ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ২৭

14 Min Read

মানুষের অল্প ব্যথা তীব্র হয় আপনজনের সান্নিধ্য পেলে। সিমরানেরও ঠিক তাই হলো। প্রথমে ভাই সুহাস পরে সৌধ। দু’জন পুরুষই তার ভীষণ আপন। সুহাস আপন এতে কোনো প্রশ্ন আসে না, সন্দেহও থাকে না৷ আর সৌধ তার মনের মানুষ। বাবা, ভাইয়ের পর যে পুরুষকে সে সবচেয়ে কাছের ভাবে৷ আপন দৃষ্টিতে দেখে। যার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে ব্যাকুল রয় দিবানিশি। সেই মানুষটার সামনেও মনের যন্ত্রণা প্রগাঢ় হলো। কান্নার বেগ বাড়তে থাকল ত্বরিত বেগে৷ সৌধ সন্দিহান মুখে চেয়ার টেনে বসল সিমরানের সম্মুখে। তার এক পাশে সুহাস আরেক পাশে নিধি। নিধিকে দেখে ওঠে এলো স্মৃতি আপু৷ ভীতিকর কণ্ঠে নিধির কাঁধ চেপে ধরে বলল,
‘ তুমি এসেছ! দেখো না সিনুটা কেমন করছে৷ কিচ্ছু বুঝতে পারছি না৷ রাতে তো সব ঠিকঠাকই ছিল। ‘
নিধি চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলে মুখে ক্ষীণ স্বরে বলল,
‘ আমি দেখছি আপু। ‘
এরপরই সিমরানের পাশে গিয়ে বসল। মাথায় হাত রেখে বলল,
‘ আমার বনুটার কী হয়েছে? তার কথায় আমি এত্ত তাড়াতাড়ি চলে এলাম। দেখে খুশি না হয়ে কান্নাকাটি করে নিজেও অস্থির হচ্ছে, সবাইকেও অস্থির করে তুলছে কেন হুম? ‘
কিঞ্চিৎ শান্ত হলেও মুখ তুলল না সিমরান৷ সকলের মস্তিষ্কই ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এক রাতের ব্যবধানে কী হলো মেয়েটার বুঝে ওঠতে পারছে না কেউই৷ প্রত্যেকের মধ্যে যখন প্রশ্নের উঁকিঝুঁকি নামী তখন সংশয় চিত্তে তাকায়। একবার ক্রন্দনরত ননদের মুখ আরেকবার নিধির মুখ দেখে। দু’জন নারীকেই দেখতে থাকে নিষ্পলক৷ পাশাপাশি বোঝার চেষ্টা করে সিমরান কি সৌধ আর নিধির সম্পর্কে জেনে গেল! এজন্যই কী বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েছে মেয়েটা? আকস্মিক বুক ধক করে ওঠে নামীর। তার ভীতিগ্রস্ত চোখজোড়া এবার সুহাসের চিন্তিত মুখে পড়ে। সৌধ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বোঝার চেষ্টা করছিল সিমরানের ভাবগতিক। এরপর গম্ভীর কণ্ঠে হঠাৎ শুধায় ,
‘ কী হয়েছে তোর? কে কী বলেছে? ‘
নিধির স্বান্তনায় একটু কান্না থেমেছিল। সৌধর গম্ভীর এবং সন্দিহান গলা শুনে পুরোপুরি থেমে গেল সিমরান। সকলের দৃষ্টি অনড় রইল তার কান্না মিশ্রিত লালচে মুখশ্রীতে। সৌধ দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে।অপেক্ষা করছে উত্তর পাবার। টের পেল সিমরান৷ বুকের ভেতর অনুভব করল গভীর এক চাপ। তবু মুখ খুলল না। সৌধ ফের প্রশ্ন করল,
‘ বলবি না? ‘
কয়েক পল শ্বাসরোধ করে রাখার পর নিঃশ্বাস ছাড়ল সিমরান৷ মাথা দুপাশে নাড়িয়ে বোঝাল ‘ না ‘ সে বলবে না। সৌধর কপালে ভাঁজ পড়ল। চিন্তাগ্রস্ত সুহাস ঠোঁট কামড়ে বিচলিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে। সকলের হতভম্ব ভাব প্রগাঢ় হলো। হতাশ ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল সৌধর মুখপানে। সৌধ একটু ধমকে কথা আদায় করতে চাইল। পরোক্ষণেই মত পাল্টাল। সিমরান ধমক খেয়ে কথা শোনার মানুষ নয়। বরং এতে করে জেদ বাড়বে, কান্না বাড়বে৷ তাই কণ্ঠ নরম করে প্রশ্ন করল,
‘ কেউ কিছু বলেছে? ‘
‘ আমি বাড়ি যাব। ‘
তীব্র জেদি স্বর সিমরানের। এতক্ষণ যাবৎ তাকে জোর করে আঁটকে রেখেছে নামী আর সুহাস। এবার বুঝি আর আটকানো সম্ভব হলো না। তড়াক করে ওঠে দাঁড়াল সে৷ চোখ বড়ো বড়ো করে সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ল নামী আর নিধিও। সৌধর চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেল। মেয়েটাকে আজ নতুন চেনে না৷ তবে খুব কাছ থেকে দেখা আজই প্রথম। সুহাসের কাছে অবশ্য ওর রাগ, জেদ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিল বেশ। সুহাস এগিয়ে এসে সিমরানের মাথার মাঝখানে ডান হাতের তালু চেপে ধরল। বাবার কাছে শিখেছে এটা৷ সিমরান অতিরিক্ত রেগে গেলেই তার বাবা এভাবে মাথায় হাত রেখে শান্ত হতে বলে। সেও বলল,
‘ কুল সিনু। সিনক্রিয়েট করিস না তোর সমস্যা টা বল আমাকে। ‘
সিমরান বড়ো বড়ো করে শ্বাস নিচ্ছে। অতিরিক্ত রাগ আর কান্নায় ফুঁসছে মেয়েটা। এমন পরিস্থিতিতে সহসা স্মৃতি আপু চ্যাঁচিয়ে ওঠল,
‘ এই সৌধ কাল ঘুমানোর আগে সিপনকে দিয়ে দাদুনি সিনুকে ডেকে পাঠিয়েছিল। ও ফেরার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কোনোভাবে দাদুনি কিছু বলেনি তো? ‘
ফোঁস ফোঁস থেমে গেল সিমরানের। স্তব্ধ মুখে অনড় রইল সে৷ সবাই বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাল সিমরানের দিকে। সৌধ যেন বুঝে ফেলল অনেক কিছুই৷ বসা থেকে সাবলীল ভঙ্গিতে ওঠে দাঁড়াল সে। সিমরানের মুখোমুখি হয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ দাদুনি বকেছে? ‘
আবারো দু’ফোঁটা অশ্রু গড়াল সিমরানের চোখ বেয়ে। নিধি তাকাল সৌধর দিকে। ইশারায় বলল সবাইকে নিয়ে বাইরে যা। কথানুযায়ী সবাই বেরিয়ে গেলে শুধু সুহাস, সৌধ আর সিমরান রইল রুমে। সিমরান তীব্র অস্বস্তি নিয়ে সুহাসের দিকে কঠিন চোখে তাকাল। সুহাস করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ প্লিজ বোন রাগ করিস না৷ তুই চলে গেলে আন্টি, আংকেলের সামনে বিব্রত হবো। বাড়িতে মাও অশান্তি করবে খুব। বলবে, আমি শুধু বউয়েরই কেয়ার করি, বোনের কেয়ার একটুও করি না। ‘
‘ চুপ থাক। ‘
সৌধ থামিয়ে দিল সুহাসকে৷ পুনরায় চেয়ারে বসে সিমরানকে বলল বসতে। সিমরান বসল না। সুহাস জোর করে ওকে বসিয়ে নিজেও পাশে বসল। সৌধ বলল,
‘ আ’ম সিয়র দাদুনিই কিছু বলেছে কী বলেছে সবাইকে বলতে না পারলেও আমাদের দু’জনকে বলতে হবে। এরপর আমি নিজ দায়িত্বে তোকে বাড়ি দিয়ে আসব। আমি যখন দায়িত্ব সহকারে নিয়ে এসেছি। আমিই দিয়ে আসব। ‘
অনেক জোরাজুরির পর মুখ খুলল সিমরান৷ কাঁদতে কাঁদতে গতরাতে দাদুনির বলা সব কথা খুলে বলল। এরপর সুহাসের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপাতে শুরু করল একনাগাড়ে। সুহাস সৌধর দিকে থমথমে মুখে তাকাল। দাদুনির কথাগুলো ওরও গায়ে লেগেছে খুব। তার বোন এ বাড়ির মেহমান হয়ে এসেছে। দোষ থাকুক, ত্রুটু থাকুক মুখের ওপর এভাবে অপমান করতে পারে না দাদুনি। তাছাড়া তাদের জীবনের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হচ্ছে পরিবার। তারা পরিবার পায়নি৷ তাদের বাবা, মায়ের মধ্যে বনিবনা নেই৷ এগুলো নিয়ে তারা দু’ভাইবোন কথাটা হতাশায় ভোগে, কত দুঃশ্চিন্তা নিয়ে ছোটোবেলা বড়ো হয়েছে। এসব কি দাদুনি জানে? তার বোনের বয়স একুশ বলেই সে আর পাঁচ জনের মতো পরিপক্ব মস্তিষ্কের হয়ে ওঠেনি৷ সে স্বাভাবিক পরিবার পায়নি৷ পায়নি বাবা, মায়ের পরিপূর্ণ যত্ন, ভালোবাসা। এগুলো কি দাদুনি কখনো বুঝবে? যা বুঝবে না যা অনুভব করতে পারবে না। তা নিয়ে এত বড়ো বড়ো কথা কীসের? এই পৃথিবীতে যার যার অবস্থান সে সেই বুঝে। এর আগেও সিমরানকে ন্যাকা, অভদ্র বলতে শুনেছে। তার বোন যেমনি থাকুক তার কাছে সেরা৷ প্রচণ্ড আদুরে৷ তাই বোনকে নিয়ে অন্যের কুরুচিপূর্ণ কথা মেনে নেয়া বা সহ্য করা সম্ভব না, তার পক্ষে। সুহাসের কান দু’টো লাল টকটক করছে। লালচে হয়ে ওঠেছে নাকের ডগাও৷ সুহাসকে খুব ভালো মতোন চেনে সৌধ। সবটা শুনে তারও মেজাজ খিঁচে গেছে। দাদুনিকে পরে বুঝে নেয়া যাবে। আপাতত সিমরানকে সামলাতে হবে। গতরাতের তিক্ত অনুভূতি ভুলিয়ে দিতে হবে। নয়তো সিমরান চলে যাবে। আর সিমরান চলে গেলে সুহাসকে আঁটকে রাখা কঠিন হবে। তাছাড়া বন্ধুর বোনের অসম্মান মানে বন্ধুর অসম্মান। আর বন্ধুর অসম্মান মানে তার অসম্মান।
.
.
সৌধ সেই পুরুষ যার সম্মোহনী শক্তিতে সিমরান সকল বশ মানতে রাজি। সিমরানকে করা দাদুনির অপমান ভুলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে সৌধ৷ খুব সুন্দর করে মেয়েটাকে বুঝিয়েছে সে। সেই সঙ্গে দাদুনির বলা কিছু কথা যেগুলো সত্যি শিক্ষনীয় ছিল সেগুলো চমৎকার বাচনভঙ্গি দিয়েও বুঝিয়েছে। বুঝতে পেরেছে সিমরান। মেনে চলছে সর্বাত্মক চেষ্টায়। স্মৃতি আপুর গায়ে হলুদ চলছে। বাড়ির সকল মেয়েরা স্মৃতি আপুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হলুদ রঙের শাড়ি পরিধান করেছে। শাড়ি পরেছে নামী নিজেও। ছোট্ট তাহানীও বাদ যায়নি। বাচ্চা শাড়ি কিনে দেয়া হয়েছে তাকে৷ সেটা পরে ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক দিয়ে স্মৃতি আপুর পাশে বসে আছে চুপচাপ। সবাই শাড়ি পরলেও নিধি আর সিমরান পরেনি৷ তারা দু’জন হলুদ আর সবুজ মিশেলে সারারা পরেছে। নিধি এসেছে থেকেই ছোঁকছোঁক করছিল সৌধ। ঠিক যেমন সুহাস সারাক্ষণ নামীর পিছনে ছোঁকছোঁক করতে থাকে। বিষয়টা আইয়াজ খেয়াল করে সৌধকে বলল,
‘ কীরে মনে হচ্ছে নিধি ইলিশ মাছ আর তুই বিড়াল এমন ভাবে ছোঁকছোঁক করছিস। ‘
সৌধ থেমে যাওয়ার পাত্র নয়। পাল্টা উত্তর দিয়ে দেয়,
‘ কাল তোর বোয়াল মাছ আসতেছে মনে আছে? পিছন লাগবি না একদম। বরং সুযোগ করে দে। কাল তাহলে বোনাস পাবি। ‘
চোখ দু’টো চকচক করে ওঠে আইয়াজের৷ গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ যখন মিসড কল দিব ছাদে চলে যাবি। আমি নিধিকে পাঠাচ্ছি। ‘
.
.
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ প্রায়৷ স্মৃতি আপু গোসলে যাবে। সিমরান অনেকক্ষণ ধরেই সৌধকে অনুসরণ করছিল। মনটা অত্যাধিক চঞ্চল হয়ে ওঠেছে তার৷ আজ মনের কথা না বললে মরণি হবে বোধহয়। যে মানুষটা তাকে এত সুন্দর করে ভালো, মন্দ বোঝায়, যে মানুষটা তার চোখের পানি শুষে নিতে নিগূঢ় চেষ্টা করে, যে মানুষটা তার চলে যাওয়া আঁটকে দেয় এক নিমেষে। সে মানুষটাকে মন কথন জানাতে আর দেরি সহ্য হচ্ছে না। না পারে সর্ব সম্মুখে চিৎকার করে বলে দেয়,
‘ আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি সৌধ ভাই। আমি তোমার বউ হতে চাই চৌধুরী সাহেব। ‘
মনটা খলখল করে ওঠে সিমরানের। সৌধকে অনুসরণ করতে করতে সিঁড়ির কাছে চলে আসে৷ এত রাতে সৌধ ভাই ছাদে যাচ্ছে কেন? মনের ভেতর প্রশ্ন উঁকি দেয়৷ ভাবে, ভালোই হলো, নিভৃতে মনের কথা বলতে পারবে৷ কিন্তু পিছু যেতে যেতে আকস্মিক থেমে যায় বৈদ্যুতিক আলোয় নিধিকে দেখে। সৌধ ছাদের দরজা একটু চাপিয়ে চলে যায় নিধির কাছে। সিমরানের বুকটা ধক করে ওঠে অজানা সন্দেহে। গলা শুঁকিয়ে কাঠকাঠ হয়ে যায়৷ দরজার ফাঁকে একটু করে উঁকি দিয়ে দেখে, সৌধ গিয়ে নিধির পাশে দাঁড়াল। তাদের কথাবার্তা স্পষ্ট শোনা গেল না অস্পষ্ট। কিন্তু দেখতে পেল সবই শুনতে পেল অল্পস্বল্প। যা থেকেই পুরোপুরি বুঝে গেল তার মনের মানুষটির মনের মানুষ সে নয় অন্য কেউ!
আইয়াজের অনুরোধে এসেছিল নিধি। তারও ইচ্ছে ছিল সৌধর সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার। যেগুলো এখন না বললেই নয়৷ কারণ এ বাড়িতে আসার পর স্মৃতি আপু আড়ালে ডেকে বলেছে, স্মৃতি আপুর বিয়ের পরই সৌধ সুজা আংকেলকে মনের কথা জানাবে। এরপরই তাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব যাবে চৌধুরী বাড়ি থেকে। তাই সৌধ ছাদে আসা মাত্র দেরি করল না নিধি। ভালো, মন্দ কথা দূরে থাক চট করে বলে ফেলল,
‘ সৌধ তুই আর আমি শুধু বন্ধু। আমরা সারাজীবন একে অপরের বন্ধু হয়েই থাকতে চাই। তুই প্লিজ বিয়ের সিদ্ধান্ত বদলে ফেল। আংকেল, আন্টিকে কিচ্ছু বলবি না। স্মৃতি আপুকেও বলবি আমার প্রতি তোর উইকনেস কেটে গেছে। আমরা শুধুই বন্ধু। তোর তরফে যা ছিল নিছক আবেগ মাত্র। ‘
নিধির কথাগুলো অহেতুক ঠেকল সৌধর। এতদিন পর কাছাকাছি তারা। কোথায় ভালো, মন্দ দু’টি কথা বলবে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকবে দীর্ঘ সময়। কয়েকটা চুমুর বর্ষণ নামাবে তা না৷ আবারো সেই আবোলতাবোল বকা শুরু করেছে৷ বাঁকা হাসল সৌধ। আচমকা বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে নিল নিধিকে। একহাতে কোমর পেঁচিয়ে অন্যহাতে নিধির মুখে পড়া সিলকি চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিল। বলল,
‘ বকবকানি থামাবি? কত মিস করেছি জানিস? ‘
প্রগাঢ় চোখে তাকিয়ে আকুল স্বরে কথাটা বলল সৌধ। নিধির বুক ধড়ফড়িয়ে ওঠল৷ সৌধর বাঁধন থেকে ছাড় পেতে মরিয়া হয়ে ওঠল সে। কিন্তু সৌধ কি ছাড়ার বান্দা? সে আরো ঘনিষ্ঠ হলো। নিধির কপালে কপাল ঠেকিয়ে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ সব সময় ছটফট করিস কেন? এমন করলে ভালোবাসা দিব কীভাবে? ‘
‘ প্লিজ সৌধ এমন করিস না প্লিজ। আমার কথা শোন তোর সাথে আমার কথা আছে। খুব জরুরি। ‘
ত্বরিত স্বরে কথাগুলো বলতেই সৌধ ওর কপালে গাঢ় করে চুমু খেল। বলল,
‘ সব শুনব। তার আগে আমাকে শান্ত কর। দেখ বুকের ভেতর কেমন খাঁখাঁ করছে। আর কত জ্বালাবি এখানটায়? একটু তো ঠাণ্ডা কর। ‘
বুকে ইশারা করে কথাগুলো বলেই একহাত নিধির গালে রাখল। চোখ, মুখ খিঁচে রইল নিধি। শরীরের জোর প্রয়োগ করল ছাড়া পাওয়ার৷ কিন্তু সৌধ সেসব তোয়াক্কা করল না৷ সে তার প্রেয়সীকে আদর করতে ব্যস্ত৷ একনাগাড়ে কয়েকটা উত্তপ্ত চুমু পড়ল গাল জুড়ে। আকস্মিক চোখ খুলল নিধি৷ মুখটা শক্ত পাথর হয়ে গেছে তার। শরীর জুড়ে যেন দাউদাউ করে আগুন জলে ওঠেছে। সৌধ তার মতোই ব্যস্ত।
‘ খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব নিধি। তুই আর আমাকে দূর দূর করতে পারবি না দেখিস৷ খুব তাড়াতাড়ি এই সৌধর বুকে মুখ লুকোনোর ব্যবস্থা করব৷ খুব তাড়াতাড়ি তোকে সম্পূর্ণ আমার করে নেব আমি। ‘
ভারিক্কি নিঃশ্বাস ছেড়ে মাতাল কণ্ঠে কথাগুলো বলতে বলতে নিধির নাকে নাক ঠেকাল। এরপর উত্তপ্ত ঠোঁটজোড়া ছুঁইয়ে দিল নিধির নরম অধরে। মুহুর্তে ক্রোধে ফুঁসে ওঠল নিধি। আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না নিজেকে। তার নরম হাতের শক্ত থাপ্পড় বসিয়ে দিল প্রিয় বন্ধু, সৌধর গালে। এতক্ষণ আড়ালে স্তব্ধ হয়ে থাকলেও শেষ দৃশ্য দেখে দু-হাত মুখে চেপে ডুকরে ওঠল সিমরান। আর সৌধ আকস্মিক নিধির রণমুর্তি দেখে বাক শক্তি খুইয়ে রইল কয়েক মিনিট। যখন তার ঘোর কাটল তখন হাতটা আপনাআপনি ডান গালে চলে গেল। জীবনে প্রথমবার কেউ তার গায়ে হাত তুলল! আর এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটাল সে যাকে ভালোবাসে, তার হৃদয়ের নারী। চোয়াল দ্বয় দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হলো সৌধর। চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে তাকাল নিধির ক্রোধান্বিত মুখশ্রীতে। ধীরেধীরে তার চোখজোড়া রক্তিম বর্ণে পরিণত হতে থাকল।
আর নিধি ওড়নায় মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে প্রস্থান করল ছাদ থেকে। সিমরান একই জায়গায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে। নিধি কি ওকে দেখতে পেল?

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।