মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় | পর্ব – ১০ | সপ্তপদীর বহ্নিশিখা

13 Min Read
মধ্যরাত্রে সূর্যোদয়

নভেম্বরের শুরু থেকেই বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। বাড়ি ধিরে ধিরে মুখর হয়ে ওঠে, সেজে ওঠে আমাকে বিদায় জানাবার জন্য। আমি দিন গুনি, সোনার খাঁচা থেকে মুক্তির দিন, কিন্তু মনে এক অজানা আশঙ্কা ভর করে, ডানা মেলে উড়ে যাব, কিন্তু সামনের আকাশ ত আজানা অচেনা। কি আছে এই নব দিগন্তে সেই চিন্তায় মাঝে মাঝে রাতে ঘুম হয় না।
একদিন রাতে হিমাদ্রি আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছো শুচি? ঘুমিয়ে পরেছ নাকি?”
এক নতুন নাম পেলাম, শুচি। আমি উত্তর দিলাম, “না তবে ঘুমাতে যাবো। কি ব্যাপার, ফোন করেছ?”
হিমাদ্রি একটু ইতস্তত হওয়ার পরে জিজ্ঞেস করে, “এই রবিবারে দেখা করতে পারি?”
আমি, “তুমি ধানবাদ থেকে এখানে আসবে আমার সাথে দেখা করতে?”
আমি অবাক ওর প্রশ্ন শুনে।

হিমাদ্রি হেসে বলে, “হ্যাঁ, নিশ্চয়, কেন নয়। আমার কিছু প্রশ্ন আছে, সেগুলোর একটু উত্তর চাই, আর দুজনে পরস্পরকে একটু জেনে নেওয়া ভালো। তাই নয় কি, শুচি? একদিনের দেখায় কি আর মানুষ চেনা যায়।”
আমি, “বাড়িতে চলে আসো। ছোটমা বাবু তোমাকে দেখে খুব আনন্দিত হবেন।”
হিমাদ্রি, “কেন আমার সাথে একা বের হতে ভয় করছে?”
ওর হাসি মজার কোন ভাবাবেগ আমার হৃদয়কে নাড়াতে পারেনা। আমি শান্ত গলায় উত্তর দেই, “না, তবে ছোটমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।”
হিমাদ্রি, “না না, তাঁর দরকার পড়বে না। আমি তোমার ছোটমাকে জিজ্ঞেস করে নিয়েছি, তিনি অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন। আমি তোমার বাড়িতে এসে তোমাকে নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে পড়বো।”
আমি একটু রেগে যাই ওর উত্তর শুনে, “তুমি আমাকে একবারের জন্য জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলে না? তুমি যখন নিজেই সব ঠিক করে নিয়েছ তাহলে আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?”
আমি উত্তরটা বেশ কড়া সুরে দিয়েছিলাম। উত্তর দেওয়ার পরে আমার মনে হল একটু বেশি বলে ফেললাম হয়ত। ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম, “দুঃখিত, তোমাকে আঘাত করেছি বলে।”
হিমাদ্রি আমার কথা গায়ে মাখেনি, হেসে বলে, “ঠিক আছে শুচি, এত হতেই থাকে।”
পরের রবিবারে সকালে বেলা হিমাদ্রি আমাদের বাড়িতে আসে। ছোটমা ওকে দেখে খুব খুশি হন। আমি বেশি সাজিনি সেদিন। হিমাদ্রি আমাকে নিয়ে পিয়ারলেস ইনের, আহেলি রেস্টুরেন্টে গেছিলাম।
হিমাদ্রি আমাকে জিজ্ঞেস করে, “ছোটমা তোমার দূর সম্পর্কের দিদি, তাই না?”
আমি মাথা নাড়িয়ে জানাই, হ্যাঁ।
হিমাদ্রি, “তাহলে দিদিকে ছোটমা কেন ডাকো?”
আমি, “আমার মায়ের মতন তাই ডাকি।”
হিমাদ্রি, “আচ্ছা, বুঝলাম। আমার কিছু বলার আছে।”
আমি ভাবি, হটাত কি বলার থাকতে পারে এই সময়ে। আমি ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। হিমাদ্রি আমার মুখের ভাব দেখে মনের প্রশ্ন বুঝে ফেলে। হেসে বলে, “না না, সেই রকম কিছু না। তবে আমি একটু ড্রিঙ্ক করি আর সিগারেট খাই।”
আমি মৃদু হেসে মাথা দুলিয়ে বলি, “ওকে। তোমার কাজের চাপে তুমি খেতেই পার।”
হেসে বলে আমাকে, “তুমি খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু বুঝে মেনে নাও দেখছি।”
আমি শুধু একটু হাসি, উত্তর দেই না।
হিমাদ্রি কিছু পরে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “বিয়ের পরে কোথায় ঘুরতে যেতে চাও? আমি শুনেছি তুমি পাহাড় খুব ভালোবাসো। কোথায় যাওয়া যেতে পারে, তুমি বল?”
পাহাড়ের নাম শুনে বুক কেঁদে ওঠে। আমি নিচু গলায় বলি, “না আমার পাহাড় বিশেষ ভালো লাগেনা। ওই পাহাড় চরতে গেলে রাস্তায় আমার মাথা প্রচন্ড ঘোরে।”
মিথ্যে কথা বলি আমি, পাহাড়ের নাম শুনলেই আমার সেই সুদর্শন তস্করের কথা মনে পরে যায়, আমাকে চুরি করে নিয়ে গেছিল সুদুর পাহাড়ে, চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। বুক বেঁধে সেই জল পান করি আমি।
হিমাদ্রি, “আন্দামান কেমন হবে? আমি অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম আন্দামান যাওয়ার।”
কিছু পরে হিমাদ্রি আমাকে একটা প্রশ্ন করে। সেই প্রশ্ন আমাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়, পাঁজর কাঁপিয়ে দেয় ওর কথা। হিমাদ্রি, “তোমার ছোটমায়ের এক ছেলে আছেন, তাই না? তোমার বিয়েতে আসবে ত?”
আমার সারা শরীর সেই প্রশ্নের বাণে কেঁপে ওঠে। টেবলের নিচে প্রানপন শক্তি দিয়ে হাত মুঠি করে নিজেকে সামলে নেওয়ার প্রবল চেষ্টা করি। আমি ওর দিকে মাথা তুলে তাকাতে পারিনা। টেবিলের ওপরে তাকিয়ে কোনরকম মাথা নাড়িয়ে জানাই যে ও আসবে কি না, সেটা আমার জানা নেই।
হিমাদ্রি, “আচ্ছা শুচি, তোমার গাড়ির কোন রঙ পছন্দ?”
হিমাদ্রির সেই প্রশ্নে আমি আরও অবাক হয়ে যাই। হিমাদ্রি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে সেই প্রশ্ন।
আমি ওকে পালটা প্রশ্ন করি, “তুমি গাড়ি কিনছো?”
হিমাদ্রি হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, মারুতি বালেনো।”
আমি হিমাদ্রির ঠোঁটের হাসি দেখে বুঝতে পারি যে বিয়ের যৌতুক হিসাবে বাবু ওকে গাড়ি দিচ্ছে, আমার নিরাপত্তার জামানত। রাগে দুঃখে কান লাল হয়ে আসে আমার। মনে মনে বলি, আর কত ঋণের বোঝা আমার এই ছোটো হৃদয়ে চাপিয়ে দেবে। আমি হিমাদ্রিকে জানাই যে আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই, আমার শরীর ভালো লাগছিলনা, মাথা ব্যাথা করছিল ওর কথা শুনে। আমার কথা মেনে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয় হিমাদ্রি।
হিমাদ্রি চলে যাওয়ার পরে, বাবু ছোটমা আমাকে তাদের ঘরে ডাকেন। আমি ঘরে ঢুকে দেখি, বাবুর সামনে একটা ফাইল খোলা। বাবু আমাকে কিছু কাগজ দেখিয়ে বলেন, “এই কিছু কাগজ পত্র তোমার জন্য রাখা।”
একটা ব্যাঙ্কের খাতা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, “তোমার মায়ের জমান কিছু ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স আছে তোমার নামে। তোমার বাড়ির অংশের টাকা তোমার নামে ফিস্কড ডিপসিট করে দেওয়া হয়েছে। তা প্রায় সাত লাখের মতন আর আমি এই তিন লাখের মতন আরও দিয়ে সেটা দশ লাখ করে দিয়েছি।”
আমি বিছানায় বসে কাগজ হাতে নিয়ে ছোটমাকে জিজ্ঞেস করি, “তোমরা গাড়ি দিচ্ছ সেটা একবার আমাকে জানাও নি ত?”
ছোটমা, “তোকে কে বলল?”
আমি জোর গলায় বললাম, “আমার প্রশ্নের উত্তর দাও ছোটমা। তুমি যৌতুকে গাড়ি দিচ্ছ কি না? গাড়ি কি আমার নিরাপত্তার দাম হিসাবে দেওয়া হচ্ছে?”
বাবু প্রত্যয়ের স্বরে আমাকে বলেন, “সোনা মা, গাড়ি যৌতুকে দিচ্ছিনা রে। তুমি আমাদের মেয়ের মতন, আমাদের কিছু ত একটা দিতে হত, তাই গাড়ি দিচ্ছি। আর গাড়ির অর্ধেক টাকা হিমাদ্রি অফিস থেকে লোন নেবে।” 
আমি ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দেই, “আর কত ঋণের বোঝা আমাকে বয়ে বেড়াতে হবে?”
ছোটমা আমার গালে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেন। সেই স্নেহের স্পর্শ আমার কাছে আগুনের তাপের চেয়েও উত্তপ্ত মনে হয়। আমি জোর গলায় তাদের বলি, “আমাকে ছেড়ে দাও। তোমাদের যা মনে আসে তাই করো, আমাকে জিজ্ঞেস করতে যেওনা, আমি একটু একা থাকতে চাই।”
কিছুদিন পরে হিমাদ্রি আর নিলাদ্রি আমাদের বাড়ি আসে। বাবু, ছোটমা সবাই আমরা পার্ক স্ট্রিটে মারুতির শোরুমে যাই, গাড়ি দেখার জন্য। হিমাদ্রি আমাকে গাড়ির রঙের কথা জিজ্ঞেস করে, আমার গাড়ির প্রতি সেইরকম কোন আগ্রহ ছিলনা, মনের মধ্যে এক চিন্তা, গাড়ি আমার নিরাপত্তার যৌতুক। আমি ওদের জানাই যে গাড়ি যেকোনো রঙের নিলে চলবে, কোন এক নির্দিষ্ট রঙের প্রতি আমার পছন্দ ছিলনা।
নিলাদ্রি সাদা রঙের গাড়ির কথা বলে, বলে যে আমার যে রঙ পছন্দ সেটা কেনা উচিত। কিন্তু হিমাদ্রির কালো রঙ পছন্দ ছিল। হিমাদ্রি আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে যেন আমি কালোই পছন্দ করি। শেষ পর্যন্ত ওর মন রাখার জন্য কালো রঙের মারুতি বালেনো পছন্দ করা হয়।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মৈথিলী আমাদের বাড়িতে চলে আসে। সারাক্ষণ মৈথিলী আমাকে আগলে রাখে, আমার পাশে পাশে থাকে, যতক্ষণ না আমি সপ্তপদীর বহ্নিশিখার সামনে বসে, “মিসেস. শুচিস্মিতা কর্মকার” এ পরিনত না হয়ে যাই।
কেনাকাটা জোর কদমে শুরু হয়ে যায়। আমি কোনদিন ছোটমায়ের সাথে বাজারে কেনাকাটা করতে যাইনা। বিয়ের সব কেনাকাটা মৈথিলী আর ছোটমা করেন। আমি শুধু একদিন ছোটমায়ের সাথে কলেজস্ট্রীট গিয়েছিলাম, যেদিন আমার জন্য লাল বেনারসি শাড়ি কেনা হয়। আমি সারাদিন নিজের ঘরে বই পরে বা রান্না ঘরে কাটিয়ে দিতাম। আমার চারপাশের কোলাহল আমাকে কোন ভাবে নাড়াতে পারেনা। হৃদয়ের মাঝে সর্বক্ষণ একটা অনন্ত শূন্যতা ভর করে থাকে।
একদিন তিস্তা আর দেলিসা কে ফোন করে জানাই আমার বিয়ের কথা। সেই সংবাদ শুনে ওরা খুব খুশি হয়। দেবব্রত তিস্তাকে নিয়ে একদিন আমার বাড়িতে আমার সাথে দেখা করতে আসে।
তিস্তা আমাকে জিজ্ঞেস করে, “শেষ পর্যন্ত মিতা তার মনের মানুষ খুঁজে পেল।”
অব্যাক্ত বেদনায় হ্রদয় মোচর দিয়ে উঠলো। মৈথিলী কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল, তিস্তাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা ওর বন্ধু?”
তিস্তা মৈথিলীর প্রশ্নের গুড় উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, হ্যাঁ। মৈথিলী ওদের দিকে শূন্য চোখে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলে, “না এমনি জিজ্ঞেস করছি।”
আমি মৈথিলীর আসল বেদনা বুঝতে পারি, কত নিরুপায়, শত চেষ্টা করেও এই পাখিকে উড়াতে পারল না।
একদিন সন্ধ্যের পরে ছোটমা আমাকে তাদের ঘরের মধ্যে ডেকে বসতে বলেন। ছোটমা আমাকে বলেন, “পরী, আমরা তোর ভালোর জন্যেই এইসব করছি। খুব শীঘ্র তুই নতুন জীবনে পা দিবি, তাঁর আগে তোকে কিছু বলতে চাই।”
আমি জিজ্ঞেস করি, কি? ছোটমা বলেন, “কয়েক দিনের দেখায় একটা মানুষকে সম্পূর্ণ চেনা যায়না। আমরাও ঠিক করে চিনতে পারিনা সামনের মানুষ কে। জানিনা তোর নতুন বাড়ি কেমন হবে। সবাই নিজের নিজের চেহারায় এক মুখোশ এটে থাকে। জীবন চলার পথে, মানুষের সাথে থাকতে থাকতে সেই মুখোশের আড়ালের মানুষ টাকে আমরা দেখতে পাই।”
আমি ছোটমায়ের কথার উদ্দেশ্য ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা, ছোটমাকে আমি জিজ্ঞেস করি, “তুমি কি বলতে চাও আমাকে? আমি জানি যে আমার সামনে এক নতুন জীবন, আমি জানিনা আমার ভবিষ্যতে কি লেখা আছে। তবে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব আমার নতুন জীবনে সবাইকে খুশি রেখে চলতে।”
ছোটমা আমার গালে আদর করে বলেন, “দেখ মা, হিমাদ্রি কয়লার খনিতে চাকরি করে আর তার বাবা মায়ের সাথে থাকে। ওর বাবা কয়লার কন্ট্রাক্টর। সেই কারনে জানাচ্ছি যে ওদের মানসিকতা কি রকমের হবে সেটা এখন ঠিক পরিষ্কার নয়। তোর নামে আমরা বেশ কিছু টাকা রেখে দিয়েছি যাতে কোনোরকমের কষ্ট তোকে ছুঁতে না পারে। প্রথমেই সেই সব টাকা পয়সার কথা খোলসা করে ওদের বলতে যাস না, ধিরে ধিরে ওদের মানসিকতা বুঝে নিজে বুঝে পদক্ষেপ নিস।”
ছোটমায়ের কথা শুনে রাগে দুঃখে চোখের পাতা ভিজে যায় আমার, “আমার বিয়ে কিছু দিন পরে আর আজ তুমি আমাকে বলছ যে যার সাথে আমি বিয়ে করতে চলেছি তাদের তুমি ভালো করে জানো না?”
চোখের কোল থেকে জল গড়িয়ে পরে, “আমাকে কি করতে বলছ তাহলে?”
ছোটমা, “কাঁদিস না, মা। তোর বিয়ের পরে, শুধু হিমাদ্রিকে বলসি কোলকাতার হেড অফিসে ট্রান্সফার নিয়ে চলে আসতে। তুই সবসময়ের জন্য আমার সামনে থাকবি তাহলে।”
ছোটমায়ের কথা শুনে মন বিরক্তিতে ভরে গেল, চোয়াল শক্ত করে ছোটমাকে বললাম, “ছোটমা, তুমি একি বলছ আমাকে? তুমি নিজের ছেলের কাছ থেকে আজ বিচ্ছুত, তোমার বুক কাঁদে তাঁর জন্য আর তুমি কিনা এক মা হয়ে এক ছেলেকে তাঁর মায়ের কাছ থেকে দুরে সরে যেতে বলছ?”
ছোটমা বুঝতে পারল আমার কথা, “পরী, আমি যা কিছু বলছি তোর ভালোর জন্য বলছিরে।”
আমি থাকতে না পেরে ডুকরে কেঁদে বলি, “ছোটমা, আমার কিসে ভালো কিসে মন্দ সেটা তুমি ভালো করে জানো। আর কেন আমাকে বারেবারে কষ্ট দিচ্ছ বলত।”
বাবু ঘর থেকে বেড়িয়ে চলে যান।
ছোটমায়ের চোখে জল, আমার মুখখানি দুহাতে আঁজলা করে তুলে ধরে বলে, “সোনা মা, তুই যা চাইছিস তা আমি তোকে দিতে পারিনা। পরী একটু বুঝতে চেষ্টা কর মা, সবার সামনে আমাদের মাথা নত হয়ে যাবে, সমাজ আমাদের কলঙ্কিত বলবে।”
আমি কেঁদে ফেলি ছোটমার কথা শুনে। বুকের মাঝে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়ে যায়, “ছোটমা আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”
সেদিনের পর থেকে আমি নিজেকে যেন আরও গুটিয়ে নেই। এঁকে এঁকে বাড়িতে অতিথিরা আসতে শুরু করে। ইন্দ্রানিদি, চন্দ্রানিদি সপরিবারে বাড়িতে এসে পড়েন। শশাঙ্কদা, মেঘনা বৌদি দুষ্টুকে সাথে নিয়ে বাড়িতে আসেন। আমি দুষ্টুর সামনে যেতে পারিনা। ওর মুখ দেখে আমার বড় কষ্ট হয়, ও যেন আমার মনের আসল কথা বুঝে ফেলেছে।
একবার দুষ্টু আমাকে জিজ্ঞেস করে, “অভি কাকু আসবে না?”
আমি বহু কষ্টে ঠোঁটে হাসি মাখিয়ে ওকে বলি, “না রে আসবে না।”

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।