হৃদ রোগ | পর্ব ৪

7 Min Read

তপ্ত দুপুরে যান্ত্রিক শহরের ব্যস্ত মানুষ ছুটে চলেছে যে যার গন্তব্যে । চারিদিকে উষ্ণ মৃদু বাতাস বইছে , হালকা হাওয়ায় নড়ে উঠছে গাছপালা, কয়েকটা পাখির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে থেমে থেমে। মেইন ক্যামপাস থেকে দেখা যাচ্ছে স্ট্যান্ডে হাতে হাত রেখে হাঁটছে কয়েকটা কপোত কপোতি। কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের দল স্ট্যান্ডের বিশাল বট গাছের নীচে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে, কথার তালে তালে হেলে পড়ছে একে অপরের গায়ে। চটপটি, ফুচকার ঠ্যালা বসেছে মোর মাথায়,,,,,,
ওহে কী করিলে বলো পাইবো তোমারে
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে।।।
ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ
এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ
তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।।।
আকাশ এটা কিন্তু এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে , সু সত্যি কষ্ট পাচ্ছে । কোথায় ওকে সান্তনা দেবে তা না করে মরা গান গাইছে, বাঁদর কোথাকারের,,,, এই বলে অনু মুখ বাঁকালো,,,,,
এ বাল চুপ কর , আমাকে জ্ঞান দিতে আসবি না । তোর কী মনে হয় সু কষ্ট পেয়েছে তো আমরা পাইনি?? ও কষ্ট পেয়েছে তাই ওর সাথে দুঃখ ভাগাভাগি করবো বলেই তো এই গান গাইছি ।
তুই আবার আমাকে গালাগাল দিয়েছিস ? তোকে না বারন করেছি আমাকে গালাগাল দিবি না , এরপর দ্বিতীয়বার যদি শুনেছি না তোকে মেরে আকাশ থেকে মাটি বানিয়ে দেবো….. বেয়াদপ কোথাকারের„„„
এ বাল আমি তোকে গালাগাল দিয়েছি ?? তুই কি আমাকে মাটি বানাবি রিমাটিমা ? আমি তোকে মেরে বানিয়ে দেবো কিমা,,,,, আইছে রে আমার ভদ্র বেটি । অনুকে উদ্দেশ্যে করে মুখ বেঁকিয়ে বললো আকাশ ।
অনু আগুন চোখে তাকালো আকাশের দিকে , কিছু বলবে এর আগেই অনিক বিরক্তি সহকারে বলে উঠলো… এ ভাই তোরা কী শুরু করেছিস ?? তোরা এখনও ছোটো আছিস?? বাচ্চাদের মতো ঝগরা করছিস,,,,,
অনিক এই বেয়াদপটাকে পক পক করতে বারন কর , না হলে একে মেরে বালি চাপা দিয়ে দেব । হনুমান কোথাকারের ,,,,,,,,,
এতক্ষণ স্নেহা সুদেষ্ণাকে আগলে বসেছিলো আর চুপচাপ ওদের ঝগরা দেখছিলো । মোহিত আর কেয়া নিরব দর্শকের মতো একবার অনুর দিকে তো একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলো,,,,,
আকাশ কিছু বলতো তার আগেই স্নেহা চেঁচিয়ে উঠলো, চুপ… একদম চুপ করবি তোরা ।
স্নেহা আমি কোথায় কি…….
No more words . স্নেহা হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিল অনুকে । আবার বললো,,,,,
তোদের কমনসেন্স নেই ? কোনো মানুষের বিপদ আপদেও তোদের ঝগড়া করতে হবে?? ওহ … কাদের কী বলছি আমি। থাক এখন আমরা বাড়ি যাই কালকে দেখা হবে।
এতক্ষণ সুদেষ্ণা চুপচাপ বসেছিল , ওদের কথায় কোনো কান ছিলো না । অনুভূতি শূন্য হয়ে এক ভাবে রাস্তার দিকে তাকিয়েছিলো ।
স্নেহা একবার সুদেষ্ণার দিকে তাকালো আর অনুকে ইশারায় আসতে বলে সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো ।
_____________________________________________
• সু এটা কী ঠিক হচ্ছে ?? কী অবস্থা করেছিস নিজের ?? শোন কারোর ভালোবাসা কিন্তু জোর করে পাওয়া যায় না । দরকার নেই যে তুই যাকে ভালোবাসবি সেও তোকে ভালোবাসবে । তাই না ?? ,,,,,
এই বলে কিছুক্ষণ থামলো স্নেহা , দেখলো সুদেষ্ণা নীচের দিকে তাকিয়ে আছে আর অনু পাশে বসে ছল ছল নয়নে সুদেষ্ণার দিকে তাকিয়ে আছে ।
তিনজনের মধ্যে স্নেহা খুব বুদ্ধিমতি, কঠিন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারে। অনুর মধ্যে সিরিয়াসনেসের ‘স’ ও নেই ,ও সবসময় হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করে। আর সুদেষ্ণা হলো কল্পনাবিলাসী, ও কল্পনাতে থাকতে পছন্দ করে। তাই তো বাস্তবটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ।
স্নেহা সু কে বোঝাবে বলে, বাড়ি না গিয়ে স্ট্যান্ডে বসে তিনজনেই। ওদের মাঝে হয়তো বোঝানো যেতে না , সবকটা রত্ন এক একটা বাঁধিয়ে রাখার মতো । ওদের সাথে কলেজে এসে বন্ধুত্বটা হয় । এত দিনের মধ্যে ওদের সঙ্গে খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । ওরাও খুব ভালো , খুব তাড়াতাড়ি আমাদের আপন করে নিয়েছে ।
সু এই ভাবে ভেঙ্গে পরিস না। তোর হৃৎপিণ্ড থেকেও ভালো ছেলে ডিজার্ভ করিস তুই। এই বলে স্নেহা সুদেষ্ণার কাঁধে হাত রাখে ,,,,,, সঙ্গে সঙ্গে সু জাপটে ধরে স্নেহাকে , হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। পাশ থেকে অনুও জরিয়ে ধরে দুজনকে ।
স্নেহা সু এর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে ,,,,, এটা সিনেমা নয় সু , যাকে তোর প্রথম দেখায় ভালো লাগবে সে তোর হিরো হবে । আর দরকার নেই যে হিরোর মতো দেখতে সুন্দর হলে তার চরিত্রটাও ভালো হবে। তুই তাকে চিনিসি বা কতটা ?? যে দেখে যেমন মনে হয় আসলে সে তেমন নয় । বুঝেছিস ??
সুদেষ্ণা ঘাড় নাড়ায়,,,,,,,
বলছি কি সু তুই একটা বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে ওই হৃদপিন্ডকে দেখিয়ে দে যে ওর ছাড়াও পৃথিবীতে ছেলে আছে । তাছাড়া আমাদের সু এমনিতেই সুন্দর, কী বল স্নেহা ? তুই যার দিকে তাকাবি সেই তোর প্রেমে পাগল হয়ে যাবে। অনু সু কে চোখ টিপ দিয়ে বলে।
স্নেহা বাঁকা চোখে তাকায় অনুর দিকে , তারপর বলে,,,,, তুই আর মানুষ হবি না জীবনে, বল ?
লে হালুয়া আমি কী করলাম ?
থাম তুই, স্নেহা অনুকে থামিয়ে সুদেষ্ণাকে বলে,,,,,,বাড়ি যাবি , গিয়ে একটা লম্বা শাওয়ার নিবি তারপরে খেয়েদেয়ে একটা ঘুম দিবি । ঠিক আছে ??
এতক্ষণ সুদেষ্ণা মাথা নীচু করে বসেছিল, স্নেহার কথা শুনে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায় ।
চল তাহলে , এই বলে তিনজনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ।
________________________________________
বাথরুমে শাওয়ারের নীচে চোখ বন্ধ করে বসে আছে সুদেষ্ণা, চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো যা জলের সঙ্গে মিশে একাকার হলো । মনে পড়ে গেল তখনকার মূহুর্তের কথা,,,,,,,
তখন অনু সুদেষ্ণার হাত ধরে ওদের কাছে নিয়ে যায় , সুদেষ্ণা তাদের কাছে মনোযোগ পাওয়ার জন্য হালকা কাশি দেয় । সুদেষ্ণার হৃদপিন্ড বাদে সবাই তাকায় সুদেষ্ণার দিকে , এতে বেশ অস্বস্তি তে পড়ে যায় সুদেষ্ণা ।
কিছু বলবেন ?? ওই দলেরই একটা দাদা বলে ওঠেন সুদেষ্ণাকে,,,,,,
সুদেষ্ণা ইশারায় দেখায় সাদা শার্ট পরা সুদর্শন পুরুষের দিকে,,,, এই হিমাদ্র তোকে ডাকছে ……
ধক করে উঠলো বুকটা । কানে বাজতে লাগলো নামটা । দু বার নামটা আওড়ালাম মনে মনে,,,,, হিমাদ্র , হিমাদ্র । ভালো লাগায় মনটা ছেয়ে গেল । নামটা বেশ সুন্দর।
এই মেয়ে কী হয়েছে?? গভীর পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে আমার ধ্যান ভাঙলো „„„„
চলবে…..

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।