–পৃথিবীর সর্বোত্তম সুন্দর মুগ্ধতাম সকাল আজ আমার জন্য।আমার জীবনে কেটে যাওয়া অন্য সব সকালে এতটা ভালো অনুভূতি আমার কখনোই হয়নি।জীবন টা সত্যি উপভোর করার মতো যদি পারমানেন্ট একটা মানুষ থাকে।কালকের কথা ভেবেই ভীষণ লজ্জা লাগছে,বেশী লজ্জা লাগছে সেই গভীর চুম্বনের কথা ভেবে।নিমিষেই লজ্জারা ভীড় করলো আমার আঙিনায়,সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লো লাজুকতার ছোঁয়া।চোখ মেলে তাকিয়ে লজ্জার মাত্র কয়েক হাজার গুন বেড়ে গিয়েছে।উনি খালি গায়ে কেনো?রাতে তো খালি গায়ে ছিলেন না।ঘুমের মাঝে আবার কিছু হয় নিতো।ওহ মাই গড।আমি কি কিছুই টের পেলাম নাহ।না না উনিতো অমন মানুষ নন,ছিঃকি সব ভাবছি।উনার বুক বরাবর আমার মাথা ঠেকানো,ঠোঁট মুখ উনার বুকে গুজে আছি, নিঃশ্বাস উনার বুকে গিয়ে আচড়ে পড়ছে।আমার চুল গুলো খোলা, উনি দুইহাতে জড়িয়ে রেখেছেন আমাকে।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন উনি।এই মানুষটা সব কিছু যেনো কেমন স্পেশাল ভাবে উপস্হাপন করতে পারে।কপাল অনেক ভাল না হলে কি উনাকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়েছি।আমি ঘুমন্ত মানুষ টাকে মন ভরে দেখছি।
এরই মাঝে বিহান ভাই এর ফোনের রিংটোনে ভাবনা কেটে গেলো আমার।ফোন একভাবে বেজেই যাচ্ছে।মনে হচ্ছে ইমারজেন্সি কিছু, না হলে এত সকালে কেউ এত বার কল দিবে কেনো।ফোনটা বিহান ভাই এর পিঠের নিচে পড়ে আছে।উনার বড় ফোন তো ড্রেসিন টেবিলে এই বাটন ফোনে আবার কে ফোন দিচ্ছে।উনার পিঠের নিচ থেকে কোনরকম ফোনটা হাতে নিতেই উনি ফোনটা আমার হাত থেকে ছো মেরে নিয়ে আবার জড়িয়ে ধরলেন আমাকে।হঠাত করে কেঁপে উঠলাম আমি,উনি জেগে গেলেন কখন।চোখ আগের মতোই অফ করে আছেন উনি,অথচ উনি সজাগ ই আছেন।
“আমি শুকনো কাশি দিয়ে বললাম,ইয়ে আপনার ফোন বাজছে ধরুণ। ইমারজেন্সি কিছু হবে হয়তো।”
“উনি আরো একটু জোরে জড়িয়ে ধরে বললেন,এই মুহুর্তে তোমার থেকে বেশী ইমারজেন্সি কিছুই তো দেখছি না।চোখ অফ রেখেই কথাটা বললেন।”
“ঘুম থেকে উঠেই উনার মতলব কি?ধরার ধরণ টাও অন্যরকম।এত লজ্জা দিতে পারে উনি।লজ্জা পাচ্ছি জেনেও এমন করছেন। অসভ্য মানুষ একটা।ছোটার চেষ্টা করছি আর বলছি,দেখুন ছাড়ুন আগে আমাকে।”
“উহু! এত নড়ছো কেনো শ্যামাপাখি। ”
“নিজেকে ছাড়ানার চেষ্টা করছি। এত শক্ত পক্ত ভাবে ধরেছেন নড়তেই পারছি না।”
“চেষ্টা করো দেখো পারো কিনা?আমার থেকে ছুটে যাওয়া কি এতই সোজা বালিকা।আমি বিশ্ব প্রেমিক দের মতো রাতের পর রাত জেগে প্রেমের কবিতা লিখিনি,শহরে শহরে প্রেমের কার্ফু জারী করিনি।ফেসবুকে রোজ স্টাটাস দেই নি।সোজাসুজি বিয়ে করে নিয়েছি।কিভাবে শ্বশুরের মেয়ের উষ্ণ নিঃশ্বাস রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে অনুভব করতে পারি সেই চেষ্টায় করেছি।যদি বিয়ে না করতাম তাহলে কি রোজ সকালে এই মুখ টা দেখার সৌভাগ্য হতো আমার।ইঞ্জিনিয়ার এর কি সাহস ভাবা যায়।আমার বউ বিয়ে করার প্লান করেছিলো।যার ভাবনায় আমার জীবনের এত সময় নষ্ট হয়েছে তাকে অন্য কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাবে ভাবতেই কয়েকরাত ঘুম হয়নি আমার।আমার জীবনে লেখাপড়া আমি সব থেকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছি, জীবনের সব থেকে বেশী সময় লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় করেছি, আর এই লেখাপড়ার থেকেও বেশী সময় আমি তোমার পেছনে ব্যয় করেছি।”
“আমার পেছনে আপনি কবে সময় ব্যয় করলেন।”
“সে জানে আমার মস্তিষ্ক,আমার পাগলটে মন।আনমনে তোমাকে ভেবে কেটেছে আমার অজস্র সময়।তখন ই বুঝতাম তোমাকে কতটা প্রয়োজন আমার।আর যার জন্য এত সময় ব্যয় করলাম অন্য কেউ তাকে নিয়ে যাবে।”
“আপনার ফোন আবার বাজছে।
আপনি কথা বলুন,আমি ওয়াশরুম যাবো।”
“ওকে চলো আমিও যাচ্ছি।”
“হোয়াট।”
“কেনো এত হট তুমি?কাল এত রোমান্স করেছি বলে।কোনো ব্যাপার নাহ আজ ও হবে।”
“আমি হট মট বলিনি,ছাড়ুন আগে ফাজিল কোথাকার।”
এরই মাঝে বিহান ভাই এর ফোন আবার বেজে উঠলো।
‘আমি বললাম,ধরুণ ফোন।’
‘না পরে ধরবো।’
ফোনে প্রেয়সী নামে কারো ফোন বেজে চলেছে।
‘প্রেয়সী,উনি কে?কার নাম প্রেয়সী দিয়ে সেভ রেখেছেন।আর এতবার ই বা কল দিচ্ছে কেনো?’
‘কুল দিয়া!আগে দেখে নেই তোমার প্রেসার বেড়ে গিয়েছে কিনা?’
‘আগে বলুন কে আপনার প্রেয়সী।’
‘আমার প্রেয়সী, প্রিয়তমা সবই তো আম্মুর বউমা।’
মুখ ভার করে তাকিয়ে রইলাম আমি।
‘তোমার মুখ এমন হয়ে গেলো কেনো?মনে হচ্ছে অন্ধকার নেমেছে।’
‘আপনি কার নাম্বার প্রেয়সী দিয়ে সেভ রেখেছেন আগে সেটা বলুন।’
‘আচ্ছা বাবা শোনো ওর নাম ই প্রেয়সী।আমি কি দিয়ে সেভ করবো বলো।আমার প্রেয়সী হতে যাবে কেনো কেউ বলোতো।’
‘ওহ তাহলে কল ধরুণ।আর লাউডে দিন।’
‘বউ তো নয় যেনো সিসি ক্যামেরা।’
উনি বেশ একটু বিরক্ত হয়েই ফোনটা রিসিভ করে বললেন,
‘কি সমস্যা প্রেয়সী এতবার কল দিচ্ছিস কেনো?’
‘আমার ফোন ধরছিলিনা কেনো?’
‘ইমারজেন্সি মনে হয় নি তাই।’
‘আমি ইমারজেন্সি কিছু বলতেই ফোন দিয়েছিলাম।’
‘আই এম নট ইন্টারেস্টেড প্রেয়সী।’
‘কাল আমার ফোন ধরিস নি কেনো?’
‘কাল আমি আমার লাইফের বেষ্ট মোমেন্ট সেলিব্রেশন করেছি।কারো কল ই ধরা হয়নি।’
‘কি ছিলো সেটা।’
‘আমি ব্যাক্তিগত বিষয় শেয়ার করতে চাইছি না।’
‘তুই এইভাবে কথা বলছিস কেনো?’
‘বিকজ তুই হুদাই কল দিয়েছিস তাই।’
‘আমাকে এতটা ইগনোর করছিস কেনো বিহান।’
‘হোয়াট দ্যা হেল।আমি কেনো ইগনোর করতে যাবো।’
‘ইগনোর ছাড়া কি।তুই বাড়ি যাওয়ার পর তিনটা রিপ্লে দিয়েছিস।’
‘যে তিনটা দেওয়ার প্রয়োজন মনে হয়েছে দিয়েছি।অযাচিত মেসেজের রিপ্লাই আমি কবে দিয়েছি প্রেয়সী।’
‘কেনো বিহান,আমাকে এতটা ইগনোর করিস।কাল সারারাত ঘুম হয় নি আমার ছটফট করেছি আমি।তুই জানিস না তুই কথা না বললে ঘুম হয় না আমার।’
বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে পড়লেন এইবার।রাগে সাপের মতো ফুঁশ ফুঁশ করছি আমি।আবার ভীষণ কাঁন্না ও পাচ্ছে।বিহান ভাই রিতীমতো ভয় পেয়ে গেলেন।কি করবেন বুঝতে পারছেন না।তবে এটা বুঝলেন আমি মাইন্ড তো করেছি,সাথে মন ও খারাপ করেছি।
‘বিহান ভাই তড়িঘড়ি করে বললেন,লাস্ট বার বলছি আই এম ম্যারেড প্রেয়সী।বন্ধুত্ব নষ্ট হোক সেটা চাইছি না আমি।আমার বউ এইগুলা ভাল ভাবে নিবে না।’
‘আমার থেকে পালাতে মিথ্যা বলছিস তুই।’
‘যেটা মনে চাই ভেবে নে।রাখলাম।’
‘কি সমস্যা বিহান। তুই কেনো আমাকে বুঝিস না।’
‘এককথা বারবার বলতে বিরক্ত লাগে আমার।’
‘আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে পাশ করার পর যে একটা ট্যুর দিতে চেয়েছিলাম ভুলে গেলি।’
‘আমি আমার পুরা ছুটি কাজিনদের সাথে কাটাতে চাই।’
‘কাজিনদের সাথে তো সময় অনেক কাটালি।’
‘সারাজীবন কাটাতে চাই।কাজিনদের সাথে থাকলে অনেক হ্যাপি থাকি আমি।’
‘তুই নাকি তোর কাজিন কে লাভ করিস।’
‘ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন।’
আমি এক ঝটকায় উনার থেকে উঠে গেলাম।
‘বিহান ভাই ফোন কেটে আমার হাত টেনে ধরে বললেন,দিয়া শোন না রাগ করিস কেনো?তুই করে বললে আবার রাগ করিস না।তুই বলতে ভাল লাগে আমার মাঝে মাঝে।’
‘যা ইচ্ছা বলুন আমার হাত ছাড়ুন আপনি?আমার সাথে আর কথা বলবেন না আপনি।’
‘আমি আবার কি করলাম।’
‘ঢাকায় ওই প্রেয়সীর সাথে কি না কি করেন আমি কি জানি নাকি।আমি কি থাকি ওখানে।’
‘উনি ভ্রু উচিয়ে বললেন,ইস রে কেমন টমেটো হয়ে গিয়েছে তোর গাল।’
‘এইসব বলে কোনো লাভ হবে না,যান যান সারারাত আপনার জন্য যার ঘুম হয়নি তার ঘুম পাড়ান।’
‘একটা থাপ্পড় দিবো,ফাজিল মহিলা।আমার কি দোষ, আমি তো বললাম ই আমি ম্যারেড।নিজের প্রিয় জিনিস রাগ করে হলেও অন্য কারো কাছে দেওয়ার কথা বলতে নেই।কাছে আয় একটু আদর করি রাগ কমে যাবে।’
‘আপনি আমার কাছেই আর আসবেন না।’
‘কাছে না আসলে বাঁচবো কিভাবে রাগপরী।অক্সিজেন বন্ধ হয়ে যাবে আমার।’
আমি উনার হাত ঝাড়ি দিয়ে চলে যেতেই,উনি কেমন কুকিয়ে উঠে বললেন,দিয়া আমার কেমন শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।মনে হয় বাঁচবো না আর।উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন।উনার চোখে মুখে কষ্টের অবয়ব।উনি তো অসুস্থ হলেও কখনো প্রকাশ করেন না।নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পাচ্ছেন না হলে এমন করবেন কেনো।
‘আমি দ্রুত উনার দুই গালে হাত দিয়ে বললাম কি হয়েছে আপনার।হঠাত এমন শ্বাস কষ্ট হচ্ছে আপনার।কি হলো আপনার।কেঁদে আমার অবস্থা একাকার।উনি যেনো কেমন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন।আমি কেঁদে বলছি প্লিজ উঠুন না,এক্ষুণি তো ঠিক ছিলেন হঠাত কি হলো।চলুন ডাক্তারের কাছে চলুন।’
‘উনি হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন,আমি একদম ই নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।ডাক্তারের কাছে নিতে নিতে হয়তো বাঁচবো না।আমার মুখে অক্সিজেন গেলে একটু ভাল লাগতো,আমি হয়তো সুস্থ হতাম।’
‘ব্যাস্ত হয়ে বললাম,কোথায় পাবো এখন অক্সিজেন হসপিটাল না গেলে।’
‘উনি বললেন,তোমার মুখ দিয়ে হাওয়া দিলেই সুস্থ হয়ে যেতাম।তোমার মুখ আমার মুখে দিয়ে হাওয়া দাও অক্সিজেন এর মতো লাগবে।’
‘আমি এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে আমার মুখ দিয়ে উনার মুখে হাওয়া দিতে শুরু করলাম।’
‘নিমিষেই উনার চোখ মুখ স্বাভাবিক হয়ে গেলো আমার চোখের পানি উনার চোখে মুখে পড়তেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে মুখে আলতো ভাবে চুমু দিয়ে বললেন,কত ইনোসেন্ট তুমি দিয়া।কাছে আর আসবে না নাকি।তোমাকে কাছে আনাটা কত সহজ দেখেছো।আমার কি কোনকালে শ্বাসকষ্ট ছিলো গাধী।দেখলাম আমার কষ্ট দেখলে তোমার কেমন লাগে।’
কি সাংঘাতিক মানুষ। আমাকে রিতীমত ভয় দেখিয়ে আমাকে দিয়ে কিসব করালেন।কি ভয়ানক লজ্জাটায় না পেলাম।
‘উনার বুকে আস্তে কিল দিতে দিতে বললাম চিটার একটা।আমাকে ভয় দেখানো হয়েছে।’
‘প্রসঙ্গ যেখানে বউ এর আদর পাবার চিটিং একটু করায় যায়।’
লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম আমি।চোখ বিছানার চাদরের দিকে।
‘এই যে আমার ফোন চেক করো।আগে দেখো সব মেসেজ।তারপর ভুল বুঝো কেমন।’
উনার দুইটা ফোন চেক করেই তেমন কিছুই পেলাম না আমি।প্রেয়সীর মেসেজ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে বিহান ভাইকে ভালবাসে।কিন্তু বিহান ভাই সতর্ক ভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন।উনাকে ভুল বুঝলে অন্যায় হবে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললেন,
–তুমি আমার জন্য কষ্ট পাও সেটা আমি হতে দিবো না।আমার মনের দরজায় তুমি ছাড়া কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ।
এরই মাঝে দরজায় কড়া নাড়লো কেউ।আমি উঠে চুল ঠিক করলাম দ্রুত।
আর বিহান ভাই দ্রুত শার্ট গায়ে দিয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে দরজা খুললেন।
দরজায় দাঁড়িয়ে আছে নানী।
আমি বললাম,
–কি হয়েছে নানী?
–ধর এইটা কি দেখ।
–কে দিলো।আর কি এটা।
–আমি আনিয়েছি।দেখ বাচ্চা হবে কিনা।এই মেশিন এর নাম কি তা জানিনা।
–বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললাম হোয়াট কি এটা।
–উনি গাল চেপে হেসে বললেন,ইউরিন টেস্টের কীট।
–আমি উনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম,ধরূন আপনার ইউরিন টেস্ট করুণ।
–উনি আমার কথা শুনে এক গাল হেসে দিলেন।
–উনার হাসি দেখে নানী আশ্চর্য বনে গেলেন।