নূর কে আজ বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।শারীরিক ভাবে সম্পুর্ন সুস্থ হয়নি নূর৷ আশমিন একজন নার্স কে ও নিয়ে এসেছে সাথে। লুবানা যদিও মানা করেছিল। আশমিন শোনে নি। এখন মায়া বেগম ও নেই।লুবানা অফিস সামলে কোন ভাবেই নূরের খেয়াল রাখতে পারবে না। বাসার সার্ভেন্টদের উপর আশমিন ভরসা করতে পারছে না। নিজের রুমের ক্যামেরা কয়েকটা বারিয়ে দিয়েছে আশমিন।
আশমিনের কর্মকাণ্ডে নূর প্রচুর বিরক্ত।কিন্তু মুখে কিছুই বলছে না। আশমিন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই নূর তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সুখ পাখির কাছে চলে গেলো। দুজনেই বিছানায় বসে বসে খেলছে। আশমিন কে দেখেই তারা হাত তালি দিতে লাগলো। আশমিন দুজনকেই একসাথে কোলে তুলে নিলো। মেয়েদের মুখে চুমু দিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে লাগলো। খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। যা একমাত্র সে আর তার মেয়েরা বোঝে।গোল টেবিল বৈঠকের মাঝেই এক সদস্য আরেকজনের উপর হামলা করে বসলো। পাখি হঠাৎ করেই সুখের মুখের উপর নিজের হাত চালিয়ে দিয়েছে। সুখ ঠোঁট ফুলিয়ে কাদতে কাদতে পাখির ঝাকড়া চুল টেনে ধরেছে। আশমিনের দুই হাতে দুজন থাকায় সে কাউকেই থামাতে পারছে না। অসহায় গলায় চেচিয়ে নূর কে ডাকলো।
— বউ!! আমার দাত না উঠা মেয়েরা চুলোচুলি করছে কেন? এই বয়সে এসব কে শেখালো?
নূর বিরক্ত হয়ে উল্টো ঘুরে শুয়ে পরলো। কি আজগুবি কথাবার্তা! মেয়েরা নিজেরাই সারাদিন একজন আরেকজনের পিছনে লেগে থাকে।এখন তার বাবার মনে হচ্ছে কেউ তাদের এসব তালিম দিচ্ছে। মানুষের আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই!
আশমিন কোন রকম মেয়েদের থামিয়ে দুজন কে দুই দোলনায় বসিয়ে দিলেন। দুটো এক একটা বিচ্ছু হয়েছে। এখনই এই অবস্থা! আর এদিকে সে আরো কয়েকজন আনার প্ল্যান করছে। আশমিনের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। তার ব্যক্তিগত মেয়েরা মা*রামারি করছে!জনগণ শুনলে কি বলবে!
আশমিন নূরের পায়ের কাছে বসে গম্ভীর গলায় বলল,
— বউ,, মেয়েদের আদর ভালোবাসা শেখানো উচিত। আমার মেয়েগুলো তোমার স্বভাব পেয়েছে। কই মিলেমিশে থাকবে।তা না করে তারা চুলোচুলি করছে! আমার মতো রোমান্টিক বাবার ঘরে এমন মা*রামা*রি করা মেয়ে! আমার ভবিষ্যৎ জামাইদের কি হবে বউ?
নূর মুখ কুচকে চোখ বন্ধ করে রইলো। আশমিন আরেকবার সুখ পাখির দিকে তাকালো। তারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কিছু বলছে। এর মধ্যেই ভাব হয়ে গেলো! কি সাংঘাতিক। ভাগ্য ভালো নূর দেখেনি। নাহলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতো মেয়েরা তার মতোই হয়েছে। ভয়ংকর!
আশমিন গায়ে পাঞ্জাবি জড়িয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। দু দিন আগে অমি আর আশিয়ান কে গোডাউনে আসতে বলে সে নিজেই যায়নি। অমি যদিও কিছু বলেনি কিন্তু আশিয়ান কয়েক দফা বাকা কথা শুনিয়েছে। আশমিন সেসব পাত্তা দেয়নি। যেজন্য তাদের আসতে বলেছিল সে নিজেই সে কাজ করে ফেলেছে। নাফিজা শিকদার কে মুহুর্তের মধ্যেই হাওয়া করে দিয়েছে। জানে না মা*রলেও বাচার মতো অবস্থায় ও রাখেনি। আশমিন সে বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে চায় না। তাই অমি আর আশিয়ানের সামনে ও মুখ খোলে নি।
আশমিন সোজা আমজাদ চৌধুরীর রুমে চলে গেলো। আমজাদ চৌধুরীর শরীর ইদানীং ভালো থাকে না। হুট করেই যেন তার বয়স বেরে গিয়েছে। আশমিন আজ বাবার সাথে সময় কাটাবে বলে এসেছে। যদিও আমজাদ চৌধুরীর কাছে সে একটা আতংক। তবুও আমজাদ চৌধুরী চায় ছেলে তার সাথে একটু সময় কাটাক।
আমজাদ চৌধুরী শুয়ে ছিল।আশমিন ও গিয়ে তার পাশেই শুয়ে পরলো। এক পা বাবার উপর তুলে দিয়ে গলায় ভয়ার্ত ভাব এনে বলল,
— আমার মেয়েরা তো মা*রামারি শিখে গেছে আব্বু। কিছুক্ষণ আগেই চুলোচুলি করছিল! তুমি দাদা হয়ে সারাদিন রুমে শাহরুখ খানের মতো পরে থাকো। তাদের তো একটু সময় দিতে পারো। তাহলে তারা মা*রা*মা*রি না শিখে একটু খেলাধুলা শিখতে পারতো। কেমন দাদু তুমি! আর কিছু না পারলেও নিজের বুড়ো বয়সেও কুমার থাকার দুর্দান্ত ইতিহাস টাও তো বলতে পারো। এতে তোমার নিজেকেও কচি ডাবের মতো মনে হবে।
আমজাদ চৌধুরী হতাশার শ্বাস ফেললো। প্রথমে কিছুটা আগ্রহ নিয়ে শুনলেও পরে ঠিকই বুঝেছে ছেলে তাকে খোচাতে এসেছে।
— নাতনিদের বাপ কে বলে সারাদিন যুবতী মেয়েদের মতো টিটকিরি সহ্য করতে হচ্ছে। নাতনিদের বললে তো ভার্জিন দাদু বলে মহল্লায় মহল্লায় পোস্টার টাঙিয়ে দিবে।নিজের মুখ বন্ধ রাখো।আর আমাকে বাকি জীবন টা শান্তিতে থাকতে দাও।
আশমিন ফুসে উঠলো। এক লাফে শোয়া থেকে উঠে আমজাদ চৌধুরীর মুখোমুখি বসলো। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে গমগমে গলায় বলল,
— একদম ভালো ছেলে সাজবে না। স্কুলে থাকতে মিনা নামের এক মেয়ের সাথে তোমার চোখে চোখে ইশারা চলতো। সেই মেয়ের জন্য তুমি হাত কে*টে তার নাম লিখতে চেয়েছিলে। সত্যি করে বলো, তার সাথে আর কি হাংকিপাংকি করেছো। রুম ডেটে যাও নি তো! বুকে হাত দিয়ে বলো আব্বু, তুমি তার হাত ধরো নি?
আমজাদ চৌধুরী শোয়া থেকে উঠে বসলো। আশমিনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল,
— খাট থেকে নেমে হাতের বায়ে চার কদম হাটলেই দরজা। চুপচাপ বেরিয়ে যাবে। আর এক মিনিট এখানে থাকলে আমি তোমার মুখ সেলাই করে দিবো। বেয়াদব ছেলে! আমাদের সময় আমরা তোমার মতো অসভ্য ছিলাম না। আমাদের ভালো লাগা ছিল শুদ্ধ। ভালোবাসা টাও ছিল একেবারে পাপ মুক্ত। বুঝেছো?আর ওটা অল্প বয়সের আবেগ ছিল।ভালোবাসা নয়। এবার বেড়িয়ে যাও।
আশমিন মুখ কুচকে দৃষ্টি সরালো।মুখ অন্য দিকে ঘুড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— একদম বাজে কথা বলবে না।আমি মোটেও অসভ্য নই।আমি কি তোমার মতো হাত কে*টে প্রেমিকার নাম লিখতে চেয়েছি? দেখো,আমার হাতে কোথাও লেখা আছে “বউ”। তুমি অল্প বয়সে বেশি পেকেছিলে স্বিকার করো।
আমজাদ চৌধুরী হার মানলেন।আশমিন কে রুমে রেখে নিজেই বেরিয়ে গেলেন।এই ছেলের সাথে সময় কাটানোর চেয়ে নাতনিদের চুলোচুলি দেখা ভালো। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, আজ থেকে নিজেকে এতো ব্যস্ত রাখবে যাতে আশমিন তার নাগাল না পায়।
আমজাদ চৌধুরী বেরিয়ে যেতেই আশমিন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। যেভাবে রুমে গেড়ে বসেছিল কয়েকদিন পর পিঠের নিচে শিকড় গজিয়ে যেতো। নাতনিদের নিয়ে সারাদিন খেলা করবে যাতে সে নাতি আনার ব্যবস্থা করতে পারে।তা না করে সারাদিন রুমে বসে দেবদাস হচ্ছে। এ কেমন বাবা হলো তার! কেউ কেন তাকে একটু বউয়ের সাথে চিপকে থাকার সুযোগ করে দেয়না? বউ কে একটা চুমু খেতে গেলে মেয়েরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। তার ভাবতেও লজ্জা লাগছে তার মতো এমন নির্লজ্জ মানুষ মেয়েদের তাকানো দেখে লজ্জায় চুমু খেতে পারে না।
আশমিন আজ সকাল সকাল পার্টি অফিসে এসেছে। আজ দলের গোপন বৈঠক আছে। সকাল না বলে ভোর বললেই সব চেয়ে বেশি মানানসই হবে। পাচটায় মিটিং রাখা হয়েছে। আশমিন চারটায় চলে এসেছে। পাচটা বাজতে এখনো তেইশ মিনিট বাকি। সানভি একটু পর পর হাই তুলছে। আশমিনের মেজাজ চটে আছে। আসার সময় সুখ পাখি খুব কান্না করেছে। আজ মেয়েরা তার সাথেই ঘুমিয়েছে।তাই আশমিন উঠতেই তারাও উঠে গিয়েছে। একটু বড় হতেই সেয়ানা হয়ে গেছে দুটো। আশমিন কে রেডি হতে দেখলেই কান্না শুরু করে। উদ্দেশ্য তারাও বাবার সাথে বাইরে যাবে। আশমিনের তখন হাত পা ছড়িয়ে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করে। নূর একটুও সাহায্য করেনা তাকে। সে পারলে মেয়েদের তার ঘাড়ে তুলে দেয়। নিজের বাসা থেকে আশমিনের চোরের মতো বেরুতে হয়। কি দিন আসলো!
— লুবানার ব্যপারে কি ভেবেছো সান?আর কতো কাল জোর করে চুমু খেয়ে কাটাবে? আমার বাসার মেয়েদের সাথে এসব চলবে না। সিরিয়াস হলে বলো।নাহলে হায়ে ভালো সম্বন্ধ আছে। বিয়ে দিয়ে দেই।
সানভির হাই মাঝপথে থেমে গেলো। চোখ বড় বড় করে আর্তনাদ করে বললো,
— দিবেন না স্যার প্লিজ। আমি আছি তো। আমি যথেষ্ট ভালো ছেলে। মন্ত্রীর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট। কতো বড় চাকরি! আমার চেয়ে ভালো ছেলে পাবেন না। আমি তো যৌতুক ও নিবো না।
আশমিন শান্ত চোখে তাকালো। হিমশীতল গলায় বলল,
— তোমার চেয়েও ভালো ছেলে লাইনে আছে সান। ছেলে বড় ব্যবসায়ী। নিজেদের কোম্পানি আছে। ছেলে দেখতেও মাশআল্লাহ। সবচেয়ে বড় কথা, ছেলে লুবানা কে সাবানা ডাকবে না কখনো। ঝগড়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। তাহলে তোমার কাছে কেন বিয়ে দিবো।একটা যোগ্য কারণ দেখাও।
সানভির মুখ কাদো কাদো হয়ে গেলো। তবুও গলায় জোর এনে শক্ত গলায় বলল,
— আমি সাবানা কে ভালোবাসি স্যার। আর আমি ওকে সাবানাই ডাকবো। ভালোবেসে ডাকি। এটা শুধু একটা সম্বোধন নয়, এটা আমার মনের শান্তি।
আশমিন মুচকি হাসলো। সানভির দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস গলায় বলল,
— তাহলে একা একা হানিমুনে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যাও সান। শাস্তির কথা মনে আছে তো?
(শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। আইডি রিষ্টিকশনের জন্য কাল পোস্ট করতে পারিনি। ফেসবুকের ঢং দেখলে গা জ্বলে যায়। যাই হোক, আপনাদের লেখিকা টাইফয়েড এ আক্রান্ত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর অবস্থা গলার। কথা বললে মনে হয় শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দিচ্ছে। এই ভয়ে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছি।সবাই দোয়া করবেন। শেষ পর্ব টা যেন ভালো ভাবে শেষ করতে পারি তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করবেন। আপনাদের আশমিন বইয়ের পাতায় আসছে। সেখানে তাকে আরো রোমাঞ্চকর চরিত্রে পাবেন। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। সবাই সুস্থ আর সাবধানে থাকবেন। অসুস্থ হলে ফাকিবাজি না করে ঔষধ খেয়ে নিবেন।)
নূর কে আজ বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।শারীরিক ভাবে সম্পুর্ন সুস্থ হয়নি নূর৷ আশমিন একজন নার্স কে ও নিয়ে এসেছে সাথে। লুবানা যদিও মানা করেছিল। আশমিন শোনে নি। এখন মায়া বেগম ও নেই।লুবানা অফিস সামলে কোন ভাবেই নূরের খেয়াল রাখতে পারবে না। বাসার সার্ভেন্টদের উপর আশমিন ভরসা করতে পারছে না। নিজের রুমের ক্যামেরা কয়েকটা বারিয়ে দিয়েছে আশমিন।
আশমিনের কর্মকাণ্ডে নূর প্রচুর বিরক্ত।কিন্তু মুখে কিছুই বলছে না। আশমিন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই নূর তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সুখ পাখির কাছে চলে গেলো। দুজনেই বিছানায় বসে বসে খেলছে। আশমিন কে দেখেই তারা হাত তালি দিতে লাগলো। আশমিন দুজনকেই একসাথে কোলে তুলে নিলো। মেয়েদের মুখে চুমু দিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে লাগলো। খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। যা একমাত্র সে আর তার মেয়েরা বোঝে।গোল টেবিল বৈঠকের মাঝেই এক সদস্য আরেকজনের উপর হামলা করে বসলো। পাখি হঠাৎ করেই সুখের মুখের উপর নিজের হাত চালিয়ে দিয়েছে। সুখ ঠোঁট ফুলিয়ে কাদতে কাদতে পাখির ঝাকড়া চুল টেনে ধরেছে। আশমিনের দুই হাতে দুজন থাকায় সে কাউকেই থামাতে পারছে না। অসহায় গলায় চেচিয়ে নূর কে ডাকলো।
— বউ!! আমার দাত না উঠা মেয়েরা চুলোচুলি করছে কেন? এই বয়সে এসব কে শেখালো?
নূর বিরক্ত হয়ে উল্টো ঘুরে শুয়ে পরলো। কি আজগুবি কথাবার্তা! মেয়েরা নিজেরাই সারাদিন একজন আরেকজনের পিছনে লেগে থাকে।এখন তার বাবার মনে হচ্ছে কেউ তাদের এসব তালিম দিচ্ছে। মানুষের আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই!
আশমিন কোন রকম মেয়েদের থামিয়ে দুজন কে দুই দোলনায় বসিয়ে দিলেন। দুটো এক একটা বিচ্ছু হয়েছে। এখনই এই অবস্থা! আর এদিকে সে আরো কয়েকজন আনার প্ল্যান করছে। আশমিনের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। তার ব্যক্তিগত মেয়েরা মা*রামারি করছে!জনগণ শুনলে কি বলবে!
আশমিন নূরের পায়ের কাছে বসে গম্ভীর গলায় বলল,
— বউ,, মেয়েদের আদর ভালোবাসা শেখানো উচিত। আমার মেয়েগুলো তোমার স্বভাব পেয়েছে। কই মিলেমিশে থাকবে।তা না করে তারা চুলোচুলি করছে! আমার মতো রোমান্টিক বাবার ঘরে এমন মা*রামা*রি করা মেয়ে! আমার ভবিষ্যৎ জামাইদের কি হবে বউ?
নূর মুখ কুচকে চোখ বন্ধ করে রইলো। আশমিন আরেকবার সুখ পাখির দিকে তাকালো। তারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কিছু বলছে। এর মধ্যেই ভাব হয়ে গেলো! কি সাংঘাতিক। ভাগ্য ভালো নূর দেখেনি। নাহলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতো মেয়েরা তার মতোই হয়েছে। ভয়ংকর!
আশমিন গায়ে পাঞ্জাবি জড়িয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। দু দিন আগে অমি আর আশিয়ান কে গোডাউনে আসতে বলে সে নিজেই যায়নি। অমি যদিও কিছু বলেনি কিন্তু আশিয়ান কয়েক দফা বাকা কথা শুনিয়েছে। আশমিন সেসব পাত্তা দেয়নি। যেজন্য তাদের আসতে বলেছিল সে নিজেই সে কাজ করে ফেলেছে। নাফিজা শিকদার কে মুহুর্তের মধ্যেই হাওয়া করে দিয়েছে। জানে না মা*রলেও বাচার মতো অবস্থায় ও রাখেনি। আশমিন সে বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে চায় না। তাই অমি আর আশিয়ানের সামনে ও মুখ খোলে নি।
আশমিন সোজা আমজাদ চৌধুরীর রুমে চলে গেলো। আমজাদ চৌধুরীর শরীর ইদানীং ভালো থাকে না। হুট করেই যেন তার বয়স বেরে গিয়েছে। আশমিন আজ বাবার সাথে সময় কাটাবে বলে এসেছে। যদিও আমজাদ চৌধুরীর কাছে সে একটা আতংক। তবুও আমজাদ চৌধুরী চায় ছেলে তার সাথে একটু সময় কাটাক।
আমজাদ চৌধুরী শুয়ে ছিল।আশমিন ও গিয়ে তার পাশেই শুয়ে পরলো। এক পা বাবার উপর তুলে দিয়ে গলায় ভয়ার্ত ভাব এনে বলল,
— আমার মেয়েরা তো মা*রামারি শিখে গেছে আব্বু। কিছুক্ষণ আগেই চুলোচুলি করছিল! তুমি দাদা হয়ে সারাদিন রুমে শাহরুখ খানের মতো পরে থাকো। তাদের তো একটু সময় দিতে পারো। তাহলে তারা মা*রা*মা*রি না শিখে একটু খেলাধুলা শিখতে পারতো। কেমন দাদু তুমি! আর কিছু না পারলেও নিজের বুড়ো বয়সেও কুমার থাকার দুর্দান্ত ইতিহাস টাও তো বলতে পারো। এতে তোমার নিজেকেও কচি ডাবের মতো মনে হবে।
আমজাদ চৌধুরী হতাশার শ্বাস ফেললো। প্রথমে কিছুটা আগ্রহ নিয়ে শুনলেও পরে ঠিকই বুঝেছে ছেলে তাকে খোচাতে এসেছে।
— নাতনিদের বাপ কে বলে সারাদিন যুবতী মেয়েদের মতো টিটকিরি সহ্য করতে হচ্ছে। নাতনিদের বললে তো ভার্জিন দাদু বলে মহল্লায় মহল্লায় পোস্টার টাঙিয়ে দিবে।নিজের মুখ বন্ধ রাখো।আর আমাকে বাকি জীবন টা শান্তিতে থাকতে দাও।
আশমিন ফুসে উঠলো। এক লাফে শোয়া থেকে উঠে আমজাদ চৌধুরীর মুখোমুখি বসলো। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে গমগমে গলায় বলল,
— একদম ভালো ছেলে সাজবে না। স্কুলে থাকতে মিনা নামের এক মেয়ের সাথে তোমার চোখে চোখে ইশারা চলতো। সেই মেয়ের জন্য তুমি হাত কে*টে তার নাম লিখতে চেয়েছিলে। সত্যি করে বলো, তার সাথে আর কি হাংকিপাংকি করেছো। রুম ডেটে যাও নি তো! বুকে হাত দিয়ে বলো আব্বু, তুমি তার হাত ধরো নি?
আমজাদ চৌধুরী শোয়া থেকে উঠে বসলো। আশমিনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল,
— খাট থেকে নেমে হাতের বায়ে চার কদম হাটলেই দরজা। চুপচাপ বেরিয়ে যাবে। আর এক মিনিট এখানে থাকলে আমি তোমার মুখ সেলাই করে দিবো। বেয়াদব ছেলে! আমাদের সময় আমরা তোমার মতো অসভ্য ছিলাম না। আমাদের ভালো লাগা ছিল শুদ্ধ। ভালোবাসা টাও ছিল একেবারে পাপ মুক্ত। বুঝেছো?আর ওটা অল্প বয়সের আবেগ ছিল।ভালোবাসা নয়। এবার বেড়িয়ে যাও।
আশমিন মুখ কুচকে দৃষ্টি সরালো।মুখ অন্য দিকে ঘুড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— একদম বাজে কথা বলবে না।আমি মোটেও অসভ্য নই।আমি কি তোমার মতো হাত কে*টে প্রেমিকার নাম লিখতে চেয়েছি? দেখো,আমার হাতে কোথাও লেখা আছে “বউ”। তুমি অল্প বয়সে বেশি পেকেছিলে স্বিকার করো।
আমজাদ চৌধুরী হার মানলেন।আশমিন কে রুমে রেখে নিজেই বেরিয়ে গেলেন।এই ছেলের সাথে সময় কাটানোর চেয়ে নাতনিদের চুলোচুলি দেখা ভালো। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, আজ থেকে নিজেকে এতো ব্যস্ত রাখবে যাতে আশমিন তার নাগাল না পায়।
আমজাদ চৌধুরী বেরিয়ে যেতেই আশমিন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। যেভাবে রুমে গেড়ে বসেছিল কয়েকদিন পর পিঠের নিচে শিকড় গজিয়ে যেতো। নাতনিদের নিয়ে সারাদিন খেলা করবে যাতে সে নাতি আনার ব্যবস্থা করতে পারে।তা না করে সারাদিন রুমে বসে দেবদাস হচ্ছে। এ কেমন বাবা হলো তার! কেউ কেন তাকে একটু বউয়ের সাথে চিপকে থাকার সুযোগ করে দেয়না? বউ কে একটা চুমু খেতে গেলে মেয়েরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। তার ভাবতেও লজ্জা লাগছে তার মতো এমন নির্লজ্জ মানুষ মেয়েদের তাকানো দেখে লজ্জায় চুমু খেতে পারে না।
আশমিন আজ সকাল সকাল পার্টি অফিসে এসেছে। আজ দলের গোপন বৈঠক আছে। সকাল না বলে ভোর বললেই সব চেয়ে বেশি মানানসই হবে। পাচটায় মিটিং রাখা হয়েছে। আশমিন চারটায় চলে এসেছে। পাচটা বাজতে এখনো তেইশ মিনিট বাকি। সানভি একটু পর পর হাই তুলছে। আশমিনের মেজাজ চটে আছে। আসার সময় সুখ পাখি খুব কান্না করেছে। আজ মেয়েরা তার সাথেই ঘুমিয়েছে।তাই আশমিন উঠতেই তারাও উঠে গিয়েছে। একটু বড় হতেই সেয়ানা হয়ে গেছে দুটো। আশমিন কে রেডি হতে দেখলেই কান্না শুরু করে। উদ্দেশ্য তারাও বাবার সাথে বাইরে যাবে। আশমিনের তখন হাত পা ছড়িয়ে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করে। নূর একটুও সাহায্য করেনা তাকে। সে পারলে মেয়েদের তার ঘাড়ে তুলে দেয়। নিজের বাসা থেকে আশমিনের চোরের মতো বেরুতে হয়। কি দিন আসলো!
— লুবানার ব্যপারে কি ভেবেছো সান?আর কতো কাল জোর করে চুমু খেয়ে কাটাবে? আমার বাসার মেয়েদের সাথে এসব চলবে না। সিরিয়াস হলে বলো।নাহলে হায়ে ভালো সম্বন্ধ আছে। বিয়ে দিয়ে দেই।
সানভির হাই মাঝপথে থেমে গেলো। চোখ বড় বড় করে আর্তনাদ করে বললো,
— দিবেন না স্যার প্লিজ। আমি আছি তো। আমি যথেষ্ট ভালো ছেলে। মন্ত্রীর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট। কতো বড় চাকরি! আমার চেয়ে ভালো ছেলে পাবেন না। আমি তো যৌতুক ও নিবো না।
আশমিন শান্ত চোখে তাকালো। হিমশীতল গলায় বলল,
— তোমার চেয়েও ভালো ছেলে লাইনে আছে সান। ছেলে বড় ব্যবসায়ী। নিজেদের কোম্পানি আছে। ছেলে দেখতেও মাশআল্লাহ। সবচেয়ে বড় কথা, ছেলে লুবানা কে সাবানা ডাকবে না কখনো। ঝগড়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। তাহলে তোমার কাছে কেন বিয়ে দিবো।একটা যোগ্য কারণ দেখাও।
সানভির মুখ কাদো কাদো হয়ে গেলো। তবুও গলায় জোর এনে শক্ত গলায় বলল,
— আমি সাবানা কে ভালোবাসি স্যার। আর আমি ওকে সাবানাই ডাকবো। ভালোবেসে ডাকি। এটা শুধু একটা সম্বোধন নয়, এটা আমার মনের শান্তি।
আশমিন মুচকি হাসলো। সানভির দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস গলায় বলল,
— তাহলে একা একা হানিমুনে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যাও সান। শাস্তির কথা মনে আছে তো?
(শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। আইডি রিষ্টিকশনের জন্য কাল পোস্ট করতে পারিনি। ফেসবুকের ঢং দেখলে গা জ্বলে যায়। যাই হোক, আপনাদের লেখিকা টাইফয়েড এ আক্রান্ত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর অবস্থা গলার। কথা বললে মনে হয় শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দিচ্ছে। এই ভয়ে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছি।সবাই দোয়া করবেন। শেষ পর্ব টা যেন ভালো ভাবে শেষ করতে পারি তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করবেন। আপনাদের আশমিন বইয়ের পাতায় আসছে। সেখানে তাকে আরো রোমাঞ্চকর চরিত্রে পাবেন। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। সবাই সুস্থ আর সাবধানে থাকবেন। অসুস্থ হলে ফাকিবাজি না করে ঔষধ খেয়ে নিবেন।)
Leave a comment