১
ছাদে পানির কল চেক করতে এসে ভাতিজির সুমধুর কন্ঠের তিলাওয়াতে পা থমকে যায় আহমাদের।মাঝে মাঝে তিনি বারান্দার টুলে এসে বসে থাকেন ওর তিলাওয়াত শোনার জন্য।আল্লাহ তাঁর সবচেয়ে দামী ছায়াগুলো কেড়ে নিলেও তাকে সর্বগুণের অধিকারিনী বানিয়েছেন।রবের কাছে তিনি আরও একবার শুকরিয়া আদায় করলেন মনভরে।অতপর চাদর ভালোমতো গায়ে জড়িয়ে সিঁড়ির দিকে উঠে গেলেন।
ষোড়শী কিশোরী উমায়ের মুসতাকিম হাফসা।গোল গোল চেহারার শুভ্র প্রজাপতির বয়স চারের কোঠায় পড়েই মায়ের শেষ ভালোবাসার স্মৃতি গড়ে উঠার আগেই চিরতরে মাকে হারায় সে।তখন তাঁর একার পৃথিবী জুড়ে বাবার ছাঁয়া।বাবার হাত ধরে বড় হতে থাকা হাফসার আদরের ভাগেও ঘাটতি পড়লো যখন সাত বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে এতিম হলো সে।সেই থেকে একমাএ ভরসার স্থান হলেন চাচা আহমাদ!
শত পুষ্পের মধ্যে সে যেনো শুভ্র এক পুষ্প।অকৃত্রিম মায়ার ঔশ্বর্যী সে!নিজের সভ্রম রক্ষা করতে ছোট্ট বয়সেই শালীন পোষাকে আবৃত হয়।সেই থেকে পর্দাকে আঁকড়ে ধরেছে এখনও।চাচা মাহরাম হয়েও গুণে মাএ কয়েকবার দেখেছেন ওর চেহারা,সেগুলোও কোনো না কোনো বিশেষ কারন বা দূর্ঘটনাবশত।
পেশায় তিনি দারুস সালাম মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল,সাথে ইসলামিক কমিটি ফাউন্ডেশন এর সভাপতিসহ অনেক জামায়াতি সংগঠনের উদ্যোক্তা হিসেবে নিয়োজিত আছেন।গত হওয়া তাঁর একমাএ উত্তরাধিকারী ও স্ত্রী সৌদি গমনের পথে বিমান দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।সেই থেকে পরিবারবিহীন একাকীত্বকে সাথে নিয়েই পার করছেন বাকি জীবন।
রক্তের সম্পর্ক বলতে আরোও একটা সম্পর্ক আছে যিনি হচ্ছেন হাফসার মামা।স্ত্রীসহ একমাএ ছেলে নিয়েই তাঁর পরিবার।ছেলে ইন্দোনেশিয়ায় স্যাটেল,আর তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী।
বাড়িটি পুরনো আমলের হলেও শৌখিনতার শেষ নেই।ভাইয়ের হাতে গড়া স্মৃতিটুকু পুনর্নিমাণে সায় দেয় নি মন।
দারুস সালাম স্থানকেনদ্রিক বড় একটা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় প্রতিবছর ফ্রেব্রুয়ারি মাসে এখানে বিশালভাবে ওয়াজ মাহফিল হয়।এতে দেশে-বিদেশের গনমান্য আলেম-মাওলানারা উপস্তিত থাকেন।
প্রতিবারের মতো এবারও আয়োজন বেশ আনুষ্ঠিকতা করেই।মাদ্রাসা মাঠে মাহফিলের আয়োজন।বেলা ৪ টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত মাহফিল হবে। বিকেলে লেকচার দিয়েছেন ইরান থেকে আসা শাহ সাইফুল্লাহ আল ইবরাহীম।
হাফসা ইশার নামাজ পড়ে সূরা মুলক পড়লো।অন্যদিনের তুলনায় আজকে কম তিলাওয়াত করে অপেক্ষা করতে থাকলো মাহফিলের লেকচার শুনার।হাফসা নিজেকে কখনো অসুখী মনে করে না।সবসময়ই সবকিছুতে ওর শুকরিয়া।এতিম বলে কোনো দূঃখ নেই ওর।আল্লাহর দেওয়া দূনিয়ার মেয়াদ শেষ হলে তো সবাইকেই একদিন না একদিন চলে যেতেই হবে।আল্লাহর পছন্দ হয়েছে মা বাবাকে।তিনি নিয়ে নিয়েছেন।এটাই সত্য আর হাফসা সেটা মেনেও নিয়েছে।
দূনিয়ার ভোগ-বিলাসের চিন্তা তাঁর মস্তিষ্ক দখলে নিতে পারেনি।সারাক্ষণ আখিরাতের ভয় তটস্থ করে রাখে বলেই হৃদয়জুড়ে শান্তির ফোয়ারা বয়।
দারুস সালাম বহুতলা ভবন ও সনামধন্য প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সারা বছর-ই এখানের ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন থাকে।বাড়ির প্রায় পাশে বলেই সারাক্ষন তিলাওয়াতে মুখরিত থাকে গোটা পরিবেশ।হাফসা আগ্রহী হয়ে দেশ বিদেশের সব লেকচারারদের ওয়াজ শুনে।কখনো বা উৎফুল্ল হয় স্রষ্টার অমায়িক সব গুণে-সৃষ্টিতে,কখনো অনুতপ্ত হয়ে চোখের বাঁধ ঝরে অবিরতজড়া অশ্রুতে।
হাফসা পড়ালেখা করেছে আ্যারাবিক লাইনে।চাচার কাছেই কুরআন হিফয শেষ করেছে অল্প বয়সেই।তবে ফিকহ সহ অ্যারাবিক বইয়ের পাশাপাশি পড়ছে সাইকোলজি নিয়ে।সাইন্সের বিভিন্ন বিষয়ের বইয়েও চরম আগ্রহ ওর।ইসলামিক বই পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সায়েন্স ফিকশনের বইও সংগ্রহে আছে ওর নিজের লাইব্রেরীতে।
ঘড়ির কাটায় বারোটা বাজতে মিনিট দূয়েক বাকি প্রায়।ঘুমে নেতিয়ে আসা চোখজোড়া টান টান করে অপেক্ষা করছে শেষ বক্তার।তিনি প্রধানঅতিথি আব্দুল্লাহ আল আরহাম তাজওয়ার।সদ্য তরুণ এই যুবক কম বয়সেই বিভিন্ন মুসলিম কান্ট্রিতে ইসলামিক লাইনে স্টাডি করেছেন।শিক্ষাজীবন মিশরেই শেষ করে মাস দূয়েক আগে দেশে ফিরেছেন।
অন্ধকার রুমে বিছানায় কমলমুড়ি দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে সে।শীতের শুরু!প্রকৃতিতে ঠান্ডা বাতাস আর শীতলতার ছড়াছড়ি।অয়ামিক এক ঋতু শীতকাল।
ঠান্ডায় শরীরের প্রতিটা লোমকূপ পর্যন্ত কেঁপে কেঁপে উঠছে হাফসার।আচমকা মাইকে কোনো কন্ঠের সালাম শুনতেই হাফসার ভ্রু আপনাআপনি কুচকে গেল।এত মিহি কন্ঠ!
স্টেজে বহুল জনতার ছড়াছড়ি, তা মাইকের এক্সটা আওয়াজেই অনুমান করা যাচ্ছে।উনার আগমনে উত্তেজনা সবদিকে।তিনি প্রথমেই ছোট্ট ছোট্ট কুরআনের কয়েকটা অংশ তিলাওয়াত করে খতমে খাযেগান পড়লেন।হাফসা থমকে গেলো।এত সুন্দর কন্ঠ!ও এর আগে শুনেনি তো।
উনার কন্ঠের মাধুর্য ওর হৃদয়ের অন্তস্থল স্পর্শ করেছে।স্টেজ কাঁপিয়ে ফেলছে মানুষ।উনার অমায়িক কন্ঠের মোনাজাত শুনে অসম্ভব সুন্দর এক অনুভূতিতে চক্ষু বর্ষণ হলো হাফসার।উনার উচ্চারিত প্রতিটা শব্দে যেনো আল্লাহকে গভীরভাবে স্মরন করছে সে।যা ওর ছোট্ট পরিসরের জীবনে,প্রথম কোনো পুরুষ কন্ঠে!
হাফসা একধ্যানে উনার লেকচার শুনতে লাগলো।পরিবেশ শান্ত,নিরিবিলি।উনার কন্ঠে কেমন জানি একটা মাধূর্য আছে,কেমন একটা অনুভূতি!উনার অমায়িক কন্ঠে বক্ষপিঞ্জরে সুন্দর একটা অনুভূতি জন্ম হলো হাফসার।ইচ্ছে করলো আমরণ এই কন্ঠ চলতে থাকুক! মাঝে মাঝে যখন ছোট ছোট আয়াত তিলাওয়াত করে হাদিস ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তখন হৃদয়টা শান্ত হয়ে যায়।এই সুন্দর কন্ঠের মানুষটার সলগ্নে যারা থাকে তারা নিশ্চয়ই অনেক ভাগ্যবান।মুচকি হেসে পুনরায় সেই হৃদয়স্পর্শী কন্ঠের গভীরতা অনুভব করতে লাগলো!
‘হাফসা ঘুমাবে না?দরজা খোলা রয়েছে দেখি।’
মামুণীর হঠাৎ কথায় চমকে উঠলো সে।নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,’মামুণী আপনি ঘুমিয়ে পড়েন।আমি ইনার লেকচার শেষ হলেই ঘুমিয়ে পড়ব।’
মামুণী এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।
সবচেয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে লেকচার শেষ করলেন তিনি।উনার প্রতিটা বাক্য যেন হৃদয়ে তোলপাড় বাঁধিয়ে দিয়েছে।লেকচার কীভাবো শেষ হলো হাফসা বুঝলোই না।শেষ সময়ে দোয়া করলেন আরহাম তাজওয়ার। হাফসা ও হাত তুললো।এমন সুন্দর মোনাজাতে হাফসার চোখের কোণা নিমিষেই ভিজে উঠলো।শেষ সময়ে তিনিও কেঁদে ফেললেন।হাফসা ঠোঁট উল্টে কান্না আটকানোর চেষ্টা করেছিল তখন।পরহেযগার বান্দার যেমন অল্প অসাবধানতায় চোখে বর্ষণ হয়, তেমনি পূণ্যময়ী কিশোরী তার জীবনের গুনাহে অনুতপ্ত হয়ে চোখের বাঁধ ছাড়লো মোনাজাতে!
কাঁন্নারত অবস্থা-ই মোনাজাত শেষ করলেন আব্দুল্লাহ আল আরহাম তাজওয়ার।এ পর্যায়ে প্রচন্ড রকমের মন খারাপ হলো হাফসার।কেনো এত তাড়াতাড়ি শেষ হলো।আর কি কোনোদিন শোনা হবে এই অমায়িক কন্ঠটা?
ফোনে রেকর্ড করা প্রথম অংশটুকু বারবার শুনলো।তবু মন খারাপ ছেড়ে গেলো না।কিশোরী মনে ভীষণভাবে চোট লাগলো।সুন্দর সময়গুলোর মেয়াদ এত স্বল্প কেন হয়!
*****
বাইরে ডেকোরের্টাস দের চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে।আরও কিছুসময় বিছানায় গড়িয়ে হাতের কনুই দিয়ে চোখ গাল মুছে কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো নিচে। পূর্ণ চাঁদের রুপালি আলোয় বাড়ির আঙ্গিনাটাকে লাগছে কী দারুণ মায়াবী! যেন এক পলকে একশ রূপকথা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। যেখানে প্রত্যেকটা চরিত্র সুখী, আমোদপ্রিয়।কিন্তু হাফসার মন খারাপ এখনো আটকে আছে,কর্ণকুহর থেকে কন্ঠটা বিরতি নেওয়ায়।তাঁর সমস্ত শরীর ঢাকা বড় হিজাবসহ,নিকাব হাঁটুর নিচ পর্যন্ত।গোল গোল চোখের আইবল ছাড়া কিছু দেখার জো নেই।
বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বাইরের পরিবেশ উপভোগ করছিলো এমন সময়…
‘হাফসা মামুণী!এখানে কী করো।’-কাকামণির প্রশ্নে ভয় পেয়ে গেলো।
হাফসা দৃষ্টি অবনমিত করে বলে, ‘কিছু না এমনিই।’
‘ঘুমাও গিয়ে।রাত কত হয়েছে।’
‘জ্বী।বাইরে এতো আয়োজন কেন?’
‘গেস্ট আসবে।মাহফিলের গেস্ট।’
‘ওহ।’
‘শাইখ দূজন রাতের খাবার খেয়ে চলে যাবেন।আর চিফ গেস্ট আজ থাকবেন।উনার বাসা বেশীদূর।’
হাফসা চমকে কাকামণির দিকে চোখ তুললো।ভুল কিছু শুনলো নাকি।ভেবে সংশয় কাটাতে তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন করে বসে,’চিফ গেস্ট আরহাম তাজওয়ার?’
২
হাফসা চমকে কাকামণির দিকে চোখ তুললো।ভুল কিছু শুনলো নাকি।ভেবে সংশয় কাটাতে তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন করে বসে,’চিফ গেস্ট আরহাম তাজওয়ার?’
__’হ্যাঁ’
__’ওহ।’
__কাকামণি ব্যস্তসুরে বললেন, ‘আচ্ছা যাই।কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবেন।তুমি ঘরে যাও। ”
__’জ্বী।’
হাফসা রুমে চলে আসলো।এসেই থাই গ্লাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো নির্নিমেষ।ভেতরে কেমন কেমন অনুভূতি হচ্ছে।সে হৃদয় তোলপাড় করা কন্ঠের মালিককে দেখতে পাবে ভাবতেই হাত পা কাঁপছে।তেমন খুশিও লাগছে।
প্রায় পনেরো মিনিট একটানা দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটিয়ে বাড়ির বড় গেট দিয়ে তিনটে গাড়ি ডুকলো।হাফসার হাত পায়ের সাথে ঠোঁটও তিরতির করে কাঁপছে।হৃদয়টা যেন কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে আসবে এত জোরে লাফাচ্ছে।অতপর গাড়ি থেকে নামা ব্যাক্তিকে দেখতেই হাফসার হৃদস্পন্দন থমকে যায়।শুভ্র লম্বা জুব্বাতে শুভ্র পুরুষ।গায়ে কালো আলখাল্লার সাথে সবুজ পাগড়ি।
কাকামণি এগিয়ে গেলেন।উনার দিক ফিরতেই চেহারা স্পষ্ট হলো।বলিষ্ঠদেহী তাগড়া যুবক।লম্বা ঘনকালো দাঁড়ির সাথে আহত করা মায়াবী দৃষ্টি।ঘনকালো পাপড়ির মধ্যে চোখটা অসম্ভব রকমের সুন্দর।
লোকটি মিষ্টি হেসে কাকামণির দিকে হ্যান্ডশেক করে উনাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমের দিকে পা বাড়ালেন।রুমে ডুকার আগ পর্যন্ত হাফসা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
দৃষ্টির আড়াল হতেই হাফসা বুকের বাম পাশে হাত রেখে স্ট্যাচু হয়ে বিছানায় ওভাবই বসে রইলো।কিন্তু পরক্ষণেই শতবার ইস্তিগফারে কম্পিত রাখলো ওষ্ঠদ্বয়।কারণ সে তো পরপুরুষ।আর পরপুরুষের জন্য ওর হৃদয়ে কোনো অনুভূতির জন্ম না হোক।মনে মনে শতবার এস্তেগফার পড়লো সে।কিছুক্ষণের জন্য তাঁর নফস তাকে কীভাবে চরম ধোঁকা টা দিলো!
******
সারাঘরময় পায়চারি করছে হাফসা।ওর পায়ের শব্দ শুনে মামুণী বেরিয়ে আসলেন।হাফসা নির্দ্বিধায় সব বলল,ওই প্রাণঘাতী লোকটার কথা।সে কোনোভাবেই এই লোকটার চেহারা আর কন্ঠ নিজের মস্তিষ্ক থেকে সরাতে পারছে না।সাথে এটাও একঢোকে বলে ফেললো যে সে ওই লোকটাকে বিয়ে করতে চায়।কোনো হারাম অনুভূতি না রেখে হালালভাবে পেতে চায় তাকে।আল্লাহর কাছে ও খুব করে চাইবে উনাকে।
মামুণী ওকে অনেকভাবে বুঝালেন,সে অনেক বড় মাপের আলেম।বিবাহিত ও তো হতে পারে বয়স কম হলে কী হবে।আর তুমিও এখনো ছোট।কিন্তু হাফসা কোনো বাধাই শুনতে নারাজ।
রাতে গেস্টদের খাবার সম্পন্ন হলো।হাফসার রুম থেকে পাঁচ কক্ষ পরেই উনার রুম।উনার সাথে আসা বাকিরা নিচে থাকছে।শুধু তিনি আর আরো দূজন দূ-রুম নিয়ে দোতলায় থাকছে।সারা হলময় ছেয়ে গেছে উনার গায়ের মিষ্টি আতঁরের গন্ধ।যে গন্ধে চোখ বুঝে দীর্ঘসময় হারিয়ে যাওয়া যায়।
****
মধ্যরাত!
হাফসা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছে রেলিং ধরে।দৃষ্টি সেই ঘরে যেখানটায় ওই মানুষটা বাকিদের নিয়ে তালিম করছেন।উনার কন্ঠ স্পষ্ট কানে ভাসছে হাফসার।কান খাঁড়া করে মনোযোগ গেঁথে রেখেছে আধোবুলিতে শোনা উনার কথাবার্তায়।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে ওর।
তড়িৎ বেগে চোখ ঘুরিয়ে ওই সুদর্শন লোকটাকে একপলক দেখা মাএই হাফসার কাঁপা-কাঁপি দ্বিগুন হয়ে যায়।
উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন দূ সেকেন্ড।শুধু দেখলেন কেউ একজন ওপাশটায় ছিলো।উনি বেরোনো মাএ দ্রুতপায়ে রুমে চলে গেল।কালো কাপড়ের আবরণে পুরো শরীর ঢাকা ছিলো।উনি আর কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে রুমে চলে গেলেন।
হাফসা রুমে এসে হাঁপাচ্ছে।মানুষটাকে আরো মেহনীয় রুপে ও দেখেছে। সাদা পান্জাবি-পাজামা,কালো টুপি।খুব করে চাইছে হৃদয়ে একটা ছবি আকঁতে।এমনভাবে লুকিয়ে রাখবে যেন উনার চেহারাটা মুছে না যায়।কিন্তু পরক্ষণেই নিজের অহেতুক ভাবনা ছেড়ে নিজের মনকে শাসাচ্ছে সে।কেনো আজ মন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে।বারবার সে ‘আউজুবিল্লাহিমিনাশ সাইত্বানির রাজীম’ আওড়াতে থাকলো।
মামুণী ওর সব কান্ড দেখছেন বসে বসে।উনার সন্তান নেই,বিধবা হয়েছেন বহু আগে।সেই থেকে চাচা আহমাদ উনাকে হাফসার দেখাশোনার দায়িত্বে রেখেছেন।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই মামুনি নামক মানুষটা ওর ছায়া হয়ে আছেন এখনও।নিজের মনের লুকায়িত সব কথা,এই মানুষটাকেই আপন মনে করে শেয়ার করে।
রাত তার গতিতে বাড়ছেই।অনেক চিন্তা ভাবনা আহাজারির পর হাফসা সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলো সে উনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েই দিবে।নারী তো পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া সুন্নাত।আর মনের যেহেতু নিয়ন্ত্রণ রাখা কষ্টসাধ্য তবে তো যত আগে প্রস্তাব দিবে ততো ভালো।যদি একসেপ্ট করেন তবে হবে হালাল সম্পর্ক।আর না করলে চিরতরে মুছে দিবে এই মানুষের অস্তিত্ব।তবুও রব অসন্তুষ্ট না হোন।
অনেক পেইজে লিখা ছিঁড়ে ফেলে অবশেষে একটা চিঠি লিখলো।মামুণীকে জোর করে উনার রুমের বাইরে পাঠালে তিনি কালো খামটা দরজার চৌকাঠে আটকে রেখে চলে এলেন।
চিরকুট টা যদি অন্য কারোর হাতে চলে যায় এই ভয়ে সারারাত নির্ঘুম কাটলো ওর।রাতের কিয়াম শেষে জানালার থাই এর ফাঁক দিয়ে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো আরহাম তাজওয়ারের রুমটায়।নাক টেনে টেনে আঁতরের স্মেলটা খুঁজছে।কি অমায়িক সুগন্ধি!
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হলো।হাফসার হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে গেলো মুহুর্তেই।বের হতেই কিছু একটা উড়ে মাটিতে দূলে পড়তেই তিনি সেটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে হাঁটু ভেঙ্গে বসে দেখলেন কালো খাম।উপরে লিখা ‘আপনাকে দিয়েছি,আরহাম তাজওয়ার।’
উনি সেটা হাতে তুলে নিলেন।তারপর রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন।হাফসার খারাপ লাগলো চিঠিটা চোখের সামনে পড়তে দেখলে তো উনার মুখের রিয়েকশন বুঝতে পারতো।কি জানি ঘটনা কতদূর গড়াবে।
বিছানায় বসে চিঠিটা খুলতে দেখলেন সাদা পেইজে নিঁখুত হাতের লেখা, ❝নারী তো পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া সুন্নাহ। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।আপনি বিয়ে করবেন আমায়?আমি সামনে আসতে পারবো না।তবে আপনি হয়তো আমাকে দেখে থাকবেন কাল রাতে।❞
*****
ঘড়িতে তখন সকাল সাতটা।সকালের আপ্যায়ন শেষে গেস্টরা রেডি চলে যাওয়ার জন্য।হাফসা দোতলায় আড়াল থেকে নিচে তাকিয়ে আছে।মনের আকাশে ঘন মেঘ জমেছে।যার বর্ষন নামছে চোখ দিয়ে।তিনি প্রস্তাবটাকে এতটাই তুচ্ছভাবে নিলেন, হ্যাঁ অথবা না একটা উত্তর অবধি জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না।মনটাকে এভাবে না ভাঙ্গলেও পারতেন।
উনি বের হলেন অন্দরমহল থেকে।কালো জুব্বাসহ সবুজ পাগড়িতে তাঁর রুপ যেন ফুটে উঠেছে তিনগুণ। সকালের ঝলমলে পরিবেশে তাঁর প্রাণবন্ত হাসি যেনো মেঘের আড়ালে এক টুকরো সূর্যের হাসি!
মামুণী এসে হাফসার মাথায় হাত স্নেহের হাত বুলালেন।বয়সটা কম, আবেগ বেশী।গাড়িডে উঠার আগে আরহাম তাজওয়ার কাকামনিকে ডেকে কিছুক্ষণ কথা বললেন।তারপর চলে গেলেন।পেছন ফিরে একটাবার তাকালেনও না।হাফসা পুনরায় আহত হলো।তাদের একসারির গাড়িগুলো গেইট থেকে আড়াল হতেই হাফসা রুমে এসে বালিশে মুখ গুজে কেঁদে দিলো অবুঝের মতো।এই অপ্রত্যাশিত প্রত্যাখান ওর ছোট্ট মনে একটা ধারালো আঘাত হয়ে রইলো।
কিন্তু অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় ষোড়শী এই শুভ্র পুষ্পের ভাঙ্গা হৃদয়ের আর্তনাদ কি আরশ পর্যন্ত পৌঁছাবে না?
নোট📌
(পরপুরুষকে নিয়ে যেকোনো ধরনের ভালো লাগার,বা যেকোনো চিন্তাই গুনাহ।পরপুরুষের দিকে অবাধ দৃষ্টি দেওয়া গুনাহ।পরপুরুষের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হওয়া গুনাহ।
গল্পে হাফসার ক্ষেএে কিছুকিছু এমন হলেও পরে আমি বুঝিয়েছি এগুলো নফসের ধোঁকা।আমি বিষয়টা ক্লিয়ার করে দিয়েছি।গল্প থেকে কেউ ভুল ভেবে ভুল শিক্ষা নিবেন না।)
(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মেলাবেন না কেউ)
(বি:দ্র: গল্পটা যদি আমার আইডির লিংক থেকে না পড়ে অন্য কোথা থেকে পড়েন,তাহলে অনেকগুলো লিংক শো করবে না।নীল হয়ে যাবে।আর সেখানে দেখাবে এটা ৮৬ পর্বের।কিন্তু আমার আইডিতে মোট ৫৬ পর্ব।আসলে ৮৬ পর্ব থেকেই পর্ব কমিয়ে ৫৬ পর্বতে আনা হ’য়েছে।তাই যে লিংকগুলো নীল হ’য়ে গেছে অর্থাৎ শো করে না সেগুলোর ভেতরে কিছু নেই।আপনি যদি এক সিরিয়ালে যে লিংকগুলো পড়া যায় সেগুলো এক সিরিয়ালে পড়ে যান,তাহলে আপনি সম্পূর্ণ গল্প পড়তে পারবেন।এর প্রমান আপনি পর্বের শেষের লাইন,পরবর্তী পর্বের প্রথম লাইনের সাথে মিলালেই বুঝতে পারবেন।সো, মাঝের অনেকগুলো পর্ব শো হয় না,কারন সেগুলো দূইবার হয়ে গেছে।তাই কেটে দিয়েছি।যে লিংকগুলো শো হয়,এগুলোই সম্পূর্ণ গল্প।সো,লিংক (নীল হয়ে যাওয়া লিংকগুলো) ওপেন না হলে ঘাবড়াবেন না।)
আমার মনে হয়,আমার গল্পে কিছু এুটি আছে।আমি খুব শীঘ্রই পুরো গল্পটার ভুল জিনিসগুলো শোধরাবো।সেজন্য কিছু সময় দরকার আমার।ইন শা আল্লাহ খুব শীঘ্রই।আপনারা যারা নতুন পড়ছেন,তারা এসেই ভাববেন যে এগুলো (ভুল) কীভাবে লিখলাম।ফার্স্ট গল্প তাই কিছু এুটি হয়েছে।ইন শা আল্লাহ সামনে হবে না আর এই গল্পটাও ঠিক করবো ইন শা আল্লাহ।
#অপেক্ষা
#Maha_Aarat
#সূচনা_পর্ব
আমার পেইজ লিংক: https://fb.com/61555036910135
আমার লিখা অন্যসব গল্পগুলো পেইজে পাবেন।সো লাইক, ফলো দিয়ে রাখতে পারেন।