উড়তে মানা আকাশের তোর, বসতে মানা ডালে,
বাসা বাঁধিতও মানা, কি আছে কপালে,
বলি ঝরে হারাতে ত মানা নাই।
ওরে মন পাখি, কেন ডাকাডাকি, তুই থাক না গোপনে,
উড়তে আছে মানারে বন্ধু এই খোলা আসমানে,
তুই থাক না গোপনে।
রাজকন্যে ফিরে আসে তাঁর সোনার খাঁচায়, তাঁর যে আর মাথা গোঁজার জায়গা নেই। ভগ্ন হৃদয়, আশার সব আলো নিভে গেছে। দিগন্তের বুকে সেই ছোটো জাহাজের মাস্তুল ধিরে ধিরে বাঁকা দিগন্তের তলায় তলিয়ে গেল। সেই সাদা ঘোড়া আর ফিরে এল না, পরীর কাঁধ ছুঁয়ে আদর করল না, পরী ওর ডাকের জন্য অপেক্ষা করে থাকে কিন্তু শূন্য সে বুক। চারপাশে শুধু অন্ধকারে ঢাকা।
আগস্টে আমি আঠাশ বছরে পা দিলাম। আমি নিজেকে শামুকের খোলে মধ্যে গুটিয়ে নেই, আমার ঘর থেকে খুব বের হতাম। কলেজ শেষ, রান্না ঘর আর আমার ঘর আমার সব কিছু ছিল। বাইরের জগতের সাথে একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ছোটমা বাবু আমার চেহারা দেখে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। মা চলে যাওয়ার পরে আমি যেন কোন কিছুতে আর খুশি খুঁজে পাইনা। সেই সাদা ঘোড়া আর কোনদিন আমার কাছে ফিরে আসবে না, সেটা আমি ভালো ভাবে বুঝতে পেরে গেছিলাম।
মায়ের চিতার আগুনে আমার সব আশা, সব আখাঙ্খা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। আমার মা ছোটমাকে জানাতে পারলেন না তাঁর মনের অভিপ্রায়। সাদা ঘোড়া চিরতরে হারিয়ে গেল। মায়ের সাথে সাথে সেই “অপ্টিক্স নোটবুক” বইয়ের তাকে ঢুকে পরে, সেই ডায়রির লেখার কোন মানে নেই আর।
ছোটমা একদিন আমার ঘরে এসে আমাকে বললেন, “সোনা মা, আমি তোর মায়ের মতন।”
আমি করুন চোখে ছোটমায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি, হ্যাঁ সত্যি তুমি আমার মায়ের মতন কিন্তু আমার মা নও। আমি ছোটমাকে ম্লান হেসে জিজ্ঞেস করি, “আর কি চাও আমার কাছ থেকে, ছোটমা?”
ছোটমা, “ওই রকম ভাবে আমার সাথে কথা বলছিস কেন? এক মা তাঁর মেয়ের কাছে কি আর চাইবে, তাঁর ভালোই চাইবে।”
আমি তোমার মেয়ে হতে চাইনি ছোটমা, আমি তোমার বাড়ির বউমা হতে চেয়েছিলাম। পূরণ করতে পারবে আমার মনের আশা? আমি ছোটমাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি কি আমার জন্য ছেলে খুঁজছও?”
ছোটমা মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ রে, পরী, আমি আর তোর বাবু, তোর জন্য ছেলে খুঁজছি।”
আমি ছোটমায়ের কথা শুনে একটু রেগে যাই, বলি, “আমি স্কুল টিচার হতে চেয়েছিলাম, তাঁর কি হবে? তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে যে।”
ছোটমা আমার পাশে বসে আমার গালে হাত রেখে আদর করে বলেন, “সোনা মা, আমি তোর জন্য সেই রকম ছেলেই খুঁজব যে তোকে চাকরি করতে দেবে, তোকে পড়াশুনা করতে দেবে। বিশ্বাস কর।”
আমি ফুঁপিয়ে উঠি, “যত তাড়াতাড়ি পারো তুমি আমাকে বাড়ি থেকে তারাতে চাও, তাই না?”
ছোটমা মৃদু বকুনি দিলেন আমাকে, “কি সব উল্টপাল্টা বলছিস তুই, আমি কেন তোকে তাড়াতে চাইব।”
আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, চোখের সামনে সব আলো নিভে গেছে। হারানোর মতন আমার কাছে আর কিছু নেই। মনের মধ্যে সব সাহস সঞ্চয় করে ছোটমাকে বলি, “আমার যাওয়ার কোথাও আর জায়গা নেই তাই কি তুমি আমার জীবন নিয়ে খেলা করছ? আমি এখন বিয়ে করব না, আমি গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবো, সেখানেই থাকব।”
ছোটমা গম্ভির সুরে বলেন, “তুই ফিরে যেতে পারিস না, আমি তোকে যেতে দেব না। কে তোকে দেখবে? তোর দাদারা? না, ওদের নিজেদের সংসার আছে, ওরাও তোকে বিয়ে দিতে চেষ্টা করবে। তুই ভালো করে ইন্দ্রানি আর শশাঙ্কর অভিপ্রায় জানিস।”
আমি ছোটমায়ের দিকে আশাহত হয়ে তাকিয়ে থাকি, সত্যি আমার আর কেউ নেই দেখার। আমি ছোটমাকে জানাই যে আমার কিছু সময় চাই ভেবে দেখার জন্য। ছোটমা আমাকে জানান যে কোলকাতার পেপারে আমার বিয়ের জন্য ইস্তেহার দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই কথা শুনে আমার মনে হল যেন কেউ গরম তেল আমার মাথার ওপরে ঢেলে দিয়েছে।
আমি জোর গলায় ছোটমাকে বলি, “আমাকে জিজ্ঞেস করার কথা একবারের জন্যেও তোমার মনে হল না?”
খুব ধীর শীতল গলায় উত্তর দিলেন ছোটমা, “আমরা যা কিছু করছি সেটা তোর ভালোর জন্যেই করছি। তোর কিসে ভালো কিসে মন্দ আমরা ভালো করে জানি।”
ছোটমা চলে যাওয়ার পরে আমি চুপ করে বিছানায় বসে থাকি। বাইরের আকাশের মতন মন ভারাক্রান্ত। বর্ষাকাল শেষ, কিন্তু আকাশ একটু মেঘলা। ওর কাছ থেকে কোন যোগাযোগ নেই, আমি আশাহত।
প্রতিদিন বিকেলে দেখতাম আমার বিয়ের জন্য অনেক ফোন আসে। বাবু সেই ফোন ধরে সব কিছু লিখে নিতেন। আমি কিছু বলতাম ওদের। মাঝে মাঝে ছোটমা আমাকে জিজ্ঞেস করত যে কি ধরনের ছেলে আমার পছন্দ, তাঁর উত্তর আমি দিতাম না।
একদিন আমি ছোটমাকে বলি, “ছোটমা, আমি তোমার সব ঋণ শোধ করে দেব। আমি তোমার রক্ত মাংসের মেয়ে নই, তা সত্তেও তুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছ। কিন্তু…”
ছোটমা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “কিন্তু, কি পরী?”
আমি বুক ভরে এক শ্বাস নেই, কিছুক্ষণ বাবু আর ছোটমার দিকে তাকিয়ে তারপরে বলি, “একবার, শুধু একবারের জন্য আমাকে উপরের ঘরে যেতে দেবে।”
কথা বলতে গিয়ে আমার গলা ধরে এসেছিল।
ছোটমা বাবু আমার মুখে ওই কথা শুনে অবাক হয়ে যান। পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করেন। বাবু গম্ভির গলায় আমাকে বলেন, “না তুমি ওই ঘরে যেতে পারবে না। ওর ঘর তালা বন্ধ।”
আমি ওদের দিকে রেগে তাকিয়ে বলি, “ঠিক আছে, তোমরা এতই যখন আমার বিয়ে নিয়ে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পরেছ, তাহলে এত খুঁজছ কেন? যাকে খুশি ধরে নিয়ে আস, আমি তাঁর সাথে বিয়ে করে নেব।”
আমি ওদের মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দেই। বুকের মাঝে আগুন জ্বলে ওঠে, বেদনার তীব্র আগুনে আমার পাঁজর, আমার রক্ত ফুটতে থাকে। চুপ করে বিছানায় বসে থাকি। শেষ পর্যন্ত আমার সাথে প্রতারনা করল, আমার ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে চলে গেল, একবারের জন্য ফিরে তাকাল না, এত বার বলেও একবারের জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করল না। সারা রাত আমি ঘুমাতে পারিনা, জেগে বসে থাকি আমার অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতকে দেখার জন্য। বুক ফাঁকা, বুক চেপে কান্না দিয়ে ভরিয়ে দিতে চেষ্টা করি, কিন্তু বুকের আগুন হাথের ছোঁয়ায় আরও ধিকধিক করে জ্বলে ওঠে।
মাঝ রাতে দরজায় আওয়াজ শুনে আমি উঠে দরজা খুলি। দরজায় ছোটমাকে দেখে আমি একটু থমকে যাই। ছোটমা আমার হাথে ওর ঘরের চাবি দিয়ে করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
ছোটমায়ের দুচোখে জল, আমি হাথ থেকে চাবি নিয়ে ছোটমায়ের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে থাকি। ওই চাবি যেন আমার কাছে সব কিছু।
ছোটমা চোখের জল মুছে আমাকে নিচু গলায় বলেন, “সোনা মা, যা। কিন্তু সকালে আমি যেন সঠিক উত্তর পাই।”
আমি ধিরে ধিরে সিঁড়ি চড়ে ওর ঘরের সামনে এসে দাড়াই। বুকের মাঝে এক উত্তাল ঢেউ এসে আছড়ে পরে। শ্বাস বন্ধ করে নেই, তালা খোলার আগে। নিচের ঠোঁট চেপে ধরে থাকি, মনে হয় যেই আমি তালা খুলে ভেতরে ঢুকব, সেই খনে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরবে। আমি শেষ পর্যন্ত তালা খুলে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ি। গত দু’বছর এই ঘর বন্ধ ছিল, কারুর পায়ের চিহ্ণ নেই গরের ধুল মলিন মেঝের ওপরে। বন্ধ থাকার জন্য ঘরের হাওয়া গুমোট বেঁধে থাকে।
সেই গুমোট গন্ধে আমার বুক কেঁপে ওঠে, ঠিক যেন একটা ছোটো দিপের শিখা ঝড়ো হাওয়ায় দুলে ওঠে। টেবিলের নিচে এক কোনায় একটা ইদুর মরে পরে আছে। ওর পড়ার টেবিল, চেয়ার ধুলোতে ঢাকা। বিছানার চাদর গত দু’বছরে বদলানো হয়নি। টিকটিকির মল আর ইঁদুরের মল ছড়িয়ে আছে বিছানার চাদরের ওপরে। খাটের দুপাশে মাকড়সার জালে ভর্তি।
আমি জানালা খুলে দিয়ে নতুন বাতাসকে আহবান জানাই সেই বদ্ধ ঘরের ভেতরে। চেয়ারের ধুলো ঝেরে জানালার পাশে চেয়ার টেনে বসে পরি। চোখের কোনে জল চলে আসে, বুক কেঁপে ওঠে ওর কথা মনে করে। না কিছুতেই কাঁদব না, কার জন্য কাঁদব আমি, যে কিনা আমাকে ভুলে গেছে? ঠিক চলে যাওয়ার আগের দিনে আমি ঠিক সেইখানে বসে ছিলাম, আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার ছবি আঁকছিল। আমি সেইদিকে তাকিয়ে থাকি, হয়ত বাঁ এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আমার চোখে শুধু অন্ধকার দেখে, না ওখানে কেউ দাঁড়িয়ে নেই, সব আমার মনের ভ্রম। আমি টেবিলের ড্রয়ার খুলে দেখি একটা ছোটো কাঠের বাক্সে কত গুলো কাঁচের গুলি রাখা। আমি আবার সেই বাক্স যথাস্থানে রেখে দিলাম।
শেষ বারের মতন ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম। জানালা বন্ধ করে দিলাম। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি, চোখের পাতা ভিজে আসে। শেষ পর্যন্ত তালা বন্ধ করে দিলাম দরজায়, সেই তালার পেছনে আমার সব আশা সব ভালোবাসা বন্ধ করে দিয়ে নিচে নেমে চলে এলাম। ছোটমা বসার ঘরে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
আমি ছোটমায়ের হাথে চাবি ধরিয়ে দিয়ে বলি, “আমার আর কোন পথ নেই, যেখানে ভাগ্যবিধাতা আমাকে নিয়ে যাবে, আমি চুপ করে সেখানে যাবো।”
সেইরাতে শেষ বারের জন্য আমি ওর “অপ্টিক্স নোটবুক” তাক থেকে বের করি। ডায়রি আর ওর দেওয়া সেই বুদ্ধের মূর্তি একটা কাগজে মুড়ে একটা বাক্স বন্দি করে দেই। সেই বাক্স আমি মোম দিয়ে এটে দেই।
একদিন আমি ছোটমাকে বলি যে আমি কল্যাণীর সাথে দেখা করতে যাবো। ছোটমা মানা করেন নি। আমি কল্যাণীর বাড়ি যাই, ওর হাথে সেই বাক্স তুলে দিয়ে বলি, “আমার জীবন শেষ।”
কল্যাণী বাক্স হাথে নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে তাঁর মানে।
আমি বলি, “এই বাক্সে কিছু অকেজো জিনিস আছে। আর আমার কাজে লাগবে না ওর ডায়রি। আমার এত শক্তি নেই যে আমি ওর ডায়রি জ্বালিয়ে দেই, তাই তোর কাছে নিয়ে এলাম আমি। তুই আমার হয়ে এই টুকূ কাজ করে দে, পারলে এই জিনিস গুলো ধ্বংস করে দিস। ছোটমা বাবু আমার জন্য ছেলে খুঁজছে, কিছুদিনের মধ্যে আমার বিয়ে হয়ে যাবে।”
কল্যাণী আমার কথা শুনে আঁতকে ওঠে, “কি বলছিস তুই? ও যদি ফিরে আসে?”
আমি ম্লান হেসে ওকে বলি, “দু বছর, দু বছর আমি ওর জন্য অপেক্ষা করে করে হাঁপিয়ে গেছি। একবারের জন্যেও আমার সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করল না। ভুলে গেছে আমাকে, ভুলে গেছে ও কাউকে ভালবাসত। ভালোবাসা ওর জন্য নয়, ও এক কাপুরুষ, হৃদয় হীন মানুষ। নিজের বাবা মায়ের কথাও ভুলে গেছে।”
আমার চোখে সেদিন জল ছিলনা, কিন্তু আমার কথা শুনে কল্যাণীর চোখে জল চলে আসে। আমার ফাঁকা বুক, সেই চোখের জল ভরিয়ে দেইতে পারেনা। বেদনায় আর রাগে আমার হাত পা কেঁপে ওঠে। আমি ওর কান্না দেখে ওকে বলি, “কেন এক অভাগিনী মেয়ের জন্য চোখের জল ফেলছিস তুই? কেঁদে লাভ নেই রে।”
আমি ওর গালে হাত দিয়ে বলি, “তুই সুখী থাক, খুব ভালো মা হবি তুই।”
কল্যাণী আমার দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে, “পরী…”
সেই নাম শুনে আমার কান্না গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসে। আমি ধরা গলায় ওকে বলি, “কল্যাণী, পরী অনেক দিন আগেই মরে গেছেরে। তোর সামনে এক অন্য মেয়ে দাঁড়িয়ে, মিতা, জানিনা এই মিতার ভবিষ্যতে ভাগ্যবিধাতা কি লিখে গেছে।”
কল্যাণী আমার কাছে এসে আমার কাঁধে হাত রাখে। ওর হাতের স্নেহের স্পর্শে আমার মন গলে যায়, আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠি। কল্যাণী আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আমাকে সান্তনা দেয়। আমি ওকে বলি, “কল্যাণী রে, যেদিন ছোটমা ওকে বের করে দেয় সেইদিন পরী মরে গেছে। যেদিন আমার মা মারা যান সেদিন পরী মারা যায় আবার। আমার বুকে বেশি প্রাণ বেঁচে নেইরে কল্যাণী, বারেবারে আমি মরতে পারিনা রে। আমি আমার ভাগ্যের কবলে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছি রে।”
সেইদিন আমি আর গ্রামের বাড়িতে গেলাম না, আমি সারাদিন কল্যাণীর সাথেই ছিলাম। বিকেলে আবার বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। বাড়ি ফেরার আগে কল্যাণীকে আগাম নিমন্ত্রন জানিয়ে আসি আমার বিয়েতে আসার জন্য। কল্যাণী ওর গর্ভের ওপরে হাত বুলিয়ে আমার দিকে হেসে বলে, “লাথি মারছে রে। জানিনা তোর বিয়ে কবে, জানিনা যেতে পারবো কিনা, তবে কথা দিচ্ছি যে দীপঙ্কর যাবে।”