এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৩০

9 Min Read

মারাত্মক লজ্জা পেয়ে শুভ ভাইয়া অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো।আমি বিহান ভাই এর পিছনে দাঁড়িয়ে আছি আমাকে অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না।লজ্জা আমার ও লাগছে কারণ নিজের আপণ ভাইয়ের প্রেম কাহিনী এভাবে সামনে আসলে ভাইয়া আর আমি দুজনের ই লজ্জা।
বিহান ভাই বললেন,কিস করার কথা ভাবতে ভাবতে এক যুগ কাটিয়ে দিলে কিস এর ইন্টারেস্ট থাকে শুভ।আর হ্যাঁ প্রেমিকাকে কিস করতে মোটেও লেট করিস না তাহলে দেখবি অন্য কেউ দিয়ে চলে যাবে বুঝতেও পারবি না।আমি এর ভুক্তভুগী।
“শুভ ভাইয়া মাথায় হাত চালাতে চালাতে বললেন,,আসলে ও আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলো সেটাই শুনছিলাম।”
“আচ্ছা এই যুগে বুঝি মানুষ মুখ দিয়ে শোনে।শোনার জন্য কান না এগিয়ে মুখ এগিয়ে আনছিলি বাহ।ডিজিটাল যুগে আর কি দেখতে হবে তার ঠিক নেই।আমি আগে থেকেই জানি ইয়াং ম্যান।”
মেহু আপু লজ্জায় লাল হয়ে আছে।আমি বিহান ভাই এর পকেট থেকে মানিব্যাগ টা টুপ করে এনে দোকানের টাকা গুলো দিয়ে দিলাম।যাক শান্তি এখন উনি আমাকে যা ইচ্ছা বলুক টাকা তো দিয়েছি।তাছাড়া ভাইয়ার ওখানে থাকা টাও আমার ঠিক বলে মনে হচ্ছিলো না।বিহান ভাই এর মনোযোগ ওদের দিকে ছিলো এক ঢিলে দুই পাখি ব্যাপার টা মারাত্মক না।
কিছুক্ষণের মাঝেই শুভ ভাইয়া,মেহু আপু আর বিহান ভাই এর আগমন হলো।সবার মুখে হাসি থাকলেও আমার মুখে নেই কারণ আমি জানি উনি মানিব্যাগ চুরর জন্য আমাকেই দায়ী করবেন।কারণ উনি এটা সিওর যে আমিই মানিব্যাগ নিয়েছি।
ব্রিজে লাল,নীল,হলুদ আলো জ্বলছে।চাঁদের হাট মিলিয়েছি আমরা।বিভোর ভাই বলে উঠলেন,বিহান টাকা টা নিজের ইচ্ছায় দিলেই তো হতো তাহলে দিয়ার এত কৌশল করে আনা লাগতো না।
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বললেন,কিসের কৌশল টাকা তো শর্ত সাপেক্ষ আমি ই দিলাম।
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম শর্ত আমি টাকা এনেছি আপনি জানেন।এখন স্মার্ট সাজার জন্য বলবেন জানেন তাইনা।
জানি মানে টাকা আমি না দিলে কিভাবে আনলি।তোকে না শর্ত দিলাম যে টাকা দিতে পারি কাল আমার সব গুলা জুতা পরিষ্কার করে দিবি আর জিন্স গুলা ধুয়ে দিবি।তুই তো শর্তে রাজি হয়েই টাকা টা হাতে নিয়ে নিলি দিয়া।এখন অস্বীকার করছিস।মেহু তার সাক্ষী।কি হলো মেহু বলো সবাইকে দিয়া এই শর্তে রাজি হয়েই না টাকা টা আনলো।
মেহু আপু বলে উঠলো হ্যাঁ দিয়া তুই তো শর্তেই রাজি হয়েই টাকা টা আনলি তাইনা?নিষ্পাপ বিহান ভাই এর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছিস কেনো?
ভাজ্ঞিস মেহু তুমি ছিলে নাহলে এই দিয়া এখন ই সব অস্বীকার করতো।
দিয়া যা করবি প্রমান রাখার জন্য দেখছি ভিডিও করে রাখতে হবে।না হলে একদিন নির্ঘাত প্রমানের অভাবে আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবি তুই।
মেহু আপুর দিকে তাকিয়ে রাগে চোখ ছুটে যাচ্ছিলো আমার।মানুষ এত মিথ্যা বাদী হয়।রেগে রেগে বললাম মেহু আপু আমার নামে মিথ্যা সাক্ষী দিলে আমি কিন্তু সবাইকে বলে দিবো শুভ ভাইয়া আর তোমার লাভ স্টোরি।প্রম করো আমি কি কাউকে বলেছি।তেড়িবেড়ি করলে বলে দিবো কিন্তু।
বিহান ভাই শুভ ভাইয়া আর মেহু আপু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।ওদের গালে মাছি যাওয়া আসার মতো একটা ব্যাপার।ওদের এই তাকানোর মানে হলো বলেই তো দিলি বোন বাদ আর রাখলি কোথায়।
বিভোর ভাই লাফিয়ে উঠে বলেন,আচ্ছা এইজন্য তাহলে প্রায় টাইমে একই জায়গা দেখি দুজন কে।আমাদের দিয়া হলো সময় চ্যানেল সব নিউজ ই রাখে।আরে মেহু ভাবি আসসালাম আলাইকুম। মেহু আপু যেনো স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছে আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।মনে হয় আমাকে এই ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দিবে।
বিহান ভাই বললেন,,সময় টিভি না ওর মতো কুটনি বুড়ি থাকলে শহরে আর টিভি থেকে নিউজ দেখা লাগবে না।মোড়ে মোড়ে গিয়ে সব নিউজ প্রচার করতে পারবে।
তিয়াস ভাইয়া,তোহা আপু আর রিয়া একটা শকড খেলো এতদিন তাহলে এই ছিলো তাদের মনে।তারা কেউ বুঝতেও পারে নি।শুভ ভাইয়াকে সবাই প্রশ্ন করলে বলে প্রেম করেছি বেশ করেছি আর কিছু তো করি নি।বিয়ে যখন করতেই হবে ফুফাতো বোন করাটাই বেটার।সুন্দরী ফুফাতো বোনদের প্রতি মামাতো ভাই এর হক আগে থাকে।এত সুন্দর ফুফাতো বোন বিয়ে করবে অন্য কেউ এটা তো হতে দেওয়া যায় না।
তিয়াস ভাইয়া বললো,শুভ ভাইয়া ফুপ্পিকে আবার বেবি নিতে বলো।এইবার মেয়ে হলে আমি বিয়ে করবো।
আমার শালী তোর জন্য বরাদ্দ নয় বুঝলি।
বিহান ভাই বললেন ফুফাতো বোন রা কি আসলেই সুন্দরী হয় তাহলে দিয়া এত পেত্নী কেনো।তাও মাখে নাইট ক্রিম।আজ ও তেমন একটা উন্নতি হলো না চেহারার।এখন এই নদী থেকে যদি ধুইয়ে নিয়ে আসি তাহলে মোটেও চেনা যাবে না।
পেত্নি তাইতো.. …
এটুকু বলতেই আমার মুখ চেপে ধরে খানিক টা দূরে নিয়ে এলেন।হাত চেপে ধরে আছে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরে বললেন,একদম কথা বললে এখান থেকে ফেলে দিবো ফাজিল মেয়ে কোথাকার।
তুই কি বড় হবি না। মেহু আর শুভর প্রেম কাহিনী ফাঁশ করে বলছিস বলে দিবো।তাহলে বলার আর বাকি থাকলো কি শুনি।তোর যে মেঝ কাকার মেয়ে তোহা ওইটা কি ভালো।গিয়েই ওর আম্মুর কাছে গিয়ে বলে প্যাঁচ লাগাবে।এটা নিয়ে আমার ফুপ্পিকেই কথা শোনাবে এটা বুঝিস না তুই।আর আমাদের কথা কি বলতে যাচ্ছিলি।সবাইকে বলবি বাট ভুলেও তোহার সামনে নয়।মেয়ে সুবিধার না আমার আগেই বোঝা হয়ে গিয়েছে বুঝলি।তুই না পিচ্চি ই থেকে গেলি।
বলে দিয়েছি বেশ করেছি।আমার নামে মিথ্যা সাক্ষী।
ওইটা তো মেহু ভয়ে বলেছে ও ভাবছে নইলে ওর আর শুভর ব্যাপার টা আমি বলে দিবো।ও যে ভয়ে যা করলো তুই তো সেই বোম ব্লাস্ট করেই দিলি গাধী।
_________________________________
আমার এইস এস সি পরীক্ষা সামনে।লেখাপড়ায় পূর্ণ মনযোগ দিলাম।মিষ্টার বিহান উনি আমার টিচার। প্রেমিক না টিচার আল্লাহ ই ভালো জানেন।আমাদের যে প্রেম ভালবাসা হয়েছিলো উনি মেবি ভুলে গিয়েছেন।যে মুডে থাকেন আমি যে উনার প্রেমিকা তেমন কোনো ভাব ই নেই।অনেক দিন ঘোরাঘুরি হয় না কোথাও।অনেক গুলো দিন কেটে গিয়েছে মাঝে।বিহান ভাই এর প্রথম ইয়ার শেষ প্রায় যখন তখন আমি ইন্টার প্রথম বর্ষে ছিলাম।এখন উনি ফাইনাল ইয়ার এর এক্সাম দিবেন অথচ আমাদের ইন্টার পরীক্ষায় এখনো হলো না।আমি ইংলিশ এ বেশ খানিক দূর্বল থাকার জন্য বিহান ভাই আমাকে এইস এস সি তে এক ইয়ার গ্যাপ দেওয়ালেন।আমার সাথে সাথে রিয়ার ও গ্যাপ থেকে গেলো।অতপর পরীক্ষার সময় এসেছে।
শহর থেকে খানিক দূরে নির্জন এক দ্বীপে আমরা পিকনিকে যাওয়ার প্লান করলাম।প্রায় মানুষ ই ওখানে পিকনিক এ যায়।সারারাত প্লান করে পরের দিন আমরা সবাই রওনা হলাম।বিহান ভাই একটু লেট করেই আসছেন উনার বাইকে।উনার ব্যাংকে কিছু কাজ পড়েছে হঠাত করেই।বাইক নিয়ে সবাই ছুটেছে ছেলেরা তাদের পেছনে আমরা।বিভোর ভাই এর বাইকের পেছনে আমি।তিয়াশ ভাই এর বাইকের পেছনে রিয়া।আলিপ ভাই এর বাইকের পেছনে তোহা আপু।শুভ ভাইয়ার বাইকের পেছেনে মেহু আপু।বিকালের দিকে রওনা হলাম কারণ রাতে ওখানে আজকে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান আছে।সেটা দেখার জন্য ই যাওয়া।
হঠাত বিভোর ভাই এর বাইকের তেল ফুরিয়ে গেলো।বিভোর ওদের বললেন তোরা এগিয়ে যা বিহান তেল নিয়ে আসলে আমরা আসছি।বিহান ভাই কে ফোন দেওয়া হয়েছে উনি তেল নিয়ে আসছেন।
কিভাবে টাইম পাস করবো অনেক টাইম হয়ে গিয়েছে।সন্ধ্যার ললাট রূপ ও ধারণ করে ফেলেছে প্রায়।ফোন আর কতক্ষণ চালাবো বিরক্ত লাগছে খুব।বিভোর ভাই কে বললাম আসুন আমরা সেল্ফি নেই বিভোর ভাই।চারদিকের প্রকৃতি বেশ সুন্দর আছে।আমরা ভাই বোন সে ভাবেই একটু কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম।ঘর্ণায়মান সন্ধ্যার এমন রূপে আমাদের দুজন কে দেখে হুট করে দুজন মহিলা আর চারজন পুরুষ এসে বললো কি ব্যাপার নষ্টামি করতে এখানে এসেছো তাইনা?এই মেয়ের সাথে সারারাত এখানে কাটিয়ে কাল একে ছেড়ে দিবা তাইনা?আজকাল এসব ই ঘটছে চারদিকে।এসব ভন্ডামি চলবে না।প্রেমিকা নিয়ে ঘুরতে এসে সারারাত ফূর্তি করে পরের দিন কাশবনে ফেলে চলে যাবা।আমি আর বিভোর ভাই বিস্মিত হয়ে গেলাম উনাদের কথা শুনে।আমাকে আর বিভোর ভাই কে নিয়ে এমন কথা ভাবা যায় ছিঃ।বিভোর ভাই রেগে গিয়ে বললেন,দেখুন ও আমার বোন মোটেও বাজে কথা বলবেন না।একজন মহিলা বলে উঠলেন বোন কেমন বোন শুনি।বিভোর ভাই বললেন,ফুফাতো বোন কিন্তু আপন বোনের মতোই।একজন বলে উঠলেন,রসুল কাকাকে ডাক দাও উনার নামাজ পড়ানো হলে এসে বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে যাক।এখন থেকে যেখানে এমন দেখবো ধরে বিয়ে করিয়ে দিবো।
কথাটা শুনেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো আমার।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।