অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৪৫

16 Min Read

‘ভালোবাসা কম হলে দায়িত্বে এুটি হয়।আর দায়িত্বে এুটি হলে শাস্তি পেতে হয়!তাই না?’

আরহাম চুপ রইলেন।নিজের চালে নিজেই যেনো ফেঁসে গেলেন।এখন সে প্রতি সেকেন্ডর ভালোবাসার পরিমাণ গুণে গুণে রাখবে!

হাঁটতে হাঁটতে আরহামের হঠাৎ চোখ পড়লো পুকুরের দিকটায়।কাউকে দেখে আদওয়ার হাত খপ করে ধরলেন তিনি।’কাম ফাস্ট’ বলে ওকে টেনে টেনে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে চাইলেন।আদওয়া আহাম্মক বনে গেলো।জিজ্ঞেস করতে লাগলো বারবার,’কি হয়েছে?এমন তাড়াহুড়ো করছেন কেন?’

একেবারে বাড়ির ভেতরে এসে হাত ছাড়লেন তিনি
শাসনের সুরে বললেন, ‘বারবার বলেছিলাম আবায়া পড়ে বাইরে আসতে।ওখানটায় পুরুষ ছিলো কয়েকজন।’

আদওয়া জোর খাটিয়ে বলল,’বাড়িতে কাজ করা ম্যাডদের সামনে আমি অনেকবার গিয়েছি।অনেকবার!’

‘বললাম না,আগের কিছু জানি না আমি।ফ্যাক্ট হচ্ছে প্রেজেন্ট।’

আদওয়া মুখ বাঁকা করে রইলো অন্যদিকে।আরহাম ওর ফুলানো গালে ঠুনকো মারতেই চমকে উঠে।তিনি হেসে উঠলেন।আদওয়া মুগ্ধচোখে দেখলো।

তিনি ঠোঁটে হাসি রেখেই বললেন, ‘রাগ করলে এত মায়া লাগে কেন!’

আদওয়া লজ্জা পেয়ে গেলো।

‘একটা প্রশ্ন করি?’

‘হু।’

আদওয়া একটু ইতস্তত হয়ে বলল,’ছোটআপু কি অসুস্থ?আই মিন…তাকে তো সুস্থ দেখলাম কিন্তু আপনি কিচেনে যাওয়ায় রাগ দেখালেন কেন ওইদিন?’

‘সুস্থ।বাট উনার ভেতরটায় আরেকটা প্রাণ আছে।আমি চাই না,উনার এবং তার কোনো ক্ষতি হোক।গ্যাসের ধোঁয়া ক্ষতিকর,পেঁয়াজ রসুনের স্মেলে এলার্জি।আবার বেশী গরম,বেশী ঠান্ডা থেকে কফ হয়ে যায়।তাই মানা করি।কিন্তু আমাকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকই কিচেনে যান।’

আদওয়া চুপসে গেল,নীরব হয়ে গেলো।কেনোজানি সুন্দর মুহুর্তটুকু আর সুন্দর লাগলো না,সব সৌন্দর্য আয়েজন খামাখা মনে হলো।বুকের ভেতরটায় ভারী এক যন্ত্রণা অনুভব করলো।ঘুমের ভান ধরে বলল,’চলুন নিচে যাই।খুব ঘুম পেয়েছে।’

‘আচ্ছা চলুন।’

ফিরে এসে দেখলেন নাস্তা রেডি।শেষরাতে ঘুম ভেঙে গেলে সায়হান কান্না শুরু করে বাড়ি যাওয়ার জন্য।কোনোমতে সামলে,নামাজ পড়েই আরহাম তাকে ফিরতি বাড়ি দিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

******
নাস্তার টেবিলে উমায়েরকে দেখলেন না।ঘরে যেতে দেখলেন, সে ঘুমোচ্ছে।আরহাম পাশে বসে এলোচুলে হাত বুলিয়ে দিতেই খানিকটা ভয় পেয়ে যায়।আরহামকে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে পুনরায় ঘুমোতে গেলেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘নাস্তা করবেন না?’

‘কি খাব?’

‘ঝাল ছাড়া সবজি,স্যালাদ,ব্রেডস,মিল্ক,ফ্রুটস…

হাফসা আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো।খাবারগুলোর নাম শুনেই উটকা আসছে তার।উঠে বসলো পড়লো তৎক্ষনাৎ।আরহাম তাকে অস্বাভাবিক দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে?অস্বস্তি লাগছে?’

হাফসা বমিটিং ফিল বুঝাতেই তিনি দ্রুত ওয়াশরুম থেকে ফিরে আসেন বালতি নিয়ে।ধরে বসাতেই পেটের সবকিছু বেরিয়ে আসে।কিছু সময় নিয়ে ফ্রেশ হতে দেখলেন, সে একেবারে দূর্বল।

মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি খাবেন?কি খেতে ইচ্ছে করছে আপনার আমাকে বলুন।আর কিছুর নাম মুখে আনবো না।’

72★

মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি খাবেন?কি খেতে ইচ্ছে করছে আপনার আমাকে বলুন।আর কিছুর নাম মুখে আনবো না।’

হাফসা খানিকসময় ভেবে বলে, ‘ঝাল!ঝাল আর টক মিক্সড কিছু খেতে ইচ্ছে করছে।’

‘খালিপেটে দূটোই কত ক্ষতিকর বুঝতে পারছেন?’

‘তাহলে আর কিছু ইচ্ছে করছে না।’

আরহাম অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।হাফসা হেসে ফেলল।বলল,’থাক খাব না।আপনি নাস্তা করে নিন।’

আরহাম চলে গেলেন।ইউটিউব দেখে রেসিপি সিলেক্ট করে আম্মুকে এনে রান্না করলেন।তিনি বুঝিয়ে বললেন, কতটুক কি পরিমান হবে।

হালকা ঝাল দিয়ে সব রকমের সবজি দিয়ে একটা রেসিপি তৈরী করলেন।রুমে এসে বললেন, ‘এটাতে ঝাল আছে।এটা কষ্ট করে খেয়ে নিন।তারপর যা মন চায় খাবেন।’

খাবার মুখে দিতে বুঝলো,এর চেয়ে স্বাদহীন কিছু হতে পারে না।হাফসা চুপচাপ কোনোমতে গিললো কারণ তিনি বানিয়ে এনেছেন।আরহাম খাইয়ে দিলেন।হাফসা জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি ব্রেকফাস্ট করেছেন?’

‘আপনাকে খাইয়ে দিয়ে করবো।’

এর মধ্যে ঝাল চেক করতে হাফসার অজান্তে অল্প মুখে নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে ফেলে আসলেন।অবাক হয়ে বললেন, ‘এত স্বাদহীন জি্ জিনিস গিললেন কীভাবে?’

হাফসার চুপ থাকা দেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি বানিয়েছি বলে এত খারাপ স্বাদের জিনিস চুপচাপ খেয়ে নিতে হবে?বললেই হতো খারাপ হয়েছে।আমি তো জোর করতাম না।’

‘ইটস ওকে।পেটের ভেতর তো চলে গিয়েছে।গোডাউন তো ভরে গেছে।এবার ঘুমোই?’

আরহাম চোখেমুখে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে লাইট অফ করে চলে গেলেন।

******
রাত….
মাইমুনার রুমে যেতে শুনলেন সে রাগ দেখিয়ে কারো সাথে কথা বলছে।না চাইতেও আরহামের কানে কিছু কথা ভেসে আসে,

‘এত ঝামেলা কেন করবে তোমরা?আমি কি ভালো নেই?আমি খুব সুখে আছি বুঝেছো।শাহ আমার যথেষ্ট কেয়ার করেন।আমি কখনো উনাকে ছেড়ে আসতে পারবো না।’

দরজায় আরহামকে দেখে মাইমুনা ফোন কেটে দেয়।স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলে, ‘কখন এলেন?’

আরহাম এগিয়ে এসে বললেন, ‘একজনকে আনতে আরেকজন চলে যেতে হবে?আমি তো সবাইকে নিয়ে সুখে থাকতে চাই মাইমুনা।’

‘আমিও চাই শাহ।তারা কেনো বুঝে না?’

‘তারা যদি আপনাকে বাধ্য করে তবুও আমি যেতে দিব না আপনাকে।আপনি যাবেন না বলুন।ব্যাপারটা কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে আপনার ফ্যামিলি।আদওয়া শুনলে কষ্ট পাবেন।ফ্যামিলিতে ঝামেলা হবে।কেনো এসব হচ্ছে?’

‘আমি জানি না।আপনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন,আমার ফ্যামিলিকে নিয়ে আমি মেনে নিবো।’

‘শুধু আপনি জবানবন্দি দিবেন, আপনি আমার সাথে থাকতে চান।এতটুকুই এনাফ।কখনো মত বদলাবেন না হানি।আমি আপনাকে কখনো হারাতে চাই না।’

আরহামের কন্ঠে ভয়,অসহায়ত্ব, আকুতি।মাইমুনা আশ্বস্ত করে বলল, ‘আপনাকে না দেখে আমার কোন ভোর না হোক,কোনো সন্ধ্যা না নামুক।কোর্টে বলব,আপনি আমার অক্সিজেন।’

আরহাম আশ্বস্ত হলেন।জড়িয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললেন, ‘ব্যপারটা গোপন রাখবেন।মায়ের থেকেও,উমায়ের আদওয়ার থেকে তো অবশ্যই।’

‘আচ্ছা।আমার ফ্যামিলির এতটুকু সম্মানের চিন্তা করার জন্য ধন্যবাদ।’

‘চলুন ছাদে যাই?’

‘ঠান্ডা লাগছে।’

‘লাগবে না।বুকের ভেতর ঢুকিয়ে তালা মেরে দিব।’

মাইমুনা হাসলো!প্রশান্তির হাসি।এই মানুষটাকে ছাড়া সে কি থাকতে পারবে?অথচ সম্পর্কটা এখন অনিশ্চিত পথে।একদিকে মায়ের শর্ত,অন্যদিকে আরহামের ভালোবাসা।

১১২
ফিরতে লেট হওয়ায় আরহাম তখন একাই ডিনার করছিলেন।খাবার মুখে নিতেই চুপ হয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ।উনার মুখের রিয়েকশন বদলে গেলো।আম্মু আর হাফসা মুখটিপে হাসছিলেন সোফায় বসে।আরহাম আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আম্মু!’

‘শুনছি।’

‘কে রান্না করেছে? ‘

‘সার্ভেন্ট।কেনো? ‘

আরহাম চুপ হয়ে খেতে লাগলেন।আর কোনো উত্তর দিচ্ছেন না দেখে আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেনো জিজ্ঞেস করলে?’
আরহাম আম্মুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিজেই প্রশ্ন করে বসলেন, ‘এখন থেকে কি তারাই রান্না করবে?’

‘হ্যাঁ।’

‘শেফ চেন্জ করুন।আমার ভালো লাগছে না।’

‘কোনো আইটেমই ভালো লাগছে না?’

‘না।পরিমানে কম পড়েছে, নয়তো বেশী।’

‘তুমিই না বলো আমরা কিচেনে না যেতে।তাহলে সার্ভেন্টের রান্না এখন কেনো ভালো লাগছে না?’

আরহাম মুখ পাংসুটে করে বললেন, ‘একটু ঠিকঠাক করে রান্না করলেই তো হয়।’

হাফসাকে দেখলেন উনার দিকে তাকিয়েই হাসছে, আর জুস খাচ্ছে।আরহাম মায়ের অজ্ঞাতে তাকে চোখ মারতেই খালিমুখেই বিষম খায়।আরহাম ব্যস্ত হয়ে উঠে এলেন।আম্মু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘জুস তো খাচ্ছিলে না এখন।খালিমুখে বিষম খেলে কীভাবে?’

হাফসা আড়চোখে আরহামের দিকে তাকালো।উনি অপরাধীদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।স্বাভাবিক হয়ে বলল, ‘ক্ কিছু না এমনিই হঠাৎ….’

‘বুঝতে পেরেছি।সামলে খাও।’

পানি এগিয়ে দিয়ে আরহাম পুনরায় ড্রয়িং এ ফিরে গেলেন।আর একটা বার তাকালেন না পর্যন্ত।সামান্য একটু দূষ্টুমি করায় এই অবস্থা!উমায়েরের কিছু হলে,তার থেকেও তো নিজের বেশি ভয় হয় উনি কি বুঝতে পারেন?কিছু কিছু অস্থিরতা অপ্রকাশিত থাক!

আজ উমায়ের কে নিয়ে হসপিটালে যাবার কথা।সকালের টাইম বদলি হয়ে রাতে এপোয়োনমেন্ট হয়েছে।

*******
হাফসাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে ফিরতে রাত হলো বেশ।আরহামের চোখে মুখে চিন্তা আর অস্থিরতা।হাফসার শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি,পরবর্তীতে ক্ষতির সম্মুখীন হবারও আশঙ্কা আছে বলে ডক্টর জানালে আরহামের শিরায় শিরায় কাঁপুনি উঠে গেলো।অসহায় দৃষ্টিতে পিছন ফিরে তাকাতে দেখলেন,সিটের মধ্যেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে হাফসা।দরজা খুলে এগিয়ে এসে চোখেমুখে অজস্র চুমু দিলেন।কোলে নিয়ে বের হওয়ার সময় অনুভব করলেন, তাঁর শরীর মাএাতিরিক্ত গরম।

দরজা খুলে দিলো আদওয়া।ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি হয়েছে আপুর?’

‘ঘুমিয়ে গিয়েছেন।’

হাফসাকে রুমে রেখে নিচে আসলেন।খাবার প্লেটে নিয়ে রুমে যেতে দেখলেন, আদওয়া দরজার সামনে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।সে হয়তো এতরাত অবধি অপেক্ষা করছে।আজকে তার সাথে থাকার কথা।

প্লেট টেবিলে রেখে রুমে এসে বললেন, ‘ঘুমিয়ে পড়ুন আজ।আই এম সরি,উমায়েরের সাথে থাকছি।’

‘আচ্ছা।’

‘খেয়েছেন?’

‘হুমম।’

তাকে ঘুমাতে দিয়ে রুমে এলেন।টেনশন সরছেই না।যার কাছে ঠাঁই নিলে,সব হতাশা ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়, তাকে নিয়েই যখন এতো চিন্তা, তবে এ চিন্তার উপশম কি!

হিজাবের পিনটা ঢিলে করে নিকাব খুলে নিলেন।গালে হাত রেখে আলতো স্বরে ডাকলেন, ‘উমায়ের,শুনছেন?’

কয়েকবার ডাকলেও সে জবাব দিলো না।কোনো প্রয়োজনে ড্রয়িং রুমে আসতে দেখলেন আদওয়ার রুমের লাইট জ্বলছে।তড়িৎ চোখ গেলো ঘড়িটায়।একটা বাজতে চললো।পিছু ফিরে হাফসাকে একপলক দেখে ওর রুমের দিকে এগোলেন।

আদওয়া সোফার এক কোণায় ঘাপটি মেরে বসে একহাতে চাবি ঘুরাচ্ছে,আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আম্মু আর আরহামের এলবামটা দেখছে।

আরহাম পারমিশন না নিয়েই ঢুকে পড়লেন।তাকে শূন্যে তুলে বিছানায় নিলেন।ঘুমাতে দিয়ে কোমল হাতজোড়া নিজের হাতে আবদ্ধ করে বললেন, ‘আমাকে খুব ভালোবাসেন?’

সে উত্তর দিলো না।

‘এত পুরুষ থাকতে তিনজনের একপুরুষের অধিকারের হতে চাইলেন কেন?খারাপ লাগছে নিশ্চয়ই এই যে আমি আপনার সাথে থাকছি না।’

আদওয়া চটপট উত্তর দিতে চাইলো,কিন্তু আরহামের মুখাবয়বে পূর্ণদৃষ্টি রাখতে বুঝলো কিছু একটার ঘাটতি আছে।

জিজ্ঞেস করলো, ‘আ্ আপনার কি মন খারাপ?’

আরহামের নিরুত্তরে আদওয়া বুঝে গেলো।ঝটপট উঠে বসে বললো, ‘কেনো?কেনো আপনার মন খারাপ?আই আন্ডারস্ট্যান্ড।’

‘কিছু না।অনেক রাত হচ্ছে। ঘুমান।’

‘আমাকে শেয়ার করবেন না?’

আরহাম দমে গেলেন।লুকানো উৎকন্ঠা তড়িৎ খেলে গেলো চেহারায়।একরাশ ভয় আর চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো দৃষ্টিতে।বললেন, ‘উমায়ের অসুস্থ।খুব খুব ভয় হচ্ছে।ভয় হচ্ছে তাদের জন্য। আমি জা জানিনা…’

আরহাম পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন।একটা মানুষ এতো যন্ত্রণা চেপে রাখে কীভাবে।উনার বাক্যগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে।আদওয়া তাকে সামলাতে বলল, ‘শান্ত হোন।কিছু হবে না আপুর।’

‘বাট আমার ভয়….’

‘নো মোউর বাট।আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল রাখলে এতো কেনো চিন্তা?তিনিই সব ঠিক করে দিবেন।’

আদওয়া বুঝলোই না।তাঁর কয়েক বাক্যের সান্ত্বনা গুলো আরহামের ভেতরে কতটুকু সাহস জুগালো।ঠিক এই মুহুর্তে এই ভরসাগুলো যেনো আরহামের খুব প্রয়োজন ছিলো।বেশ কিছুক্ষণ নীরব থেকে আদওয়ার বলা কথাগুলো ভেবে বুঝলেন, ভরসা হারিয়ে উনি রীতিমতো রবকে অসন্তুষ্ট করছেন।মনে মনে ক্ষমা চেয়ে আদওয়ার কপালে উষ্ণ স্পর্শ একে বললেন, ‘ফুলটুসি, বারকাল্লাহু ফিক।’

******
হাফসার ঘুম ভাঙ্গার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন দেড়টা পর্যন্ত।সে উঠলে তাকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে যখন নিজে বিছানায় গা টা এলিয়ে দিবেন তখন মনে হলো পরশুর তারিখ।পুরো শরীরে একটা কাঁপুনি দিয়ে গেলো।এবার আর দুচোখ এক হবে না।সব কিছু ঠিক,তবুও দুশ্চিন্তা কমছে না।মাইমুনা তো উনার সাথে থাকবেন,প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।তবু অন্তিম সময়ে যদি তাঁর মত বদলে যায়?ইচ্ছে করে না হোক বাধ্য হয়ে।মাইমুনা তাদের হাতে নেই,তবুও তাদের আগ্রহ,ব্যবস্থার ঠিক নেই।তাহলে এমন কিছু কি হবে যার জন্য আরহাম প্রস্তুত নন?

একটার পর একটা টেনশন আরহামকে ভেতর থেকে গুড়িয়ে দিচ্ছিলো।এ মুহুর্তে একটা ভরসা প্রয়োজন ছিলো।না চাইতেও উঠে বেরিয়ে গেলেন।ড্রয়িং পার হতেই আব্বুর দেখা মিলে।আরহামের দুশ্চিন্তায় মাখা চেহারা সম্মুখে পড়তেই আব্বু মাথায় হাত রেখে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘ডোন্ট বি স্যাড বয়।এভরিথিং উইল বি ওকে।’

********
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতেই তাকে নাস্তার টেবিলে নেওয়া হলো।বেশ কয়েক ধরনের ফ্রুটস সহ পুষ্টিকর খাবার সামনে সার্ভ করা হতেই হাফসা হকচকিয়ে যায়।

আম্মু হাতে করে একটা বাটিতে কিছু নিয়ে এলেন কিচেন থেকে।হাফসার পাশে বসতে বসতে বললেন, ‘কোনটা খাবে?ফ্রুটস খাবে না…..’

‘খাবো আম্মু।আমি খাবো।আপনি ব্যস্ত হবেন না।’

‘খাবো খাবো বলে পরে রেখে যাও সব।তুমি ধীরেসুস্থেই খাও,আমি পাশে আছি।’

হাফসা অসহায় দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকায়।আরহাম ভ্রু কুঁচকে পুরো টেবিলে নজর বুলিয়ে ওর পেট দেখালেন।হাফসার অক্ষিগোলক বড় বড় হয়ে গেলো।এ সবকিছু পেটে চালান দেওয়া সম্ভব?

ধীরেসুস্থে খেতে শুরু করলো সে।আরহাম ল্যাপটপ কিছু করেছিলেন।আম্মু আরহামের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিজোড়া স্থির করলেন।তাকে দেখে বুঝা যাবে রাত থেকে সকাল অব্দি সে কতটুকু টেন্সড ছিলো হাফসাকে নিয়ে।সকাল আম্মুর কাছে এসে হাফসার সিকনেসের কথা বলছিলো।টেনশনে প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিলো।কিন্তু হাফসাকে একটুও বুঝতে দেয় না।

*******
আরহামের সাথে বেরিয়েছে আদওয়া।হঠাৎ করে তাঁর খুব ইচ্ছে হলো, মা-বাবাকে দেখে আসতে।আরহামের হাতে পায়ে ধরে বায়না ধরে নিয়ে এসে তবে নিস্তার পেলো।দূপুরের খাবার খেয়ে ফেরার পথে শপিং মলে ডুকলো দূইজন।

আরহামকে অপেক্ষা করিয়ে পুরো লেডিস সাইড ঘুরে এসে বলল, ‘আমার তিনটে জামা পছন্দ হয়েছে।কিন্তু আমি সেগুলো কোন কোন সপে দেখেছি ভুলে গেছি।এখন কি করবো?’

আরহাম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন।এতক্ষণ ঘুরে সে এসে এৃন হতাশাজনক কিছু বলবে,তাঁর জন্য একটুও প্রস্তত ছিলেন না আরহাম।

‘তাদের অনলাইন পেইজ জেনে আসুন।বাসায় বসে বসে শান্তিমতো চোজ করে করে অর্ডার দিবেন।আসরের আযান পড়বে একটু পর।ফিরতে হবে আদওয়া।’

সে আরও কিছু বায়না ধরতে যাচ্ছিলো কিন্তু পেছনে একজোড়া দৃষ্টিতে আটকাতেই ওর চোখেমুখে ভয় দেখা দেয়।গুটি গুটি পায়ে আরহামের পেছনে আড়াল হয়।

আরহাম ভ্রু কুঁচকে আছেন ওর এমন বিহ্যাভ দেখে।আদওয়ার দৃষ্টি অনুসরন করে ওদিকে তাকতেই…

73★

(১১৩)
আরহাম ভ্রু কুঁচকে আছেন ওর এমন বিহ্যাভ দেখে।আদওয়ার দৃষ্টি অনুসরন করে ওদিকে তাকাতেই এক সুদর্শন যুবক দৃষ্টিতে পড়ে।

ইমান সামনে এসে দাঁড়াতেই আদওয়া আরহামের পেছনে গুটিসুটি মেরে রয়।বুক কেঁপে উঠে ইমানের।

আরহাম শান্ত দৃষ্টিতে ইমানের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘উনাকে অস্বস্তিতে ফেলবেন না।আর আপনি এখান থেকে চলে গেলে ভালো হবে।’

ইমান নির্বোধের মতো তাকিয়ে থাকে।দিশেহারা হয়ে বলে,’বিশ্বাস করুন আমি আদওয়াকে ভীষণ রকম ভালোবাসি।এতটুক ও মিথ্যে বলছি না,আমি সত্যি ওকে এখনো ভালোবাসি।

আরহাম কোনোমতে নিজেকে সামলালেন।অন্যের মুখে নিজের স্ত্রী কে ভালোবাসার কথা শুনতে কি যে কাঁটার মতো একটা যন্ত্রণা হয়,সেটা এইমুহূর্তে আরহাম অনুভব করছেন।শ্বাসরুদ্ধ কন্ঠে বললেন, ‘আগের কিছু আমি জানি না।কিন্তু তিনি এখন আমার ওয়াইফ।আই হোপ,আপনি কোনো ঝামেলা করবেন না।আই রিকুয়েষ্ট, ফরগেট হার!’

ইমান ফিকে হাসি দিলো।ভুলা?আদওয়াকে ভু্লা?আদৌ কি সম্ভব তার শমপাপড়িকে ভুলে থাকা?

আরহাম আদওয়ার হাত ধরলেন।তারপর বেরিয়ে গেলেন এই হল থেকে।ইমান তাকিয়ে রইলো আরহামের মুঠোয় রাখা হাতটায়।এই হাতটাই কোনো সময় যত্ন করে খাইয়ে দিতো,এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে দিতো।শার্টের এলোমেলো বোতাম ঠিক করে দিতো।এই হাতজোড়াই বাইকে বসলে,কাঁপা হাতে ইমানের বুক জড়িয়ে ধরে রাখতো!

ভালোবাসা বড় অদ্ভুত!পাগলের মতো ভালোবেসে,গভীর মায়ায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেও কাউকে রাখা যায় না!অথচ এই শখেরই মানুষটাকে অন্যকেউ বিনাকষ্টে পেয়ে গেলো!

ইমান হাসলো।তিরতির করে কাঁপা ঠোঁট দিয়ে বিড়বিড় করলো,’শমপাপড়ি আমাকে দেখে ভয় পেয়েছে!আমাকে দেখে!’

******
চিন্তা যেনো আরো তিনগুণ বেড়ে গেলো আরহামের।কোর্টের টাইম পিছানো হয়েছে।আর সেটা করেছেন মাইমুনার ফ্যামিলি।তাদের অতিরিক্ত আয়োজনে আরহামের ভয়টা বেড়ে যাচ্ছে।একা থাকলে খুব কান্না পায়।কিন্তু কাঁদা যায় না,পুরুষ তো!পলক ফেলে ঠেলেঠুলে বেরিয়ে আসা অশ্রুকে বিদায় দিতে হয়।উনি তো পারবেন না মাইমুনাকে ছেড়ে থাকতে।সাড়ে তিনবছরেরও বেশি সময়ের পিছুটান ফেলে তাদের অবাধ্য আবদার মেনে নিবেন না।নীরব বলে তারা সুযোগ পাচ্ছে।ভেতর থেকে হৃদয়ের একটা অংশ খুলে নিয়ে যাবে,অথচ আরহাম কিছু বলবেন না?তা হয় না।মাইমুনা যদি কখনো বদলেও যান তবুও জোর জবরদস্তি করে হলেও তাকে নিজের আঙ্গিনায় রেখে দিবেন।তাঁর হৃদয় ভরিয়ে দিবেন শুদ্ধ ভালোবাসায়!তবুও চোখের আড়াল হতে দিবেন না।আদওয়ার সাথে তাঁর প্রাক্তনের অপ্রত্যাশিত দেখা হওয়ায়ও মনটা খারাপ ছিলো আরহামের।কেন জানি!কোনো কারন ছাড়াই।আদওয়াকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তিনি ফিরে এসেছিলেন এতিমখানায়।এখানে আসলে মন খারাপ একটু ঘুচবে।সাথে মাইমুনার বিষয় নিয়ে চিন্তাটাও দূরে থাকবে।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।