“সন্ধ্যার রেশ কেটে খানিক টা রাত হয়েছে, বৃষ্টি এখনো কমে নি,বাইরে প্রবল বেগে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।জানালার পর্দা ভেদ করে বৃষ্টির ফোঁটা রুমের এসে প্রবেশ করছে।বিহান ভাই জানালার পর্দা সরিয়ে বৃষ্টির হাওয়া লাগাচ্ছেন গায়ে আর হালকা শীতে কাঁপছেন।”
“আমি রান্নাঘর থেকে খাবার এনে বিহান ভাই কে খাইয়ে দিলাম।লক্ষি ছেলের মতো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে খাবার খেয়ে নিলো।খাওয়ানোর সময় বললাম,,ডাক্তারী তো আর পড়ছেন না তাইনা।যাক ভালোই হবে বাড়িতে থাকবেন আর কাজিনকুলের সর্বনাশ করবেন।পই পই করে হিসাব রাখবেন কে কাকে কি কমেন্ট করছে, কে কাকে লাভ লেটার দিচ্ছে।”
“ডাক্তারি না পড়লে তোর হার্ট এর চিকিৎসা কিভাবে করবো শুনি।তোর হার্ট ঠিক রাখতে পড়তেই হবে।যে হার্টে বিহানের বসবাস সে হার্ট আমাকে দেখতে হবে।”
“কিছুক্ষণের মাঝেই মামি আর বিভোর ভাই ছাতা মাথায় দিয়ে ভিজতে ভিজতে প্রবেশ করলেন।মামি বিভোর ভাই কে বলেন,বিভোর শুনে দেখ তো ওষুধ খাবে কিনা।না খেলে আমি এক্ষুণি যেদিকে মন চাই চলে যাবো।বলেই আমি ওষুধ গুলো বিছানার উপর ফেলে কাপড় চেঞ্জ করতে গেলেন।”
“বিভোর ভাই এর প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত ভাজ করে রাখা, মনে হয় বৃষ্টি জন্যই।পরনে লাল গেঞ্জি।মাথা ভিজে গিয়েছে।টাওয়াল নিয়ে মুছতে মুছতে বলেন বিহান কাকি মনিকে আর প্রেসার দিস না।তুই এসব কি শুরু করেছিস। কাকিমনি আজ অনেক কেঁদেছে।”
“বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,মেডিসিন কিছুক্ষণ আগেই খেয়েছি।কথাটা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে পড়লেন।কি দিয়া বিভোর কে বল তুই আমাকে মেডিসিন খাইয়েছিস না।না হলে আমি এতটা সুস্থ কিভাবে।”
“এই ফাজিল বেটার কথা শুনে লজ্জা যা লাগছে।না জানি বিভোর ভাই কিছু বুঝে যান কিনা।এমনি তেই ক বললে কলকাতা বুঝে যান।এখন কি ভাবছেন তা কি জানি।”
“বিভোর ভাই বলেন,সিরিয়াসলি দিয়া তোকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছে আর তুই ভদ্র ছেলের মতো খেয়েছিস।দিয়ার গালে তোর হাতের আঙুলের দাগ দেখছি না যে ব্যপার টা কি?”
“থাপ্পড় দুই একটা মারতাম অন্য কেস হলে।বাট মেডিসিন খাওয়ার সময় অনেক ভাল লাগছিলো।বিভোর আমাদের দিয়া কিন্তু অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।মুরব্বি দের যত্ন করে মেডিসিন খাওয়ানো শিখে গিয়েছে।দিয়ার এবার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে বিভোর।”
“তুই তো দিয়ার ভাই তুই একটা ছেলে দেখ তাহলে দিয়ার জন্য।”
“সন্দিহান ভাবে প্রশ্ন করলেন বিহান ভাই কোন জন্মের ভাই আমি।”
“ফুপ্পির জন্মের ভাই?”
“ও ফুপ্পির মেয়ে কেমনে চেহারার মিল নেই।ফুপ্পির মেয়ে হচ্ছিলো না বলে দত্তক নিয়েছিলো দিয়াকে।”
“দুঃখি দুঃখি মন নিয়ে বললাম, দেখেছেন বিভোর ভাই। আমাকে নাকি দত্তক নেওয়া।আপনি কিছু বলছেন না কেনো?”
বিভোর ভাই বললেন,”আরে দিয়া শোন বিহান কে অভিশাপ দিলাম,ওয়েট দিচ্ছি অং পং সং চিচুম্মুরা ফুউউউ।মহা অভিশাপ দিলাম।। দত্তক নেওয়া কোনো মহিলা বিহানের বউ হবে।”
বিভোর ভাই এর মন্ত্র শুনে জোরে হেসে দিলাম।
“বিহান ভাই বললেন,এইভাবে মহিলাদের পটাচ্ছিস তাইনা বিভোর।ভন্ড বাবা সেজে মহিলাদের পটাচ্ছিস।কিছু মহিলার বাচ্চা কাচ্চা হচ্ছে না।আমার কাছে এইজন্য তাহলে জিজ্ঞেস করছিলো কবিরাজ মন্ত্র পড়ে ফু দেওয়া বিভোর বাবা কোথায়?আমি বললাম বিভোর কিসের কবিরাজ।একজন মহিলা বললেন,,তার বাড়ির পাশের চার জন মহিলার তোর মন্ত্র আর ফু নিয়ে বাচ্চা হয়েছে।এর সাক্ষি রিয়া বিলিভ না হলে রিয়াকে জিজ্ঞেস করতে পারিস।একচুয়ালি তোর চেম্বার টা কোথায়?ব্রিজের পাশে যে বকুল গাছ টা ওইখানে নাকি বিভোর।বলেই বিহান ভাই বাকা একটা হাসি দিলেন।”
“হ্যাঁ বিহান পুরুষদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়।মহিলাদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ হিসাবে পুরুষ জাতিও কিছুটা দায়ী।তাই ভাবছি আর কত কাল ফু দিবো। আসলে ট্রিটমেন্ট পুরুষ দের করা উচিত।”
“বিহান ভাই আবার ও ভ্রু কুচকে বললেন, আচ্ছা এইগুলা নিয়ে রিসার্চ শুরু করেছিস।আমার তো মনে হচ্ছে মারাত্মক সমস্যা তোর।নিজেই এই মহা রুগি তুই।এই জন্য যুব সমাজের সেবা করছিস।মহান তুই বিভোর।ইয়াং ছেলেদের ফিউচার নিয়ে ভাবছিস। নিজে যে ভুক্তভোগী তুই। আসলে চাইছিস না সব ছেলেরা এসব সমস্যা ফেস করুক।অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছিস। ”
“না বিহান আমার মনে হয় আমাদের কাজিন সব গুলার এই সমস্যা আছে?বিশেষ করে তুই? তুই এত বদমেজাজী খিটখিটে কি আর এমনি এমনি।তোর চিকিৎসা আগে করবো। ”
আমি বোকার মতো তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম,’আচ্ছা কিসের কথা বলছেন বিভোর ভাই?’
“বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,তোর বিভোর ভাই কিসের কবিরাজ হয়েছে সেটা ওকে ডিরেক্ট বলতে পারছি না।দিয়া কুইক বাইরে যা তো।”
“না আমি যাবো না। যা বলার আমার সামনেই বলতে হবে। ”
“যাবি নাকি সেই গান শুনাবো?বিভোর কে বলে দিবো কি গান শুনিস তুই?”
“খানিক টা চোখ রাঙিয়ে বেরিয়ে গেলাম।মানুষ এতটাও অসভ্য হতে পারে জানা ছিলো না।সানি লিওনির পেজে একটা কমেন্ট করেছিলাম।সেদিন আমাকে অসভ্য কিছু সাজেস্ট করেছিলেন।আর সেখান থেকে বলেন আমি নাকি তার গান পছন্দ করি।কথায় কথায় ব্লাকমেইল করে আমি তার গান শুনবো কিনা?আজ বিভোর ভাই ছিলো বলে নইলে খবর ছিলো।এখন আর আমি ভয় পাই না।কারণ এখন উনি আমার বয়ফ্রেন্ড।কিন্তু কি নিয়ে গবেষনা করছেন আমাকে শুনতেই হবে ব্যাপার টা।”
বাইরে থেকে দরজায় কান লাগিয়ে রইলাম।কি নিয়ে দুজনে এত হাসছে জানিনা।শুধু হাসির আওয়াজ ই ভেষে আসছে।
“বিভোর ভাই বললেন,বিহান তুই তো আমার মান সম্মান কিছুই রাখবি না।তুই যে এত ফাজিল দিয়া জানলে হার্ট এট্যাক করবে।”
“দিয়া পিচ্চি মানুষ এগুলা বিশ্লেষণ করে বুঝালেও বুঝবে না।ওর বোঝার বয়স ই হয় নি।এনি ওয়ে দিয়ার কানে যেনো ভুলেও এগুলা যায় না।”
“দিয়া আমার বোন এ কারনে বেঁচে গেলি। নইলে রিয়া বা তোহা বা মেহু হলে না বলে ছাড়তাম না।”
এমন সময় দরজাটা টান দিলেন বিহান ভাই।হুমড়ি খেয়ে গিয়ে উনার গায়ের উপর পড়লাম আমি।ইস! কি লজ্জাটায় না পেলাম আমি।বিহান ভাই আর বিভোর ভাই কি ভাবছেন।বিহান ভাই এর শরীরের উপর থেকে দ্রুত উঠে দাঁড়ালাম আমি। বিহান ভাই ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।বিভোর ভাই মিটমিট করে হাসছেন সিসুয়েশন টা দেখে।কি একটা অবস্থা কি করবো সেটাই বুঝতে পারছি না।
-বিহান ভাই ভ্রু নাচিয়ে বলেন,”কিছু শুনেছিস।”
-দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বললাম কি?
-কিছু শুনেছিস তুই।
-নাতো।
-ফুপ্পির কাছে নালিস না দিলে হচ্ছে না।উঁকি ঝুকি মারা অভ্যাস হয়েছে।এগুলা ভাল লক্ষণ না।
-দেখুন আমি এ রুমেই আসছিলাম আপনি তখন ই দরজা খুলেছেন আর আমি পড়ে গিয়েছি।
-৫ মিনিট আগে না তুই এখান থেকে বেরোলি।
-এমন সময় মামি প্রবেশ করলেন।মামি বললেন,দিয়া শুনে দেখ তো বিহানের সমস্যা কি?
বিহান ভাই মামিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,থ্যাংক্স আম্মু।আর রাগ রাগ করো না প্লিজ।তুমি না আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।তোমার ছেলের আপাতত আর কোনো সমস্যা নেই।প্লিজ রাগ করো না।মামি বললেন,থাক হয়েছে জ্বর তো আবার এসছে বিহান।
আম্মু এতটুক জ্বরে কিছুই হবে না চিন্তা করো নাতো।
________________________________
পরের দিন দুপুরে আম্মু খাওয়ার জন্য ডাকছে।খাবো নাহ বলে জিদ ধরলাম।আমরা দুই ভাই বোন আম্মুকে যে পরিমান খাওয়া নিয়ে বিরক্ত করি আম্মু খুব ই বিরক্ত এটা নিয়ে।বাসায় আমার সাপোর্ট এ ভাইয়া আর বাবা।কোনো রকম ঝোল তরকারী, মাছ এগুলা আমি খায় না।ইলিশ মাছ আর চিংড়ি হইলে কথা নেই।আম্মু সারাদিন ঘ্যান ঘ্যান করতে করতে খায় তবুও আলি ভাজি বা ডিম ভাজি নইলে মাংস।এর বাইরে কিছু হলে আমি খায় না।ভাইয়া আর রিয়া সব কিছুই খায়,ওরা খাচ্ছে আর আমি টিভি গে মটু পাতলু দেখছি।আম্মু বাজ খাই গলায় চেচামেচি করেই যাচ্ছে আমি কানে তুলা গুজে টিভি দেখছি।আম্মু এসে রিমোট দিয়ে টিভি টা অফ করে দিয়ে বললো,আজ থেকে আলু ভাজি আর ডিম ভাজি খাওয়া বন্ধ।এখন থেকে সব কিছু খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে তোর।আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম সরি আম্মু সারাজীবন না খেয়ে থাকলেও আমি এগুলা খেতে পারবো না।এগুলা খেলে আমার বমি আসে ওয়াক।আম্মু রেগে গিয়ে বললো তোকে না কতদিন নিষেধ করেছি হুট হাট মাছ খেলে বমি আসে এগুলা বলবি না।মানুষ শুনলে কি ভাববে।
কি ভাববে আম্মু।
তোর জাতের কোনদিন বোধবুদ্ধি ছিল না আর৷হবেও না।মানুষ এর মুখ এ কিছু আটকায় নাকি ভাববে কোথায় কি অকাম করেছিস।
বুঝলাম না মানুষের কি খেয়ে কাজ নেই।এগুলা আজব ব্যাপার স্যাপার কিভাবে ভাবে।
এমন সময় ভাইয়া এসে বলে, আম্মু আমাদের জাত নিয়ে কিছুই বলবা না। আমরা হলাম খানদানী।জাতের একটা দাম আছে।
তুই আর তোর বোন জীবনেও বোধ বুদ্ধি হবে না।দিয়াকে বল,ওর আর ভাজিভুজি খাওয়া হবে না।এখন থেকে তরকারী খেতে হবে।
ভাইয়া আমাকে ফিস ফিস করে বললো,দিয়া আম্মু আজ এত ক্ষেপেছে কেনো?তুই না খেলে আমাদের টোটাল খাওয়া অফ করে দিবে।
ভাইয়া কে বললাম ভাইয়া চলো আমরা এতিম খানায় চলে যায়।দুই ভাই বোন হাসাহাসি করলাম।
________________________________
Ek HaaTh Mein ShaRav, Tujo Piyoo MeRe SaaTh,,
Pittih Jaw Pittih Jaw Vhi Mein SaaRrii SaaRii RaaTh
Ek HaaTh Mein ShaRav, Tujo Piyoo MeRe SaaTh,,
Pittih Jaw Pittih Jaw Vhi Mein SaaRrii SaaRii
ভাইয়ার বক্সে গান চালিয়ে কোকাকোলা হাতে নিয়ে উরাধুরা ডান্স করছি।এমন একটা ভাব নিয়ে আছি যেনো নেশাক্ত আমি।আসলে অভিনয় করে ডান্স করছিলাম।
যাবতীয় সব পিনিক এর এক্টিং মহা দুঃখে পরিনত হলো।
তাকিয়ে দেখি বিরক্তি নিয়ে দরজায় প্যান্টের পকেটে হাত গুজে ঠাই দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।কপালে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট তার।
বুঝলাম কপালে এখন কিছু আছে।হায়রে আমার আনন্দের ডান্স।এখন কি হবে।
Leave a comment