সকালবেলা নাস্তা করার সময় বমি হয়েছে মুনতাহার। দুপুরবেলাও কিছু খেতে পারলো না৷
সবটা খেয়াল করলো শবনম। তারপর তার স্ত্রীরজের সময়কাল জেনে বিস্মিত হলো! গালে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বললো,
-‘ হেগো মুন এতো বেখেয়ালি কেন তুমি ? শুভসংবাদ বুঝি এলো এবার। সে কোথায়? ‘
শবনমের মুখে এমন বাক্য শুনে লজ্জায় নাকের ডগা রক্তিম হয়ে ওঠলো। মাথা নুয়ে বললো,
-‘ জানিনা। ‘
শবনম খুশিতে আত্মহারা হয়ে মুনতাহা’কে জড়িয়ে ধরলো। বললো,
-‘ তুমি ঘরেই থাকো আমি এখুনি আসছি৷ ‘
মিনিট পাঁচেক পরেই ফিরে এলো শবনম। গর্ভাবস্থা পরীক্ষার কীট এনে মুনতাহার হাতে দিয়ে বললো,
-‘ যাও নিশ্চিত খবর নিয়ে এসো। ‘
মুনতাহা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বললো,
-‘ তোমার কাছে ছিলো? আমি ক’দিন ধরেই উনাকে বলছিলাম এনে দেওয়ার জন্য, উনি গায়ে লাগায়নি।’
-‘ হ্যাঁ গো আনাই ছিলো যখনি সন্দেহ হয় তখনি তোমার বড়ো ভাই’কে দিয়ে আনাই। আর প্রতিবারই নিরাশ হই। ‘
কিঞ্চিৎ মন খারাপ হয়ে গেলো মুনতাহার৷ তার মন খারাপ দেখে শবনম বললো,
-‘ এই বোকা মেয়ে তুমি মন খারাপ করছো কেন? যে সুখবর এ বাড়িতে আমি দিতে পারিনি সেটা না হয় তুমিই দিলে। যাও তো যাও আর দেরি করো না, আমার আর তর সইছে না৷ ‘
শবনমের তাগাদায় দুরুদুরু বুকে পরীক্ষা করেই ফেললো মুনতাহা৷ ফলাফল আশানুরূপ হতেই খুশি’তে দু’চোখ বেয়ে অশ্রুপাত শুরু হলো তার। আল্লাহ’কে শুকরিয়া জানিয়ে বিরবির করে বললো,
-‘ ভাবির মতো আমিও ভেবেছিলাম এ বংশে অভিশাপ লেগেছে। যার কারণে তার মতো আমার গর্ভেও সন্তান আসছে না। কিন্তু তুমি প্রমাণ করে দিলে আমি নিরপরাধ, এতো দুঃখের পর একটু সুখের মুখ তুমি আমাকে দেখিয়েছো। হে আল্লাহ লক্ষ,কোটি শুকরিয়া জানাই তোমাকে। ‘
পলাশ বাড়িতে নেই। সেদিন প্রণয়ের হয়ে প্রেরণার কাছে সুপারিশ করেছিলো মুনতাহা, বুঝিয়েছিলো অনেক কিছুই। প্রেরণা বলেছিলো সে ভেবে দেখবে। তার পর কয়েকদিন কেটে গেলো প্রেরণা কিছুই বলেনি। কিন্তু আজ যখন বড়ো বউয়ের মুখে শুনলো মুনতাহা গর্ভবতী। এ বংশের সন্তান জন্ম দেবে সে। তখন আবেগান্বিত হয়ে পড়লো ৷ অরুণারও আবেগ ঘন হলো। দু’জনই মুনতাহার কক্ষে এসে কিছুক্ষণ তার সাথে আহ্লাদ করলো। অরুণা তো ঝরঝর করে কেঁদে দিয়ে বললো,
-‘ বংশের বাতি তো প্রায় নিভু নিভু। এতো জন থেকেও যেনো কেউ নেই৷ মানুষটা চলে গিয়ে সব যেনো অন্ধকার করে দিছে। এবার তোমার কাছেই সে ফিরবে বউ দেইখো। ‘
প্রেরণা বললো,
-‘ আপা দেইখো আমার পলাশের ঘর আলো করে উনিই আসবেন। ‘
দুই শাশুড়ির মন্তব্য শুনে মুনতাহা খুশি হলেও শবনম ঠিক বুঝলো গর্ভবতী হতে না হতেই শুরু হয়ে গেছে নাতী চাই,নাতী চাই। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো শবনম। প্রেরণা মুনতাহার দু’হাত চেপে ধরে বললো,
-‘ বল মা কি চাস তুই আমার কাছে, আমার কাছে আজ তুই যা চাইবি তাই পাবি। ‘
আহ্লাদে গদগদ হয়ে মুনতাহা বললো,
-‘ আম্মা এই খবর শুনে উনার মধ্যে পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে। কিন্তু তার জন্য উনার মাঝে নুর’কে পাওয়া অসম্ভব এই অনুভূতি আনতে হবে। উনি যখন জানবে, উনি বাবা হতে চলেছেন অবশ্যই খুশি হবেন, পাশাপাশি যখন প্রণয় ভাই’য়ের সঙ্গে নুরের বিয়ে হয়ে যাবে তখন উনি নুর থেকে ফিরে আসবেন। আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে উনাকে আঁটকাতে না পারলেও আমার সন্তান’কে দিয়ে ঠিক আঁটকে দেবো। ‘
মুনতাহার কথাগুলো’কে সমর্থন করলো অরুণা৷ প্রেরণা নুর’কে মন থেকে মেনে না নিলেও সবদিক চিন্তা করে মুনতাহা’কে বললো,
-‘ তোকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি মুন। আমার ছেলের জন্য তুই অনেক কষ্ট ভোগ করেছিস৷ শেষ পর্যন্ত যদি এই উপায়ে তুই সুখ পাস তবে তাই হবে। ‘
প্রণয়’কে নিজের কক্ষে তলব করেছিলো প্রেরণা।বাইজি কন্যা’কে জীবনসঙ্গী করার সিদ্ধান্তে মত দিয়েছে সে। কিন্তু এর পেছনের কারণগুলোও উল্লেখ করেছে। সেসব কারণ আমলে নিলো না প্রণয়। শুধু মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো, মুনতাহার কাছে। মুনতাহা মা হতে চলেছে এই সুখবর বাড়ির প্রতিটি সদস্যের কাছে পৌঁছে গেলো। ভৃত্য’দের থেকে শুরু করে তল্লাটের সবাই জানলো। জমিদার বাড়ি’র এতো দুর্দশার মূহুর্তে নতুন অতিথি আসছে…কেউ দুঃখতে ভরিয়ে দিয়ে চলে যায় আবার কেউ সব দুঃখমোচন করতে ফিরে আসে। রোমানা আর অলিওর পাঁচফোড়ন গৃহে যে ক্ষতের সৃষ্টি করে গেছে তা পূরণ করতেই হয়তো একটি নিষ্পাপ শিশু ভূমিষ্ঠ হবে।
[৪৭]
শাহিনুর জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে৷ যেখান থেকে বাইজি গৃহ,পুকুরঘাট স্পষ্ট দেখা যায়। এ মূহুর্তে সে একধ্যানে চেয়ে আছে পুকুরঘাটে। অল্পস্বল্প স্মৃতি চারণ করছে। সে স্মৃতির এক পর্যায়ে রঙ্গনের উৎফুল্ল চেহেরা ভেসে ওঠলো। রঙ্গনের শুভ্রময় মুখটুকু স্মরণ হওয়ার পরপরই প্রণয়ের শ্যামবর্ণ ভারী চেহেরার আবির্ভাব ঘটলো। অদ্ভুত ভাবেই দু’জনের চেহেরা ক্ষণে ক্ষণে স্বরণ হতে লাগলো৷ প্রণয়ের গভীর,দৃঢ় দৃষ্টি আর রঙ্গনের সাদাসিধে প্রফুল্ল চাহনি। দু’জনকেই সুনিপুণভাবে স্মরণ করতে করতে অন্তঃকোণে প্রশ্ন জাগলো,
-‘ এতো কিছু হয়ে গেলো বাঁশিওয়ালা’কে কেন পাশে পেলাম না? সে কোথায় হারিয়ে গেলো? তার অবর্তমানে তার ডাক্তার ভাই’য়ের বউ হয়ে গেলে সে তো খুব কষ্ট পাবে। সব ভাই মিলে আমার বাঁশিওয়ালা’কেই কেন কষ্ট দেয়? ‘
বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো শাহিনুরের। সে মূহুর্তে উপস্থিত হলো প্রণয়। পেছনে তার অতি নিকটে দাঁড়িয়ে স’স্বরে বললো,
-‘ নুর একটি সুখবর আছে। ‘
চমকে ওঠলো শাহিনুর। পেছন ঘুরে দেখলো পিরিচে করে চারটে মিষ্টি নিয়ে এসেছে প্রণয়৷ দু’টো মিষ্টিতে দু’টো কাটা চামচ ডাবানো। মিষ্টি থেকে দৃষ্টি তুলে প্রণয়ের দিকে তাকালো। বললো,
-‘ আমি মিষ্টি খাইনা। ‘
-‘ যার মাঝে এতো সুইটনেস রয়েছে তার সুইট খাওয়ার কী প্রয়োজন? ‘
-‘ সুইট কী? ‘
ভ্রুদ্বয় কুঁচকে প্রশ্নটি করলো শাহিনুর। প্রণয় হকচকিয়ে গেলো৷ পরোক্ষণেই মনে পড়লো, শাহিনুর তো পুঁথিগত শিক্ষা গ্রহণ করেনি। বাংলা একটুআধটু বুঝলেও ইংরেজিতে একেবারেই জ্ঞানশূন্য সে। মনে মনে ভীষণ রকম একটি হাসি দিলো। কিন্তু মুখ স্বাভাবিক রাখলো৷ নুরের দিকে অল্প ঝুঁকে গাঢ় চোখে তাকিয়ে দুর্বোধ্য স্বরে বললো,
-‘ সুইট মানে মিষ্টি আর সুইটনেস মানে মিষ্টত্ব। ‘
এটুকু বাক্য বলেই নিজের হাতে থাকা মিষ্টি’তে ইশারা করে বললো,
-‘ এগুলো মিষ্টি। ‘
আর নুরের দিকে আগাগোড়া দৃষ্টিপাত করে বললো,
-‘ আর তুমি পুরোটাই মিষ্টত্ব! ‘
কর্ণকুহরে এমন ভয়াবহ অসভ্য মার্কা বাক্য পৌঁছাতেই সর্বাঙ্গ শিউরে ওঠলো শাহিনুরের৷ খোলা জানালা ঝাপটে কয়েকচ্ছটা শীতল হাওয়া ছুঁয়ে দিলো তার সারা গা’য়ে৷ তার টানাটানা গভীর চোখে একজোড়া দুর্বোধ্য দৃষ্টি ডুবে ছিলো। সে দৃষ্টিতে কিছু একটা পরোখ করবার চেষ্টা করেও বৃথা হলো শাহিনুর। কেন জানি ভীষণ দুর্বল অনুভূত হচ্ছে। ঐ গাঢ় দৃষ্টিতে দীর্ঘ সময় চেয়ে থাকার সাহস হলো না। কেমন যেনো শরীর অসাড় হয়ে যাচ্ছিলো, বক্ষস্থলে কেউ মৃদু আর্তনাদ করছিলো। নিরাশচিত্তে দৃষ্টি সরিয়ে পিছন ঘুরে রুদ্ধশ্বাস ছাড়লো সে। প্রণয়েরও ঘোর কাটলো। বিরবির করে বললো,
-‘ শীট, আরেকটুর জন্য সম্মোহন করতে পারলাম না। ‘
শাহিনুরের শ্বাস-প্রশ্বাসের তীব্র শব্দে বক্ষেঃ শীতল স্রোত বয়ে গেলো প্রণয়ের। মৃদু পায়ে সে একদম জানালার কাছে এসে শাহিনুরের সম্মুখে দাঁড়ালো। বললো,
-‘ মুনতাহা প্র্যাগনেন্ট। সকল’কে মিষ্টি মুখ করানো হচ্ছে। তাই তোমার জন্যও নিয়ে এলাম। ‘
কথা শেষ করার পর পরই আবার বললো,
-‘ মানে মুনতাহা গর্ভবতী। মা হতে চলেছে। আমার ভাই’য়ের সন্তান তার পেটে বুঝছো? ‘
কান গরম হয়ে গেলো শাহিনুরের। নাকের ডগা লালচে আভায় ভরে ওঠলো। প্র্যাগনেন্ট মানে সে জানে। তার মান্নাত বুবুও তো মা হতে যাচ্ছিলো। তখনই শুনেছিলো এই কঠিন শব্দ’টা। বিয়ের পর নারী,পুরুষের মিলন ঘটলে তাদের পবিত্র মিলনে খুশি হয়েই সৃষ্টিকর্তা তাদের সন্তান দান করেন৷ এগুলো সে জানে, সে এতোটাই বোকা নয় যে এসব জানবে না৷ ডাক্তার’টা কতো নির্লজ্জ কীভাবে এসে তাকে এসব বলছে! নত হওয়া দৃষ্টিজোড়া নতই রাখলো শাহিনুর। দু’হাতে শাড়ি খামচে, ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এ দৃশ্য দেখে প্রণয়ের চোখজোড়া বড়ো বড়ো হয়ে গেলো৷ কয়েক পল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সামনে থেকে সরে গিয়ে পিরিচটা বেতের টেবিলে রাখলো৷ চিন্তা করলো, ‘ নুর কী কোনভাবে লজ্জা পেলো?’
মুনতাহা প্র্যাগনেন্ট। মানে সে মা হতে চলেছে। প্র্যাগনেন্ট শব্দ’টা মনে মনে উচ্চারণ করতে গিয়েও আঁটকে গেলো শাহিনুর। প্রণয়ের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখলো প্রণয় সটান হয়ে দাঁড়িয়ে কী যেনো ভাবছে। তার ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো সে। একদম সামনে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো৷ তারপর এক দৃষ্টিতে প্রণয়ের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
-‘ বাঁশীওয়ালা যখন জানবে তার ভালোবাসার মানুষটি মা হতে চলেছে। সে কি খুশি হবে? নাকি দুঃখ পাবে? ‘
রঙ্গন খুশি হবে এটা মনে আসতেই বিষাদময় অনুভূতিতে এক চিলতে ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো শাহিনুরের। কিন্তু রঙ্গন দুঃখ পাবে এটুকু ভাবতেই বক্ষঃস্থল ব্যথিত হলো। সে ব্যথা স্পষ্ট ফুটে ওঠলো চোখেমুখে। তার ব্যথাহত দৃষ্টিজোড়ায় দৃষ্টি পড়তেই গম্ভীরচিত্তে প্রণয় বললো,
-‘ কী হলো? ‘
শাহিনুর মাথা নত করে ফেললো৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
-‘ আমার বাঁশিওয়ালা কোথায় আপনি জানেন? ‘
এমন একটি মুহুর্তে এমন একটি বাক্য শোনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না প্রণয়। শান্ত পুরুষ’কে নিমিষেই অশান্ত করে দেওয়ার অপরিসীম ক্ষমতা একজন নারী’র রয়েছে। তার থেকেও ভয়াবহ ক্ষমতা রয়েছে শাহিনুরের। যে ক্ষমতা ডক্টর প্রণয় চৌধুরী’কে নিমিষেই অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করতে পারে, আবার নিমিষেই বরফখণ্ডেও পরিণত করতে পারে। এ মূহুর্তে অগ্নিকুণ্ডে রূপ নিলো প্রণয়। আকস্মাৎ শাহিনুর’কে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সন্নিকটে নিয়ে এলো। তার পুরুষালি বুকের পাটায় এসে ঠেকলো শাহিনুরের পিঠ। মাথা ঠেকলো তার ডান কাঁধ সইসই। শঙ্কিত হয়ে সরে যেতে উদ্যত হতেই নিজের বাহু দ্বারা শাহিনুরের কোমল,মসৃন গলা চেপে ধরলো। শাহিনুরের মনে হলো রক্তে,মাংসে তৈরি করা বলশালী একটি ছুঁড়ি চেপে ধরা হয়েছে তার গণ্ডস্থলে! ক্রোধে চোখ,মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে প্রণয়ের৷ দেহে যেনো দশ পুরুষের শক্তি ভর করেছে তার। শরীরের রক্ত টগবগ করছে। এই মেয়েটা ভালোবাসা বুঝে না এটা ডাহা মিথ্যা কথা বরং অতিরিক্ত বোঝে। এতো আবেগ এতো ভালোবাসা দেখে শরীরে আগুন ধরে গেছে আজ। গণ্ডস্থলে বেশ চাপ প্রয়োগ করে ক্রোধান্বিত হয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
-‘ বাঁশিওয়ালা, বাঁশিওয়ালা,বাঁশিওয়ালা! এই একটা শব্দ আমার অন্তর জ্বালিয়ে দিয়েছে একেবারে। আর একবার এই শব্দ উচ্চারণ করলে একদম শেষ করে দেবো। ‘
কেশে ওঠলো শাহিনুর প্রণয়ের শক্তির সঙ্গে কোনক্রমেই পেরে না ওঠে চাপা কন্ঠে বললো,
-‘ আম্মা গো মরে গেলাম! ‘
এটুকু বাক্য শুনতেই হাত নরম করে ছিঁটকে সরে গেলো প্রণয়৷ ধপ করে মেঝেতে বসে কাশতে শুরু করলো শাহিনুর। দু’হাতের তালু দ্বারা ললাটের সমস্ত ঘাম মুছে নিয়ে হাত ঝাঁকি মারলো প্রণয়। সিনা উঁচু করে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো আর নিলো৷ হাঁপাচ্ছে শাহিনুর নিজেও। তার দিকে এক পলক চোখ পড়তেই ঝড়ের বেগে সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসলো প্রণয়। রক্ত লাল দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে হিংস্র কন্ঠে বললো,
-‘ ভালোবাসা… খুব দরদ বাঁশিওয়ালার জন্য? বন্ধু, পরম বন্ধু? পরম বন্ধু যেদিন শত্রু হয়ে ধরা দেবে সেদিন বুঝবে। চরম মূর্খতার দাম দিতে হবে সেদিন। বাঁশিওয়ালা আমার বাঁশিওয়ালার হ্যাত! ‘
ধমকাতে ধমকাতে আবার ওঠে দাঁড়ালো প্রণয়৷ ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দু-হাত দু’কোমড়ে রেখে বারকয়েক পায়চারি শুরু করলো। শাহিনুরের শরীর’টা মৃদু কাঁপছে। ঠায় বসে চোখ বুজে আছে সে৷ প্রণয় আড়চোখে তাকে একবার দেখে নিয়ে চিৎকার করে বললো,
-‘ মূর্খ তো মূর্খই হয়। এতো রূপ দিয়ে কী হবে? কী হবে? মাথায় তো ঘিলু নেই। ‘
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো শাহিনুর৷ তার চোখ দিয়ে অশ্রু না ঝড়লেও প্রণয় বুঝতে পারলো ব্যাপক ভয় আর ব্যাপক কান্না লুকানোর তীব্র চেষ্টা করছে মেয়েটা। রাগে মাথাটা এবার অবশ লাগলো তার। দু’হাতে নিজের চুলগুলো খামচে ধরে বললো,
-‘ একে নিয়ে কী করবো আমি উফফ!’