বাইজি কন্যা | পর্ব – ২৬

13 Min Read
বাইজি কন্যা

অলিওরের বিশেষ কক্ষটির দ্বারের বাইরে বাইজি গৃহের ভৃত্যদের থেকে শুরু করে প্রায় সকল সদস্যেরই ভীড় জমেছে। পাঁচফোড়ন গৃহ থেকে শুধু অলিওরের দুই স্ত্রী, তিন পুত্র এবং ভৃত্য’রা এসেছে৷ শাহিনুর সেই ভীড়ের মধ্যখানে দাঁড়িয়েই সর্বপ্রথম দৃষ্টিপাত করলো প্রেরণা এবং প্রণয়’কে। তার ভীত দৃষ্টিজোড়ায় ঐ দু’জন মানুষের পরই অকস্মাৎ অলিওরের রক্তাক্ত দেহটির সম্পূর্ণ দৃশ্য ভেসে ওঠলো। নিথর দেহটির পাশে মাথা নিচু করে বসে আছে প্রণয়, পাশে অলিওরের মাথা কোলে নিয়ে বসে আর্তচিৎকার করছে অরুণা এবং প্রেরণা। এমন দৃশ্য দেখে মস্তিষ্ক কেমন ফাঁকা হয়ে বক্ষঃস্পন্দন থেমে গেলো শাহিনুরের। ক্ষণকাল চারপাশে অবুঝভাবে দৃষ্টি বুলিয়ে যখন একে একে সকল পরিচিত মুখ দেখতে পেলো, দেখতে পেলো পরিচিত বুবুদের আঁচলে মুখ ঢেকে কান্না করার দৃশ্যটি, তখন আরেকবার কক্ষের ভিতরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। কক্ষের ভেতরে সম্পূর্ণ মেঝেতেই রক্তিম তরল পদার্থের স্রোত দেখতেই তার থেমে যাওয়া বক্ষঃস্পন্দন সহসা কেঁপে ওঠলো।অরুণা,প্রেরণা,প্রণয়’কে পেরিয়ে পেছন থেকে কারো করুণ আর্তনাদ শুনতেই শাহিনুরের সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠলো। শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসা অবস্থায় রুদ্ধ কন্ঠেই জোর পূর্বক উচ্চারণ করলো,
-‘ মা-ন্না-ত বুবুহ! ‘
শাহিনুরের ভীতিকর ভাঙা কন্ঠে ‘মান্নাত বুবু’ শুনতেই বাবার ক্ষতবিক্ষত, নিথর দেহ থেকে চমকিত ভঙ্গিতে দৃষ্টি তুললো প্রণয়৷ নির্লিপ্ত দৃষ্টিদ্বয়ে ভেসে ওঠলো শাহিনুরের শঙ্কিত মুখশ্রী। যা দেখে সহসা বুকের ভিতর চিনচিনে এক ব্যথাকে টের পেলো সে। শ্রদ্ধেয় পিতার মৃত্যু শোকে শোকাহত বক্ষেঃ আচম্বিতভাবে সম্মুখে থাকা কিশোরী’টির জন্য অদৃশ মায়া, আশঙ্কিত বিপদের সম্ভাবনা দৃঢ় হয়ে ওঠলো। বিনিময়ে তার রক্তিম আভাযুক্ত দৃষ্টিজোড়ায় ভর করলো সীমাহীন কাতরতা। কিন্তু সে কাতর দৃষ্টিদ্বয়ে এক পলকের জন্যও তাকালো না শাহিনুর। আর না তোয়াক্কা করলো চারপাশের মানুষজনদের। কোনরকম শারমিন’কে দেখতে পেয়েই ত্বরিতগতিতে এগিয়ে আর্তচিৎকার করে ওঠলো। ডাকলো,
‘ আম্মা! ‘
প্রণয়’কে পাশ কাটিয়ে ঠিক প্রণয়ের পিঠ মুখী হয়ে ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো সে। ঘাড় বাঁকিয়ে আচম্বিত দৃষ্টি’তে কয়েকপল শাহিনুর’কে দেখলো প্রণয়৷ পরোক্ষণেই আবারো সে তার বাবার মৃত দেহের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো৷ কিন্তু সজাগ রইলো তার কর্ণদ্বয়, রুদ্ধ হয়ে আসলো শ্বাসপ্রশ্বাস।
শারমিনের খোলা চুল মেঝেতে বিছিয়ে পড়ে আছে। চুলের ভাঁজে ভাঁজেও রক্তিম তরলে নিমজ্জিত। পরিহিত হলদে রঙের জর্জেট শাড়িটি দেখে বোঝার উপায় নেই তার রঙ হলুদ ছিলো! মান্নাত বাইজি ক্ষণে ক্ষণে শারমিনের গালে মৃদু থাপ্পড় দিচ্ছে আবার আর্তচিৎকার করে বলছে,
-‘ তুমি মরতে পারো না, তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না। নুর’কে ছেড়ে এভাবে কেন চলে গেলে তুমি, তোমার নুর’কে এবার কে রক্ষা করবে! ‘
শারমিন’কে অমন নিশ্চলভাবে দেখে মান্নাতের অমন আহাজারি শুনে সহ্য করতে পারলো না শাহিনুর। বীভৎস এক চিৎকার করে ওঠলো সে। শারমিনের রক্তেমাখা নিথর কাঁধে মৃদ্যুভাবে ধাক্কা দিতে দিতে ডাকলো,
-‘ আম্মা, আম্মা। ‘
বারকয়েক ডেকেও যখন উত্তর মিললো না৷ মান্নাত বাইজি ডুঁকরে ওঠলো। শাহিনুর করুণ চোখে মান্নাতের দিকে চেয়ে ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিলো। ভাঙা কন্ঠে বললো,
-‘ বুবু আম্মার কি হইছে? আম্মা কথা কয় না কেন! ‘
গগনবিদারী এক চিৎকার দিলো মান্নাত। বললো,
-‘ নুর’রে তোর আম্মা আর নাই তোর আম্মা নাইরে নুর।’
মান্নাতের হৃদয়বিদারক কন্ঠে কক্ষ যেনো কেঁপে ওঠলো। স্তম্ভিত হয়ে মা’য়ের পানে নির্বাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো শাহিনুর। তার ছোট্ট কোমল হাতটি বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো মা’য়ের শান্ত গালে। ধীরে ধীরে দৃষ্টি নিচের দিকে নামালো অতি সুক্ষ্ম ভাবেই নজরে পড়লো মা’য়ের বক্ষঃস্থলের ক্ষতের দিকে৷ যেই বুকে পরম শান্তিতে সে হেসেছে,কেঁদেছে, দিনশেষে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে। তার এই পরম সুখময় জায়গাটি’কে এভাবে ধ্বংস করতে একটুও কি বুক কাঁপেনি জমিদারের? ভেবেই কম্পিত হস্তে ক্ষত হওয়া বুকের স্থানটিতে হাত চেপে ধরলো শাহিনুর৷ যখন সে হাতটি ওঠিয়ে হাতের তলার অংশ সম্মুখে মেলে ধরলো পুুরো শরীর অসাড় হয়ে আসলো তার। ব্যথাহত কন্ঠে মৃদু চিৎকার করে বললো,
-‘ আম্মাগো! কতো কষ্ট তুমি পাইছো আম্মা। ‘
পুরো শরীর ভয়ংকর রক্তে মাখামাখি। শাহিনুর সে শরীরে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে কিছুক্ষণ আদর করলো, কিছুক্ষণ কাঁদলো। কিছুক্ষণ নিথর রক্তাক্ত বুকটায় মাথা রেখে চুপটি মেরে রইলো। অপরূপা শারমিন বাইজি’র রক্তাক্ত দেহ দেখে তার সুশ্রী কন্যার মুখটাও নিমিষে বিধ্বস্ত হয়ে ওঠেছে। যে বাইজি গৃহের আনাচে-কানাচেতে সর্বক্ষণ ঘুঙুরের আওয়াজে মুখরিত থাকতো, যে গৃহের প্রতিটি রুদ্ধদ্বার শাক্ষি থাকতো সর্বোচ্চ ঘৃণ্যতম ঘটনার, যে বাইজি গৃহে জমিদারের পুত্র’রা অশ্লীলতার সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে যেতো। যে গৃহের গোপন পাপের খবর জমিদার’রা এবং বাইজি গৃহের সদস্যরা ছাড়া জানতে পারেনি কেউ, সেই গৃহের প্রতিটি কোণায় কোণায়, প্রতিটি ইষ্টকে আজ যেনো মৃত্যু শোক! একটি গাছের আগা যতো নড়বড়ে থাকুক না কেন যতোক্ষণ গোড়া শক্ত থাকবে ততোক্ষণে তার বিনাশ নেই। কিন্তু গোড়া বিহীন আগা টিকিয়ে রাখার জেদ মৃত মানুষ জিন্দা করার মতোই। যা কখনো, কোনকালেই সম্ভব হবার নয়। পল্লব এবং পলাশ চৌধুরী অলিওরের মৃত দেহটি নিজেদের গৃহে নেওয়ার ব্যবস্থা করলো। ভৃত্যদের দিয়ে অলিওরকে নিজেদের গৃহেও নিয়ে গেলো। মহিলা ভৃত্যরা অরুণা আর প্রেরণাকে নিয়ে গেলো। জমিদার এবং বাইজি শারমিন শায়লার মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করলো পলাশ চৌধুরী। পুলিশের নিকট সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনাও করলো সবটা। বললো, অলিওরের বাইজি গৃহে শারমিন আর থাকতে চাচ্ছিলো না। অলিওরও তাকে এ গৃহ থেকে বিদায় দিতে ইচ্ছুক ছিলো না। তাই দু’জনের মধ্যে বেশ ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এক কথায়, দু’কথায় শারমিনই আগে আঘাত করে অলিওরকে। কিন্তু সে জমিদার, তলোয়ার তার চেয়ে ভালো ব্যবহার করবে সামান্য বাইজি? তাই জীবন দিয়ে হলেও তার সঙ্গে করা বেয়াদবির শাস্তি দিয়েছে অলিওর। আর যাইহোক এক বাইজির কাছে জমিদার কখনো হার মানবে না। পুলিশ’কে টাকা খাওয়ালো পলাশ চৌধুরী। যাতে এই খ’নগুলোর জন্য তদন্ত না হয়। টাকা খাওয়িয়ে মিথ্যা কথায় ভুলিয়ে পুলিশদের পাঠিয়ে দিলেও, গ্রামের মানুষ’দের বোঝাতে পারলেও প্রেরণা আর অরুণা’কে সত্যি বললো পলাশ। শারমিন বাইজির হাতে অলিওর প্রথম আঘাত পেলেও শারমিন’কে রঙ্গন এবং অলিওর দু’জনই খু’ন করেছে। আর অলিওরও বাঁচতে চায়নি বলে শেষে নিজেই নিজের দেহে শেষ আঘাত করেছে। পলাশের মুখে সবটা শুনে অরুণা, প্রেরণা সবটা বিশ্বাস করতে বাঁধ্য হলো। কারণ তারা জানে অলিওর চৌধুরী শারমিন’কে মন,প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো। শারমিনের প্রতি তার তীব্র আকর্ষণ বহুবছরের। আর শারমিন বাইজির ব্যক্তিত্ব সম্পর্কেও নিখুঁত ধারণা রয়েছে তাদের। তাই শারমিনের দ্বারা জমিদারের এই মৃত্যু অসম্ভব কিছু নয়৷ আর পলাশের বর্ণনা অনুযায়ী শারমিনের এমন মৃত্যুও বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু সবশেষে বিপদ রইলো রঙ্গনের জন্যই তাই আসল সত্যিটা চাপা রইলো অরুণা,প্রেরণা আর পলাশ চৌধুরী’র মধ্যে।
[ ৩৬ ]
জমিদার অলিওর চৌধুরী’র মৃত্যু সংবাদ শুনে শতশত মানুষ জনের ভীড় পড়লো জমিদার বাড়িতে। রোমানার মৃত্যুর পর আরো একটি মৃত্যুর শোকে পাঁচফোড়ন গৃহের অবস্থা খুবই বেদনাপূর্ণ হয়ে ওঠলো। অঙ্গনের অবস্থা দ্বিগুণ খারাপ হয়ে গেলো৷ প্রণয় দু’জন নার্স’কে খবর পাঠাতেই তারা এসে অঙ্গন’কে সামলালো। এদিকে প্রেরণা,অরুণা দু’জনই ভীষণ ভেঙে পড়েছে। পল্লব, পলাশ আর প্রণয় মিলে সবটা সামলাচ্ছে। রঙ্গনের কথা ওঠতেই প্রেরণা জানিয়েছে তাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজে শহরে পাঠিয়েছে সে। তাকে যেনো কোনক্রমেই বাবার মৃত্যু সংবাদ না জানানো হয়। যদিও মা’য়ের বলা মিথ্যা কথাটি ধরে ফেলেছে প্রণয় কিন্তু তার মা কেন রঙ্গন’কে নিয়ে মিথ্যা বললো? তাহলে কি আড়ালে ভয়ংকর কিছু ঘটেছে? খালি চোখে যা সহজভাবে দেখা যাচ্ছে তার ভিতরেও কঠিন কোন সত্য রয়েছে? এসব প্রশ্ন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠলেও চুপ রইলো প্রণয়৷ সকল আত্মীয়, স্বজন, অলিওরের শহুরে বন্ধু-বান্ধব সকলের উপস্থিতি’তে জানাজা পড়িয়ে জমিদার বাড়ির গোরস্থানে কবর দেওয়া হলো অলিওর চৌধুরী’কে। বাড়ির বউদের দায়িত্ব দেওয়া হলো দুই শাশুড়ি মা’কে সামলানোর। শারমিন বাইজির কবর দেওয়া হলো বাইজি গৃহের পিছনে। যেখানে পূর্ব বংশের জমিদার’রা শতশত বাইজি’কে খুন করে মারিতে পুঁতে দিয়েছে সেখানেই জানাজা পড়ে স্বাভাবিকভাবে কবর দেওয়া হলো শারমিন’কে। যা পুরোটাই প্রণয় নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করেছে। পল্লব বা পলাশ কারোরি মত ছিলো না এতে। তাদের কথা ছিলো কোনরকম পুঁতে দেবে, তবে এতে ঘোর বিরোধিতা করে প্রণয় সম্মানের সঙ্গে জানাজা পড়ানোর ব্যবস্থা করে অতঃপর কবর দেওয়া হয়। বাইজি গৃহের সকল কার্যক্রম সাতদিনের জন্য বন্ধ থাকবে এটাও ঘোষণা করে দেয় প্রণয়৷ এতে পলাশ তীব্র প্রতিবাদ জানালে প্রণয় তাকে বেশ কঠিন গলায় সংযত থাকতে বলে।
বদ্ধ ঘরে নিশ্চুপ হয়ে বসে একধ্যানে নিজের হাতে থাকা তলোয়ারটির দিকে তাকিয়ে আছে শাহিনুর৷ অবিরতভাবে কাঁপছে তার হাতটি। তবুও চেষ্টা করছে নিজের হাতটিকে নিয়ন্ত্রণ করার। আজ চোখের সামনে নিজের মা’কে বাইজি গৃহের পিছনে কবর দিতে দেখলো সে। গতরাতে যে মানুষ’টার আদরে মাখামাখি হয়ে ছিলো,তীব্র জ্বরের ঘোরেও বারংবার যে মানুষ’টার স্নেহের স্পর্শ অনুভব করেছে, প্রানখুলে শেষবার যাকে আম্মা আম্মা ডেকে বিনিময়ে পেয়েছে মাতৃস্নেহ, একরাতের ব্যবধানে,দীর্ঘ তন্দ্রাঘোর কাটতেই যখন সেই মানুষ’টার ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত প্রাণহীন, নিথর দেহটি চোখের সামনে ভেসে ওঠলো, কলিজায় ঠিক কয়টা ছিদ্র হয়েছে জানেনা শাহিনুর। কিন্তু যে ক্ষত,যে ছিদ্র তার কলিজাতে হয়েছে এ জীবনে কোন কিছুর বিনিময়ে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়৷ রক্তেমাখা তলোয়ারটি আঁচল দিয়ে সযত্নে মুছতে মুছতে শাহিনুর বললো,
-‘ আম্মা তুমি অন্ধকারে ওখানে থাকতে ভয় পাচ্ছো? ভয় পেওনা আম্মা আমি এখুনি আসছি। ‘
দুর্বলচিত্তে ওঠে দাঁড়ালো শাহিনুর। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিমিয়ে ওঠলো তার৷ তবুও পাত্তা দিলো না। গোপনীয় ভাবে তলোয়ারটি তুলে রেখে পা বাড়ালো মা’য়ের কবরের উদ্দেশ্যে। যদিও মান্নাত তাকে খুব বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখে গিয়েছিলো। দরজা আঁটকে বসে থাকতে বলেছিলো। সে ব্যতিত কেউ এলে যেনো দ্বার না খুলে এ বিষয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞাও করেছিলো৷ কিন্তু মাতৃহারা অবুঝ শাহিনুরের তখনো চৈতন্য ফেরেনি। শারমিনের অবর্তমানে মান্নাত কতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারবে শাহিনুর’কে জানেনা। তবে সে পণ করেছে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ মূহুর্ত অবদিও সে নুরের পাশে থাকবে৷ তাই তো ঘরে এসে নুর’কে না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে শারমিনের কবরস্থানে ছুটে যায় সে৷ সেখান থেকে নুর’কে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরে নিয়ে আসে৷ সারারাত মেয়েটা’কে বোঝায়। জীবন সম্পর্কে ধারণা দেয়। এজন্য অবশ্য তার জীবন বৃত্তান্তও পুনরায় আবৃত্তি করে।
[৩৭]
অলিওর শারমিনের মৃত্যুর চতুর্থ দিন আজ৷ রোজ রাতে মান্নাত’কে ফাঁকি দিয়ে মা’য়ের কাছে আসে শাহিনুর৷ কবরের ওপর মাথা রেখে কখনো নিশ্চুপ থাকে, কখনো বা অভিযোগ করে,কখনো আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। আজো এসেছে শাহিনুর৷ কবরের পাশে বসে মাথাটা কবরের ওপর রেখে শুয়ে আছে৷ দৃষ্টিজোড়া বদ্ধ। বাইজি গৃহে আজ চারদিন পর প্রবেশ করলো পলাশ৷ সকল বাইজিদের মুখে বিষাদ ভাব দেখে বিরবির করে কিছু গালিগালাজ করতে করতে শারমিনের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। কারণ সে নিশ্চিত শাহিনুর’কে ঠিক সেখানেই পাবে৷ কিন্তু যখন শাহিনুর’কে পেলো না। তখন মান্নাত’কে ডাকলো। মান্নান শঙ্কিত হয়ে ছুটে এসে শাহিনুর’কে না পেয়ে কিঞ্চিৎ স্বস্তি পেলো। আবার দুঃশ্চিন্তাও হলো। পলাশ অশ্লীল ইশারায় মান্নাত’কে প্রশ্ন করলো,
-‘ নুর কোথায়? ‘
মান্নাত তেজি কন্ঠে বললো,
-‘ জানিনা আর জানলেও তোমাকে বলবো না। ‘
মান্নাতের এরূপ জবাবে আচমকা ক্ষেপে গিয়ে তার চুলের মুঠী শক্তহাতে চেপে ধরলো পলাশ৷ এক ধাক্কায় ঘরের ভিতর ধাক্কা দিয়ে ফেলে বাইরে থেকে দরজা আঁটকে দিলো। মান্নাত হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো দ্বারে কড়াঘাত করতে করতে বললো,
-‘ তুমি এমনটা করোনা পলাশ দোহাই তোমার। হে আল্লাহ তুমি নুরের সহায় হও। ‘
বিকৃত ভঙ্গিতে হেসে ওঠলো পলাশ চারিদক তাকিয়ে হুংকার ছাড়লো,
-‘ আমাকে ছাড়া এই দরজা কেউ খোলার সাহস দেখাবি তো শারমিন বাইজির বুকে পাঠাই দিব একদম। ‘

পুরো গৃহ তন্নতন্ন করে খুঁজলো পলাশ, কোথাও পেলো না নুর’কে। শেষে কি ভেবে যেনো পা বাড়ালো বাইজি গৃহের পশ্চাতে। জোৎস্নার রাত্রিতে কবরের পাশে চুপটি করে শুয়ে আছে শাহিনুর৷ স্বল্প আলোতে স্পষ্ট শাহিনুর’কে দেখতে পেয়ে মনে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করলো পলাশ। নিঃশব্দে পা এগিয়ে একদম শাহিনুরের পিছনে হাঁটু গেঁড়ে বসলো। থেকে থেকে ফোঁপাচ্ছে শাহিনুর৷ যার ফলে থেকে থেকে তার শরীরও মৃদ্যুভাবে কাঁপছে। পরনে অতি সাধারণ একটি সুতি শাড়ি আঁচল পেরে মাটিতে শোয়ার ফলে ধবধবে ফর্সা মেদহীন কোমরের কিছু অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে। পলাশের অশ্লীল দৃষ্টিজোড়া সর্বপ্রথম সেখানেই পড়লো৷ এক হাঁটু মাটিতে গেঁড়ে বসে কিঞ্চিৎ মাথাটা ঝুঁকিয়ে ডান হাত বাড়িয়ে নিবিড়ভাবে খামচে ধরলো শাহিনুরের কোমল, মসৃণ কোমরে। মৃদ্যু সুরে আর্তনাদ করে ওঠলো শাহিনুর৷ বড়োসড়ো বলপূর্ণ হাতের থাবা এবং নখের আঁচড়ে কোমরের কিছু অংশে নখ ডেবে রক্তপাতও ঘটলো। পলাশ শাহিনুরের আঁতকে ওঠায়,মৃদ্যু আর্তনাদ শোনায় অশ্লিলভাবে অধর কামড়ে ধরলো। শাহিনুরের দিকে আরেকটু ঝুঁকে লম্বা এক নিঃশ্বাস নিলো। বললো,
-‘ আজ এই জোৎস্নামাখা রাতটি স্মরণীয় হবে তোমার আমার মাখামাখি তে!’

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।