অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ২০

13 Min Read

30★

‘ক্ষমা চেয়েছো হাফসার কাছে?’

‘চেয়েছি।’

‘ওই ছোট্ট মেয়েটার কাছ থেকে তুমায় নীরবতা, ভদ্রতা,আর ধৈর্য শিখা উচিত।মেয়েটার মা-বাবা নেই।ও এতিম।এতিমের গায়ে হাত তোলার শাস্তি কত কঠিন জানো?সে ক্ষমা না করলে তোমার ইহজীবনের সব পুণ্যই বৃথা।’

আরহাম কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললেন, ‘আব্বু আমি চাইনি।আমি বুঝতে পারিনি।রাগের মাথায় ভুল করে ফেলেছি।আমি উনাকে একবিন্দুও কষ্ট দিতে চাইনি।’

ছেলের মনের দূর্বলতা আর চেপে রাখা কান্নার স্বর বুঝে আহনাফ ভরসার সুরে বললেন, ‘আচ্ছা।আমি কাল গিয়ে নিয়ে আসব।কীভাবে ক্ষমা আদায় করবে সেটা তোমার ব্যাপার।ওর সম্পর্কে যতটুক জেনেছি সে তোমায় অবশ্যই ক্ষমা করবে।তবে আর জীবনে কোনোদিন এমন ভুল করো না।কোনোদিন না।’

………

‘রুমে যাও।’

আরহাম নিচে চলে আসলেন।হাফসার রুমেই গিয়ে ওর ছোট্ট বালিশটা জড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লেন।

৫৮

হাফসা নিচে এসছে সকালের নাস্তা সেরে।কাকামণিই ডেকেছেন।হাফসা এসে বসতেই কাকামণি উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আরহাম ওদিন ওভাবে চলে গিয়েছিলো কেন?

‘জানিনা।’

‘তোমাকে কিছু বলে যায় নি?আমাকে শুধু বলল,তাড়া আছে বাসায় যাবে।বলেই সালাম দিয়ে বেরিয়ে গেলো।অথচ আমি রাতের খাবারের আয়োজন করছিলাম।সে থাকবেও ভেবেছিলাম।’

হাফসা কিছু বলল না।তাই আহমাদ ও আর ঘাঁটলেন না।তবে একটা প্রশ্ন রয়েই গেলো মনে!

_________
মেয়েরা খুব দূর্বল প্রকৃতির হয়!

ওদেরকে কঠোর স্বরে ভালো জবাব দিলে ওরা কষ্ট পাবে।
আর আপনি যদি তাদেরকে সুন্দর করে নরম স্বরে উত্তর দেন তাহলে তারা তৎক্ষনাৎ খুশি হয়ে যাবে।
বিশ্বাস করুন,একটা মেয়ের মুখে হাসি ফোটাতে দামি উপহারের প্রয়োজন হয় না। তারা শুধু আপনার অগ্রাধিকার, আপনার সম্মান, আপনার যত্ন, সুরক্ষা ও আপনার ভালোবাসা হতে চায়।একটা মেয়ের কাছে কিছু বোকা উপহারের চেয়ে এই জিনিসগুলো অনেক দামি।

একটি মেয়েকে সুখী রাখুন আপনার অর্থ দিয়ে নয়; ব্যক্তিত্ব, স্নেহ, মায়া-মমতা ভালোবাসা দিয়ে।

পুরো অংশটুকু আর পড়া হলো না।ফোন টা লক করে চোখ বন্ধ করে নিলেন।কোনোকিছুতে মন বসে না!কয়েকদিন ধরে মাদ্রাসাও যাওয়া হচ্ছে না।একটু বাইরে বেরোবেন ভাবলেন। কিন্তু বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে মাইমুনাকে দেখেই উল্টো ঘুরে আবার ওপরে উঠতে নিলেই মাইমুনার ব্যাথাতুর শব্দ শুনে তড়িৎ বেগে পেছনে তাকান।মাইমুনা নিচু হয়ে পায়ে কিছু একটা করছে।

আরহামের সাথে কথা বলার জন্য একটা মিথ্যে বাহানা মাএ!মনের ভাবনাই সত্যি হলো।আরহাম সামনে এসে দাঁড়াতেই মাইমুনা অসহায় চাহনী দিলো।

আরহাম গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে? কোথায় ব্যাথা পেয়েছেন?’

‘মনে।’

‘কি বললেন শুনিনি।’

‘না মানে পায়ে।আমাকে একটু রুমে দিয়ে আসবেন?’

আরহাম উত্তর দিলেন না।একটু সময় পরও যখন কথা বললেন না তখন মাইমুনা বুঝলো উনি চাইছেন না।চেয়ার টেনে চলে যেতে চাইলে আরহাম বাঁধা দেন।সন্তোর্পণে কোলে তুলে রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন।

মাইমুনাকে বিছানায় রেখে চলে আসতে চাইলে মাইমুনা খপ করে আরহামের হাত ধরে ফেলো।

‘প্লিজ যাবেন না।মাএ কয়েকটা কথা বলব।’

আরহাম মাইমুনার হাতটা ছাড়িয়ে বললেন, ‘তাড়া আছে আমার।তাড়াতাড়ি বলুন।’

‘আমাকে ইগনোর কেন করছেন শাহ?কি করেছি আমি?’

আরহাম তৎক্ষনাৎ জবাব দিলেন, ‘কি করেননি আপনি? কিছু করার বাকি রেখেছেন?’

‘বলবেন তো ক্ ক্ কি করেছি আমি?’

‘উমায়ের কে আমার কাছে ছোট বানাতে চেয়ে আপনি নিজে ছোট হয়ে গেলেন।আপনার নেগেটিভ সাইড দেখিয়ে দিলেন আমায়।বাট উল্টো হলো।এতে উনার প্রতি রেসপেক্ট বেড়ে গেছে,কমেছে আপনার প্রতি।আপনি ক্ষমার যোগ্য না।আপনার প্রতি ‘বিশ্বাস ‘ভেঙে দিলেন তো!একবার ভাঙ্গলে তা জোড়া লাগে না। আপনাকে আর কখনো পিউরলি বিলিভ করতে পারবো না আমি।সবসময় সন্দেহ থাকবে।কথা বলার এতটুকু ও ইচ্ছে নেই।ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে যেতে হবে।আসি।’

________
ছাদে বসে টক বড়ই খাচ্ছে হাফসা।আর একদিন পর তো রোযাই।খাওয়া যাবে না।এপর্যন্ত ছাদে যতবার এসেছে চোখ ভাসিয়ে কেঁদেছে।এবার এসব ব্যাপার একটু ভুলতে চায়।তাই নিজেকে একটু সময় দিতেই ছাদে এসেছে।
আরহাম বরাবরই কল দিচ্ছেন।হাফসা কল ধরে না।এমনি ভালো কিন্তু উনার ফোন আসলেই অটো বেসামাল বেগে কান্না চলে আসে।মানুষটা হয়তো ফোনের ওপাশ থেকে বারবার হতাশ হোন।

আহমাদ মুনতাকিম কমিটির কিছু পেপারস চেক করছিলেন রুমে বসে।রিদান এসে বলল, একটা লোক এসেছে।আপনার সাথে দেখা করতে চান।

‘কে?কমিটির লোক নাকি?তাহলে গিয়ে বলো আমি ব্যস্ত আছি?’

‘কমিটির লোক বলে মনে হলো না।দামি গাড়ি নিয়ে আসছেন।দেখতেও সুন্দর।’

আহমাদ মুসতাকিন ভ্রু কুঁচকালেন।এমন কে আসতে পারে!

ড্রয়িং এ আসতেই দেখলেন সাদা জুব্বায় একজন সুদর্শন ব্যাক্তি।চেহারাটা কেমন যেনো পরিচিত লাগছে।আহমাদ মুসতাকিন নিজেই প্রথমে সালাম দিলেন।

বিনয়ের সহিত বললেন, ‘দূঃখিত কিন্তু চিনতে পারলাম না আপনাকে।’

৫৯

‘আমি আরহামের আব্বু।’

আহমাদ চকিত নজরে তাকালেন যেন ভীষণ আশ্চর্যের কথা শুনেছেন।পরক্ষণেই কাছে এসে মুসাফাহা করে স্কাউচে বসালেন।

‘আরহামের বাবা আপনি।একদম আরহামের মতোই।এজন্যই চেহারাটা পরিচিত লাগছিলো।’

ভদ্রলোক মিষ্টি করে হাসলেন।কুশলাদি বিনিময় শেষে
নাস্তার অর্ডার দেওয়া হলো।
ড্রাইভার এসে বেঙ্গল ফুডের বিশটার ওপরে সুইটস এর প্যাকেট রেখে গেলেন।তা দেখে আহমাদ বললেন, ‘এতকিছু কেন আনতে গেলেন?’

‘অল্পমাএ।প্রথম বেয়াই বাড়ি আসা।বউমা কোথায়?’

‘মনে হয় ছাদে।ডেকে দিচ্ছি।’

‘জ্বি না থাক।আপনার সাথে আলাপ হয়ে যাক আগে।’

‘আপনি তো স্পেন ছিলেন।দেশে আসলেন কবে?’

‘কিছুদিন আগেই।’

রিদান সহ কয়েকজন সহকর্মী এসে টেবিল সাজিয়ে নাস্তা পরিবেশন করলো।আহমাদ বলতে লাগলেন,

‘এভাবে হুট করে আসলেন।বলে আসতেন।তাহলে…

‘জি না ভাই আমাকে ফিরতে হবে।বেশ দূর তো!এজন্যই আমি না জানিয়ে আসলাম যাতে আয়োজন না করেন।’

‘প্রথমবার আসলেন।লাঞ্চ টা না করলে যেতে দেবো না।’

‘অন্য একদিন ইনশাআল্লাহ।হাফসাকে নিতে এসেছি আমি।’

মুহুর্তেই আহমাদের মুখে আধার নেমে এলো।হাফসা চলে যাবে!বাড়িটা আবার প্রাণশূন্য হয়ে যাবে।

আহনাফ তাজওয়ার বোধহয় আহমাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন।আশ্বস্ত করে বললেন, ‘প্রথম কয়েকটা রোযা আমাদের সাথে থাকুক।পরে এসে থেকে যাবে কিছুদিন।আর আপনিও চলুন প্লিজ।প্রথম ইফতারটা একসাথে করি?’

‘বাড়ি একা ফেলে তো যেতে পারবো না।আর প্রথম দিন এতিমখানায় বাচ্চাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

‘ওহ আচ্ছা।তাহলে আরেকদিন একসাথে ইফতার করব ইনশাআল্লাহ।’

‘ইনশাআল্লাহ।’

ড্রয়িং রুমের এক কোণায় দোতলার সিঁড়ি।হাফসা একহাতের আজলায় বাকি কয়েকটা বরই নিয়ে আরেকহাতে হিজাবের কোণ দিয়ে মুখ ঢেকে নিচে নামছিলো।কয়েকটা সিঁড়ি নামতেই একটা অপরিচিত কন্ঠস্নর শুনেই হাঁটা থামিয়ে দিলো।চোখ তুলে ওদিকে তাকাতেই দেখলো দূজনের কেন্দ্রবিন্দু ওর দিকেই।

আহমাদ বলে উঠলেন, ‘হাফসা এদিকে আসো।’

হাফসা বুঝলো না এই অপরিচিত মানুষটার সামনে কাকামণি ওকে কেন ডাকছেন। নিশ্চয়ই কারণ আছে।

মুখ ঢেকেই এগিয়ে গেলো।

‘জ্বী কাকামণি?’

আহমাদ হেসে আহনাফ তাজওয়ার কে দেখিয়ে বললেন, ‘দেখো তো চিনতে পারো কী না।’

হাফসা আড়চোখে একঝলক দেখে মাথা দূপাশে নাড়িয়ে বুঝালো ও চিনে না।
আহনাফ তাজওয়ার হেসে দিলেন।

‘আরহামের আব্বু উনি।’

হাফসা তড়িৎ বেগে তাকালো।এতক্ষণে ভালোভাবে খেয়াল করলো।শুভ্র পোষাকে সজ্জিত লম্বাটে সুঠামদেহী ধাপের পুরুষ।আরহাম ঠিক যেন উনার কার্বন কপি।ঠোঁটে একটা হাসি লেগেই আছে।মধ্যবয়সী মানুষটা এখনো তাগড়া জোয়ান।কালো ঘন দাঁড়িতে দূ একটা পাক ধরেছে মাএ।

হাফসা ডান হাত দিয়ে ধরা হিজাব নামিয়ে সালাম দিলো।

আহনাফ তাজওয়ার চমৎকৃত হলেন হাফসাকে দেখে।ছেলের পছন্দ সাংঘাতিক।তিনিও মিষ্টি হেসে সালামের উত্তর দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন।

কথা বলার মাঝখানেই যোহরের আযান পড়লো।দূজনে উঠলেন নামাজের জন্য মসজিদের উদ্দেশ্যে।

ভদ্রলোক বললেন, ‘রেডি হয়ে নাও।নামাজ পড়ে বেরোব।’

‘কোথায় যাব?’

‘তোমার বাড়িতে।’

‘আমার বাড়ি তো এটা।’

দূজনেই সশব্দে হেসে দিলেন।হাফসা বুঝলো ভুল বলে ফেলেছে।বিয়ের পর স্বামীর বাড়িই তো মেয়েদের আসল বাড়ি হয়।

বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে হাফসার চোখ ছলছল হয়ে উঠলো।

আহমাদ বললেন, ‘বাড়ি যাবে।মন খারাপ করো না। কয়দিন পর এসে থেকে যাবে মামণি।’

হাফসা কোনো উত্তর দিলো না।কাকামণি বের হয়েছেন আগে আগে।আহনাফ তাজওয়ার কি ভেবে এগিয়ে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘আমাকে বাবা মনে করবে শ্বশুর নয়।আর আরহামকে আমি শাস্তি দিব।তুমি যেমন চাইবে!এখন রেডি হয়ে থেকো।তোমার আম্মু অপেক্ষা করছেন।কয়দিন পর এসে তুমার ইচ্ছেমতো থেকে যাবে।খুশি?’

হাফসা ছলছল নয়নে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকালো।

_______
দেয়াল ঘড়িটায় আড়াইটা পেরিয়ে গেছে সেই কখন।নামাজ থেকে এসে আহনাফ তাজওয়ার কে লান্চ করতেই হলো।এই অল্প সময়ে ভালোই ভোজের আয়োজন হয়েছে। হাফসা মামুণীকে জড়িয়ে ছিলো অনেকক্ষণ।নিজের বাড়ি ছাড়তে বুঝি এমন বুকফাটা কষ্ট হয়!
কাকামণিকে বিদায় জানিয়ে রওয়ানা হলেন দূজনে।হাফসার চোখ পানিতে টইটম্বুর।ভদ্রলোক বসেছেন সামনের সিটে।হাফসা পেছনে।

প্রকৃতি তার রূপ হারাতে ব্যস্ত। সূর্যের তেজ নেই।বিকেলের আগমন।শাঁই শাঁই করে গাড়ি ছুটে চলছে তাঁর গতিতে।হাফসা জানালার পানে নিশ্চল চেয়ে আছে বাইরে।

______
আরহাম বেশ খুশি খুশি।নিজের রুমে বসে একা একাই হাসছেন।হাসি যেন থামতেই চাইছে না।একটু আগে আব্বু টেক্সট করেছেন হাফসাকে নিয়ে বেরিয়েছেন।উমায়ের আসার খুশিতেই বুঝি এত আনন্দ!

31★

৬০
সময়টা সন্ধ্যার আগ মুহুর্ত।গাড়িতে আসর নামাজ আদায় করেছে হাফসা।বমিটিং ও হয়েছে একবার।বেশ ক্লান্ত লাগছে।

বাসায় ডুকতেই আম্মু এসে হামলে পড়লেন। হাফসা সালাম দিতেই উনি জিজ্ঞেস করতে শুরু করলেন,

‘কেমন আছো হাফসা?তুমাকে কত মিস করেছি জানো?ঠিক আছো তো?আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো?’

‘জ্বী আলহামদুলিল্লাহ হয়নি।’

‘আহা মেয়েটাকে একটু বিশ্রাম দেওয়ার সময় তো দিবেন তাই নয় কি!আপনার ছেলে কোথায়?ওর নামে বিচার আছে।আমি নিজহাতে শাস্তি দিব ওকে।’

আরহাম ওপর থেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলেন। আব্বুর মুখে শাস্তি শুনে আর বের হওয়ার সাহস পান নি।নাহলে উমায়ের এর সামনে কি নয় কি শাস্তি দিবেন আর মানসম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে।

‘কি করেছে কি আমার ছেলে?আমার ছেলেকে শাস্তি দিবেন?’

‘বউমা রুমে যাও তুমি।আর আফসানা, আপনার ছেলে যা করেছে সেটা অপমানজনক।শুনতে এসেন না।’

________
আরহাম যেনো এরই অপেক্ষায় ছিলেন।হাফসা রুমের দিকে আসছে।দরজা ঠেলে ভেতরে ডুকলো।লাইট অন করার আগেই একজোড়া হাত টান মেরে কাছে নিয়ে নিলো।হঠাৎ এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় হাফসা ভয়ে চিৎকার দিতে যাবে অমনি কেউ ওর নরম হাতজোড়া নিজের বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো।উনি আর কেউ নন,আরহাম।উনার কাছে আসলেই উনার শরীরের মিষ্টি গন্ধ টা শুঁকলেই হাফসা বুঝে যেতে পারে।

ওর হাতটা বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রেখে শ্বাসরুদ্ধকর কন্ঠে বললেন, ‘আম সরী ফর অল মাই মিস্টেক।এখন থেকে সব নতুন করে শুরু করি?আর ভুল করব না।আমি আপনাকে না দেখলে দম বন্ধ হয়ে আসে সেখানে ডির্ভোস টা কি পসিবল বলেন?অনুরোধ, এমন কথা বলবেন না আর।আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ।’

হাফসা আরহামের বুক থেকে হাত ছাড়িয়ে অন্ধকারে চোখের জল আড়াল করে নিলো।স্বাভাবিক হয়ে বলল, ‘এখন ছাড়ুন।ফ্রেশ হবো।’

‘ক্ষমা করেছেন তো?’

‘অনেক আগেই।কারো প্রতি অভিযোগ রাখি না আমি।’

_______
ঘড়িতে দশটার কাটা পেরিয়েছে সেই কখন।আরহাম রুমে বসে আছেন চুপচাপ।একটা জিনিস উনাকে আঘাত দিচ্ছে বারবার।হাফসা উনাকে সর্বোচ্চ এড়িয়ে চলছে।আসার পর ফ্রেশ হয়ে আসতেই মাগরিবের আযান পড়লো।মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে এসে দেখলেন হাফসা রুমে নেই।সেই থেকে মায়ের রুমে ছিলেন। কিচেনেও ছিলেন। তবুও রুমে আসেননি একবার।ইশার সালাত সহ তিলাওয়াত মা’য়ের সাথে একসাথে আদায় করেছেন।এদিকে আরহাম ঘন্টার পর ঘন্টা রুমে অপেক্ষা করছেন একটু কথা বলার জন্য।আজকে অবশ্য তারাবিহ পড়ার কথা ছিল।তবে চাঁদ দেখা যায় নি।বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন কাল হবে প্রথম সাহরি।

হাফসা রুমে আসলো।গাঢ়ী কাপরের হিজাব টা খুলে একটা ওড়না নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকলো।একটু পরেই ওড়না পড়ে বের হলো।
‘উনি ওড়না পরতেই ওয়াশরুম গেলেন? আমার সামনে কি ওড়না পরতেও এত দ্বিধা?’

ডিনারের ডাক আসলে দূজনে একসাথে নিচে নামলো।হাফসা আর আম্মু সার্ভ করে দিলেন। ডিনারে রমজান নিয়েই কথা হলো।সিদ্ধান্ত হলো যে তারাবী’ র পর প্রতিদিন তালিম শোনাবেন।কখনো আব্বু কখনো আরহাম।কথা হচ্ছে এসব নিয়েই কিন্তু আরহাম নিশ্চিুপ।হাফসাকে খাইয়ে দিতে চাইলে ও বাধা দিয়েছে। মাইমুনা নাকি আগে খেয়েই শুয়ে পরেছেন।হাফসার এই ইগনোরেন্স গুলো আরহামকে ভেতরে ভেতরে পুড়িয়ে দিচ্ছে একেবারে!আমার সাথে ভালোভাবে কথা বললে কি হয়!এত কেনো কষ্ট দেন!’

________
‘একটু কথা বলি?আসার পর থেকে তো রুমে ছিলেন না।’

রুমে আসার পর আরহাম কথাটি বললে হাফসা উত্তর দিলো,

‘মাথায় পেইন করছে।ঘুমাবো।’

‘আচ্ছা। মাথায় মাসাজ করে…
আরহামকে মাঝকথায় আটকে হাফসা বলল, ‘লাগবে না।’

আরহাম ছলছল চোখে চেয়ে রইলেন।খুব কষ্ট হচ্ছে।এখানে থাকলে আরো কষ্ট হবে।

তাই লাইট নিভিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘শুয়ে পড়ুন।আমি আমার রুমে ঘুমাচ্ছি।’

উনার চলে যাওয়ার পানে হাফসা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। মানুষটা কি কষ্ট পেলেন?একবার ডাকবো?না থাক!

এরকম দ্বিধাদন্দে ভোগে ডাকা হলো না আর।এদিকে ওপাশের দেয়ালের মানুষটার সারারাত ছটফট করতে করতে বিনিদ্র রাত পার হলো।

_________
সকালে নামায পরে ঘুমিয়েছিলো।
তারপর আটটায় ঘুম ভাঙ্গতেই তাড়াহুড়ো করে কিচেনে আসলো।ওকে তাড়াহুড়ো করতে দেখে আম্মু হাসিমুখে বললেন, ‘তোমার কিছু করতে হবে না।আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করে নিয়েছি।’

নাস্তার টেবিলে আরহামের চেয়ারটা খালি।হাফসা বারবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে।উনি আসছেন না কেনো!

যেই সবাই বসেই পড়লো টেবিলে অমনি হাফসা মাকে প্রশ্ন করলে, ‘উনি উঠেন নি?ডাকবো গিয়ে?’

‘আরহাম তো সেই কবেই বেরিয়ে গেছে।সাতটা নাগাদ হবে।ইমার্জেন্সী কাজ বললো।’

হাফসার মনটা কেন জানি বিষাদে ছেঁয়ে গেলো।
খেতে খেতে আম্মু বললেন, ‘আরহাম কি ঘুমায় না রাতে?সকালে চোখ দেখলাম টকটকে লাল।’

হাফসা এই অল্পকথায়ই অনেক কিছুই বুঝে নিলো।কাল রাতে উনাকে এভোয়েড করা মোটেও ঠিক হয় নি!

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।