অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ১৯

14 Min Read

কাবার্ডে ফোন বাজছে অবিরত।মাইমুনা তাড়াতাড়ি তাসবিহ শ’তে পূর্ণ করে ফোন তুললেন।

‘এতক্ষণ লাগে কেন তর ফোনটা ধরতে?’

মাইমুনা নিরস কন্ঠে জবাব দিলেন, ‘তাসবিহ পড়ায় ছিলাম।’

‘হাফসা এসেছে কি?’

‘না।’

‘তর হাজবেন্ড আমাকে আরেক বাসায় ট্রান্সফার করেছে। আমার ভালো লাগছে না।কাজের অজুহাত দিয়ে আর কতদিন থাকব?হাফসার সাথে আমার কিছু একটা করিয়ে দে না!’

‘আরহামের সাথে আমার সম্পর্ক ঠিক নেই মামা।আরহাম এখন হাফসা বলতে পাগল।আমার মনে হয় উনি সব জেনে গেছেন।’

রুদ্র রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘আই কান্ট টেইক মোউর।এতকিছুর পরেও হাফসাকে কেন চায় ও?’

‘চাওয়াটা স্বাভাবিক লাগছে এখন।উনি হাফসাকে বেশী পছন্দ করেন মামা।হাফসাকে কখনোই উনি ডির্ভোস দিবেন না আমি সিউর।’

রুদ্র মাথা ঠান্ডা করে নিচু স্বরে বললেন, ‘আমি এসব জানিনা কিছু, বুঝিনা কিছু।আমি তো ওর কাছে যেতে চাই নি।তুই-ই বাধ্য করেছিলি।এখন যেহেতু ওকে ছাড়া আমার চলবেই না সো ওকে আমার চাই এট এনি কস্ট।আমি হাফসাকে নিয়ে পালিয়ে দেশের বাড়ি চলে যাবো,আর সেই ব্যবস্থাও তুই করে দিবি।তাতে তরও লাভ হলো, আরহামকে তুই একা পেয়ে গেলি।’

মাইমুনা জোরালো কন্ঠে বলল, ‘কি বুদ্ধি তোমার।তুমি হাফসাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে আর আরহাম তুমাকে আস্ত রাখবেন?কেটে কুঁচি কুঁচি করে ভাসিয়ে দিবে।আরহামের রাগ জানো তুমি?রাগ করলে খুন পর্যন্ত ও করে দিতে দ্বিধা করবেন না আর সেটা যদি উনার প্রিয় জিনিস নিয়ে হয় তাহলে তো কথাই নেই।’

_________
মাঝখানে কিছুসময় অতিবাহিত হলো।হাফসা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে যখন চোখ খুললো দেখলো আরহাম রক্তচক্ষু নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছেন।রাগে হিসহিস করতে করতে উঠে দাঁড়ালেন।উল্টো ঘুরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছেন, যেনো রাগ কন্ট্রোল করছেন।

হাফসা ভয়ে জমে গেলো।জমে থাকা সব অভিযোগ এক এক করে বলতে মন চাইলো।কিন্তু টু শব্দটি অব্দি করলো না।

আরহাম কিছু বললেন না। রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ঝটপট।
হাফসার কান্নার বাঁধ ভাঙ্গলো মুহুর্তেই।এতক্ষণে আটকে থাকা ভারী অনুভূতি টা ছাড়া পেতেই আঁখিদ্বয় ছলছল হলো অশ্রুতে।

________
রাতের শেষ প্রহর চলছে।রুমের বারান্দার সিটিতে হাত ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আরহাম।নিজের রাগের প্রতি প্রচুর বিরক্ত তিনি।শুধু শুধু কেন রাগ করলাম?না রাগ করব নাই বা কেন?উনি কোন সাহসে ডির্ভোসের কথা বললেন?আপনি তো এতোটাও অবুঝ না উমায়ের।আপনাকে আমি কতটা ভালোবাসি একটুও কি বুঝেন না?আমি আমার অনুভূতি বুঝাতে কতটা ব্যর্থ হলে আপনি ডির্ভোসের কথাটা তুলতে পারলেন?এত দূরত্ব তো আমি চাই না।

আরহামের অস্থিরতা কমে না।বারবার নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছেন তিনি।আমি আজকে কেন একই ভুল করতে লাগলাম?কেন আপনার ওপর হাত তুলতে গেলাম?আমি এত খারাপ কেন?আপনাকে বুঝিয়ে বলা উচিত ছিলো।তবে সে পর্যন্ত কেনো ধৈর্য থাকে না আমার?আই হেইট ইউ মাইমুনা।যাস্ট ফর ইউ টুডেইস্ সিচুয়েশন।আপনার জন্য আমি উনাকে এত কষ্ট দিচ্ছি।

উমায়েরের বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে পুরো দেড় ঘন্টা ফুল স্পীডে গাড়ি রান করে এসেছেন।রাগ কমেনি এতক্ষণ পর্যন্ত।নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দিতেই বুঝতে পারলেন রাগটা অহেতুক।রাগটা না করলে এই শেষনিশিতে উনার প্রাণস্পর্শীর কাছেই হয়তো ঠাঁই থাকতো!

(৫৫)
******
নাস্তার টেবিলে আরহামকে চুপচাপ দেখে আব্বু জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিছু কি হয়েছে?’

‘উহু।’

‘কাল রাতে একা ফিরে এলে যে।হাফসাকে আনলে না?

………

‘আজ বিকেলে যাব বাজারে।রোজার বাজার তো করতে হবে।তুমি ফ্রী আছো বিকেলে?’

‘আছি।’

আম্মু বললেন, ‘প্রথম ইফতার টা সবাই একসাথে করতে চাই হাফসাসহ।মাঝে তো শুধু আজকের দিন।তুমি গিয়ে নিয়ে আসো হাফসাকে।’

__________
হাফসার ছবি তে তীক্ষ্ণ নজর বুলাচ্ছেন রুদ্র।বিয়ের পোশাকে আরহামের পাশে হাফসার ভীতু ফেইস রুদ্রকে খুব করে টানে!এই মেয়েটার মাঝে অদৃশ্য কিছু একটা আছে যেটাতে প্রথমবারই ঘায়েল হয়েছি আমি।

গোয়েন্দা লাগিয়ে হাফসার বাড়ির এড্রেস পেয়েছে রুদ্র।এখন আর মাইমুনার সাহায্য নেওয়া যাবে না।এমনকি ওকে কিছু জানতেও দেওয়া যাবে না।যা করার আমি একা করব।আমার প্রনয়িনীকে আমি নিজের করে নিবোই।ওয়েট মাই কুইন খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে আমাদের।

29★

__________
একটা সম্পর্ক শেষ করতে কটু কথা অথবা খারাপ ব্যবহারই যথেষ্ট।বারে বারে দোষ ব্যাতীত আপনার কঠিন বাক্যগুলো গিলেছি আমি।আপনাদের খুব ভালো মানায়!এটা স্বাভাবিক আপুর জেলাসি।কিন্তু আমি কি সারাজীবন এভাবে থাকতে পারবো?পারব না।আমারও হিংসে হয় আপনি যখন আপনার ওয়াহিদার সন্নিকটে থাকেন,উনার সাথে হেসে হেসে কথা বলেন।কিন্তু আমি তো কোনো রিয়েক্ট করি না।বাবা আমার জন্য পুরো প্রাসাদ রেখে গেছেন।আমি অনায়াসেই আমার জীবন পার করতে পারবো।আপনি আমার মায়া ভুলে যান।কত সুন্দর সংসার হয়তো ছিলো আপনার!আমি আসায় সব গুলিয়ে গেছে।

হাফসা নিজেকে বুঝিয়ে নিলো।এই সম্পর্ক থেকে সে দূরে চলে আসবে।কাকামণিকে বললে তিনি বুঝবেন বিষয়টা।এরকম সম্পর্কের কোনো প্রয়োজন নেই।

________
আরহাম আর আব্বু এসছেন সুপার মার্কেটে।ফিস সাইডে গিয়ে মাছ দেখছেন দূজনে।

‘আব্বু এই ইলিশ টা নিন?পরিষ্কার লাগছে,ফ্রেশ।’

আহনাফ তাজওয়ার ছেলের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘ভালো-খারাপের তফাত বুঝতে পারো না?পরিষ্কার দেখে কেউ মাছ নেয়?মাছটা পরিষ্কার সাদা, কারণ বরফের স্যাঁক পড়েছে।মানে মাছটা মিনিমাম ২ দিন ফ্রিজড ছিলো।’

আব্বুর শান্ত কন্ঠের ধমক শুনে আরহামের মুখটা শুকনো হয়ে গেলো।

আহনাফ তাজওয়ার দোকানদারকে ভালো দেখে রুই মাছ প্যাকেট করতে বলে আরহামকে বলেন, ‘এত বড় হয়েও বাজারটা শিখলে না?হাউ শেইম!সব কাজ শিখতে হয় বুঝলে?’

আরহামের শুকনোমুখে বললেন, ‘এখন থেকে করব আমি বাজার।’

‘পারো তুমি বাজার করবে?’

‘জ্বি না।শিখে নিব।’

‘এখন থেকে আমার সাথে বিকেলে আসবে।’

‘হুমম।’

‘ভাই ৫ কেজি করলা দিন তো।’

‘আব্বু ৫ কেজি কে খাবে?করলা এত খাওয়া যায়?’

‘তুমি খাও না?’

‘জ্বী না।’

‘এখন থেকে খাবে।’

আরহাম শুকনো মুখে বললেন, ‘আচ্ছা।’
___
সপের ভেতরে এসছেন দুজনে।আরহাম লিস্ট দেখে দেখে আইটেমগুলো ভ্যানে রাখছিলেন।আব্বু আরহামকে বাজারের লিস্ট চাপিয়ে ম্যানেজারের সাথে গল্প করতে শুরু করে দিয়েছেন।

হঠাৎ সাইড কর্ণার থেকে একটা বাচ্চা আরহামকে দেখতেই “পাপ্পা” বলে উঠলো।আরহাম তৎক্ষনাৎ চমকে পিছু ঘুরে দেখলেন ছোট্ট গোলগাল বার্বিডলের মতো একটা বাচ্চা।

‘পাপ্পা উমমমমমো পাপ্পা…’

আরহামের বেশ লাগলো বাচ্চাটিকে।হাত থেকে কালোজামের প্যাকেটটা রেখে বাচ্চাটির দিকে এগিয়ে গেলেন।কোলে তুলে নিয়ে গালে একটা কিস করলেন। ছোট্ট বেবিগার্ল টা খিলখিল করে হেসে উঠলো।আরহাম বাচ্চাটির সাথে আদুরে আলাপ করতে করতে আশপাশ খুঁজে দেখলেন।বাচ্চাটির গার্ডিয়ান নেই।এই সাইডে কোনো লোকজনই নেই।কার বাচ্চা এটা?

আহনাফ তাজওয়ার আরহামকে কিছু একটা বলতেই এদিকে এসছেন।এসে আরহামের কোলে বাচ্চা দেখে খানিকটা হকচকিয়ে গেলেন।

আব্বুর প্রশ্নবোধক চাহনী বুঝে আরহাম বলতে লাগলেন, ‘আব্বু হুট করে…..

‘পাপ্পা!’

আরহামের কথা বলার মাঝেই হুট করে বাচ্চাটি পাপ্পা ডাকতে আহনাফ তাজওয়ার অপ্রস্তুত চোখে আরহামের দিকে তাকালেন।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলেন কেউ-ই নেই।

আরহাম আব্বুর চাহনীর অর্থ বুঝে ভীতস্বরে বললেন, ‘আব্বু আমি চিনি না এটা কে।এর পাপা অন্য কেউ।

(৫৬)

আরহামের ভীতস্বরে এমন কথা শুনে আহনাফ তাজওয়ার হেসে ফেললেন।আরহাম আব্বুর হাসির কারণ বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে রইলেন।

কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে একটা মেয়ে ছুটে আসলো।দূজনের সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে জোরে জোরে শ্বাস নিলো।

দূজনই জিজ্ঞাসাদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন মেয়েটার দিকে।মেয়েটি কিছুসময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বাচ্চাটাকে নিজের কোলে নিয়ে বলল, ‘ও এখানে কিভাবে আসলো?ও তো আমার সাথেই ছিল।’

বেবিগার্ল টা আবার পাপ্পা ডাকতেই মেয়েটি সরল হেসে বলে, ‘সরি।আসলে ওর বাবা আপনার মতোই অনেকটা।তাই পাপা বলে ফেলেছে।’

‘ইটস ওকে।’

বলে আরহাম আবার ভেতরের সাইডে চলে গেলেন।আব্বু পেছন পেছন যেতে আরহামকে বিড়বিড় করে বললেন, ‘তুমি কবে পাপা ডাক শুনবে!’

আরহাম এমন ভাব করলেন যেন তিনি কিছু শুনেননি।
আরহাম আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়েটি তাকিয়ে রইলো।বোধহয় আরহামের মতো এমন নিঁখুত সুন্দর মানুষ দেখে চমকে গিয়েছে।আনমনে আওড়ালো পুরুষ টা যেমন সুদর্শন তেমনি তাঁর দৃষ্টি ও সুশীল!

_________
‘আসবো?’

বারান্দার ডিভানে পা ঝুলিয়ে অন্ধকারে বসে ছিলেন আরহাম।আচমকা কারো কন্ঠে চমকে পেছনে তাকান,

‘আসতে পারমিশন লাগবে কেন আব্বু?’

আধো অন্ধকার পরিবেশ।আরহামের দিকে কফির কাপটা এগিয়ে নিজের কাপে চুমুক দিলেন আহনাফ তাজওয়ার।
শান্ত কন্ঠে বললেন, ‘তুমি যথেষ্ট বড়।তুমার একটা প্রাইভেসি আছে না?’

‘আছে।তবে আপনার ক্ষেত্রে আলাদা।’

ভদ্রলোক মুচকি হাসলেন।রুমের একপাশের বাতি থেকে আধো আধো আলো এসেছে এদিকে।

আরহাম কফির কাপটা ডিভানে রেখে অন্যমনষ্ক হয়ে তাকিয়ে আছেন গ্লাস পেরিয়ে জ্বলজল করা একটা একটা ছোট তারকার দিকে।

কিছুক্ষণ যেতেই হঠাৎ আব্বু জিজ্ঞেস করলেন,

‘কেমন আছো?’

হঠাৎ আব্বুর এহেন প্রশ্নে আরহাম চমকিত হলেন।তবুও নিজেকে সামলে বললেন, ‘ভালো।’

‘দেখে তো মনে হচ্ছে না।’

‘কেন?’

‘কিছু একটা লুকাচ্ছ তুমি?’

‘ক্ ক্ কি লুকাবো আব্বু?’

‘তুমিই ভালো জানো।তার আগে বলো মাইমুনার সাথে থাকছো না কেন?এত এভয়েড কেন করছো?তিনদিনে আমি একবারও ওর সাথে কথা বলতে দেখিনি তুমায়।’

আরহাম দীর্ঘশ্নাস ফেললেন।আব্বু আরো কয়েকবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর পেলেন না।

এবার আরহাম মুখ খুললেন।
‘উমায়ের এর সাথে উনার জেলাসির পরিমাণ মাএাতিরিক্ত।এতটাই বেশী যে উমায়ের এখন আমার সাথে সংসার করতেই চাচ্ছেন না।ডির্ভোস চান।’

আব্বু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন সে ডির্ভোস চায়?’

‘ওই যে মাইমুনা মেইন রিজন।আমারও দোষ আছে।আমি….

‘তুমি কী?’

আরহাম বাবার দিকে হয়ে আকুতিস্বরে বললেন, ‘আব্বু!উমায়ের আমার সাথে আসতে চান না।আপনি যাবেন আনতে?আপনার সাথে আসবেন নিশ্চয়ই।’

আহনাফ তাজওয়ার বেশ সময় নিয়ে কিছু একটা ভাবলেন।অতপর বললেন, ‘যাবো আমি?তাহলে তুমিও চলো।’

আরহাম হতাশ সুরে বললেন, ‘আমি গেলেই আসবেন না জানি।’

_________
উদাস ভঙ্গিতে জানালা দিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে হাফসা।আকাশে মিটিমিটি করে গুটিকয়েক তারকা জ্বলজ্বল করলেও মনের আকাশে মেঘ জমেছে। যেকোনো সময় হবে ভারী বর্ষণ।হুট করে খারাপ লাগছে ওইদিনের ওই ঘটনার জন্য।কত বাজে স্পর্শ ছিলো রুদ্রের!হাফসার জীবনে এটি একটি কালো অধ্যায়।

অমাবস্যার অন্ধকারের সাথে হাফসা নিজের চোখের জল আড়াল করে নিলো।বুক ফেটে কান্না চলে আসছে।স্বীকার করতেই হবে।আরহামকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে হঠাৎ।চোখটা যেন অস্থির ওই মানুষটার দেখা পাওয়ার!

হঠাৎ’ই পাশে ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রীনে ঝলঝল করছে উনার নাম ‘আবু আরহাম’।স্বামীকে নাম ধরে ডাকা জায়েজ আছে তবে নামের আগে ‘আবু’ যোগ করতে হয়।

রিংটোন বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেলো।ওপাশে যেমন একজন তৃষ্ণার্ত মানব ওর কন্ঠ শোনার অপেক্ষায়!তেমনি হাফসাও সেই মানুষটার সান্নিধ্যের অপেক্ষায়!

এভাবে একাধারে নয়টা কল এসে কেটে গেলো।দশনম্বর বার কাঁপা হাতে ফোনটা তুলল।মনের বিরুদ্ধে রিসিভ করলো।

শ্রবণ হলো ওপাশে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাসের আওয়াজ। নিরবতায় চলে গেলো পাঁচটা মিনিট!আরহাম হতাশ হলেন।উমায়ের কথা বললেন না!

উনিই করুণ কন্ঠে বললেন, ‘এভাবে কষ্ট না দিলেও পারেন!’

(৫৭)

উনার ভারী কন্ঠ শুনে হাফসার বুক ধ্বক করে উঠলো।লোকটা কি এবার কেঁদে দিবে!

আবারো কাতর কন্ঠে বললেন, ‘আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসেও আপনাকে মিস করছি।উমায়ের।ক্ষমা করে দিন না আমায়।’

হাফসার ঠোঁট থরথর করে কাঁপছে।বেশ সময় নিয়ে কিছু একটা বলতে নিলো, ‘আপনি…

আরহাম এরমাঝেই বলে উঠলেন, ‘আল্লাহ সুয়ার!ডির্ভোসের কথা বলবেন না প্লিজ।’

হাফসা ব্যাথিত হলো।ও তো বলতে চায়নি।এই শব্দ টা এত ভারী কেন!

‘আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না।রিসিপশনের রাতে আপনাকে নিয়ে আমার সব ডিপ ফিলিংস বলেছিলাম।আপনি কি বুঝেন না আমার অনুভূতির পরিধি?’

উনার কান্নাভেজা শেষ বাক্য ছিলো, ‘হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, কারো মনের মধ্যে ভালোবাসা জন্ম দিয়ে ছেড়ে যাওয়া আর তাকে মেরে ফেলা সমান।’

মানুষটা আর একটা কথাও বলে নি।কল কেটে দিয়েছেন। হয়তো কান্নার ধাপ টা বেসামাল হয়ে উঠেছে।পুরুষ মানুষ ও কাঁদে!প্রিয় মানুষ হারানোর ভয় শক্তপোক্ত মনের পুরুষদেরও কাঁদিয়ে দেয়!

আরহাম কপালে পড়া এলোমেলো চুল সাথে মুখ চেপে ধরেছেন একহাতে।আরেকহাতে রেলিংয়ে।নাক টেনে টেনে কান্নার উথাল ঢেউ আটকানোর চেষ্টা করছেন।

হঠাৎ পেছনে কারো পদধ্বনি তে চমকে উঠলেন,

ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ ঠেকলো তৎক্ষনাৎ।আরহাম সামনে ঘুরলেন না।তিনি চিনেন এই স্পর্শ।একহাতের কনুই দিয়ে ভেজা চোখ আর গাল মুছে নিলেন তাড়াতাড়ি।

‘আরহাম!তুমি কাঁদছিলে?’

আরহাম মিথ্যে বলেন না।তবে সত্যি টাও বলতে চাইছেন না।কথা ঘুরিয়ে বললেন, ‘আব্বু আপনি এত রাতে?’

‘আমিও তো সেইম প্রশ্ন করতে পারি?তুমি এত রাতে ছাদে কেন?’

‘ঘুম আসছিল না।’

‘কাঁদছিলে কেন?’

আরহামকে চুপ থাকতে দেখে বললেন, ‘নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করো না।আমি পেছনে ছিলাম অনেকক্ষণ হলো।’

কিয়ৎক্ষণ নীরব থেকে আরহাম বললেন,

‘আব্বু!উমায়ের এর সাথে খুব অন্যায় করেছিলাম, তাঁর শাস্তি পাচ্ছি।’

‘কি হয়েছিলো?’

‘বলবো বাট একটা রিকুয়েষ্ট।মাইমুনার ওপর আমি অসন্তুষ্ট।তবে সব শোনার পর আপনি অসন্তুষ্ট হবেন না প্লিজ।আপনি এখন যেমন ওনাকে মেয়ের মতো স্নেহ করেন,সব শুনে তখনও করবেন।কোনো নেগেটিভ থিংকিং রাখবেন না।’

‘ঠিক আছে কথা দিলাম রাখবো না।’

আরহাম ভালো করে গাল মুছে আস্তে আস্তে সব ঘটনা খুলে বললেন।

অনেকক্ষন পর____

আব্বু কঠিন একটা চাহনী নিয়ে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছেন।আরহাম আব্বুর দৃষ্টির মানে এখনো বুঝতে পারছেন না।

আহনাফ তাজওয়ার কন্ঠে অবাকতার রেশ এনে বললেন, ‘আমি ভাবতে কি চিন্তা ও করতে পারছি না তুমি হাফসার গায়ে হাত তুলেছো।ব্যাপারটা লজ্জাজনক।এতোটাও রুড তুমি কিভাবে হতে পারলে?তোমার আম্মুর সাথে সংসার করেছি বছর তিশেক পের হলো।কোনোদিন গায়ে হাত তুলিনি আজ পর্যন্ত।আর তুমি তোমার নতুন বিয়ে করা স্ত্রীর ওপর হাত তুললে?তাও কোনো দোষ ছাড়া?একটু যাচাই তো করে দেখতে।তাছাড়া যদিও তখন এসব মিথ্যেকে সত্য ভাবছিলে তখনও তো সে এমন কোনো অপরাধ করেনি যার জন্য গায়ে হাত তুলতে হবে।

আরহাম অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে ফেললেন।

আব্বু কিছুক্ষণ পরখ করলেন আরহাম কে।তারপর নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ক্ষমা চেয়েছো হাফসার কাছে?’

(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।