ক্ষণে ক্ষণেই আতশবাজির জ্বলকানিতে আলোকিত হয়ে উঠছে টরেন্টো শহর।শহরের অলিগলির পথ থেকে শুরু করে নগর প্যাচানো লেকের পাড় রঙবেরঙের আলোয় মুখরিত।রাস্তায় বড় বড় বিলবোর্ড গুলোয় আজ রকস্টার কিরণের ছবি।প্রত্যেকটা বিলবোর্ড এর পাশে স্ট্রীট কন্সার্ট করছে কিরণ প্রেমী তরুণ তরুণীরা।ফলে লোক সমাগমের ভীড় বেশ জোড়ালো।আজকে হঠাৎ এতো মানুষের উল্লাসের মেতে উঠা,আনন্দে আপ্লুত হওয়ার কারণটা অবশ্য একটু স্পেশালই।আজ কিরণ চৌধুরীর জন্মদিন।কিরণ প্রেমীরা তাঁদের স্পেশাল মানুষটার স্পেশাল এই দিনটিকে একটু স্পেশাল ভাবে উদযাপন করতেই এতো এতো আয়োজন করছে।
ডগিরা এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে।লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে মেহেনূর।দৃষ্টি স্থির অদূরের ওই জমকালো শহরে।আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ,লেকের স্বচ্ছ পানিতে চাঁদের আলো পড়ে চিলিক দিয়ে উঠছে বারে বারে।বাতাসে তোড়ে যখন লেকের পানিতে ঢেউ উঠে তখন মনে হয় আকাশের ওই চাঁদ হতে এক টুকরো চাঁদ হয়তো ওই লেকের পানিতে এসে পড়েছে।অশান্ত জলের সাথে অভিমান করে ঢেউয়ের ভাঁজে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।প্রকৃতি এই অদ্ভুত লীলা খেলাই নজরবন্ধি করছে মেহেনূর।মেহেনূর যেখানে আছে ওই এলাকাটা কটেজ কান্ট্রি বা মুসকোকা নামে পরিচিত।এই অঞ্চলটি টরেন্টোর এক ঘন্টা উত্তরে অবস্থিত এবং লেক মুসকোকা এবং অন্টারিওর অন্যান্য জনপ্রিয় হ্রদের চারপাশে কেন্দ্রীভূত।এই জায়গাটা অনেক বেশিই জনপ্রিয়।যদিও অন্টারিওর অনেকগুলি গন্তব্য খুঁজে পাওয়া যাবে যা অনেক সুন্দর।তবুও টরেন্টোর সাথে এই অঞ্চলের সান্নিধ্যই এটিকে এতো বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে।হ্রদগুলির চারদিকে রয়েছে উচ্চ-প্রান্তের কটেজ এবং গ্রীষ্মের বাড়িগুলি যা টরেন্টনিয়ানদের মালিকানাধীন।উইকএন্ডের শেষের দিকে, টরেন্টো থেকে শান্ত গ্রীষ্মের যাত্রার জন্য লোকেরা পালাতে পালিয়ে যাওয়ার কারণে কুটির দেশের হাইওয়েগুলি যানজটে ভরা থাকে।এই এলাকাটি প্রচুর বিলাসবহুল কটেজে আর রিসোর্টে পূর্ণ।এটি মানুষের দর্শনীয় স্থানগুলোর জন্য একটি পছন্দের জায়গা।কুটির দেশের প্রাথমিক শহর হ’ল গ্র্যাভেনহার্স্ট, যা মুসকোকার লেকের তীরে অবস্থিত। এখান থেকে দর্শনার্থীরা হ্রদে শর্ট ক্রুজের জন্য স্টিমশিপে যেতে পারেন।এই জায়গাটা মেহেনূরের খুব পছন্দের।
মেহেনূরের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ডগিরা একটু পর পর ওর কোলে উঠে ওর মুখপানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ।মেহেনূর যখন বরাবরের মতোই চুপ,তখন ডগিরা এসে মেহেনূরের গালে নিজের গাল ঘষে অস্পষ্ট স্বরে ওর মনের উৎকন্ঠা,অস্থিরতা প্রকাশ করলো।মেহেনূর ঘনঘন চোখের পলক ফেলছে কিন্তু চুপ।অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও যখন নিজের মালিকের কোনো আদর পেলো না তখন ডগিরা নিজের মুখ নামিয়ে মেহেনূরের কোল থেকে নেমে যায়।চলে আসার জন্য উদ্যত হতেই মেহেনূর আচমকায় ডগিরাকে জড়িয়ে ধরে।ডগিরা মেহেনূরের বন্ধন থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য ছটফট করছে।এক পর্যায়ে পরাস্ত হয়ে ও শান্ত হয়ে যায়।তবে মেহেনূরের দিকে তাকায় নি।মেহেনূর ডগিরাকে ওর পাশে বসিয়ে দেয়।যেমন করে ও বসে আছে ঠিক তেমন করে।ডগিরাকে এক হাতে জড়িয়ে সামনের পা দুটো আলতো হাতে ধরে রেখেছে।ক্ষণকাল পরেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ধীর কন্ঠে বলল,
– ডগিরা,তুই কি কখনো খেয়াল করেছিস?মাঝেমধ্যে সন্ধ্যার এই সময়টা’তে আমার কেমন জানি অদ্ভুত টাইপের মন খারাপ হয়!তখন চারদিকের সব কিছুতেই কেমন যেন নাই নাই লাগে!দুনিয়ার কোনো কিছুই তখন ভালো না।হঠাৎ হঠাৎ বুকটা কেমন যেন ধড়ফড় করে!মনে হয় এই মহাশূন্যে আমি হয়তো ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছি।এই ব্যাপারটা অদ্ভুত,কিন্তু সত্য!এই যেমন ধর এখন,একটু আগ অবধিও দিব্যি ভালো ছিলাম।যেই সন্ধ্যা নামলো ওমনি মনের কোণেও আঁধার নেমে এলো।দেখ এই শহরের মানুষগুলোর কতশত আয়োজন।তবু মনে শান্তি মিলছে না,স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পাচ্ছি না।
এতটুকু বলে মেহেনূর এক পলক ডগিরার দিকে তাকিয়ে ফের বললো,
– আমার এতো চাকচিক্যময় জীবন চাই না।কি হবে এই চাকচিক্যে ঘেরা জীবন দিয়ে?যদি আমার মনে শান্তিই না থাকে!ইদানীং নিজেকে বড্ড একা লাগে রে।কখনো কখনো মন বলে,এই মহাশূন্যে এমন একজন মানুষ থাকুক,যদি কখনো বিধ্বস্ত হয়ে ভেঙে পড়ি তখন হতাশার চরমে ডুবে গিয়ে তাঁকে একটাবার জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারলেই মনের ভেতর প্রশান্তি অনুভব হবে।যাকে জড়িয়ে ধরলে শতকষ্ট ভুলে গিয়ে মনে প্রাণে আসবে সজীবতা,চোখে মুখে ফোঁটে উঠবে বেঁচে থাকার আজন্ম সাধ।এমন একজন মানুষ থাকুক যার কাছে সবটা বলা যাবে অবলীলায়।তাঁকে কত কথা জানানোর বাকী।প্রায়ই আমার হৃদ কুটিরে দলা পাকিয়ে আসে নিঃসঙ্গতার গল্পগুলো।তখন খুব করে বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু বলা হয়ে উঠে না আর!এমন একটা মানুষ থাকুক না,যে আমার চোখের শীতল চাহনি দেখেই বুঝে নিবে বুকের ভেতরটার নিঃঙ্গতার শূন্যতা,হাহাকার!একটা মানুষ থাকুক এই বিধ্বস্ত ধরনীর এক টুকরো জমিনে দাঁড়িয়ে যে কিনা সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাকে পাওয়ার তীব্র আকুতি জানাবে।একজোড়া হাত মোনাজাতে শুধু আমাকে পাওয়ার জন্যই প্রার্থনা করবে।আমাকে হারানোর শঙ্কায় অশ্রুসিক্ত হবে একজোড়া পবিত্র চোখ।
ডগিরা চুপ করে বসে আছে।মেহেনূরের কথায় ও ব্যথিত হয়,হচ্ছে।শুধু প্রকাশ করতে পারছে না।সেই ছোট থেকে মেহেনূরকে দেখছে ও।মেহেনূরের ভালো লাগার হোক বা খারাপ লাগার সেই সব অনুভূতিগুলো ওর সাথেই শেয়ার করে।ওর মনের অব্যক্ত কথাগুলো বলে ওর মনটাকে খানিকটা হালকা করে।আজ আবারও মেহেনূর ওর মনের সুপ্ত বাসনাগুলো উগলে দিচ্ছে ওর সামনে।হয়তো এই কথাগুলো প্রতিনিয়তই লালন করে যাচ্ছে খুব যত্ন করে।
ডগিরাকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেহেনূর স্মিত হেসে শীতল কন্ঠে বললো,
– এটা কিন্তু আমার স্বপ্ন নয়,আমি সত্যিই চাই রে!শুধু ভালোবাসার জন্য নয়,কেউ একজন থাকুক যে আমার এই পুরো আমিটার মায়ায় পড়বে।যে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমার সাথেই থাকবে।ছন্নছাড়া আর এলোমেলো এই আমিটাকে গভীর যত্নে আগলে রাখবে তাঁর বুকের মাঝে।আমি চাই,আজীবন পথচলার সঙ্গী হয়ে কেউ একজন আসুক আমার জীবনে।
ডগিরা মেহেনূরের গায়ে হেলান দিয়ে শান্ত হয়ে বসে আছে।একদম কোনো নড়াচড়া করছে না।হয়তো মেহেনূরের বলা প্রত্যেকটা কথা খুব সূক্ষ্মভাবে অনুধাবন করছে ও।একটা মেয়ে সবাইকে শুধু দিয়েই যায় বিনিময়ে মুখ ফুটে কিছু চায় না।অবশ্য না চাইতেই অনেক কিছু ওর ভাই ওকে দিয়েছে,দেয়।কিন্তু তাই বলে সব খবর রাখতে পারবে এমনটা তো নয়।কারোর মনের খবর কি কেউ জানে?সবাই কি সবার মন পড়তে পারে?
ডগিরাকে এতটা চুপচাপ দেখে মেহেনূর মাথা কাত করে আঁড়চোখে ডগিরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে নিয়ে ধীর কন্ঠে আবার বললো,
– আচ্ছা ডগিরা,আজকের রাতটা যদি এখানেই কাটিয়ে দেই তাহলে কেমন হয় বল তো?
মেহেনূরের কথাটা বলতে দেরি ডগিরার ঘেউঘেউ করে উঠতে দেরি নেই।মেহেনূর বাঁকা চোখে তাকায় ডগিরার দিকে।ওর তাকানোর ভঙ্গিমাটা এমন,ডগিরা যে ওর কথার প্রত্যুত্তরে এইভাবে রিয়েক্ট করবে সেটা যেন ও জানতোই!তাও নিজের মনকে প্রশ্রয় দিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেললো।আজ কেন যেন এখান থেকে যেতে মন চাইছে না ওর।মেহেনূর একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় অন্যপাশে।
আশানুরূপ কোনো উত্তর না পেয়ে ডগিরা আবার ঘেউঘেউ করে উঠলো।এবার বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ডগিরার দিকে তাকালো মেহেনূর।মাঝে মাঝে ডগিরার উপর খুব রাগ হয় ওর।ডগিরার এই অভিভাবকপনা খরব দারি আচারণে মনে হয়,শুধু ও-ই সবকিছু জানে বুঝে!মেহেনূর কিছু জানে না।মেহেনূর রুদ্ধশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়।ডগিরাকে উদ্দেশ্য করে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
– এইভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?আমাকে একটু নিজের মতো করে থাকতে দিবি না বলে তো ঠিক করেই নিয়েছিস!চল তাহলে।
কথাটা শেষ করেই মেহেনূর হাঁটা শুরু করে।মেহেনূরের কথাটায় নমনীয়তা না থাকলেও ডগিরার জন্য ওই একটা শব্দই হাজার কথার মানে।”চল” মানে মেয়ের সুমতি হয়েছে।মেহেনূর কিছুটা রাগ নিয়ে এলোমেলো পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে।মেহেনূরের পিছন পিছন যাচ্ছে ডগিরা।দেখে মনে হচ্ছে তাঁকে কিরণ চৌধুরীর পার্সোনাল বডিগার্ড হিসেবে রাখা হয়েছে আর এই মুহূর্তে সে তাঁর দায়িত্ব পালন করছে।
_________________
মা বাবা কাছে যাওয়া জন্য সকাল হতেই হালকা নাস্তা করে মেহেনূরদের বাড়ি থেকে চলে আসে দিহাদ আর কলি।সাথে তনিমা,শান্ত,অয়ন আর ওহিও এসেছে।তিন্নি আসে নি।ও মেহেনূরদের বাসায়ই রয়ে গেছে।যেখানে ওহি যাবে সেখানে ওর যাওয়া প্রশ্নই আসে না।কাল রাতের পরে তো একদমই না।দিহাদের বাসায় সবাক নিজেদের মতো আলাপ আলোচনা করছে।ওহি তনিমার ফোন নিয়ে গেইম খেলছে।সারাক্ষণই ফোনে গেইমস খেলে বলে শান্ত ওর ফোন নিয়ে নিয়েছে।তনিমাই ওর ফোনটা ওহিকে দিয়েছে গেইমস খেলার জন্য।সবার থেকে একটু দূরে বসে আছে ওহি।হঠাৎ ফেইসবুক থেকে একটা নোটিফিকেশন আসতেই বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো ওহি।তিন্নির আইডি থেকে নোটিফিকেশন এসেছে দেখে ওহির কপালের ভাঁজ দ্বিগুণ হয়ে যায়।কৌতূহলবশত নোটিফিকেশনে ক্লিক করতেই ওহির চক্ষু চড়াকগাছ।ওহি হা করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে।জাস্টিন ট্রুডোর সাথে তিন্নির ছবি?বিশ্বাসই হচ্ছে না ওহির।গুনেগুনে কুঁড়িখানা ছবি আপলোড দিয়েছে।লোকেশনটা খুব পরিচিত লাগছে।তবে বেশ জাঁকজমকভাবে সাজানো বলে ঠিক চিনতে পারছে না।ওহি সবগুলো ছবি এক এক করে চেক করতে লাগলো।না তাও চেনতে পারছে না।পরমুহূর্তেই বার্থডে গার্ল ক্যাপশনে আরেকটা নোটিফিকেশন আসে সেইম আইডি থেকেই।নোটিফিকেশনে ক্লিক করতেই মেহেনূরের হাস্য উজ্জ্বল মুখটা ভেসে উঠলো।দ্বিতীয় ছবি আসতেই চমকে উঠলো ওহি।মেহেনূর কেক কাটছে!অন্য আরেকটি ছবিতে জাস্টিন ট্রুডো মেহেনূরকে কেক খাওয়াচ্ছে।ছবিগুলো দেখা মাত্রই ওহি বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,
– আজ মেহেনূর আপুর জন্মদিন?
ওহির কথা শুনে সবাই ভ্রুকুটি করে তাকায় ওর দিকে।ওহি ওর হাতে থাকা ফোনটা সবার দিকে ঘুরিয়ে ফের বললো,
– দেখো স্বপরিবারে জাস্টিন ট্রুডো এসেছে মেহেনূর আপুদের বাসায়।
– ভাই তুমি এইসব কি বলছো?মেহেনূরের জন্মদিন আর ও আমাদের বলবে না সেটা কখনো হয় নাকি।
– আরে ভাবি আমি সত্যি বলছি।বিশ্বাস না হলে দেখো।তোমার বোন শুধু জাস্টিন ট্রুডোর সাথেই বিশটা ছবি আপলোড করেছে।আর বাকি গুলো মেহেনূর আপুর কেক কাটার মুহূর্তের।এই যে দেখো।
ওহি এগিয়ে এসে তনিমার হাতে ফোনটা দেয়।সবাই হতভম্ব হয়ে গেছে।আজ মেহেনূরের জন্মদিন?অথচ ওরা কেউই জানে না?অবশ্য না জানাটাই স্বাভাবিক।কেউ তো ওর সম্পর্কে সেইভাবে জানতেই চায় নি কখনো।মেয়েটার কাছ থেকে সবাই শুধু নিয়েই গেলো।বিনিময়ে কিছু দিতে পারে নি।
এইদিকে মেহেনূর নামটা অপরিচিত হলেও মেহেনূরের মুখটা খুব চেনা চেনা লাগছে দিহাদের মা বাবার কাছে।কোথায় যেন দেখেছে।হুট করেই স্মরণে আসে ও তো কিরণ,কিরণ চৌধুরী।কিন্তু সবাই ওকে মেহেনূর কেন ডাকছে তাঁরা সেটাই বুঝতে পারছে না।পরমুহূর্তেই ভাবে হয়তো এটা কিরণই আরেকটা নাম।
_________________
দূরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ক।চোখে মুখে বিস্ময়।মিনিট তিনেক আগেই বাসায় ফিরেছে ও।আসার পর থেকেই ওইভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।আজ মেহেনূরও জন্মদিন এটা জানে না বলে ও অবাক হচ্ছে না।অবাক হচ্ছে জাস্টিন ট্রুডোকে দেখে।কিভাবে?মেহেনূরের সাথে এমন কি সম্পর্ক আছে যে ওর বার্থডে সেলিব্রেশনে শামিল হয়েছেন স্বয়ং জাস্টিন ট্রুডো।এই মেয়েটা ভারী অদ্ভুত!নিমিষেই খোলস পাল্টে ফেলতে পারে।যেখানেই যায় সেখানেই সবার মন জয় করে নেয় এক্কেবারে।আজকে মেহেনূরের বার্থডে কেউ তো ওকে বলেও নি অবধি।আর এইটুকু সময়ের মধ্যে এত আয়োজন কে করলো?কিভাবে সম্ভব?রাওনাফ তো কানাডাতেই নেই।বিকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ও তো বাড়িতে একটা ফুলের পাঁপড়ি অবধি চোখে পরে নি।আর এখন এই বাড়িটাকে কয়েক হাজার সতেজ ফুলের সমন্বয়ে একটি উদ্যান মনে হচ্ছে।বাহির থেকে মনেই হচ্ছিল না এটা কোনো সাধারণ মানুষের বাড়ি!
অর্ক কথাগুলো ভাবছে আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে প্রত্যেকটা মানুষের গতিবিধি নজরবন্দী করছে সূক্ষ্ণভাবে।পরমুহূর্তেই রোশনিকে দেখতে পেয়ে একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায়।রোশনি এগিয়ে এসে অর্ককে নিয়ে যায় মেহেনূরের কাছে।সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে মেহেনূরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এক টুকরো কেক তুলে দিলো মেহেনূরের মুখে।অর্কের এহেন কান্ডে আর কেউ অবাক না হলেও মেহেনূর বেশ অবাকই হয়েছে।কারণ ঘটনাটি এতটাই দ্রুত হয়েছে যে মেহেনূর কিছু বলার আগেই অর্ক ওর মুখে কেক পুরে দিয়েছে।মেহেনূর হা করে তাকিয়ে আছে অর্কের দিকে।অর্ক ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাস করলো,”কি?”মেহেনূরের মুখ ভর্তি কেক ফলে কথা বলতে পারছে না।অর্ক মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়।
এইদিকে ওহি সেই কখন থেকে গালে হাত দিয়ে বসে আছে।গভীর ভাবনায় ডুবে আছে ও।ওর এতো ভাবনার কারণ অবশ্যই তিন্নি।সকাল থেকে দেখছে ও,আজ তিন্নি একটা বারও ওর দিকে ভালো করে তাকায়ও নি অবধি।যতটা পারছে দূরত্ব রেখে চলাফেরা করছে। হয়তো কাল রাতের ব্যবহারের জন্য কষ্ট পেয়েছিল।তাই ওকে ইগনোর করছে।
– তিন্নি তো জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ছবি তুলে তোমায় দেখিয়ে দিলো।
অয়নের কথায় ওহির ভাবনার সুতো ছিড়ে।স্মিত হেসে বললো,
– তাই তো দেখছি।আচ্ছা ভাইয়া,জাস্টিন ট্রুডো এখানে কিভাবে আসলো সেটাই তো বুঝতে পারছি না।মেহেনূর আপু বা এই বাড়িতে স্পেশাল এমন কি আছে যে,জাস্টিন ট্রুডোকে পার্সোনালি ইনভাইট করা হয়েছে আর উনি চলেও আসলেন?
– জাস্টিন ট্রুডো চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলতে শুনলাম,তাঁর মেয়ে নাকি বায়না ধরে তাঁকে এখানে নিয়ে এসেছে।মেহেনূর বা ওর পরিবারের কেউ জানতোই না তিনি আসবেন।
– তারপর?
– তাঁকে শুধু এতটুকুই বলতে শুনেছি।
– ভাইয়া এই ব্যাপারটা আপনার কাছে একটু আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছে না?
ওহি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে প্রশ্নটা করল।অয়ন অবাক হয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো,
– আশ্চর্যজনক লাগবে কেন?
– না মানে শুধুমাত্র উনার মেয়ের কথায়…..
– মেহেনূরের কাছ থেকে পরে শুনে নেবে।এখন চলো ওইদিকে যাওয়া যাক।
_________________
সবাই যখন নিজের মতো ব্যস্ত ঠিক তখনই সবার অগোচরে একজন মেহেনূরের ঘরে ঢুকে পরলো।তাঁর জহুরির চোখ দিয়ে পুরো ঘরটা স্ক্যান করছে।তিল পরিমাণ জায়গাও মনে হয় আজ অবশিষ্ট রাখবে না,এমন ভাবেই দৃষ্টি চালাচ্ছে।মিনিট দুয়েক পরেই দরজার বাহিরে কারোর পায়ের আওয়াজ কানে আসতেই থমকে দাঁড়ায়।
চলবে…