অগোচরে তুমি | পর্ব – ৩৪

12 Min Read

এক জোড়া চোখ অস্থির।কপালের ঘাম চোখের পশ্চাৎ বেঁয়ে গড়িয়ে পরছে।দুরুদুরু বুকে শ্বাস ফেলছে খুব সতর্ক ভাবে।কিঞ্চিৎ শব্দ হলেই হয়তো ধরা পরে যাবে,এই ভয়ে।আলমারির খুব কাছে কারোর অস্তিত্ব টের পেয়ে আরেকটি অস্তিত্ব সাবধানে সটানভাবে দাঁড়ায়।দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা দেখে মনে হচ্ছে ফাঁসির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।গলায় দঁড়িটা এমন ভাবে বেঁধে দিয়েছে যে, একটু নড়লেই দঁড়ি আটকে দম বেড়িয়ে যাবে!
কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে লাগতেই ডগিরা ঘেউঘেউ করে উঠলো।আলমারির কাছে পরিচিত পারফিউমের গন্ধ পেতেই ডগিরার এইরূপ প্রতিক্রিয়া।ডগিরার কন্ঠ শুনে বুকে হাত দিয়ে ফোঁস করে দম ছাড়ে অর্ক।বলতে গেলে এতক্ষণ রুদ্ধশ্বাসেই দাঁড়িয়ে ছিল ও।তখন দরজার বাহিরে পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে ভেবেছিল হয়তো মেহেনূর বা অন্যকেউ আসছে।এইমুহূর্তে সবাই যখন নিচে তখন ও একা উপরে চুপিচুপি মেহেনূরের ঘরে ঢুকেছে,একে তো বিনা অনুমতিতে ওমন চুপিসাড়ে এসেছে তারউপর যদি ধরাও পরতো তাহলে ব্যাপারটা খুব বিশ্রী পর্যায়ে চলে যাবে।তাই নিজেকে আড়াল করার জন্য তড়িঘড়ি করে কোথায় গা ঢাকা দিবে বুঝতে পারছিল না।তখন সামনে এই আলমারিটা ছাড়া আর কিছু চোখে পরে নি।সাতপাঁচ না ভেবে হুট করে এই আলমারিতেই ঢুকে পরলো।
অর্ক ঘনঘন শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করছে।আর কিছুক্ষণ এই আলমারির ভেতরে থাকলে দম আটকে এমনিতেই মারা যাবে ও।এইদিকে ডগিরার চিৎকার ক্রমশ বেড়েই চলেছে।ডগিরা যদি এইভাবে চিৎকার করতে থাকে তবে অচিরেই ওর ধরার পরার সম্ভাবনা আছে।অর্ক রাগে চোয়াল শক্ত করে আলমারি থেকে বেরিয়ে আসে।অর্ককে দেখা মাত্রই ডগিরা দ্বিগুণ জোরে ঘেউঘেউ শুরু করে দেয়।এতক্ষণ অবধি ঠিকঠাক থাকলেও এখন ওর চিৎকারে নির্ঘাত সারা বাড়ির মানুষ এখানে এসে উপস্থিত হবে।অর্ক কোনো কিছু চিন্তা না করে ডগিরাকে কোলে নিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো।ডগিরা তাও চুপ হয় না।চিৎকার করেই যাচ্ছে।অর্ক আরো শক্ত করে ওর মুখ চেপে ধরে রেখেছে।দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ডগিরা ওর নখ দিয়ে অর্কের হাতে আঁচড় কাটে। অর্ক রাগে আর বিরক্তিতে ডগিরাকে আলমারির ভেতর রেখে দরজা বন্ধ করে দেয়।যাতে ওর চিৎকার নিচ অবধি আর শোনা না যায়। ডগিরাকে বন্দী করে বিশ্বজয়ের হাসি টেনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়াতেই আলমারির ভেতরে কেমন একটা শব্দ হতেই থমকে দাঁড়ায় অর্ক।শব্দ হওয়ার সাথে সাথে ডগিরার চিৎকারও বন্ধ হয়ে যায়।ক্লান্ত হয়ে চুপ করে গেছে ভেবে অর্ক ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।পরমুহূর্তেই অর্কের মনে কয়েকটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে বার বার।আলমারির ভেতর হওয়া শব্দটা কিসের শব্দ ছিল?ডগিরা কোনো আওয়াজ করছে না কেন?ও কি একবার চেক করে দেখবে?
নিজের মনকে সায় দিয়ে অর্ক ফের ঘরের ভেতরে এসে আলমারিটা খুলতেই আঁতকে উঠলো।আলমারির ভেতর ডগিরা নেই!বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে অর্ক।এটা কিভাবে সম্ভব?অর্ক দ্রুত আলমারির ভেতর ঢুকে চারদিকে হাতড়াতে থাকে।কিন্তু না এখানে কোনো ভাঙাচুরাও নেই যেটার মাধ্যমে ডগিরা এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।তাহলে ডগিরা গেল কোথায়?অর্ক আলমারির ভেতর থেকে বের হয়ে আলমারির চারপাশে, ঘরের প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় খুঁজতে থাকে।কিন্তু ডগিরাকে আর পায় না।মাথার চুল উল্টে ধরে পাইচারি করছে অর্ক।নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে ওর। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
পরমুহূর্তেই মেহেনূরের গলার স্বর শুনতে পেয়ে হকচকিয়ে যায় অর্ক।মেহেনূর ডগিরাকে ডাকতে ডাকতে এদিকেই আসছে।এখন মেহেনূরকে কি জবাব দিবে ও?কি বলবে ওকে? ও ডগিরাকে গায়েব করে দিয়েছে!জিভ দিয়ে শুকনো ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে নিয়ে একটা ঢোক গিলে অর্ক।মাথার নিউরনগুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে,মস্তিষ্ক এক্কেবারে ফাঁকা।এইদিকে মেহেনূর প্রায় চলেই এসেছে।এই বুঝি ধরা পরে গেল!এখন ও কোনদিকে যাবে?হায় আল্লাহ তুমি রহম করো।মাটি দুভাগ করে দাও নয়তো উপর থেকে দঁড়ি ফেলো!এই মেয়ে যে ধুরন্ধর!ঠিক বুঝতে পেরে যাবে ডগিরার নাই হওয়ার পিছনে ওর হাত আছে!
– মেহেনূর!
কলির ডাকে দাঁড়িয়ে যায় মেহেনূর।এই সুযোগে অর্ক আবার আলমারির ভেতর ঢুকে পরলো।কলি এগিয়ে এসে ফের বললো,
– কোথায় যাচ্ছো?নিচে সবাই তোমাকে খুঁজছে।
– না মানে কলি আপু,আসলে অনেকক্ষণ ধরে ডগিরাকে দেখছি না তাই এইদিকে খুঁজতে এসেছিলাম।ভেবেছিলাম ও হয়তো আমার রুমে এসেছে।
– ও রুমে থাকলে তোমার ডাকে সাড়া দিতো না?নিচে কোথাও আছে হয়তো।তাই তো কোনো রেসপন্স করছে না।
– তাই হবে হয়তো!আচ্ছা চলো।
মেহেনূররা চলে যেতেই অর্ক রাগে ক্ষোভে আলমারির ভেতরে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারতে থাকে।নিজের কাজে লজ্জিত ও।ডগিরা মেহেনূরের কাছে ঠিক কতটা প্রিয় ও সেটা জানে।এখন যদি ডগিরাকে না পাওয়া যায় তাহলে ও কি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে?নিজের চোখেই ছোট হয়ে যাবে ও।আলমারির ভেতর থেকে বেরুনোর জন্য পা বাড়াতেই আচমকায় আলমারিটা নড়ে উঠতেই চমকে উঠলো অর্ক।হঠাৎ ওর চারদিক থেকে চারটা কাঁচ নিচ থেকে উপরে উঠে আসলো।ও কিছু বুঝে উঠার আগেই আলমারিটা নিচের দিকে খসে পরে যেতে লাগলো।অর্ক ভয় পেয়ে দুই হাত আলমারির দেয়ালে ঠেকিয়ে একটু ঘেষে দাঁড়ায়।সেকেন্ড তিনেক পরেই সশব্দে আলমারিটা থেমে যায়।নিজ থেকে আলমারির একটা দরজা খুলে যায়।পরমুহূর্তেই কোথা থেকে একটা সিঁড়ি এসে ভিড়ে দরজার সামনে।অর্ক শুধু হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।এতক্ষণ কি ঘটলো বা এখনই এসব কি ঘটছে কিছুই ওর বোধগম্য হচ্ছে না।পিয়ানোর শব্দ কানে আসতেই চকিত দৃষ্টিতে তাকায় সামনের দিকে।সাথে সাথে অর্কের চক্ষু চড়াকগাছ।
চারদিকে নিকষকালো অন্ধকার।দক্ষিণ কোণা থেকে এক চিলতে রশ্মি এসে পড়েছে ওই পিয়ানোর উপর।সেই আলোর পথ ধরে ধোঁয়া বেরুচ্ছে খুব গাঢ়তর ভাবে।সাদা রঙের পিয়ানোর উপর ধবধবে সাদা ডগিরা দৌড়াচ্ছে।ওর পায়ের চাপেই পিয়ানোতে তরঙ্গ তুলছে।এইমুহূর্তের অর্কের মনে হচ্ছে, ডগিরা মারা যাওয়ার পর বেহেশতে গিয়ে দিব্যি সুখে আছে,নিস্পাপ প্রানের অকাল মৃত্যুতে বেহেশতে মালিক সান্ত্বনা স্বরূপ এই পিয়ানো ডগিরাকে গিফট করেছে!যেটার সাথে এখন ও খেলা করছে।কিন্তু বেঁচে থাকা অবস্থায় তো আর বেহেশত দেখা সম্ভব না।ও হয়তো ভুল দেখেছে।দেখার ভুল ভেবে চোখ ঘষে নিয়ে ফের সামনে তাকালো অর্ক।না এটা ডগিরাই!ওর মনের ভুল নয়।
এই সব কি ঘটছে?এইসব অর্কের কাছেওর মতিভ্রম বলে মনে হচ্ছে।ডগিরার চিন্তায় ওর মাথাটা হয়তো এবার গেছে!নয়তো এইসব কি হাবিজাবি দেখতে ও!ওর মনে হচ্ছে এইগুলো কিছুই ঘটে নি বা ঘটছে না।দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে অর্ক ক্ষণকালের জন্য চোখ বন্ধ করে নিলো।চোখ খোলার পর সব আগের মতোই হয়ে যাবে এই আশায়।কিছুক্ষণ পর যখন চোখ খুললো তখন সবকিছুই একটু আগের মতোই অস্বাভাবিক লাগছে অর্কের কাছে।নিজেকে বিশ্বাস করানোর জন্য নিজের হাতে চিমটি কাটে অর্ক।বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে অর্ক।এখানে যা ঘটছে সবটাই বাস্তব!অর্ক অনেক চিন্তা ভাবনা করে সিঁড়িতে পা রাখলো।সিঁড়িতে পা রাখতেই সিঁড়িটা নিজ থেকেই চলতে শুরু করে,এক্সেলেটরের মতো।সিঁড়িটা থেমে যেতেই সিঁড়ি থেকে নিচে মেঝেতে পা রাখতেই “Welcome to Kiran’s world ” বাক্যের সাথে সাথে নিকষকালো অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে হঠাৎ ছাদের মাঝখান থেকে বড়সড় একটা লাইটের আলো এসে নিচের থাকা পিয়ানোটা সম্পূর্ণ আলোকিত করে তুললো।আলো জ্বলে উঠতেই অর্ক চমকে উঠলো সেইসাথে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।ক্ষণকাল আগে কি শুনেছে ও?কিরণের কণ্ঠস্বরের সাথে ও কি কিরণের নামও শুনেছে?আদৌ কি এটা কিরণই নাম ছিল?নাকি ও ভুল শুনেছে?
অর্ক তড়িৎ বেগে ফের সিঁড়িতে উঠে পরলো।একটু আগে স্পষ্ট কিরণের নামটাই শুনেছিল ও।তাও কেন জানি বিশ্বাস করতে পারছে না।বার বার মনে এটা হতে পারে না।এটা হওয়ার নয়!ও ভুল শুনেছে।তবে এবার ভালো করে পরখ করে নিয়ে নিজের কানকে বিশ্বাস করবে।তাই ও আবার সিঁড়িতে উঠে দাঁড়ায়। অর্ক সিঁড়িতে উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে লাইটগুলোও নিভে যায়।আরেক দফায় আঁতকে উঠলো অর্ক।পরমুহূর্তেই এটা ভেবে নিজেকে সামলে নিলো যে,এই ওয়েলকামিং এর সাথে লাইটের বিষটিও চমৎকার ভাবে সেট করা,অন্যরকম স্পেশাল টেকনিক।এই ব্যাপারটা কিন্তু চমৎকার।এটার মধ্যে যে কাউকে স্পেশাল ফিল করানোর মতো শক্তি আছে।যাইহোক অর্ক আর ওইসব না ভেবে নিজের মনের ধারণাকে সত্যি প্রমাণ করার জন্য সিঁড়ি থেকে নিচে নামতেই আবার একই বাক্যের ধ্বনি উচ্চারিত হতে লাগলো।শূন্যে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির রেখে সেই প্রতিধ্বনিত বাক্য শুনলো বারকয়েক।
ভুল!অর্কের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে!ও যেটা তখন শুনেছিল এখনো ঠিক সেই একই কথা শুনেছে।বার বার রিপিট করে শুনেছে অর্ক। ও ওর কিরণের নামই শুনতে পেয়েছে প্রতিবার।সেই সাথে কিরণের মাদকতা ছড়ানো সেই কন্ঠস্বর।পদে পদে বিস্মিত হচ্ছে অর্ক।তবে ওর এখনো মনে হচ্ছে ও কোনো ঘোরের মধ্যে আছে।এটা আদৌ কোনো বাস্তবতা নয়!অর্ক রুদ্ধশ্বাসে ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ বন্ধ করে ফিরে যায় মিনিট বিশেক আগের মুহূর্তে।যখন ও আলমারির বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল আর মেহেনূর দরজার বাহিরে।পুরো ঘটনাটি রিমাইন্ড করছে অর্ক।অর্কের ভাবনার সুতো ছিঁড়ে ডগিরার চিৎকারে।চটজলদি চোখ খুলে তাকায় ডগিরার দিকে।অর্ক ডগিরার দিকে এগোতে নিলেই ডগিরা দৌঁড়ে চলে যায় অন্যদিকে।
ডগিরার পিছু নেওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অর্কের দৃষ্টি পরলো দক্ষিণ পাশের দেয়ালটার উপর।ওইদিকের আবছা আলোয় তরুণীর ছবিটা অস্পষ্ট দেখালেও ডগিরাকে চিনতে এক বিন্দুও ভুল করে নি অর্ক।এতক্ষণে অর্কের স্মরণে এলো ও একটা বড়সড় রুমের ভেতরে আছে।ওর হাঁটার শব্দে সারা ঘর জোরেই মৃদঙ্গ তুলছে।শুনে বোঝা মুসকিল এই শব্দের উৎপত্তিস্থল কোথায়!অর্ক দ্রুত এগিয়ে যায় দেয়ালে টাঙানো ওই ছবিটির দিকে।পাঁচ ফুট সাইজের ছবিটায় ডগিরাকে দেখা যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তরুণীর মুখটা সুস্পষ্ট নয়।বিশাল সাইজের এই ছবির দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো অর্ক।তাও ঠাহর করতে পারলো না।আরো দুই কদম এগিয়ে একদম ছবিটার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।আনমনেই ছবিটির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় অর্ক।ছবির কাঁচ স্পর্শ করতেই ছবিটি অদৃশ্য হয় যায়।শিউরে উঠলো অর্ক।ঘটনাটি এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে ও ভয় পেয়ে ছিটকে দূরে সরে যায়।কিছুক্ষণ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কাঁচটায় ফের স্পর্শ করলো।সাথে সাথে দৃশ্যমান হয় অন্য একটি ছবি।কিন্তু এটা দেখার জন্য অর্ক মোটেও প্রস্তুত ছিল না।অর্কের সামনে দৃশ্যায়িত ছবিটি স্বয়ং কিরণের।অর্ক না পারছে নিজের চোখকে অবিশ্বাস করতে আর না পারছে বিশ্বাস করতে।হঠাৎ করেই ওর হাত-পা কেমন যেন কাঁপতে লাগলো!কাপা কাপা হাতটা আরো একবার স্পর্শ করলো ওই ছবিটা।সাথে সাথে ওই ছবিটাও অদৃশ্য হয়ে যায়।পরিবর্তে আসলো অন্য একটি ছবি।একই ঘটনা রিপিট করতে করতে আটটা ছবি পর পর দেখলো অর্ক।সবগুলোই কিরণের ছবি।
হাটু গেড়ে ধপ করে নিচে বসে পরলো অর্ক।কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছে না।মেহেনূরের আলমারিতে সিক্রেট লিফট,তারপর এই সিক্রেট রুম।কিরণের কন্ঠস্বর,কিরণের সাথে ডগিরার ছবি।এটা কিরণের দুনিয়া!কিরণের দুনিয়া?মেহেনূরের সিক্রেট রুমে কিরণের দুনিয়া?স্বাগতম বার্তার কথা মনে হতেই মাথা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায় অর্ক।হিসাবে একটু গড়মিল হচ্ছে।তবে অর্ক হিসাবটা আপাত মস্তক মেলাতে না পারলেও এটা ঠিক বুঝতে পারছে উত্তরটা হয়তো ওর হাতের খুব কাছেই আছে!শুধু একটু ইনভেস্টিগেশন করতে হবে।অর্ক পাগলের মতো সারাঘর জুড়ে কিছু খুঁজতে লাগলো।ঘরের মধ্যভাগ ছাড়া সবটাই অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে।অনেক খুঁজাখুঁজির পর কাঙ্খিত জিনিসটি পেয়ে সুইচ টিপতেই পুরো ঘর আলোয় ঝলমল করে উঠলো।অর্ক নির্বাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলো পুরো ঘরটা।এটা যে-সে ঘর নয়।কোনো সাধারণ ঘর তো নয়-ই।বরং এটা বিশাল বড় একটি মিউজিয়াম!এমন কোনো বাদ্যযন্ত্র নেই যে এখানে পাওয়া যাবে না।বিশাল এই ঘরের ঠিক মাঝখানেই পিয়ানোটা রাখা।ঘরের দেয়ালগুলোতে এক ইঞ্চি জায়গায়ও অবশিষ্ট নেই।সবখানে কিরণের ছবি,অর্ক যেদিকে তাকাচ্ছে সেইদিকেই কিরণ।একপর্যায়ে একটা ছবিতে অর্কের চোখ আটকে যায়।মেহরাব সাহেব আর রেনুফা বেগমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে রাওনাফ আর কিরণ।আর কিরণের কোলে ডগিরা।ছবিটির নিচে ঠিক ডানপাশে ছোট্ট করে ইংরেজিতে লেখা “Kiran’s World “।অর্ক বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো কয়েক মুহুর্ত।হুট করেই অর্ক ওর বুকের মধ্যে তীব্র ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো।কিছু বোঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পরলো।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।