দিয়া আজ সাদা আর পিংক কালার মিক্সড করা শাড়িটা পরবা প্লিজ।রোজ তো থ্রি পিছ পরাই দেখি আজ শাড়ি পরা দেখতে মন চাইছে বলতে পারো এটা আমার আবদার।উনার ফোন টা কেটে ছুটে আলমারির কাছে এলাম।আলমারির উপরে ওয়ালে উনি আমার গালে হলুদ লাগাচ্ছেন সেই ছবিটা টাঙানো।ছবিটা রোজ দেখি আমি ছবিটা কত জীবন্ত।গতকাল ই আমরা ঢাকাতে এসছি। বিহান ভাই উনার বাড়ি,গাড়ির, আলমারি সব কিছুর চাবি আমার হাতে তুলে দিয়েছেন।উনার নিজ হাতে সাজানো এই সংসার টা আমাকে উপহার দিয়েছেন।আমি আলমারি টা খুলে হন্য হয়ে খুজছি সাদা রঙের শাড়ি।অনেক গুলো শাড়ির ভিতর থেকে সাদা আর পিংক কালার মিক্সড শাড়িটা পরে সুন্দর করে কাজল পরে চুল ছেড়ে রুমময় পায়চারী করছি উনার জন্য।কিছুক্ষণের মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো আমি ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।পড়ন্ত বিকালের সোনালি হালকা সূর্যের কিরণ আমার মুখের উপর পড়লো।প্রিয় মানুষ টার জন্য অপেক্ষা করার পর তার আগমণ হলে মনে হয় যেনো একটা সাগর পাড়ি দেওয়ার পর তার সাথে দেখা হলো।বিহান ভাই দরজায় এক হাত বাঁধিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আমার দিকে স্নিগ্ধ নয়নে তাকিয়ে।এক গুচ্ছ সাদা ফুল আমার হাতে দিয়ে বললেন শুভেচ্ছা মিসেস বিহান আমার এই ছোট্ট বাড়িতে তোমার আগমনের জন্য।ফুলের তোড়া টা হাতে নিয়ে ফুলের সুবাস নাকে নিয়ে মাটির বড় ফুলদানিতে রেখে দিলাম।উনি আমার হাত দুটো ধরে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন আই লাভ ইউ পিচ্চিটা।উনার হাতে থাকা সদ্য তুলে আনা বেলি ফুলের গাজরা টা আমার চুল নিজ হাতে খোপা করে পরিয়ে দিলেন।হাত ধরে আস্তে ধরে আজকে আনা নতুন কাঁচের লাল সাদা চুড়ি পরিয়ে দিলেন।আমি চুড়ি গুলো উনার মুখের উপর ধরে রিনিঝিনি শব্দে বাজালাম উনি মুগ্ধ হয়ে দেখছেন আমার বাচ্চামো।আমাকে বললেন,একদিন ও আমার শার্টের বোতাম আর আমি খুলতে পারবো না।আমার সমস্ত কাজ তোমাকে করতে হবে, না বললে হবে না আমি তোমাকে দিয়েই করাবো।মিহি কন্ঠে বললাম কি কাজ বলুন।আমার হাত দুটো ধরে উনার বুকের কাছে নিয়ে বললেন বোতাম খুলে দাও।রোজ শার্টের বোতাম তুমি খুলে দিবা, আমি সাওয়ার থেকে আসলে শার্ট পরিয়া দিবা,রেগুলার খাইয়ে দিবা এগুলোর দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে।আমি শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললাম এতটুকুই চাওয়া।উনি হেসে বললেন,রোজ রাগাবো আগের মতোই সেগুলো ও সহ্য করতে হবে।আমিও হেসে সহমত দিলাম।
আগের মতোই উনার বকুনি রাগ জিস আর ভালবাসা নিয়েই চলছে আমাদের সুখের জীবন।
———————————————————-
আপনি আমাকে কাজের মহিলা রেখে দিন সারাদিন সংসারের কাজ সামলানোর জন্য বই নিয়ে বসতে পারি না। পরে আবার ক্লাসে গিয়ে আপনার ই বকা খেতে হয়।ক্যানো সব সময় সব কিছু আমাকেই কেনো খেতে হবে।বাসায় থাকলে আপনার অফুরন্ত চুমু খেতে হয় আর ক্লাসে গিয়ে পড়া না পারলে আপনার ই হাতের বকা খেতে হয় হুয়াই? এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে সোফার কুশন কভার গুলো চেঞ্জ করছি।উনার দিকে তাকিয়ে দেখি পা মেলে দিয়ে পায়ের উপর ল্যাপটপ রেখে চাপাচাপি করছেন।আমার মুখে এমন অদ্ভুত কথা শুনে উনি কপালের চামড়া ভাজ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনাকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললাম কি দেখছেন রাক্ষস দের মতো তাকিয়ে আছেন?আমার কাজের মহিলা চাই বুঝেছেন।
-উনি সন্দিহান ভাবে বললেন,বিয়ে হয়েছে আজ ২৬ দিন দিয়া এই ২৬ দিনে কি কি কাজ করেছিস তুই?সকালে ডেকে তুলে ব্রাশ করিয়ে গালে খাবার তুলে খাওয়াতে হয় সে কিনা কাজের জন্য বই পড়তে পারে না হাউ ফানি।নিশ্চিত আজ আবার পড়া রেডি করিস নি তুই তাইনা এইজন্য অগ্রিম একটা অজুহাত খুজে রেখেছিস।আজ পড়া রেডি না হলে সারারাত ঘুমোতে দিবো না বলে দিলাম।লেখাপড়ায় ফাঁকি দিলে আমি প্রশ্রয় দিবো না সেটা।আমি তোর বাবা না যে বলবো থাক মা আজ ঘুমোও।
-দেখুন সত্যি বলছি আমি কাজ করতে করতে সারাদিন দু দন্ড বসার ও টাইম পাই না।আমার একটা কাজের বুয়া চাই ই চাই।
-সিরিয়াল দেখা ছাড়া কোন কাজ করিস তুই।আমাকে কি অত্যাচারী হজবেন্ড প্রুভ করতে চাইছিস তুই।আমি বউ কে কাজ করিয়ে অত্যাচার করছি। বাসার সব কাজের জন্য তো খালা আছেই।খালা তো আছেই আরো এক্সট্রা কাজের লোক দিয়ে কি করবি? মাথার উকুন আনাবি নাকি।
-দেখুন উনি তো খালা হয় তাই আমার খারাপ লাগে কাজ করাতে।আমি বলতে পারি না কোনো কাজের কথা।তাই একজন কাজের বুয়া রেখে দিন যাকে বুয়া বলে ডাকতে পারি। খালা টালা হয় এমন মানুষ আর দেখবেন না।এনি ওয়ে আমার মাথায় উকুন হলো কবে।একদম বাজে কথা বললে গলা কেটে দিবো বলছি।কবে উকুন দেখেছেন আপনি?
-উকুন তো সারাজীবন ই ছিলো। উকুন এ ভরপুর তোর চুল। তোর নাম তো উকুনযুক্ত রাজ্যর রাণী দিয়া।
-দেখুন মেহু আপুর পাশে ঘুমোলে মাঝে মধ্য দুই একটা উকুন হয় আরকি?বাট একদিনেই আবার চলে যায় শ্যাম্পু করলে।
-ইয়াক দিয়া তোর পাশে আর ঘুমোবো না।আজ ই নাপিত ডেকে ন্যাড়া করে দিবো তোর মাথা।দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।উকুনে ভরপুর চুলের থেকে শূন্য মাথা বেশী ভালো।
-বিহানের বউ টাক হলে সেটা কি ভালো দেখাবে বিহান ভাই?
-তুই আমাকে জাস্ট বিহান ডাকবি? বাট এই ভাই শব্দ টা শুনলে ফিলিংস হারিয়ে ফেলি।তাই ভদ্র মহিলাদের মতো স্বামিকে সেভাবেই ডাকবি যেভাবে অন্য মহিলারা ডাকে।
-নাম ধরে ডাকতাম বাট,,,,,,
-কি বল বল যে আমার বর আমার থেকে অনেক সিনিয়র তাই আপনি ছাড়া বলতে পারি নাহ।
-দেখুন অত সিনিয়র টিনিয়র বুঝি না।আমার বর কে আমি ভীষণ ভালবাসি আর সে আমার মানসিক শান্তির কারণ তাই ভালবাসি। মানসিক শান্তির জন্য তার কাছে থাকি আমি।
-ল্যাপটপের সাটার অফ করে ল্যাপটপ টা টেবিলে রেখে আমার উপর ঝুঁকে এসে বললেন,এই পিচ্চি এই ছোট্ট পাতলা ঠোঁটে এত মিষ্টি কথা কিভাবে বলো।এই মিষ্টি কথার যাদু দিয়ে আমাকে পাগল করেছো?আজ রাতে অনেক হিসাব মেটানোর আছে তোমার সাথে আমার।
-কিসের হিসাব।
-রোমান্সের?রেগুলার যে অভিনয় করো সেগুলো আমি বুঝি।আমি কাছে গেলেই বলো এখন পড়তো বসবো,আবার পড়ার টাইমে এত গুলা অজুহাত খোজো সো তোমার না খবর আছে পুচকি।
-বলেই উনি আমাকে চেয়ার টেবিলে বসিয়ে দিলেন।উনি আবার ল্যাপটপ এ কাজ করছেন আর আমি বই পড়ছি।আজ দেখতে দেখতে ২৬ টা দিন কেটে গিয়েছে আমাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ের।বিয়ের এক সপ্তাহ পরেই আমরা আমরা ঢাকা চলে এসছি।আজ ও সেই রাগ,মান অভিমান খুনসুটির মধ্য দিয়ে চলছে আমাদের সংসার।বিয়ের পরের দিন ই প্রেয়সী আপুকে ভিডিও কল দিয়েছিলো বিহান ভাই।প্রেয়সী আপুকে বলেছেন শয়তানি আর চালাকির দ্বারা ভাল কিছু অর্জন করা যায় না।হোপ এর পরেও তুই আর আমাদের মাঝে আসবি না।কলেজে গেলে নির্বাণ স্যার আর লজ্জায় কথা বলেন না। আমিও লজ্জায় স্যারের সাথে আর কথা বলি না।
রিয়া আর কাকিমনি এখন আগের বাসাতেই আছে।আমাদের নতুন সংসার তাই রিয়াকে আমাদের সাথে কেউ আপাতত থাকতে দেয় নি।
মাঘ মাসের এই কড়া শীতে চেয়ার টেবিল সব ঠান্ডা বরফ হয়ে গিয়েছে।মন চাইছে আরামে কম্বলের নিচে গিয়ে টুপ করে ঘুমিয়ে পড়ি কিন্তু ওই অসভ্য মানুষ কি আর আমাকে এখন ঘুমোতে দিবেন।এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় বলা যায় না ওগো মোর প্রাণের প্রিয়া আসো তোমাকে আলিঙ্গন করে শান্তির একটা ঘুম দেই।তা তো বলবেন ই না পড়ার রুটিন করে দিয়েছেন।কোনো মানুষ যেনো আর এই টিচার বিয়ে না করে।একে তো সারাদিন আমার উপর ডাক্তারি প্রয়োগ করে তার উপর শিক্ষাকতা করেন।জীবন টা কড়া মাছ ভাজি বানিয়ে ফেলেছেন আমার।
টেবিলে মাথা রেখে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছি আমি।
খুব জোরে চেয়ার টেনে আমার পাশে বসলেন বিহান ভাই।চেয়ার টানার শব্দে আতকে উঠলাম আমি।উঠে দেখি গরম কফি মগ থেকে ধোয়া উড়ছে।উনি কফিটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন জিভ পুড়ে না যেনো সাবধানে খাবি।উনি কফি তে চুমুক দিয়ে বললেন কাল থেকে সন্ধ্যার আগে পড়তে বসবি। রেগুলার রাতে ঘুমের বাহানা শুরু হয় তোর।এত ফাঁকিবাজ তুই। ঘুম ঘুম চোখে কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম আমার খুব ঘুম পাচ্ছে বিহান ভাই।উনি কাপে চুমুক লাগিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ঘুম তো পাবেই সারাদিন বসে বসে সিরিয়াস দেখিস তুই।সিরিয়াল এর কূটনীতিক কাহিনী ভাবতে ভাবতে ব্রেইন এর প্রেসার হয়ে যায় তোর।কাল ডিস লাইন কেটে দিবো এটাই ফাইনাল।আমি কফির মগ রেখে উনার কোলে ঢলে পড়লাম ঘুমের ভান ধরে।উনার পায়ের উপর মাথা রেখে ঘুমের ভীষণ ভান ধরলাম।উনি কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে আমাকে কোলে তুলে বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চিরকুট লিখে গিয়েছেন।শুভ সকাল পিচ্চি।ডায়নিং এ নাস্তা রাখা আছে খেয়ে কলেজে চলে আসবি।খুব সাবধানে আসবি।
Leave a comment