সকালে ঘুম ভা’ঙ’তেই হুরের নিজেকে অনেক ভা’রী মনে হলো। কিন্তু ঘুমের ঘোর সঠিক ভাবে না কা’টায় প্রথমে বুঝতে পারলো না সে। ঘুমের ঘোরে মনে হলো কোনো ভা’রী কিছু তার গায়ের উপর পড়ে আছে। ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাসের অস্তিত্ব টের পেতেই ঘোর উড়ে গেলো হুরের। নিজের দিকে তাকাতেই দেখলো কেউ হাত দিয়ে তাকে শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। অবাক হলো হুর কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে আছে ভেবে। তারপর সে বেডে আসলো কি করে! সে তো বেলকনিতেই ছিলো! কিন্তু গতকালের ঘটনা মাথায় আসতেই বুঝতে বাকি রইলো না এটা ফাইয়াজ এর কাজ আর ফাইয়াজই তাকে জড়িয়ে ধরে আছে । হুর মাথা কাত করতেই তার চোঁখের সামনে ধরা দিলো ফাইয়াজের মুখশ্রী। কি নিষ্পাপ, পবিত্র লাগছে দেখতে। মুখে হালকা তেলতেলে ভাব এসেছে যার কারণে শ্যাম বর্ণের মুখটা চকচক করছে। ঘুমানোর দরুন কিছু চুল এলোমেলো ভাবে কপালে লেপ্টে আছে। তবে এতে তার সৌন্দর্য কমে নি বরং কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফাইয়াজের বন্ধ চোঁখের পাতায় পরপর কয়েকবার গভীর চু’মু দেয়ার তী’ব্র বাসনা জাগলো হুরের মনে। এই সেই চোখ জোড়া ; প্রথম দেখায় যার প্রেমে পড়েছিল হুর। এই সেই আঁখিদয় ; যার মালিক কে প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসে সে। এই চোখ জোড়ার বোদৌলতেই তো নিজের প্রাণ পুরুষটাকে চিনতে পেরেছিলো। এই মানুষ টা এখন তার স্বামী। তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে মানুষটাকে ছুঁয়ে দেয়ার।
ফাইয়াজের জন্য নিজের পা’গ’লামির কথাগুলো মনে পড়তেই চোখ ভোরে উঠলো হুরের। তার প্রতিটা দোয়ায় ফাইয়াজ নামক মানুষ টা ছিলো। ফারানের ছদ্দবেশ ধরা ফাইয়াজ তার লাইফ থেকে চলে যাওয়ার পর তার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কতো কেঁ’দে’ছে হিসাব নেই। তাই হয়তো সৃষ্টিকর্তা তার দোয়া কবুল করেছে। সারাজীবনের জন্য প্রাণ পুরুষটার সাথে তার নাম জড়িয়ে দিয়েছে ভেবে আলতো হাসলো সে। কিন্তু ফাইয়াজের প্র’তা’র’ণা’র কথা মাথায় আসতেই চোখ মুখ শ’ক্ত হয়ে গেলো হুরের।
ফাইয়াজের হাত এক ধা’ক্কা’য় সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো হুর। কিন্তু নড়াতে পারলে তো! ফাইয়াজ এতো শ’ক্ত করে ধরে আছে যে হুর তাকে এক চুলও নড়াতে পারলো না। হুরের ধা’ক্কা’য় ফাইয়াজের আরামের ঘুমে ব্যা’ঘা’ত ঘটলো। বেচারা ঘুম ভে’ঙে যাওয়ায় পিটপিট করে চোখ মেলে বোঝার চেষ্টা করলো হয়েছে টা কি! আর হুর সে তো থামার না, ছাড়া পাওয়ার জন্য একাধারে মো’চ’ড়া মো’চ’রি করেই যাচ্ছে। ফাইয়াজ ব্যাপার টা বুঝতে পেরে মুখ ঘুরিয়ে একটু হাসলো। তারপর আবার হুরের দিকে তাকালো। হুর ফাইয়াজ কে জা’গ’তে দেখে চোখ পা’কি’য়ে বললো,
-“আপনি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছেন কোন সা’হ’সে! ”
নিজের কথা শেষ করে আবার ছো’টাছু’টি শুরু করলো হুর। ফাইয়াজ এখনো তাকে শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। হুরের লা’ফালা’ফি দেখে ফাইয়াজ হাতের বাঁধন আরও শক্ত করলো। স্লো ভয়েসে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
-“এতদিন তোমাকে ছুঁতে সাহস, অনুমতি এসবের দরকার ছিলো কিন্তু এখন এসবের কোনো দরকার নেই। কারণ তুমি আমার বউ। তোমাকে আমি জড়িয়ে ধরতেই পারি। এখন একটু শান্ত হয়ে থাকো তো আমার ঘুম পূরণ হয়নি। ”
ফাইয়াজের কথায় শান্ত হয়ে গেলো হুর। তার কানে একটা কথাই বা’জ’তে লাগলো “তুমি আমার বউ “। হুর তো এটাই চাইতো। কিন্তু আজ এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত পেয়েও খুশি হতে পারলো না। তার মাথায় একটা কথাই ঘুরতে লাগলো কেনো করলো ফাইয়াজ এমন টা! সে ফাইয়াজের চোঁখে নিজের জন্য স্পষ্ট ভালোবাসা দেখেছে। তাহলে কেনো এতো বড়ো প্র’তার’ণা করলো ফাইয়াজ। এই সত্যি জানতেই হবে তার । মনে মনে একটা ক’ঠি’ন সিদ্ধান্ত নিলো হুর।
ফাইয়াজ কে পুনরায় ধা’ক্কা দিয়ে বললো,
-“আমাকে ছাড়ুন! অনেক লেট হয়ে গেছে আমি উঠবো। আপনি বালিশ ধরে ঘুমান। ”
ফাইয়াজ বির’ক্ত স্বরে বললো,
-“বউ থাকতে বালিশ ধরে ঘুমাবো কেনো! চুপচাপ ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও। এমনিতেও রাতে হাতির মতো ভরের তোমাকে বেড পর্যন্ত আনতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। কিন্তু কি করবো বলো বউ বলে কথা! বেলকনিতে ফেলে তো আর রাখতে পারি না। তাই দয়া করে অনেক ক’ষ্টে উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। ”
কথা শেষ করে ফাইয়াজ আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে আসলো। ফাইয়াজ বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁ’চকালো।
বিড়বিড় করে বললো,
-“উফঃ শান্তিতে ঘুমাতে পারলাম না আর। কই ভাবলাম বউ কে জড়িয়ে ধরে বিন্দাস একটা ঘুম দিবো তা না আমার শান্তির ঘুম কারোর স’হ্য হলো না। এতক্ষন এই মেয়ে জ্বা’লা’লো আর এখন আবার….. ধ্যা’ৎ! ”
হুর ফাইয়াজের কাছাকাছি থাকায় সব কথাই তার কানে গেলো। ফাইয়াজের কথা শুনে মিটিমিটি হাসলো হুর। ফাইয়াজ রা’গ করে হুর কে ছেড়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। এখন আর শুয়ে থেকে লাভ নেই। একবার ঘুম ভা’ঙ’লে কি আবার আসে!
ফাইয়াজ যেতেই সোয়া আটাশ টা দাঁত বের করে হাসলো হুর। সোয়া আটাশ টা কেনো বললাম বুঝলেন না তো! হুরের আটাশ টা দাঁতের পর আরও একটা আক্কেল দাঁত উঠেছে কয়েকদিন আগে। কিন্তু কিছু টা উঠার পর আর উঠছে না। তাই সোয়া আটাশ টা দাঁত হিহি।
হুর নিজেকে পরিপাটি করে দরজা খুলতেই দেখলো লিয়া আর হৃদ দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হুর দরজা খুলতেই দুজনই হু’ড়’মু’ড় করে রুমে ঢুকে গেলো। লিয়া রুমে ঢুকেই বিছানায় পা তুলে আরাম করে বসলো। আর হৃদ তাড়া দিয়ে বললো,
-“এতক্ষন লাগলো কেনো আপাই তোমার দরজা খুলতে। কতক্ষন দাঁড়ানো লাগলো আমাদের। আর ফাইয়াজ ভাইয়া কই। আমার কতো কথা জমে আছে সব বলতে হবে তো! ”
হুর মুখ দিয়ে একটা বি’র’ক্তি’র শব্দ বের করে বললো,
-“আমি তো রেডি হয়ে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম তাই না! কখন তোরা আসবি আর কখন তোদের বরন করে নেবো। যত্তসব। আমি ঘুমাচ্ছিলাম ই’ডি’য়’ট। এতো জলদি দরজা কি উড়ে উড়ে গিয়ে খুলতাম! আর তোর ফাইয়াজ ভাইয়ার খোঁজ আমার কাছে চাবি না। বোন রে তো আর এখন চেনোস না। ”
ফাইয়াজ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে towel দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে হুর কে শুনিয়ে হৃদ কে বলতে লাগলো,
-“বুঝলে হৃদ তোমার বোনের অনেক হিং’সা হচ্ছে তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো দেখে। তুমি তোমার বোনের কথায় পাত্তা দিবে না কিন্তু। আমাকেই বেশি বেশি ভালোবাসবে। তোমার আপাই তো একটা হিং”সুটে মেয়ে। ”
হুর ফাইয়াজের কথা শুনে মুখ বাঁকালো। বিড়বিড় করে বললো,
-“ঢং যত্তসব! ”
হৃদ ফাইয়াজ কে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আপাই এর কথায় কে পাত্তা দেয়। আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি। চলো চলো আমরা বাইরে যাই। আর এই দুই মহিলা এখানে থাকুক। ”
ফাইয়াজ আর হৃদ হেসে গলা জড়াজড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। হুর নাকের পা’টা ফু’লিয়ে ধু’ম করে লিয়ার পাশে বসে পড়লো। দাঁত ক’টম’ট করে বললো,
-“দেখলি দেখলি! কত্তোবড়ো খা’রাপ। আমার চেয়ে এখন তার ফাইয়াজ ভাইয়া তার কাছে বড়ো হয়ে গেলো। আবার বলে আমি নাকি হিং’সুটে। ”
-“কিরে হুর তুই দেখি আসলেই হিং’সুটে হয়ে গেছিস। ”
-“তুই ও! যা তোরা সব খা’রাপ। কেউ ভালো না। ”
-“হুর! ”
হুট করে লিয়ার শান্ত কণ্ঠে ডাক শুনে হুর তার দিকে ফিরে বসলো।
-“ফাইয়াজ ভাইয়ার সাথে একটু মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করিস। ভাইয়া মানুষ টা অনেক ভালো। তাকে ক’ষ্ট দিস না। ”
হুর মনে মনে তাচ্ছিল্য করে বললো,
-“তুই তো আর জানিস না ফাইয়াজ মানুষ টাই ফারান। আর সে আমাকে কতো বড়ো ধোঁ’কা দিয়েছে। জানলে হয়তো তাকে ভালো মানুষ বলতে পারতিস না। ”
কিন্তু উপরে উপরে হালকা হেসে চুপ করে রইলো। লিয়াও আর ঘা’টা’লো না বিষয়টা।
Leave a comment