এটি একটি নারীর জীবনের গল্প, এই নারী তার ভালবাসার পাত্রকে হারিয়ে কান্না আর বেদনাকে বুকে বেঁধে জীবনের পথে চলার চেষ্টা করেছে। এই সমাজের কঠিন নিয়মাবলির বন্ধনে এই নারী তার ভালোবাসা হারিয়েছে। এই সমাজ দুটি অজানা অচেনা মানুষকে একসাথে জীবন অতবাহিত করার প্রশ্রয় দেয় কিন্তু যারা একে ওপরকে প্রান দিয়ে ভালবাসে তাদের ভালবাসার মুল্য দেয় না। সমাজ বড় কঠিন, বড় নিষ্ঠুর। এই নারীর জীবনে অনেকে আসে, অনেকে তাকে স্বপ্ন দেখায়, অনেকে তাকে ভালোবাসা দেখায়, কিন্তু সত্যি কি সে তার ভালোবাসা খুঁজে পায়?
আশা করি আপনাদের চোখের জল ফুরিয়ে যাবে পড়তে গেলে! তাও যদি পড়তে চান, আসুন তার সাথে, একবারের জন্য।
যারা প্রথম বার এই গল্প পরছেন, তাদের জানিয়ে রাখি যে এই গল্প পড়ার আগে ভালবাসার রাজপ্রাসাদ পড়ে নিন। গল্পের লেখক পিনুরাম
প্রথম অধ্যায়ঃ পরিণত পরী মিতা
বন্দিনী রাজকন্যে
তিস্তা আমাকে জিজ্ঞেস করল, “এই মিতা, এই পুজোতে কি কিনছো?”
আমি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেই, “কিছু না রে। দেখি ছোটমা আমাকে যা কিনে দেবে তাই পরব আর কি।”
“তুমি না একদম কি যে বলি।”
গালে আলতো চাঁটি মেরে হেসে উত্তর দিল তিস্তা।
নাক কুঁচকে হেসে জিজ্ঞেস করি, “তোর কি খবর? তুই কি কিনবি এই পুজোতে?”
কাছে এসে কানেকানে বলে, “দাড়াও, আমার নতুন বয়ফ্রেন্ড যদি আমাকে কিছু পড়তে দেয় তবে না আমি কিছু পরে থাকতে পারব।”
আমি ওর দিকে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করি, “বাঃবা… দুষ্টু মেয়ে ত তুই, তা এই নতুন ছাগল টি কে?”
ও আমার দিকে চোখ টিপে উত্তর দিল, “কেন, তোমার দরকার নাকি? আমি চেখে দেখি তারপরে তোমাকে না হয় দিয়ে দেব।”
আমি ওর গালে আলতো চটি মেরে বলি, “জাঃ আমি কারুর এঁটো খাই না।”
তিস্তা আমার দিকে চোখ কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন, তুমি নতুন কাউকে পাকড়াও করেছ নাকি?”
আমি মাথা নাড়িয়ে হেসে উত্তর দিলাম, “না রে বাবা, আমার সেই ক্ষমতা নেই কাউকে পাকড়াও করার। ছোটমা বাবু জানতে পারলে আমাকে আস্ত রাখবে না তাহলে।”
দিনটা ছিল, শুক্রবার, আমি দাঁড়িয়েছিলাম কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে, এই প্রেসিডেন্সি থেকে বেড়িয়ে চৌমাথায় দাঁড়িয়ে বাড়ি ফেরার জন্য বাসের অপেক্ষা করছিলাম। কোলে ধরেছিলাম পাটের ব্যাগ। দেরি দেখে বারবার হাতের ঘড়ির দিকে চোখ যাচ্ছিল। বাসের দেরি, ওদিকে বাবুর কঠিন আদেশ যে সন্ধ্যের আগে যেন বাড়ি ঢোকা হয়।
ছোটমা আমার নিজের মা নয়, আমার দূর সম্পর্কের দিদি হন, আমার মায়ের বয়সি। আমি দিদিকে ছোটমা ডাকতাম কেননা আমি যখন ছোটো ছিলাম তখন আমার বাবা মারা যান আর ছোটমা আমাকে তাঁর ভালোবাসা আর স্নেহ দিয়ে বড় করেছিলেন। রাতের পর রাত যখন আমার চোখে ঘুম আসতো না, ছোটমা আমাকে কোলে করে নিয়ে গান গেয়ে ঘুম পারাত আর আমি ছোটমায়ের গান শুনে তাঁর কোলে ঘুমিয়ে পড়তাম। আমি দাদাবাবু কে বাবু বলে ডাকতাম।
বাবার স্নেহ বা আদর কি, সেটা আমি কোনদিন জানতে পারিনি, তাই আমি বাবুর ভালবাসায় পিতৃ স্নেহ খুঁজে এই খরা হৃদয়কে সিঞ্চন করতাম। আমার ছোটো দাদা, সুব্রতদার বিয়ের পরে ছোটমা আমাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসে আর সেই জন্যেই আমি সেদিন কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছিলাম।
আমি প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হই, সেপ্টেম্বর 2001 এ, বি এস সি রেসাল্টের পরেই। ছোটমা আর বাবু অনেক কে ধরে আমার এডমিসান করিয়ে দিয়েছিলেন কলেজে। আমার মেজর ছিল নিউক্লিয়ার ফিসিক্স।
গত পঁচিশ বছরের মধ্যে সেই দুর্গ পুজো আমার সব থেকে বেদনাময় কেটেছিল। বুকের পাঁজর ভেঙ্গে রক্তাক্ত হয়ে গেছিল সেইবার। সামনে পুজো, কোলকাতা সাজ সাজ রব, আকাশে বাতাসে কেমন যেন পুজো পুজো গন্ধ। লোকেরা সব নতুন জামা কাপর পরে কেনা কাঁটা করতে বেড়িয়েছে। বর্ষার শেষ আকাশ ঘন নীল, তাঁর মাঝে মাঝে তুলোর মতন পোজা পোজা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায়। বুক ভরে শ্বাস নিলে যেন ধুপ ধুনোর গন্ধ পাওয়া যায় সেই আকাশে আর বাতাসে। কান পেতে শুনলে যেন আগমনির সুর ভেসে আসে। কিন্তু আমার কানে সেই সুর বাজে না।
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি বাসের জন্য আর তিস্তা ওর সেলফোনে কারুর সাথে কথা বলতে থাকে। আমার সেলফোন ছিলনা। বাবু কিনে দেয়নি আমাকে। বেশ খানিক পরে বাস এসে গেলে আমি বাসে চেপে বাড়ির উদেস্যে রওনা দেই।
বাড়ির চাবি বাবুর কাছেও থাকে আর আমার কাছে একটা থাকে। ছোটমা দেরি করে বাড়ি ফেরে তাই ছোটমায়ের কাছে বাড়ির চাবি থাকেনা। আমি চাবি খুলে বাড়ি ঢুকে দেখি বাবু বাড়িতেই ছিলেন, নিজের ঘরে বসে পেপার পড়ছিলেন। আমার বাবু, গত মাসে এয়ারপরট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া, দমদম এয়ারপোর্ট এ সিনিয়ার ম্যানেজার পদ থেকে অবসর পেয়েছেন। বাবু এমনিতে খুব কড়া ধরনের মানুষ তাই বাড়িতেও সেই রকম থাকতেন, সব কিছু যেন নিয়ম মাফিক চাই বাবুর।
আমি ঘরে ঢুকতেই বাবু আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “সোনা মা, কলেজ কেমন গেল?”
আমি নিচু স্বরে উত্তর দেই, “ভালো গেছে বাবু। হাওড়া থেকে যত বাস আসে সব কটাতেই কত ভিড় তাই বাস পাইনি আর একটু দেরি হয়ে গেছে।”
বাবু আমাকে বলল, “ঠিক আছে, সোনা মা এক কাপ চা হবে কি?”
আমি উত্তর দিলাম, “ঠিক আছে করে দিচ্ছি।”
কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে রোজকার প্রশ্ন বাবুর যে আমার কলেজ কেমন গেল। বাবুর মেজাজ ভালো থাকলে আমাকে সোনা মা বলে ডাকে আর না হলে পরী।
আমি যথারীতি জামাকাপড় বদলে রান্না ঘরে ঢুকে যাই চা বানানোর জন্য। তাক থেকে সসপেন নিয়ে উনুনে চাপিয়ে জল ঢেলে দিলাম। চোখের সামনে সসপেনে জল ফুটতে শুরু করে আর আমি আমার খেয়ালে ডুবে যাই। জলের বাস্প আমার চোখে মুখে লেগে আমার চোখে জল নিয়ে আসে। একটি ছোটো ভুলের মাশুল গুনছি আমরা দুজনে। বলেছিল আমাকে যে জীবন ঠিক ৬৪ খানা দাবার ছকের মতন, ৩২ টা কালো আর ৩২ টা সাদা।
আমার হৃদয় আমার ভালোবাসা আমার কাছ থেকে চলে যাবার পর, আমি এক প্রাণহীন শ্বেত পাথরের মূর্তি হয়ে গেছিলাম। কি তার পাপ? সে আমাকে ভালবেসেছিল সেটাই তার পাপ? নিজের বাড়ি থেকে তাকে চলে যেতে হয়। কেন সে কি ভালবেসে ভুল করেছিল? আমাকে খুব ভালবাসত যে, আমার প্রাণহীন দেহে প্রান দিয়েছিল, ম্লান ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলেছিল। আমাকে নিয়ে গেছিল সুদুর পাহাড় চুরায়, সেই ছোটবেলার ছেলে খেলার মতন আমাকে নিয়ে খেলত।
শীতের রাতে যখন আমার শীত লাগত, আমি ওর বাহু পাসে বদ্ধ হয়ে নিজেকে ভুলে যেতাম, ওর বাহুপাস যেন আমার কাছে সব থেকে নির্বিঘ্ন স্থান ছিল, যেখানে আমি নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাতে পারতাম। কিন্তু সে ত আর নেই আমার কাছে, চলে যেতে হয়েছে তাকে। আমি ওর চেয়ে দু বছরের বড় তাই আমাদের ভালোবাসা পাপ, না ও আমার ছোটমায়ের ছেলে বলে আমাদের ভালোবাসা পাপ। কে এই প্রশ্নের উত্তর দেবে, কাকে বুঝাই আমি ভালোবাসা পাপ নয়।
বুক চিরে, পায়ে ধরে ছোটমা কে বুঝাতে চেষ্টা করেছিল যে ভালোবাসা পাপ নয়, কিন্তু সেই কথা ছোটমায়ের কানে যায় নি। বুঝাতে চেষ্টা করেছিল যে বয়সের ব্যাবধান কিছুনা আর আমাদের মাঝে রক্তের কোন সম্পর্ক নেই যে আমাদের সম্পর্ক কোন পাপের পরিনত হতে পারে। কিন্তু ছোটমা সমাজের অজুহাত দেখিয়ে আমাদের সম্পর্ক মেনে নিলনা। ছোটমা আর বাবু ওর চলে যাওয়ার পর থেকে আমার ওপরে খুব কড়া নজর রাখত। তিনতলার সেই ঘরে চিরকালের জন্য তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আমাকে ছাদে যেতে দেওয়া হতনা। বাড়ির দেওয়াল থেকে, মেঝে থেকে, পর্দা থেকে জানালা থেকে, ওর চিনহ মুছে ফেলা হয়। ওর জামাকাপড় এক নয় গরিব মানুষকে না হয় বাসন অয়ালাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নতুন কেউ বাড়ি এলে বাড়ি দেখে জানার অবকাশ ছিল না যে ছোটমায়ের একটা ছেলে আছে। বাড়ি থেকে এমন ভাবে ওর চিনহ মুছে ফেলা হয়েছিল। নতুন লোকে সবাই জানত যে আমি ছোটমায়ের একমাত্র মেয়ে।
ওর দেওয়া সেই ঘিয়ে রঙের শাল খানি ছোটমা নিয়ে নেয় আমার কাছ থেকে। ওর চিহ্ণ স্বরুপ ওর ভালোবাসা আমার বুকে আঁকা আর থেকে যায় ওর সেই ধুসর রঙের ডায়রি, আমার বাইবেল, আমার কোরান আমার গীতা। কথায় বলে, প্রদীপের তলায় অন্ধকার তাই আমি সেই ডায়রি টাকে মলাট দিয়ে তার ওপরে “অপ্টিক্স নোটবুক” লিখে আমার পড়ার বইয়ের তাকে রেখে দিয়েছিলাম। সবার চোখ যেত কিন্তু নজরে আসতো না কারুর। অপ্টিক্স ওর সবথেকে প্রিয় সাব্জেক্ট ছিল।
ও চলে যাওয়ার পরে ওর ব্যাপারে বাড়িতে কেউ কথা পর্যন্ত বলত না। রাতে আমাকে দরজা খুলে শুতে হত। ছোটমা হয়ত ভয় পেত যে আমি দুঃখে হয়ত আত্মহত্যা করে ফেলি যদি। কিন্তু আমি ছিলাম গ্রামের এক সাদাসিধে মেয়ে, আত্মহত্যা করার মতন সাহস আমার বুকে ছিল না। আমি একটা পাথরের মূর্তির মতন জীবন বেছে নেই। নিজের মনে কাঁদতে পারতাম না, সবসময়ে যেন এক জোড়া চোখ আমাকে লক্ষ্য করে থাকত।
শুধু মাত্র বাথরুমে গেলে আমি আমার মতন সময় পেতাম, একটু কেঁদে হালকা হয়ে নিতাম। কত বার চেষ্টা করেছিলাম আয়নায় মাথা পিটিয়ে আয়না ভাঙ্গার, কিন্তু হায় অদৃষ্ট, আয়নাও আমার সাথে ছিল না। আমি প্রানপন চাইতাম যে আয়না ভেঙ্গে যাক আর কাঁচের টুকরো মাথায় ঢুকে আমার যেন মাথা ফেটে যায়, কিন্তু না পোরা কপাল আমার, আয়না আমাকে দেখে হাসত।
বাবু আমাকে ডাক দেয়, “সোনা মা, চা কি হয়ে গেছে? আমাকে আবার বাজার যেতে হবে।”
আমি, “না বাবু এই এক মিনিটে হয়ে যাবে।”
আমার চোখের এক ফোঁটা জল হয়ত সেদিন ওই চায়ের জলে মিশে গেছিল। হাতের উলটো পিঠে চোখ মুখ মুছে চায়ের কাপ হাতে করে বাবুর ঘরে যাই। আমি চায়ের কাপ বাবুর সামনে রাখি, বাবু পেপার পড়তে মগ্ন।
আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন, “কাল তোমার ছোটমা তোমাকে নিয়ে শ্যামবাজার যাবে পুজোর বাজার করতে। এবার পুজোয় কি কিনবে তুমি?”
আমি কিছু না উত্তর দিয়ে বাবুর সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকি। বাবু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেন যে আমার চোখের পাতা ভিজে। মুখ দেখে বাবু বুঝে গেলেন আমার বুকের মাঝের বেদনা। দাঁতে দাঁত পিষে উঠে চলে গেলেন।
গম্ভির স্বরে আমাকে বললেন, “তোমার ছোটমা আসার পরেই আমি বাজার যাবো, সেটাই ভালো।”
বাবু উঠে বসার ঘরে চলে গেলেন আর টিভি চালিয়ে বসে পড়লেন। যাবার আগে আমার দিকে পেপার দিয়ে বলে গেলেন যে, “তোমার কিছু যদি কাজ করার না থাকে তাহলে পেপার পড়ো, তাতে তোমার ইংরাজি ভালো হবে।”
ঠিক সেই সময়ে কলিং বেল বেজে ওঠে। নিচে নেমে দরজা খুলে দেখি ছোটমা এসে গেছেন। ছোটমা আমাকে দেখি হেসে আমার চিবুকে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “কিরে, তোর কলেজ কেমন গেল?”
আমি মৃদু হেসে মাথা নেড়ে জানালাম যে কলেজ ঠিক ঠাক গেছে।
সিঁড়ি দিয়ে চড়ার সময়ে ছোটমা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “তোর বাবু কি করছে রে?”
আমি উত্তর দিলাম, “বাবু বসার ঘরে বসে টিভি দেখছে।”
ছোটমা একটু বিরক্ত হয়ে বললেন, “বুড়ো টার আর কোন কাজ নেই। আমি বাজারে যেতে বলেছিলাম, ঘরে কোন সবজি পাতি নেই, ফ্রিজ খালি। আর এখনো বসে টিভি দেখছে?”
উত্তর দেওয়ার কিছু ছিল না। আমি ওপরে উঠে নিজের ঘরে ঢুকে বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরি। মনের মধ্যে আবার সেই পুরানো বিরহের কান্না বেজে ওঠে, দু চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে সেই দুঃখে। বালিসে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠি আমি। আঙুল কামড়ে ধরি যাতে আমার কান্নার আওয়াজ বাড়ির কেউ শুনতে না পায়।
ছোটমা কিছু পরে আমার ঘরে ঢুকে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “কিরে এই সময়ে শুয়ে আছিস কেন? সন্ধ্যে বেলায় শুয়ে থাকতে নেই উঠে পর।”
বুকের মাঝে চিৎকার করে উঠি আমি, “আমাকে কি একটুকু সময়ের জন্য একলা ছাড়া যায় না, ছোটমা।” না আমার সেই চিৎকার গলা থেকে বের হয় না, বুকের কান্না বুকের কোনে লুকিয়ে যায়। কোনোরকমে উঠে পরে বাথরুমে গিয়ে চোখ মুখ ধুয়ে আসি আমি।
রাতের বেলা খাওয়ার সময়ে ছোটমা জিজ্ঞেস করে আমি কি কিনতে চাই। আমার মন একদম ভালো ছিল না। কিসের জন্য আনন্দ, কিসের জন্য নতুন জামা কিনব আমি? কে আছে আমার কাছে যে আমার রুপ, আমার সৌন্দর্য দেখবে? না, সে ত আমার জীবন থেকে বিতাড়িত।
বাবু আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “পরী, কি হল এত চুপচাপ কেন?”
আমি মাথা নাড়িয়ে জবাব দেই যে, কিছু হয়নি আমার। কিন্তু সত্যি কি কিছুই হয়নি? সত্যি কি আমার হৃদয় উতফুল্ল ছিল সেই উত্তর দেওয়ার জন্য? কেউ কি বুঝতে পেরেছিল আমার বুকের ব্যাথা? কেউ কি শুনতে পেরেছিল আমার পাঁজর ভেঙ্গে শত টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেছে?
রাতের খাবার পরে বাথরুমে গিয়ে আবার খানিক কেঁদে নিলাম আমি। কান্না যেন আর থামেনা আমার চোখের জল যেন ফুরিয়ে ও ফুরাতে চায় না। গালের সেই গোলাপি লালিমা আর নেই, চোখের কোনে কালি। আয়নায় দেখতে চেষ্টা করলাম, মুখ খানি কেমন যেন ফ্যকাসে দেখায়। জন্ডিস হয়নি ত? না আমার জন্ডিস হয় নি, আমার জীবনের সব রঙ যে উবে গেছে। গালের লালিমা, চোখের কাজল, ঠোঁটের মিষ্টতা, সবকিছু শেষ।
রাতে শোবার আগে প্রতিদিনের মতন ছোটমায়ের সাবধান বানী, “দরজা বন্ধ করবি না।”
আমি আমার বিশাল বিছানায় একা শুয়ে থাকলাম। চোখে বন্ধ করে পরে থাকলেই কি আর ঘুম আসে, না, অনেক ক্ষণ এই পোড়া চোখে ঘুম আসে না। চলে যাবার আগেরদিন আমার বুকের মাঝে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। সেই আগুন আজো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। নরম বালিস বুকে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে কেঁদে ফেলি আমি। রাতের অন্ধকার আমার কান্না দেখে যেন হেসে ওঠে হি হি করে।
জানালার পাশের গাছের ডাল গুলি যেন নড়ে উঠে আমাকে ভুতের মতন কাছে ডাকে। চলে যাবার পর থেকে প্রতি রাতে আমার খোলে চোখের সামনে ভেসে উঠত ওর মুখ। আমি জেগে কাটিয়ে দিতাম রাত, ওর স্বপ্ন দেখে। ঘুম আসতো না তাও, একসময়ে আকাশের তারা গুনতাম, দশ হাজার এক, দশ হাজার দুই…
পরদিন আমি আর ছোটমা পুজোর বাজার করতে শ্যামবাজার গেছিলাম। ছোটমা আমার কেনা কাটার ব্যাপার আমার ওপরে ছেড়ে দিয়েছিলেন। ভঙ্গুর হৃদয়ের ওপরে পর্দা দিয়ে হাসি হাসি মুখ নিয়ে ছোটমায়ের পাসে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করি। দুটি সুন্দর সালোয়ার কেনা হল, একটা হলুদ আর লাল রঙের আর একটা তুঁতে রঙের। ছোটমা নিজের জন্য একটা দামী ঢাকাই জামদানি শাড়ি কিনলেন। ছোটমা আমাকেও শাড়ি কেনার জন্য বললেন কিন্তু আমার কোন শাড়ি পছন্দ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ছোটমা আমার জন্য একটা চায়না সিল্কের কাথা স্টিচ শাড়ি কিনে দিলেন। শ্যামবাজারে জামা কাপড় কেনার পরে ছোটমা আমাকে নিয়ে বউবাজার গেলেন।
আদর করে আমাকে বললেন, “আমার পরীর বিয়ের জন্য কিছু গয়না কিনতে ত হবে।”
আমি মৃদু হেসে দিলাম।
আমার ঠোঁটে ম্লান হাসি দেখে ছোটমা আমাকে বললেন, “আমার লক্ষ্মী মেয়ে। এই হাসি যেন সর্বদা ঠোঁটে লেগে থাকে। তুই বড় হয়েছিস, সব কিছু বুঝতে শিখেছিস।”
আমি ছোটমাকে বললাম, “ছোটমা, আজ বাড়ি চল। আজ আর গয়না কিনতে হবে না।”
ছোটমা, “ঠিক আছে, আজ না হয় বাড়ি ফিরে গেলাম। এই নিয়ে কিন্তু দ্বিতীয় বার খালি হাতে ফিরছি। পরের বার কিন্তু গয়না কিনেই ফিরব।”
হ্যাঁ, এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আমারা বউবাজার থেকে খালি হাতে ফিরছিলাম। আগে একবার আমার গয়না কেনার কথা হয়েছিল, সঙ্গে ছিল ও, সেদিন গয়না কেনার বদলে এস্প্লানেড গিয়ে আমার জিন্স আর টি শার্ট কেনা হয়েছিল। সেদিন ছিল খুশির দিন, মনের ভেতরে ছিল এক অধবুত আনন্দ।
কিছুদিন পরে আমি বাবুর কাছে সেলফোনের আব্দার করি। বাবু আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “সেলফোন কেন চাই?”
আমি, “কলেজের সবার কাছে সেলফোন আছে, শুধু আমার কাছে নেই তাই।”
আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বাবু উত্তর দিলেন, “তোমাকে সেলফোন দিলে সারা দিন ত বন্ধু বান্ধবীদের সাথে আড্ডা মারবে।”
আমি আদর করে বাবুর কাছে আব্দার করি, “বাবু, প্লিস প্লিস, আমি কথা দিচ্ছি আমি বেশিক্ষণ সেলফোনে গল্প করব না।”
বাবু হেসে উত্তর দিলেন, “ঠিক আছে। তোমার ছোটমা এলে আমি আর তুমি বাজারে যাবো খানে। দোকানে গিয়ে যেটাতে হাত রাখবে সেটা আমি কিনে দেব।” তারপরে আমাকে মৃদু বকুনি দিয়ে বলে, “মাসে কিন্তু চারশ টাকার রিচারজ হবে তার বেশি নয়।”
আমি আনন্দে নেচে উঠে বাবুর গলা জড়িয়ে ধরে বলি, “আমার সোনা বাবু। এক কাপ চা খাবে নাকি?”
আমার দিকে স্নেহ ভরা হাসি দিয়ে বললেন, “ঘুস দেওয়া হচ্ছে নাকি? তা সোনা মায়ের হাতের চা খেতে পারি, মন্দ নয়।”
বিকেলে ছোটমা স্কুল থেকে ফিরে আসার পরে বাবু ছোটমাকে জানালেন সেলফোনের কথা।
ছোটমা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন চাই সেলফোন?”
বাবু, “উলুপি, পরী আর ছোটো বাচ্চা নয়, কলেজে এমএসসি পড়ছে। ছাব্বিশ বছর বয়স হয়ে গেল পরীর।”
ছোটমা বাবুকে বললেন, “হ্যাঁ, তুমি কি বুঝবে মায়ের ব্যাথা। যার মেয়ে সুন্দরী, শিক্ষিতা আর অবিবাহিতা সেই মায়ের রাতের ঘুম হয় না চিন্তায়।”
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “রোজ দিন আমাকে কল লগ দেখাবি।”
ওই কথা শুনে আমি রেগে যাই আর চিৎকার করে উঠি, “আমি কি একটুকু স্বাধীনতা পর্যন্ত পাবো না?”
বাবু আমার দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে বললেন, “পরী, তোমাকে অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, মনে করে দেখ, সেই স্বাধীনতা পেয়ে তুমি কি করেছিলে।”
আমি ব্যাথিত হয়ে উঠে রেগে চিৎকার করে উঠি, “চাই না আমার সেলফোন।”
ছোটমা আর বাবুর মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে বিছানায় লুটিয়ে পড়েছিলাম সেদিন।
মহালয়ার কিছু দিন আগে, আমি বসার ঘরে বসে টিভি দেখছিলাম, ঠিক সেই সময়ে বাবু কিছু কোর্টের কাগজ নিয়ে ঘরে ঢোকেন। আমি জিজ্ঞেস করাতে আমাকে জানালেন যে ওই কাগজ গুলি আমার লিগাল গারডিয়ানশিপের।
বাবু, “তোমার মা লিগাল গারডিয়ানশিপের কাগজে সই করে দিয়েছে।”
আমি বাবুর দিকে একবার চেয়ে দেখে, কাগজে সই করে দিয়েছিলাম। সেইদিন থেকে আমি কানুন মাফিক এক সম্রাট সম্রাজ্ঞীর বাঁধা রাজকন্যে হয়ে গেছিলাম।
বন্দিনী আমি এক রাজকুমারী। আমার দিনের আলো ম্লান আর রাতের অন্ধকার বেদনায় ভরা। সোনার খাচায় বন্দি আমি রাজার তোতা পাখি। নস্বর পৃথিবীর সব সুখ আমার পায়ের নিচে, ভালো জামা কাপড়, ভালো খাবার। ঠিক সেই সোনার খাচার তোতাপাখির মতন। সকাল সন্ধ্যে সম্রাট আর সম্রাজ্ঞী আমাকে শিশিরের জলে স্নান করায়, আঙ্গুর আর বাদাম খেতে দেয়, কিন্তু আমার পায়ে সেই সোনার বেড়ি।
বন্দিনী আমি এক রাজকন্যে!
তিস্তা একটি নদীর নাম (#01)
আমার কলেজের প্রথম দিন। প্রেসিডেন্সি কলেজের বিশাল গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই বুকটা কেমন যেন কেঁপে উঠল। বাবু আমাকে ছাড়তে গেট পর্যন্ত এসেছিলেন, তারপরে আমি বলেছিলাম যে আমি আর ছোটো মেয়ে নই, বাকি টুকু আমি একা যেতে পারব। করিডোরে ছাত্রদের জিজ্ঞেস করে এমএসসি ফিসিক্সের ক্লাসে ঢুকি। পরনে ছিল সাদা লম্বা স্কার্ট আর ঢিলে সাদা শার্ট। গলায় সবসময়ে একটা স্টোল জড়িয়ে রাখতাম। কাঁধের ওপরে আমার চুল ছোটো একটা হাত খোঁপা করে বাঁধা, ঠিক যেমন কলেজের দিনে সাজতাম সেই রকম আর খোঁপার মধ্যে গোঁজা আমার পেন।
ক্লাসে ঢুকতেই লক্ষ্য করলাম যে কয়েক জোড়া চোখ আমাকে নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত মেপে নিল। ছেলে গুলর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে ক্লাসে ঢুকে পরি আমি। ক্লাসে ঢুকতেই করিডোর থেকে কেউ আওয়াজ দেয়, “গুরু যা কাটপিস একদম মাস্টারপিস মাল।” কান দিলাম না ওদের কথায়। ক্লাসে বেশির ভাগ ছেলে আর কয়েক জন মেয়ে। সেকেন্ড বেঞ্চে একটা উজ্জ্বল শ্যম বর্ণের মেয়ে বসে ছিল আর অন্যদের সাথে বেশ চুটিয়ে গল্প করছিল। আমাকে ঢুকতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে কাছে ডাকে। আমি চুপ করে গিয়ে ওর পাসে বসে পরি।
আমাকে মেয়েটা জিজ্ঞেস করে, “তুমি যেমন ভাবে ক্লাসে ঢুকলে তাতে সন্দেহ নেই যে তুমি কোলকাতার মেয়ে নও। তোমার বাড়ি কোথায়?”
আমি উত্তর দিলাম, “দমদমে।”
মেয়েটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “জাঃ বাবা, তুমি দমদমে থাকো?”
আমি হেসে উত্তর দেই, “হ্যাঁ বাবা, আমি দমদমে থাকি।”
মেয়েটা, “আমি তিস্তা সরকার, লেকটাউনে থাকি আর তোমার নাম?”
আমি, “শুচিস্মিতা মন্ডল।”
তিস্তা, “ঠিক ধরেছিলাম, তোমার হাসিটার মতন তোমার নাম।”
তিস্তার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেছিলাম আমি, একি রে, একটা মেয়ে আমার হাসি দেখে পাগল। “ধ্যাত, মাথা খারাপ নাকি।”
তিস্তা চোখ টিপে বলে, “ফার্স্ট পিরিওড বাঙ্ক করবে? চল কফি হাউস যাই।”
আমি মাথা নাড়াই, “না না, ফার্স্ট পিরিওড বাঙ্ক করব না, কফি হাউস পরে যাওয়া যাবে।”
আমাদের পেছনের বেঞ্চে বসা একটা মেয়ের দিকে দেখিয়ে বলল, “এর নাম ডেলিসা খাতুন, পার্ক সার্কাসে থাকে।”
সত্যি বলছি, আমি একটা মুসলমান মেয়েকে এমএসসি ফিসিক্সে দেখব বলে আশা করিনি। খুব সুন্দরী আর ফর্সা ডেলিসা, গায়ের রঙ যেন আপেলের মতন লাল। গাড় নীল রঙের সালোয়ার পড়ে ছিল আর মাথায় জড়ানো কালো সুন্দর হিজাব।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “মাথার কাপড় কি সবসময়ে পরে থাকতে হয়?”
হাত নাড়িয়ে উত্তর দেয় ডেলিসা, “না রে, আব্বাজান বার বার বলে তাই পড়া। আম্মি ত হিজাব পরতেই দেয় না, বলে যে আমি অনেক বড় হয়ে গেছি ওই সব হিজাব পরে কি হবে যখন এমএসসি পড়তে যাচ্ছি।”
ঠিক সেই সময়ে পেছন থেকে কেউ আমাদের উদ্দেশ্যে জোর গলায় টিটকিরি দেয়, “গুরু আজ ত কাঠের বেঞ্চে আগুন লেগে যাবে।”
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে চেষ্টা করি যে কে বলল কথা টা। তিস্তা ছেলেটার দিকে চেঁচিয়ে ওঠে, “গা… মুখ বন্ধ রাখ।” আমাকে বলল, “ওর দিকে তাকিও না।”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “ছেলেটা কে?”
তিস্তা, “দেবব্রত, আমার আগের কলেজের বন্ধু। বড় ফাজিল কিন্তু পড়াশুনায় খুব ভাল বিশেষ করে কোয়ান্টামে খুব ভাল।”
আমি দেবব্রতর দিকে তাকালাম, বেশ লম্বা চওড়া ছেলে, চোখে চশমা, গায়ের রঙ একটু তামাটে। গোঁফ দাড়ি কামানো, পেছনের দিকে আঁচড়ান চুল, ছোটো চোখ। দু হাত পেছনের বেঞ্চে ছড়িয়ে দিয়ে বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখেই কেমন যেন মনে হল, বুকের ছাতি বেশ চওড়া। সাদা নীল ডোরা কাঁটা জামার ভেতর থেকে যেন বুকের ছাতি বেড়িয়ে এসেছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে হাত নারালাম। আমাকে দেখে দেবব্রত দুই আঙুল দিয়ে পিস্তলের ইশারা করে গুলি মেরে দিল। আমি হেসে ফেললাম ওর হাবভাব দেখে।
তিস্তা আমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করছিল, আমার দিকে হেসে বলে, “প্রথম দিনেই ঘায়েল ওর গুলিতে?”
আমি একটু হেসে উত্তর দেই, “নারে, আমার ঘায়েল হবার জো নেই।” নিজেকে বললাম, ঘায়েল ত আমি আগে থেকেই, পাঁজর ভেঙ্গে যে রক্তাত হয়ে গেছে বুক। মৃতদেহ কে মেরে কি আর রক্ত বার করা যায়?
কিছু দিন পরে, এক দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকের সময়ে আমি, তিস্তা আর ডেলিসা মেডিকেলের গল্প করতে করতে দিকে হাঁটছিলাম। দেবব্রত দৌড়ে এসে আমার কাঁধে আলতো করে চাঁটি মারে। আমি ওর দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করি, “কিরে কি হয়েছে?”
দেবব্রত তিস্তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, “এই আমি তোদের সাথে আসতে পারি?”
তিস্তা ওর দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি করে বলে, “মেট্রো তে ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখালে আমাদের সাথে হাঁটতে দেব।”
দেবব্রত ওর মাথায় আলতো চাঁটি মেরে বলে, “কেন রে তোর তথাগতর কি হল?”
আমি ডেলিশা কে জিজ্ঞেস করি, “এই তথাগত আবার কে?”
ডেলিশা কাঁধ ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়, “আমি কি করে জানব ওর কথা?”
দেবব্রত আমাকে উত্তর দিল, “তিস্তার অনেক বয়ফ্রেন্ড আর তথাগত তার মধ্যে একজন। কি রে ঠিক কিনা?”
তিস্তা বিরক্ত হয়ে দেবব্রত কে রাস্তার মাঝে মারতে শুরু করে দেয়, “কুকুর, গান… সবাইকে সব কথা বলে দিতে হবে নাকি?”
দেবব্রত হাসতে হাসতে বলে, “আচ্ছা আচ্ছা, বুঝলাম ওটা তার মানে পাস্ট। তা এখন কাকে নাকে দরি দিয়ে ঘুরাচ্ছিস?”
আমি জিজ্ঞেস করি, “হ্যাঁ রে, তিস্তার কটা বয়ফ্রেন্ড?”
দেবব্রত, “মিতা, আমি যদি এখন গুনতে শুরু করি তাহলে সকাল হয়ে যাবে ওর বয়ফ্রেন্ডের নাম গুনতে গুনতে।”
তিস্তা ওর দিকে বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “শালা কুত্তা, তুই চুপ কর এবারে না হলে তোকে মেরে ফেলব আমি।”
দেবব্রত, “একটা চুমু দে তাহলে আমি চুপ করে যাব।”
আমি জিজ্ঞেস করি, “তিস্তা, তোর তাহলে অনেক বয়ফ্রেন্ড?”
তিস্তা, “মিতা, তুমি প্লিস শুরু হয়ে যেও না।”
হ্যাঁ, কলেজে এক নতুন নাম পেলাম, “মিতা”, ও চলে যাওয়ার পরে আমার জীবন থেকে “পরী” মুছে গেছে। শুধু মাত্র ছোটমা আর বাবু আমাকে ওই নামে ডাকে। এক নতুন বন্দিনী, “মিতা”।
বাবু সেলফোন কিনে দিল না, মন টা সেদিন খুব ভারাক্রান্ত ছিল আমার। ক্লাসে চুপ করে বসে ছিলাম আমি। তিস্তা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে তোমার?”
আমি ওর দিকে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম, “কই কিছু না ত?”
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, “একদম মিথ্যে কথা বলবে না। তোমার মনের ভেতরে কিছু একটা চলছে।”
আমি ওর দিকে ম্লান হাসি দিয়ে বলি, “আমি ঠিক আছি। তুই কফি হাউস যাবি?”
আমার হাত ধরে টেনে ক্লাস থেকে বের করে নিয়ে এসে আবার জিজ্ঞেস করে, “সত্যি করে বলত কি হয়েছে তোমার?”
আমি কি করে ওকে সত্যি কথা বলি? আমার দুঃখ শুধু মাত্র আমার থাক, এই রক্তাক্ত বুকের পাঁজর নিলাম করে লাভ কি।
আমি, “কিছু না রে, এই এমনি একটু মন খারাপ। অনেক দিন দেশের বাড়ি যাইনি, মাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে তাই।”
তিস্তা জানত না যে ছোটমা আর বাবু আমার আসল বাবা মা নয়, তাই অবাক হয়ে আমাকে প্রশ্ন করে, “কেন, তোমার বাবু মা দমদমে থাকে না?”
আমি, “না রে, আমার দেশের বাড়ি বসিরহাট গ্রামে, কোলকাতা থেকে অনেক দুরে।”
আমাকে সাথে নিয়ে তিস্তা কফি হাউস ঢোকে। কফি হাউসে ঢুকেই আমার পা কেঁপে ওঠে। দুতলার ওই চেয়ারে বসতে আমার মন কেমন করে ওঠে। মাথার ওপরে বিশাল পাখা গুলো যেন ককিয়ে ককিয়ে কেঁদে আমাকে ডাক দেয় আমি একা কেন। শেষবার যখন ওর সাথে এসেছিলাম ওই দু তোলার জানালার ধারের চেয়ারে দুজনে বসেছিলাম। সেই চেয়ারে সেদিন অন্য কেউ বসে। আমাকে দেখে সেই চেয়ার যেন ডুকরে কেঁদে জিজ্ঞেস করে, “তোমার সাথি কই।”
আমি মুক, উত্তর নেই আমার কাছে!
একতলায় একটা টেবিলে বসে তিস্তা চিকেন পকোড়া আর ঠাণ্ডা কফির অর্ডার দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “আমি তোমার ব্যাপারে কিছুই জানি না। ওই সুন্দর চোখের পেছনে যেন অন্য এক মিতা লুকিয়ে আছে। আজ আমি জানতে চাই এই শুচিস্মিতা আসলে কে?”
আমি ওকে বলি, “না রে, কেউ নেই। বাবু আমাকে সেলফোন কিনে দেয়নি তাই মন একটু খারাপ।”
তিস্তা, “না এটা আমি মানতে পারলাম না।”
আমি শেষ পর্যন্ত আমার জীবনের কিছু কথা তিস্তাকে জানাই। হ্যাঁ, আমার ভালবাসার কথা, আমার ব্যাথার কথা আমি চেপে যাই। কেন সেই ব্যাথা আবার বুকে টেনে আনা, কেন সেই ব্যাথার গল্প শুনে কেউ আমার কাঁধে হাত রাখবে? আমার সেই সুন্দর স্বপ্নের দিন গুলো শুধু মাত্র আমার হৃদয়ের কোনে গোপনে থাকুক। কফি হাউসে বসে আমরা বাকি দিন কাটিয়ে দিলাম।
গল্প শুনে আমার দিকে ব্যাথিত নয়নে বলল, “তোমার ছোটমা আর বাবুর মতন মানুষ হয় না।”
আমি ওর দিকে ম্লান হেসে উত্তর দেই, “হ্যাঁ আমার বাবু আর ছোটমায়ের মতন মানুষ হয় না।”
শুধু মাত্র আমার হৃদয় জানে, যে আমি এক বন্দিনী রাজকুমারী।
বেশ কিছুদিন পরের ঘটনা, দিনটা ছিল শুক্রবার। কোন এক কারনে কলেজ ছুটি ছিল সেদিন। আমরা মানে, তিস্তা, আমি আর ডেলিসা রাস্তায় গল্প করতে করতে হেদুয়ার দিকে হাঁটছিলাম। ডেলিসা আমাদের বলল যে ও আমাদের ট্রিট দিতে চায়। আমি ওকে কারন জিজ্ঞেস করাতে লাজুক হেসে উত্তর দিল ডেলিসা, “কাল আমার আর দানিসের এনগেজমেন্ট হয়েছে তাই।”
তিস্তা ওর দিকে হেসে বলে, “শেষ পর্যন্ত আরও একটা মুরগি কাটা পড়ল। ত আমরা কোথায় যাচ্ছি তাহলে?”
আমি, “পিটারক্যাটে গিয়ে ছেলো কাবাব, এর কমে ত কথাই হবে না।”
আমার মুখে পিটারক্যাটের নাম শুনে ওরা দুজনে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। দুজনেই আমাকে জিজ্ঞেস ক্করে, “কি ব্যাপার, তুমি পিটারক্যাটের নাম কি করে জানো? তুমি ত ডুবে ডুবে জল খাওয়ার মেয়ে দেখছি। হুম, ওখানে নিশ্চয় একা যাওনি, কে গেছিল সাথে, হ্যাঁ?”
আমি ওদের ক্ষান্ত করে উত্তর দিলাম, “না রে বাবা, আমি আমার এক বান্ধবী আর তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে গেছিলাম ওখানে।”
তিস্তা আমাকে বলে, “ঠিক আছে বাবা, নিঃশ্বাস করে নিলাম।” তারপরে ডেলিসার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁরে, দানিস কেমন রে, মানে তোকে কি রকম সুখ দেয়?”
ফর্সা ডেলিসার গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায় তিস্তার কথা শুনে, তিস্তাকে আদর করে চাঁটি মেরে বলে, “ধ্যাত, আমি অন্তত তোর মতন নয় যে বারো ঘাটের জল খেয়ে বেরাই।”
ডেলিসা আমাদের জিজ্ঞেস করে, “তাহলে কি পিটার ক্যাট যাচ্ছি আমরা?”
তিস্তা জোরে বলে উঠল, “না না, অনেক দিন পরে কিছু ভালো বন্ধু পেয়েছি, আজ আর পিটারক্যাট নয়, আজ আমার বাড়িতে। বাড়িতে বৌদি ছাড়া আর কেউ নেই, চল না আমার বাড়িতে গিয়ে একটু মজা করা যাক।”
তিস্তা একটি নদীর নাম (#02)
আমরা তিনজনে ট্যাক্সি চেপে তিস্তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমি মাঝখানে বসে আর আমার দুপাশে তিস্তা আর ডেলিসা। তিস্তা সবসময়ে জিন্স আর টপ পড়তে ভালবাসত, মাঝে মাঝে স্কার্ট পড়ত বইকি কিন্তু কোনদিন সালোয়ার পড়তে দেখিনি ওকে। ওর স্কার্ট গুলো বেশ ছোটো হত, হাঁটু পর্যন্ত আর মসৃণ পা দেখে ছেলেদের অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। ডেলিসা একদম অন্য স্বভাবের মেয়ে, সবসময়ে সালোয়ার পরে কলেজে আসতো। সেই প্রথম দিনের পরে আর কোনদিন ও হিজাব পরেনি। কিন্তু ওর সালোয়ার গুলি ভারী সুন্দর দেখতে হত।
সেই চিতকুলের ভ্রমণের পরে আমি আর কোনদিন জিন্স পড়িনি। একদিন ছোটমায়ের নজর লুকিয়ে আমি আমার জিন্স আর সেই তুঁতে রঙের লেহেঙ্গা একটা প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটের মধ্যে মুড়ে মেডিকেল কলেজের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলাম। কেন আর ওই সব কাপড় পড়া, কার জন্য পড়া।
আমার দুপাশে ওরা দুজনে বসে গল্প করে আর কুকুর বিড়ালের মতন মারামারি শুরু করে। ওদের বেশির ভাগ থাপ্পর আমার বুকে হাতেই লাগছিল। আমি ওদেরকে জোর গলায় বলি, “তোরা যদি মারামারি না থামাস তাহলে কিন্তু তোদের মাথা ঠুকে দেব এবারে।”
ডেলিসা আমার দিকে তাকিয়ে মজা করে বলে, “বাঃ বা, মিতা ম্যাডাম আবার রাগ করতে ও জানে। আচ্ছা মিতা তোমার বয়স কত?”
আমি জানাই যে আমার বয়স ছাব্বিশ। আমার বয়স শুনে ওরা আরও অবাক হয়ে গেল, আমি ওদের চেয়ে প্রায় বছর চারেকের বড় ছিলাম। তিস্তা মজা করে বলে, “ধ্যাত, মিথ্যে কথা। তোমার সামনে ত আমরা তাহলে কচি বাচ্চা।”
ডেলিসা, “তোমার ঠিক সময়ে বিয়ে হলে তিস্তার মতন মেয়ে হয়ে যেত…”
তিস্তা আমার দিকে মজা করে হাত জোর করে বলে ওঠে, “মিতা মাতা, প্রনাম নেবেন।”
আমি হেসে ফেলি ওর কার্যকলাপ দেখে।
তিস্তার বাড়ি তিনতলা। একতলায় ভাড়া থাকে। দুতলায় ওর দাদা বৌদি আর তিনতলায় বাবা মায়ের তিস্তা থাকে। আমরা বাড়ি পৌঁছতেই ওর বৌদি আমাদের জন্য দরজা খুলে দেন। তিস্তা বৌদিকে জড়িয়ে ধরে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, “আমার বৌদি, বনানিদি।”
তারপরে আমাদের দিকে তাকিয়ে আমাদের পরিচয় দেয়।
তিনতলায় ওর ঘরে নিয়ে যায় তিস্তা। ঘরে ঢুকে দেখি দেয়ালে একটা বিশাল সোয়ার্জেনেগারের পোস্টার টাঙ্গানো। মাংস পেশি ফুলিয়ে একটা পাহাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে সেই লোক।
ডেলিসা পোস্টার দেখে তিস্তা কে মজা করে বলে, “কিরে সোয়ার্জেনেগার কি রাতে তোর স্বপ্নে আসে?”
তিস্তা ডেলিসার কথা শুনে বলে, “উম্মম্মম্ম… মাল কি বলব, যেদিন ও পোস্টার থেকে বেড়িয়ে আসবে সেদিন আমি ওর হাতে নিজেকে সমর্পণ করে দেব।”
আমার দিকে তাকিয়ে তিস্তা বলে, “দাঁড়িয়ে কেন? পোস্টার দেখে পায়ের ফাঁকে কিছু হয়ে গেল নাকি তোমার?”
বলেই আমার পেছনে আদর করে চাঁটি মারে।
আমি কাঁধের ব্যাগ বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে ওর বিছানায় চেপে বসে পরি। আমি ওর দিকে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিলে জিজ্ঞেস করি, “পোস্টারের সাথে প্রেম করে কি লাভ দেবে।”
ডেলিসা হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “হুম … মিতার যেরকম দেখতে মেয়ে ঠিক সেই রকম নয়, ও অনেক ডুবে ডুবে জল খায়।”
আমি ওদের দিকে চেঁচিয়ে উঠি, “এই তোদের কি সেই সব কথা ছাড়া আর কোন কথা মুখে আসে না?”
তিস্তা আমার ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে। আমি পেটের ওপরে শুয়ে ছিলাম, তিস্তা আমার পিঠের ওপরে শুয়ে পরে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। দেহের দুপাশ থেকে হাত নিচে করে বুকের কাছে এনে চাপ দেয়। তিস্তা চেপে ধরে মজা করে বলে, “সোনা মেয়ে, একদিনে ত মাল এত ফোলেনি তোমার, সত্যি কথা বলত।”
বুকের ওপরে তিস্তার নরম আঙ্গুলের পরশ আমার বুকের মাঝে সেই পুরানো আগুন ধুক করে জ্বলে ওঠে। শিরদাঁড়ার ওপর দিয়ে যেন এক বিদ্যুৎ খেলে চলে যায়। আমি ঘুরে যাই আর ওকে আমার পিঠ থেকে বিছানায় ফেলে দেই। ওর চাপের ফলে আমার শরীর অল্প গরম হয়ে গেছিল আর সারা মুখ লাল হয়ে উঠেছিল।
তিস্তা ডেলিসার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, “দেক ওর বুক, দানিস টিপে টিপে কত বড় করে দিয়েছে।”
ডেলিসা তিস্তার ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে ওর শার্ট খুলে ফেলে দেয়। তিস্তার নরম উন্নত বুক জোরা কালো অন্তর্বাসে ঢাকা আমাদের চোখের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায়।
তিস্তা চেঁচিয়ে ওঠে ডেলিসার দিকে, “হুম… গরম হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে।”
বুক নাচিয়ে দেয় আমাদের চোখের সামনে, দুটি পীনোন্নত বুক জোরা কালো অন্তর্বাসের ভেতরে যে একে ওপরকে ঠেলে ধরে রাখে, এই যেন ফেটে বেড়িয়ে পড়বে এর একটু হলে।
ডেলিসা ওর ফোলা ফোলা বুকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি রে, কয় জোরা হাতের চাপ খেয়েছিস তুই?”
তিস্তা ছাদের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়, “উম্মম… চার জোরা হাত বে।”
আমি অবাক হয়ে বলি, “বাপ রে চার জোরা? তুই পারিস বটে।”
তিস্তার কথা শুনেই আমার মনের মধ্যে সেই পুরানো দিনের প্রেমের কথা মনে পরে যায় আর সারা শরীর কেঁপে ওঠে।
তিস্তা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “হুম, তোমার ভেতরে কেমন যেন হচ্ছে তাই না।”
আমি চেঁচিয়ে উঠি, “না না না…”
প্রানপন চেষ্টা করি আমার মনের সেই উষ্ণ প্রানবন্ত দিন গুলির কথা ঢেকে রাখতে।
তিস্তা শুরু হয়ে যায় ওর গল্প বলতে, “একটা ছিল আমি যখন ক্লাস টেনে পড়তাম। খুব বাচ্চা বাচ্চা প্রেম ছিল সেই সময়ে, তাই কয়েকটা চুমু আর জড়াজড়ি ছাড়া কিছুই হয় নি। যা শালা, আমি ত ওর নাম টাও ভুলে গেছিরে। যাক, তার পরে হল, বিক্রমজিত, যখন আমি ক্লাস টুয়েল্ভে পড়ি। মাল, প্রথম ছোঁয়া ওর কাছ থেকে পেয়েছিলাম। সারা শরীরে একদিন চুমু খেয়েছিল, উম্মম, ভুলতে পারব না সেই ফিলিংস।”
ডেলিসাও কম যায়না, তিস্তার জিন্সের ওপর দিয়ে জানুসন্ধি চেপে ধরে বলে, “আর এটার ছিপি কে খুলেছে রে?”
ডেলিসা চাপ দেয় আর তিস্তা শীৎকার করে ওঠে আনন্দে, “না রে, এখন ত তুই আমার ওখানে ঝাঁট জ্বালিয়ে দিলি। বিক্রমজিত মাল বেল্টের নিচে নামেই নি।”
ওদের কথা শুনে আমার ত মাথা ঘুরতে শুরু করে দিয়েছিল, এই সহুরে মেয়েদের কার্যকলাপ বড় উদ্ভট মনে হয়েছিল। ডেলিসা আমার চকচক চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “মিতা এত চুপ করে কেন ভাই, কিছু তুমি ও বল।”
আমি লজ্জায় লাল হয়ে বললাম, “ধ্যাত, তোরা দুজনে না একদম যাতা। তিস্তা তোর গল্প শুনি তাই বল।”
তিস্তা আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “আমি ত আমারটা বলব, কিন্তু তোমার গল্প শুনি না।”
আমি, “না রে আমার কোন গল্প নেই।”
ডেলিসা আমার দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “সতী মেয়েরে মিতা। একজনের কাছেই শেষ পর্যন্ত নিজেকে ধরা দেবে।”
আমি মনে মনে হেসে ফেলি ওর কথা শুনে, “হ্যাঁ একজনের কাছেই আমি আমার সব কিছু বিসর্জন দিয়েছি আর তাঁর জন্য আমার মনে কোন ক্ষোভ বা দুঃখ নেই।”
তিস্তা ডেলিসা কে জিজ্ঞেস করে, “তুই দানিসের কথা বল, খাটে কেমন ও?”
ডেলিসা, “কেন রে, তুই টেস্ট করতে চাস নাকি?”
তিস্তা, “দেখি না শুনে, তোরটা কেমন আর আমার টা কেমন।”
ডেলিসা ঠোঁট কুঁচকে মৃদু চিৎকার করে ওঠে, “উফফফ… আর সেই দিনের কথা মনে করাস না ভাই, জল চলে আসে।”
আমি ওর কথা শুনে উৎসুক হয়ে উঠি, পরে অবশ্য ভেবেছিলাম যে সেদিন কি হয়েছিল আমার মনের কোনে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “বল বল কি করেছিল সেদিন তোর সাথে।”
ডেলিসা মৃদু শীৎকার করে ওঠে ওর সেই রতিক্রিয়ার কথা মনে করে, “কি বলব তোদের, ছাল নামানো, শক্ত যেন লোহার মুগুর আর আগুনের মতন গরম। যখন ঢুকিয়েছিল আমার ভেতরে মনে হয়েছিল যেন মাথা ফুড়ে বেড়িয়ে আসবে, আমি ব্যাথায় ককিয়ে উঠেছিলাম, কিন্তু মাল সেই যে সুখ, উম্মম… ”
তিস্তা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে, “তোদের এটাই বড় সুখের।”
ডেলিসা বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞেস করে, “মানে?”
আরও একটা শয়তানি হাসি মাখিয়ে উত্তর দেয় তিস্তা, “কলেজে আমার ছিপি খোলে আহিল।”
আমি অবাক, “হ্যাঁ কি বলিস, তাহলে শুধু বুদ্ধিসিম আর ক্রিস্টিয়ান্স বেঁচে আছে তোর হাত থেকে নাকি ওদের খাওয়াও হয়ে গেছে?”
তিস্তা, “আরে না না, আহিল সাথে ত চুরান্ত খেলা চলেছিল। ওর সাথে কি আর প্রেম করেছিলাম নাকি?”
তিস্তা আমাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোরা জিন্স পরিস না?”
আমরা দুজনেই মাথা নাড়াই, “না জিন্স পড়িনি।”
তিস্তা, “উফ, তাহলে তোদের বুঝাই কিকরে সেই শিরশিরানি।”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “জিন্সে আবার কিসের শিরশিরানি?”
তিস্তার ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি, “তোরা নিচে সবসময়ে প্যান্টি পরিস তাই না।”
ডেলিসা কিছুই বুঝতে পারছেনা আমিও তথৈবচ।
তিস্তা চোখ বন্ধ করে নিজের জানু মাঝে আঙ্গুল চেপে ধরে বলে, “জিন্সের স্টিচ যখন ওখানে ঘষা খায়, কি যে শিরশিরানি হয় সেখানে সেটা কি আর আমি বলে বুঝাতে পারব তোদের? ভেতরে পান্টি না পরে শুধু জিন্স পড়লে ওখানে দারুন লাগে। হাঁটতে চলতে উঠতে বসতে পায়ের ফাঁকে ঘষা খায় আর আমি মাল একদম ভিজে যাই। সারা পেটের মধ্যে কেমন যেন করে ওঠে।”
বলতে বলতে হটাত তিস্তা আমার জামার কলার ধরে আমাকে চিত করে শুয়িয়ে দিল বিছানার ওপরে। আমার লাল নরম ঠোঁটের ওপরে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে, আমার নরম বুকের ওপরে নিজের বুক চেপে ধরে তিস্তা। আমাদের দুজনের চাপের ফলে নরম সুগোল বক্ষ পিষে যায়, আমার বুক যেন অন্তর্বাসের ভেতর থেকে ফেটে বেড়িয়ে আসে। আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা, ওর মাথার পেছনে হাত দিয়ে ওর মুখ খানি আরও নিজের ঠোঁটের ওপরে চেপে ধরি। জীবনের সেই প্রথম বার একটা মেয়ের চুম্বনে আমার শরীর গরম হয়ে ওঠে।
আমার বুকের নুড়ি পাথরের মতন শক্ত হয়ে যায়, তিস্তার নুড়ি আমার বুকের ওপরে যেন দাগ কেতে দেয় তপ্ত পেরেকের মতন। আমি সম্পূর্ণ পাগল হয়ে উঠেছিলাম কামনার আগুনে। তিস্তা আমার মুখের ভেতরে জিব ঢুকিয়ে দেইয়ে আমার জিব নিয়ে খেলা করতে শুরু করে দেয়। আমি ওর ঠোঁটের সিক্ত মধু খেতে শুরু করে দেই। তিস্তা আমার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আমার মুখের ভেতরের হাওয়া শুষে নেয়।
আমি ওর মাথা আরও জোরে চেপে ধরি ঠোঁটের ওপরে। কিছু পরে তিস্তা আমার ঠোঁট ছেড়ে দেয়, দুজনেই উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছিলাম সেদিনের খেলায়। দুজনেই আগুনে ঝলসে হাপাতে থাকলাম। তিস্তার কামনা ভরা চোখ দুটি যেন আমাকে ঝলসে দিয়েছিল। আমি ডেলিসার দিকে তাকিয়ে দেখি, দুষ্টুমি ভরা হাসি মেখে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল সে।
ডেলিসা আমাদের কার্যকলাপ দেখে হেসে বলে, “তোরা তোদের প্রেমলিলা চালিয়ে যা আমাকে আবার পার্কসার্কাস ফিরতে হবে।”
আমি উঠে বসে জামা আর স্কার্ট ঠিক করে নেই। তিস্তা আমার হাত ধরে অনুনয় করে বলে ফেলে, “সরি মিতা, আমি জাস্ট বয়ে গেছিলাম একটু।”
আমি ওর দিকে চোখ টিপে হেসে বলে ফেলি, “নারে সরি কেন, আমার বেশ ভালো লেগেছে রে।”
তিস্তা আমাদের আরও কিছুক্ষণ থেকে যেতে বলে। কিন্তু বাড়িতে বাবু আমার পথ চেয়ে বসে থাকবে তাই আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হয় সেদিন। বাড়ি ফেরার আগে তিস্তা নিজের বুকের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে হেসে বলে, “এই মুরগি একটা নতুন মোরগ ধরেছে।” বাসস্টান্ড পর্যন্ত তিস্তা আমাদের এগিয়ে দিয়েছিল সেদিন।
পুজোর ছুটির কিছু দিন আগের ঘটনা। তিস্তা আর আমি কলেজের গেতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তিস্তা আমাকে সেদিন কারুর সাথে দেখা করাবে বলেছিল। আমি ওকে জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দেয় যে আগের দিন যার কথা বলেছিল তাঁর সাথে আমার দেখা করাতে চায়।
আমি, “তুই কবে তোর নতুন মোরগের কথা আমাকে বলেছিস?”
তিস্তা, “যা বাবা, মিতা। এই ত সেদিন তোমাকে বলেছিলাম না। অইজে যেদিন আমি আর তুমি বাসের অপেক্ষা করছিলাম।”
আমি মাথা নারলাম, হ্যাঁ মনে পড়েছে।
কিছু পরে একটা এই পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের ছেলে আমাদের দিকে আগিয়ে এসে তিস্তাকে দেখে হাসল। তিস্তা ওর দিকে দৌড়ে গিয়ে হাত জড়িয়ে ধরে। ও আমার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। আমি হাত জোর করে অভিবাদন জানালাম। ছেলেটা আমার হাতজোর দেখে হেসে বলে, “আমি কাকুর মতন এখন বুড়ো হয়ে যাইনি যে হাতজোড় করে প্রনাম জানাতে হবে।”
তিস্তার চেয়ে ছেলেটা বেশ লম্বা। ছেলেটা দেখতে বেশ সুদর্শন, চওড়া কাঁধ পেটান চেহারা। নীল স্ট্রাইপ শার্ট আর ধুসর রঙের পান্টে বেশ দেখাচ্ছিল ছেলেটাকে। পাশাপাশি তিস্তা আর ছেলেটাকে দেখে আমার খুব ভালো লেগেছিল ওদের জুটি। ওদের দেখে আমার সেই পুরানো দিনের কথা মনে পরে যায়, আমি আর ও একসাথে এই রাস্তা দিয়ে হাত ধরে বেশ কয়বার হেঁটে গেছি।
তিস্তা আমাকে বলে, “এ, তির্থাঙ্কর সেনগুপ্ত। যাদবপুর উনিভারসিটি থেকে নিউক্লিয়ার ফিসিক্সে পিএইচডি করছে।”
আমি তিস্তার হাত ধরে একপাসে টেনে জিজ্ঞেস করি, “কিন্তু দেবব্রত সেদিন অন্য কোন ছেলের নাম বলেছিল যে?”
আমার কথা শুনে তিস্তা একটু বিরক্তি ভরা চাহনি দেয় আমার দিকে, “চুপ চুপ, একদম ওই কথা মুখে আনবে না।”
আমি তিস্তার কথায় সব কিছু বুঝে নিলাম।
তিস্তা তিরথাঙ্করকে জিজ্ঞেস করে, “তীর্থ, গাড়ি এনেছ?”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, “ওরে বাবা, গাড়ি ও আছে ওর কাছে?”
আমার কানেকানে বলে, “বাপ মায়ের একমাত্র ছেলে আর ওর বাবা খুব বড়োলোক।”
তিরথাঙ্কর আমাকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিল। তিস্তার দিকে কম আর আমার দিকে যেন বেশি করে চেয়ে দেখছিল তির্থাঙ্কর। ওর চোখের চাহনি আমার ঠিক ভালো লাগেনি, কেমন যেন লম্পট ছেলদের মতন হাঁ করে তাকিয়েছিল।
আমি তিস্তা কে বললাম, “এই আমি না বাড়ি যাচ্ছি। তোদের বেশি ডিস্টার্ব করব না।”
তির্থাঙ্কর আমাকে বলে, “আরে বাবা, বাড়ি যাবে খানে। অনেক দিন পরে তিস্তা এক সুন্দরী বান্ধবীর সাথে দেখা করাল। তুমি সাথে থাকলে বেশ ভালোই হবে।”
তিস্তা ওর হাতে চিমটি কেটে বলে, “তুমি কি মিতার সাথে ফ্লার্ট করছ? একদম নজর দেবে না ওর দিকে।”
আমি তিস্তাকে জানালাম, “বাবু আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে রে। আমি না গেলে বাবু চা পাবেনা। তোদের সাথে না হয় অন্য কোনদিন ঘুরতে যাবো।”
অতি ভদ্রতার সাথে ওদের আমন্ত্রন উপেক্ষা করেছিলাম। তির্থাঙ্করের চোখের সেই লিপ্সা মাখা চাহনি আমার একটুও ভালো লাগেনি। মেয়েদের মাথার মধ্যে এক ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করে, চোখের চাহনি দেখে বলে দিতে পারে কে কেমন ভাব নিয়ে ওদের দিকে তাকায়। আমি ওদের কে ওখানে ছেড়ে বাসস্টান্ডের দিকে হাটা দিয়েছিলাম। বাসে এল, আমি চরতে যাবো তার আগে দেখলাম যে তির্থাঙ্কর আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়াল। ওর হাত নাড়ানো দেখে আমার কেমন বিরক্তি লেগেছিল।
আমি বাসে চরতে যাবো আর ঠিক সেই সময়ে কেউ পেছন থেকে আমার খোঁপায় গোঁজা পেন টেনে নেয় আর আমার চুল খুলে যায়। সেই লোকটার আচরনে আমি খুব রেগে যাই আর পেছন ফিরে তাকে বেশ ভালো ভাবে কথা শুনানর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি দেবব্রত আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ওর হাসি মুখ দেখে আমার রাগ জল হয়ে যায়।
দেবব্রত আমাকে জিজ্ঞেস করে, “তিস্তার সাথে দাঁড়িয়ে কি করছিলে?”
আমি ওকে উলটো প্রশ্ন করি, “কেন তোমার নজর তিস্তার ওপরে ছিল নাকি?”
দেবব্রত আমার কাছে এসে কানে কানে বলে, “আরে জাননা, কলেজের দিন থেকে ওর ওপরে আমার নজর ছিল, কিন্তু ও তখন একটা মুসলমান ছেলের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছিল তাই আর আমি ওর দিকে ঘেসিনি।”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, “কিন্তু সেদিন যে তুমি বললে অন্য কেউ ছিল? কি যেন নাম।”
দেবব্রত, “ও আচ্ছা, তথাগত। আহিল ত ওকে শুধু বিছানায় নেবার জন্য প্রেমের ভান করেছিল, তথাগত ওকে সত্যি ভালবাসত।”
আমি, “এখন তথাগত কোথায়?”
দেবব্রত, “আরে মেয়েটা ডাম্প করে ওকে, বেশি বড়লোকের ছেলে ছিলনা তথাগত, তিস্তার মনের দাম মেটাতে পারেনি, তাই তিস্তা ডিচ করে। গ্রাজুয়েসান শেষ করে স্কলারসিপ নিয়ে বাইরে চলে যায়, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। শালি কুত্তি চিজ, যতক্ষণ না জ্বালা মিটবে ততদিন ওর শান্তি হবে না”
এই বলে হিহি করে হেসে ফেলে।
এই ছিল আমার বান্ধবী তিস্তা, ঠিক যেন পাহাড়ি এক নদী, উচ্ছল উদ্দাম সবসময়ে যেন নেচে বেড়াচ্ছে, কারুর ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তিস্তা, আমার বান্ধবী, তিস্তা একটি নদী।