অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ১১

16 Min Read

‘আবেগ ছিলো মানে?আমাকে ভালোবাসেন না?’

‘হ্যাঁ কিন্তু..

আরহাম শব্দ করে হেসে দিলেন।হাফসার মুখ থেকে ‘হ্যাঁ’ শব্দটাই শুনতে চেয়েছিলেন।হাফসাকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে বললেন,

‘বলুন তো একবার আপনি আমাকে ভালোবাসেন।’

‘প্ পারব না।’

‘প্লিজ প্লিজ একটাবার।’

‘অন্য কোনো একদিন বলবো ইন শা আল্লাহ।’

‘তাই?অপেক্ষায় থাকলাম।দিন এবার।’

‘আমি তো আপনাকে নাগাল পাই না..’

উনি চারপাশে তাকিয়ে কিছু খোঁজলেন।তারপর সোপ,শ্যাম্পু রাখার তাক থেকে ওগুলো সরাতে থাকলেন।হাফসা কিছু না বুঝে ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে রইলো।

উনি এবার আচমকা ওর কোমর ধরে একেবারে ওপরে বসিয়ে দিলেন।হাফসা চোখ খুলতেই দেখে ও নিচ থেকে অনেক ওপরে বসে আছে।এটা দেখেই আরহামের দূহাত খামচে ধরলো ভয়ে।উনি হেসে এগিয়ে এলেন।এবার উনার নাগাল পাওয়া যাচ্ছে।উনি কাছে এসে দূহাতের বন্ধনের মধ্যে ওকে আবদ্ধ করে নিলেন।এত কাছে আসায় হাফসা লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলো।উনার সাথে চোখ মেলানোই যাচ্ছে না।

উনি ঠোঁট কামড়ে হেসে নিচু হয়ে ওর সামনে মাথা এগিয়ে বললেন, ‘নাউ স্টার্ট মাই হার্ট।’

হাফসা উনার মাথায় আলতো হাতে ফেনা তুলছে।এরই মাঝে উনি মাথা থেকে ফেনা এনে হাফসার গালে নাকে,হাতে লাগিয়ে দিচ্ছেন।একেবারে বাচ্চামো কান্ড।হাফসা হাসছে,উনিও হাসছেন।মাথায় অনেকক্ষণ ব্রুশ করার পর হাফসা হাত সরিয়ে নিলো।এবার উনি দৃষ্টি তুললেন।দৃশ্যমান হলো একজোড়া ঘোরলাগা চোখ।যে চোখের দৃষ্টি গভীর,তৃষ্ণা স্পষ্ট!

হাফসা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো মুহূর্তেই।উনি নিজের মতো স্পর্শ শুরু করলেন।অধরে উষ্ণ স্পর্শ দিতে চাইতেই হাফসা সরে যায়।উনি আলতো হেসে নাক দিয়ে ওর পুরো গাল স্পর্শ করে ফেনা সরিয়ে দিলেন।

অতপর হুট করে সরে গেলেন।হাফসা ছোট্ট তাক ধরে ভয়ার্ত গলায় বলল, ‘প্ পড়ে যাব নামান আমাকে।’

‘আমি কি করে নামাব?’

‘যেভাবে তুলেছেন।’

‘পারবো না তো।’

হাফসা ভয়ার্ত দৃষ্টি রেখে বলল, ‘তাহলে তুলেছিলেন কেন?নামান প্লিজ ড়ে যাব আমি।”

আরহাম ইনোসেন্ট লুক নিয়ে বোকা বোকা কন্ঠে বললেন, ‘এত উঁচুতে কীভাবে নাগাল পাব?’

‘তাহলে লাফ দিব?’

আরহাম দ্রুত বললেন, ‘না না এখুনি নামাচ্ছি।’

উনি এগিয়ে যেতেই হাফসা উনাকে শক্ত করে ধরলো পড়ে যাবার ভয়ে।নেমে যেতেই দূরে সরে দাঁড়ালো।উনি বোধহয় তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছেন নিঃশব্দে।

এবার বেশ সিরিয়াস হয়ে বললেন, ‘শাওয়ার নিবেন?’

‘হুমম।’

উনি তৎক্ষনাৎ এক আঙ্গুল তুলে দূপাশ নাড়ালেন।হাফসা উনার ইশারা বুঝে বলল, ‘কেন?’

উনি মিনমিনে গলায় বললেন, ‘বারবার শাওয়ার নিলে ঠান্ডা লেগে যাবে হোমাপাখি।’

(২৭)
‘বারবার কেন করব?আমি তো এই একবার করব?’

উনি ঠোঁট কামড়ে হাসলেন।উত্তর দিলেন না।হাফসা ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো কিছু না বুঝে।কথাটা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হলো হাফসার।বুঝে উঠতেই গোল গোল চোখে তাকিয়ে রাগে বিড়বিড় করে বলল, ‘আপনি খুব বাজে।’

বলেই বেরিয়ে গেলো।ওর এক্সপ্রেশন দেখে উনি জোরে হাসতে শুরু করেছেন বাথটবে হেলান দিয়ে।

একটু পর হঠাৎ চোখ যায় নিচে বালতিত।তৎক্ষনাৎ ডোর খুলে মুখ বাড়িয়ে ডাকলেন হাফসাকে।

ধীরপায়ে দরজার সামনে হেঁটে যেতেই উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন, ‘এই কাপড় গুলো আপনি ধুয়ে দিতে এনেছেন?’

‘হুমম।’

‘কেন?ম্যাড কোথায়?’

‘উনি আসেননি আজকে।বাকিরা কিচেনে বিজি।’

‘আমি যদি ভুল না হই এগুলো মাইমুনার কাপড় রাইট?’

‘জ্বি।’

উনার এত্তোগুলো কাপড় আপনি কেন ধুয়ে দিবেন?বাসায় কি কোনো’ই ম্যাড নেই কাপরগুলো ধোঁয়ার জন্য?’

‘শান্ত হোন।সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত।আমি তো ফ্রী আছি।তাই আমি ওয়াশ করে নিতে পারব।’

‘নাহ,আপনাকে করতে হবে না।’

হাফসা কিছু বলতে নিলেই লোকটা ঝুঁকে ওর ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলেন, ‘নো মোউর ওয়ার্ডস কিউটিপাই।’
বলেই দরজা লাগিয়ে দেন।

******
সন্ধ্যার পর নামাজ পড়ে বাসায় ঢুকতেই মাইমুনার উঁচু আওয়াজ পান আরহাম।রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটতেই শুনতে পেলেন,

‘হুয়াট ইজ দিস হাফসা?যেই কাজ করতে পারো না সেটা করতে যাও কেনো?ইউ নো হুয়াট এগুলো এবরোড থেকে আনানো আমার ফেভারেট সব আবায়া।সবগুলোতেই দাগ লাগিয়ে দিয়েছো।হাউ মেড ইউ আর।কীসের রাগ আমার কাপরের ওপর মিটিয়েছো?এত জেলাস কেন আমার ওপর?’

মাইমুনা উঁচু আওয়াজের নিচে হাফসা ধীরকন্ঠে অনুতপ্ত সুরে বলল, ‘সরি আপু।আমি ভীষণ ভাবে দূঃখিত।আমি জানতাম না ছাদের ওই রশ্মিতে রং লেগে ছিলো।এবারের মতো মাফ করে দিন।আর ভুল হবে না কখনো।’

আরহাম হাফসার চোখমুখ পরখ করলেন।উমায়ের এতোটাই ভয়ে কথা বলছেন যে দূর থেকেও উনার গলা আর হাতের কম্পন স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে।

‘সাট আপ।ইউ আর যাস্ট টু মাচ।এত ক্ষতি করে যাস্ট সরি?আর সরি বললেই কি আবার সব ঠিক হয়ে যাবে?’

তখুনি আরহাম রুমে ডুকে বললেন,

‘এত উঁচু আওয়াজ কেন?বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে আপনার ভয়েস।’

মাইমুনা আরহামকে দেখেই নিজের কাঠিন্যতা আর উঁচু আওয়াজ থামিয়ে দিলেন মুহুর্তেই।কন্ঠে দূর্বলতা এনে বিছানায় ছিটানো কাপরগুলো দেখিয়ে বললেন, ‘দেখুন শাহ!আপনি তো জানতেন এইগুলো আমার কত ফেভারিট ছিলো।হাফসা এগুলো শুকিয়ে এনেছে।বাট দেখেন সবগুলোতে ছোপ ছোপ দাগ।আপনি বলেন তো!সবগুলোতেই কেনো ছোপ ছোপ দাগ হবে?আম সিউর সি ইজ জেলাস ওন মি।’

আরহাম এবার হাফসার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।হাফসা মাথা নিচু করে আছে অপমানে।কোনো দোষ ছাড়াই এত বড় বড় মিথ্যে অপবাদ মেনে নিতে হচ্ছে তাও আরহামের সামনে।এর চেয়ে বেশী নিকৃষ্ট আর লজ্জাজনক কিছু হতে পারে?

আরহাম এগিয়ে এসে কিছুটা শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

‘উমায়ের আপনি এগুলো ইচ্ছে করে করেছেন?’

হাফসা উত্তর দিতে গিয়েও থেমে গেলো।আরহাম ভেবে নিলেন নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ।

আরহাম আর এ বিষয়ে কথা বাড়ালেন না ঠিকই।বাট আঙ্গুল উঁচিয়ে হাফসাকে কঠিন গলায় বললেন,

‘আপনাকে আমি ওয়ার্ন করেছিলাম।মনে আছে?হিংসা জিনিসটা আমি খুব খুব ঘৃণা করি।তবুও আপনার মধ্যে এই নেগেটিভ জিনিসটাই কেন দেখছি বারবার।আই হেইট দিস।এগুলো কেন করলেন?এ্যান্সার মি?হুয়াই আর ইউ জেলাস?’

হাফসা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলেও পারলো না।…

16★

হাফসা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলেও পারলো না।

আরহাম না জেনেও হোক, ওর সাথে এমন ব্যবহার করবেন হাফসা কখনো কল্পনাতেও আনেনি।চোখের নোনাজল এসে ঠোঁট ভিজিয়ে দিলো।আরহাম আরো কিছু বলতে নিলেও কেন জানি থেমে গেলেন।

‘বাদ দিন শাহ।বলে দিন ও যেনো ওর ন্যারো মেন্টালিটি চেন্জ করে।’

হাফসা কান্নার ধকল আটকে নিচুমুখে দ্রুতপায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।এই অপবাদ আর মিথ্যাচারণা আর নেওয়ার মতো নয়।কান্নারা থামবে না।অবিরত অশ্রু ঝড়বেই আজ।

যাওয়ার পথে বিনু'(ম্যাড)সামনাসামনি পড়তেই অপরাধী চোখে বলল, ‘আপা আপনে মাফ কইরা দেন আমারে।আমার লাগি ভাইজান আপনার লগে রাগ কইরা কথা কইলেন।আমি আসলে নতুন তো।হের লাইগা বুঝতাম পারিনাই।’

হাফসা ভেজাকন্ঠে বলল, ‘আপনি কি খেয়াল করে কাপড়গুলো শুকাতে দেননি?রশ্মিতে দাগ লাগানো ছিল।আপনার উচিত ছিলো চেক করা।উনার এত্তোগুলো কাপর নষ্ঠ হলো।’

‘আপা আমি কি কমু আপনারে।আমার ভুল হইয়া গেছে।আর জিন্দেগিতে এমন ভুল করুম না।কিন্তু একটা কথা কন তো আমারে।আপনে কইলেন না ক্যা যে কাপরগুলো আমি মেইলা দিছি কইলে তো আপনের ঝাড়ি খাওন লাগতো না।’

হাফসা সিঁড়ি উঠতে উঠতে বলে, ‘বাদ দিন কাজে যান আপনি।’

আরহাম বেশ কিছুক্ষণ নীরব থেকে নিজেকে শান্ত করলেন।তবে শান্তি পাচ্ছেন না ভেতরে।উমায়ের ভুল করেছেন তবুও কেন জানি উনার সাথে রোডভাবে কথা বলতে কলিজা কেঁপে ওঠে।

‘শাহ!কি ভাবছেন?’

আরহাম মাইমুনার দিকে ঘুরে বলেন, ‘মাইমুনা আপনি উমায়ের এর সাথে এমন রোড বিহেভ করা উচিত হয় নি।আম সরী টু সে।বাট আমার কষ্ট লেগেছে আপনি যখন উনাকে কঠিন কথা বলছিলেন।আপনার সব ড্রেসের মতো সেম ড্রেস কালেক্ট করে কার্টে যোগ করে রাখবেন।আমি অর্ডার দিয়ে আপনার ড্রেস আনিয়ে দিবো।দেওয়ার পর তো আপনার বলা উনাকে আঘাত দেওয়া কথাগুলো ফেরাতে পারবেন না।একটা ভুল না হয় হয়েই গিয়েছিলো।তাই বলে এত হার্ট করে কথা বলবেন?’

কথাগুলো একদমে বলেই আরহাম রুম ত্যাগ করলেন। যাওয়ার সময় দেখলেন হাফসার রুম লক করা ভেতর থেকে।আর কোনোদিক না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন।

(২৮)
নিচ থেকে আসার পর সারাটাসময় রুমের ভেতরে পার করেছে হাফসা।আরহাম একবারও আসেননি।আম্মু এসছিলেন টুকটাক কথা হ’য়েছে।হাফসা দোষটা নিজের ঘাড়েই নিয়েছে কারন মাইমুনা এমনিই এতো রোড।সেখানে এই কাজটা কাজের বুয়া করেছে জানলে হয়তো ব্যাপারটা অনেক বেশি কঠিন হতো।

সময় ঘড়িতে ১০ টা বেজে ১২ মিনিট।প্রতিদিন সাড়ে ১০ টার ভেতরেই ডিনার শেষ হয়ে যায়।হঠাৎ দরজায় নক হতে হাফসা নিজেকে স্বাভাবিক করে যদিও লাল চোখজোড়া এখনো ফুলে ছোট হয়ে আছে।

‘হাফসা ডিনার করতে আসো।’

‘জ্বি না। আমি খাবো না।’

‘কেনো।’

‘একটুও খিদে নেই।নাস্তা করেছিলাম পেট ভরা আছে।আপনারা খেয়ে নিন।’

‘তাহলে অল্প একটু খেয়ে নিবে আসো।’

‘জ্বি না প্লিজ খেয়ে নিন না আপনারা।’

‘আরহাম কিন্ত রাগ করবে তুমাকে না নিয়ে গেলে।’

‘জোর করে খেলে আমার সমস্যা হয়।’

অনেক রিকুয়েষ্ট করেও হাফসাকে নিতে পারলেন না।

ঘড়ির কাটায় সময় এগোলো আরো বিশ মিনিট।হাফসা অযু করে যখন ঘুমাতে যাবে তখনই আবারো কেউ আসলেন রুমে।

আরহাম আসছেন হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে।উনি পা দিয়ে ঠেলে দরজা লাগিয়ে এসে খাবার টেবিলে রাখলেন,

‘এখানে আসুন।’

‘খাবো না।’

‘কেন?’

‘ইচ্ছে করছে না।’

‘একটু খাবেন।হা করুন।’

উনি খাবার এগিয়ে দিতেই হাফসা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
‘খাবো না। প্লিজ জোর করবেন না।’

‘রাগ করে আছেন এখনো?’

‘কেন রাগ করবো?’

‘আমি যে ব্যাবহার করলাম।’

‘মোটেও রেগে নেই আমি।প্লিজ জোর করবেন না।’

আরহাম বুঝলেন জোর করলেও কাজ হবে না।বললেন, ‘তাহলে রেখে যাই?খিদে লাগলে খাবেন।’

‘ঘুমিয়ে পড়বো।নিয়ে যান।’

অগত্যা আরহাম খাবার নিয়ে নিচে চলে যান।নিচে মাইমুনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে যখন উপরে আসলেন তখন দেখলেন উমায়ের এর রুমের দরজা লক।ভেন্টিলেটর থেকে আলো আসছে না, তাহলে কি উনি ঘুমিয়ে পড়লেন?

দরজায় কয়েকবার নক করেও ওপাশ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে নিজের রুমে চলে যান।হাফসাও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুমাতে লাগলো।দীর্ঘশ্বাসগুলোও এত ভারী কেন?

******
সকালে দরজায় করা অবিরত শব্দে ঘুম ভাঙ্গে হাফসার।চোখ খুলে আল্লাহু চকচক করা ঘড়িতে দেখলো সবে ফযরের সময় হয়েছে।

ওরনা মাথায় দিয়ে দ্রুতপায়ে উঠে দরজা খুলতেই আরহাম হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করলেন।

‘আর ইউ ওকে?’

হাফসা ঘুম ঘুম চোখে বলল, ‘জ্বী।’

আরহাম লাইট জ্বালিয়ে আবারো ওর সামনে এসে বললেন, ‘কিছু হয়নি তো আপনার?’

‘কি হবে আমার?’

‘রাতে সাউট করছিলেন কেন?ইউ নো হুয়াট? কতবার দরজায় নক করেছি আমি।সারারাত টেনশনে ঘুম হয়নি আমার।’

হাফসা কিছু একটা মনে করে বলে, ‘একটু সাউট করেছিলাম, রুমে বিড়াল ছিলো।হুট করে পা লাগায় ভয় পেয়ে গেছিলাম।’

‘কখন ১ টার দিকে?’

‘হুমম।’

এবার আরহাম শান্ত হয়ে গেলেন।হাফসা বিষয়টা এড়াতে বলল, ‘আমি ঠিক আছি।এখন নামাজ পড়ব।’ বলে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা ধরতেই আরহাম সামনে গিয়ে বাঁধা দিয়ে বললেন,

‘আমি সাথে সাথে এসে নক করেছিলাম।খুলেননি আপনি।এত তাড়াতাড়ি আপনার ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা না।ইচ্ছে করেই খুলেননি তাই না?ইগনোর করেছেন?’

হাফসা মাথা নিচু করে নিলো।সত্যি’ই ও ইচ্ছে করে খুলে নি।আরহাম রাগ দেখালেন না, রোড বিহ্যাব ও করলেন না।চুপচাপ চলে গেলেন রুম থেকে।

হাফসা ব্যথিত হলো।এভাবে ধরা পড়ে যাবে ভাবেনি।কিন্তু আরহাম কষ্ট পেয়েছেন।

******
নাস্তার টেবিলে আরহাম আসলেন না।হাফসা নাস্তা না করেই নাস্তা নিয়ে আরহামের রুমে গেলো।উনি তখন রেডি হচ্ছিলেন।হাফসার হাত কাঁপছে।উনি কি এখনো কষ্ট পেয়ে বসে আছেন?

ডোরে নক করতে যাবে তখনই আরহাম বললেন, ‘নক করা লাগবে না আসতে পারেন।’

হাফসাকে নাস্তা নিয়ে আসতে দেখে বলেন, ‘আমি রোযা রেখেছি।’

‘ওহ।’

হাফসা কিছুক্ষণ উসখুস করে বলল, ‘এ্ একটা কথা বলার ছিলো।’

‘বলুন।’

‘আমি বাড়ি যাব।’

‘কেনো?’

জিজ্ঞেস করতেই হাফসা ছলছল চোখে তাকায়।আরহাম বুঝলেন ভুল জায়গায় ভুল প্রশ্ন করে বসলেন।দ্রুতপায়ে এগিয়ে এসে বললেন…

(২৯)

‘হ্যাঁ অবশ্যই যাবেন।যখন ইচ্ছে হয় তখন যাবেন।’

‘কবে যাব?’

‘সময় করে নিয়ে যাব।’
হাফসা মাথা নাড়ায়।

হাফসা আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ও কোনো কথা মুখ থেকে বেরোলো না তাই ফিরে গেলো।
আরহাম ওর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন।

________
হাফসা মাইমুনা, আম্মু যখন নাস্তা করছিলেন তখন আরহাম নিচে আসেন।সবাইকে সালাম দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, ‘উমায়ের আসুন তো।দরজা লাগাবেন।’

উনি বেরোতেই হাফসা যখন দরজা লাগাতে যাবে অমনি টেনে বাইরে নিয়ে যান।বললেন,

‘চলে যাচ্ছি।’

‘যান।’

‘আজ যেনো এসে মাইমুনার কাছ থেকে কোনো অভিযোগ না শুনি ঠিক আছে?’
হাফসা মাথা নিচু করে নিলো।লজ্জায় নয় অপমানে।

‘আসি টেক কেয়ার।আল্লাহ হাফিজ।’
অতপর সালাম বিনিময় শেষে তিনি চলে গেলেন।

*******
আজকে আম্মু ফুপির বাসায় যাবেন ফুপি খুব অসুস্থ । ফুপির বাসা পাশেই।আম্মু বেরিয়েছেন প্রায় ২ টার দিকে।উনাকে বিদায় দিয়ে হাফসা যখন রুমে আসতে লাগলো তখুনি মাইমুনা ডাক দিলেন।

‘বলুন আপু।’

‘শোনো রাতের জন্য খাবার রান্না করতে হবে।শাহ বাইরের মানুষের হাতের রান্না করা খাবার খান না।তুমি তো উনার পেয়ারের বউ।তোমার হাতের রান্না তো অবশ্যই খাবেন।যাকগে রান্না পারো তুমি?’

‘ইয়ে মানে টুকটাক।একটু দেখিয়ে দিলে পারব।’

‘ওকে ওকে আমি বলে দিব।তাহলে কিচেনে চলো।’

‘এসিটা অফ করে আসছি যাস্ট।’

কিছুক্ষণ পর দূজনে কিচেনে আসলো।রান্না ঘরে কিছু এঁটো থালাবাসন ছিলো।যেগুলো কিচেনের ম্যাডই ধুঁয়ে গুছিয়ে রাখতেন।মাইমুনা একটু ফিচেল হেসে বল, ‘ওহ নো।এঁটো বাসনগুলো রয়ে গেল যে।তুমি কি একটু ধুয়ে নিবে।না আমি…

‘জ্বি না আমি করছি।’

বেশ কিছুক্ষণ পর….

হাফসা ওরনা দিয়ে মাথার ঘাম মুছে আবার কিচেন ওয়াশ করছে।মাইমুনা ওকে সব কাজ করাচ্ছেন।যেমন বাসন ধোঁয়া, বেসিনের নিচ ক্লিন করা,রান্নাঘরের সব এঁটো টাওয়াল ধুয়ানো।থালাবাসন গুছিয়ে রাখা,ঘর মুছা,সব এতক্ষণে করিয়েছেন অর্ডার দিয়ে দিয়ে।দূজন কাজের লোক আসছিল কিন্তু উনি কৌশলে সরিয়ে দিয়েছেন তাদের।

এবার এক ঝালি পেঁয়াজ দেখিয়ে বললেন, এগুলো হাত দিয়ে ব্ল্যান্ড করতে।
হাফসা ক্লান্ত কন্ঠে বলল, ‘আপু হাত দিয়ে কেন করব?ব্ল্যান্ডার দিয়ে করে নিই?’

‘চুপ মেয়ে মুখে মুখে তর্ক করো।’

‘স্ সরি।’

একঝালি পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে এবার উনার সামনেই হাত দিয়ে ব্ল্যান্ড করতে লাগলো হাফসা।পেঁয়াজের ঝ্যাং এ চোখ জ্বলে পানি পড়ছে,তাও চোখ কুঁচকে ব্ল্যান্ড করছে হাফসা।হাফসার এ সূচনীয় অবস্থায় মাইমুনা যেনো পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে।

*****
প্রায় এক ঘন্টায় যখন পেঁয়াজ ব্ল্যান্ডিং শেষ হলো তখন হাফসার চোখের অবস্থা খারাপ।লাল হয়ে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।ব্ল্যান্ডিং করতে গিয়ে হাতের বেশ জায়গা ছিলে গিয়েছে গভীরভাবে।ছুইয়ে ছুঁইয়ে রক্ত পরেছে কোণা বেয়ে।আসরের আযান হতেই নামাজের কথা বলে কোনোমতে ছাড়া নিয়ে ওপরে উঠলো সে।

মাইমুনা তখনো কিচেনে।হুট করে বাইরে আরহামের কন্ঠ শুনে মাইমুনা হকচকিয়ে যায়।সব প্ল্যান কি ভেস্তে গেলো।উনি আজ এত তাড়াতাড়ি কেন এলেন?নাহ ভেস্তে যাওয়া যায় না।মাইমুনা হাফসার হাত থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তের ফোঁটা নিজের হাতে মাখিয়ে নিলেন।গতকালের অল্প ক্ষত ছিলো হাতে আলমারির কোণা লেগে কাটছিলো।এটা দিয়েই আরহামকে বোকা বানাতে হবে।

কিচেন পেরিয়ে ড্রয়িং রুম,আরহামের পায়ের আওয়াজ পেয়ে আর্তনাদ করে ওঠে মাইমুনা।

আরহাম এদিক ওদিক খুঁজে দ্রুতপায়ে কিচেনে যেতেই দেখলেন, মাইমুনার হাত রক্তে মাখামাখি।

‘হুয়াট ইজ দিস?কি করে হলো মাইমুনা?কেমন করে এতো কাটলো হাত?’

আরহাম ব্যস্ত হয়ে পড়লেন মাইমুনার হাত নিয়ে।উপরের রক্ত হালকা মুছতে নিতেই মাইমুনা চোখ খিঁচে বলে, ‘উহু, টাচ করবেন না ইটস ওকে ইটস ওকে।’

‘কীভাবে কি হলো?আর আপনি কিচেনে কেন?আপনার না কিচেনে আসা নিষেধ?’

হঠাৎ’ই মা’ইমুনা ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কেঁদে দিলেন।আরহাম তাকে আগলে নিয়ে বললেন, ‘হুয়াই আর ইউ ক্রায়িং হানি?’প্লিজ সে।’

(📌মাইমুনা আর হাফসার এসব দ্বন্দ্ব শুধু গল্পতেই মানায়।আই হোপ আপনারা বুঝবেন।আর আগেই বলেছি গল্পটা পুরোপুরি কাল্পনিক।)

(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।