অগোচরে তুমি | পর্ব – ৩২

14 Min Read

– কেমন আছো মেহেনূর?
সবাই যখন ডগিরাকে নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই পরিচিত মানুষের ক্ষীণ কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই আঁতকে উঠলো মেহেনূর।বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো দরজার দিকে।অর্ক এসেছে।সবার সাথে যে অর্কও আসতে পারে এটা ওর মাথায়ই আসে নি।ডগিরাকে ঘিরে বসে থাকা মানুষগুলোর দিকে এক পলক তাকালো মেহেনূর।ক্ষুদ্র একটা নিঃশ্বাস ফেলে ঠোঁটের আগায় হাসি টেনে এগোলো দরজার দিকে।ধীর কন্ঠে অর্কের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে বললো,
– আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া,আমি ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?
– ভালো।
নরম গলায় বললো অর্ক।মেহেনূরের গলার স্বর শুনে এগিয়ে আসে রাওনাফ রোশনি।প্রানপ্রিয় বন্ধুকে দেখে আনন্দে আত্মহারা রাওনাফ।বন্ধুকে আলিঙ্গন করে ফিচেল হেসে বললো,
– সবাই মিলে এইভাবে আমাদের সারপ্রাইজ দিয়ে দিবি ভাবতেই পারি নি।সবাই তো অনেকক্ষণ আগেই চলে এসেছে তাহলে তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি?
– কোথায় ছিল আবার।ওর তো একটাই কাজ।
অয়ন মুখে বিরক্তির চাপ ফেলে কথাটা বললো।দিহাদ চাপা স্বরে অয়নকে কিছু একটা বললো ওর মুখ বন্ধ করার জন্য।তবে সেটা বাকিদের কর্ণধারে এসে পৌঁছায় নি।অয়ন মুখ ভেংচি দিয়ে অর্কের পাশ কাটিয়ে চলে যায়।অয়নের বলা কথার মানে বুঝতে না পেরে রাওনাফ ভ্রুকুটি করে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।অয়ন চলে যেতেই রাওনাফ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাস করলো,
– মানে?অয়ন কি বললো এটা?
– আরে ছাড় তো ওর কথা।আসলে আমার একটা কাজ ছিল তাই আসতে একটু দেরি হয়েছে।
স্মিত হেসে বললো অর্ক।রাওনাফও মেনে নিলো ওর কথা।যখন অর্ক নিজ থেকে বলবে সেদিনই না হয় রাওনাফ সবটা শুনবে,তার আগে ও কিছু জানতে চাইবে না।তবে রাওনাফ একটা জিনিস খেয়াল করেছে।অর্ক মাঝেমধ্যেই লাপাত্তা হয়ে যেত,যায়।কোথায় যায় কি করে না করে কিছুই বুঝতে পারে না ও।অবশ্য অর্ককে কোনোদিন সেকথা জিজ্ঞাসও করে নি।রাওনাফের মাথায় যখন এই কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন আবার ভাবে,যাইহোক এতটা পথ জার্নি করে এসেছে ও অবশ্যই অনেক ক্লান্ত।এখন ওর খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রামের প্রয়োজন।
রাওনাফ অর্ককে নিয়ে গেস্টরুমে চলে যায়।অন্যরা এসে ফ্রেশ হয়ে সবেই নিচে এসেছিল।এর মধ্যেই অর্কের আগমন ঘটলো।আর সবাই ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল।সারপ্রাইজ দিবে বলে কাউকে বলে নি যে,ওদের সাথে অর্কও কানাডায় এসেছে।অর্ক চলে যেতেই সবাই আবার ডগিরাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।অর্ক ফ্রেশ হয়ে আসলে সবাই একসাথেই খাবে।
_______________________
– আচ্ছা মেহেনূর আপু,জাস্টিন ট্রুডোর সাথে আমি যদি একটা সেলফি তুলতে চাই তাহলে আমাকে কোথায় যেতে হবে।আই মিন তাকে কোথায় পাওয়া যাবে?
পুরো ডাইনিং টেবিলে জুড়ে পিনপতন নীরবতা।মাঝেমধ্যে চামচ আর পানির গ্লাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।রাতের শেষভাগে খাওয়ার মধ্যেই তিন্নির এহেন কথা শুনে সেই নীরবতা ভেঙে ফিক করে হেসে উঠলো ওহি।সবাই খাওয়া বন্ধ করে তিন্নির দিকে তাকায়।ওহি ওর হাসি বন্ধ করে সিরিয়াস হয়ে বললো,
– জাস্টিন ট্রুডোর সাথে দেখা করতে চাও সেলফি তুলছে আগেও বলবে না।এখানে আসার সময়ই তো উনার সাথে দেখা হলো আমার!
তিন্নি ওহির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে ওর দিকে আড়ঁচোখে তাকিয়ে আছে।তবে ভ্রুকুটি করে।এই ছেলেটাকে একদম সহ্য হয় না ওর।তনিমার বিয়ে ঠিক হওয়া অনধি ঠিক ছিল।কিন্তু বিয়ের দিন থেকে আজ পর্যন্ত ওহির সাথে হ্যাঁ না ছাড়া ভালো করে একটা কথাও বলে নি ও।অবশ্য ওহি কথা বলতে চায়।সুযোগ পেলেই বেয়ান বেয়ান বলে গল্প জুড়ে দিতে চায়।কিন্তু তিন্নি টু শব্দটাও করে না।এক রকম পাত্তাই দেয় না ওহিকে।এর কারণটা অবশ্য ওহি-ই।শান্ত আর তনিমার বিয়ের দিন গেইট ধরা থেকে শুরু করে বরের জুতো লুকানো,সব কিছু ভন্ডুল করে দিয়েছিল ওহি।গেইটে দাবীকৃত টাকা না দেওয়া, বরের জুতো ফেরত দেওয়া পর পাওনা টাকা না দেওয়া,বরের হাত ধুইয়ে দেওয়ার পর যতেষ্ট টাকা না দেওয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ওহির সাথে তুমুল ঝগড়া করে।সবকিছুতেই বাগড়া দেয় ওহি।ফলে তিন্নি ভীষণ রেগে যায় ওহির উপর। যদিও ওহি বেয়াই হিসেবেই মজা করে ওইগুলো করেছিল।মানে সাধারণত বিয়েতে বর পক্ষ আর কনে পক্ষের মধ্যে যা হয় আরকি।কিন্তু পরে সব টাকা দিয়ে দেয় ওহি।কিন্তু তিন্নি সেটা নেয় নি।উল্টো আরো টাকা এড করে ওহিকে ফেরত দেয়।ওহি সেইদিনই বুঝতে পেরেছিল এই মেয়ে আস্ত একটা ধানিলঙ্কা।বয়স কম হলেও ঝাঁঝ আছে ষোল আনাই।তারপরেও ওহি বার বার ওর পিছনে লাগে।কখনো আসলেই ভালো ভাবে কথা বলতে চায় আবার কখনো ইচ্ছে করেই তিন্নিকে রাগাতে যায়।কিন্তু তিন্নি বেশিই জেদি।একবার যখন কথা বলবে না ঠিক করে নিয়েছে তো বলবেই না।যার ফলে ওহির কোনো কথায়ই তিন্নি রিয়েক্ট করে না।
তবে এমনটা নয় যে ওহি গায়ে পরা স্বভাবের ছেলে,হ্যাংলামো করে।ছেলে কিন্তু দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ।স্কুল লাইফ থেকে এখন অবধি কতগুলো প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ও নিজেও জানে না।এতদিন প্রেম ভালোবাসায় এত ইন্টারেস্ট না থাকলেও তিন্নির সামনে সব কিছুই যেন তুচ্ছ মনে হয় ওর।কখনো সামনে পড়লে তিন্নির পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া, রাগী চোখে তাকানো,সুযোগ পেলেই মুখ ভেংচি দেওয়া,ওর বাচ্চামো,কথায় কথায় নাক টেনে কান্না করা,কারণে অকারণে ইগনোর করা এই সবকিছুই ওহির ভালো লাগে।তিন্নির মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠে।ইদানীং ওহি ওর উপরই বেশ অবাক হচ্ছে।আগে কখনো তিন্নিকে দেখে বা ওর কথা ওইভাবে চিন্তা করে নি।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওর মন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।কোথাও গিয়ে ওর মন আটকে যাচ্ছে।
এইমুহূর্তে তিন্নি ওহির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওহির মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও সত্যি বলছে!মানে হাবভাবে বুঝা যাচ্ছে।কিন্তু তিন্নি এটা বুঝতে পারছে না ঔ তো সবার সাথেই এসেছে তাহলে জাস্টিন ট্রুডোকে ও কেন দেখতে পেলো না?প্রশ্নটা যখন তিন্নির মাথায় খুব তীব্র বেগে ঘুর পাক খাচ্ছে তখন তনিমা অবাক হয়ে বললো,
– ভাইয়া তুমি এইসব কি বলছো?কই আমরা কেউ তো দেখি নি।
– ভাবী তুমিও?জাস্টিন ট্রুডো…জাস্টিন ট্রুডো… কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো বুঝতে পারছো তুমি?সবকিছুরই একটা নিয়ম-নীতি থাকে,প্রক্রিয়া থাকে।কেউ চাইলে একটি দেশের প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে পারে না।তোমার বোনের কথায় যে কেউই ভাববে, জাস্টিন ট্রুডো সবসময়ই পথেঘাটে ঘুরে বেড়ান গেলাম আর দেখা হয়ে গেলো!যত্তসব আজগুবি কথাবার্তা।
ওহির কথায় সবাই একস্বরে হেসে উঠলো।শুধু মেহেনূর আর তিন্নি ব্যাতিত।মেহেনূর কিছু বলার জন্য তিন্নি হাত ধরতে চায় কিন্তু তিন্নি সেই সুযোগ না দিয়ে হাত সড়িয়ে নেয়।ছলছল চোখে এক পলক মেহেনূরের দিকে তাকিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে চলে যায়।তিন্নি চলে যেতেই সবাই অবাক হয়ে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।লজ্জা পেয়েছে ভেবে আরেক দফায় হেসে উঠলো সবাই।তবে এবার ওহিও মলিন মুখে বসে আছে।আগের মতো সবার সাথে তাল মেলায় নি।মেহেনূর হতাশ নয়নে তাকায় ওহির দিকে।আর কেউ না বুঝলেও ঠিক মেহেনূর বুঝতে পেরেছে ওহির বলা শেষ বাক্যটায় তিন্নি বেশ লজ্জা পেয়েছে সাথে কষ্টও পেয়েছে।মেহেনূরের চাহনি দেখে ওহি মাথা নিচু করে নেয়।ওর ভুলটা ঠিক কোথায়?সেটা এতক্ষণে বুঝে গেছে ও।কথাটা ও বলতে চায় নি।মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে।মেহেনূর সবার দিকে চোখ বুলিয়ে ক্ষুদ্র একটা শ্বাস ফেলে ধীর কণ্ঠে বললো,
– অন্যান্য দেশের প্রেসিডেন্টের মতো সিকিউরিটি নিয়ে জাস্টিন ট্রুডোকে চলাফেরা করতে হয় না।উনার সান্নিধ্য খুব সহজেই পাওয়া যায়।তিন্নির কথায় ভুল কিছু ছিল না।ও যতটুকু জেনেছে,দেখেছে বা শুনেছে ততটুকু তথ্যের ভিত্তিতেই কথাটা জিজ্ঞাস করেছে।শুধু শুধু মেয়েটা কষ্ট দিলে সবাই মিলে।
– মেহেনূর তুমি ভুল ভাবছো তিন্নির কথায় আমরা হাসি নি!ওহির কথায় হেসেছি!ও বলল না, জাস্টিন ট্রুডোর সাথে ওর দেখা হয়েছে?
ক্ষীণ স্বরে বললো তনিমা।মেহেনূর ফিচেল হেসে শীতল কণ্ঠে বললো,
– আমি বুঝতে পেরেছি।কিন্তু তিন্নি তো ছোট মানুষ।ও কি আর এতো বুঝে?আর ও কিভাবে বুঝতে তোমরা কেন হাসছো।শুধু ও না ওর জায়গায় অন্যকেউ হলেও এটাই ভাবতো যে, সবাই ওর উপরই হাসছে।যাইহোক, সবাই গিয়ে এখন রেস্ট নাও,ঘুমাও।কাল সকালে দেখা হচ্ছে।যাই আমি গিয়ে দেখি তিন্নি কোথায় গেলো।
_______________________
মেহেনূর ওর রুমে এসে পুরো রুমে চোখ বুলালো কিন্তু কোথাও তিন্নি নেই।পরক্ষণেই তিন্নিকে খুঁজে বের করলো ওর ব্যালকনিতে।তিন্নি ডগিরাকে কোলে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে আছে।মেহেনূর দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে ধীর কন্ঠে ডাকলো ,
– তিন্নি?
মেহেনূরের কন্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই কিঞ্চিৎ চমকে উঠলো তিন্নি।পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয়।পেছনে না ফিরেই ক্ষীণ স্বরে বললো,
– আমি কি ভুল কিছু বলেছিলাম আপু?
মেহেনূর গিয়ে তিন্নির পাশে বসলো।তিন্নির অবুঝ চাহনি দেখে স্মিত হাসলো মেহেনূর।তিন্নির গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বললো,
– না তো।তুমি এতো কোনো ভুল বলো নি।বরং ওরা ভুল বুঝেছে।আমি সবাইকে বকেও দিয়েছে।
মেহেনূরের কথার প্রত্যুত্তরে তিন্নি কিছু না বলে মৃদু হাসলো।তিন্নি জানে মেহেনূর ওদেরকে বকা না দিলেও ওর স্বপক্ষে কিছু বলে এসেছে।মেহেনূর তিন্নির দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। তিন্নির এই গুণ টা ওর খুব ভালো লাগে।তিন্নি অনেকটা ওর মতোই চুপচাপ আর ঠান্ডা মেজাজের।অবশ্য ভেতরে ভেতরে যে রাগ অভিমান পুষে রাখে না তা কিন্তু নয়।তবে সবসময় রাগ দেখায় না।তবে এই টাইপের মানুষগুলোর অভিমান অভিযোগ গুলো সহজে কেউ ধরতে পারে না,বুঝতেই পারে না।হয়তো বোঝার চেষ্টা করে না বলেই!মেহেনূর মুখের হাসি বজায় রেখেই বললো,
– তোমার কথা শুনে কেউ হাসে নি,হেসেছে ওহির কথা শুনে।তুমি তাঁদেরকে ভুল বুঝো না কেমন।এখন ঘুমোতে চলো।
ঘুমানোর কথা শুনেই ডগিরা ঘেউঘেউ করে উঠলো।এক লাফে তিন্নির কোল থেকে নেমে মেহেনূরের কোলে উঠে পড়ে।মেহেনূর দু’হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমো দিতেই ডগিরা ফের উচ্চস্বরে ঘেউঘেউ করে উঠলো।মেহেনূর ভ্রুকুটি করে তাকায় ডগিরার দিকে।বুঝার চেষ্টা করছে ডগিরা কি বলতে চাইছে।ডগিরা তিন্নির দিকে তাকিয়ে আবার ঘেউঘেউ করে উঠতেই তিন্নি একটু হকচকিয়ে যায়।কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো মেহেনূরের দিকে।মেহেনূর ফিক করে হেসে দেয়।তিন্নি কিছু বুঝতে না পেরে তখনও মেহেনূরের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহেনূর ডগিরার কান ধরে বললো,
– ওরে দুষ্টু!এতক্ষণ তো দিব্যি ওর কোলে উঠে বসে ছিলি।এখন যেই ঘুমানোর কথা বললাম ওমনি ওর হিংসে হতে লাগলো না!
তিন্নি মেহেনূরের কথা শুনে মুখ টিপে হাসছে।ডগিরা মেহেনূরের বুকে মাথা গুঁজে ক্ষীণ শব্দ করছে।যার অর্থ মেহেনূরের সাথে ও ঘুমাবে তিন্নি না।মেহেনূর আলতো হাতে ডগিরার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলে,
– তিন্নি আপু তো ওকে কত্ত আদর করে।আসার পর থেকে তো তাঁর কোলে চড়ে বেড়াচ্ছিস তাহলে এখন বেড শেয়ার করতে এমন কার্পণ্য করছিস কেন তুই?তুই তো আগে এমন ছিলি না।
ডগিরা কোনো শব্দ করছে না দেখে মেহেনূর ডগিরার মুখটা উপরে তোলে দেখে ডগিরার চোখে পানি।ওর চোখে পানি দেখে মেহেনূর ফিচেল হেসে বললো,
– কারোর জায়গা কেউ নিতে পারে না ডগি।আমি তোকে আমার মতো করে ভালোবাসি,যেমনটা তুই বাসিস।তোর জায়গায় আমি অন্য কাউকে কখনও চিন্তা করতে পারি বল?তুই যেমন আছিস সারাজীবন আমার কাছে তেমনই থাকবি।আচ্ছা কথা দিচ্ছি আজকের পর থেকে তোকে একা রেখে আর কোথাও যাবো না,প্রমিজ।
মেহেনূরের কথা শেষ হতেই ডগিরা লাফিয়ে উঠলো।মেহেনূরের মুখ চেটে দিয়ে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটালো।অন্যদিকে এই দুজনের মধ্যে চলা কথোপকথনের কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তিন্নি।ওকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেহেনূর বললো,
– বাংলাদেশ থেকে আসার পর থেকেই ও এইরকম করে।অনেকদিন আমাকে কাছে না পেয়ে ভেবেছিল হয়তো আমি ওকে আর ভালোবাসি না,তাই তো ওকে রেখে চলে গিয়ে ছিলাম।বাংলাদেশে যাওয়ার আগে বাসায় ফিরতে আমার যদি দেরি হতো তখন একা খেয়ে ভাইয়া-ভাবীর বা অন্যকারো কোলে ঘুমিয়ে পড়তো।কিন্তু এখন আমি না আসা পর্যন্ত ঘুমায় না।কারো হাতে খায়ও না।
– তুমি ডগিরার সব কথা বুঝতে পারো না আপু?
– বুঝবো না কেন।গত আট বছর ধরে আমার সাথে সাথে ও।ওর বয়স যখন তিন মাস তখন ভাইয়া ওকে এনে দিয়েছিল।আচ্ছা চলো এখন ঘুমাতে যাই।
– তোমার ঘরে ডগিরা আমাকে ঘুমাতে দেবে?
তিন্নি ডগিরার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে কথাটা বললো।মেহেনূর উঁচু স্বরে বললো,
– ডগিরাকেই না হয় জিজ্ঞাস করো।
– ডগিরা তুমি কি আমাকে অনুমতি দিবে?বড্ড ঘুম পেয়েছে আমার।এখন হয়তো এখানেই ঘুমিয়ে পড়বো,এই ব্যালকনিতেই!
ডগিরা মেহেনূর কোল থেকে নেমে আমার তিন্নির কোলে উঠে পড়ে।ঘেউঘেউ করে ঘনঘন লেজ নাড়াচ্ছে।অর্থাৎ তাঁর কোনো আপত্তি নেই।তিন্নি হেসে আলতোভাবে ডগিরাকে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ পরে ডগিরাকে কোলে তোলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো মেহেনূর সাথে তিন্নিও।পা বাড়ালো রুমের দিকে।কিন্তু দরজার কাছে আসতেই থমকে দাঁড়ায় দুজনেই।একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ফের তাকায় সামনের দিকে।মেহেনূরের বিছানার ঠিক মাঝখানে আসন পেতে থমথমে মুখ করে বসে আছে তনিমা।তিন্নি মেহেনূরকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– আপু আর ভাইয়ার মধ্যে এখনো তেমন কিছু……
– আমি সবটা জানি তিন্নি ।
তিন্নিকে বলতে না দিয়ে জোর গলায় বললো মেহেনূর।মেহেনূর ফের বললো,
– কিন্তু আমি তনিমা আপুকে নিয়ে ভাবছি না।
– তাহলে?
মেহেনূর তিন্নিকে চোখের ইশারায় ডগিরাকে দেখিয়ে বলে,
– এখন ওকে কি বলে সামলাবো!
ডগিরা একবার বিছানার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার মেহেনূরের দিকে।বেচারা ডগিরা কিছুই বুঝতে পারছে না।তবে এতটুকু ঠিকই বুঝতে পারছে এই দুই বোন আজ এই বিছানাতেই ঘুমাবে।ডগিরা মলিন মুখে মেহেনূরের দিকে তাকাতেই মেহেনূর আর তিন্নি দুজনই ফিক করে হেসে দেয়।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।