এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৫৫

8 Min Read

“ক্লাসে স্যার আসলে বা স্যারের সাথে কথা বলার সময় উঠে দাঁড়াতে হয় জানেন না।”
“আমিতো দাঁড়িয়েই আছি বিহান ভাই সরি স্যার।”
“বিহান ভাই চারদিকে তাকিয়ে দেখেন সবাই মুখ চেপে হাসছে।আমার তো খেয়াল ই নেই এটা কলেজ এখানে ভাই টাই বলা যাবে না।স্যার বলতে হবে।কি একটা অবস্থা চারদিকে সবাই হাসাহাসি করছে তারা কি না কি ভাবছে তার ঠিক নেই।বিহান ভাই এর ও কি হাসি পাচ্ছে আমার কথা শুনে।মুখে মৃদু মৃদু হাসি উনার।অদ্ভুত চাহুনি তে তাকিয়ে আছেন দিকে।”
আমার পেছনের বেঞ্চের একটা মেয়ে বলে উঠলো তুমি স্যার কে ভাই বলছো বলেই হেসে দিলো।
নিজেকে যেনো ভীষণ বলদ মনে হচ্ছে।যাকে মিনিটে ৩৬ বার ভাই ডাকি তাকেই আজ ভাই ডাকার অপরাধে লজ্জা পেতে হচ্ছে।ফ্যাকাসে একটা হাসি দিয়ে বললাম আসলে উনার মতো আমার একজন ভাই আছে তার নাম ও বিহান তাই ভুলে ভাই ডেকে ফেলেছি।চারদিকে সবার হাসির ছড়াছড়ি।বিহান ভাই একটা ধমক দিয়ে বললেন সাইলেন্ট প্লিজ।মিস্টেক হতেই পারে এটা নিয়ে এত বিশৃঙ্খলা করার কিছুই নেই।আর হ্যাঁ আমার ক্লাসে অযাযিত কথা, হাসাহাসি,কোলাহল, পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো সিসুয়েশণ কেউ সৃষ্টি করবেন না।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন মিস দিয়া সিট ডাউন প্লিজ।আর এতটা নারভাস হবেন না প্লিজ।নেক্সট ক্লাস গুলোতে বুকে সাহস রেখে ক্লাসে ফোকাস করবেন।মনে রাখবেন আপনি এমন একটা জায়গা এসেছেন এখানে ভীতু হলে চলবে না নিজেকে স্ট্রং না করলে টিকে থাকা মুশকিল হবে।ডোন্ট আপসেট প্লিজ।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে নিজের সিটে বসে পড়লাম।আচ্ছা একটা মানুষ এতটা কেয়ারিং কিভাবে হতে পারে।আমাকে প্রতিটা ক্লাসে মনোযোগী হতে কিভাবে সাহস যুগিয়ে গেলেন।
বিহান ভাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন উনার টাইম শেষ।নেক্সট আরেকজন প্রফেসর প্রবেশ করলেন।এই প্রফেসর টাও কোনদিকে কম যায় না।দেখতে শুনতে বেশ সুন্দর খুব ফরসা না হলেও দেখতে ভারী মিষ্টি আর লম্বা সরু নাক এর অধিকারী। উনাকে দেখে সামনের বেঞ্চের মেয়ে গুলা বলাবলি করছে এই কলেজের সব স্যার রাই কি ড্যাশিং নাকি।দুনিয়ার সব কিউট কিউট ছেলে কি এখানে।রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,এই মেয়েগুলা এত ছ্যাচড়া কেনো রে।দেখ একটা ভালো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না আশ্চর্য। রিয়া হেসে দিয়ে বললো বুঝেছি বিহান ভাইকে নিয়ে তখন কমেন্ট করাতে তোর খুব ফাটছে তাইনা দিয়া।বুঝিস না খুব রাগ হয় আমার আজ উনার খবর আছে।
প্রফেসর বলে উঠলেন হ্যালো আমি নির্বাণ চৌধুরী।আপনাদের সাথে সপ্তাহে তিনদিন আমার ক্লাস থাকবে।সবার পরিচয়পর্ব টা আগে নেই।উনি সবার সাথে হাই হ্যালো করে পরিচয় নিচ্ছেন।আমার সামনের বেঞ্চে বসা অনিকা মেয়েটি বললো হ্যালো স্যার আমি অনিকা সিকদার আপনি চাইলে অনি ডাকতে পারেন আমার ভাল লাগবে।স্যার হেসে উত্তর দিলেন নাইস নেইম সিট ডাউন।স্যার এবার আমার সামনে আসাতেই আমি উঠে দাঁড়ালাম।আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন উত্তর দিলাম স্যার আমার নাম দিয়া।স্যার হেসে বললেন অনেক পিচ্চি দেখতে আপনি।দেখে মনেই হয় না কলেজ পেরিয়ে গিয়েছেন।এত পিচ্চি মেয়ে আগে দেখি নি।স্যারের মুখে এমন কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।
“ক্লাস শেষ হতেই পেছনের বেঞ্চের একটা মেয়ে বললো পিচ্চি দিয়া আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি।আমি হেসে বললাম সিওর কি নাম তোমার।মেয়েটি বললো সিয়া।”
“কিউট নাম তোমার।”
“তুমি আর রিয়া ও অনেক কিউট।তার থেকে বেশী কিউট তোমার কথা বিহান স্যার কে তখন উনি বললে কেনো?একদিনেই উনি।”
“নারভাস হয়ে গেছিলাম তো তাই।”
“ওইযে অনিকাকে দেখছো।এক সাথে মেডিকেল কোচিং করেছি।এতযে গায়ে পড়া জানো না।কোচিং এ একটা হ্যান্ড সাম স্যার দেখলেই সেইম করতো হাই আমি অনিকা চাইলেই অনি ডাকতে পারেন।এটা ওই মেয়ের কমন ডায়লগ কি অসহ্য লাগে যে।নির্বাণ স্যার আর বিহান স্যারের দিকে নজর গিয়েছে লে স্যারদের অতিষ্ট করে ছাড়বে।”
“কি বলো সিয়া ওই অনিকা এমন মেয়ে।”
“আরে হ্যাঁ এমন ই।”
ক্লাস রুম থেকে বেরোতেই পেছণ থেকে কেউ একজন ডাকলেন তাকিয়ে দেখি প্রফেসর নির্বাণ।রিয়া আর আমি দুজনের থেমে গেলাম।উনি আমাদের কাছে এসে বললেন মিস দিয়া আপনাদের দুজনের জন্য ছোট্ট একটা গিফট। গিফট শুনেই অবাক হয়ে গেলাম গিফট কেনো?কোনো স্যার বুঝি গিফট ও দিতে জানে।রিয়া বললো স্যার কি গিফট। স্যার রিয়ার হাতে দুইটা পেন আর দুইটা চকলেট দিয়ে বললেন রিয়া একটা আপনার আরেকটা উনাকে দিবেন প্লিজ বলেই স্যার চলে গেলেন।রিয়া আমাকে বললো কিরে দিয়া ডাল মে কুচ কালা হে না।স্যার চকলেট তোকে না দিয়ে আমাকে দিয়ে দেওয়াচ্ছেন ক্যানো?কি কাহিনী?উনার চোখ মুখ সুবিধার লাগছে না কিন্তু।তোর দিকে কিভাবে যেনো তাকায় উনি।রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম তোর কি সব সময় এসব উদ্ভট চিন্তা ছাড়া আসে না।উনি প্রফেসর আর প্রফেসর রা বাবার মতো হন জানিস না।রিয়া বললো তাহলে বিহান ভাই কি?উনি শুধু আমার দিল্লিকা লাড্ডু আর বাকিদের বাবার সমান বুঝলি।
এইদিকে প্রেয়সী আপু আবার লাইব্রেরিতে অপেক্ষা করছেন।রিয়াকে নিয়ে লাইব্রেরির দিকে রওনা হলাম।লাইব্রেরিতে প্রবেশ করার আগেই কেউ একজন হাত ধরে টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।বুকের মাঝে আচমকা দুরুম দুরুম সাউন্ড শুরু হলো।হাত ধরে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে খানিক টা ঝুঁকে চেয়ারের দুই হাতল ধরে আছেন বিহান ভাই।
“উনাকে দেখেই উঠতে গেলাম কিন্তু উনার হাতের বন্ধনীর জন্য উঠতে পারলাম নাহ।উনার কপালে কয়েক টা ভাজ পড়ে গিয়েছে।ভ্রু নাচিয়ে বললেন কি ব্যাপার এত নড়ছিস ক্যানো?আর বসে থাকতে কি খুব অসুবিধা হচ্ছে। উঠার চেষ্টা করা হচ্ছে কেনো?”
“আপনি না আমার স্যার আপনার সাথে কথা বললে তো উঠে দাঁড়িয়ে বলতে হবে তাই?”
“তাইনা পিচ্চি?সেটা ক্লাসরুমে।আমার পারসোনাল রুমে নয় মিসেস বিহান।”
“ছাড়ুন তো আপনি?সাত সাত টা দিন ঢাকায় এসছি কোনো খবর নিয়েছেন?”
“খবর নেই নি বলছো?”
“না বাসায় গিয়েছেন আপনার ফুপ্পির সাথে দেখা করতে আমার সাথে না।”
“তা ফুপ্পিকে অভারটেক করে তোর সাথে কথা বললে ফুপ্পি কি ভালো চোখে নিতো ব্যাপার টা।।”
“আপনি এমনিতেও আমাকে এখন গুরুত্ব দেন না।এত সুন্দরী মেয়েদের মাঝে আমাকে ভাল লাগে না বুঝি তো।আমি তো পুরাণ হয়ে গেছি তাইনা বিহান স্যার।”
“বিহান স্যার এর কাছে আপনি আজ ই প্রথম স্টুডেন্ট। তাই স্টুডেন্ট হিসাবে একেবারে নিউ আপনি?”
“আর বউ হিসাবে?”
“থাক এটা এখন বলবো না। এটা বলবো বাসর ঘরে।”
“এখনি বলেন আপনি?.”
“উহু এত ভয়ংকর প্রেমের বর্ণনা এইভাবে দিতে পারবো না।এনি ওয়ে এখানে কি অনেক সুন্দরী মেয়েরা দিয়া।”
“হ্যাঁ আমি বাদে সবাই খুব সুন্দরী। ”
“এখানে যে আগে মেয়েরা থাকতো সেটা জানতাম বাট সুন্দরীরা ছিলো সেটা জানতাম না।তবে দিয়া আজ ভীষণ সুন্দর একটা মেয়ে দেখে ক্রাশ খেয়েছে।মেয়েটা তোদের সাথেই পড়ে।বিলিভ নি এত সুন্দর মেয়ে আগে দেখি নি আমি।হাউ কিউট।”
” ক্ষীপ্ত নয়নে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,কে ওই অনিকা নাকি বিহান ভাই।”
“নাম বলবো না শুধু এটুকু বলতে পারি এ শহরে আজ ভালবাসা এসেছে।সে এসেছে এ শহরে।তার প্রবেশে এ শহরে প্রতিটি কোনায় কোনায় ভালবাসারা বাসা বেঁধেছে।এ শহর আজ আমার দিয়া।তার আগমন ঘটেছে আজ আমার শহরে।”
“বাহ বিহান ভাই বাহ!আমাদের এতদিনের রিলেশন আর আপনি এখন অন্য মেয়েতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।”
“পড়লে আর কি করার।যাক বাদ দে কিছু খেয়েছিস।”
“না খাই নি।”
“কেনো খাস নি।”
“তোর কিপটা বাপের টাকা বাঁচাচ্ছিস তাইনা?এত টাকা দিয়ে কি করবি।না খেয়ে টাকা জমিয়ে কি ওপারে গিয়ে জমি কিনবি।তোর দাদা ও হাড় কিপটা ছিলেন।তোদেএ বংশ ধরেই হাড়কিপটা। তুই তাদেএ মেয়ে দেখেই বোঝা যাচ্ছে”
“দেখুন বাজে কথা বলবেন না একটুও বলে দিচ্ছি।”
“না খেলে ঠিক ই বাজে কথা বলবো।ক্লাস কেমন লাগলো?”
“নির্বাণ স্যারের ক্লাস বেশ ভাল লেগেছে।”
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে আর বললেন রিয়েলি।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।