মেঘের ভীষণ গর্জনে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।ঘুম ভাঙতেই দেখি বিহান ভাই এর হাতের উপর সুয়ে আছি আমি।উনার এক হাতের উপর আমার মাথা রাখা অন্য হাত আমার পেট উপর দিয়ে আবদ্ধ করে রেখেছেন।নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন আমাকে আগলে ধরে।আমার পাশে পৃথবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ টা সুয়ে আছে আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালো অনুভূতি এখন আমার মনের মাঝে বয়ে চলেছে।উনার নাকের ধীর গতির নিঃশ্বাস আচড়ে পড়ছে আমার নাকে মুখে,উষ্ণ এই নিঃশ্বাসে আমি উনাকে অনুভব করে চলেছি।হঠাত লোড শোডিং হয়েছে,বাইরে ঝোড়ো হাওয়া।বাইরে প্রচন্ড মেঘ তবুও যেনো গরমের উত্তাপ কমছে না।সাইড থেকে পাখা নিয়ে হালকা বাতাস করছি উনার মুখে যেনো গরমে ঘুম না ভেঙে যায় উনার।কেননা উনি একটুও গরম সহ্য করতে পারেন না।ওয়ালের দিকে নজর দিলাম ঘড়িতে সকাল সাত টা বাজে।বাইরে কেমন গুমট হয়ে আছে, এত সকালেই মেঘের কালো ছায়া ছেয়ে গিয়েছে নীল আকাশ।।থমথমে আকাশ কালো মেঘে আনাগোনা।প্রায় আধাঘন্টা ধরে সুয়েই আছি। বাইরে ঝোড়ো বাতাস শুরু হয়েছে লন্ডভন্ড করে তুলেছে সব।।ঘরের পশ্চিমপাশের জানালা খোলা বাইরে থেকে ধুলা বালি আসছে ঘরে।আমি আস্তে করে উঠতে গেলাম বিহান ভাই এর হাত টা নিচে রাখলাম।উঠতে গিয়েই দেখি উনার ঘড়িতে আমার গলার চেইন আটকে গিয়েছে।অনেক ক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি কিন্তু ছড়াতে পারছি না।জোরে টানলে উনার ঘুম ভেঙে যেতে পারে।এরই মাঝে উনার ঘুম ভেঙে গেলো।বাইরে যেনো তুফান উঠেছে, জানালার পর্দা এলোমেলো ভাবে উড়ছে,জানালার পাল্লা খুব জোরে বাড়ি দিচ্ছে মনে হচ্ছে এখুনি ভেঙে যাবে।জানালার পাশেই বেড রাখা যার জন্য সম্পূর্ণ বাতাস আমাদের শরীরের লাগছে আর বেডে পড়ছে।বিহান ভাই চোখ মেলে তাকালেন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে উনার ঘড়ির দিকে তাকালেন।
“মিষ্টি হেসে বললেন,গুড মর্নিং মিসেস বিহান।এখন কেমন লাগছে।”
“গুড মর্নিং বিহান ভা,,”
“উনি আমার মুখে আঙুল ঠেকিয়ে বললেন, নো ভাই মিসেস বিহান।জাস্ট বিহান তোমার মুখে কত বেশী কিউট লাগে তুমি জানো?ভুল করেও তো বলতে পারো,নাম ধরে ডাকতে পারো।”
কি হয়ে গিয়েছে বিহান ভাই এর।কি আজিব কথা উনার মুখে।কোনো রাগ নেই, আমাকে তুমি বলছেন।অনেক এমাজিং লাগছে আজ উনার কথা গুলো।আমি বিলিভ করতে পারছি না উনি এইভাবে কথা বলছেন।কাল রাতে আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছেন,মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন অনেক বুঝিয়েছেন।তাছাড়া আমি জানি ভাই বলাটা খারাপ দেখায় বাট অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এত বছরের অভ্যাস এত সহযে কিভাবে চেঞ্জ করবো।বাট আই ট্রাই টু মাই বেষ্ট,খুব জলদী বিহান ভাই থেকে শুধু বিহান হয়ে যাবে উনি।
“কি দেখছেন এইভাবে উনি?চোখের পলক তো পড়ছেই না উনার।উনি আমার খোপা করা চুল গুলো খুলে দিলেন।এলোমেলো বাতাসে উড়ছে চুল।চুল উড়ে উনার চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে।আমার মুখে পড়া চুল গুলো আঙুল দিয়ে সরিয়ে বললেন,আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই আজ দিয়া।সারাজীবন ধরে না বলা কথা জমিয়ে রেখেছি।অল রেডি অনেক দেরি করে ফেলেছি।আরো দেরী করলে এই ছোট্ট জীবন থেকে অনেক গুলো ভাল সময় হারিয়ে যাবে।তোমাকে সারাজীবন ইডিয়ট বলি আসল ইডিয়ট তো আমি। ”
উনার এই না বলা কথা গুলো শোনার জন্য বহুকাল ধরে অপেক্ষা করছি আমি।বুকের মাঝে ধুকপুক শুরু হয়েছে তুফানের মতো।কাঁপা ঠোঁটে বললাম,
“কি কথা বলুন না।”
“উহু এখন না!এই ভাবে বললে তুমি কিছুই ফিল করতে পারবে না মিসেস বিহান।আজ সন্ধ্যায় বলবো।আমার জীবনের বিশেষ মানুষ টাকে বলা কথা গুলো বিশেষ স্পেশাল করে তুলতে চাই আমি।একটা শাড়ী পড়বা, দু’হাতে কাঁচের চুড়ি পরবা,খোলা চুলে এক গাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবা।উফফ কল্পনায় ভাবা হয়ে গিয়েছে এই পিচ্চিকে শাড়িতে কত সুন্দর লাগবে।”
“উনার এহেম কথা শুনে শোনার আগ্রহ আরো বেড়ে গেলো আমার।উত্তেজিত হয়ে বললাম এখন একটু তো বলুন।”
“এখন কিভাবে বলবো মিসেস বিহান।পিচ্চির চুল এলো মেলো বাতাসে উড়ছে,পিচ্চির চোখ বেয়ে চুল পড়েছে মনে হচ্ছে ভুবন ভোলানো এক অপরুপ নারী আমার সামনে বসে।এখন আমাকে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে,দারূণ ভাবে উপভোগ করতে হবে।ইউ নো হোয়াট দিয়া খোলা চুলে ন্যাচারাল লুকে নারীকে যতটা সুন্দর লাগে পৃথিবীর কোনো সাজেই এত সুন্দর লাগে।ন্যাচারাল লুকে একটা নারী একটা পুরুষ কে পিওর ভাবে আসক্ত করতে পারে।একজন পুরুষ সব সময় নারীর ন্যাচারাল লুকে অসাধারণত্ব খুজে বার করে।সেই ছোট বেলা থেকেই এই অসাধারণ রুপ দেখে দেখে মুগ্ধ আমি। তাইতো কোনো কৃত্তিম সাজ আর ঢাকা শহর আমাকে আটকে রাখতে পারে নি দিয়া।একজন প্রকৃত পুরুষ যদি একবার কারো মায়ায় আটকে যায় আর কখনো সে মায়া থেকে বের হতে পারে না।মায়া ভীষণ খারাপ দিয়া,ভয়ানক রকমের খারাপ।কারো রুপের প্রেমে পড়লে মোহ একসময় কাটবেই কিন্তু মায়ায় জড়ালে তা আর কাটিয়ে ওঠা যায় না।”
অবাক হয়ে উনার কথা শুনছি আমি।উনি চেইন টা ছাড়িয়ে আস্তে করে ছাড়িয়ে দিলেন।আমি বিছানা ছেড়ে উঠতেই উনি বললেন,তোমার হাত পাখার বাতাসে যতটা শীতলতা পেয়েছি পৃথিবীর কোনো যান্ত্রিক বস্তুর বাতাস আমাকে এতটা শীতল করতে পারেনি।আমি উনার কথার কোনো উত্তর দিলাম না শুধু হাসলাম।
আজ ঘুম থেকে উঠে ভীষণ সুস্থ লাগছে।কাল যে অসুস্থ ছিলাম তার কিছুই মনে হচ্ছেনা আমার।একদম ই ঠিক লাগছে শরীর।মন অসুস্থ থাকলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে যা বুঝলাম।আজকের সকালের জন্মের পরে পাওয়া সব সকালের থেকে উত্তম মনে হচ্ছে।
তুমুল বাতাসে মেঘ কেটে গিয়েছে।বাইরে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।আকাশ আবার নীল হয়ে গিয়েছে।সকাল আটটা বাজতেই আম্মু বাবা ভাইয়া রিয়া, তোহা আপু, তিহান ভাইয়া,মেহু আপু, আয়রা সবাই চলে এসছে।বিহান ভাই এর মামি নানী ও এসছে কালিয়া থেকে।আমার এক অসুস্থতার বাহানায় বাড়িতে এক বিয়ে বাড়ি সমান উৎসব শুরু হয়েছে।কাজিন রা সব এক জায়গা হয়েছে, চাঁদের হাট শুরু হয়েছে।আম্মু আর মামি দুজনে রান্না করছে।আমাকে সুস্থ দেখে সবাই অনেক খুশী।ছাদে বসে সবাই ভীষণ আড্ডা জুড়ে দিয়েছে।আমি রিয়াকে ডেকে বললাম আমি অসুস্থ হলে বিহান ভাই কিভাবে পৌছালো।
রিয়া বললো,দিয়া তুই অসুস্থ হতেই আমি ঘাবড়ে গেছিলাম।তাকিয়ে দেখি পেছনে বিহান ভাই।বিহান ভাই বললাম দিয়া অসুস্থ কিভাবে বুঝলেন বিহান ভাই।বিহান ভাই বললেন,দিয়াকে কেমন অসুস্থ দেখাচ্ছিলো আর বলেছিলো ও আর ফিরবে না।তাই আমি ভয় পেয়ে ওর পিছ পিছ এসছিলাম।যদি রাগ করে কোথাও চলে যায়।দিয়া বিহান ভাই তোকে ওইভাবে দেখে কি যে করছিলো তুই না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবি না।আমি তো তোকে না দেখে বিহান ভাইকে দেখছিলাম।কি পাগলামো টায় না করছিলো বিহান ভাই।কে বলে আমাদের বিহান ভাই এর মনে ভালবাসা নেই।নিজ চোখে দেখেছি বিহান ভাই ভালবাসা।
–সকালের রান্না শেষ হলে ডায়নিং এ ছয়জন বসলাম আর কয়েকজন ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে। খাওয়ার মধ্য অনেক রকম গল্প চলছে।গল্প চলাকালীন সময়ে
এক ঘর লোকের সামনে বিহান ভাই এর নানী বললেন,কি ডাক্তার বাবু এত ডাক্তারী পড়লে এটা বুঝলে না বউ এর কি হয়েছে।
–বিহান ভাই সবার সামনে এমন প্রশ্নে বেশ খানিক টা অপ্রস্তুত হয়েই বললেন,কি বুঝবো নানু।
–কিছুই বুঝছো না তাইনা দাদা ভাই।
–নাতো নানু।একটু বুঝিয়ে বলো।
–দিয়া মা হতে চলেছে।দিয়াকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আমি একবার দেখেই বুঝলাম আর তুমি বুঝলে না।
–বিহান ভাই জোরে কেশে উঠলেন।নাকে ঝাল উঠেছে উনার।বিভোর ভাই শয়তানি একটা হাসি দিয়ে উহুম শব্দ করে বিহান ভাই এর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।
ঘরভর্তি লোক সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমার কাজিন রা সবাই দল বেঁধে কনগ্রাচুলেশন জানাচ্ছে।আমি যেনো উঁচু এক পাহাড় থেকে পড়ে ধাক্কা খেলাম।বাবা আর মামারা এখনো খেতে আসে নি ভাজ্ঞিস।ভাইয়া এসব কথা শুনেও কান না দিয়ে মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছে।ছোট বোনের এসব ব্যাপারে কথা হচ্ছে ভাইয়ার খুব অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।আম্মু আর দুই মামি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে নিলো।ব্যাপার টা এখানে থেমে গেলেই ভাল হতো।কিন্তু নানী আবার ও কথা তুললেন,দিয়া এ সময়ে বমি বমি ভাব হয় দু ‘তিন মাস এমন হবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
–ভাইয়া খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে উঠে গেলো।আমি আমি ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি লজ্জার কথা ছিঃ
–নানী আবার বললেন,বিহান ও দাদা ভাই কয়মাস হলো।
–বিহান ভাই লজ্জায় যেনো স্টোক করবেন এমন অবস্থা। কোনো কথা না বলে ফোন কানে দিয়ে কল এসছে এমন ভাব করে উঠে গেলেন।
–মামি বললো,মা বয়স হচ্ছে আর পাগল হয়ে যাচ্ছো ছেলে মেয়েদের সামনে এসব কি বলছো।বিভোর আছে, তিয়াস আছে।
–নানী বললো দাদা তোরা কিছু শুনেছিস।
–বিভোর ভাই বললেন না সুইটহার্ট কিছুই শুনিনি।তুমি চলিয়ে যাও।এর এখান থেকে একটা মেয়ে দেখে আমার বিয়ে দাও।আমি কয়মাস, কয় সেকেন্ড সব জানিয়ে দিবো।
সবাই যার যার মতো আড্ডায় ব্যাস্ত আছে।
–সবার খাওয়া শেষ হলে বার বার আমি টাইম দেখছি কখন সন্ধ্যা হবে।আজ সন্ধ্যা যেনো অনেক দেরিতে আসছে।ভেতরে অস্হিরতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।