ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ২৯

13 Min Read

কন্যা বিদায়ের পর নিজ ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিল সুজা চৌধুরী। এমন সময় বাড়ির কাজের লোকদের হট্টগোল শুনতে পেল। তানজিম চৌধুরী স্বামীর মাথা টেপা স্থগিত রেখে মাথায় কাপড় তুলে বেরিয়ে এলেন। বারান্দার রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় বললেন,
‘ এই তোরা চুপ করবি? কর্তা বিশ্রাম নিচ্ছে। ‘
চৌধুরী গিন্নির উক্ত কথায় একজন প্রায় কেঁদে দিয়ে বলল,
‘ খালা গো সৌধ ভাই আর হের বন্ধুরা মিলা কারে জানি কু পাইতে গেল গো! ‘
আকস্মিক কথায় মুখে ডানহাত চেপে ধরল তানজিম চৌধুরী। আতঙ্কিত গলায় বললেন,
‘ এসব কী কথাবার্তা! ‘
ত্বরিত গতিতে নিচে নেমে এলেন তানজিম চৌধুরী। হাঁকডাক করে ডাকতে লাগলেন দেবর আর বড়ো ছেলে সুনীলকে। অন্যান্য ঘর থেকে ছেলে, মেয়েরা ছুটে এলো। বেরিয়ে এলো নামী, ফারাহ, প্রাচী আর সিমরানও। তারা ভারি পোশাক পরিবর্তন করতে ঘরে গিয়েছিল। এরই মাঝে বাইরে থেকে সৌধর বন্ধু আজিজ দৌড়ে এলো। চিৎকার করে বলল,
‘ সুজা আংকেল কোথায়? সুজা আংকেল? প্লিজ আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন। ভয়ানক কিছু ঘটে যাবে। অর্পণ স্যারকে মেরেই ফেলবে ওরা! ‘
বাড়ির হট্টগোল কানে পৌঁছেছে সুজা চৌধুরী আর ছোটো চাচা সুলল চৌধুরীর। সুজা চৌধুরী বেরুতে দেরি করলেও সুলল আর সুনীল দেরি করল না৷ মেয়ে তাহানীকে ঘুম পাড়াচ্ছিল সুলল। হট্টগোলে মেয়েটা আর ঘুমাতে পারল না৷ তাই মেয়েকে কোলে নিয়েই নিচে নেমে এলো। সকলের আতঙ্কিত মুখ আর কথা শুনে তাহানীকে বোনের মেয়ের কোলে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ঘটনা কী? আর সৌধরা কোথায়। নামী, প্রাচী, ফারাহ কিছুই বুঝতে পারছিল না৷ কিন্তু সিমরান সমানে ঢোক গিলছে৷ সে বুঝতে পারছে ঠিক কী ঘটতে পারে। গতরাতে নিধি আপুর ব্যাপারে সবটা জেনেছে সে। সেই সবই সৌধ ভাই জেনে যায়নি তো? যদি জেনে যায় তবে এখন থেকেই শুরু হবে তাদের সবার জীবনে কঠিন পরীক্ষা। যে পরীক্ষার জন্যই নিধি সাহস জুগিয়েছে তাকে। কথা দিয়েছে পরীক্ষায় সফল না হওয়া পর্যন্ত সে সব সময় পাশে থাকবে। মুহুর্তেই হাত, পা কাঁপতে শুরু করল সিমরানের৷ একটা কথা তার মাথায় ঢুকছে না। নিধি আপু বলেছিল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই নিজের ব্যাপারে সব জানাবে বন্ধুদের। তবে কেন আজ এমন অসময়ে জানালো? সবটা জেনেই কি সৌধ ভাই অর্পণ স্যারকে খু ন করতে চাইছে? সিনেমার মতো নিধি আপুকে পেতে সৌধ ভাই কি খু নও করতে পারে!
.
.
বোন বিদায়ের পর পর নিধিকে খুঁজতে থাকে সৌধ৷ ঠিক সে সময়ই আইয়াজ জানায় অর্পণ স্যার জোর পূর্বক নিধিকে টেনে তাদের স্টোর রুমে নিয়ে গেছে। নিধি স্বেচ্ছায় অর্পণ স্যারের হাত ধরতে পারে। এমন কথা ভাবতেই পারে না আইয়াজ। খোলা চোখে যা দেখেছে আর যা বুঝেছে তাই বন্ধুকে গড়গড় করে বলেছে এতেই মাথা বিগড়ে গেছে সৌধর৷ এত্ত বড়ো সাহস অর্পণ স্যারের? তার বাড়ি এসে তারই ভালোবাসার মানুষকে জোরজবরদস্তি! মুহুর্তেই ক্ষেপা ষাঁড়ের মতো তিন বন্ধু ছুটে আসে। দীর্ঘদিন যাবৎ যে মেয়েটাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। নিজের সর্বস্ব জুড়ে রয়েছে যে মেয়েটা। যাকে বউ করে ঘরে তোলার জন্য বুকের ভেতর তোলপাড়। যার একটুখানি ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা। তাকে অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে দেখে মাথায় রক্ত ছলকে ওঠে। টগবগিয়ে ফুটতে থাকে শরীরের রক্ত কণিকা। নিধি শুধু সুহাস, আইয়াজের বান্ধুবিই নয়। প্রাণের চেয়েও প্রিয় বন্ধু সৌধের মনের মানুষ। তাদেরও মাথা ঠিক নেই নিধি আর অর্পণ স্যারের ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের দৃশ্য দেখে। নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ওরা৷ কিছু মুহুর্তের জন্য হয়ে ওঠে মানুষ থেকে অমানুষ। প্রথমে তিনজন এলোপাতাড়ি মা রধর করে অর্পণ স্যারকে। নিধি বাঁধা দিতে গেলে আইয়াজ শক্ত হাতে ওকে টেনে ধরে ঘরের বাইরে নিতে চায়৷ ধস্তাধস্তি হয় দুজনের মধ্যে। সৌধ বুঝতে পারে অর্পণ স্যারকে রক্ষা করতে আহাজারি করছে নিধি৷ শুনতে পায় বারবার বলা ওর কিছু কথা,
‘ সৌধ প্লিজ উনাকে ছেড়ে দে। উনি কোনো জুলুম করেনি আমাকে। যা হচ্ছিল আমার ইচ্ছেতে হচ্ছিল, প্লিজ সৌধ। আমার কথা শোন তোরা পায়ে ধরি ভাই আমার কথাটা শোন। ‘
নিধির থেকে এমন একটি বাক্য শোনার পর সৌধ আর ঠিক থাকে না৷ থাকতে পারে না৷ অর্পণ স্যার ওকে ছুঁয়েছে। সে ছোঁয়াটা ওর ইচ্ছের ছিল! যেখানে গতরাতে ওকে ছুঁয়ে থা প্পড় খেয়েছে সেখানে অর্পণ স্যারের ছোঁয়াতে ওর সম্মতি? আরো বীভৎস হয়ে ওঠে সে। এতক্ষণ স্বাভাবিক মারধর থাকলেও এরপরের গুলো হয় অমানুষিক। অর্পণ স্যার নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে যথেষ্ট। কিন্তু পারেনি৷ দু’জন বলিষ্ঠ পুরুষের সঙ্গে একজন পেরে ওঠা অসম্ভব। চোখে, মুখে অগণিত লা ত্থি পড়ায় চশমার কাঁচ ভেঙে চোখের মণিতে ঢুকে যায়। নাক মুখে রক্ত ছলকে ওঠে। শেষ পর্যন্ত মাথায় একটি মোটা কাঠের আঘাত সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায় অর্পণ স্যার। নিধির হাতটা শক্ত করে ধরে আছে আইয়াজ৷ বেচারি গলা ফাটিয়ে আহাজারি করছে। শেষ পর্যন্ত না পেরে আইয়াজের হাতে কামড় বসিয়ে ছাড়া পায়। ছুটে এসে অর্পণ স্যারকে জড়িয়ে ধরে৷ হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। মুহুর্তেই তার বাহুতে থাবা দিয়ে নিজের বুকে তুলে আনে সৌধ। গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে নিধিকে জড়িয়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ ডোন্ট ক্রাই নিধি, এই জা নো য়া রটা তোকে ছুঁয়ে ছিল না? জন্মের মতো তোকে ছোঁয়ার স্বাদ মিটিয়ে দিয়েছি। ‘
আকস্মিক কান্না থেমে যায় নিধির। বিধ্বস্ত মুখে তাকায় সৌধর ভয়ানক রক্তিম চোখে। এরপর আচমকাই কষিয়ে এক থা প্পড় বসায় গালে। দু’হাতে কলার চেপে ধরে আর্তচিৎকার করে ওঠে,
‘ কেন করলি এটা কেন করলি? বললাম তো যা হচ্ছিল দু’জনের আগ্রহতেই হচ্ছিল। তোকে আমি ছাড়ব না সৌধ। তোকে আমি ছাড়ব না। ‘
কথাগুলো বলেই হুহু করে কাঁদতে কাঁদতে এক ছুটে অর্পণ স্যারের কাছে চলে যায়৷ হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে স্যারকে। সুহাস স্তব্ধ মুখে পাশেই দাঁড়িয়ে। তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ সুহাস, অর্পণ স্যার মরে যাবে। উনাকে হসপিটাল নিতে হবে৷ প্লিজ আমাকে হেল্প কর। সৌধর বন্ধু হয়ে মা রতে সাহায্য করেছিস। আমার বন্ধু হয়ে মানুষটাকে বাঁচাতে সাহায্য কর প্লিজ। ‘
নিধির কথাগুলো বিষাক্ত ঠেকে সৌধর। পুনরায় উদ্ভ্রান্তের মতো নিধিকে ধরতে এলেই ওখানে উপস্থিত হয় তার ছোটো চাচা আর বড়ো ভাই। নিধি তাদের দেখে আরো ভেঙে পড়ে৷ ছুটে এসে সুলল চৌধুরীর দু’পা আঁকড়ে ধরে বলে,
‘ কাকু প্লিজ আমার হাজব্যান্ডকে বাঁচান! ওরা মেরে ফেলল উনাকে৷ প্লিজ হেল্প করুন, হসপিটাল নিয়ে চলুন উনাকে। প্লিইইজ কাকু। ‘
সুলল চৌধুরীর মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে যায় নিজের ভাতিজার কাণ্ড দেখে। সে জানত অর্পণ শিকদার সৌধদের কলেজের টিচার। নিধি সৌধর বান্ধবী। এখন শুনছে অর্পণ শিকদারের স্ত্রী নিধি। এখন এসব ভাবার সময় নয়। হাঁপ নিঃশ্বাস ছাড়ে সে। কঠিন চোখে তাকায় সৌধর দিকে। অসহায় একটা মেয়ের আর্তনাদ বুকে লাগে সৌধর ভাই সুনীলের৷ সেই সাথে রক্তাক্ত দেহে পড়ে থাকা অর্পণকে দেখে প্রচণ্ড রেগে যায়। ছুটে এসে ভাইকে মারতে উদ্যত হয়৷ তাকে আটকায় সুহাস। তাদের পরিবার রাজনীতির সাথে যুক্ত। যে কাণ্ড ঘটিয়েছে তার ছোটো ভাই৷ এটা যদি বাইরের কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়, বিরোধী দলের সদস্যরা জানতে পারে অতিথিকে এভাবে আহত করা হয়েছে। মারাত্মক ক্ষেপে ওঠবে তারা, ক্ষেপিয়ে তুলবে জনগণকেও। দিশেহারা প্রায় হয়ে ড্রাইভারকে কল করে বাড়ির পেছন গেটে আসতে বলে সুনীল।
সুহাস, আইয়াজ, সৌধ তিনজনই বিস্ফোরিত নিধির বক্তব্যে। সৌধ ভয়াবহ লাল চোখে তাকিয়ে আছে। যে চোখে বিস্ময়, অবিশ্বাস সমস্তই ভর করেছে। এমতাবস্থায় নিধিকে ধরে ওঠায় ছোটো চাচা। মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেয়। ততক্ষণে গাড়ি এসে পড়ে। সুনীল আর সুলল মিলে অর্পণ স্যারকে গাড়িতে তুলে। সঙ্গে বদ্ধ উন্মাদের মতো ছুটে যায় নিধিও৷ কিন্তু গাড়িতে ওঠতে পারে না৷ তার পূর্বেই শক্ত থাবা দিয়ে নিধিকে আঁটকে দেয় সৌধ৷ বড়ো ভাই সুনীল চোখ গরম করে বলে,
‘ সৌধ ওকে ছাড়। ‘
সৌধ শক্ত মুখে জবাব দেয়,
‘ মরে গেলেও না। ‘
নিধি করুণ স্বরে বলে,
‘ তোর দু’টি পায়ে ধরি সৌধ। আমাকে যেতে দে, ছেড়ে দে আমায়। ‘
‘ না ছাড়ব, না যেতে দেব। ‘
তীব্র জেদি স্বর। এরপরই হেঁচকা টানে নিধিকে একদম নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসে। নিধি সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে ছাড় পেতে। সুলল চৌধুরী ধমকায়। তবু ছাড়ে না সৌধ। আজ যেন স্বয়ং উপরওয়ালা ছাড়া কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না তাকে৷ কাউকে পরোয়া করবে না সে। ধৈর্য্যের সব বাঁধ ভেঙে গেছে তার। এদিকে অর্পণ স্যারের মুখ রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেছে। জ্ঞান হারা তখনো। বাধ্য হয়ে সুনীল বলল,
‘ কাকা আমাদের যাওয়া উচিত। সৌধর সঙ্গে কথা বাড়িয়ে সময় নষ্ট হচ্ছে। ‘
সুলল চৌধুরী সায় দিল বড়ো ভাতিজাকে। এরপর নিধিকে বলল,
‘ মা নিধি, আমরা যাই। তুমি চিন্তা করো না অর্পণ শিকদারের চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি হবে না। ‘
হাউমাউ করে কেঁদে ওঠল নিধি। সৌধর থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে করতে হতাশ ভঙ্গিতে তাকাল সুললের দিকে। অসহায় ভাবে মাথা কাত করে সম্মতি দিল। গাড়ি স্টার্ট হলো। তক্ষুনি চোখের পলকে চলেও গেল গাড়িটা। এরপরই বাঘের মতো গর্জন দিয়ে সৌধ বলল,
‘ অর্পণ তোর হাজব্যান্ড? ‘
নিধির কান্না থেমে গেল আচমকা। শক্ত মুখে জবাব দিল,
‘ হ্যাঁ হ্যাঁ, উনি আমার স্বামী। ‘
সহসা নিধির গলা চেপে ধরল সৌধ। সুহাস, আইয়াজ দু’জনি ছুটে এসে সৌধকে থামানোর চেষ্টা করল। নিধি চোখ উল্টে দিলে ছেড়ে দিল সৌধ৷ এরপর টানতে টানতে নিয়ে গেল নিজের বাড়িতে। পাশাপাশি বন্ধুদের হুংকার দিয়ে বলল,
‘ কাজী ডাক তোরা। আগে বিয়ে পরে বোঝাপড়া। ‘
নিধিকে টেনে হিঁচড়ে সদর দরজার সামনে যেতেই মুখোমুখি হলো শ্রদ্ধেয় পিতা সুজা চৌধুরীর। ছোটো ভাই আর বড়ো ছেলের ওপর দায়িত্ব দিয়ে সে অপেক্ষা করছিলেন। বাড়ির একটা মেয়ে বউ বা অতিথিবৃন্দ। কাউকেই যেতে দেয়নি ওদিকে। কিন্তু এবার সর্ব সম্মুখে সৌধই এলো। তার চেহেরা দেখে পরিষ্কার সে স্বাভাবিক অবস্থাতে নেই। সৌধর অস্বাভাবিকতা নিশ্চিত হলো তখন যখন একঘর লোকের সামনে শক্ত হাতে বান্ধুবির কব্জি ধরে বাবার মুখোমুখি হয়ে বলল,
‘ আব্বা ও নিধি, চিনোই তো? আমি ওকে ভালোবাসি আজ পাঁচ বছর৷ স্মৃতি আপুর বিয়ে মিটে গেলেই জানাতে চেয়েছিলাম। বিয়ে মিটে গেছে জানিয়ে দিলাম৷ সুহাস কাজী ডাকতে গেছে। আজ এক্ষুনি ওকে বিয়ে করব আমি। ‘
সুজা চৌধুরী স্তম্ভিত হয়ে সৌধর পেছনে তাকালেন। সুহাস থমথমে মুখে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। সৌধর মা তানজিম চৌধুরী পেছন থেকে কান্নারত গলায় বলল,
‘ সুহাস তো তোর পেছনে। ‘
সহসা ক্রোধান্বিত ভঙ্গিতে পেছনে তাকাল সৌধ। চোয়ালদ্বয় কঠিন করে বলল,
‘ তোকে না বললাম কাজী ডাকতে? ‘
সুহাস বোঝানোর ভঙ্গিতে কিছু বলতে উদ্যত হতেই সৌধ বিশ্রী একটা গালি দিল ওকে। সুজা চৌধুরী ধমকে ওঠল। সে ধমক শুনে বাড়ির সদস্যরা ভয়ে সরে পড়ল সবাই। রইল শুধু দাদুনি, সৌধর ফুপু আর মা তানজিম চৌধুরী। নিধি মাথা নিচু করে কাঁদছে। সুজা চৌধুরী সুক্ষ্ম চোখে তাকালেন ওর দিকে। দেখলেন তার ছেলের হাত থেকে ছাড় পেতে মেয়েটার তীব্র চেষ্টা৷ কিয়ৎক্ষণ স্তব্ধ মুখে দাঁড়িয়ে থেকে সুজা চৌধুরী ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘ ভিতরে আসো ওকে নিয়ে। ‘
সৌধ ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল নিধির দিকে। মেয়েটা কেঁদেই চলেছে৷ কী বিশ্রী এই কান্না। বুকটা বিতৃষ্ণ লাগল সৌধর। ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,
‘ কান্না থামা। ‘
নিধি চোখ, মুখ শক্ত করে হাত মোচড়াতে লাগল। সৌধর বিধ্বস্ত মুখে ঈষৎ হাসি ফুটল তৎক্ষনাৎ। বাম দিক, ডান দিক ঘাড় বাঁকিয়ে প্রগাঢ় চোখ নিক্ষেপ করল নিধির পানে। ফিসফিসে কণ্ঠে বলল,
‘ ভালোবাসা দিয়ে আমাকে চেনাতে চেয়েছিলাম চিনলি না। এবার আমার রাগ, জেদ, ক্ষমতা দিয়ে চেনাব। ‘
বুকের ভেতর চিড়িক দিয়ে ওঠল নিধির। দু’চোখ উপচে আবারো অশ্রু গড়াতে শুরু করল। তা দেখে সৌধ আঁতকানো কণ্ঠে বলল,
‘ এই আবার কাঁদছিস, ভয় পাচ্ছিস তুই? বোকা মেয়ে, সবকিছুর পর আমি তোকে ভালোবাসিরে। জাস্ট বউ হয়ে যা, সাত খু ন মাফ হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ আগে যা সব বলেছিস এসব জাস্ট ভুলে যাব। বিলিভ মি, সব ব্যথা ভুলে ভালোবাসব আমরণ, জাস্ট আমার বউ হয়ে যা পাগলি। ‘
শেষ বাক্যগুলো ছিল তীব্র আবেগ মেশানো। যা বলার সময় গলা কাঁপছিল সৌধর৷ কাঁপছিল বুকের গহীনে থাকা হৃদযন্ত্রটাও। আর নিধি? সে ছিল নির্বিকার। সৌধকে কেবল অমানুষ, ডক্টর রূপে কষাই ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছে না সে। বিষাক্ত ঠেকছে ওর স্পর্শ, কণ্ঠ, মুখাবয়ব সবটা।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।