এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ৪৪

এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২

–বৃষ্টির সাথে প্রেমের যেনো এক গভীর সম্পর্ক আছে।বৃষ্টিতেই মানব মানবীর মনে জাগ্রত হয় সুপ্ত ভালবাসা।বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় ভালবাসা যেনো আলিঙ্গন করেছে আমাদের উপরে।উনার ওষ্টের ছোঁয়ায় ভয়ংকর এক অনুভূতির সৃষ্টি হলো আমার শরীরে।মানুষ টা কি স্হির ভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমার দিকে তাকিয়ে।নিষ্পলক তার মায়াবী চোখের শিতল চাহনি।ভাষা চোখ,ঘন পাপড়ি, ভিজে উনাকে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে।এই মুহুর্তে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর পুরুষ টি তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
লজ্জায় আমার ভেতরে শুরু হলো ভীষণ তুফান।ইস মুখ দেখাবো কিভাবে এখন উনাকে।ভালবাসার মানুষ প্রথমবার স্পর্শ করলে এমন ভয়ানক অনুভূতির সৃষ্টি হয় আগে জানা ছিলো না আমার।এই তুফান আমাকে ভাষিয়ে নিয়ে যাক দূরে কোথাও,না হলে এই মাটি আমাকে তার ভেতরে নিয়ে যাক।উনার এই নিষ্পালক চাহনির লজ্জা থেকে বাঁচতে চাই আমি।শরীর কাঁপছে, ভীষণ ভাবে কাঁপছে এটা কি অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো আমার শরীরে।বাইরে বিদ্যুৎ এর তরঙ্গ ও এত জোরে বইছে না যতটা উনার শিহরণ আমার শরীরে বইছে।

গোলাকৃতির এই টিনসেটের ঘরে কৃত্রিম আলো জলছে লাল নীল হলুদ রঙের।উনার থুতনিতে উনার হাত বাঁধানো নিষ্পলক তাকিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে যাচ্ছে।স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি উনার চোখে মুখে স্পষ্ট ক্লিয়ার ভেষে উঠেছে।আমি তৎক্ষনিক অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম।দুইহাতে মুখ ঢাকলাম।

উনি এক পা দু’পা করে আবার এগোচ্ছেন আমার দিকে।বুকের মাঝে হাতুড়ির বাড়ি সেকেন্ডে সেকেন্ডে বেড়ে চলেছে।উনি আমার পেছনে আসতেই উনার তপ্ত উষ্ণ নিঃশ্বাস উপচে পড়লো আমার ঘাড়ে।উনার অবয়ব বুঝতে পারলাম আমি।

‘এসে দাঁড়িয়ে বললেন,এভাবে আমার থেকে পালালে কেনো শ্যামাপাখি।লজ্জা পেয়েছো?’

‘লজ্জায় কাঁপতে কাঁপতে বললাম,কাছে আসবেন না।’

‘উনি দুই হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে আবার ও চুম্বন দিলেন ঘাড়ে।কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে ফিস ফিস কন্ঠে বললেন,কাছে না আসলে বাঁচবো কিভাবে শ্যামাঙ্গিনী। ‘

–এই ফিস ফিস কন্ঠে বিশেষ কিছু তো আছেই।কাছে না আসলে বাঁচবো কিভাবে কথাটা সোজা মনে এসে বিঁধলো।কি ভয়ংকর নেশা জড়ানো কন্ঠে বললেন।
ভাল লাগা আর লজ্জা দুটোই ভীষণ ভাবে ভর করেছে আমার ভেতরে।

কিছু বলার মতো ভাষা নেই আমার।

‘আমাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আবার ও কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে ফিসফিস করে প্রশ্ন করলেন,এই চুম্বনে লজ্জা পাচ্ছো জানি।কিন্তু তোমার কি খারাপ লাগছে।তাহলে ছেড়ে দিবো এক্ষুণি।আমার বউ লজ্জা পাক ভীষণ লজ্জা পাক।তার শরীর জুড়ে লাজুকতা খেলা করুক, আমার ভালবাসার স্পর্শে তোমার লাজুকতা না আসলে অনুভূতিরা পূর্ণতা পাবে কিভাবে।তোমার এই ভীষণ সুন্দর রুপে,লাজুকতার সাথে,ভাললাগা আর ভালবাসার মিশ্রণে আমার ভেতরের পুরুষ আত্মার দফারফা হয়ে যাচ্ছে।’

নিমিষেই অনুভব করলাম,উনার স্পর্শ সত্যি লজ্জা দিচ্ছে আমায়,তবে এক বিন্দুও খারাপ লাগছে না।বরং এক অজানা,অচেনা নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় হলো।আমার ভেতরে এক ভীষণ ভাল লাগার অনুভূতি জাগ্রত করলেন উনি।এটা কি ছিলো,কি ছিলো ওই স্পর্শে।কি হচ্ছে কিছুই জানিনা।নারী অস্তিত্বের সব টায় ছেড়ে দিলাম উনার উপরে।

‘উনি আমাকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে ধরে বললেন,দেখো আমায়।একবার তাকাও।তুমি না দেখলে জীবন ই বৃথা যাবে।আমার গালে উনার দুইহাত।’

‘লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে বললাম,বাড়ি যাবো।”

‘উনি আমার মুখে ফু দিয়ে বললেন,রোজ তো বাড়ি ই থাকো আজ না হয় এখানেই থাকো।’

‘উনাকে ধাক্কা মেরে আবার ছুটলাম আমি।ছুটে কোথায় পালাবো জানিনা।পেছনে একবার ফিরে বললাম,আমি বোটে উঠছি আপনি আসুন।’

এই রিসোর্ট টা নদীর পাড়ে।রিসোর্টের কয়েকটা বোট আছে নদীতে।বোটে চড়ে নদী পার হয়ে মানুষ রিসোর্টে যাতায়াত করে।কারণ বোটে যাতায়াত করতে অন্য একটা মজা আছে।চিত্রা নদীর ভীষণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এই বোটে চড়লে।নদী থেকে রিসোর্ট টা ভারী সুন্দর দেখায়।রিসোর্ট এর পাশেই ফুলের বাগান।এখানে মানব মানবী একান্তে সময় কাটাতে এসে ফুল উপহার দেয়।তাইতো বিশাল ফুলের সম্রাজ্য আছে পাশেই।রিসোর্ট থেকে নিচে নেমেই আরেকবার সারপ্রাইজড হলাম আমি।এখনো ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে,একটা কয়েকটা বোটের মাঝে একটা বোট তাজা ফুলে ভীষণ সুন্দর ভাবে সাজানো।সম্পূর্ণ বোট জুড়ে লাল টকটকে গোলাপের সমাহার।বোটের উপরে নৌকায় টাঙানো বাদামের মতো করে কিছু একটা।ফুল দিয়ে সাজানো বলে আন্দাজ করা যাচ্ছে না কি।তবে সেখানে লেখা তাজা গোলাপে মোটা আকৃতিতে দিয়া লেখা।নিমিষেই দুই ঠোঁট ফাকা হয়ে গেলো আমার।কারণ এতটাই সারপ্রাইজ হলাম যে অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছি আমি।দুই হাত মুখে দিয়ে অবাকের সম্পূর্ণতা প্রকাশ করলাম।খুশিতে বোটে গিয়ে বসলাম।বোটের মাঝে একটা লাইট জ্বলছে যার জন্য সব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।বোটের মাঝে ফুলের পাপড়িতে লাভ আকৃতি করা।সেখানে লেখা বিহান+দিয়া।আমি বোটে দাঁড়িয়ে দুই হাত মেলে ডানা মেলে আকাশ পানে তাকালাম।এ কি স্বপ্ন নাকি সত্যি।ভালবাসার মানুষ টা সব কিছুই যেনো ম্যাজিকের মতো করে দিলো।বৃষ্টিতে প্রতিটা ফুলে ফুলে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে।কিছুক্ষণের মাঝেই বিহান ভাই বোটে আসলেন।আমাকে উঁচু করে ধরলেন আকাশ পানে।ভীষণ আনন্দে আকাশে ছড়িয়ে দিলাম ভালবাসার ডানা।

‘বিহান ভাই বললেন,দিয়া খুশি হয়েছো।’

‘আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,জীবনে এত খুশী আমি আগে কখনো হই নি। ‘

‘এখন থেকে প্রতিটা দিন ই তোমার জীবনে খুশি এনে দিবো।আই প্রমিজ।’

বোটে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালাম আনমনে দুজনে।জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে পারলাম।শ্রেষ্ঠ সময় পার করলাম দুজনের জীবনের।ভালবাসাময় এই সন্ধ্যা ভ্যালেন্টাইন্স সন্ধ্যা হয়ে থেকে যাবে চিরকাল আমাদের দুজনের মনে।উনি আমার কোলে মাথা রেখে বেশ কিছু সময় সস্তির নিঃশ্বাস নিলেন।

কয়েক ঘন্টা ভিজে বেশ ঠান্ডা অনুভব হলো।রাত একটার দিকে বাসায় ফিরলাম দুজনে।ভিজে একবারে চুপসে গিয়েছি দুজনে।রাত যত গভীর হয় বৃষ্টির মাত্রা তত বাড়তে থাকে। গরমের উত্তাপ এখন কমে গিয়েছে।বাসায় এসে চেঞ্জ করে কালো প্লাজু আর গোলাপি কামিজ পরলাম।রুমের সব জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গিয়েছিলাম এখন এলোমেলো রুম দেখেই কাঁন্না পাচ্ছে।এই ঠান্ডায় মন চাইছে এক্ষুণি ঘুমিয়ে পড়ি।বেশ ঘুম ঘুম ও পাচ্ছে।কসমেটিক্স এর বক্সে সব কসমেটিক্স রেখে বাকি জিনিস গোছাতে শুরু করলাম।কিছুক্ষণ পরে বিহান ভাই সাদা ট্রাউজার আর সাদা গেঞ্জি পরে বেরিয়ে এলেন চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে।

আমাকে শাড়ি গোছাতে দেখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন,

“কি এখন কি আবার শাড়ি পরে আরেকবার ও রোমান্স হবে নাকি মিসেস বিহান।ওয়াও কিতনি রোমান্টিক মেরা পত্নি।”

“তড়িঘরি করে বললাম, আরে নাহ নাহ আমি যাওয়ার সময় এগুলো রেখে গেছিলাম।তাই এখন গোছাচ্ছি।”

‘বুঝি বুঝি সব ই বুঝি।কি আজিব কথা। ‘

‘শাড়ি একটা ভাজ করতে করতেই বললাম,আজিব কথা কই পেলেন বিহান ভাই।’

‘উনি ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে বললেন,আবার বিহান ভাই।সারাজীবন কি এই ভাই ডাকার অত্যাচার সহ্য করতে হবে আমাকে।’

‘কাজিন বিয়ে করেছেন এটুকু অত্যাচার তো সহ্য করতেই হবে তাইনা?’

‘আজকের বিশেষ মোমেন্ট এ আমি এক সেকেন্ড সময় অন্য কোনো ভাবে নষ্ট করতে চাই না।কাল থেকে এসব কথার উত্তর দিবো।এসব গোছগাছ ও কাল হবে ওকে।’

মানে কি কাল থেকে আবার বিরক্তিকর কথা বলবে নাকি উনি।গিরগিটির খালাতো ভাই নাকি উনি।উনাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।

‘না না আমার শাড়ি গুছিয়ে না রাখলে রাতে ঘুম হবে না বুঝেছেন।’

‘আমার ও তো বউ ছাড়া ঘুম আসবে না। কি করা যায়।ওকে আমি তোমাকে হেল্প করছি।’

‘কি হেল্প।’

‘শাড়ি চুড়ি গুছিয়ে দিচ্ছি।’

কি আশ্চর্য ব্যাপার উনি সত্যি আমার সাথে সাথে শাড়ি গোছাতে শুরু করলেন।এই ছেলেটা মেয়েদের জিনিস গোছাচ্ছে ভাবা যায়।

‘মজা করে বললাম,বিহান ভাই আপনার মতো রাগী পুরুষ মহিলাদের জিনিস গোছাচ্ছে ভাবা যায়।’

‘এই রাগি ছেলেটাকে বরফ বানিয়ে দিয়েছে শ্বশুরের মেয়ে বুঝলে।তোমাকে দেখলেই কেমন রোমান্টিক ফিল হয় আগেও অনেকবার হয়েছে আমি প্রকাশ করিনি এই আরকি।সব দোষ তোমার।’

‘আমার দোষ কেনো?’

‘বিকজ অন্য কাউকে দেখলে এমন তো হয় না।তোমাকে দেখলেই হয়।গুগলে সার্চ করেছিলে কিভাবে মামাতো ভাইকে বশ করতে হয়।ইউ আর সাকসেস দিয়া। আমাকে বশিকরণ করতে সফল তুমি।এত দিন বিরক্ত সহ্য করেছো এখন রোমান্টিক অত্যাচার সহ্য করতে হবে।’

‘সেতো একবার করলাম ই আর কি?’

‘ওইটা ছিলো জাস্ট ট্রেইলার সুইটহার্ট। সিনেমা তো আভি বাকি হে।’

‘অত বড় পূর্ণদৈর্ঘ সিনেমার পরেও বলছেন সিনেমা বাকি আছে।’

‘হুম একটা মাত্র বউ ওইটুকু সিনেমায় কি হয়।”

উনার এই আধ্যাতিক কথার কোনো উত্তর দিয়ে চুপচাপ কাজ করছি।

উনি আবার প্রশ্ন করলেন,

‘ইয়ে দিয়া একটা প্রশ্ন ছিলো?’

‘হ্যা বলুন।’

‘আমার মতো এত্ত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তোমার আশে পাশে ঘুরতো।আমার সাথে রোমান্স করতে মন চাইতো না তোমার।কত্ত হ্যান্ডসাম আমি নিজেকে দেখছি আর প্রাউড ফিল করছি।’

‘না জীবনেও না।আমার এমন কখনো মনে হয় নি।
নিজের প্রশংসা যে মানুষ কিভাবে করে আপনাকে না দেখলে তো বুঝতাম ই না।আমি তো জানি আপনি সুন্দর তাই বলে এইভাবে নিজের প্রশংসা করবেন।আপনার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে আসলেই যেনো পৃথিবীর সেরা সুন্দর মানুষ আপনি।’

উনি হাসলেন খুব।আগে কখনো এত হাসতে দেখিনি উনাকে।উনি হাসলে এতটা সুন্দর লাগে কেনো।

এতক্ষণে বিছানার সব কাপড় গোছানো হয়ে গিয়েছে।উনি দরজা লাগিয়ে আমাকে এক টানে বিছানায় নিয়ে বললেন,কথা অনেক হয়েছে বেবি গার্ল এখন ঘুমোও।

ঘুমোবো বাট এইভাবে ধরে রাখলে কিভাবে ঘুমোবো।

কিভাবে ধরলাম।শুধু একটু জড়িয়ে ধরেছি আর তো কিছুই না।কপালে চুমু দিয়ে বললেন,রোজ এইভাবে ঘুমোবো,তোমার তপ্ত নিঃশ্বাসে অভ্যস্ত হবো।

এই প্রথম একটা রাত উনাকে এইভাবে আলিঙ্গন করে ঘুমোলাম।আমাকে বুকে জড়িয়ে বললেন,”ভালবাসা ময় জীবনের শুভেচ্ছা শ্যামাপাখি।”আমিও নিশ্চিন্তে উনার বুকে মাথা রেখে ঘুমোলাম।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।