লাভার নাকি ভিলেন | পর্ব – ১৬

7 Min Read

পরদিন সকালে মেঘলা কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হল। বাসে মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে হটাৎ লক্ষ্য করল কেউ একজন তার ঘাঁ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটি ক্রমশো তাকে পিছন থেকে আঁশটে পিশটে জড়িয়ে ধরছে। মেঘলা সিধান্ত নিয়েছে এবার ছেলিটিকে একটা থাপ্পড় মারবে.

মেঘলা যখন ভাবনা মত কাজটি করার জন্য পিছনে ঘুরল সে ছেলেটির একদম কাছে গিয়ে পরল। ছেলেটির সাথে প্রায় গাঁয়ে গা মিশে গেছে, ঠোঁট ছুই ছুই অবস্থা চোখে চোখ পড়ল। সাথে সাথে ছেলেটি পিছনের সবাইকে ধাক্কা দিয়ে একটু পিছনে সরে গেল। কিন্তু ছেলেটিকে দেখার পর মেঘলার মনে হচ্ছে যা হচ্ছিল ভালই হচ্ছিল কেন যে বাঁধা দিলাম।
মেঘলা অবাক হয়ে বলল আপনি এখানে….???
আকাশঃ আর কখনো বাসে আসবি না….।
মেঘলাঃ মানে?
আকাশঃ অসহ্যকর, ভাল লাগছেনা। চল এখান থেকে….এই ড্রাইভার বাস থামান নামব।
আকাশ মেঘলার হাত ধরে নিয়ে নেমে গেল।
মেঘলাঃ রাগ করলেন কেন?
আকাশঃ বাসে এভাবে হ্যারেস হতে হয় কোনদিন বলিস নি তো…
মেঘলাঃ কই কি হয়েছে?
আকাশঃ আজ আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলেও তো একই অবস্থা হত পিছনের সবাই যেভাবে ধাক্কা দিচ্ছিল।
মেঘলাঃ ছাড়ুন ত এসব কোন ব্যাপার নাকি।
আকাশঃ ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারব। তুই অন্যজনের সাথে ধাক্কা ধাক্কি করে কলেজে যাবে এটা আমি মানতে পাড়ব না।
মেঘলাঃ তাহলে কি আমি কলেজে যাব না?
আকাশঃ যাবি আমি কলেজের বাসে যাবি আমি বলে দিব যদিও এই রাস্তায় বাস আসে না তবুও আমি বলে দিব যেন তোকে এসে নিয়ে যায়।
মেঘলাঃ সেসব না হয় পরে হবে আপনি বাসে কি করছেন বাইক কোথায়?
আকাশঃ রাস্তায় রেখে এসেছি তোকে দেখতে ইচ্ছা করছিল তাই তোর সাথে এসেছি।
মেঘলাঃ আজব মানুষ এই তো বাসা থেকে এসেছি তখনি ত দেখা হল কলেজে গিয়ে আবার তো হতই।
আকাশঃ এত কথা বলিস কেন চুপ থাক না। এখন কি নিজের বউ এর সাথে দেখা করতে তোর পারমিশন নিতে হবে নাকি?
মেঘলাঃ না বাবা আপনার বউ আমি বলার কে যা মন চাই কইরেন এখন চলুন কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আকাশঃ আমরা কলেজে যাব কে বল্ল তোকে?
মেঘলাঃ তাহলে কোথায় যাব?
আকাশঃ আজ তোর ভালবাসার প্রথমদিন আজ ডেটিং এ যাবি।
মেঘলাঃ ডেটিং সেটা আবার কি?
আকাশঃ আগে চল দেখাচ্ছি…
আকাশ মেঘলাকে নিয়ে একটা পার্কে গেল। মেঘলা ভেবেছিল সেখানে রোমান্টিক কিছু হবে কিন্তু সেখানে গিয়ে তার রীতিমতো ভয় করছে।
কারন সেখানে কালকের ছেলেগুলি দাঁড়িয়ে আছে।
মেঘলাঃ থামুন থামুন আপনি তো বলেছিলেন ডেটিং যাচ্ছি তাহলে এখানে কি হচ্ছে?
আকাশঃ কি হচ্ছে?
মেঘলাঃ এখানে তো মারামারি হবে মনে হচ্ছে ডেটিং এ কি কি হয় আমি জানি সেখানে মারামারি হয় না।
আকাশঃ কিছুক্ষন আগেই ত বল্লি ডেটিং কি জানিস না।
মেঘলাঃ মিথ্যা বলেছিলাম চলুন না এখান থেকে চলে যাই।
আকাশঃ কার কাছে ডেটিং মানে কি জানি না তবে আমার কাছে একে অপরকে খুশি করতে পারাটাই হল ডেটিং।আর আমার মনে হয় এদের মারতে পারলেই তুই খুশি হবে তাই এ ব্যবস্থা।
মেঘলাঃ কি অদ্ভুত ভালবাসা….???
আকাশঃ হুম এটাই আকাশের ভালবাসা, ভিলেনি ভালবাসা…. আকাশ কাকে যেন বলল লাঠি দিতে। একটা ছেলে এসে একটা হকি স্টিক দিয়ে গেল। আকাশ স্টিক টা মেঘলার হাতে দিয়ে বলল যা যত খুশি মার। 
মেঘলাঃ কি বলছেন আমি ওদের মারব? আমি এতগুলো ছেলের সাথে পাড়ব?
আকাশঃ আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়? যে ব্যবস্থা না করে তোকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
এই তোদের বলছি চারদিক টা ভাল করে দেখে নে আশে পাশে যাদের দেখছিস সবাই দাঁড়িয়ে আছে মেঘলাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য কেউ একটু ঝামেলা করবি গণধোলায় খেয়ে সোজা উপড়ে চলে যাবি আর চুপচাপ মার খেলে একটা মেয়ে আর কতক্ষন মারবে এমনি ছেড়ে দিবে।বাকিটা তোদের ইচ্ছা।
মেঘলাঃ আমি পারব না…..
দূর থেকে নাবিলঃ আকাশ আগেই বলেছিলাম এই মেয়েকে দিয়ে হবে না যা করার তকেই করতে হবে।
মেঘলাঃ আপনিও আছেন?
নাবিলঃ জ্বি আজ্ঞে হে….এখানে থাকা আমি থেকে ফুচকাওয়ালা সবাই আপাতত আপনার এসিস্ট্যান্ট ম্যাডাম।
আকাশঃ মেঘলা এই পর্বটা তাড়াতাড়ি শেষ কর আরো অনেক কাজ বাকি আছে।
মেঘলা এবার স্টিক টা হাতে নিয়ে এগিয়ে বলল তোমরা চলে যাও….আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম।
আকাশঃ অই কি বলছিস এসব?
মেঘলাঃ আজ আমার জীবনের সবচেয়ে ভাল দিন আমি কোন ভাল কাজ দিয়ে দিনটা শুরু করতে চাই আর ক্ষমার চেয়ে ভাল কি হতে পারে?
সাথে সাথে ছেলেগুলি এসে মেঘলার পায়ের কাছে বসে পরল। অনেক ভয় পেয়েছিলাম ভাই যে আজ আমাদের ছাড়বেন না জানতাম আপনি যে মাফ 
করে দিবেন ভাবতেই পাড়ি নি আকাশ ভাইয়ের মার খেয়ে ২ মাস হাসপাতালে ছিলাম এবার তো আরও বেশি মারত।
আপু আমাদের ভুল হয়ে গেছে আপনার এই ক্ষমার কথা আমরা কোনদিন ভুলব না আর কখনো কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাব না।
আশেপাশের সবাই হাত তালি দিতে থাকল,
নাবিল এসে আকাশের কাঁধে হাত রেখে বলল এমন মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের বিষয় তুই অনেক লাকি।
মেঘলাঃ যাও তোমরা…. বলে নাবিল এর কাছে এসে বলল লাকি উনি নন আমি। প্রমিকাকে খুশি করতে এত ব্যবস্থা কটা ছেলে করতে পারে বলেন? কিন্তু আমি চাইনা আমার জন্য উনি কারো সাথে ঝামেলা করুক আর বিপদে পরুক। ভালবাসার উপড়ে কোন পাওয়ার নেই আমি আমার ভালবাসা দিয়ে উনাকে সবাইকে ভালবাসতে শিখাব। উনি আর কখনো কাউকে মারবে না।
আকাশঃ পাঁকা বুড়ি একটা….থাক আপনার আর পাকামি করতে হবে না  চলুন এবার।
মেঘলাঃ আচ্ছা চলুন….
নাবিলঃ আকাশ থাকলাম তাহলে যা তোরা…. কোন অসুবিধে হলে ফোন দিস।
মেঘলাঃ আপনিও চলুন না….
নাবিল আকাশ ২ জনেই হেসে উঠল…. 
নাবিলঃ বোকা মেয়ে যাও তো।
আকাশ মেঘলাকে নিয়ে চলে গেল।
মেঘলাঃ কোথায় যাচ্ছি আমরা?
আকাশ চল তো….
কিছুদুর যাওয়ার পর আকাশ মেঘলার চোখ বেঁধে দিল।
মেঘলাঃ চোখ বাঁধছেন কেন?
আকাশঃ তোকে বেঁচে দিব তাই। চুপচাপ চল।
যখন চোখ খুলল তখন সেখানে কিছুই দেখা যাচ্ছে না চারদিক অন্ধকার। 
মেঘলাঃ আকাশ এটা কোথায়…. আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। 
আকাশের কোন সাড়াশব্দ নেই।
মেঘলাঃ আকাশ…. আকাশ…..আপনি কোথায়?
উত্তর না পেয়ে মেঘলা হাতরে হাতরে আকাশকে খোঁজল কিন্তু আকাশের পাত্তা নেই
মেঘলা বোঝতে পাড়ল আকাশের উপস্থিতি এখানে নেই।
ভয়ে মেঘলার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে গেছে আকাশ নেই। এখান থেকে বের হওয়ার সব চেস্টা করে মেঘলা ব্যার্থ হল এবার মেঘলার কান্না পাচ্ছে…..
মেঘলাঃ আকাশ আপনি কোথায় আমার এখানে থাকতে কস্ট হচ্ছে, ভয় করছে আমাকে নিয়ে যান প্লিজ। আপনি আমার সাথে এটা কি করতে পাড়লেন? কি এমন অন্যায় করেছি যার শাস্তি এভাবে দিচ্ছেন।
Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।