমের দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দিয়েই শার্ট এর বোতাম খোলা শুরু করলেন।ঘাড় থেকে ল্যাপটপের ব্যাগ টা নামিয়ে বিছানায় রাখলেন।আমার দিকে একবার আড়চোখে তাকালেন,তাকিয়ে আবার শার্ট এর বোতাম খুলতে লাগলেন।শার্ট খুলে আলনায় মেলে দিয়ে টাওয়াল কাঁধের উপর দিলেন।উনাকে দেখেই এক দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করতে উনি আমার দুই হাত দরজার চেপে ধরলেন।ভয়ে হৃদপিন্ড থর থর করে কাঁপছে আমার।প্রচন্ড রেগে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
–খানিক সময় তাকিয়ে থেকে বলেন,খুব সাহস হয়েছে তাইনা? খুব সাহস বেড়ে গিয়েছে তাইনা শ্বশুরের মেয়ে!
–ক ক কোন সাহস।
–আমার ফোন রিসিভ করা হয় না,ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ আমি সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
–দেখুন আপনার এখন এগুলা নিয়ে মাথা না ঘামালেও হবে।কারণ আপনি এখন আমার প্রাক্তণ বয়ফ্রেন্ড?
–হোয়াট দ্যা জোকস। প্রাক্তন হলাম কখন।
–হয়েছেন।আমি ব্রেক আপ করেছি আপনার সাথে।সো আমাদের ব্রেক আপ।
–বাহ!বাপ দাদার মতো বাটপার।বংশের কোনো গুন ই বাদ যায় নি তোর।ব্রেক আপ করেছে শ্বশুরের মেয়ে।অথচ তার জামাই জানেই না।ব্রেক আপ কি তুই নিজে নিজে করেছিস।
–তাহলে কি আর দশজন কে নিয়ে করবো।
–বাহ নাইস ব্রেক আপ।প্রেমিকা ব্রেকাপ করেছে প্রেমিক সেটা জানেই না।
–কিসের প্রেমিক হ্যাঁ।আপনি আমার ভাই।মামাতোওওওওও ভাই।
–ওয়াও ফুফাতো বোন ফোন টা কি তোর।
উনার হাতে আমার ফোন দেখে অবাক আমি।
–খুব অবাক হচ্ছিস তাইনা?আমাকে কি মফিস আর মাসুদ পেয়েছিস।আমার সাথে বাড়াবাড়ি করলে তার ফলস্বরুপ কি হবে বলি শোন তাহলে?ব্রেকাপ তোর কোনদিন ই হবে না।তোর ফোন এভাবেই আমার হাতে চলে আসবে টের ও পাবি না।বেশী বাড়াবাড়ি করে আমাকে স্টুডেন্ট লাইফে বিয়ে করতে বাধ্য করিস না বুঝলি।
–উনার কথা শুনে অসহায় নয়নে তাকিয়ে রইলাম।মানে উনি আমি যায় করি কখনোই ব্রেকাপ করবেন না।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম আপনি তোহা আপুর কল কেটে দিয়ে ব্যাক করেন আর আমার কল রিসিভ করেন ব্রেকাপ করবো না কি করবো।মানুষ নিজের প্রেমিকার কল কেটে দিয়ে ব্যাক করে আর আপনি।
–আমি আর অন্য মানুষ এক না তাই।তোর কলেজের যাবতীয় আপডেট আমি দেই তোকে।লেখাপড়া জনিত সব আপডেট আমার কাছেই থাকে।তোর ফোনে টাকা থাকলে আমার বাড়তি চিন্তা হয়।কখন কাকে মিস কল দিয়ে কথা বলবি তার ঠিক নেই।এ কারণে ইচ্ছা করেই আমি কল রিসিভ করি।কারণ আমি ঠিক ই আমার সময় বুঝে সকালে থেকে ঘুমোনোর আগে পর্যন্ত তোর খোজ রাখি।
–দেখুন এত কথা শুনতে চাই না।আমাকে ছাড়ুন আপনি এক্ষুণি ছাড়ুন।
–এমনি তে অনেক সাহস দেখিয়েছিস, ছেলেরা তোকে কিস ইমুজি পাঠায়।
–আমি চার জনের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেছি বলে আপনি সবার টা করবেন।জানেন কত বিরক্ত করেছে আমাকে।
–কারন তোর এটাই ভাল লাগে।
যারা কিস পাঠায় তাদের খুব ভাল লাগে তাইনা?কিস খুব ভাল লাগে।
–রাগে বললাম হ্যাঁ লাগে।
কথাটা মুখ থেকে বের হতেই দেখি উনার হাব ভাব ভালো না।এমনইতেই হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।এবার মুখ এগিয়ে আনছেন।মুহুর্তের মাঝে আমার ওষ্ট ওনার আয়ত্ত্বে চলে গেলো।আমি শুধু উমম উমম সাউন্ড করছি।কেটে কয়েক মিনিট।অসভ্য মানুষ টা এতক্ষনে ছাড়লেন আমাকে।দম বেরিয়ে যাচ্ছিলো আমার।উনি কি ইমরান হাশমি হয়েছেন।দুষ্টুদের মতো হাসছেন।আমাকে রাগ্ব ফুঁশতে দেখে আমার দিক্ব খানিক টা ঝুঁকে এসে বললেন,,”যদি তুমি চাও রিভেঞ্জ নিতে পারো পিচ্চি।আমি বাঁধা দিবো না।”

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।