A Destination Wedding | পর্ব – ১২

8 Min Read

কারণ আয়রা ওর সর্বশক্তি দিয়ে আদিয়াতকে কষে থাপ্পর মেরেছে রাগে ওর পুরো শরীর কাঁপছে।একটা মেয়ের যে এতো রাগ আর এতো শক্তি থাকতে পারে তা আয়রাকে না দেখলে বোঝায় যাবে না।
বাসার সবাই আদিয়াতের উপরে খুব রেগে আছে।আর তিয়াশা তো কেঁদেই যাচ্ছে।আম্মুরা সবাই তিয়াশাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
হঠাৎই তিয়াশা ওর বাচ্চাকে ফুপির হাতে দিয়ে আদিয়াতের সামনে গিয়ে দাড়ালো।আদিয়াত মাথা নিচু করে আছে।
তিয়াশা:আচ্ছা আমার কি ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিল,আমি কি কখনো তোমার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেছি?বলো?আমার কি দোষ ছিল এতোকিছুতে?আমাকেই কেন বলির পাঠা বানালে তুমি,নিজের পরিবারকে ছেড়ে তোমাকে বিয়ে করেছিলাম।কারণ,আমি তোমাকে ভালোবাসি।প্রেগ্ন্যাসির সময়েও তুমি আমার পাশে ছিলে না।তোমার জন্য নিজের পরিবারকে ছেড়েছি।তবুও কেন তুমি আমাকে এইভাবে ঠকালে?বলো?উত্তর দাও আমার প্রশ্নের?(চিল্লিয়ে বলেই আদিয়াতের গালে একটা চর বসিয়ে দেয়)
এরপরই আদিয়াতও একই ভাবে চিল্লিয়ে বলে উঠে,,,,,
আদিয়াত:ব্যস!অনেক বলেছো তোমরা।এইবার আমার বলার পালা।কি পেয়েছো টাকি তোমরা?আমি খেলনা পুতুল যে যেভাবে চালাবে সেইভাবেই চলবো।আমারো মন আছে।আমিও জানি ভালোবাসতে।তবে আমি একটা ভুল করেছি সেইটা হলো তিয়াশাকে বিয়ে করা।আমি তিয়াশাকে হুযুকের বসে বিয়ে করেছিলাম ওর প্রতি আমার কোনোকালেই ভালোবাসা ছিলো নাহ।বরং যা ছিলো সব আবেগ।আমি আয়রাকে দেখার পর ওর প্রতি একটা টান অনুভব করেছি যা কখনোই তিয়াশার প্রতি হয়নি আমার।আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারি যে আমি তিয়াশাকে নয় বরং আয়রাকে ভালোবাসি।আমি তিয়াশাকে ডিভোর্স ও দিতাম।কিন্তু সেখানে বাধ সাজে আমার আর তিয়াশার একমাত্র সন্তান “আদিশা”।হ্যা,আদিশার জন্যই আমি তিয়াশাকে ডিভোর্স দিতে পারিনি।কিন্তু আমি জানতাম যে আরুশ যখন এসেছে তখন আয়রাকে আমার থেকে কেড়ে নিবেই।তাই আমি আয়রাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই।কিন্তু আমার সব প্ল্যান ভেস্তে যায় আরুশের জন্য।(বলেই আদিয়াত আরুশকে মারতে যায়)
অমনি দুই ভাইয়ের মারামারি শুরু হয়।সবাই ওদেরকে আটকাতে যায়।কিন্তু কেউ ওদেরকে আটকাতে পারছে না।তখনই আয়রা আদিয়াত আর আরুশের মাঝখানে গিয়ে দাড়ায়।আর আবারো একটা চর দিয়ে বসে।তবে এইবার আদিয়াতকে নয় বরং আরুশকে মেরেছে আয়রা।এইটা দেখে আরুশসহ সবাই অবাক হয়ে যায়।
আয়রা:আমি আজ এখানে খুব সম্ভবত সার্কাসের জোকার।রাইট?নাহলে আমাকে নিয়ে এতো ঝামেলা কেন হবে?হুয়াই?আমার মধ্যে এমন কি আছে যে সবাই আমাকেই ভালোবাসে।আমি তো কোনো মিস ওয়ার্ল্ড নই।তবে কেন আমাকেই সবাই কাঠগড়ায় দাঁড় করায়?কেন?কেন?কেন?
আমি কিন্তু এমনিতেও এই বিয়েটা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম।আর আরুশ,তুমিই সেই ” মি.পার্ফেক্ট” তাইনা।হুম।আমিও তোমাকে ভালোবাসি,তবে তা কখনো কাউকে বলিনি।কারণ আমি ভেবেছিলাম আমি তো তোমাকে পাবোইনা তবে কেন সবাইকে জানাবো তোমার কথা।তাই আমি এক প্রকার জেদের বশবর্তী হয়েই আদিয়াতকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই শুধুমাত্র তোমাকে ভোলার জন্য।কিন্তু আজ আমার সাথে যা যা হলো তাতে করে আমি আদিয়াত আর আরুশ দুজনকেই হেট করি।ইয়েস! আই হেই ইউ আরুশ অ্যান্ড আদিয়াত।
এই বলে আমি চোখের পানি মুছে এক দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায় আমার সেই প্রাণপ্রিয় জায়গায় যেখানে আমি মন খারাপ হলেই চলে যায়।আমি জানি আমার পিছু পিছু সাদাফরাও আসছে।
অন্যদিকে আরুশদের বাসায়,,,,,,
বাসায় পিনপতন নিরবতা চলছে।সবাই চুপ করে বসে আছে।হঠাৎই মি.ফাহিম জামান যিনি তিয়াশার বাবা।তিনি বলে উঠলেন,,,,
মি.ফাহিম:তিয়াশা,তুমি আমার একমাত্র সন্তান।তোমাকে আমি কখনোই কোনো কিছুর অভাব বুঝতে দেইনি।সব সময় তোমার কোনো কিছু চাওয়ার আগেই সেটা তোমার সামনে এনে দিতাম আমি চর তোমার মাম্মি শুধুমাত্র তোমার জন্য দ্বিতীয় আর কোনো সনৃতান নেইনি।যেন আমাদের সবটুকু সময় আর ভালোবাসা শুধু তোমাকেই দিতে পারি।তোমাকে স্বাধীনভাবে চলতে দিয়েছি।কখনো কোনো কাজে তোমাকে বাঁধা দেইনি আমরা।তার পরেও তুমি এমনটা কেন করলে?উত্তর দাও(শান্ত গলায়)
তিয়াশা ওর পাপার কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলো।আর অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলো।
এর মাঝেই মি.আবরার আহমেদ বলে উঠলেন,,,,
মি. আবরার:আদিয়াত আর আরুশ।আমরাও কিন্তু তিয়াশার মতো করেই তোমাদের দুজনকে মানুষ করেছি।কিন্তু আদিয়াত,তুমি তো মানুষ হওনি।বরং হয়েছো একটা অমানুষ।তুমি কি করে পারলে নিজের আপন ছেট ভাইয়ের ভালোবাসা নিয়ে এইভাবে খেলতে?আর কিভাবেই বা তুমি তিয়াশার জীবনটা শেষকরতে পারলে?সেই অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?আমরা কি তোমাকে এই শিক্ষা দিয়ে বড় করেছি?বলো?(কঠোর গলায়)
মি.আবরারের কথা শুনে আদিয়াত কিছু না বলে চুপ করে রইলো।মি.আবরার আবরার আবার বলতে শুরু করলেন,,,,,,,
মি.আবরার:আর আরুশ তুমি খুব ব্রিলিয়ান্ট একজন ছেলে।তবে তুমি কি করে পারলে এতো কিছু জানার পরেও চুপ করে থাকতে?তুমি কেন আমাদেরকে কিছু জানাওনি?(আরুশের দিকে তাকিয়ে)
আরুশ:আসলে ড্যাড,আমি এই পুরো ব্যাপারটা নিজের হাতে হ্যান্ডেল করতে চেয়েছিলাম।তাই তোমাদের কাউকে কিছু জানায়নি।(নিচু কন্ঠে)
এই শুনে মি.আবরার বললেন,,,,
মি.আবরার:বেশ।তবে তোমরা সবাই উপরে যাও।আমরা বড়রা এখানে কিছু কথা বলবো।
এই শুনে আরুশরা উপরে চলে যায়।আর বাকি সবাই নিচে বসে কিসব আলোচনা করতে থাকে।প্রায় আধা ঘন্টা পর আরুশদের ডাকা হলে ওরা নিচে আসে।
মিসেস রাইমা:আদিয়াত আর তিয়াশা।আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তোমাদের দুজনের আবার সব আচার-অনুষ্ঠান মেনে বিয়ে দিবো আমরা।
আদিয়াত:অসম্ভব।আমি তিয়াশাকে ডিভোর্স দিবো।
তিয়াশা:বাহ মি.আদিয়াত আহমেদ আহিল স্যার।আপনার কথা শুনে আমি ধন্য হয়ে গেলাম।আচ্ছা আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন তাইতো?আরে আপনি কি ডিভোর্স দিবেন আমায়?আমি নিজেই তো আপনার মতো ক্যারেক্টারলেস একজন মানুষকে ডিভোর্স দিবো।আমি একাই আমার সন্তানকে মানুষ করতে পারবো।চাইনা আমি আপনার ছায়া আমার সন্তানের গায়ে পরুক।আমি খুব শিঘ্রই আপনাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো।(কাঁদতে কাঁদতে)
তিয়াশার কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে যায়।
আরুশ:তুই এসব কি বলছিস তিশু?মাথা ঠিক আছে তোর?
তিয়াশা:আমার মাথা একদম ঠিক আছে দাভাই।তুমি আমাকে আর একটা হেল্প করো।আমাকে একটা জব অ্যারেন্জ করে দাও।
মি.ফাহিম:তোমার কাছে কি সবই ছেলেখেলা তিয়াশা?তুমি কি করে পারবে একজন সিংগেল মাদার হয়ে নিজের সন্তানকে বড় করতে?আর লোক সমাজ বলেও একটা কথা আছে নাকি(কঠোর কন্ঠে)
তিয়াশা:পাপা,,,আমি পারবো আমার সন্তানকে একাই বড় করতে।আর লোক সমাজের কথা বলছো?আমি আদিশাকে নিয়ে আবার খুলনাতে ফিরে যাবো।ওখানেই একটা জব খুজে নিবো।এতে তো তোমাদের আর ফেস লস হওয়ার কথা নাহ।
হঠাৎই তিয়াচার গালে কেউ চর বসিয়ে দেয়।আমরা সবাই তাকিয়ে দেখি ফুপি মেরেছে তিয়াশাকে।
মিসেস তামিমা:কি মনে করো তুমি নিজেকে?আমরা কি সবাই মরে গেছি যে তুমি আমাদের নাতনিকে নিয়ে ওতো দূরে চলে যাওয়ার কথা ভাবছো?তুমি আর আদিশা আমাদের সাথেই থাকবে।বুঝতে পেরেছো?(তিয়াশার মাম্মি)
তিয়াশা আর না পেরে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলো।
তিয়াশা:আমি কি করবো মাম্মি?আমি যে ভালোবেসে ঠোকে গেছি।আমার সন্তান বড় হলে কি জানবে?ওর বাবা থেকেও নেই?ওও বাবার ভালোবাসা কখনোই পাবে না?কেন করলো আদিয়াত এমনটা?কেন করলো?কেন?(কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলে গেছে)
মিসেস রাইমা এসে তিয়াশার মাথায় হাত রাখলো,,,
মিসেস রাইমা:কে বলেছে মা যে তোর কেউ নেই।আদিশার কেউ নেই।তোদের সবকিছু আছে।আমার তো লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে,আমার পেট থেকে এমন কালসাপ জন্মেছে তা ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে।(চোখের পানি মুছতে মুছতে)
মি.আবরার:আদিয়াত বলতে আজ থেকে আমাদের আর কোনো সন্তান নেই।আমাদের আজ থেকে একটায় সন্তান আরুশ।আর তিয়াশা আর আদিশা আমার বাসাতেই থাকবে।আমার বউমা আর নাতনি কোথাও যাবে না।
আদিয়াত তুমি আজ এবং এই মুহূর্তে আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাও।
আদিয়াত এই কথা শুনে অবাক নয়নে ওর বাবার দিকে তাকালো।
আদিয়াত:ড্যাড,,তুমি এইসব কি বলছো?
মি.আবরার:আমি কি বলছি তুমি শুনতে পাওনি?এই মুহূর্তে আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাও।আমি যেন তোমার মুখও আর কখনো না দেখি।(চিৎকার করে)
আদিয়াত ওর মায়ের দিকে তাকায়।সেও মুখ ফিরিয়ে নিলে আদিয়াত রাগে হনহন করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
আর তিয়াশাকেও কেউ কোথাও যেতে দেয়না।মিসেস রাইমা তিয়াশাকে এই বাসাতেই রেখে দেয়।আর বলে, আজ থেকে এইটা আমার বউমা আর নাতনিরও বাসা।ওরা এখন থেকে এখানেই থাকবে।
এরপর আস্তে আস্তে সবাই যে যার রুমে চলে যায়….

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।