লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ১৫

লাভার নাকি ভিলেন - সিজন ২

আমার কিছু দুরত্বেই আকাশের নিথর দেহ টা পড়ে আছে আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না মাথা যেন ভারি হয়ে গেছে হাত পা জমে গেছে অনেক কস্টে নিজেকে কন্ট্রল করে অশ্রুমাখা চোখে আকাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমি।
চোখে শুধু আকাশের হাসিমাখা মুখটাই ভেসে উঠছে জীবনে যতবার বিপদে পড়েছি সবার আগে আকাশ এসে ঢাল হয়ে সামনে দাঁড়াত সেই আকাশ আর নেই ভাবতেই বুকের পাঁজর গুলি ভেংগে আসছে।
আকাশের কথা মাথায় আসতেই মেঘলার কথা মনে পড়ে গেল আর সাথে সাথেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল।
কি জবাব দিব আমি মেঘলাকে? ওকি পারবে এটা সহ্য করতে।

হাজার টা চিন্তা করতে করতে একটু একটু করে এগিয়ে গেলাম আকাশের দিকে এক বুক বিষন্নতা নিয়ে নিচে হাঁটু ঘেরে বসে পড়লাম আকাশকে সোজা করার জন্য কাঁধে হাত রাখলাম ঠিক তখনি পিছন থেকে কেউ বলে উঠল নাবিল….

কন্ঠ টা শুনা মাত্র মনে হল যেন আমি হাওয়ায় ভাসছি জীবনে কখনো এত খুশি হয়েছি বলে মনে হয় না। এই একটা ডাকের মধ্যে যে এত প্রশান্তি ছিল আগে কখনো অনুভব করি নি।

পিছন ঘুরে সিংহের সমান শক্তি অনুভব করলাম দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।
বুকের সাথে বুক মিশানোর সাথে সাথে এক পরম প্রশান্তি অনুভব করলাম।
হ্যা এটা আর কেও না আকাশ, আমার আকাশ এই মুহুর্তে বুঝতে পারছি আমি ওকে কতটা ভালবাসি।
প্রেমিক প্রেমিকার ভালবাসা এই ভালবাসার কাছে নেহাৎই তুচ্ছ।

নাবিল আকাশকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল।এতক্ষন যাকে দেখছিল তারমানে সেটা আকাশ নয় ভেবে নাবিল খুশি হল।

কিন্তু মুহুর্তেই সব খুশি শেষ হয়ে গেল আকাশের কথা শুনে নাবিল যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।

আকাশঃ এখন কেঁদে কি হবে যা করার তো করে ফেলেছিস কেন খুন করলি?

নাবিলঃ কি বলছিস এসব..?? আমি কেন খুন করব?এটা কে আমি তো চিনিও না।

আকাশঃ ন্যাকামি বন্ধ কর লাশ তোর সামনে আমি নিজের চোখে যা দেখছি সেটা অবিশ্বাস করব কি করে।
অফিসার এরেস্ট করুন নাবিল কে।

নাবিল অবাক হল কারন আকাশের সাথে সত্যি সত্যিই পুলিশ এসেছে।

নাবিলঃআরে আকাশ তোর কোথাও ভুল হচ্ছে আমি খুন করি নি।

অফিসারঃ মিথ্যা লাভ বলে নেই স্যার যদিও আপনি ভিয়াইপি কিন্তু আকাশ স্যার অনেক আগেই আপনার নামে কমপ্লিন করেছিলেন আমরা বুঝতে পারিনি আমরা পৌছার আগেই আপনি এত বড় কিছু করে ফেলবেন।

নাবিলঃ কিসব আবল তাবল বলছেন আকাশ কমপ্লিন করেছে তাও আমার নামে?এটাও সম্ভব নাকি জোকস অফ দ্যা ডে…

অফিসারঃ আমরা জোকস বলার জন্য এত দুরে ছুটে আসিনি স্যার প্রায় আধা ঘন্টা আগেই আপনার নামে লিখিত কমপ্লিন করেছেন বলেছেন আপনি পার্টির একজনকে খুনের হুমকি দিয়েছেন। আর এখানে এসে তার লাশ পেলাম।

নাবিলঃ আকাশ কি বলছে ওরা আমি তো…

আকাশঃ এবার নিশ্চয়ই বলবি তুই কিছুই জানিস না আমি তোকে ফোন করে ডেকে এনিছি

নাবিলঃ আকাশ….!!!

আকাশঃ অফিসার ওকে নিয়ে যান…

নাবিলঃ আকাশ তুই বললে তো আমি হাসতে হাসতে মরে যেতেও পারি কিন্তু তুই আজ এটা করিস না।
পৃথিবী থেকে বিশ্বাস শব্দটাকে এভাবে মুছে দিস না।বন্ধুত্বের বন্ধন টাকে এভাবে আলগা করে দিস না।
আজ তুই বেইমানি করলে কোনদিন কেউ আর তার নিজের আত্মাকেও বিশ্বাস করতে পারবে না।তুই এটা করিস না আকাশ আমি এটা মানতে পারব নারে তার চেয়ে তুই আমাকে মেরে ফেল।

আকাশঃ অফিসার আপনাদের কাজ না থাকতে পারে আমার আছে নিয়ে যাবেন কি?

নাবিল বাকরুদ্ধ হয়ে গেল… তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

অফিসার এসে নাবিলের হাতে হাত কড়া পড়িয়ে দিল।

নাবিল এখন আর বাঁধা দিচ্ছে না।অফিসার এসে নাবিলকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে তখনি পিছন থেকে কেউ দৌড়ে এসে নাবিল কে জড়িয়ে ধরল।

নাবিল পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল।

ভাইয়া খুন করে নি, বিশ্বাস করুন ভাইয়া খুন করতে পারেনা আপনারা ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?আকাশ তুমি কিছু বলছো না কেন? ওরা ভাইয়াকে নিয়ে যাচ্ছে কেন?হাঁপাতে হাঁপাতে কথাগুলি বলছে মেঘলা।

আকাশ ধমক দিয়ে বলল এতরাতে তুই এখানে কেন মেঘলা?খুব বার বেড়েছিস তাই না একটা থাপ্পড় মারব।

নাবিল চিৎকার করে বলল আকাশ…. এই দুঃসাহস টা দেখাস না।

নাবিলঃ মেঘলা শান্ত হ..কিছুই হয় নি সব ঠিক আছে।শান্ত হয়ে বল তুই এখানে কি করে এলি?

মেঘলাঃ তুই তখন এভাবে চলে আসলি তখনি বুঝেছিলাম কিছু হয়েছে তাই তোর পিছু পিছু এসেছি।কিন্তু এখানে এসব কি হচ্ছে? আমি বিশ্বাস করি না তুই খুন করতে পারিস না।

নাবিলঃ আকাশ যখন বলেছে আমি করেছি তাহলে আমিই করেছি এর উপড়ে আমার আর কিছু বলার নেই।

মেঘলা অবাক হয়ে বলল আকাশ তুমি এসব বলেছো?

আকাশঃ মিথ্যা তো বলিনি…আমার কাছে সব প্রমান আছে সময়মত দিয়ে দিব

পুলিশ নাবিলকে নিয়ে যাচ্ছে…

নাবিলঃ অফিসার আমাকে ১ মিনিট সময় দিন প্লিজ। আমার বোনটা বড্ড সরল ও হয়ত এটা মানতে পারবে না। ওর সাথে কথা বলার একটু সুযোগ দিন।

নাবিলঃ মেঘলা এসব কোনো ব্যাপার না আমি এর আগেও অনেকবার জেলে গিয়েছি তুই চিন্তা করিস না আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব।

আকাশঃ হা হা হা সেগুঁড়ে বালি তুই আর কখনো ফিরবি না।কথায় আছে শত্রুর শেষ রাখতে নেই আমিও রাখব তোর কফিনের শেষ পেরেক টা আমিই পুঁতব নাবিল।

মেঘলাঃ কেন এমন করছো আমি কি কোন ভুল করেছি? আমার শাস্তি ভাইয়াকে দিও না প্লিজ আকাশ তোমার ২ টি পায়ে পরছি ভাইয়াকে নিয়ে যেতে দিও না। ওখানে ভাইয়া থাকতে পারবে না।

মেঘলা আকাশের পায়ের কাছে বসে কাঁদছে।

নাবিল নিশব্দে চোখের জল ফেলে নিজেকে কন্ট্রোল করে হাতের মুঠো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে বলল, উঠ মেঘলা বাসায় যা রাত হয়ে গিয়েছে জায়গাটা ভাল না নিজের আর বাবা মার দিকে খেয়াল রাখিস।

নাবিলকে পুলিশে নিয়ে গেল।
আকাশো গাড়ি নিয়ে চলে গেল

আকাশ আজ নাবিলের কথা তো ভাবলই না সাথে মেঘলার কথাও না। শহর থেকে এত দুর থেকে অন্ধকারে মেঘলা কিভাবে বাসায় ফিরবে সেটাও ভাবল মেঘলাকে একা রেখে চলে গেল আকাশ।

মেঘলার মনে হচ্ছে সে যেন এসব স্বপ্ন দেখছে আকাশের এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না মেঘলা।





থানায় নিয়ে যাওয়ার পর নাবিলকে খুনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কিন্তু নাবিল তো কিছুই জানে না তাই উত্তর দিতে পারছে না।

অফিসারঃ দেখুন সব সত্যি ভালই ভালই বলে দিন তানাহলে আপনাকে রিমান্ডে নিতে বাধ্য হব।সেখানে কি ঘটবে আপনি ভালভাবেই যানেন।

নাবিলঃ বিশ্বাস করুন আমি কিছু যানি না।

নাবিলকে মারার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে তখনি একটা কাগজ হাতে আকাশ থানায় এল।

আকাশকে দেখে নাবিলের মুখে হাসি ফুটে উঠল।
খুশিতে তার চোখ চিক চিক করছে।

নাবিলঃ আমি জানতাম আকাশ আসবে।নাবিলের বিপদে আকাশ আসবে না এটা অসম্ভব। হয়ত কোনো কারনে মাথা গরম হয়েছিল তাই আমাকে ভয় দেখিয়েছে এখন আবার নিজেই জামিন নিয়ে ছুটে এসেছে পাগল একটা… (মনে মনে)

নাবিলঃ দোস্ত তুই এসেছিস? আমি জানতাম আমাকে থানায় রেখে তুই ভাল থাকতে পারবি না। ওটা জামিনের কাগজ তাই না?

আকাশঃ না তো…. আর একটা খুনিকে আমি ছাড়াব কোন দুঃখে? এটা উড্রো পেপার।
নে সাইন করে দে। আমার পাওয়ার আমার ফিরত চাই। কথাটা শুনে নাবিলের মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। নাবিল রাগে দুঃখে সাইন করে দিল।

আকাশঃ ধন্যবাদ…

আকাশ যেতে যেতে অফিসারকে বলল এভাবে জিজ্ঞাস করলে কোন অপরাধী অপরাধ স্বিকার করবে নাকি…পিঠে কয়েক ঘাঁ পড়লেই সব বলবে….

নাবিলঃ আকাশের কথাগুলি শুনে মনে হল যেন কেউ ধারাল ছুড়ি দিয়ে হৃদপিণ্ডে আঘাত করল।বুকের বাম পাশে অসম্ভব যন্ত্রনা করছে বুক পাঁজর গুলি ভেংগে আসচ্ছে। আজ বুঝতে পারছি মেঘলা কেন কাঁদত কাছের মানুষ কষ্ট দিলে হয়ত এমনেই লাগে।জীবনে প্রেম করি নি ভাল শুধু একজনকেই বেসেছিলাম সেটা হল আকাশকে তাই হয়ত এত কষ্ট হচ্ছে।

আকাশ আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে
আর পুলিশ কর্মকতা আমার গায়ে একের পর এক আঘাত করছে। অদ্ভুত এবার তবুও আকাশের একটুও খারাপ লাগছে না।সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছে।

আচ্ছা ক্ষমতা কি মানুষকে এতটাই বদলে দিতে পারে যে আকাশ আমার গায়ে একটা আঁচড় পড়তে দিত না আজ সেই আকাশেই আমাকে মারতে বলছে….

যানেন,আমি রোবট নই পুলিশের মারে আমার শরিরেও ব্যাথা লাগছে কিন্তু এই ব্যাথা যে মনের ব্যাথার তুলনায় নগন্য তাই ঠিক মারের আঘাত অনুভুত হচ্ছে না।

আকাশ তুই আমাকে এভাবে আঘাত না করে একেবারে মেরে ফেলতি তবুও এ শাস্তিটা না দিতি…এ কোন যন্ত্রনা দিলি আমায়।আমি যে তোকে নিজেত আত্মা মনে করতাম তাই তোর এই বেইমানি মেনে নিতে পারছি না।
তুই কি আমার মনের কথা শুনতে পাচ্ছিস না? তোর কি একটুও খারাপ লাগছে না? আমার খুব কস্ট হচ্ছেরে আকাশ।
আমি কি না করেছি তোর জন্য?সবসময় আগে তোর মুখে হাসি ফুটিয়েছি তারপর নিজে হেসেছি কখনো তোর সাথে প্রতিযোগিতায় নামি নি তোকে এগিয়ে দিয়ে নিজেকে পিছিয়ে নিয়েছি। তোর সকল বিপদে ঢাল হয়ে সামনে দাঁড়িয়েছি তুই আজ সব ভুলে গেলি? আমার এতদিনের ভালবাসার প্রতিদান এভাবে দিলি…??? কেন করলি এমন? কেন বেঁচে থাকতেও জিন্দা লাশ করে দিলি আমায়…??

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।