(৩৩)
এবার মাইমুনা মিথ্যে চোখের পানি ঝরিয়ে বললেন…
‘আপনার মাসনা আমাকে এতগুলো কথা শুনিয়েছে।আমার মা-বাবা তুলে গালি দিয়েছে।আমি কীভাবে সহ্য করব?দেখুন আমার সামনে প্লেট ছুঁড়ে ওপরে চলে গিয়েছে রাগ দেখিয়ে।ওর নাকি ব্রেকফাস্ট পছন্দ হয় নি।’
আরহাম যে চরম রেগে গিয়েছেন সেটা উনারা চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছেন।মুখ লাল হ’য়ে আছে।কপালের শিরাগুলো ফুলে উঠেছে গাঢ়ভাবে।
সব কথা শুনে রুঢ়কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘উনি আপনার সাথে এভাবে রুড বিহ্যাভ করেছেন?আপনার মা-বাবাকে নিয়ে খারাপ কথা বলেছেন?উনি?’
মাইমুনা মাথা ঝাকায়।যেন কান্নার চোটে সে কথা বলতে পারছেন না।
আরহাম চেঁচিয়ে ডাকলেন, ‘উমায়ের!উমায়ের!’
হাফসা ডাক শুনে তৎক্ষনাৎ বারান্দায় আসে।আরহাম কড়াকন্ঠে বললেন, ‘নিচে আসুন।’
মাইমুনা ভয়ে ঢক গিলছেন।আরহামের এত রাগ উনি গত তিন বছরেও দেখেননি।এ শান্ত মানুষটাকে হুট করে রাগিয়ে কাজটা কি ভালো করলাম।এবার নিশ্চয়ই অপ্রত্যাশিত কিছু হবে।
হাফসা দ্রুতপায়ে নিচে নামলো।ভয় লাগছে কারণ আরহামের কন্ঠে রাগ স্পষ্ট। আর আপু ও পাশে।আবার কোনো ঝড় নেই তো আমার ওপর?
হাফসা নিচে নামতেই আরহাম ওর সামনে এগিয়ে আসলেন।হাফসা একেবারে কাছে থেকে উনাকে দেখলো।অতিরিক্ত রাগে উনার কান লাল টকটকে হয়ে আছে।কপালের শিরা নড়ছে বারবার।সাদা মুখশ্রীখানা রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।
‘উনার সাথে খারাপ বিহ্যাভ করেছেন আপনি?’
হাফসা কাঁপছে।ভয়ে ওর হৃদপিণ্ড টা যেনো খুলে পড়ে যাবে।সে কোনোরুপ উত্তরই দিতে পারছে না।’
আরহাম চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সত্যি এগুলো????’
হাফসা মাথা নিচু করে নিলো।
‘আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি আপনাকে।’
খানিক পর হাফসা মাইমুনার দিকে আহত দৃষ্টি তুলে তাকােতই
‘ঠাসসসসসসসসসসসসসসস..
হঠাৎই পরিবেশ থমকে গেলো।দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সার্ভেন্ট আর মাইমুনার মুখে হাত চলে গেলো।আরহাম এখনো দাঁত খিঁচে আছেন রাগে।
কিছুক্ষণ যেতেই হাফসা গাল ধরে সামনে তাকালো।আঙ্গুলের মধ্যে কোনো তরল পদার্থের ছোঁয়া পেয়ে থমকে গেলো।মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।আঙ্গুল টা সামনে আনতেই ভাসমান হলো তাজা রক্ত।গালটা যেন কেটে গেছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ে রক্তের ফোঁটা মেঝেতে গড়িয়ে পড়লো।হাফসা বাকরুদ্ধ!নির্বাকের মতো কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো মেঝেতে পড়া রক্তের ফোঁটার দিকে।
‘ইউ রাবিশ।হাউ ডেয়ার ইউ টক টু হার লাউডলি।আমি লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম না?দেইনি?বলেন দেইনি? আপনি আমার মাসনা থাকার যোগ্য না।গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার।আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু সি ইউ।’
হাফসা কান্না গিলে দ্রুতপায়ে উপরে চলে গেলো।সিঁড়িতে পা এগোলে মনে হলো,সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠছে।অবাধ্য চোখজোড়ায় অপ্রতিরোধ্য বর্ষণ শুরু হয়েছে।আরহাম চোখ বন্ধ করে রইলেন কিছুক্ষণ।তারপর আবার রুমে চলে গেলেন।
মাইমুনা নিজেও যেন স্তব্ধ।পুরো ঘটনাকে এখনও ভ্রম মনে হচ্ছে।গত তিন বছরে মাইমুনার গায়ে কখনোই হাত তুলেননি আরহাম।এমনকি উঁচু আওয়াজেও কথা বলেন নি।আর আজ হাফসার গায়ে হাত তুলেছেন আরহাম?অবিশ্বাস্য!
এসব ভেবেই সে ফিচেল হাসলো।হাফসা বোধ হয় এবার বিদায় হয়েই যাবে।
______
রুমে গিয়ে দূচোখ কোনোভাবেই এক করতে পারলেন না আরহাম।যে হাত দিয়ে হাফসাকে আঘাত করেছেন ওই হাতটা রীতিমতো থরথর করে কাঁপছে।যেনো কোনো হারাম কাজ করে ফেলেছে হাতটা।শুধু হাত নয়, হৃদয়টাও কাঁপছে।বারবার মনে হচ্ছে, আমি কঠিন কোনো ভুল করে ফেলেছি।
____
মাইমুনা নিজের রুমে বসে একমনে হাসছে।হাসিটা খুশির,তৃপ্তির।আরহাম তো ইনডিরেক্টলি বলেই দিয়েছেন যে হাফসা উনার মাসনা হওয়ার যোগ্য নয়।এই অপমানের পর হাফসা আর থাকবে না।কারন ও যথেষ্ট আত্মসম্মানী।এসব ভাবতেই মনে এক আলাদা আনন্দ বয়ে যাচ্ছে।খুশি আর ধরে রাখতে পারছেন না কোনোভাবেই।
_______
সারাটাদিন কেঁদেছে হাফসার।জায়নামাজেই ছিলো বেশিক্ষণ।একটাবারও রুম থেকে বেরোয় নি।মাঝে একবার বিনু এসে জোর করে খাইয়ে গিয়েছেন।অল্প একটু খেয়ে জ্বরের ওষুধ খেয়েছে।গায়ের জ্বরের সাথে গালের ব্যথারও হয়তো একটু উপশম হবে ওষুধে।কিন্তু মনের ব্যাথার?
আগে যেমন প্রতিটা দোয়াহ তে চাইতো আরহামের সাথে সুন্দর একটা সংসারের, আজ ঠিক ওভাবেই চোখের প্রতিটা ফোঁটার সাক্ষী রেখে আরহামের জীবন থেকে চিরতরে প্রস্থানের দোয়াহ করলো।
19★
(৩৪)
_______
ছাদে এসে হাত পা ছুঁড়ে মাটিতে বসে পড়লেন আরহাম।রুম টা এলোমেলো করে সব ভেঙ্গেছুড়ে এখন এসেছেন ছাদে।।উনার অস্থিরতা কমছেই না কোনোভাবে।ভেতরে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।যে যন্ত্রণার একটাই ওষুধ উমায়ের।আজকে বারবার নিকাহ’র দিন হাফসার কাকামণির কথাগুলো মনে পড়ছে….
‘জানিনা ওর ভাগ্যে কী।আমি তেমাকে বিশ্বাস করি আরহাম।ভরসা করি।তোমাকে একটা পবিএ ফুল তুলে দিয়েছি।যাকে কেউ কখনো স্পর্শ করা তো দূরের কথা কোনো পরপুরুষ দেখেনি পর্যন্ত।আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিও না।আমি ছাড়া আপন কেউ নেই ওর।কখনো যদি ও না বুঝে ভুল করে ফেলে দয়া করে বুঝিয়ে দিও।তবুও এমন কথা বলো না যেন সে কষ্ট পায়।ওকে যদি তুমি কখনো বোঝা মনে করো দোহাই লাগে আমার মেয়ে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে যেও।তবুও কঠোর হইও না।’
উত্তরে তিনি বলেছিলেন,
‘আপনার আমানত নিলাম। ইনশাআল্লাহ ভালো থাকবেন উনি।কষ্ট দিবো না।আপনি চিন্তা করবেন না।’
কথাগুলো কানে বেজে উঠতেই আরো অস্থির হয়ে গেলেন আরহাম।আক্ষেপের সুরে নিজেই নিজেকে বললেন,আমি আপনার কথা রাখতে পারিনি।আপনার আমানতের যত্ন নিতে পারলাম না।পবিএ ফুলের গায়ে হাত তুলেছি।এ হাতটা কেটে যাক না আমার শরীর থেকে।আলাদা হয়ে যাক।কেমন যেনো অভিশপ্ত লাগছে।এ ভুলের প্রায়শ্চিত্ত কীভাবে করবো আমি?
____
আসরের নামাজ পড়ে কিচেনে গেলো হাফসা।বের হলো মাগরিবের মিনিট পাঁচেক আগে।অনেক পরিশ্রম করে চুলার গরম আঁচ সহ্য করে ইউটিউব দেখে নয় রকমের নাস্তা বানালো।একজন সার্ভেন্টকে বলে দিলো মাইমুনা আর আরহামকে ডেকে নিয়ে আসতে।
আরহাম হাতে খেজুর আর ফ্রিজ থেকে কিছু ফলমূল নিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন ইফতার করার জন্য।সপ্তাহে ৩-৪ টা রোজা রাখেন উনি।ইফতার বা সেহরির জন্য কাউকে তাগদা দেন না।নিজে নিজেই সেহরি খেয়ে নেন,আর টুকটাক ফলমূল আর খেজুর দিয়ে ইফতার সারেন।
হাফসাকে দেখলেন নিচে।আরো অবাক হলেন যখন দেখলেন ম্যাড রা টেবিলে বিভিন্ন রকম নাস্তা সার্ভ করছেন।হাফসা টাওয়ালে হাত মুছে সিড়িতে উঠতে গিয়েও না উঠে সরে দাঁড়ালো সে।আরহাম নামতেই নিচুমুখে আবার উপরে চলে গেলো।ওর টকটকে লাল মুখ,ফোলা চোখ আর গালের ভেসে ওঠা দাগের সাথে ঠোঁটের নিচের কালো অংশ দৃষ্টিতে পড়তেই আরহাম তীব্র একটা ব্যাথা অনুভব করলেন বুকে।
ঘড়িতে দেখলেন মাগরিবের আযানের দুমিনিট বাকি।মাইমুনা ও আসছেন টেবিলে।একজন সার্ভেন্ট বলল, ‘স্যারের ইফতার এগুলো।’
আরহাম অবাক হলেন।কোথায় তিনি অন্যায় করে বসে আছেন।আর সে নিজের দায়িত্বের চেয়েও বেশী করছে।সার্ভেন্টকে বললেন, ‘উমায়েরকে গিয়ে নিচে নিয়ে আসতে।’
একটু পর সার্ভেন্ট এসে জানালো, ‘তিনি খেয়ে নিয়েছেন বলেছেন।এখন নামাজ পড়বেন।’
আরহাম ঠিকই বুঝলেন উমায়ের কেন আসলেন না।ইফতার শুরু করলেন ঠিক কিন্তু গলা দিয়ে কেন জানি খাবার নামছেই না।
ইফতার সেরে মাগরিবের নামাজ শেষে যখন দোয়া করতে লাগলেন তখন লজ্জায় চোখ তুলতে পারছেন না আরহাম।আল্লাহর কাছে কোনো এক্সকিউজ দেওয়ার কিছুই নেই।খুব করে ক্ষমা চাইলেন।তবুও শান্তি পেলেন না।রবের কাছে অনুতপ্ত হয়ে স্থির করেই নিলেন উনি এখনি গিয়ে উমায়ের এর কাছে ক্ষমা চাইবেন।যেভাবেই হোক বুঝিয়ে বলবেন যে উনি রাগের মাথায় এসব করে ফেলেছেন।উমায়ের উনাকে যত কঠিন শাস্তি দিক,উনি মেনে নিবেন।তবুও এমন ভুলের জন্য ধুঁকে ধুঁকে যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবেন না।
____
হাফসা কাকামণির নাম্বারে ডায়াল করতে গিয়েও থেমে গেলো।তিনি তো আসবেন।অতঃপর লাগেজ খুলে জিনিস প্যাক করতে লাগলো।এখানে আর একদন্ড ও থাকতে মন চাইছে না হাফসা।উনি তো বলেই দিয়েছেন আমি উনার যোগ্য না।
হাফসার হাত থেকে কাপর পড়ে গেলো।❝আমি উনার যোগ্য না।❞ কথাটা এত তীব্র ভাবে আঘাত করেছে হাফসাকে।কিছুক্ষণ কেঁদেকেটে সিদ্ধান্ত নিলো থাকবেই না,চলে যাবে।কিন্তু মনটা যে তবুও কেন আটকে যায়।হাজারো #অপেক্ষার অবসান হলো বটে তবে আবারো নির্বাসন নিতে হবে।
________
আরহাম রুমে যাচ্ছিলেন উমায়ের কে সরি বলার জন্য। রুমে ডুকার আগেই দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলেন, হাফসা আয়নার সামনে গালে বরফ লাগাচ্ছে।আর গুঙ্গিয়ে আর্তনাদ করছে।আরহামের বুকটা ছ্যাত করে উঠল।উনার সাথে প্রচন্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে।
রুমে নক করে ডুকতেই হাফসা চমকে যায়।উঠে পড়ে চেয়ার থেকে।বরফের টুকরো ফেলে দেয়।
দূজনের মাঝে বেশ দূরত্ব।আরহাম এগিয়ে আসতেই ও খানিক পিছু সরে যায়।আরহাম আরোও এগিয়ে এলেন।সে আর সরতে পারলো না,দেয়ালে আটকে গেলো।
আরহাম কাছে আসতে দেখলেন উমায়ের ভীষণ কাঁপছেন।নিচুমুখ হয়ে আছে।একবারও চোখতুলে তাকাচ্ছে না মেয়েটা।
আরহাম কিছু বলতে উদ্যত হয়ে নার্ভাসনেস নিয়ে নিজের চুলে হাত বুলাতে হাতটা একটু উপরে তুলতেই হাফসা ঝটপট হাত দিয়ে গাল ঢেকে নেয়।
আরহাম ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘আমি আপনাকে মারব না উমায়ের।’
৩৫
হাফসার গালের দাগ ভাসছে স্পষ্টভাবে। আরহাম ভেতরে ভেতরে খুবই অনুতপ্ত হলেন।লজ্জা লাগছে এমন কাপুরুষতায়!
‘উ্ উমায়ের আইএম সরি।’
বলে এগিয়ে যেতে চাইলে ও কান্নারত সুরে বলে উঠলো, ‘আইএম সরি।আমি আর কিছু করব না।আর এগোবেন না,আপনাকে ভয় করে আমার।’
আরহাম নির্বাক হয়ে গেলেন।কিছুক্ষণের জন্য কথা আটকে গেলো।পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিতেই দেখলেন হাফসা বেধোরক কাঁপছে।আরহাম সরে আসলেন।বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।বাইরে একজন সার্ভেন্টকে বললেন, ‘হাফসার কাছে যেতে।আর যেকোনো কিছু খাইয়ে ঘুমের ওষুধ দিতে।’
কথাগুলো বলে নিজের রুমে এসে ধপ করে বসে পড়লেন আরহাম ।এককথায় নিজেকে নিজেই মে’রে ফেলতে ইচ্ছে করছে।সম্পর্ক বদলে গেছে।উমায়ের আমাকে ভয় পান?নিজের চুল নিজেই শক্ত করে চেপে ধরলেন, ‘আই ওয়ান্ট ইউ উমায়ের।আপনাকে ছাড়া আমি একবিন্দু শান্তি পাই না।আপনি আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করলেন?’
*******
হঠাৎ কারো ডাকে পিটপিট করে চোখ তুলে আরহামকে দেখতেই তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
তিনি বললেন, ‘বাবা এসছেন।’
হাফসা তৎক্ষনাৎ উঠে পড়ে।আর কোনো কথা না বলে পাশ কাটিয়ে হ্যাঙ্গার থেকে একটা আবায়া নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।আরহাম ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলেন।
সন্ধ্যার পর আরহাম রুম থেকে চলে যাবার পর বারান্দায় সোফায় এসে বসেছিলো।দিনের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গেছে ঠিক নেই।
আবায়া পরে একা একাই নেমে যায় নিচে।কাকামণিকে দেখে খুশিতে হাফসার চোখ পানি চলে আসলো।দৌড়ে গিয়ে কাকামণিকে জড়িয়ে ধরলো।
কাকামণি ওর কপালে হালকা চুমু দিয়ে বললেন, ‘কেমন আছে আমার মামণিটা?’
হাফসা চোখের পানি আলতো করে মুছে বলল, ‘ভালো আলহামদুলিল্লাহ।আপনি?’
‘তোমাকে ছাড়া তো ভালো নেই। তাই নিয়ে যেতে আসছি।’
আরহাম চমকে গেলেন।আসলেই কি উনি উমায়ের কে নিয়ে যাবেন?
হাফসা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাঙ্গা গলায় বলল, ‘আপনার সাথে চলে যাবো।আর এখানে আসব না কাকামণি।’
কথাটা বলতে গিয়ে কণ্ঠস্বর কেঁপে উঠলো হাফসার।আরহাম অসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন।উমায়ের কি সত্যি একেবারে চলে যাবেন?অজানা এক ভয় আঁকড়ে ধরেলো উনাকে।
কাকামণি বোধ হয় কথাটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারলেন না।জিজ্ঞেস করলেন, ‘এমন কথা কেন বলছো মামনি?’
‘এখানে ভালো লাগে না আমার।তাই আপনার সাথে একেবারে চলে যাবো।’
কাকামণির দৃষ্টি সাথে সাথে আরহামের ওপর স্থির হলো।
ততক্ষণে হাফসা কিচেনের দিকে চলে গেলো।
ও যেতেই কাকামণি ব্যাস্ত হয়ে বললেন, ‘আরহাম হাফসা কেন এসব বলছে?’
আরহাম স্বাভাবিক ভাবে বলার চেষ্টা করলেন, ‘নতুন পরিবেশ।মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে।আর বাড়ি তো যান নি।তাই হয়তো মিস করছেন।’
আহমাদ মনে হলো আশ্বস্ত হলেন না আরহামের কথায়।কোথায় যেনো একটা কিন্তু রয়ে গেলো।আরহামের ভেতরে উথাল-পাতাল ঝড় বইছে।টি টেবিল থেকে পুরো জগটা হাতে নিয়ে অর্ধেক পানি পান করলেন।উনার হাবভাব আহমাদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছেন।কিছু তো একটা হয়েছে।
হঠাৎ’ই আরহাম বলে উঠলেন, ‘বাবা আপনি উমায়েরকে নিয়ে যাবেন না প্লিজ।’
আহমাদ কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হলেন।আহত সুরে বললেন, ‘কেন যাবো না?বিয়ের পর তো যায়নি ও।’
হাফসা এসে টেবিলে গরম পায়েসের বাটি রাখলো।সার্ভেন্টরা আরো আইটেম ড্রয়িং এ পরিবেশেন করতেই আরহাম উনাকে নিয়ে খেতে বসলেন।
আহমাদ মিষ্টি হেসে হাফসাকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘পায়েস তুমি রেঁধেছো?’
‘হুমম।’
আহমাদ বিস্তর হাসলেন।পায়েস উনার অতিমাত্রায় প্রিয়।আর সেটা যদি হয় হাফসার হাতের তাহলে তো কথাই নেই।
আহমাদ হাফসাকে জোর দিয়ে বললেন ‘আরহাম বসো।হাফসা তুমি ও বসো।অনেকদিন পর একসাথে খাই?’
হাফসা না বলতে গেলে আরহাম জোর দিয়ে বলেন, ‘বসুন না?বসুন।’
হাফসা কিছুটা সময় নিয়ে বসলো।ও চিন্তা করছে অন্য কিছু।কাকামণি যখন বেসিনে গেলেন হাফসা নিকাব খুলল।তখনই ভেসে ওঠলো ওর গালের দাগ।ঠোঁটের স্পষ্ট দাগ।যে কেউ দেখেই বলে দিতে পারবে যে গালে মারা হয়েছে।
আরহাম ছলছল চোখে তাকালেন।বাবার সামনে এরচেয়ে বড় নিকৃষ্টতা,অপমানের কিছু হতে পারে না।আরহাম মাথা নিচু করে নিলেন।এখন যে বাবার অনাকাঙ্ক্ষিত কয়েকটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে সেটা নিশ্চিত।
আহমাদ এসে টেবিলে বসতে ওর দিকে তাকাতেই আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘হাফসা!…
20★
(৩৬)
রুমের মধ্যে মাথায় হাত চেপে চুপচাপ বসে আছেন আরহাম। হাফসার প্রতি যথেষ্ট কৃতজ্ঞ।নাহলে আজ মান-সম্মানের দফারফা হয়ে যেত।সবসময়ের জন্য বাবার সামনে মাথা নত করে চলতে হতো।
ফ্ল্যাশব্যাক…..
চাচা বেসীন থেকে এসে আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘হাফসা মামুণী উঠলে কেন?বসো একসাথে খাই।’
বাবার কথায় আরহামও চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলেন হাফসা আবার মুখ ঢেকে ফেলেছে।
হাফসা মিথ্যে বাহানা দেখিয়ে বলল, ‘পরে একসাথে খাবো।আমাকে একটু যেতে হবে।আসছি।’
‘আচ্ছা।’
খেতে খেতে আহমাদ জিজ্ঞেস করলেন,
‘হাফসাকে নিয়ে কবে যাচ্ছো আরহাম?’
‘কিছুদিন পর।মাদ্রাসায় ঝামেলা বেশী।এক্সামসহ কো কারিকুলার এক্টিভিটিস, একটু চাপ আছে।সামনের সপ্তাহে যাবো ইন শা আল্লাহ।’
হাফসা কেবিনেট খুলে ওর সব কাপর গোছগাছ করে নিলো।কাপরের ভাঁজে ভাঁজে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়লেও নিজের সিদ্ধান্তেই সে অটল।আজ আর নরম হলে চলবে না।ঝটপট গাল মুছে নিয়ে নিচে গেলো।
কাকামণি আর আরহাম ড্রয়িং এ কথা বলছিলেন।হাফসা নিচে আসতেই কাকামণি ডেকে নিয়ে পাশে বসান।
‘তাহলে সামনের সপ্তাহে যাচ্ছ বাড়িতে।’
হাফসা কিছু না বুঝে বলল, ‘কেনো?’
‘এইতো আরহাম কে নিয়ে থেকে আসবে।’
হাফসা কিছুক্ষণ থম মেরে রইলো।আরহাম রীতিমতো অবাক হচ্ছেন, ভুল করেও উমায়ের একবারও উনার দিকে তাকাচ্ছেন না সাথে উনার প্রসঙ্গে তোলা কথাবার্তা তো পুরোপুরি এড়িয়েই চলেছেন।
‘আমি আজই এখন আপনার সাথে যাব কাকামণি।’
আরহাম অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন।
‘কিন্তু আরহাম তো বিজি।’
‘কাকামণি আমি একা যাব।আপনি আমাকে একা নিবেন না?’
আহমাদ কিছুক্ষণ আরহামের দিকে তাকালেন।অতপর জোরালো কন্ঠে বললেন, ‘কেন নিবো না?অবশ্যই যাবে।’
‘ওকে আমি রেডি হই।’
হাফসা উপরে চলে গেল।কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে উসখুস করতে করতে আরহাম ও ওপরে চলে গেলেন।আহমাদ শুধু তাকিয়ে রইলেন দূজনের দিকে।
বর্তমান…..
দরজার কটমট শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন আরহাম। সে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে।
হাফসা কাবার্ডের পাশ থেকে লাগেজ আনতেই আরহাম ওর কাছে এসে বললেন, ‘এসবের মানে কি উমায়ের?হাজবেন্ড-ওয়াইফের মধ্যে কি টুকটাক ঝগড়া হয় না, তাই বলে আপনি চলে যাবেন আমাকে ছেড়ে?’
বলতে বলতে লাগেজটা একেবারে কাবার্ডের ভিতরে আটকে তালা লাগিয়ে দিলেন আরহাম।
হাফসা কোনো কথারই উত্তর দিলো না।চুপচাপ গোমড়ামুখে বাকি কাপরগুলো ভাঁজ করছিলো।
আরহাম একটা কষ্টের শ্বাস ফেললেন।আহত সুরে বললেন, ‘প্লিজ যাবেন না। আমি আপনাকে না দেখে থাকতে পারব না উমায়ের।’
হাফসা নিরুত্তর।হিজাব ঠিক করে রুম থেকে বেরোতে চাইলে আরহাম ওর হাত ধরে টেনে এনে সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন,
‘বলেছি না যাবেন না?এমন কেন করছেন?আম সরী ফর অল মাই ফল্ট।বাট….বাট আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ।'(কথাটি করুণ সুরে বললেন)
হাফসাকে তখনো চুপ থাকতে দেখে আরহাম আহত হলেন।
‘উমায়ের আপনি কথা বলছেন না কেন আমার সাথে?আমি ক্ষমা চাইছি তো।’
হাফসা হাত ছাড়িয়ে আরহামের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলো।আরহাম রাগে দেয়ালে ঠাস করে আঘাত করেন।আঙ্গুলের প্রতিটা ভাঁজ যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।চোখে পানি চলে এসেছে অলরেডি।হঠাৎ কিছু একটা মনে হতে তড়িৎ বেগে দ্রুতগতিতে নিচে নামেন।
উমায়ের মনে হয় আহমাদকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো আরহাম তৎক্ষুনি বলে ওঠেন, ‘উমায়ের যাবেন না বলেছেন।আমার সাথে যাবেন।’
আহমাদ দূজনের দূ-ধরনের কথায় ভড়কে গেলেন।এইমাএ হাফসা বলল, সে যেতে চায়।আর এখন!
হাফসা কেন জানি আর তর্ক করলো না।চুপচাপ কিচেনে গিয়ে ডিনার রেডি করলো।
____________
আরহাম কাকামণিকে গাড়িতে তুলে দিয়ে বাড়িতে আসতে প্রায় সাড়ে এগারো টা বেজে গেলো।হাফসা অপেক্ষা করছিলো।কারণ আজ কোনো ম্যাড আসেনি।দরজা খোলার মতো কেউ নেই।
আচানক কলিং বেল বাজতেই দরজা গিয়ে খুললে আরহাম ক্লান্ত পায়ে ডুকে হাফসাকে দেখে অবাক হলেন।
শার্টের হাতা জড়াতে জড়াতে বললেন, ‘আজকে ম্যাড নেই?’
হাফসা মাথা নাড়িয়ে চলে যেতেই,
‘কিচেনের কাজ কি আপনি করেছেন?’
নোট📌
(না বুঝে, না জেনে, রেগে আঘাত করা বা কথা শোনানো ঠিক নয়।এখন বলবেন আমি কেন এমন কিছু দিলাম গল্পে।উত্তরটা হচ্ছে ধৈর্য্য ধরে পড়ুন।আপনারা নিজেই পেয়ে যাবেন উত্তর।তবে গল্প থেকে কেউ ভুল শিক্ষা নিবেন না।)
(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)