A Destination Wedding | পর্ব – ৩

7 Min Read

আমি পড়ছিলাম,,,,এর মাঝেই আমার ফোনে কল আসলো।আমি নাম্বারটা চেক করে দেখি ঐশি কল দিয়েছে।আমি রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো,,,,
ছেলেটি:হ্যালো,,,আসলে এই ফোনটা যার তার একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।সে এখন “ইবনে সিনা” হসপিটালে অ্যাডমিটেড।
এই কথাটা শুনতেই আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।আজ সকালেও তো মেয়েটা কতো হাসি-খুশি ছিলো।আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম,,,,,,
আমি:আপনি কি করে ওর ফোনটা প,,পপ,,,পেলেন(কাপা কাপা সুরে)
ছেলেটি:আমি এই হসপিটালের একজন ডক্টর।আর ওনাকে যখন কিছু লোকজন নিয়ে আসলো,,,তখন তার সাথে একটা ব্যাগ ছিলো।সেখানেই এই ফোনটা পেলাম।আর প্রথম নাম্বারটা আপনারই ছিলো।
আমি:ওকে,,,ওকে,,,,আমি এক্ষুনি আসছি।
এই বলেই আমি বোরকা আর হিজাবটা কোনো রকমে পড়ে হ্যান্ডব্যাগটা নিয়ে আমাদের একটা গাড়ি নিয়ে তারাতারি হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।ইতোমধ্যে আমি সাদাফ,ঝিনুক,আরিয়ান,ইভা,আয়মান সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি।ওরাও আসছে।আমি হসপিটালে পৌঁছেই ঐশির নাম্বারে কল করতেই ঐ ডক্টর রিসিভ করলো,,,,আর আমাকে বলে দিলো যে ঐশি কোন ফ্লোরের কত নাম্বার রুমে আছে।আমি ঐ রুমে গিয়ে দেখলাম যে একজন ইয়াং ছেলে এপ্রন পড়ে ঐশির বেডের সামনে দাড়িয়ে ফাইল চেক করছে।আমি কাছে গিয়ে বললাম,,,,,
আমি:এক্সকিউজ মি.আমি আয়রা।যাকে আপনি কল করেছিলেন।
ডক্টর:আমি পেশেন্টের ফাইল চেক করছিলাম,,,এমন সময়ই একটা কোমল কন্ঠস্বরের মেয়ের কথায় আমি পেছনে তাকালাম।মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে নাহ।তার মুখটা নিকাবের আড়ালে ঢাকা।কিন্তু আমি অবাক হলাম তার চোখ দুটো দেখে।কারণ এই একই চোখ আয়রার ওও দেখেছিলাম আমি।।ওয়েট ওয়েট,,,এই মেয়েটাও তো বললো যে ওর নাম আয়রা।তার মানে কি এই সেই মেয়ে?
আমি:আচ্ছা ডক্টর,,,ঐশির আই মিন ওর কি হয়েছে?(ঐশির বেডের দিকে ইশারা করে)
আয়াজ:আসলে উনি রাস্তা পার হচ্ছিলেন আর এমন সময়-ই আমার বাইক ওনার সামনে এসে পড়ে।এতে উনি ব্যালেন্স রাখতে না পেড়ে পড়ে যান আর তখনি উনার মাথা রাস্তায় থাকা একটা পিলারের সাথে বাড়ি খেয়ে সেন্স হাড়িয়ে ফেলেন।এরপর আমি কিছু লোকের সহায়তায় ওনাকে হসপিটালে নিয়ে আসি।
আমি আর ডক্টর পিছনে ফিরে দেখি একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।পরনের সাদা শার্টে হালকা রক্ত লেগে আছে।হয়তো ঐশিকে কোলে করে নিয়ে আসছিল আর তখনই রক্ত লেগে গেছে।দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম।দেখে মনে হচ্ছে রিচ ফ্যামিলি থেকেই বিলং করে।
যাই হোক,,,এরপর আমি ঐ ছেলেটার কাছে গিয়ে বললাম,,,,
আমি:একটু সাবধানে বাইক চালাবেন।নয়তো পরবর্তীতে এর থেকেও বেশি কিছু হয়ে যেতে পারে।সো,বি কেয়ারফুল।
আয়াজ:হুম,,,সরি।আসলে আমার একটু তাড়া ছিল(মাথা নিচু করে)
আমি অবাক হয়ে গেলাম।আজ-কালকার ছেলেরা এতোটাও ভালো হয়।বাব্বাহ,,,,ইম্প্রেসিভ!!
আমি:ইট’স ওকে।বাই দ্যা ওয়ে,,,আমি আয়রা,,,ঐশি মানে যার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে তার বেস্টু।আর আপনি?
আয়াজ:আমি আয়াজ ইসলাম শান্ত।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:ওহ আচ্ছা,,,আমি আর কিছু বলতে যাবো তার আগেই ঐশি আমাকে ডেকে উঠলো।ওর ডাকে আমরা সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখি ঐশির জ্ঞান ফিরেছে।আমি তাড়াতাড়ি করে ওর কাছে যাই।
আমি:কিরে,,,তুই ঠিক আছিস তো?মাথায় কি ব্যাথা করছে?কোনো প্রবলেম হচ্ছে?
ঐশি:আরে থাম থাম,,,একসাথে এতো প্রশ্ন করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবো হ্যা,,,
আমি:সব কিছুরই উত্তর দিবি,,,বুঝলি।
ঐশি:হুম আমি ঠিক আছি,,,মাথায় হালকা ব্যাথা করছে।বাট এছাড়া আর কেনো প্রবলেম হচ্ছে নাহ।
আমি আর কিছু বলতেই পারলাম নাহ।কারণ ততক্ষণে ঝিনুকরা সবাই চলে এসেছে।এসেই বেচারিকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে।আর আমি শুধু ওদের কান্ড দেখছি।কারণ আমরা সবাই এমন-ই।আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে যদি একজনের কিছু হয় তো বাকি সবাই অস্থির হয়ে যায়।আমি সত্যি এমন ফ্রেন্ড সার্কেল পেয়ে খুব খুব লাকি।
আয়মান:আরে এই ছেলেটা কে?(আয়াজের দিকে উদ্দেশ্য করে)
ঐশি:আয়মানের কথা শুনে আমি সামনে তাকালাম।তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।দেখতে ভিষণ কিউট।পরনে ওয়াইট শার্ট,ব্ল্যাক জিন্স,পায়ে ওয়াইট সু,চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা।মুখে হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।দেখতে বেশ ফর্সা।এক কথায় কিউটের ডিব্বা।হিহিহিহিহি(আমি তো এক দেখাতেই ক্রাশ খেলাম রে)
আমি:ওও হচ্ছে আয়াজ ইসলাম শান্ত।ওর বাইকের সাথেই ঐশির অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল।আর ওও নিজেই আমাদের গলুমলু কিউটের ডিব্বাকে এখানে নিয়ে এসেছে।(আমি সবার দিকে তাকিয়ে)
আরিয়ান:কি ব্রো,,,,দেখে-শুনে বাইক চালাবে তো নাকি।(আয়াজের কাছে গিয়ে)
আয়াজ:আ’ম স্যরি ব্রো।আসলে আজ আমার খুব তাড়া ছিল এইজন্য আমি একটু জোড়ে বাইক চালাতে গিয়ে,,,(অনুতাপের সুরে)
ঐশি:ইট’স ওকে।এরপর থেকে কেয়ারফুল হবেন,,,তাহলেই হবে।(উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে)
ইভা:এই এই তুই উঠছিস কেন হ্যা(ঐশিকে ধরে)
ঐশি:আরে কিছু হবে নাহ।ছাড় তো,,,
আমি:কিছু হবে নাহ মানে,,,চুপ কর তুই(কপট রাগ দেখিয়ে)
সাদাফ:হয়ে গেলো।আমাদের হিটলার কুইন যখন একবার চুপ করে থাকতে বলেছে,,,তার মানে সেইটা তো মানতেই হবে।নয়তো আমাদের কপালে শনি আছে।(টিটকারি করে)
আমি:সাদাফের দিকে রাগি চোখে তাকালাম।আর তখনই ওও আমাকে চোখ মারলো।ফাজিল কোথাকার।হুহহহহহহহহ
আয়াজ:আচ্ছা আমি তাহলে এইবার আসি।
সাদাফ:আরে ব্রো যাবে গো নিশ্চয়।তো আমরা তো ফ্রেন্ডস হতেই পারি তাইনা।কি বলিস?(আমাদের সকলের দিকে তাকিয়ে)
সবাই:হুম,,,অবশ্যই।
আয়মান:তো তোমার এফবি আইডিটা দিয়ে যাও।আমরা তাহলে পরবর্তীতে আরো কথা বলতে পারবো।
আয়াজ:হুম,,,আমার আইডির নাম”KingStar Ayaz”
ঝিনুক:বাহ বাহ,,,কিংস্টার।ভালোই তো তাহলে।
আরিয়ান:তা ব্রো তুমি কি করো?আই মিন স্টাডি?
আয়াজ:আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।ফ্রম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
সাদাফ:ওহ আচ্ছা।আমরাও তোমার ব্যাচমেট।আমরা সবাই ঢাকা ভার্সিটির স্টুডেন্ট।
আয়াজ:ওহ ওয়াও।তোমাদের সাথে পরিচিত হয়ে অনেক ভালো লাগলো।নাইস টু মিট ইউ অল।
আমি:সেম টু ইউ।
আয়াজ:আচ্ছা আমাকে এখন যেতে হবে।খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজ আছে।পরে নিশ্চয় কথা হবে।আর দেখাও হবে ইনশাআল্লাহ।বাই গাইস।
ঐশি:ওকেই বাই।
সবাই:বাই বাই
এরপর আয়াজ চলে গেলো।
আর আমরাও ডক্টরের সাথে কথা বলে সব ফর্মালিটি ফিলআপ করে ঐশিকে নিয়ে বের হয়ে আসলাম।আমি হসপিটাল থেকে বের হতে যাবো এমন সময়ই ডক্টর আমাকে ডাকলো।
আমি পিছনে ফিরে বললাম,,,,
আমি:জ্বি,,বলুন
ডক্টর:হাই আমি আদিয়াত।
আমি:আদিয়াত?কোন আদিয়াত?
ডক্টর:”Adiyat Ahmed Ahil”
আমি:ওয়াও,,,তার মানে আজ দুপুরেই যার সাথে আমি কথা বলেছি?(কৌতুহলি হয়ে)
ডক্টর:হুম,,,আমিই সেই আদিয়াত।বাই দ্যা ওয়ে,,,,তুমি কিন্তু খুবই দুষ্টু যা তোমার ম্যাসেজের রিপ্লাই দেখেই বুঝেছি।(আমার দিকে তাকিয়ে হেসে)
আমি:আমিও জানি যে আমি কি পরিমাণ দুষ্টু।ওকেই(আমিও হেসে)
ডক্টর:হুম!বাট তোমার চোখ গুলো খুব সুন্দর।মায়াবী চোখের রাণী তুমি।
আমি আদিয়াতের কথা শুনে কিঞ্চিৎ হাসলাাম।যদিও তা আমার হিজাবের কারণে হয়তো উনি সেইটা খেয়াল করেনি।
আমি:আচ্ছা,,,সে যাই হোক।এখন আমাকে যেতে হবে।রাতে এফবিতে কথা হবে কেমন।আল্লাহ হাফেজ।
এই বলেই আমি হসপিটাল থেকে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
উদ্দেশ্য এখন আমাদের ঐশিদের বাসা।ওকে বাসায় রেখে তারপর আমরা সবাই যে যার বাসায় যাবো!!!

চলবে?????

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।