–বিভোর ভাই এর দেওয়া ফুল আর চিঠি নিয়ে রিয়াকে খুজছি।এইগুলো সহিসালামত এ রিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে।এত গুলো মানুষের মাঝে যদি রিয়ার হাতে এই চিঠি তুলে দেই তাহলে সবাই এই চিঠি নিয়ে হাসাহাসি করবে খুব বিশ্রি ভাবে।বিভোর এর আমানত এর এত বড় খেয়ানত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আয়রা কে দিয়ে ডাকিয়ে রিয়াকে নিয়ে ছাদের নিচে গেলাম।রিয়ার হাত ধরে জোরে টানতে টানতে দ্রুত পায়ে নিচে নামলাম।
রিয়া মনে হয় রিতীমত ভয় পেয়ে গিয়েছে।রিয়ার চোখ মুখ চুপসে গিয়েছে ভয়ে।ভাবছে কি এমন হলো যে আমি এইভাবে হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে যচ্ছি।
বিহান ও ব্যাপার টা লক্ষ্য করলো।কিওরিসিটি নিয়ে তাকিয়ে আছে বিহান। নিশ্চয়ই ভাবছে কাহিনী কী।
“রিয়া বেশ চিন্তিত ভাবে বললো,এই দিয়া কি হয়েছে দ্রুত বল।আমার তো ভয় করছে,কিছু হয় নিতো আবার।”
“রিয়ার হাতে ধরিয়ে দিলাম বিভোর ভাই এর দেওয়া এক গুচ্ছ লাল গোলাপ আর একটা লাভ লেটার।দিয়ে বললাম এই নে ধর তোর টেনশন।”
“রিয়া বুকে ফু দিয়ে নিয়ে বললো,দিয়া তুই না আমাকে পুরাই ভয় পাইয়ে দিয়েছিস।আমি ভেবেছি কি না কি হয়েছে।বাট এইগুলা কার দিয়েছে কে?”
“কে দিতে পারে রিয়া।তোমার প্রেমে দিওয়ানা তোমার আশিক দিয়েছে।”
“আশিক আবার কে রে দিয়া।এই নামে তো আশিক চাচাকেই চিনি।উনি আবার এইগুলা দিবে কেনো?”
“আরে এই আশিক সেই আশিক না।প্রেমে দিওয়ানা আশিক।”
“রিয়ার মুখের ভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে গেলো।ঠোঁট কিঞ্চিত ফাঁকা করে বললো,বিভোর। ”
“জ্বী আপনার বিভোর।আমার ভাইটার মাথা কিভাবে খেয়েছিস দেখেছিস।আমার অত সুন্দর হ্যান্ডসাম ভাই সে কিনা সারাক্ষণ রিয়া রিয়া করে চলেছে। ”
রিয়ার মুখে ভীষণ হাসি।হয়তো এমন কিছুর জন্যই অপেক্ষা করছিলো রিয়া।চিঠিটা আমার হাত থেকে দ্রুত গতিতে নিয়ে পড়া শুরু করলো।
“রিয়াপাখি,
কিভাবে শুরু করবো জানিনা।লিখতে বুক কাঁপছে,হাত কাঁপছে যদি ফিরিয়ে দাও আমাকে।কিন্তু কি করবো মন তো কতক্ষণ বুঝিয়ে রাখা যায়।আমার মন আমার অবাধ্য হয়ে গিয়েছে, আমার কন্ট্রোলে নেই।বিকজ দিন দিন এডিক্টেড হয়ে যাচ্ছি আমি তোমার প্রতি।ভীষণ এডিক্টেড।কোনো নেশাক্ত পুরুষ হয়তো দীর্ঘদিনের নেশা ছেড়ে দিতে পারবে এক নিমিষেই কিন্তু আমি কোনদিন তোমাকে ছাড়তে পারবো না।মনের কোনে তোমার জন্য জমানো সুপ্ত ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ না করে পারলাম নাহ।ভালবাসা বুঝি এমন ই হয় তাইনা রিয়া।এই দূরন্ত ছেলেটা কেমন গম্ভীর ভাবনার সাগরে ডুব দিয়েছে,যে সাগরে খুজে চলেছে তুমি নামক প্রাপ্তি।একমাত্র তোমার ভালবাসা পারবে আমাকে মহাসমুদ্র থেকে টেনে তুলতে।না হলে ডুবতে ডুবতে অতলে হারিয়ে যাবো,কেউ আর চাইলেও টেনে তুলতে পারবে না।তোমাকে আমি ভালবাসি রিয়া,ভীষণ ভালবাসি।আমাকে বিয়ে করবে তুমি।বাকি জীবন টা তোমার কোলে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে চাই।জানি চাওয়া টা অনেক বড় মাপের হয়ে গিয়েছে। এটা যে আমাকে চাইতেই হতো।জানিনা তোমার পক্ষ থেকে কি উত্তর আসবে।ভাল খারাপ যায় হোক আমি অপেক্ষা করবো তোমার উত্তরের।”
“রিয়াকে বললাম,এক চিঠি আর কতবার পড়বি।পড়েই তো যাচ্ছিস।চিঠি কি মুখস্থ করছিস নাকি।”
“রিয়া আমার হাতে আরেক টা চিঠি ভাজ করে দিয়ে বললো এটা খুলবি না কিন্তু।খুললে বিহান ভাইকে নালিশ দিবো।অন্যর জিনিস দেখতে নেই।”
“আচ্ছা তোরা এই বিহানের মাঝে কি পেয়েছিস হ্যাঁ।আমি আর আগের মতো উনাকে ভয় পায় না।ভুলে যাস না এখন আর সে আমার সিনিয়র মামাতো ভাই না ভয় পাবো।মাই হাব্বি।”
“আচ্ছা! এই ব্যাপার।”
“হু এই রিয়া এইবার বলনা বিভোর ভাই কি লিখেছে চিঠিতে।বল না রিয়া প্লিজ।”
“না আমার লজ্জা করবে।”
“কি আমার লজ্জাবতী লতারে।দুনিয়ার সব বলো আর এইটুকু বলতে পারছো না।এতদিন কি বড় বড় কথা বলতিস আমার বাসর ঘরের গল্প বলবো।আর এখন প্রেমালাপ ই বলতে পারছো না কি আশ্চর্য ব্যাপার।”
“তুই যা আগে দিয়ে আয়।পরে বলবো।”
রিয়া গুন গুন করে গান গাইছে লা লালা লা।কি আনন্দে রিয়ার মনে সেটাই ভেবে যাচ্ছি।
বিভোর ভাই কে ছাদের এক কোণায় ডেকে নিয়ে চিঠিটা ধরিয়ে দিলাম।
বিভোর ভাই চিঠিটা খুলে পড়লো।
“এত কিছু বোঝেন আর আমার চোখের ভাষা বোঝেন না তাইনা?আমি রুমে আছি আপনি আসুন।অপেক্ষা করছি আমি।দিয়াকে নিয়ে আসুন।”
বিভোর ভাই চিঠিতে একটা চুমু দিয়ে লাফিয়ে উঠে বললেন,ওহ ইয়েস।
আমি ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছি কাহিনী কী দুজনের।দুজনের মনেই লাড্ডু ফুটছে হোয়াট ইজ কাহিনী।বিভোর ভাই আমার হাত টেনে ধরে নিচে নিয়ে গেলেন।
“রিয়া বললো,দিয়া এই দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবি কেউ আসলে রুমে প্রবেশ করবি। তাহলে সবাই বুঝবে আমরা তিজনেই আছি।বিভোরের সাথে কথা আছে আমার।খেয়াল রাখিস কেউ যেনো না আসে এদিকে।”
“আমি কি প্রেম ভালবাসার ডাকপিওন আর দারোয়ান হয়েছি নাকি।”
“বিভোর ভাই গাল টেনে বললেন,দিয়া আমার লক্ষী বোন না তুই।”
“আমি শুধু আপনার জন্যই হেল্প করছি।রিয়ার জন্য হলে করতাম নাহ।ও খুব কিপটা আমাকে কিছুই খাওয়ায় না।”
“আমি খাওয়াবো তোকে, পুরা শহরের সব মিষ্টি খাওয়াবো।”
–দুজনে ঘরে বসে গল্প করছে।দরজার পর্দা কিছুটা টেনে দেওয়া।আমি বাইরে ভয়ে এদিক ওদিক করছি কেউ আসলে তো সর্বনাশ।মশার কামড়ে পা ফুলে যাচ্ছে।বার বার নিচু হয়ে মশা মারছি আর মনে মনে ভাবছি হাইরে প্রেম এইদিকে মশা আমার রক্ত খাচ্ছে।প্রেম পরে করিস তোরা।এমন সময় মেহু আপুর হাসির শব্দ পেলাম।যাক ভাবলাম আপুর সাথে গল্প করে সময় কাটানো যাবে।কিন্তু নিমিষেই ভাবনার উল্টা হলো।মেহু আপুর পেছনে আমার ভাইয়া।ভাইয়া এটা কি করছে।মেহু আপুকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ লজ্জা পাচ্ছে।ওয়াল হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভাইয়া আপুর নাক ধরে টানছে।হাই আল্লাহ এর থেকে ভয়ানক দৃশ্য দেখার আগে তুলে নাও।আল্লাহ জানে এখন আর কি কি করবে।ভাইয়া আমাকে দেখে ফেললে,ভীষণ লজ্জা পেয়ে যাবে।তাই দ্রুত টেবিলের নিচে চলে গেলাম।কেমন যেনো একটা ভূমিকম্প হয়ে গেলো আমার।ভাইয়া আর মেহু আপু রিলেশন করে চুপিচুপি বুঝতেও পারলাম নাহ।ভীষণ ভাবে ভ্যাবাচেকা খেয়ে অবশ হয়ে গেলো সমস্ত শরীর।চোখ অফ করে বসে আছি টেবিলের নিচে ভাইয়া আর মেহু আপু এক ঘরের বাইরে ভেতরে বিভোর ভাই আর রিয়া, আমি আর আমার উনি কি দোষ করলাম।বিবাহিত কাপল হয়ে এইভাবে প্রেম করতে পারলাম না, কি করলাম এই জীবনে।কিছুক্ষণ পরে ভাইয়া আর মেহু আপু ছাদে চলে গেলো।আমি টেবিলের নিচ থেকে বেরিয়ে এলাম।
ঘরের মাঝে বেশ অনেক্ষণ ধরে রিয়া আর বিভোর ভাই গল্প করেই যাচ্ছে।একটু উঁকি মেরে দেখলাম,
রিয়া হাঁটু গেড়ে বসে নিজের একটা হাত বাড়িয়ে বলছে,
“আই লাভ ইউ বিভোর,
উইল ইউ ম্যারি মি!”
“বিভোর ভাই বসে পড়লেন,দুই হাতে রিয়ার হাত ধরে বললেন,আমি সম্পূর্ণ স্পিসলেস রিয়া।আমি বোধ হয় সেই ভাগ্যবান পুরুষ যে ভালবাসার মানুষের থেকে এমন সুন্দর সারপ্রাইজ পেয়েছি।আমি কখনো ভাবতেই পারিনি তুমি আমাকে এইভাবে গ্রহন করবে।আমার জীবনের সব থেকে বড় খুশি তুমি আজ আমায় দিয়েছো।আমি তোমার থেকে এইভাবে প্রপোজ পাবো সত্যি ভাবিনি।”
“সব সময় ছেলেরায় প্রপোজ করবে কেনো?..এমন কোনো রুলস আছে নাকি।”
মনে হচ্ছে কাকিমনি আসছে।আমি দ্রুত ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে বললাম,বাকি প্রেম পরে করবেন কেউ আসছে।তিনজনে আবার ছাদে ব্যাক করলাম।
–রাত প্রায় এগারোটা বাজে।বাবা আম্মু,কাকিমনিসহ মুরব্বিদের খাবার নিচে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা কাজিনরা বসে গেলাম খেতে।মেহু আপু বিহান কে বলছে বিহান ভাই চুপচাপ কেনো আজ?বিহান বললো,সে পাত্তা দিচ্ছে না আমায়।তার কাজিন দের পেয়ে হাব্বি নামক এই কাজিন কে পাত্তাই দিচ্ছেনা।মেহু আপু বললো কি ব্যাপার দিয়া এসব ভারী অন্যায়।আমি ফিস ফিস করে বললাম,আপু কাল স্বপ্ব দেখেছি কে যেনো তোমার নাক টানছে।মেহু আপু সাথে সাথে কেশে দিলো।ব্যাপার টা মস্তিষ্কে নাড়া দিয়েছে সিওর।
রান্না হয়েছে মোরগ পোলাও।আয়রা এত রাত পর্যন্ত জেগে আছে সে লেগপিস খাবে।সবার আগে আয়রাকে লেগপিস দেওয়া হলো।সবাই ই লেগ পিস চাইছে কাকে রেখে কাকে দিবে সেই সমস্যা শুরু হলো।এইদিকে আয়রা এক পিস খেয়ে আরেক পিস খাওয়ার বায়না শুরু করলো।ঘ্যান ঘ্যান কাঁন্না জুড়ে দিলো।
–সবার ভাব ভাল না বুঝে বলে উঠলাম,আমি লেগ পিস চাই কিন্তু।লেগ পিস খাওয়ার আশাতেই আমি রোস্ট এত পছন্দ করি।
–মেহু আপু বলে উঠলো,সর তুই দিয়া।আজ বিহান ভাই লেগ পিস খাবে।তুই পাবিনা।
–তিয়াস ভাই বললো,শুধু বিহান ভাইকে দিলে ভারী অন্যায় হবে।বিহান ভাই এর খারাপ লাগবে।সে তার ব্রাদার্স দের ছাড়া খেতে পারবেনা তাইনা বিহান ভাই।
–বিহান ভাই কপাল কুচকে বললেন,তাহলে তুই কি বলতে চাইছিস।সরাসরি বল।
–মহিলারা লেগপিস পাবেনা।আজ আমাদের বোন রা তাদের ভাইদের লেগ পিস দিবে।
–তোহা আপু বললো,ভাইয়া তুই আমাদের মহিলা বললি কেনো?আমরা ও লেগ পিস চাই।
–বিশাল ঝামেলার পর মেহু আপু বললো,ঠিক আছে ছেলেরাই আজ নিক।আমরা স্যাক্রিফাইস করলাম।শর্তসাপেক্ষ।
–ভাইয়া বললো,কি শর্ত।
–তোহা আপু বললো,আমাদের একটা করে টাইগার আর একটা করে কোনআইসক্রিম খাওয়াতে হবে।
–ভাইয়া বললো ঠিক আছে মেনে নিলাম।
–ভাইয়ার পাশে তিয়াস ভাইয়া তার পাশে বিভোর ভাই তার পাশে বিহান।বিহানের পাশে আমি আমার পাশে তোহা আপু তোহা আপুর পাশে রিয়া আর রিয়ার পাশে মেহু আপু বসেছে।খাচ্ছি এরই মাঝে বিহান ভাই উনার লেগপিস আমার প্লেটে তুলে দিলেন।
–আমি দ্রুত উনার প্লেটে তুলে দিয়ে বললাম আরে কি করছেন?
–উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফোন বের করে মেসেজ করে বললেন, আমি জানি তুমি এটা খুব পছন্দ করো।মানুষের মাঝে আর ছোড়াছুড়ি না করে দ্রুত খেয়ে নাও।
–আপনিও তো পছন্দ করেন?
–তোমার থেকে বেশী না।
–না প্লিজ আপনি খান,আমার খারাপ লাগবে আপনি না খেলে।
–প্লিজ জেদ করো না।আমার এসব আর ভাল লাগে না খেতে।সব সময় তো এগুলোয় খেতে থাকি।
–তাহলে আমার প্লেটের টা দিয়ে দেই।
–না তুমি দুটোই খাও।তুমি অনেক পছন্দ করো রোস্ট খেতে আমি জানি।আমার এত প্রিয় না বুঝলে।
–আপনাকে খেতেই হবে।আপনি না খেলে আমিও খেতে পারবোনা।
–যেটা খেতে চাই সেটা খাওয়ালেই বেশী খুশি হবো।এগুলো অনেক খেয়েছি জীবনে আফসোস নেই খুব একটা খাওয়ার।যেটার স্বাদ কখনো পাই নি সেটার জন্য জিদ ধরলে কি হয় শুনি।
–আমি ফোন রেখে উনার দিকে তাকিয়ে পড়লাম।কি বুঝাতে চাইছেন উনি।
–উনার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি।কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন,যেটা চাই দিতে হবে কিন্তু। দ্রুত খেয়ে রুমে চলো।
কি মতলব উনার ভাবসাব তো ভাল মনে হচ্ছেনা।উনি যে মানুষ নিশ্চয়ই জটিল কিছুই বলবেন।