অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ২

12 Min Read

(৩)
কেটে গেলো আরো দূটি বসন্ত।ষোড়শী কিশোরী পা দিলো অষ্টাদশে। মামা সায়িদ আনসারের ছেলে রাদ আনসার দেশে এসেছে।পেশায় সে একজন সাইন্টিস্ট।ভালো এপার্টে জব করছে।মামার ইচ্ছা হাফসাকে উনার ছেলের স্ত্রী বানানোর।উনার জানামতে এখনকার জেনারেশনে হাফসার মতো মেয়ে পাওয়া দূষ্কর।রাদ খুব ছোটোবেলা ওকে দেখেছিলো।মামা হাফসার সাথে তার বিয়ের কথা উঠালে রাদ জানায় তার কোনো আপত্তি নেই।

এদিকে চাচা আহমাদের চিন্তার শেষ নেই।একমাস থেকে খুব পেরেশানিতে আছেন।আবার সামনে মাহফিলের ঝামেলা।রাদ সম্পর্কে উনি জানেন।ছেলেটা ভালো,ভদ্র,ধার্মিক মাইন্ডের।আর যেখানে আশ্রয়টা নিরাপদ,সেখানে সম্বন্ধ টা না করার জো নেই।

এদিকে সারা এলাকা ছড়িয়ে গেছে আহমাদের ভাতিজি রুপবতী,ধার্মিক।তাই বড় বড় আলেমরা এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাফসার বিয়ে দেওয়া হবে।

সময়টা শীতের।ফজরের নামাজ পড়ে নিকাবের ওপর শাল জড়িয়ে ছাদে উঠলো হাফসা।খঁই ছিটিয়ে দিলো পুরো ছাদে।সাথে সাথেই কবুতরের ঝাঁক এসে পড়লো।হাফসা ছোট্ট একটা কবুতর হাতে নিয়ে এসে ডিভানে পা তুলে বসলো।ভেঙ্গে ওঠা পশম টা সযত্নে ছিঁড়ে ফেলে কবুতরের চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ‘হুম এখন ভালো লাগছে তুমাকে।’

আকাশে উড়িয়ে দিলো আবার।কবুতরটা নিচে নেমে বাকিদের সাথে কুটকুট করে খঁই খেতে লাগলো।হাফসা সেদিকে একধ্যানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা হাতে নিলো।

হোম স্ক্রিনের ওপরে পজ করা আছে আরহাম তাজওয়ারের সেই রেকর্ডিংটা।শুনতে চেয়েও প্রতিবার পজ করে দেয় সে।কি দরকার গায়রে মাহরামের কন্ঠ শোনার।

আস্তে আস্তে ফর্সা হয়ে যাওয়া নীল আকাশটার দিকে তাকিয়ে রইলো।হাফসা কেনজানি অপেক্ষা করেছিলো।এখনও হয়তো করছে।কিন্তু উনি তো আসেন না।আসবেনও না বোধহয়।হাফসা তাকে নিয়ে ভাবে না।কল্পনাও করে না।শুধু জেনে রাখে,কেউ হয়তো আসার কথা ছিল।তবে আসেন নি।

হাফসা শুনেছে রাদ ভাইয়ের সাথে তার বিয়ের কথা।সে জানে কাকামণি এসে ওর সম্মতি জানতে চাইবেন।ইসলামে বলা হয়েছে কুমারী ও বিধবা মেয়ের মতামত ব্যতীত বিবাহ জায়েজ নয়।

হাফসা না করবে না।কারণ যার জন্য কোনো বার্তা ব্যতীত আশা নিয়ে অপেক্ষা করেছিলো তিনি আসেন নি।আসবেনও না জানে।তিনি হয়তো মজার ছলে উড়িয়ে দিয়েছেন চিঠিটা।কিন্তু হাফসার বেপরোয়া মনে মনে পড়ে উনার মুখশ্রী,উনার আওয়াজ,উনার হাসিটা।

হাফসা উনাকে প্রতিটা মোনাজাতে চেয়েছে।তাহাজ্জুদের কান্নামাখা আকুতিতে বারেবার উনাকে চেয়ে রবের কাছে ফরিয়াদ জানিয়েছে।ঠিক করলো আর চাইবে না।কি জানি উনি হয়তো হাফসার জন্য কল্যাণকর নয়।ওর চিন্তা হয়,ভয় হয় এটা ভেবে যে আল্লাহর কাছে ভুল মানুষকে চেয়ে রবকে অসন্তুষ্ট করছি না তো?

দূপুরে যখন খাবার শেষে রুমে আসলো তখন মামুণী এসে বললেন কাকামণি রুমে আসার অনুমতি চাইছেন।হাফসা ফিকে হাসি দিলো।সে জানে কাকামণি কেন আসছেন।

কাকামণি এসে ভালো মন্দ খোঁজ নিয়েই প্রসঙ্গ বদলালেন।স্নেহের সহিত বললেন,

‘হাফসা মামণী তুমি হয়তো শুনে থাকবে রাদ’ এর সাথে তোমার নিকাহ’র কথা চলছে।তুমি আমাকে সত্যি করে বলো তুমার কি তাকে পছন্দ?তুমার যদি আপত্তি থাকে তাহলে তাদের না করে দিবো।বলো তুমার কি মতামত?’

হাফসা নিশ্চুপ রইলে তিনি আবারও বলতে আরম্ভ করলেন,

‘আমি তোমাকে নিজের মেয়ের মতো বড় করেছি
কখনো ভাইয়ের মেয়ে মনে করিনি।তুমার মনে যদি কোনো অমত থাকে,বা তুমার ইচ্ছা না থাকে আমাকে নির্দ্বিধায় জানাতে পারো।’

‘উনি ধার্মিক তো?’

‘আলহামদুলিল্লাহ।রাদ ছেলেটা ধার্মিক।জেনারেল লাইনে পড়ে ও সে ইসলামের প্রতি দৃঢ়।নামাজী,আচার ব্যবহার ভালো।তার মাও তুমাকে খুব পছন্দ করেন।’

হাফসা একটু থেমে থেমে জড়তা নিয়ে বললেন, ‘তাহলে আপনি যা ভালো মনে করেন।আর আল্লাহর যা ইচ্ছা,ওটাই আমার খুশি।’

‘আলহামদুলিল্লাহ।’

যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘এবারের মাহফিল পরেই তোমাদের নিকাহ’র আয়োজন করা হবে।’

তিনি চলে গেলে হাফসা চোখের উঠে আসা জলটা মুছে ফেললো।কার জন্য অপেক্ষা করবে সে?মোটেই আর না।#অপেক্ষা’ জিনিসটা খুব কষ্টের আরহাম তাজওয়ার। আর সেটা আরো কষ্টের যখন সেখানে পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তাই থাকে না।

*****
গতবারের থেকেও এবারে বেশ ধামাকা আয়োজন।দেশ বিদেশের মানুষ আসে প্রতিবছর এই মাহফিলে।মাহফিলের কার্ডও ছাপানো হয়েছে।হাফসা ইচ্ছে করেই দেখেনি।ভেবেই নিয়েছে তিনি আসবেন না।আর আসলেও কী।আর তাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না।কারণ মৌখিক কথাসাপেক্ষে হলেও এখন সে অন্য আরেকজনের বাগদত্তা।

আজ রাতেই আয়োজন।হাফসা একান-ওকান থেকে শুনেছে এবারও আব্দুল্লাহ আল আরহাম তাজওয়ার চিফগেস্ট।পুরো কমিটির মানুষ এইবারও উনাকেই চিফগেস্ট হিসেবেই ইনভাইট দিয়েছে।হাফসা খুব একটা মন দিলো না তাতে।তবে নিজের ভেতরের কষ্ট টা ইচ্ছে করেই ধামাচাঁপা দিলো সে।বিনা বার্তায় প্রত্যাখান হওয়ার পরে উনার দিকে তাকানোই যে কতটা লজ্জাজনক সেটা বুঝানো দুষ্কর।

ঘড়িতে আটটা বেজে পঁচিশ মিনিট-
বাইরে দূটো নোয়াহ একটা মাইক্রো।আরহাম তাজওয়ার এসছেন।অনেক দূর থেকে এসছেন বিধায় এখানে রেস্ট নিয়ে ১০ টায় লেকচার দিবেন।

গাড়ির হর্ণ শোনা গিয়েছে কয়েকবার।আজ আর হাফসা অপেক্ষায় থাকলো না।জানালার ফাঁক দিয়ে দেখলো না উনি দেখতে কেমন হয়েছেন।

কিছুক্ষণ পর মামুণী এসে বললেন, ‘সেই আলেম আসছেন বাসায়।আজকের রাত থাকবেন।’

‘ওহ।’

হাফসা আগে আগেই ইশার নামাজ পড়ে তিলাওয়াত শেষ করলো। রাতের খাবার শেষে ঘুমোনের প্রস্তুতি নিতেই মামুণী এসে বললেন,

‘আজ কি তার লেকচার শুনবে না?এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ছো যে?’

‘জ্বি না মামুণী।ঘুম পেয়েছে অনেক।কিয়ামের জন্য যদি ঘুম না ভাঙ্গে আপনি ডাকিয়েন আমায়।’

‘আচ্ছা।’

ভেবেছিলো ঘুম আসবে না।তবে ক্ষণিকের মাঝেই তন্দ্রাঘোরে মিলিয়ে গেলো সে!

*****
ঘড়িতে শব্দ তুলে ১১ টার কাটা পেরোলো।আরহাম তাজওয়ার একঘন্টা লেকচার দিয়ে এসে নিচে ডিনার সারলেন।এরমধ্যে কাকামণির সাথে কথা বলেছেন।কাকামণি একটু পর উনার রুমে আসবেন।সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় একটা রুমে নজর আসলো উনার।একজনের পারমিশন নিয়ে সেই রুমটায় ডুকতেই দেখলেন,এটা কোনো রুম নয়, লাইব্রেরী।ইসলামিক বইয়ের সমাহার।আরেকপাশে সাইকোলজি সাবজেক্টের বই।

সামনে টেবিলটায় থাকা একটা বই হাতে নিতে দেখলেন ভেতরে অর্ধেক পৃষ্ঠায় বুকমার্ক দিয়ে দাগ করা আছে।বইটির নাম “নবীজির সংসার।”

বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা খুলতেই কভারপেইজে লিখা,

“উমায়ের মুসতাকিম হাফসা।”

ছোট্ট নিঁখুত হাতের লিখা দেখেই চিনে ফেললেন তিনি।চিরকুটটার নিচেও ছোট্ট করে লিখা ছিলো “উমায়ের”।মনে পড়তেই ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো উনার।

এখানের বেশীরভাগ বই-ই আ্যারাবিক লাইনের।এতগুলো বইয়ের মাঝে আলাদা একটা বই ছিলো, হুমায়ুন আহমদের ‘অপেক্ষা’ বইটি।

আরহাম তাজওয়ার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ্রুতপায়ে রুম ত্যাগ করলেন।

(৪)
আরহাম তাজওয়ার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ্রুতপায়ে রুম ত্যাগ করলেন।

রুমের সামনে এসে ভদ্রলোককে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিনয়ের সুরে বললেন, ‘দূঃখিত দেরি হওয়ার জন্য।ভিতরে আসুন।’

‘আপনার কোনো…

উনার এমন সম্বোধনে আরহাম তাজওয়ার অনুরোধিত সুরে বললেন,

‘বসুন আপনি।আপনি আমার মুরব্বি হন।এক্ষেত্রে আমাকে বেশী রেসপেক্ট দেওয়া ভালো দেখায় না। আমাকে তুমি করে বলুন।’

ভদ্রলোক বসলে তিনিও সোফায় মুখোমুখি হয়ে বসলেন।

‘তুমার অসুবিধা হচ্ছে না তো,কিছু লাগলে…’

উনার অর্ধেক কথাতেই আরহাম লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে উদগ্রীব হয়ে বললেন, ‘কোনো অসুবিধে হচ্ছে না।উমায়েরকে নিয়ে বলুন।’

আহমাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামনের ব্যাক্তিটাকে পরখ করলেন।তাঁর চোখে মুখে কেমন যেন অস্থিরতা, সংশয়, ভয়, প্রশ্নের ঝুঁড়ি!

আহমাদ বলতে শুরু করলেন, ‘তুমি একমাস থেকে যোগাযোগ রাখলে না।হাফসা এখন নিকাহ উপযুক্ত।চারিদিকে সবাই জেঁকে বসেছে।আমি খুব টেনশনে ছিলাম।’

আরহাম তাজওয়ার উৎকন্ঠিত কণ্ঠে অস্থিরতা নিয়ে এতক্ষণে মনের মধ্যে চেপে রাখা প্রশ্ন করেই বসলেন,

‘উমায়ের!উনার নিকাহ হয়ে গিয়েছে?’

‘হয়নি।তবে মাহফিল পর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’

‘কেন কেন?উনার কেন নিকাহ ঠিক করলেন?’

‘তুমি যোগাযোগ রাখো নি।কি করতাম বলো।ছেলে হচ্ছে ওর মামাতো ভাই।ইন্দোনোশিয়া থেকে তুর্কি গিয়েছে এবার।ওকে নিয়ে ওখানে সেটেল হয়ে যাওয়ার চিন্তা…

ভদ্রলোকের অর্ধেক কথাতেই আরহাম তাজওয়ার ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘একমাসের মধ্যে এতকিছু হয়ে গেলো?আমার ফোন হারিয়ে গিয়েছিলো।ফোনের মধ্যেই নোটপ্যাডে আপনার নাম্বার নোট ছিলো।আপনারা এ কয়টা দিন ওয়েট করলেন না?’

‘কি করে করবো।ও যথেষ্ট রুপবতী আর ধার্মিক,কেউ শুনলেই প্রস্তাব দিয়ে বসে।’

আরহাম তাজওয়ার কিছুক্ষণ বাম হাতের অনামিকা আর বৃদ্ধা আঙ্গুলি দিয়ে কপালের দূপাশ চেপে ধরে চোখ বুজে রইলেন।অতপর শান্ত হয়ে বললেন, ‘নিকাহ কি পুরোপুরি ঠিক?’

‘ঠিক।তারিখ পড়েনি।’

‘উনি কি জানেন, আমি যে খোঁজ রাখতাম।’

‘না তুমার কথামতো জানাইনি।’

আরহাম তাজওয়ার এর চেহারায় চিন্তা সাথে অস্থিরতা ভাসছে।কিছুটা ধৈর্যহারা হয়েই বললেন,

‘এই দিনটা পর্যন্ত ওয়েট করলেন না।দেখুন আমি দেড়বছরের বেশী সময় উনার খোঁজ নিয়েছি।এ কয়দিন যোগাযোগ না রাখায় নিকাহ ঠিক করে ফেলবেন ভাবতে পারিনি।উনাকে যদি চাইতাম না তাহলে তো আমি না করে দিতাম।এভাবে হুট করে ফোন বন্ধ কেন করব?আমি অনেকভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি,পারিনি।আসাও সম্ভব ছিলো না আমার আম্মু অসুস্থ ছিলেন আমি ইন্ডিয়ায় ছিলাম।’

আহমাদ নিরুত্তর রইলেন।

নীরবতায় পেরিয়ে গেলো বেশ কিছুক্ষণ।আরহাম তাজওয়ার অনেক্ক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘উনি কি খুশি এই নিকাহ’র সিদ্ধান্তে?’

‘সেটা বুঝতে পারিনি।তবে সম্মতি দিয়েছে।’

‘নিকাহ কি ক্যানসেল করতে পারবেন না?আই ওয়ান্ট টু মেরি হার।’

3★

‘নিকাহ কি ক্যানসেল করতে পারবেন না?আই ওয়ান্ট টু মেরি হার।’

আহমাদ কিছুক্ষণ কি যেনো ভাবলেন।বললেন, ‘আমি তুমার সম্পর্কে ওকে জানাই।দেখি সে কী বলে।ওর মতামতেই সিদ্ধান্ত হবে।’

‘আপনি তো আমার সম্পর্কে জানেন।আপনার আপত্তি আছে?’

‘আলহামদুলিল্লাহ আমি খুশি আছি।ইসলাম তো এটাকে সুন্দর নিয়ম বানিয়েছে।আমার আপত্তি নেই।’

‘আপত্তি না থাকলে আমি উনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই আড়াল থেকে।’

‘ও কারো সাথে কথা বলে না।তবুও আমি বলবো।সে অমত করলে আমি জোর করব না।’

‘জ্বি না অমতে কথা বলতে চাই না।আমার মনে হয় উনি আমার সম্পর্কে জানা উচিত।’

‘আচ্ছা দেখি ও জেগে আছে কি না।’

আহমাদ চলে গেলেন।আরহাম তাজওয়ার অস্থির হয়ে সারা ঘরময় পায়চারি করছেন।আসার পর একটাবারও মেয়েটার ছাঁয়া পর্যন্তও দেখেননি।অথচ সে কয়েক রুম পরেই থাকছে।উমায়ের কি ভুলে গেলেন আমার কথা?

কিছুক্ষণ পর আহমাদ এসে জানালেন, ‘সে ন’টায়-ই ঘুমিয়ে গিয়েছে।সকালে কথা বলবেন।’

‘জ্বী আচ্ছা।’

আহমাদ চলে যেতেই তিনি দরজা লক করতে করতে ভাবলেন, প্রতিদিন আমার রেকর্ডিং শুনেন অথচ আজকে আমার লেকচার শুনলেন না?না শুনে ঘুমিয়ে গেলেন?
উনাকে একদিন আহমাদ-ই বলেছিলেন হাফসা প্রায় সময় উনার রেকর্ডিং শুনে।’

******
ফজরের পরে নিজ কক্ষে বসে আছেন আরহাম তাজওয়ার।

‘মামুনী আপনি কবুতরদের খাবার দিলেন না?দেখেন কীভাবে ছোটাছুটি করছে।’

(৫)
‘মামুনী আপনি কবুতরদের খাবার দিলেন না?দেখেন কীভাবে ছোটাছুটি করছে।’

‘তুমি দিয়ে দাও হাফসা।’

‘ওদিকে যাবো না।আজকে কষ্ট করে আপনি দিয়ে দিন।আমি কাল থেকে দিব।’

হাফসার কন্ঠ শুনে ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল উনার।তিনি হয়তো বারান্দায়-ই ছিলেন।

আরহাম কখনো হাফসাকে দেখেননি।শুধু পর্দার আড়ালে বাতির নিচে শুভ্র দূটি চোখ দেখেছিলেন তাও কয়েক সেকেন্ড।সেই দূই বছর আগে।সে যেমনই হোক,তার চরিএ শুদ্ধ।দ্বীনের জ্ঞান আছে,দূনিয়ার মোহ’তে নেই,এমন চিন্তাধারাই আরহামের তাকে ভালো লাগার কারন।

কাকামণি এসে হাফসাকে আরহাম তাজওয়ার এর সাথে গতরাতের কথোপকথন সম্পর্কে বললেন।হাফসাকে কয়েকবার জিজ্ঞাসার পর সে রাজি হলো পর্দা মেনে কথা বলতে।আহমাদ বেশ অবাক হলেন কারণ হাফসা এই প্রথম কোনো নন-মাহরাম এর সাথে কথা বলতে রাজি হয়েছে।

*****
এমুহূর্তে দূজন পর্দার দূপাশে।হাফসার হাত পায়ের সাথে শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরা পর্যন্ত কাঁপছে।

আরহাম তাজওয়ার সালাম দিলেন।উনি সিওর উমায়ের উত্তর দিবেন না।হাফসা উত্তর দিলো না।কারন এও নিয়ম আছে ইসলামে যে, ‘কোনো নন-মাহরাম পুরুষ যদি সালাম দেন,তবে তার উত্তর দেওয়ার দরকার নেই।কিন্তু কোনো নারী যদি আগে কোনো পুরুষকে সালাম দেন তবে তাঁর জবাব দেওয়া উচিত।’

ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় আস্তে করে বলল, ‘বলুন।’

আরহাম তাজওয়ার প্রথম বার্তাতেই বললেন, ‘আপনি কি আমার মাসনা হবেন?’

📌নোট
(লেকচার শুনতে গিয়ে কোনো পুরুষকে দেখলে তাকে নিয়ে আপনার মনে যদি আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি হয়,তাহলে এটা থেকে বিরত থাকা উচিত।একান্তই শুনতে হলে অডিও শোনা উচিত।আর অডিও শুনতে গিয়েও ফিতনার সম্ভাবনা থাকলে শোনাই উচিত না।মেয়ে হিসেবে প্রত্যেক বোনদের উচিত, ইসলামিক লেকচারগুলো অডিও শোনা।কারন ভিডিওসহ শুনতে গেলে নন-মাহরামকে দেখতে হয়।যেটা একপ্রকার গুনাহ।
গল্প থেকে কেউ ভুল শিক্ষা নিবেন না।)

(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মেলাবেন না কেউ)

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।