বাইজি কন্যা | পর্ব – ৩৯

13 Min Read
বাইজি কন্যা

বাইজি গৃহের সামনে মানুষজনে ভরে গেছে। সকলেই সবুর উদ্দিনের পরিণতি দেখে হতভম্ব। রঙ্গন চুপচাপ মাথা নিচু করে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হিসেব মিলছে না তার। এমন নৃশংস খু/ন পলাশ ব্যতিত আর কে করতে পারে? এই একটি প্রশ্নই পাগল করে দিচ্ছে তাকে। এমন সময় প্রণয় এলো। তাকে দেখে আঁতকে ওঠল সে। গতরাতের কথা স্মরণ হলো। তাহলে কী এই খু/ন প্রণয়ের দ্বারাই হয়েছে? পরোক্ষণেই প্রণয়ের ব্যক্তিত্বের কথা স্মরণ করল। নাহ, এই খু/ন তার দ্বারা হতেই পারে না। সে বিচক্ষণ, নীতিজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ। যদি শাস্তি দেওয়ারই থাকতো আইনিভাবেই দিত। এভাবে শাস্তি দেওয়া, খু/নের বদলে খু/ন করা তার স্বভাব বিরুদ্ধ। তাহলে কে হতে পারে সবুর উদ্দিনের হত্যাকারী?

বাইরের অগণিত মানুষ এসে ভিড় জমিয়েছে। থানার দারোগা কথা বলছে পল্লব চৌধুরীর সঙ্গে। চারপাশে চতুরতার সঙ্গে দৃষ্টিপাত করছে পলাশ। পলাশের অস্থিরতা দেখে প্রণয় তার সামনে এসে দাঁড়াল। অত্যন্ত গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-‘দারোগার সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা মিটিয়ে নাও। এই সব ঠুনকো ঝামেলা বেশি বড়ো করার দরকার নেই।’
ভ্রু যুগল কুঁচকে তাকাল পলাশ৷ প্রণয় রহস্যময় একটি হাসি দিয়ে বলল,
-‘এখনো সময় আছে এই গৃহের সমাপ্তি এখনই দিয়ে দাও। মনে রেখ দুনিয়ায় ছাড় পেতে পারো, পরকালে পাবে না৷ মানুষ ছাড় দিলেও সৃষ্টিকর্তা কিন্তু ছাড় দেবেন না।’

সবুর উদ্দিনের খু/নের ঘটনাটি কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই ধামাচাপা পড়ে গেল। ঠান্ডা মস্তিষ্কে, সতর্কতার সঙ্গে কাজটি সম্পন্ন করল প্রণয়। যদিও এতে পল্লব চৌধুরীর বিরাট একটি অবদান রয়েছে। গৃহ থেকে পুলিশ বিদায় হলো, আত্মীয়-স্বজন না থাকায় সবুর উদ্দিনের দাফনকাজ সম্পন্ন করল এলাকার লোকজন৷ সাথে ছিল পল্লব, পলাশ এবং রঙ্গন। সকলেই হায় হুতাশ করল৷ কিন্তু কেউ এক ফোঁটা অশ্রু ঝরাল না সবুর উদ্দিনের জন্য। মা নেই, বাবা নেই, স্ত্রী, সন্তান কিছুই নেই। কি জানি কোন শত্রুর কবলে পড়ে প্রাণ হারালো। এমনটাই বলছে এলাকাবাসী। অলিওর চৌধুরী কোথায় থেকে সবুর উদ্দিন’কে এখানে নিয়ে এসেছিল সে সম্পর্কেও কেউ অবগত ছিল না। বাইজি গৃহের ভৃত্য, পরিচয়হীন সবুর উদ্দিনের জীবনের সমাপ্তি’টা ছিল বড়োই বেদনাদায়ক। তবে এই বেদনা শুধু বাইরের লোকজনের মনের বেদনা৷ বাইজি গৃহের কারো জন্য এই মৃ’ত্যু বেদনাদায়ক ছিল না৷ সবুর উদ্দিনের বিনাশ ঘটাতে তারা সকলেই সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। সকলের মনেই জাগ্রত হয়েছে, প্রকৃতি কাউকে ছেড়ে দেয় না। পৃথিবীতে সেই মানুষটার মতো হতভাগা মানুষ আর দু’টো নেই। যেই মানুষ’টার মৃত্যু’তে কিছু মানুষ সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা জানায়! মানুষ যদি মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়, পৃথিবীতে ভরসার জায়গাটা সত্যি আর থাকে না।
[৬৬]
রাত দশটা। দ্বার খুলতেই শাহিনুরের সুশ্রী মুখের দেখা পেল প্রণয়৷ তাই মৃদু হেসে বলল,
-‘সারাদিন ঘরে বন্দি থাকতে কষ্ট হয়নি তো?’
বিরক্তিসূচক একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে শাহিনুর বলল,
-‘আপনি আমাকে এভাবে ঘরবন্দি করে রাখতে পারেন না৷’
প্রণয় আবারও হাসলো। নিঃশব্দে দরজাটা বন্ধ করেও দিলো। তা দেখে শাহিনুর বলল,
-‘আমার অনেক কাজ পড়ে আছে যেতে দিন।’
হাসিটুকু এবার মিলিয়ে গেল। শাহিনুরের দিকে ঘুরে দাঁড়াল প্রণয়। আগাগোড়া দৃষ্টিপাত করে নিয়ে ধীর পায়ে দু’কদম এগিয়ে বলল,
-‘কোন কাজ নেই তোমার শাহিনুর শায়লা। তিনবেলা খাবার খাওয়া ব্যতীত এই কক্ষের বাইরে আর কোন কাজ থাকতে পারে না তোমার৷’
প্রণয়ের কণ্ঠ আজ অন্যরকম শোনাল। শাহিনুর খেয়াল করল, আজ প্রণয়ের দৃষ্টিজোড়ায় ভালোবাসা, মায়া ছাড়াও গভীর কিছু রয়েছে। কিন্তু কী ধরতে পারল না সে। আজকাল সবাই’কে চোখের পলকে পড়তে পারে সে৷ শুধু এই মানুষ’টাকে পারে না৷ এই মানুষ’টা যেন প্রতিদিন নতুন রূপে ধরা দেয় তার কাছে। দৃঢ় চোখে তাকিয়ে গুরুগম্ভীর ভাবে এক পা বাড়াতেই অদ্ভুত সম্মোহনে চলে গেল শাহিনুর। প্রণয় যত এগুতে শুরু করল অজান্তেই তার পা দু’টো ততো পিছুতে লাগল। একের পর এক আগানো পেছানোর ফলে শেষে শাহিনুরের পিঠ গিয়ে ঠেকল দেয়ালে৷ প্রণয় এবার বাঁকা হেসে চোখ বন্ধ করে শাহিনুরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে দিল। ফোঁস করে একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে ভারি কণ্ঠে বলল,
-‘তোমার সীমানা এ পর্যন্তই।’
বুকের ভিতর ছটফটিয়ে ওঠলো শাহিনুরের। গণ্ডস্থল শুঁকিয়ে কাঠের মতো নীরস হয়ে রইল। প্রণয় মৃদুস্বরে বলে ওঠল,
-‘গতরাতে তোমার সঙ্গে আমি কেন রাগ দেখিয়েছি জানো?’
সহসা চমকে ওঠল শাহিনুর। একরাশ অভিমানে সিক্ত হলো তার হৃদয়। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল সে। সে নিঃশ্বাসের গভীরতা টের পেল প্রণয়। অল্প একটু তাকাল শাহিনুরের চিন্তিত, অভিমানিতা মুখশ্রীর দিকে। তার তাকানো দেখে নিজের দৃষ্টিজোড়া বদ্ধ করে নিল শাহিনুর৷ পুনরায় হাসল প্রণয়। তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বলল,
-‘তুমি আমার চেয়ে বেশি অন্য কাউকে কি করে বিশ্বাস করলে নুর?’
আঁতকে ওঠল শাহিনুর। প্রণয়ের দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে। প্রণয় এবার কঠিন স্বরে বলল,
-‘আমাকে ছাড়া তুমি শূন্য, আমাকে দিয়েই তুমি পরিপূর্ণ।’
দৃষ্টি নত করে স্বস্তির এক নিঃশ্বাস ছাড়ল শাহিনুর। ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,
-‘ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে। সেদিন আমি রঙ্গন’কে পুরোপুরি অবিশ্বাস করতে পারিনি। তার জন্য ক্ষমা করবেন।’
প্রথমবারের মতো শাহিনুরের মুখে বাঁশিওয়ালা নয় রঙ্গন নাম শুনল প্রণয়। যা শাহিনুরের প্রতি আরো গভীর হতে সহায়তা করল তাকে। নিজের একটি হাত শাহিনুরের ঘাড়ে রাখল। অপর হাতে তার উন্মুক্ত উদর চেপে ধরল। শাহিনুরের নিঃশ্বাস ভারি হলো। বুকের ভিতরটায় ধকধক ধকধক শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠল। সহসা কিঞ্চিৎ ক্রোধ মিশ্রিত কণ্ঠে প্রণয় বলল,
-‘অথচ গতরাতে পুরোপুরি অবিশ্বাস রেখেই পিছু নিয়েছিলে আমার।’
সহসা চোখ মেলে তাকাল শাহিনুর। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রণয় আবারও বলল,
-‘শারমিন শায়লার পর শাহিনুর শায়লা’কে যদি দ্বিতীয় কেউ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে চিনতে পারে সে হলো, শাহিনুর শায়লার স্বামী ড.প্রণয় চৌধুরী।’
ঘাড়ে থেকে হাত সরিয়ে আলতো ভাবে গাল ছুঁইয়ে দিল। শাহিনুরের শরীরের প্রতিটি লোমকূপ জাগ্রত হয়ে ওঠল। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল স্বামীর পানে। তার সে দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রণয় বলল,
-‘তোমার শরীর চেনার আগেই যে মানুষ’টা তোমার মন চিনেছে, তার চোখে ফাঁকি দেওয়া অতো সহজ নয় নুর।’
শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলল শাহিনুর। তার ওষ্ঠজোড়া মৃদু কাঁপছে। চোখের পলক ফেলছে ঘন ঘন। প্রণয় যেন শুনতে পেল তার মনের গহীনের কথোপকথন গুলো। তাই বুড়ো আঙুলে আলতোভাবে অধর স্পর্শ করল। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করল আঙুলটি৷ কিন্তু একটুও কম্পন থামল না। বরং সময়ের গতিতে তা বেড়েই চলল৷ অশান্ত শাহিনুর’কে শান্ত করতে উদরে থাকা হাতটি দ্বারা অপর গাল স্পর্শ করল। দু’হাতে কপোলদ্বয় চেপে ধরে উষ্ণ চুম্বন করল ওষ্ঠাধরে। পাথরের ন্যায় শক্ত শাহিনুর আচমকাই নরমে পরিণত হলো। শরীর ছেড়ে দিল সে। প্রণয় কৌশলে তাকে আয়ত্ত করে নিল। পাঁজাকোল করে নিয়ে বিছানায় এসে শুইয়ে দিল তাকে। শাহিনুরের চোখ দুটো বন্ধ। বদ্ধ চোখের কার্ণিশ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তা দেখে প্রণয়ের বুক’টা কেঁপে ওঠল। ওর দিকে ঝুঁকে কপালে আদুরেভাবে চুমু খেল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শীতল কণ্ঠে বলল,
-‘তুমি আমার চন্দ্রকান্তা নুর। আকাশের যেমন চাঁদ আছে আমারও তেমন তুমি আছো। চাঁদ যেমন তার আলো দিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে জোছনা আনে। আমি বিশ্বাস করি, তুমিও তেমন তোমার আলো দিয়ে আমার জীবনে জোছনা এনে দেবে।’
শাহিনুর চোখ খুলল না। কিন্তু তার কর্ণে, অন্তঃকোণে ঠিক প্রণয়ের কথাগুলো পৌঁছে গেল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আফসোসের সুরে বলা প্রতিটি বাক্যেই বুক কাঁপতে শুরু করল তার।
-‘আমার এই চাঁদটির সঙ্গে এক রজনীতেই প্রথম দেখা হয়েছিল। প্রথম দেখা, দ্বিতীয় দেখা, তৃতীয় দেখা সবটাই রাতের আঁধারে। যতবার দেখেছি ততবারই মনে হয়েছে আমার চাঁদের আলো তুমি। যখন তোমাকে বউরূপে পেলাম অনুভব করলাম, আমি সেই চাঁদ’কে আমার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছি যে চাঁদের কোন কলঙ্ক নেই। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম কখনোই ভঙ্গ হয় না। কলঙ্কহীন চাঁদও হয় না৷ ঠিক তেমনি গতরাতে অদ্ভুত এক কলঙ্কের দাগ পড়ে গেল আমার চাঁদে। তুমি আমার পিছু নিয়েছিলে তা আমি বুঝতে পেরেছি, তোমার শরীরের ঘ্রাণে। কিন্তু কখন তুমি সেখান থেকে চলে এসেছো টের পাইনি। যখন পেলাম তখন খুব দেরি হয়ে গেছে। সবুর উদ্দিনের রক্তে মেখে গেছে তোমার দেহ! আমার চাঁদের গায়ে লাল দাগ পড়ে গেল। আমি আটকাতে পারলাম না!’
বুজে থাকা চোখদুটো মেলে তাকাল শাহিনুর। শেষ বাক্যটায় কত যে ব্যথা মিশে ছিল অনুভব করতে পারল সে৷ দেখতে পেল আহত হৃদয়ে, নিরুপায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রণয়৷ সে দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালো৷ বলতে ইচ্ছে করল,
-‘এটুকুতে ভেঙে পড়লে চলবে ডাক্তারসাহেব? আপনার চাঁদে যে আরো দাগ পড়বে, সেগুলোও তো সহ্য করতে হবে।’
কিন্তু মুখে বলল,
-‘আমার জায়গায় আপনি থাকলে কি করতেন?’
ক্লান্ত হয়ে শাহিনুরের বুকে মাথা রাখল প্রণয়। বড়ো বড়ো করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
-‘জানি না।’
-‘যার ক্ষত সেই বুঝে, আর কারো বোঝা সম্ভব না।’
-‘তোমার ক্ষত, আমার ক্ষত আলাদা নয়।’
দৃঢ় কন্ঠে বলল প্রণয়। শাহিনুর শান্ত গলায় বলল,
-‘তাহলে এত ব্যথা কেন?’
মাথা উঁচিয়ে শাহিনুরের মুখোমুখি হলো। দু’হাতে ওর দু গাল আলতোভাবে ধরে বিচলিত কণ্ঠে বলল,
-‘তুমি আমাকে কথা দাও দ্বিতীয়বার এমন কিছু হবে না।’
মুখ ফিরিয়ে নিল শাহিনুর। প্রণয়ের অস্থিরতা বাড়তে লাগল৷ শাহিনুরের একটি হাত চোখের সামনে তুলে ধরে বলল,
-‘এই হাতে কারো বিনাশ হতে পারে না৷ এই হাত সৃষ্টির হাত। আমার গোটা সংসারের সৃষ্টি হবে এই হাতে। এই হাত আমার ভরসা,বিশ্বাস। এ’হাতেই গড়ে ওঠবে আমার সন্তান’দের ভবিষ্যৎ। এটা ভালোবাসার হাত। এই হাত আমার আদুরে বাচ্চাদের মা’য়ের হাত।’
দু-চোখ উপচে নোনাপানি বেরিয়ে এল। চোখভরা স্বপ্ন দেখতে পেল। যে স্বপ্নের রানি সে, আর রাজা প্রণয়। ভাঙা কণ্ঠে শুধাল,
-‘আম্মার মুখ, মান্নাত বুবুর মুখ আমাকে ঘুমাতে দেয় না৷ আমার শরীর জ্বলে,বুকের ভিতর দাউদাউ করে আগুন জ্বলে। এই আগুন কে নেভাবে ডাক্তারসাহেব?’
-‘আমি…’
-‘আম্মা আর বুবুর খু/নিদের শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমি স্বপ্ন দেখতে পারব না ডাক্তারসাহেব। যদি স্বপ্ন দেখতেই না পারি পূরণ করব কীভাবে।’
কথাটুকুর সমাপ্তি হতেই প্রচণ্ড শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরল প্রণয়। অদ্ভুত স্বরে বলতে লাগল,
-‘সব ভুলে নতুন করে শুরু করো নুর।’
-‘আপনি ভয় পাচ্ছেন?’
আশ্চর্য হয়ে প্রশ্নটি করল শাহিনুর। প্রণয় বলল,
-‘তুমি আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছো ভুল করছো তুমি। আজ সবুর উদ্দিন ছিল কিন্তু পলাশ সবুর উদ্দিন নয়। আমি তোমাকে হারাতে পারব না,কোন মূল্যেই না।’
তাচ্ছিল্য সহকারে শাহিনুর বলল,
-‘আমি জানি পলাশ আপনার বড়ো ভাই।’
নিরুপায় কণ্ঠে প্রণয় বলল,
-‘আইন নিজের হাতে তোলা অন্যায়।’
-‘আমি আইন বুঝি না ডাক্তার।’
-‘ভালোবাসা বুঝো ভালোবাসা?’
কথোপকথনের এ পর্যায়ে দু’জন দুজনের অনেকটা কাছে চলে এলো। এতক্ষণ সময় শুধু প্রণয় জড়িয়ে ছিল। এবার শাহিনুরও দু’হাতে জড়িয়ে ধরল। অনুনয়ের সুরে বলল,
-‘বুঝি ডাক্তার ভালোবাসাটুকু ঠিক বুঝি।’
গলায় ওষ্ঠ ডুবিয়ে চুম্বন করল প্রণয়। শাহিনুর একই সুরে পুনরায় বলল,
-‘আরেকটু কাছে আসুন না ডাক্তারসাহেব।’
এ বাক্য শুনতেই প্রণয় প্রথমে থমকে গেল। পরোক্ষণেই স্বাভাবিক হলো। নিজের সবটুকু ভালোবাসায়,আদরে সিক্ত করে তুলল নুর’কে, তার চন্দ্রকান্তা’কে। ভালোবাসার মহা ঔষধে অন্তঃকোণে ঠাঁই পাওয়া সকল ব্যাধি দূর হয়ে গেল। শুদ্ধতম ভালোবাসায়,পবিত্র স্পর্শে, দু’টো দেহ,দু’টো মন একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি দেহে পরিণত হলো। ওদের দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেল, ‘ নিয়তির নির্মমতায় যদি কখনো আলাদা হতে হয় তবে তুমি আমি নয় বরং আমাদেরই অর্ধেকাংশ আলাদা হবে। ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে প্রণয়ের থেকে শাহিনুর নয় আলাদা হয়েছে ওর দেহেরই একাংশ। শাহিনুরের থেকে প্রণয় নয় আলাদা হয়েছে ওরই অর্ধেক অঙ্গ।’ রাত তখন ক’টা বাজে অনুমানের করা গেল না। দু’জনই দুজনা’কে নিবিড়ভাবে ভালোবাসতে মগ্ন। সে পবিত্র সন্ধি’তে সহসা প্রণয় অনুভব করল, আজ তার চেয়ে অধিক আগ্রহী শাহিনুর। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, শাহিনুরের আচরণ’টা আজ এমন যে, আজকের পর প্রণয়’কে সে কখনোই পাবে না। শেষ বিদায়কালে যেমন কারো প্রতি ভক্তি,শ্রদ্ধা, ভালোবাসা হাজার গুণ বেড়ে যায় প্রণয়ের প্রতিও শাহিনুর ঠিক এই অনুভূতি প্রকাশ করল!

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।