এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ১৯

11 Min Read

বাসের মধ্য বিহান ভাই এর কাঁধে মাথা দিয়ে ঝিমিয়ে পড়েছি আমি।চোখ মেলে চাইতেই পারছি না।মাথা টা ঝিম ঝিম করছে আমার।বিহান ভাই মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।একটা গ্যাসের ট্যাবলেট আর সাথে একটা বমির ওষুধ খাইয়ে দিলেন।বিহান ভাই এর বুকে গিয়ে মাথা ঠেকে গেলো।
অপরদিকে বিভোর ভাই এর যে কি অবস্থা। বিভোর ভাই এর শরীর রিয়ার বমিতে একাকার অবস্থা। শুভ ভাইয়া বললো বিভোর প্রেমের অমৃত খেয়ে ফেলতে পারিস ভাই।বিভোর ভাই শুভ ভাইয়ার কথা শুনে রেগে কি একটা অবস্হা।বাস ভর্তি মানুষ এর মাঝে শার্ট খুলে ফেললেন।গায়ে সেন্ডো গেঞ্জি পরে শার্ট জানালা দিয়ে ফেলে দিলেন।রিয়াকে ফিস ফিস করে বলছে এখন তোমার জামা আমাকে দাও।বাস ভর্তি মানুষ আমার ইজ্জত দেখছে।রিয়া হেসে দিয়ে বললো ওকে দিলাম তাইলে নেন।বিভোর ভাই বললেন,আরে না না ভুলেও না।এইজন্য ই তো নিব্বি বলি। নিব্বি না হলে কেউ এই বাসের মধ্য নিজের ড্রেস খুলতে চায়।
–আম্মু এসে আমাকে খানিক টা বকা দিলো।এখনো বাসে চড়া অভ্যাস করতে পারলাম না।ঢাকা লেখাপড়ার জন্য কি করবো আমি।এই মেয়ে দিয়ে কিচ্ছু হবে না কত কিছু।শুভ ভাইয়া বললো আম্মু,দিয়া ছোট মানুষ ওকে বকা দিও নাতো।আস্তে আস্তে সব পারবে।আলিপ ভাইয়া এসে বললো দিয়া কেমন লাগছে এখন।বিহান ভাই বিরক্তি নিয়ে বললেন, ওকে দেখে বুঝছো না কেমন লাগছে ওর।উফফ বুঝিনা সব সমস্যা গুলো সব সময় আমার সামনেই আসে ক্যান।মাইয়া মানুষ মানেই সমস্যা।সেখানে যাবে সমস্যার সৃষ্টি করবে।আবার তাদের আশ পাশের প্রেমিক গুলার ন্যাকামি জাস্ট অসহ্য।আলিপ ভাইয়া বললো কে কি করেছে ভাইয়া।বিহান ভাই বললেন,প্লিজ গো টু ইওর সিট নাও।
বিহান ভাই ড্রাইভার কে বাস থামাতে বললেন,ড্রাইভার বাস থামিয়ে দিলেন।পাশের সিটের মেয়েটা বললো,নেমে যাচ্ছেন নাম্বার টা।বিহান ভাই বিরক্ত হয়ে বললেন আমাকে নেটওয়ার্ক এর মধ্য খুজে পাবেন না।এই পিচ্চিকে দেখছেন আপনার ফোন ই আস্ত রাখবে না।সো এগুলা চিন্তা বাদ দিন।
রমিম ভাইয়া বাইক নিয়ে চলে এলো।বিহান ভাই আম্মুকে বললো,ফুপ্পি আমি দিয়াকে নিয়ে বাইকে যাচ্ছি।আম্মু বললো সাবধানে যাস বাবা।রমিম ভাইয়া বিভোর ভাই এর জন্য ও শার্ট নিয়ে এলেন।বাস থেকে ক্লান্তি নিয়ে নামলাম।বাস টা আবার ছেড়ে দিলো।রমিম ভাইয়া আমাকে দেখে বললো,কি ব্যাপার দিয়া এত ক্লান্ত হয়ে পড়েছো যে।আগে বাসে চড়ো নি।ক্লান্তি নিয়ে বললাম বাসে চড়তে পারি না আমি।
–রমিম ভাইয়া বললো বিহান প্রেয়সী বার বার কল দিচ্ছে।তুই নাকি মেসেজ সিন করছিস না,সে না খেয়ে হাত কেটে ফেলছে।বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে পড়লেন বিহান ভাই যেনো এমন একটা মুহুর্তের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।আমি কপাল কুচকে তাকালাম উনার দিকে।
–বিহান ভাই রমিম এর দিকে তাকিয়ে বললেন,,কেনো প্রেয়সীর সমস্যা কি?স্যাকা খেয়েছে নাকি?স্যাকা খেয়ে হাত ফাত কাটলে আমি সান্তনা দিতে যাবো না।এগুলা সাইকো মার্কা মানুষ জাস্ট বিরক্তিকর।
–না তুই মেসেজ সিন করছিস না তাই।
–মেসেজ আনসিন এর জন্য হাত কাটলে ব্লক ডান বলে দিস।ইউ এন্ড শি নো ভেরি ওয়েল হু আই এ্যাম।সো ওর জায়গা ব্লক লিস্টেই থাকবে।
–থাক ভাই পাগলামি করিস না।ফোন টা রিসিভ করিস। বুঝিস না ভার্সিটির সেরা সুন্দরী, ডাক্তার বাবার মেয়ে।তুই বলতে পাগল।
–আমি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে রমিম ভাইয়ার কথা শুনছি বিহান ভাই এর কিঞ্চিত দৃষ্টি আমার দিকে।আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন যে আমি কি ভাবছি।বিহান ভাই এর দিকে চোখ পড়তেই অনিচ্ছাকৃত হাসি দিলাম আমি।
–বিহান ভাই রমিম ভাইয়া কে বললো,বাহ ভাই নাইস।বিশাল উপকার করলি।কোন টাইমে যে কি বললি।অনেক বড় উপকার হলো আমার। শালা ডাফার কি বাঁশ যে দিয়ে দিলি।
–অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বললাম, ইয়ে রমিম ভাইয়া আমাদের ভাবি বুঝি খুব সুন্দরী।
–রমিম ভাইয়া হেসে দিয়ে বললো অনেক সুন্দর দিয়া।দেখলে চোখ ফেরাতে পারবা না।বিহানের সাথে খুব মানায় তাকে।
–ভাই আর ভাবির রিলেশন কবে থেকে।
–ভার্সিটির প্রথম থেকেই এই গুঞ্জন শোনা যায়।
–বিহান ভাই রমিম ভাইয়ার দিকে রেগে গিয়ে বলেন শালা প্রেয়সী তোর ক্রাশ আমার কিছুই হয় না।হুদাই আমাকে বিরক্ত করে। আমার জাস্ট অসহ্য লাগে।আর তুই কার সামনে কি বলছিস। এমনি ওর মাথায় সমস্যা উলটা পালটা বুঝবে সিওর।অটো এসছে এইবার বিদায় হ শালা।
একটা অটো করে রমিম ভাইয়া চলে গেলো…..
————————– ————————-
একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা।ওই জায়গা টায় এত সুন্দর। রাস্তার দু’পাশ জুড়ে অনেক দূর পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়া গাছের ছড়াছড়ি।প্রকৃতির এক লাল পরিবেশ চারদিকে তেমন কোলাহল নেই।আমি পায়ের জুতা খুলে পিজ ঢালা রাস্তায় খালি পায়ে ফুলের উপর দিয়ে হাঁটছি।মনে হচ্ছে ফুলের রাজ্য প্রবেশ করেছি।বিহান ভাই বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।প্রকৃতির এত সুন্দর পরিবেশ আগে দেখি নি আমি।মন চাইছে ডানা মেলে উড়ি।ফুলের বিছানায় ঘুমোতে মন চাইছে আমার।এভাবে খালি পায়ে বেশ কিছু সময় হাঁটলাম আমি।
কিছুক্ষণের মাঝে একটা ইজি বাইক দেখলাম আর দাঁড় করালাম।
কোথায় যাবেন জিজ্ঞেস করতে বললাম খুলনা যাবো।ভাড়া ঠিক ঠাক করে ইজি বাইকে উঠে পড়লাম আমি।
বিহান ভাই রতীমত অবাক আমি ইজি বাইকে খুলনা যাবো।তাও আবার খালি পায়ে।আর ইজি বাইকে যাওয়ার কারণ ই বা কি?
“আমাকে ইজি বাইকে উঠতে দেখে বিহান ভাই দ্রুত এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে ইজি বাইক থেকে হ্যাচকা টানে নামিয়ে বলেন হোয়াট দ্যা কোথায় যাচ্ছিস? ”
“উনার দিকে মুড নিয়ে তাকিয়ে বললাম আমি খুলনা যাচ্ছি। ”
“ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন খুলনা এই ইজিবাইকে।”
“হুম তো আপনার বুঝি তাতেও আপত্তি আছে।”
“অফ কোর্স আপত্তি আছে।এক্ষুণি নাম ইজি বাইক থেকে।”
“না নামবো না।ভাই আপনি চলেন।”
“বিহান ভাই বলেন ওয়েট ওয়েট ওনাকে নামিয়ে দিন ভাই ইজি বাইকে থেকে।”
“আমি নামাবো কেনো ভাই?আমাকে রিজার্ভ করেছেন উনি বারোশ টাকা দিবেন।সারাদিন এ এই একটায় ভালো টিপ পেয়েছি।!
“আমি বললাম,আরে ভাই আপনি উনার সাথে বকবক করছেন কেনো?আমি বলছি যেতে আপনি চলুন।আমি আপনার গাড়ি ভাড়া করেছি”
“বিহান ভাই বললেন,উনাকে নামিয়ে দিন ভাই।বলে দিন আপনি যাবেন না।”
“আমাকে উনার ঠিক করা হয়ে গিয়েছে।উনার জন্য অন্য যাত্রী ছেড়ে দিয়েছি।তাই না গেলেও আমাকে টাকা দিতেই হবে।”
“আপনি যেতে চাইলে যান। কিন্তু আপনার ভালোর জন্যই বলছি।উনি দীর্ঘ আট মাস পাবনা ছিলো।মেন্টাল সমস্যা আছে উনার।যান খানিক সময় পরে পেছন থেকে গলা কামড়ে ধরবে।উনার দিকে তাকিয়ে দেখুন।খালি পায়ে কেউ খুলনা যায়।একা একটা মেয়ে আপনার কি অবাক লাগছে না।আমাদের বাসার কাজের বুয়া উনি”
“অটো চালক ভয় পেয়ে গেলেন,,এই যে আপা নামুন। নামুন বলছি।আপনার জন্য ৩০০ টাকার যাত্রী ছেড়ে দিলাম।”
“বিহান ভাই বললেন,,কিছু মনে করবেন না এই নিন আমি ভাল বেসে ই দিচ্ছি ৩০০ টাকা রাখুন।”
“লোকটা ৩০০ টাকা নিয়ে চলে গেলো আর বিহান ভাই কে বলে গেলো আপনি অনেক বড় মনের মানুষ ভাই। ভাগ্যিস এই পাগলের হাত থেকে বাঁচালেন আমাকে।”
“রাগে সমস্ত শরীর রিরি করছে আমার।আমার মতো সুস্থ মানুষকে পাগল বানিয়ে ছাড়লো।আর আমি কাজের বুয়া এই ভাবেন আমাকে উনি।আমি যে উনার সাথে যাবো না বলেই অটোতে করে যাওয়ার প্লান করলাম সব প্লান জল ঢেলে ছাড়লো।উনার দিকে ক্ষীপ্ত নয়নে তাকিয়ে দেখি থুতনি তে এক হাত বাধিয়ে মিটি মিটি করে হাসছেন।
ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলেন কিরে ক্ষেপি রাগি বেহুদা ক্ষেপে গেলি কেনো?আর হঠাত অটো চড়ে খুলনা যাওয়ার প্লান কেনো?”
“আমি আপনার সাথে যাবো না ব্যাস।তার আগে বলুন আমাকে কাজের বুয়া বললেন কেনো?”
“বিহান ভাই এর হাতে দেখি আমার জুতা। উনি একটু ধমক দিয়ে বললেন নে ধর জুতা পায়ে পর। গাধী একটা পা কেটে যাবে কোথায় কি থাকবে।কাজের বুয়া না বলে ঘরের বউ বললে কি মেনে নিতে পারতি।আরো রেগে যেতি।”
“কাটুক তাতে আপনার কি?”
“হ্যাঁ আমার শ্বশুরের মেয়ের পা কাটলে কষ্ট তো তার জামাই এর ই।বউ এর কষ্ট কি সহ্য করা যায়।তাছাড়া শ্বশুর যে রাজাকার বাবাহ আমাকে গুলি করে দিবে।সমাজ থেকে একজন অনেস্ট ফিউচার ডাক্তার হারিয়ে যাবে।এটা দেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর ব্যাপার।সো তোর পা কাটলে অনেক লস।নে জুতা পর।।।”
“পরবো না আমি।”
“বিহান ভাই নিচু হয়ে বসে উনার হাত দিয়ে পা চেপে ধরে জুতা পরিয়ে দিলেন।ওহ মাই গড সুরসুড়ি তে লাফিয়ে উঠলাম।এমনি তে পায়ের তালুতে প্রচুর সুরসুরি।বিহান ভাই আমাকে লাফাতে দেখে বলেন,কি সমস্যা তোর এভাবে ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছিস ক্যানো?”
“উহু ছাড়েন তো!ছাড়ুউউউউউউন।সুরসুড়ি লাগে।”
“ডিজগাস্টিং! সুরসুড়ি আবার কি।”
“বুঝেন না তাইনা?”
“নাতো।”
“ওয়েট আমি আপনাকে দিচ্ছি।”
“ওকে ট্রাই কর।”
“জুতা খুলেন।”
“এই রাস্তায় মানুষ পাগল ভাববে।”
“ভুল কি আমি তো পাবনা থেকেই এসছি।খুলুন আগে।”
“আমার জোরাজুরিতে জুতা খুলতে বাধ্য হলো উনি।পায়ের নিচে এত সুরসুড়ি দেয় কিছুই ফিল হয় না উনার।একদম ই রোবট।ক্লান্ত হয়ে ফেইল গেলাম এ বিষয়ে।
উনি ভ্রু বাকিয়ে বললেন আমি কি মহিলা যে লাফাবো।বাস এত সময় অনেক দূরে চলে গিয়েছে।বাইকে ওঠ।”
“আপনার বাইকে ওঠার ইচ্ছা আমার নেই। ”
“পিচ্চি মানুষ এত রাগ আসে কিভাবে শুনি।আর রাগের কারণ টাই বা কি?”
“কোনো কারণ নেই।যান না গিয়ে প্রেয়সী কে বাইকে উঠান আমার তাতে কি।আমি মরে গেলেও আপনার বাইকে উঠবো না।”
“আচ্ছা এই ব্যাপার।সামথিং সামথিং মনে হচ্ছে দিয়া।’
“মোটেও না নাথিং।”
“লাভ ইউ মাই ডারলিং।লাভ ডু সামথিং সামথিং।”
“এখন কি গান গাইতে মন চাইছে আপনার।”
“হ্যাঁ!তোর জেলাসি দেখে।প্রেয়সী কে নিয়ে এত জেলাস তুই হুয়াই দিয়া।কথাটা মুখের উপর ঝুঁকে এসে বললেন উনি।”
“জেলাসির কি আছে শুনি।”
“বুঝি তো প্রেমে ট্রেমে পড়েছিস হয়তো লজ্জায় বলতে পারছিস না তাইনা দিয়া।”
“একদম বাজে কথা বলবেন না আপনি।”
“চুপচাপ বাইকে ওঠ নইলে বুঝবো আমার প্রেমে পড়েছিস।”
“বাধ্য হয়েই উনার বাইকে উঠলাম।মানুষ যে এত অসহ্য ভাবে বাইক চালাতে পারে আগে জানতাম না।এটা কি বিশ্রি ভাবে চালানো।এক্ষুণি পড়ে যাবো এমন একটা ভাব।দ্রুত উনার শার্ট খামচে ধরে বললাম আস্তে চালান বলছি।”
“বাইক থেকে তিন ফিট দূরে বসলে এমন হবেই। পারলে কোমর জরিয়ে বস।”
“বাধ্য হয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে বসলাম।আমাকে এইভাবে বসাবে বলে শয়তানি করে এত কিছু করেছে।ইস কি লজ্জা উনাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি”
উনি আমার দিকে ঘুরতেই ঠোঁটে একটা কামড় দিয়ে বললাম পাবনা থেকে এসছি গো।পাগল নিয়ে বাইক চালালে কামর তো খেতেই হবে।
বিহান ভাই উহ সাউন্ড করে বললেন দিয়া এটা কি তুই।লিপ কিস করতে মন চাইছিলো বলেলেই পারতি।এই নিষ্পাপ ঠোঁটে প্রথম কোনো নারীর স্পর্শ। শরীরের অনুভূতি অন্য দিকে চলে গিয়েছে।বাইক চালানো আর সম্ভব নয়।
দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় আসাতে আমি এটা কি করে ফেললাম।এখন তো নিজের ই লজ্জা লাগছে।ছিঃউনি কি ভাবছেন।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।