ঘুমের মাঝে মুখের উপর অনবরত গরম নিঃশ্বাস আ’ছড়ে পড়ায় ভীষণ অ’সস্তি হচ্ছে হুরের। তার মনে হচ্ছে কেউ একধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু চেয়েও চোখ খুলতে পারছেনা হুর। ঘুমটা যে গভীর তার। একটা হালকা পাওয়ার এর ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে সে। ছোটবেলা থেকে তার এক সমস্যা কাঁ’দলেই মাথা ব্যা’থা করে। আজকে অতিরিক্ত কা’ন্নার কারণে ব্যা’থায় মাথা ফে’টে যাবে এমন মনে হচ্ছিলো তার। তাই একটা ব্যাথার আর একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে হুর। এই মুহূর্তে তার ঘুম হওয়া ভীষণ প্রয়োজন ছিলো।
অচেনা লোকটা হুরের রুমে হুরের খুব কাছে বসে আছে। গভীর দৃষ্টিতে হুরকে দেখে যাচ্ছে। মেয়েটা তার শান্তির স্থান। হুরের দিকে তাকালে তার সকল অ’শান্তি দূর হয়ে যায়। এইযে যেমন এখন তার অ’শান্ত হৃদয় টা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেছে এই মুখোশ্রীর দিকে তাকিয়ে। লোকটা বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
-“এই মেয়েটাকে এতো আদুরে লাগে কেনো!এই যে কান্না করে চোঁখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে তাতেও কি আদুরে লাগছে। উফঃ আমার পরীটা এতো সুন্দর কেনো হতে গেলো। কেউ যদি ন’জর লাগিয়ে দেয়। উহু আমি থাকতে কাউকেই আমার পরীর দিকে ন’জর দিতে দিবো না।”
কথাগুলো বলে হুরের গালে আলতো করে চুমু খেলো। হুর ঘুমের মাঝে হালকা কেঁ’পে উঠলো। লোকটা হুরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
-“খুব শীঘ্রই তোমায় দেখা দিবো পরী। আর কিছুটা দিন তারপর আমি তোমার সামনে আসবো।তোমাকে যে বা যারাই ক’ষ্ট দিবে তাদের শা’স্তি পেতে হবে। ফারানের কারণে তুমি এতো ক’ষ্ট পেয়েছো তাইনা!ফারানকেও শা’স্তি পেতে হবে।আর কিছুদিন পর তোমাকে নিজের করে নিবো। তুমি শুধু আমার।শুধুমাত্র আমার।”
লোকটা হুরের কপালে একটা গভীর চুমু খেলো। হুর এবার কিছুটা নড়েচড়ে উঠতেই লোকটা দ্রুত সরে গেলো।
হুর কোনো রকমে টে’নে’টু’নে নিজের চোঁখ খুললো।ধীরে ধীরে উঠে বসে টেবিল ল্যাম্প টা জ্বা’লালো। তার স্পষ্ট মনে হয়েছে কেউ একজন ছিলো। কিন্তু সে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পেলো না। এমনকি তার বেলকনির দরজা টাও বন্ধ। সে বুঝে উঠতে পারলো না এতক্ষন যা ঘটেছে তা স্বপ্ন ছিলো না বাস্তব। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত প্রায় ৩:৩০ বা’জে। হুর ভাবলো সে হয়তো স্বপ্নই দেখেছে। এতো রাতে তার রুমে কে আসবে। হুরের প্র’চন্ড ঘুম পাচ্ছে। তাই সে আর কিছু চিন্তা না করে ঘুমিয়ে পড়লো। শোয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো সে।
এতক্ষন এই সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে মিটিমিটি হাসছিলো অচেনা লোকটা। সে এখনো হুরের রুমেই আছে। বেচারি হুর ঘুমঘুম চোঁখে খেয়াল ই করে নি যে কেউ তার রুমে লুকিয়ে আছে। লোকটা মনে মনে বললো,
-“যাক বাবা বেঁ’চে গেলাম।এখন এখান থেকে পা’লাতে হবে।”
————————————————————————–
রাতে ভালো ঘুম হওয়ায় এখন ফ্রেশ লাগছে হুরের। সে ঠিক করলো আর ফারানের জন্য কা’ন্নাকা’টি করবে না। ফারান যখন তাকে ভালো বাসেই না তখন কা’ন্নাকা’টি করার কোনো মানেই হয় না। এখন থেকে সে নিজেকে পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করবে যাতে ফারানের কথা কম মনে পড়ে। হুর বেরিয়ে পড়লো রুম থেকে। এখন তাকে জলদি নাস্তা করে ভার্সিটি তে যেতে হবে।
হুর কোনোরকমে নাস্তা করে দিলো দৌড়। একেতো তার লেট হয়ে যাচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত সে এখন আর এক মিনিট দাঁড়ালে তার আম্মাজান তার রেডিও চালু করবেন কম খাওয়ার জন্য।
হুর তাদের পার্সোনাল গাড়িতে করেই ভার্সিটি তে আসে। ভার্সিটি তে পৌঁছানোর পর গাড়ি থেকে নেমে সে দেখলো অনেক পু’লি’শে’র গাড়ি রাখা। এক জায়গায় অনেক জ’টলা পা’কিয়ে আছে। সে সামনে এগোতে এগোতে শুনলো অনেকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে,
-“কি ভ’য়ানক ভাবে মেরেছে। আমার তো দেখেই কেমন লাগছে।মা’রার স্টাইলে তো মনে হচ্ছে কোনো সা’ইকো হবে নাহলে কি এতো জঘ’ন্য ভাবে কেউ খুন করতে পারে!”
অপর জন্য বললো,
-“তবে যাই বলিস যে মে’রেছে খুব ভালো কাজ করেছে। অনেক অত্যা’চার করেছে এই ভার্সিটির মেয়েদের উপর। তার ক্ষ’মতার কারণে কেউ কিছুই বলতে পারতোনা। এখন যদি আমরা একটু শান্তিতে চলাফেরা করতে পারি।”
-“সত্যিই রে। অনেক বড় বাঁ’চা বাচলাম। এমন মানুষ রুপী শ’য়তানদের পৃথিবীতে থাকার চেয়ে ম’রে যাওয়া ভালো। যে মে’রেছে সে খুব ভালো কাজ করেছে।”
কথাগুলো শুনে হুরের কৌতূহল বেড়ে গেলো। কাকে মা’রা হয়েছে জানার জন্য তার মন আকুপাকু করতে লাগলো। সে কোনোরকমে ভিড় ঠে’লে সামনে এগিয়ে যা দেখলো তাতে তার বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম হলো। সে ভিড় ঠে’লে বেরিয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে গলগল করে ব’মি করে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। কি জ’ঘন্য ভাবে মা’রা হয়েছে। কালকে ছেলেটা তাকে বির’ক্ত করলো। আর আজকে ছেলেটাকে কেউ এতো জঘ’ন্য ভাবে মে’রে তাদের ভার্সিটি এরিয়া তে ফেলে গেছে। কি ভ’য়ানক!মুহিবের ভ’য়ানক চেহারাটা চোঁখে ভেসে উঠতেই শরীর কাঁ’পতে লাগলো হুরের। কি ভ’য়ানক দেখাচ্ছিল তাকে। কাঁ’পতে কাঁ’পতে এক পর্যায়ে চোঁখ ঝাঁপসা হয়ে এলো হুরের। যেই মাত্র সে ঢোলে পড়বে কেউ একজন তাকে নিজের বুকে আগলে নিলো। হুরের মনে হলো কেউ খুব যতনে তাকে নিজের বুকে ভরে নিয়েছে। কিন্তু সেই মানুষটা কে দেখার পূর্বেই সে সে’ন্সলেস হয়ে গেলো।
ফারান হুরের মুখে চা’পর মে’রে হুরকে বলতে লাগলো,
-“এই মেয়ে!কি হয়েছে তোমার। এই মেয়ে শুনছো!oh s’hit…. এই মেয়ে সে’ন্সলেস হলো কি করে!উফঃ..”
হুরের বান্ধুবী লিয়া কে আসতে দেখে ফারান হুরকে পাশের একটা ক্লাসরুমের দেয়ালের সাথে ঠে’স দিয়ে বসিয়ে দিয়ে সরে গেলো। এই মেয়ে যদি জানতে পারে ফারান ধরেছে তাহলে আবার হয়তো তার জন্য পা’গলামি শুরু করবে।
—————————————————————————
হুরের জ্ঞা’ন ফিরেছে। সে নিভুনিভু চোঁখে সামনে তাকিয়ে দেখে তার বান্ধুবী লিয়া আর তাদের একটা ক্লাসমেট নয়না তার সামনে বসে রয়েছে। সে এক লা’ফে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ওয়াশরুমের পাশের একটা ক্লাসরুমে আছে তারা।সে তার বান্ধুবী দের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি এখানে আসলাম কি করে!আমি তো ওয়াশরুমে ছিলাম। আমি সে’ন্সলেস হওয়ার পূর্বে কেউ আমাকে ধরেছিলো।কে ধরেছিলো?”
লিয়া বলে উঠলো,
-“Relax হুর। আমি তোকে সে’ন্সলেস অবস্থায় এই ক্লাসরুমের সামনে প’ড়ে থাকতে পাই। তোকে ভি’ড় থেকে দৌড়ে এদিকে আসতে দেখে আমিও পিছনে আসছিলাম। এসে দেখি তুই এভাবে আছিস। আর কেউ ছিলো না আশেপাশে। আমার একার পক্ষে তোকে উঠানো সম্ভব ছিলো না। তাই আমি নয়নাকে কল করে এখানে আসতে বলি। আমরা দুইজন মিলে তোকে রুমে নিয়ে আসি।”
-“কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।”
-“আচ্ছা ঐসব বাদ দে। তুই আজকে বাড়ি চলে যা। ক্লাস করার দরকার নেই। তোর শরীর ভালো না। আমি তোকে পড়ে সব পড়া পাঠিয়ে দিবো।”
হুর ভাবলো সত্যিই আজকে সে ক্লাস করতে পারবে না। তাই সে ড্রাইভার আঙ্কেল কে কল দিয়ে বললো আবার ভার্সিটি তে আসতে। গাড়ি আসতেই হুর লিয়াকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।
এতক্ষন আড়াল থেকে কেউ একজন সবটাই দেখছিলো। সে বাঁকা হেসে বলে উঠলো,
-“এতটুকুতেই এই অবস্থা হুরপরী!তাহলে আমার মতো সা’ইকো কে সারাজীবন সামলাবে কি করে!”
লোকটা সি’টি দিতে দিতে চলে গেলো।
Leave a comment