সময়টা সকাল ১১ টা নাগাদ হবে , পুরো স্ট্যান্ড গাছপালায় ভর্তি থাকায় সূর্যের কিরণ ঠিক মতো এসে পৌঁছাতে পারছে না সেখানে , কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাএীরা আড্ডা দিচ্ছে গাছের নীচে বসে।চারিদিক থেকে গাড়ির হর্নের আওয়াজ ভেসে আসছে। স্ট্যান্ডের নীচের দিকে পার্ক সাইডে স্কুল ইউনিফর্ম পরিহিত বাচ্চাদের ভিড়, তারা নিজেদের মধ্যে খেলতে ব্যস্ত এবং তাদেরঅভিভাবকরা নিজেদের আড্ডায় ব্যস্ত ।
এই মেয়ে, এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছো কেন ?? হিমাদ্র আমার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললেন।
আমি কেঁপে উঠলাম উনার আওয়াজ শুনে। আমি কিভাবে বলবো উনাকে আমি নিজের দীর্ঘদিনের তৃষ্ণা মেটাছি । নিজেকে সংযত করে উনাকে বললাম….
আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে , আপনি যদি একটু সাইডে আসতেন,,,,,
যা বলার এখানেই বলো „„„„ উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন।
প্লিস… করুন স্বরে বললাম
উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে একটু সাইডে এলেন তারপর বললেন,,,,,,
এবার বলো কী বলবে ??
আমার কন্ঠস্বর কাঁপছিলো , মনে হচ্ছিলো গলাটা কেউ চেপে ধরে আছে। আমি চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললাম,,,,,,
আমি আপনাকে ভালোবাসি,,,,,,
কোনো উত্তর না পেয়ে আমি চোখ খুলে তাকালাম উনার দিকে,,,,,, উনি শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
এই মেয়ে তোমার বয়স কতো?? তুমি ভালোবাসার কী বোঝো ? যার নাক টিপলে দুধ বেরোবে সে আবার ভালোবাসার কথা বলে । উনি ব্যাঙ্গ করে বললেন,,,,, একটু থেমে আবার বললেন,,,,,,,
শোনো মেয়ে এই সব ছেড়ে পড়াশোনায় মন দাও কাজে দেবে।
আমি উনার দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালাম, তারপর বললাম,,,,,,,আমার বয়সী মেয়েরা যেখানে ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার করছে সেখানে আমি ভালোবাসা বুঝিনা? আর রইলো আমার বয়সের কথা তো শুনুন আমর ১৮ হয়েছে এই বছরেই , আমি ওতোটাও ছোটো নয় যতটা আপনি ভাবছেন ।
তুমি জানো আমি কে ? কী করতে পারি সে সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা আছে?
আমার কিছু জানার দরকার নেই , আমি শুধু জানি আমি আপনাকে ভালোবাসি।
সব জিনিস কিন্তু ছেলে খেলা নয় । এটা তোমার আবেগ হতে পারে ভালোবাসা নয় ….. তিনি তাচ্ছিল্য করে বললেন ।
আপনার কোনো অধিকার নেই আমার অনুভূতিকে অপমান করার । আপনার আমার ভালোবাসাকে আবেগ মনে হলো তো ? ঠিক আছে আর কোনো দিন আপনার কাছে ভালোবাসার আবেদন নিয়ে আসবো না । আপনার চোখের সামনে যাতে না পড়ি সেই চেষ্টাই করবো । কিন্তু মনে রাখবেন আপনাকে ভালোবাসা বন্ধ করবো না , এখন যেমন ভালোবাসি আগেও একি রকম ভালোবাসবো । আমার ভালোবাসা এত ঠুনকো নয় । ভালো থাকবেন , আসছি ,,,,,,,,এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে চলে এলাম আর পেছনে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করিনি।
কথা গুলো বলার সময় উনি শান্ত চোখে তাকিয়ে ছিলেন কিন্তু কিছু বলেন নি , বলতে গেলে আমি কিছু বলার সুযোগ দেয়নি ।
হিমাদ্রর সাথে কথা বলার পর আমি সোজা মেইন ক্যামপাস এ আসি , হিমাদ্রর সামনে অনেক কষ্টে নিজের কান্না গুলো আটকে রেখেছিলাম কিন্তু এখানে এসে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। আমার পেছনে আমার বন্ধুরাও এলো , আমি যখন হিমাদ্রর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলাম তখনই আমার বন্ধুরা ওখানে উপস্থিত হয়েছিল আমি হয়তো খেয়াল করিনি।
ওরা এসে আমাকে ঘিরে ধরলো। তারপর অনিক বললো,,,,, কি রে তুই আর মানুষ পাস নি ভালোবাসার?? শেষে কী না হিমাদ্র রায় চৌধুরী ?
আমি কোনো উওর দিলাম না। অনিক আবার বলল….. আমার তো মনে হয়না হিমাদ্র ভাই তোর ভালোবাসা বুঝবে , শুনেছি উনি নাকি ভালোবাসায় বিশ্বাসী না ।
তোকে কে বলেছে?? মোহিত অনিককে বললো ।
তোকে আগে বলেছিলাম না আমার দাদার বেষ্ট ফ্রেন্ডের কথা ? হিমাদ্র ভাইয়ের কথাই বলেছিলাম ।
ওহ,,,,,,,, তো তোর দাদাকে দেখলাম না যে ? মোহিত অনিক কে জিজ্ঞাসা করলো।
দাদা রিয়া দি কে আনতে গেছে স্টেশনে । দিভাই আজকে ফিরছে দার্জিলিং থেকে । এক সপ্তাহ আগেই ঘুরতে গিয়েছিলো দার্জিলিং , দাদাকে বলেছে স্টেশনে দাঁড়াতে।
• অনিকের দাদার নাম রুদ্রিক । হিমাদ্র , রুদ্রিক আর রিয়া বেস্ট ফ্রেন্ড। রুদ্রিক আর রিয়া একে অপরকে ভালোবাসে, দুজনের বাড়ি থেকেই মেনে নিয়েছে। রুদ্রিক নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেলে ওদের বিয়ে দেওয়া হবে ঠিক করা হয়েছে। রুদ্রিক ব্যানার্জি আর হিমাদ্র রায় চৌধুরী চনন্দননগর কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। তারা তিন বছর আগেই বেরিয়ে গেছে , কিছু মাস পর মাস্টার্স কমপ্লিট হবে । তিনজনেই খুব ভালো বন্ধু হওয়ায় একি ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে। চনন্দননগর কলেজের প্রিন্সিপালের ছেলে হিমাদ্র রায় চৌধুরী। সেই জন্যই হিমাদ্ররা এখনও আসে এই কলেজে। হিমাদ্রদের জন্যই এই কলেজে কেউ উশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না । ওরা সোমবার আর শুক্রবার আসে কলেজে । কারোর কোনো অসুবিধা হলে ওদের দলবল সাহায্য করে । কলেজে ঢুকেই বাঁ দিকের ঘরটায় ওরা বসে । ওখানে না পেলে কলেজের বাইরে বট গাছের নীচে ওদের অবশ্যই পাওয়া যাবে। ওদের কোনো ছাএ সংগঠন নেই আর না আছে কোনো ছাএ নেতা টেতার ঝামেলা । ওরা শুধু একটু আধটু দাদাগিরি করে।
_______________________________________________
এই মনু , আর কতক্ষন লাগবে তোর ? বেশিক্ষণ ভিজলে কিন্তু শরীর খারাপ করবে , তাড়াতাড়ি বের হ । আমি খাবার গরম করছি নীচে আয় ,,,,, এই বলে সুদেষ্ণার মা নীচে চলে গেলেন ।
মায়ের ডাকে আমি ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম ।
. অষ্টাদশী কন্যার তীব্র অভিমান হয়েছে তার কল্প পুরুষের ওপর । সে তার অনুভূতিকে সম্মান নাই বা করলো তা বলে অসম্মান করবে ? অষ্টাদশী যাবে না আর ওই নিষ্ঠুর মানবের কাছে ভালোবাসার কথা বলতে । ভালোবাসায় এত কষ্ট কেনো ? এই বিরহ যে তার ভালো লাগছে না । যদি ওই নিষ্ঠুর মানবের আগমন আমার জন্যই হয়ে থাকে তাহলে কোনো এক সময় সে আমারি হবে । আমি অপেক্ষায় থাকবো তার । তাই বলে আমি চুপচাপ থাকবো না , আমি চেষ্টা করবো । আমি না হয় একটু বেহায়া হবো ।
নীচে মা বাবার সাথে খাবার খেয়ে ওপরে ফিরে এলাম । আমার মাথাটা ভারি ভারি লাগছে চোখটা কেমন বুজে আসছে , বড্ড ক্লান্ত লাগছে । আর কিছু না ভেবে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম, পাড়ি দিলাম ঘুমের দেশে।
চলবে „„„„
Leave a comment