এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ৪৮

এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২

“উনি বললেন,ওয়েট বুঝাচ্ছি।”

“আমি বেশ ভাবুক ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বুঝাতে চাইছেন উনি আমাকে সেটাই ভাবছি।”

–উনি শার্টের হাতা খানিক টা গুটিয়ে নিয়ে হাত কাত করে ঘড়িতে টাইম দেখলেন কপালের চামড়া কুঁচকিয়ে।পকেট থেকে টিস্যু বের করে কপালে জমে থাকা কয়েক ফোটা ঘাম মুছে নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে রুমে ময়লা রাখা বাকেটে টিস্যু টা ফেললেন।প্যান্টের দুই পকেটে হাত গুজে দুই ভ্রু উঁচিয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে।আমি বিছানার উপরেই দাঁড়িয়ে আছি আর বার বার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজাচ্ছি।উনি নিচের ঠোঁট কামড়ে তাকিয়েই আছেন দৃষ্টি আমার ওষ্টের দিকে সরাসরি।

“উনি এতক্ষণে মুখ খুলে বললেন,বুঝতে হলে নিচে আসতে হবে।এইভাবে খাটের উপর থাকলে বুঝবে কিভাবে?দূরত্ব কি ভালবাসার গভীরতা বোঝাতে পারে। ”

–আমি উনার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে নিচে নামার চেষ্টা করলাম।উনার দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য পায়ের দিকে খেয়াল করতে না পারায় খাটের কর্ণারে এসে পড়ে যেতেই উনি হাতে ধরে ফেললে আমাকে।উনি দুই হাতে পাজা কোলে উঁচু করে ধরে আমার মুখের কাছে মুখ এনে বললেন,সাবধানে আসবে তো?এক্ষুণি পড়ে যেতে।

–উনার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শান্ত কন্ঠে বললাম,কি বুঝাবেন।

“উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,চোখ অফ করো।”

“কেনো?”

আমার দুই ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে কথা বলতে নিষেধ করলেন মাথা নাড়িয়ে।

“যেটা বললাম সেটাই করো।”

“আস্তে করে চোখ অফ করলাম।”

“তোমার চোখে এই পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর পুরুষ কে?কাকে তোমার সব থেকে বেশী ভাল লাগে।এমন কেউ কি আছে যাকে পেলে আমাকে ছেড়ে দিতে পারবে।”

“আপনি ছাড়া আমার চোখে কাউকে বেশী সুন্দর লাগে না।এটা কোনদিন হবেনা যে অন্য কারো জন্য আপনাকে ছেড়ে দিতে পারবো।”

“আমি যে দেখতে আহামরি সুন্দর তাতো নয়।আমার থেকে হাজার গুন সুন্দর ছেলে আছে দিয়া। ”

“কই আমার কাছে তো আর কাউকে ভাল লাগেনা।আপনি ছাড়া আমার কাছে কাউকে সুন্দর বলে মনে হয় না।”

“পৃথিবীতে এত সুন্দর ছেলে আছে তবুও তোমার চোখে আমি সুন্দর।রিয়ার চোখে বিভোর সুন্দর। মেহুর চোখে আবির সুন্দর। ভালবাসার মানুষ টায় এমন ম্যাজিশিয়ান হয় যার কাছে যার মন বন্দি তার কাছে তাকে ছাড়া পৃথিবীর আর কাউকে ভাল লাগে না।যে যাকে ভালবাসে তার চোখে সেই পৃথিবীর সেরা সুন্দর মানুষ বুঝলে।তোমার চোখে যদি আমি সুন্দর পুরুষ হই নিঃসন্দেহে তুমিও আমার কাছে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী, ভুবনমোহিনী নারী।আন্ডারস্ট্যান্ড। ”

আমি যেনো কোথাও হারিয়ে গেছিলাম এত সময়।ভাবনার কোনো দেশে প্রবেশ করেছিলাম।কত সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিলেন আমাকে।

“মিহি হেসে বললাম, আমার জীবনের সব কঠিন সমস্যার সমাধান আপনার কাছেই আছে।আপনি আছেন বলেই আমার জীবনের অনেক কিছুই অনেক সহজ হয়ে যায়।বলেই জিভ দিয়ে আবার ঠোঁট ভেজালাম।”

“উনি আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললেন,ওহ মাই গড!বলেই চুলের মাঝে হাত চালিয়ে দিলেন।”

“সন্দিহান ভাবে বললাম কি হলো।”

“উফফফ হাউ কিউট দিয়া!বার বার এইভাবে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাবে না আমার সামনে।নিজেকে তোমার জন্য পাগল পাগল লাগে।বার বার এইভাবে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালে কোনো অনর্থ হলে আমাকে দোষ দিও না কিন্তু।এই দোষ কিন্তু আমার না।তুমি আসলেই এতটায় কিউট কিউট কাজ করো পিচ্চিদের মতো নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে যায়।
কথাটা বলেই গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন,আই লাভ ইউ পিচ্চি।”

লজ্জায় ঠোঁটে হালকা হাসি নিয়ে মাথা নিচু করলাম।

এরই মাঝে মনো হলো উনি কিছুক্ষণ আগে বললেন,মেহুর চোখে আবির সুন্দর এর মানে কী?

–আপনি কি বললেন,মেহুর চোখে আবির সুন্দর মানে?মেহু আপুর চোখে ভাইয়া সুন্দর এই কথার মানে কী?

–কথার কথা বললাম। এটুকু বলেই বেরিয়ে গেলেন উনি।

কথার কথা বললো নাকি আসলেই।আমার তো কেমন সন্দেহ লাগছে।

–সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে,ছাদে আয়োজন করা হয়েছে রান্নার।তিয়াস ভাইয়া বক্সের ব্যাবস্থা করেছে।বিহান এর ঘোর আপত্তি বক্স নিয়ে। তার এসব লাউড স্পিকার গান,বাজনা কিছুই পছন্দ না।অলওয়েজ সাইলেন্ট মানুষ সে।কিন্তু সবার ভাল লাগা নষ্ট করতে চান না বলে মেনে নিয়েছেন সবটা।ছাদের লাইট অন করে দিয়ে সবাই ভীষণ আনন্দ করছি।ছাদে রান্না শুরু হয়ে গিয়েছে।তোহা আপু,তিয়াস ভাই,ভাইয়া মিলে রান্না শুরু করেছে।বাকিরা সবাই গোছগাছ করছি।শুধু নবাবের মতো ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করে চলেছে বিহান।মাঝে মাঝে আড় চোখে আমায় দেখছে।ভাইয়ার হাতে ভাজ করা ছোট হাত পাখা। তোহা আপু আর রিয়া দুজনেই চেয়েছে ভাইয়া কাউকেই দেই নি।এই পাখাটার বেশ যত্ন করে ভাইয়া।বিভোর ভাই বললেন,বিশেষ মানুষের জিনিস অন্যকে দেওয়া ঠিক না আবির।কাউকে দিস না কিন্তু। আমি কিন্তু ভাবিকে বলে দিবো তাকে কত অবহেলা করিস।

“তোহা আপু আর রিয়া অবাক হয়ে বললো,ভাইয়া তোমাকে এই পাখা ভাবি দিয়েছে। কি বলো আমাদের ভাবিও আছে।কই আমরা তো জানলাম না।”

“ভাইয়া বললো,বিভোর এর কথা কেউ বিশ্বাস করলে অকালে মারা খাবা।বিভোর কি সত্যি কথা বলে।আমাকে কেস খাওয়াতেই বলছে।এই পাখা নিয়ে এত ঝানেলা ওকে এটা মেহুকে দিয়ে দেই।মামা বাড়ির জিনিসে মেহুর পূর্ণ হক আছে। তাই এই পাখার দাবিদার মেহু।”

–মেহু আপু ছাদের এক কোণায় বসে আছে গরমে মনে হয় খারাপ লাগছে।এত সময় আমার সাথে গল্প করছিলো।ভাইয়া তার হাতের হাত পাখা দিয়ে মেহু আপুর মুখে বাতাস দিয়ে দিচ্ছে।আপুর চোখে অন্য কিছু দেখছি আমি।আপু ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর দুজনে কিছু বলছে।রিয়া আর আর তোহা আপু তো বেশ অবাক।সাথে আমিও ভাবছি কাহিনী কিছু তো আছেই।

“বিভোর ভাই বললেন,গরীবের কথা বাসি হলেও সত্য হয়।”

“বিভোর ভাই ছাদ থেকে নিচে উঁকি মেরে বললেন,আচ্ছা পাশের ফ্ল্যাটে আতিফ ভাইয়ার বউ ছিলোনা।”

“তিয়াশ ভাই বললো,কোন আতিফ।”

“ওইযে একটু মোটা করে উনার বউ।বেশ গুলুমুল দেখতে ভালোই।”

“তিয়াস ভাইয়া বললো,আপনার সাথে কি রিলেশন তার শুনি।খুব খোজ খবর নিচ্ছেন কাহিনী কী?”

“আমাকে মেসেঞ্জারে ছবি পাঠাতো।অনেক মেসেজ দিতো,না চাইতেও নিজের ছবি ভিডিও দিতো।হাউ কিউট শী মানে ভাবি। ”

“তিয়াস ভাই খুব অবাক হয়ে বললো,ভিডিও দিতো।”

“আমি কি মিথ্যা বলছি, কি সাংঘাতিক ভিডিও।”

“আমাকে আর আবির ভাইকে ফরওয়ার্ড করেন কি ভিডিও দেখি।”

“ভাইয়া বললো,নাউজুবিল্লাহ আমি এ ধরনের ছেলে না।আমাকে দিতে হবে না।তিয়াস কে দিলেই হবে।”

–তিয়াস ভাই বিহান কে চোখ ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললো,আমাদের গ্রেট বিহান ভাই একা একা ফোনে কি দেখছেন।
বিভোর ভাই বলছি যে বিহান ভাই কেও দেন।বিহান ভাই ভদ্র মানুষ লজ্জায় এসব দেখতে পারে না।কারো কাছে চাইতেও পারেনা।তবে বুঝি ছেলের বয়স হয়েছে তার ও মন চাই আন্টিদের ভিডিও দেখতে।

–বিহান ভাই এগিয়ে এসে বললেন,আমাকে কি তৃতীয় শ্রেনীর ষ্টুপিড মনে হয় তোর তিয়াস।আমার কিছু দেখতে মন চাইলে কি নিজে সার্চ করে দেখতে পারবো না।তোর মতো চ্যাচড়ামি করে অন্যর পারসোনাল ভিডিও চাইবো।তাছাড়া বিহান তোদের মতো মহিলাদের ভিডিও দেখার জন্য ইন্টারেস্টেড নাহ।তোরা তো মহিলা ভক্ত ছোট বেলা থেকেই।

–তার মানে বলতে চাইছেন আমরা ইন্টারেস্টেড।

–সিওর!এতে কোনো সন্দেহ আছে নাকি।তুই কিন্তু মহিলাদের ই ডিজার্ভ করিস।

–এত বড় অপমান।বিভোর ভাই আমাকে সাহায্য করেন।আমার পক্ষ নিন।বিহান ভাই এর কোনো রিপোর্ট জানিনা বলে পঁচাতে পারিনা।দেখুন আমাদের কিভাবে বলছে।

–বিহান ভাই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে বললেন,তুই কাকে দলে নিচ্ছিস।যার মেসেঞ্জারে পাশের বাসার বিবাহিত মহিলা এড থাকে।তুই আর বিভোর এক গোয়ালের গরু।ঠিক এ কারণেই দুজনের এত ভাব।এই নিয়ে মেয়ে ভেবে কতবার বিবাহিত মহিলাদের প্রপোজ করেছিস ভেবে বল।

–মেহু আপু হেসে বললো,আমার বিবাহিত বান্ধবীকে বিভোর ভাই একবার প্রপোজ করেছিলো।যদিও তাকে দেখে বোঝা যায় না সে বিবাহিত।

–রিয়া বললো,আসলেই নাকি।

–তিয়াস ভাই বললেন,আসলেই কি পাশের বাসার আন্টির সাথে বিভোর ভাই এর রিলেশন ছিলো রিয়া।বিলিভ মি!রাতের পর রাত ভিডিও কলে কথা হয়েছে,মেসেঞ্জারে ভিডিও দিয়েছে বুঝছিস না।

–বিহান বললেন,হ্যাঁ তিয়াস আর বিভোর মনোযোগ দিয়ে দেখতো সেগুলা।কজ ওদের ফিউচার বউ ওমন ই হবে।

–বিভোর ভাই বললেন,আরে ভাই সে তো তার করা টিকটক ভিডিও দিতো।পুরা কথা শেষ করতেই দিলিনা।আর রিয়ার কাছে আমাকে মোটেও কালারিং করবি না।

–রিয়া বেশ ক্ষেপে গিয়েছে বিভোর ভাই এর সাথে কথা বলছেনা।বিভোর ভাই অনেক চেষ্টার পরেও কথা বলতে পারলো না।
বিভোর ভাই রিয়ার পায়ের উপর এক পা তুলে অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন।রিয়া পা সরিয়ে নিতেই বিভোর ভাই হাত চেপে ধরলেন।

–আয়রা বলে উঠলো, ওহ মাই গড!আপুর পায়ের উপর বিভোর ভাইয়ার পা।আপু ব্যাথা পাবে তো।

–বিভোর ভাই যেনো বিশাল এক হোচট খেলেন।নিমিষেই খানিক দূরে সরে গেলেন।কাশতে কাশতে দম নিতে পারছেন না।

–এইটুকু মেয়ে কিনা বলে ওহ মাই গড!ভাবা যায়।কি পাকা বাচ্চা।কি লজ্জটায় না দিলো।

এইদিকে সবাই গাল ভরে হেসে গড়াগড়ি খেলো।

–ক্রমশ রাত বেড়ে চলেছে।ছাদে আমাদের কাজিনদের আড্ডা বেড়েই চলেছে।বিভোর ভাই একটানা সরি বলেই চলেছে রিয়াকে। রিয়া মুডি মেয়ে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।বিভোর ভাই অনেক গুলো লাল গোলাপ এই রাতেই কিনে এনেছেন,আমার কাছে দিলো রিয়াকে দিতে।সাথে বিশাল এক চিরকুট।আমি দুইটা গোলাপ নিয়ে কানের দুই পাশে গুজে ফোনে দেখছি আমাকে কেমন দেখায়।সাথে সাথে ক্যামেরার আলো পড়লো চোখে।তাকিয়ে দেখি বিহান আমার ছবি তুলছে।উনি কি এতক্ষণ আমায় দেখছিলেন।আমি কান থেকে ফুল নামিয়ে রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতেই আমার কাছে এসে বললেন,তাকে এই নিশ্চুপ রাতের প্রকৃতির মাঝে লাল গোলাপে এতটা সুন্দর না লাগলেও পারতো।

কথাটা শুনে ভেতরে ভীষণ ভাল লাগা কাজ করলো।

সাথে সাথেই মেসেজ করেছেন মনে আছেতো যা চাইবো তাই দিতে হবে কিন্তু।

বার বার মনে করানোর কি আছে।কি এমন চাইবেন উনি।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।