সামনে তিন কেজি ছোট মাছ আর হাতে বটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।কয়েক হাজার মাথা হবে এই মাছের যদি বিহান ভাই এর একটা মাথা কাটতে পারতাম তাহলে আর এত গুলো মাছের মাথা আমার আর কাটা লাগতো না।উনার এই একটা মাথা কেটে কুচি কুচি করে মুড়িঘন্ট করে উনার গোরস্হানে রেখে আসলেই শান্তি পেতাম।মাছ আর বটি নিয়ে আমাকে ভাবান্তর দেখে বিহান ভাই বললেন কি ভাবছিস দ্রুত কাজ কর।
‘উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,ছাই কোথায়? ছাই ছাড়া মাছ কাটবো কিভাবে?’
‘দেখ কাজের খালা এনে রেখেছে খুজে দেখ পেয়ে যাবি।’
খুজতে খুজতে ছাই পেয়ে গেলাম।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলসা হলাম আমি।যে কিনা এক গ্লাস পানি ও ঢেলে খেতে চাই না সেই আমাকে দিয়ে এখন এত কাজ করানো হচ্ছে।তাতে আবার বলে দিয়েছেন সুন্দর ভাবে মাছ কাটবি নাড়িভুড়ি কিচ্ছুই যেনো থাকে না।প্রায় বিশ মিনিট হয়ে গিয়েছে মাছের দশ ভাগের এক ভাগ ও কাটা হয় নি।হঠাত শুনি কানে বিড়ালের মিউ মিউ সাউন্ড হচ্ছে।এই দিকে বিহান ভাই বাইরে কিছু একটা আনতে গিয়েছেন।টুপ করে দরজা টা খুলতেই বিড়াল টা ভেতরে প্রবেশ করলো।বিড়ালের সামনে মাছ গুলো রেখে বললাম নে তোর পেট টা খালি মনে হচ্ছে দ্রুত খেয়ে নে বাপ।খেয়ে আমাক উদ্ধার কর।বিড়ালের দশ মিনিট ও লাগলো না মাছ খেয়ে ভেট ভর্তি করে আরাম করছে। বিড়াল টাকে আবার বাইরে বের করে দিয়ে মাছ ধুয়ে হাত ধুয়ে চুপটি মেরে বসে রইলাম আমি।কিছুক্ষণ পরে বিহান ভাই এসে বললেন মাছ কাটা শেষ তোর।
‘হেসে উত্তর দিলাম হ্যা সব মাছ কাটা শেষ।’
‘রিয়েলি কিভাবে সম্ভব এত মাছ এতটুক টাইমে কেটে ফেললি।কই দেখি।’
‘মাছ দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন বাকি মাছ কোথায়।এতো ৩০০ গ্রাম মাছ ও হবে না।কাটতে গিয়ে কি কাচাই খেয়ে ফেললি বুঝলাম না।মাছ কোথায় ফেলেছিস সত্যি করে বল।’
‘কি যে বলেন না আপনি?দেখেন এত গুলা মাছের এত গুলা মাথা এত গুলা হাত পা এসব কেটে কুটে ফেলার পর মাছ এতটুকুই আছে।’
‘সিরিয়াসলি?ওকে আবার মাছ কিনে আনি।দেখি হাত পা কাটলে কত টুকু থাকে।’
‘এই না না। আজকে না। অন্যদিন কিনে আনবেন তাতেই হবে।’
‘বিহান ভাই বললেন রান্না ঘরে আয় আমি রান্না করবো তুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকবি।’
এমন সময় টুং টাং শব্দে কলিং বেল বাজছে।বিহান ভাই বললেন দেখ তো দিয়া কে এসছে দরজা টা খুলে দে।দরজার কাছে গিয়ে দরজা টা খুলে দেখি উনার কাজের খালা এসছে।উনাকে দেখেই আমি উত্তেজিত হয়ে গেলাম আর বললাম কি সমস্যা খালা আপনি এত লেট করে এসছেন কেনো? জানেন না উনি ব্যাচেলর মানুষ উনার মাছ টাস এগুলা কে কাটে।খালা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন আরে বৌমা কেমন আছো তুমি?উনার দিকে তাকিয়ে অবাক আমি আমাকে এইভাবে বৌমা ডাকছেন কেনো উনি?আমি ভ্রু কুচকে বললাম বৌমা মানে।খালা আবার ও হেসে বললেন,বাবাজান ও তো বললো আম্মা যে খালা আপনার বাসার সামনে মাছ থাকলে তিন কেজি গুড়া মাছ নিয়ে আসুন আপনার বৌমাকে দিয়া মাছ কাটাবো আজ।খালার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,তো আমাকে বৌমা বলছেন কেনো?উনি আবার ও হেসে উত্তর দিলেন বাবাজান তোমার ছবি দেখিয়েছে আর বলেছে এটা আপনার বৌমা খালা বাসাটা ভালভাবে গুছিয়ে রাখুন এখন থেকে রোজ তার যাওয়া আসা হবে এ বাসায়।আমি উনার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম বিহান ভাই বলেছেন আমার কথা।রান্নাঘর থেকে বিহান ভাই এগিয়ে এসে বললেন,খালা আপনার বউমা পিচ্চি মানুষ হুটহাট রেগে যায় আর বোঝে কম।ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিন তো সংসার টা।খালা হেসে বললেন কোনো ব্যাপার না বাবা আমি সব বুঝিয়ে দিবো।বিহান ভাই খুন্তি নাড়াতে নাড়াতে বললেন কি ব্যাপার খালা হুট করেই আপনি এলেন যে কোনো দরকার আছে।খালা বললো বাবা একটা কথা বলতে এসছি আমার সাথে একজন এসছে।মেয়েটার বয়স খুব ই কম হার্ট ছিদ্র হয়ে গিয়েছে অর জামাই খুব কাঁন্নাকাটি করে টাকার অভাব।চিকিৎসা করতে পারে না আবার ভিক্ষা ও করতে পারে না।তুমি একটু দেখবা বাবা।বিহান ভাই বললেন ভেতরে নিয়ে আসুন খালা।খালা গিয়ে উনাদের ভেতরে নিয়ে আসলেন।উনাদের দেখেই আমি অবাক হয়ে গেলাম এরাই তো তারা রোজ যাদের বেলকনিতে দেখি।বিহান ভাই কে বেলকনির ঘটনা টা খুলে বললাম।বিহান ভাই মহিলাটিকে খুব ভালো ভাবে দেখে নিজের একটা কার্ড দিয়ে দিলেন। হয়তো উনার চিকিৎসার সব দায়িত্ব বিহান ভাই নিজেই নিবেন।খালা সহ মহিলাটা যেতেই বিহান ভাই জানালা দিয়ে দেখেন বিড়াল টা বমি করছে।উনি আমাকে ডেকে বললেন বিড়াল কে পেট ভরে মাছ খাইয়েছিস তো দিয়া।কথাটা শুনেই আতকে উঠলাম উনি জেনে গেলেন যে আমি বিড়াল কে মাছ দিয়েছি।আমি বলে উঠলাম আপনি মিথ্যা বললেন কেনো যে খালা আসবে না।অথচ খালাকে দিয়েই মাছ কিনিয়েছেন আমাকে কষ্ট দিতে।আমি কষ্ট পেলে কি খুব আনন্দ পান।উনি কপাল টান টান করে আমার দিকে তাকালেন তোয়ালে তে দুই হাত মুছে আমার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে এলেন।ভয়ে বুকে দুরুম দুরুম আওয়াজ হচ্ছে কি করবেন উনি।একদম আমার সাথে মিশে এসে দাঁড়ালেন।ভারী কন্ঠ নিয়ে বললাম ইয়ে কি হয়েছে।উনার হাতের আঙুল এগিয়ে এনে কপালে আঙুলের স্পর্শ করে বললেন এভাবে রোজ বাকা টিপ পরবি আর আমি ঠিক করে কপালে পরিয়ে দিবো।উনি টিপ টা তুলে ঠিক করে পরিয়ে দিলেন।কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন কষ্ট দিতে কিছুই করিনি শুধু চোখের সামনে রাখবো বলে কাজ করালাম।আর একটা কারণ ও আছে সেটা হলো নির্বাণ এর সাথে চা খাচ্ছিলি কেনো?মিহি কন্ঠে বললাম প্রেম তো আর করছিলাম নাহ তাইনা?উনি গলায় চুমু দিয়ে বললেন আমি ছাড়া অন্য কারো প্রেমে পড়া বারণ তুমি জানোনা পিচ্চি।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম যদিও করি তাহলে কি রেগে বিদায় দিবেন লাইফ থেকে।উনি হেসে বললেন উহু এই রাগ টা কখনো হবে না।এমন ক্ষমতা তোমার হবে না যে আমায় ছেড়ে অন্য কারো প্রেমে পড়বে।সেই সুযোগ আমি আসতেই দিবো না।এমন ভালবাসা কোথায় পাবে যেখানে আমার থেকে বেশী সুখ পাবে তুমি।ওই যে পাশের ওই রুমে যাও রুম টা তোমার গিয়ে দেখো ভাল লাগে কিনা।রুমটায় প্রবেশ করএ অবাক হয়ে গেলাম আমি।বিহান ভাই আমার গাল টানছেন এমন একটা পিক ওয়ালে টানানো আছে।সুন্দর একটা ফোমের খাট। একটা স্টাডি টেবিল।খাটের দুই সাইডে অনেক গুলো লাল সাদা গোলাপ।পাশেই একটা আলমারি।আলমারি খুলেই চমকে গেলাম আমি কম করে ৪০-৫০ টা শাড়ি হবে। আলমারির ড্রয়ার খুলে দেখি বিভিন্ন রকমের কসমেটিক্স।বাকি জীবনে হয়তো আমাকে আর কিছুই কেনা লাগবে না।এত্ত পরিমান অর্নামেন্টস।চুড়ির আলনা ভর্তি চুড়ি। এই রুম টায় একটা দোকানের সমান।চোখে ধাঁধা লেগে গেলো আমার।আমি বিহান ভাইকে বললাম এসব এতটুকু বলতেই উনি বললেন সব তোর জন্য।আমার পছন্দমতো গুছিয়েছি সব।উনি আমার জন্য এত কিছু ভাবতে পারেন।
‘খানিক টা দম নিয়ে বললাম জানেন আপনার বিয়ের কথা হচ্ছে?’
‘এটা আর নতুন কি?সেতো হয়েই থাকে।’
‘আমার ভাল লাগে না শুনলে।ভীষণ কষ্ট হয়।কেনো হবে আপনার বিয়ের কথা।’
‘আচ্ছা আর হবে না। দুই মাস পরেই নিয়ে আসবো আমার কাছে।আম্মুকে পাঠাবো তার ননদের কাছে।’
‘সত্যি পাঠাবেন।।।’
‘আমি কি মিথ্যা বলি।আর হ্যাঁ নির্বান থেকে দূরে থাকবি।শালা কে কেমন সন্দেহ হচ্ছে।এইজন্য বউ এর পরিচয় বন্ধুদের সাথে করাতে নেই এরা হলো কালসাপ টাইপের।’
‘এত্ত জেলাস আপনি ভাবা যায়।’
‘হুম ভাবতে হবে।’
‘আপনার প্রেয়সী আমাকে আজ অনেক বাজে কথা বলেছে।’
‘কি বলেছে? ‘
লাইব্রেরির বলা সব কথা উনাকে বললাম।বিহান ভাই চট করেই রেডি হয়ে নিয়ে বললেন চল আমার সাথে।উনাকে বললাম কোথায় যাবো?বিহান ভাই বললেন আগে চল তুই।এখানেই বিহান ভাই এর বাইক আছে উনি হলেন বাইক লাভার।বাইকে স্টার্ট দিয়ে বললেন ওঠ দিয়া।চুপচাপ উনার বাইকে উঠলাম। বাইক নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন জানিনা।মুড ভীষণ অফ উনার।আমি যে এত প্রশ্ন করছি কোনো কথা বলছেন না উনি।কয়েক মিনিট পরেই একতা বাড়ির সামনে বাইকে থামিয়ে আমার হাত ধরএ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন।বাড়িটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক রাজকীয়। আমাদের দেখেই প্রেয়সী আপু এগিয়ে এসে বললো বিহান তুই দিয়াকে সাথে নিয়ে।প্রেয়সী আপুর বাবা মা ও ছিলেন।বিহান ভাই প্রেয়সী আপুর গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললেন মানুষের মিনিমাম লজ্জা থাকা উচিত যেটা তোর নেই।আঙ্কেল আপনার মেয়েকে কি শিক্ষা দিয়েছেন? প্রেয়সী আপুর বাবা বললেন কেনো বাবা কি হয়েছে।বিহান ভাই বললেন,আপনার মেয়ে একটা সাইকো রুগি। তাকিয়ে দেখুন এই পিচ্চি মেয়ের দিকে আপনার মেয়ের কিসের প্রতিযোগিতা ওর সাথে।আপনার মেয়ে নিজেকে তো ছোট করছেই সাথে আপনাদের ও।আপনার মেয়েকে বলে দিন আগে যায় হোক ফ্রেন্ড এর চোখে দেখতাম এখন থেকে সেটাও আর দেখবো না।দিয়ার চোখে পানি আসলে আমি কাউকে ছেড়ে দিবো না।নেক্সট আপনার মেয়ে যদি আর এমন কিছু করে আমার সব থেকে খারাপ রুপ দেখবেন আপনারা।
এইভাবে কারো বাড়িতে গিয়ে তার মা বাবার সামনে মেয়ের গায়ে হাত দেওয়াটা কম সাহসের কথা নয়।বিহান ভাই এতটা রাগী আর জেদী আগে জানতাম নাহ।উনি আমাকে এত টা ভাল কেনো বাসেন?
সেদিন বাসায় আসার পরেই দেখি আম্মুর মন ভীষণ খারাপ।আম্মুকে বললাম কি হয়েছে আম্মু।আম্মুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আম্মু কোনো কথায় বলছে না
।রিয়ার মুখে শুনলাম ভাইয়া আর মেহু আপু নাকি পালিয়ে গিয়েছে।কথাটা শুনে চমকে গেলাম আমি।ভাইয়া এটা কি করলো আর পালিয়ে বা কোথায় গেলো।বাবা নাকি আম্মুর সাথে ভীষণ রাগারাগি করছে।আম্মুকে কি বলে শান্তনা দিবো সেটা বুঝছি না।চারদিকে এটা নিয়ে সবার মুখে মুখে রটে গিয়েছে।মুহুর্তের মাঝে বিহান ভাই ও চলে এলেন।বিহান ভাই আম্মুকে বুঝিয়েই যাচ্ছে।বিহান ভাই বলে উঠলেন এখানে শুভ আর মেহুর কোনো দোষ নেই।আমার মতে যেটা করেছে ঠিক ই করেছে।ফুফা নিজেই তো আত্মীয়ের মাঝে বিয়ে দিবে না বলে জিদ ধরলো।ফুফার বোঝা উচিত ছিলো বিয়ে দুটো মনের ব্যাপার। এমন করলে কবে মেয়েও ভেগে যাবে।আম্মুও বললো ঠিক ই বলেছিস বাবা সব শুভর বাবার দোষ। ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে এখন তাদের ইচ্ছার গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
বেশ কয়েকদিন কেটে গিয়েছে আম্মু আর কাকি মনিও নড়াইল ফিরে গিয়েছে।ভাইয়া আর মেহু আপুর ঘটনা টা নিয়ে দুই ফ্যামিলির মাঝে অনেক অশান্তি যাচ্ছে।বাবা হঠাত কেমন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছেন।ফোন দিলেও তেমন একটা কথা বলেন না।আজ কতদিন হয়েছে ভাইয়ার মুখ টা দেখি না মেহু আপুকে দেখি না ভীষণ মিস করছি।ভাইয়ার ফোন ও অফ।ভাইয়া কি আর মিস করেনা আমাকে। ভাইয়াকে ভেবে মন ভীষণ খারাপ আজ।কেটে গিয়েছে আজ তিন তিন টা মাস।আজ ভাইয়ার জন্মদিন প্রতিবছর এ দিনে অনেক মজা করি।আম্মুও আজ খুব কাঁদছে।
ফুপ্পির সাথে যদি বাবার সম্পর্ক খারাপ হয় সেই ভয়ে বাবা বিয়েতে রাজি ছিলো না।ফুপ্পিকে ভীষণ ভালবাসে বাবা।ভালোর জন্য বাবার চিন্তা আজ অনেক কিছু বদলে দিয়েছে।
Leave a comment