এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৩২

7 Min Read

প্রকৃতির প্রচন্ডে তান্ডবে উন্মুক্ত খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি আমরা দুজন সদ্য বিবাহিত নব দম্পতি।উথাল পাথাল বাতাসে আমার গাড় লাল জরজেট ওড়ণা উড়ে গিয়ে উনার মুখে ছেয়ে গেলো।প্রচন্ড বাতাসে উনার সিল্ক চুল গুলো উড়ছে আমার সামনে এই মুহুর্তে যেনো পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যুৎ এর আলোকরশ্মি মিনিটে মিনিটে জ্বলে উঠছে, সেই আলোতে উনার মুখে ছেয়ে থাকা আমার ওড়ণা টা চকচক করছে।ঝোড়ো হাওয়া,ঠান্ডা প্রকৃতি এমনিতেই প্রেমিক হৃদয়ে ভালবাসার বাসনা সৃষ্টি করে সেখানে ওনার জীবনের একমাত্র নারী যাকে সদ্য বিয়ে করেছে সে সামনে দাঁড়িয়ে সেই মুহুর্তে উনার মনে প্রেমের নেশা অতিরিক্ত ভাবে উনাকে মাতাল করবে এটাই স্বাভাবিক।নেশাক্ত নয়নে এগোচ্ছিলেন আমার দিকে।আমি লজ্জা ভয় দুটো মিলিয়ে একাকার করে ফেলছিলাম।উনার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।যেমন উথাল পাথাল ঝড় তেমন বৃষ্টি এক মিনিটেই ভিজে একাকার হয়ে গেলাম।উনি এক পা দু পা করে এগিয়েই আসছেন।ভেজা শরীরে উনার দিকে হাত বাড়ালাম উনার দিকে ওড়না টা নেওয়ার জন্য উনি ওড়না টা এক হাতে পেচিয়ে প্রচন্ড ঝুম বৃষ্টিতে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলেন।লজ্জায় মরি মরি অবস্থা, চোখ কোনো ভাবেই খুলতে পারলাম না।মনে মনে এটাই বললাম এই বৃষ্টি বার বার সর্বনাশ করে আমার।যত বার বৃষ্টিতে উনার মুখোমুখি হয়েছি ততবার ই কিছু না কিছু ঘটেছে।প্রচন্ড জোরে বজ্রপাত হওয়াতে ভয়ে মাথা উনার বুকে মিশিয়ে জড়সড় হয়ে রইলাম।কি অদ্ভুত শিহরন উনার এই নেশাক্ত স্পর্শ তে।নেশার কিছু না খাইয়ে একটু স্পর্শ করে কিভাবে একটা মানুষের শরীরে নেশা ধরিয়ে দেওয়া যায় সেটা বোধ হয় উনিই ভালো জানেন।
কুড়ে ঘরের ছনের চালের ছাউনি দিয়ে কি সুন্দর পানি ঝরে পড়ছে।চারদিকে দিঘীতে পানির ঝরণা বয়ে চলেছে।উনি কোলে তুলে নিয়ে ছাউনির নিচে গেলেন।প্রায় বিষ মিনিট হয়ে গিয়েছে কারো মুখে কোনো কথা নেই নিরবে দুজন দুজন কে অনুভব করছি।অপলক নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে, উনার চোখের পলক ই পড়ছে না।তার কিছুক্ষণ পরেই বিহান ভাই আমাকে উনার কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললেন,,এত লজ্জা কেনো পাচ্ছো দিয়া।
উনার মুখে আমার নাম সহ তুমি সম্বোধন শুনে অবাক করা নয়নে তাকিয়ে রইলাম।ভেজা গায়ের সাথে লেপ্টে যাওয়া শার্টে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন উনি আর স্নিগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।এই চাওনি আর এই তুমি সম্বোধন দিয়া ডাকে কি এটাই বুঝালো তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।
“এভাবে নেশাক্ত নয়নে তাকিয়ে আছো কেনো দিয়া?হয় আমাকে তোমার খুব কাছাকাছি আসতে দাও নয়তো কিল মি প্লিজ!উনার কথা আরো লজায় ফেললো আমায়।”
“আপনি তো আমাকে কখনো তুমি বলার সময় দিয়া বলেন না।”
“এখনের তোমাতে আমার বউকে খুজে পাচ্ছি দিয়া।আর বউ কে নাম ধরে তুমি বলে ডাকলেই আদর আদর মিষ্টি মিষ্টি ভাব থাকে।”
“লজ্জায় চিবুক নামলো আবার ও আমার।”
“তোমাকে ওই মহিলা কি বললো দিয়া।আজ ফুলসজ্জা আমাদের।”
“ফুলছাড়া ফুলসজ্জা কিভাবে শুনি।”
“ফুল আনলে ফুলসজ্জা করবে?”
“হ্যাঁ ফুলের বিছানায় সুয়ে থাকবো ফুলের সজ্জা হবে।”
“সাথে তোমার হজবেন্ড থাকলে তো অনেক কিছু হবে।”
“বার বার লজ্জা দিচ্ছেন কেনো শুনি?আপনি আমার হজবেন্ড এটা ভাবতেই লজ্জা লাগছে খুব।”
“এটা তো হওয়ার ই ছিলো ।এই কিশোর মনের ভালবাসা তুমি কি বুঝবে পিচ্চি।”
“এই বৃষ্টির সব দোষ। আপনার কিশোর মনে আমার আনাগোনা এই বৃষ্টি ই সৃষ্টি করেছে।”
“বৃষ্টি আমার জন্য অনেক লাকি।এই বৃষ্টি আমাকে দিয়েছে প্রথম প্রেমের অনুভূতি,, এই বৃষ্টি আমাকে দিয়েছে প্রেমিকাকে মনের কথা জানানোর সুযোগ।এই বৃষ্টি আমায় দিয়েছে তোমায় বউ বানিয়ে সোহাগ রাতে বৃষ্টিবিলাস করার সুযোগ।”
কপালে চুম্বন করে বললেন,
হে বৃষ্টিবিলাসী পিচ্চি,
তোমার বৃষ্টি বিলাসে কেনো আমাকে ভেজালে।আমাকে না ভেজালে তো তোমার প্রেমের অনলে পুড়তাম না।বার বার বৃষ্টি কন্যা রূপে আমার সামনে কেনো এসে আমাকে তোমার মনের মেঘ হতে বাধ্য করো।
দিঘিতে অনেক লাল লাল শাপলা ফুল ফুটেছে।বিহান ভাই কত গুলা লাল শাপলা এক ঝটকায় তুলে আনলেন।ফুল গুলো ঘরের মধ্যে ফেলে আমার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালেন।
হটাত মেঘের গর্জনে ছিটকে গিয়ে উনার বুকে পড়লাম।প্রচন্ড ঠন্ডায় কাঁপছি।উনাকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরলাম।কি হচ্ছিলো কিছুই জানিনা।মানুষ টা কখন ঠোঁটের খুব কাছাকাছি এসেছে জানিনা।ওষ্টের সাথে ওষ্ট মিলিয়ে মাদক নেশার মতো লেগে ছিলেন।প্রতিটা আদরের স্পর্শ ভীষণ ভাল লাগছিলো আমার।কখন ঝড় বৃষ্টি থেমেছে জানিনা।কত সময় পার হয়ে গিয়েছে তাও জানিনা।বেডের উপর লাল শাপলার পাপড়ির ছড়াছড়ি। বুঝতে বাকি রইলো না শাপলা দিয়েই ফুল সজ্জার খাট সাজিয়েছেন। হঠাত খেয়াল হলো গলায় ঠোঁট ডুবিয়ে সুয়ে আছেন বিহান ভাই আমাকে জড়িয়ে নিয়ে।বিছানায় কখন এসছি কিছুই জানিনা।এই ভেজা কাপড় নিয়ে বিছানায়।কখন বৃষ্টি থেমেছে আকাশ আবার পরিষ্কার,,আবার চাঁদ তারা ফুটেছে।আজ কি সত্যি দিন আর রাত টা আমাদের জন্য ছিলো।আমার বিয়ে,বৃষ্টি বিলাশ, উনার সাথে ফুলসজ্জা,আবার চাঁদনি রাত।ভীষণ লজ্জা লাগছে উনাকে মুখ দেখাবো কিভাবে।
বিহান এর ফোনে ফোন আসাতে বিরক্ত হয়ে বলেন,,ফোন মাই ফুট কোন ডাফার এমন টাইমে বিরক্ত করে।
“বার বার কল আসাতে রিসিভ করে বললেন,কি হয়েছে ভাই ”
“কি করিস ভাই?”
“ফুলসজ্জা করছি”
“বিয়ে করলি কখন।”
“দুই ঘন্টা আগে করেছি।”
“নাইস জোকস বাট তুইও পারিস।না মানে ফুলসজ্জা।”
“টাইমলি সব পারি।রাখ ফোন।”
কল টা কার ছিলো জানিনা।প্রশ্ন ও করি নি।আমি এক ঝটকায় বিছানা ছেড়ে উঠলাম।ভেজা কাপড়ে ঠান্ডা জমে গেছে শরীরে।আমার সাথে উনিও উঠলেন।
“বিহান ভাই উনার ব্যাগ থেকে লং একটা শার্ট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,এটা পর ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“নিচে কি পরবো?প্লাজু বা সালোয়ার টাইপ কিছু কই পাবো।”
“আন্ডারওয়্যার পরবি আমার।”
“কিহ!আমি ওসব পরতে যাবো কেনো?আর ওড়না ও নেই।কি ফাজিল ছেলে ভাবা যায়।”
“আগে এটা পরে নে।থ্রি কোয়ার্টার দিচ্ছি। পিচ্চি মেয়ের আবার ওড়না লাগে।যা দেখার তাতো দেখেই ফেলেছি।আমি উনার কথা লজ্জায় বাকশক্তি হারালাম।”
“ওনার সাদা শার্ট পরে নিলাম।হাঁটু অবধি পড়েছে আমার।ওই ছয় ফিট মানুষের সামনে আমি আসলেই পিচ্চি।কি অসভ্য একভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কাজুবাজু ভাবে বললাম।এভাবে তাকিয়ে থাকলে পরবো কিভাবে।”
উনি ঘরের বাইরে গেলে আমি থ্রি কোয়ার্টার পরে নিলাম।
“বেশ কিছুক্ষণ সময় পরে উনি ফিরে এলেন।আমাকে বললেন চোখ অফ কর তো।”
“অবাক হয়ে বললাম কেনো?”
“আহা!কর না।”
“চোখ অফ করে বললাম,বলুন কি?”
“হাতে কি যেনো একটা পরিয়ে দিয়ে বললেন হ্যাপি ফুলসজ্জা পিচ্চি বউ।”
আমি চোখ খুলে অবাক হয়ে যায়।হাতে চিক চিক করছে একটা রিং।রিং টা ঘাস আর ঘাস ফুল দিয়ে বানানো।প্রকৃতির বানানো জিনিস এতটা সুন্দর হয়।আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম।
উনি বললন,বাসর রাতে কিছু দিতে হয়।এখানে দামি জিনিস নেই দেওয়ার মতো।তাই এই প্রকৃতি থেকে নেওয়া জিনিস দিয়ে ফুলসজ্জার গিফট বানিয়ে ফেললাম।আমি যে অনেক খুশি হয়েছি উনি আমার চোখ দেখেই বুঝে গেলেন।
ব্যাগ থেকে ড্রেস নিয়ে নিজেও চেঞ্জ করে নিলেন।ছেলেটার ঢাকা যাওয়া আসার ব্যাগ টা ভাজ্ঞিস ছিলো।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।