মানব জীবন বিবর্তনশীল। একটি শিশু জন্মের পর বাবা,মা’য়ের সান্নিধ্যে, ভীষণ আদরে,আহ্লাদে, অতি যত্নসহকারে বেড়ে ওঠে। প্রতিটি মানুষ’ই শিশুকাল থেকে কৈশোরকাল, কৈশোর থেকে যৌবনকাল আবার যৌবন থেকে প্রবীণকালে ধারাবাহিক ভাবে পদার্পণ করে। পরম্পরাক্ৰমে মানুষের জীবনের এক অদ্ভুত, প্রাকৃতিক নিময় এটি৷ এ ধরণীতে মানব জীবনের এই বিবর্তনটি চিরন্তন এক সত্য চিত্র।আবার মানব জীবনের ধারাবাহিক পরিবর্তনের মধ্যে ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটে৷ চক্রবৎ ঘূর্ণ্যমান অদৃষ্ট। মানুষের ভাগ্য চক্রের ন্যায় ঘুরার ফলে প্রতিটি মানুষের ভাগ্যই আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। একজন মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে অপর মানুষের ভাগ্য পূর্ণভাবে মিলতে পারেনা৷ এ পৃথিবী’টা যেমন বিচিত্র তার মানুষগুলোও বিচিত্র। আবার তাদের ভাগ্যের লিখনও বিচিত্রময়। “শারমিন বাইজি” যে মানুষটার জীবন নানা উত্থানপতনের ভীড়েই বিলুপ্ত হয়ে গেলো৷ রেখে গেলো আস্ত এক ভালোবাসাময় ছোট্ট প্রাণ। তার মেয়ে শাহিনুর’কে। ভাগ্যচক্রে যার জীবন’টা অন্যান্য জীবনচিত্রের মতো করে গড়ে ওঠেনি৷ অভিশপ্ত এক গৃহে জন্মেছিলো সে৷ আর সবার মতো বাবার আহ্লাদ সে পায়নি৷ পায়নি সম্মানিত একটি পরিবারের বেষ্টন। কিন্তু মা’য়ের সীমাহীন ভালোবাসা ঘিরে ছিলো তাকে৷ মাতৃস্নেহ, মাতৃ শাসনের আশ্চর্য এক সমীরণেই বেড়ে ওঠছিলো সে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আচমকা সেই সমীরণ যেনো হারিয়ে গেলো। জন্মের পর থেকে থেকে শুধুমাত্র শারমিন’কেই খুব কাছ থেকে জানতো সে৷ তার শরীরের গন্ধে গন্ধে মেখে থাকতো সর্বক্ষণ। যার ঘামযুক্ত বুকেও তৃপ্তিসহকারে নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে থেকেছে। তার জন্মদাত্রী, শ্রদ্ধেয় আম্মা। এ জীবনে সেই মমতাময়ীর ছায়া আর পাওয়া হবে না,পরম স্নেহশীল হাতের স্পর্শটি আর মাথায় রাখবেনা। আশ্চর্যান্বিত হয়ে মুগ্ধ নয়নে আর মা’কে দেখা হবে না৷ প্রচণ্ড ক্লেশবোধ করলেও আদুরে বুকটায় মুখ লুকিয়ে কাঁদতে পারবে না, কখনোই না। মা হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ৷ আর এই শ্রেষ্ঠ সম্পদটি হারিয়ে যাওয়া মানে পুরো পৃথিবী’টাই হারিয়ে যাওয়া৷ নতুন এক পৃথিবীতে পা রেখেছে শাহিনুর। যে পৃথিবীর সর্বত্রই অচেনা, অজানার পরশ। এ পৃথিবীর বাষ্পতেও মিশে আছে অচেনা ঘ্রাণ। দম বন্ধকর, রুদ্ধ পরিবেশে যেনো দগ্ধ মন৷ দু’চোখের কার্ণিশে বেয়ে চলা অশ্রুকণা শুষ্ক হয়ে শুভ্র ত্বকে টান পড়ছে। দেয়ালে পিঠ ঘেষে একধ্যানে মেঝেতে তাকিয়ে আছে শাহিনুর৷ শুষ্ক চোখে,শুষ্ক ঠোঁটে ম্লান মুখে ঠায় বসে আছে সে। যেনো জগৎের কোন কিছুই এ জীবনে আর তাকে আকৃষ্ট করতে পারবে না৷ না হাসি, না কান্না কোন কিছুই খুব করে ছুঁয়ে দিতে পারবে না তাকে৷ এমতাবস্থায় তার এমন মূর্তি দেখলে যে কেউ ধারণা করে নেবে মানুষ টা মৃত৷ এই বিশ্বে জীবিতমৃত উপাধি’তে কিছু মানুষ বসবাস করে। যাদের মৃত্যুটা হয় প্রাণ সমেত মৃত্যু। শাহিনুর আজ যেনো সেই মানুষ’দের তালিকায় নিজের নামটি লিখে দিয়েছে। প্রেমিকের মৃত্যু অনুভূতি প্রেমিকা পেয়েছে। বহু সন্তান পেয়েছে বাবা,মায়ের মৃত্যু শোক। কিন্তু শাহিনুরের এই শোক যেনো একটু অন্যরকম। অল্প বয়সে একমাত্র আপনজন,মা,একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে সে আজ শোকে পাথর মূর্তি ধারণ করেছে।
সূর্যোদয় ঘটেছে মাত্র। মাঝরাত থেকেই স্থিরচিত্তে বসে আছে শাহিনুর। থাইগ্লাসের দেয়ালের এপাশ থেকে ঠিক যেইরূপে শাহিনুর’কে দেখতে দেখতে নিশ্চিন্ত মনে এবং মস্তিষ্কে ঘুমিয়েছিলো প্রণয়, ঘুম ভাঙার পরও একইরূপে আবিষ্কার করলো তাকে। কিঞ্চিৎ বিচলিত হয়ে বিছানা ত্যাগ করলো সে। চারদিকের আবছা আলোয় মৃদ্যু পায়ে এগিয়ে কক্ষের বাতি জ্বালালো। নিমিষেই পুরো কক্ষে ঝকঝকে, চকচকে আলোকচ্ছটায় ভরে ওঠলো। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সঠাম বুক’টায় এক চিলতে স্বস্তি দিলো। মাথা ভর্তি অগোছালো চুলগুলো বা’হাতের পাঁচটি আঙুলের ফাঁকে গুঁজে দিয়ে সুকৌশলে চুলগুলো গুছিয়ে নিলো। পাশাপাশি ডান হাতটি ট্রাউজারের পকেটে সন্তর্পণে গুঁজে দিলো।ঘাড় বাঁকিয়ে নিবিষ্টচিত্তে তাকালো শাহিনুরের পানে। কয়েক মূহুর্ত দৃষ্টিপাত করার পর ভ্রুদ্বয় কুঁচকে গেলো তার৷ চিন্তান্বিত মুখে ক্ষণকাল চেয়ে থেকে বাথরুমে ঢুকে পড়লো৷ কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দরজাসহ আলমারির (কাবার্ডের) দিকে এগিয়ে গেলো। পছন্দ সই কালো রঙের একটি ফুলহাতা শার্ট বের করে সুঠামদেহে সন্তর্পণে পরে নিলো। একে একে প্রতিটি বোতাম লাগালো তবে তার দৃষ্টি স্থির ছিলো শাহিনুরের ঠায় মূর্তির দিকেই। শার্ট পরা থেকে শুরু করে মুখে ছেলেদের স্নো মাখা, চুলে ‘হেয়ার জেল’ দিয়ে চুলগুলো সযত্নে বসানো, হাতে ঘড়ি পরা সবটাই শাহিনুরের দিকে চেয়ে চেয়েই সম্পন্ন করলো। কিন্তু শাহিনুরের কোন ভাবান্তর দেখলো না৷ সে যেভাবে ছিলো ঠিক সেভাবেই বসে আছে৷ একবার প্রণয় ভাবলো মেয়েটা ঠিক আছে তো? আবার শ্বাস-প্রশ্বাসের ভীড়ে শাহিনুরের দেহের অল্প প্রতিক্রিয়া দেখে সে চিন্তা দূরে ঠেলে দিলো। বিরবির করে বললো,
-‘ উফফ জীবন্ত পুতুল একটা! ‘
পরোক্ষণেই বিচলিত হয়ে বললো,
-‘ সারারাত নিদ্রাহীন এভাবে বসে ছিলো? মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়বে তো…। ‘
আর সময় নিলো না প্রণয় ঝটপট কক্ষের বাইরে গিয়ে এক ভৃত্য’কে দিয়ে ডেকে পাঠালো বড়ো ভাবি’কে। মিনিট পাঁচেক পরেই তার কক্ষের সামনে এসে হাজির হলো শবনম৷ গতকালের ঘটনা,আবার প্রাতঃকালেই প্রণয়ের ডাক বেশ চিন্তামগ্ন হয়েই উপস্থিত হলো শবনম। স্বভাবসুলভ মুখে গম্ভীর্যতা বজায় রেখে শবনম’কে অতি জরুরী ভিত্তি’তে শাহিনুরের জন্য নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করতে বললো প্রণয়। শবনম দৃষ্টিজোড়া ছোট ছোট করে ক্ষণকাল তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে৷ সে দৃষ্টির মানেটা সুস্পষ্ট ভাবেই বুঝলো প্রণয়। তাই ঈষৎ হেসে বাঁকা সুরে বললো,
-‘ এভাবে তাকাবেন না ভাবি সাহেবা, এখন অবধিও আপনার এই দেবরটির চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। ‘
মুখোভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেলো শবনমের। কড়া দৃষ্টিতে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। মাথায় দেওয়া ঘোমটা’টা কিঞ্চিৎ সামনের দিকে টেনে নিয়ে নিচু কন্ঠে বললো,
-‘ তাহলে এই চরিত্রে দাগ যেনো না লাগে দেবরজি। লোকে যা খুশি ভাবুক নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার থেকো। দুনিয়ার কোন কলঙ্ক ছুঁতে পারবেনা৷ লোকমুখে দেওয়া কলঙ্ক আশপাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে তাদের কাছেই ফিরে যাবে। ‘
সম্মতি সূচক মাথা কিঞ্চিৎ নিচু করে আবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো প্রণয়। যার মানেটা ‘যথাআজ্ঞা ভাবিসাহেবা’ হিসেবেই ধরে নিলো শবনম। তার সবগুলো দেবরের থেকে এই দেবরটাই বেশ পছন্দনীয়। সবগুলোর চোখের ভাষায় গণ্ডগোল থাকলেও প্রণয়ের চোখে তার জন্য সম্মান ছাড়া কিছুই খুঁজে পায়নি। অনেকেই ভাবির সঙ্গে মা’য়ের তুলনা করে। শবনম তার আচরণ, দায়িত্ব সবটাই সুনিপুণ ভাবে পালন করে যায়। বিনিময়ে কারো থেকেই যথাযথ সম্মান পায় না একমাত্র প্রণয় ব্যতিত৷ বিয়ের এতোগুলো বছর পার হলেও একটা সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি সে৷ যারফলে সন্তানের প্রতি রয়েছে তার অগাধ তৃষ্ণা। প্রণয়,মুনতাহা’কে সে এতো স্নেহ করে যে নিজ সন্তানের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। রোমানা অবশ্য তার বেশী আদুরে ছিলো। যার ফলে রোমানার চলে যাওয়ার ক্ষতটা আজো সারেনি। আজ যখন নিজের জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে প্রণয় কাউকে পাশে পায়নি। কারো সহায়তা চায়নি তখন শুধুমাত্র শবনম’কে ডেকেছে। যে বিশ্বাস নিজের মা’কে করেনি সেই বিশ্বাস শবনম’কে করেছে। এটুকুতেই বুকের ভিতর বড্ড প্রশান্তি অনুভব করলো শবনম। প্রণয়’কে সম্মতি দিয়ে চলে গেলো সে। এখন তার দায়িত্ব তাদের বাড়ির ভৃত্যদের দিয়ে যে মহিলা তাদের বাড়ি’তে নারীদের পোশাকআশাক এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করতে আসে তাকে ডেকে পাঠানো। তারপর শাহিনুরের জন্য নিজ হাতে কেনাকাটা করবে সে৷
[৪১]
ফজরের নামাজ শেষ করে তসবিহ পড়ছিলো অরুণা৷ আর প্রেরণা পালঙ্কে শুয়ে গুণগুণিয়ে কাঁদছিলো। এক পর্যায়ে প্রেরণার কান্নায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠলো অরুণা৷ অসহ্য হয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
-‘ আর কতো কাঁদবি। কাঁদতে কি একটুও লজ্জাবোধ করিস না তুই ছোটবউ? ‘
আগুনের ফলকের মতো ফুঁসে ওঠলো প্রেরণা। শোয়া থেকে ওঠে বসে ক্রন্দনরত কন্ঠে একটু উচ্চস্বরেই বললো,
-‘ আমার ছেলেটা এক বাইজির মেয়ে ধরে আনছে। কি করবো? তারে নাকী বিয়ে করবো! আমার অমন সাহেব ছেলের কি এই মেয়ে বিয়ে করা মানায়? কোথায় ছিলো আমার রোমানা আর কোথায় এই বাইজির ঝি। ‘
-‘ বেশী অহংকার করতে নেই ছোটো তোর অহংকারেই আজ এই দশা। ‘
-‘ তুমি এমন কথা বলছো আপা? ‘
হুহু করে কেঁদে দিলো প্রেরণা। অরুণা মেঝেতে পাটি পেরে বসা ছিলো। পাটি ভাঁজ করে যথাস্থানে রেখে পালঙ্কে এসে প্রেরণার কাছাকাছি বসলো৷ ম্লানমুখে দৃঢ় কন্ঠে বললো,
-‘ মনে রাখিস ছোটো পাপ বাপকেও ছাড়েনা৷ ঐ মেয়ের মা’কে বাইজি হতে বাধ্য করেছিলো আমার শাশুড়ি মা। শারমিন তো জন্মগত ভাবে বাইজি ছিলো না৷ সে অনেক ভালো ঘরের সন্তান ছিলো, বনেদি ঘরের বউ ছিলো। আর তুই ভুলে যাচ্ছিস কেন আমাদেরই জা সে। যে মেয়েটা’কে প্রণয় এ বাড়ি নিয়ে এসেছে সে কিন্তু আমার শাশুড়ির নিজের ভাগিনার সন্তান, নিজের আপন বোনের বংশধর। ‘
কান্না থেমে গেলো প্রেরণার। স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
-‘ সবকিছুর পরও ওর পরিচয় বাইজি কন্যা। তাছাড়া আমরা দু’জন আজীবন ওর মা’য়ের কাছে হেরে এসেছি। স্বামীর পরিপূর্ণ ভালোবাসা পাইনি। শুধুমাত্র ঐ শারমিনের জন্য৷ আর আজ কিনা ওর মেয়ে’কে আমার পুত্রবধূ হিসেবে মানতে হবে। যেখানে ওর স্থান এই জমিদার গৃহে হয়নি সেখানে ওর মেয়ের স্থান হবে? ‘
-‘ সেটাই তো বললাম পাপ বাপ’কেও ছাড়েনা৷ নিরপরাধ শারমিন’কে বাইজিতে পরিণতি করার শাস্তিই আমরা পাচ্ছি। প্রকৃতির এই প্রতিশোধ সহজেই গ্রহণ করে নে ছোটো এতেই মঙ্গল। ‘
-‘ না পারবোনা আমি ঐ মেয়ে’কে পুত্রবধূ হিসেবে মানতে পারবো না। ‘
-‘ তাহলে মাতা, পুত্রের বিচ্ছেদ অনিবার্য! ‘
প্রণয়ের কক্ষে প্রবেশ করার জন্য অবশ্যই অবশ্যই অনুমতি প্রয়োজন। তাই দ্বার উন্মুক্ত থাকাকালীনও প্রবেশ করলো না শবনম৷ শুধু জানালো শাহিনুরের যাবতীয় জিনিসপত্র আনা হয়েছে। অনুমতি পেলেই ভৃত্য কক্ষে পৌঁছে দেবে সব। শাহিনুরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওঠে দাঁড়ালো প্রণয়। দ্বারের কাছে যেতে যেতে বললো,
-‘ ওখানে রেখে দিন সব আমি নিয়ে নিচ্ছি। চটজলদি সকালের খাবার’টা পাঠিয়ে দেবেন। আমি নিচে গিয়ে সবার সঙ্গেই খাবো৷ শুধু ওরটা পাঠিয়ে দিন। ‘
বেশ বড়োসড়ো স্টিলের ব্রিফকেস দ্বারের সামনে রেখে ভৃত্য নিয়ে চলে গেলো শবনম। প্রণয় একহাতে ব্রিফকেস উঁচিয়ে বুঝলো বেশ ভারীই হয়েছে। তবুও সেটা একহাতে নিয়েই শাহিনুরের সামনে গিয়ে উপস্থিত হলো। আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলো প্রণয়৷ এতোক্ষণ সে ও কক্ষে ছিলো তাই না হয় তাকায়নি। কিন্তু এখন যখন ওর সম্মুখে এসেছে ওর কক্ষে এসেছে তবুও কিঞ্চিৎ নড়লো না! গম্ভীর ভঙ্গিতে ব্রিফকেসটা শাহিনুরের সামনে বেশ শব্দ করেই রাখলো। গুরুগম্ভীর ভাবে বললো,
-‘ এখান থেকে যেটা পছন্দ হয় নিয়ে ঐ বাথরুমে গিয়ে কাপড় পাল্টে নাও। পারলে গোসলটাও করে নিও ভালো লাগবে। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি। ‘
আদেশ সূচক কথাগুলো সম্পন্ন করে চলে আসার জন্য উদ্যত হলো। কিন্তু শাহিনুরের ভাবমূর্তি’তে বুঝলো এই মেয়ে প্রচণ্ড মাত্রায় জেদি। ভাঙবে তবুও মচকাবে না৷ আর এ ধরনের সরলা, জেদি, বালিকা’কে ঠিক করতে ব্যতিক্রম মেডিসিনের প্রয়োজন। একজন ডাক্তার হিসেবে মেডিসিনের ব্যাপারে একটুও কৃপণতা তাকে মানায় না। তাই গোপনে প্রশস্ত হাসলো। শাহিনুরের স্তম্ভিত মুখের সম্মুখে হাঁটু গেড়ে বসে ঘাড় নিচু করে স্বচ্ছ, নির্লিপ্ত দৃষ্টিজোড়ায় নিজের দুর্বোধ্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ওষ্ঠাধরে ঈষৎ বাঁকা হাসি লেপ্টে নিয়ে পরিহাসের সুরে বললো,
-‘ ভোলাভালা চেহেরাটা দেখে বোঝার উপায় নেই বুকের ভিতর আমার জন্য এতো প্রেম প্রেম অনুভব করো। ‘
পলকহীন দৃষ্টিতে এবার এক পলক, দু’পলক পড়লো শাহিনুরের। প্রচণ্ড হাসি পেলেও তা চেপে গিয়ে মৃদু কেশে চোখ ঘুরিয়ে আবারও প্রণয় বললো,
-‘ তোমার এই চেহেরাটায় যতোই অবলা নারী, অবলা নারী ব্যাপারটা থাকুক। তুমি মেয়ে মোটেই অবলা নয়। জমিদারের এই সভ্য ছেলেটা না হয় তোমার ইজ্জত রক্ষার্থে নিজের শার্ট খুলে দিয়েছে। তার মানে তো এই নয় গোটা শার্ট’টাই তোমাকে লিখে দিয়েছে। এখন তো আমার ভয় হচ্ছে জীবন সঙ্গী করার পর আমার গোটা জীবন’কেই না দখলে নিয়ে নাও!’