রান্নাঘরের টুকটাক শব্দ ছাড়া পুরো বাড়িই নিঃশব্দ।ফাঁকা বাড়িতে অবশিষ্ট শুধু মেহেনূর আর অর্ক।কলি আর দিহাদ ওদের বাসায় গিয়েছে।সাথে ওহি আর তিন্নিকেও নিয়ে গেছে।মেহেনূর কনসার্টে যাওয়ার আগে ওখান থেকেই ওদেরকে নিয়ে যাবে।এখন মেহেনূর অর্কের জন্য রান্না করা খাবারগুলো গরম করছে।সকালে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের হাতে অর্কের জন্য এই খাবারগুলো রান্না করেছিল ও।এখন আবার গরম করতে হচ্ছে।মেহেনূরের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট।সবাই ঠিক সময়ে খেয়েছে অথচ এই ছেলে অসুস্থ শরীর নিয়ে এখনো অবধি খাবার খায় নি।মানুষের কষ্টের কি কোনো দাম নেই?সবাইকে কি নিজের মতো ভাবে নাকি!মেহেনূর খাবারগুলো ট্রে-তে নিয়ে তপ্ত একটা নিঃশ্বাস ফেলে পা বাড়ালো অর্কের রুমের দিকে।
অর্কের রুমের বাহিরে ভ্রুকুটি করে দাঁড়িয়ে আছে মেহেনূর।অর্কের রুমের ভেতরে কেমন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।যদিও আওয়াজের ধরনটা খুবই পরিচিত কিন্তু অর্ক রুমে এইসব কি করছে?কয়েক মুহূর্ত অতিক্রম হয়ে যাওয়ার পরেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটে নি।আর এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকাও সম্ভব না।মেহেনূর ইতস্ততভাবে দরজায় নক করতে গেলে বুঝতে পারে দরজাটা খোলাই আছে।ফলে মেহেনূর গলা খাঁকারি দিয়ে দরজা ঠেলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো।ঘরের ভেতরে ঢুকে এদিক সেদিক চোখ বুলালো।ঘরে কেউ নেই অথচ এখনো সেই শব্দ শোনা যাচ্ছে।মেহেনূরের পাশে থাকা ছোট টেবিলটায় খাবার গুলো রাখলো।শব্দের উৎপত্তি স্থল অনুসন্ধান করে একটু সামনের দিকে এগোলো।পরমুহূর্তেই মেহেনূরের চক্ষু চড়াক গাছ।অর্ক খাটে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে আছে।ডগিরাকে কোলে নিয়ে একনাগাড়ে চুমু দিয়ে যাচ্ছে!মেহেনূর কপাল কুঁচকে বিস্মিত কণ্ঠে ডাকলো,
– ডগিরা!
মেহেনূরের গলার আওয়াজ শোনা মাত্রই অর্ক থেমে যায়।কিন্তু মেহেনূরের দিকে তাকায় নি।ও উল্টো দিক হয়েই নির্বিকার বসে রইলো।ডগিরা অর্কের কোল থেকেই উঁকি দিয়ে মেহেনূরকে একবার দেখলো কিন্তু ওর কাছে গেলো না।তাতে বেশ অবাক হয় মেহেনূর।অর্ক ফের ডগিরাকে চুমু দিচ্ছে আর ডগিরাও গদোগদো হয়ে অর্কের মুখ চেটে দিচ্ছে।আজ ডগিরার জন্যই অর্ক তার কিরণকে খুঁজে পেয়েছে।কাল যদি ডগিরা ওকে আলমারিতে ঢুকতে বাধ্য না করতো তাহলে অর্ক মেহেনূরের ওই বিশাল সাম্রাজ্যের সন্ধান হয়তো কখনই পেত না!আর না কখনো এই চরম সত্যের মুখোমুখি হতো!
পালাক্রমে চলতে থাকা এইসব দেখে মেহেনূর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ।একটা মেয়ে কতক্ষণ ধরে এইখানে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে এই ছেলের কোনো খেয়ালই নেই।একটা বার তাকালোও না অবধি।মেহেনূরের এবার বেশ রাগ হচ্ছে।একটু পর ওকে বেরুতে হবে আর এখন এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের জন্য সময় নষ্ট করছে!মেহেনূর দাঁত কড়মড় করে বাজখাঁই গলায় বললো,
– ডগিরা তোকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?
মেহেনূরের গলা শুনে চমকে উঠলো অর্ক।ডগিরাকে জড়িয়ে রাখা হাতগুলো আলগা হয়ে আসে।ডগিরা ধীরে পায়ে এগিয়ে গিয়ে মেহেনূরের পায়ের কাছে দাঁড়ায়।ততক্ষণে অর্কও উঠে দাঁড়িয়েছে।মেহেনূরের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এক পলক ডগিরাকে দেখে স্থির করে অর্কের দিকে।ধীর কন্ঠে বললো,
– আপনি এখনো খাবার খান নি কেন?
– খিদে নেই।
অর্ক একরোখা জবাব দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।মেহেনূর আশ্চর্য হয়ে তাকালো ওর দিকে।মেহেনূরের রাগ হলেও এইমুহূর্তে ওর রাগ করলে চলবে না।অর্ককে এই খাবারটা খেতে হবে।ডাক্তার বলেছে অর্কের শরীর অনেক দূর্বল।ও ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না,বিপি একদম লো।মেহেনূর স্মিত হেসে বললো,
– আপনি বললেই হলো?সেই কাল রাতের বেলায় খেয়ে ছিলেন আর এখন বাজে বিকাল চারটে!এবার তো পেটে পিত্তি পরবে।
– পরুক!তাতে তোমার কি?
– আমার আবার কি হবে?যা হওয়ার সেটা আপনারই হবে।খালি পেটে থাকলে গ্যাস্টিক হবে তারপর গ্যাস্টিক থেকে আলসার হবে।
– হোক!তাতে…..
– তাতে আমার কি!তাই তো?আসলেই আমার কি!ঠিক আছে,আপনাকে খেতে হবে না।
অর্ক বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে।মেহেনূর খাবারের ট্রে নিয়ে চলে যাচ্ছে।অর্ক মনে মনে ভাবছে,“এই রে একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো নাকি?”অর্ক শুধু দেখতে চাইছিল ওর এমন ব্যবহারে মেহেনূরের কেমন রিয়েকশন হয়।কালকে রাতের পর আজ এখন মেহেনূরকে দেখছে ও।ভেবেছিল খাবে না বলে জেদ করলে মেহেনূর হয়তো ওকে বকাঝকা করবে।খাওয়ার জন্য জোর করবে,খেতে বলবে!একপর্যায়ে হয়তো নিজের হাতে খাইয়েও দেবে বা দিতে চাইবে!কিন্তু এখন তো হিতে বিপরীত হয়ে গেলো।যদিও অর্ক জানে ওর আশা সেগুড়ে বালি!তাও অন্ধকারে ঢিল ছুড়েছিল,যদি কাজে আসে!কিন্তু এখন কি হবে?খিদেয় তো পেট ছু ছু করছে।তারউপর যে আকাম করে বসে আছে পরে তো চাইলেও কিছু খেতে পারবে না!এখন যদি কিছু না খায় তাহলে নির্ঘাত জ্ঞান হারাবে নয়তো পটল তুলবে!অর্ক আমতা-আমতা করে গলার স্বর উঁচু করে বললো,
– তা কি রান্না হয়েছে শুনি?
মেহেনূরকে আটকানো হলো কথা!মাথায় যা এসেছে তাই জিজ্ঞাস করে ফেলেছে।অর্কের প্রশ্ন শোনে দরজা অবধি গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো মেহেনূর।ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রুকুটি করে উল্টো প্রশ্ন করলো,
– সেটা জেনে আপনি কি করবেন?
– খিদে পেয়েছে খুব।
– একটু আগেই না বললেন আপনার খিদে নেই?
– তখন খিদে ছিল না তাই বলেছিলাম।তাই বলে এখন আমার খিদে লাগতে পারে না।
মেহেনূর একটা ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেলে খাবারগুলো পুনরায় রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।মেহেনূর চলে যেতেই অর্ক রুমের দরজাটা একটু ভিড়িয়ে দিয়ে খাবারগুলো নিয়ে বিছানার উপর বসে।অর্ক নিজের হাতে দিকে অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ডগিরার দিকে তাকাতেই ডগিরা দৌঁড় দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।বাইরে এসে অদূরেই মেহেনূরকে দেখতে পেয়ে ঘেউঘেউ করে উঠলো।ডগিরা ঘেউঘেউ করে উঠতেই মেহেনূর পেছন ফিরে তাকাতে তাকাতে ডগিরা আবার ঘরের ভেতর চলে আসে।মেহেনূর বুকের ভেতরটা অজানা ভয়ে মোচড় দিয়ে উঠলো।ফলে মেহেনূরও ডগিরার পেছন পেছন তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকলো।মেহেনূরকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পরলো অর্ক।ডগিরা এইভাবে চিৎকার করে উঠবে আর ওর চিৎকার শোনে মেহেনূরও চলে আসবে বুঝতে পারে নি ও।অর্ক তাড়াতাড়ি ওর হাত দুটো পিছনে লুকিয়ে নেয়।কিন্তু তার আগেই যা দেখার মেহেনূর দেখে নিয়েছে।দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় অর্কের দিকে।
– আপনার হাতে কি হয়েছে?
প্রশ্নটা করে অর্কের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেনূর।অজানা কারণেই অর্কের বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছে।মেহেনূরকে কি বলবে বুঝতে পারছে না।মেহেনূরকে বলার যতেষ্ট শব্দ অর্কের শব্দ ভান্ডারে মজুদ নেই!মাথা নিচু করে নেয় অর্ক।মেহেনূরের কপাল সংকুচিত হয়ে আসে।অর্কের এইরূপ ব্যবহারের মানেটা মেহেনূরের কাছে অস্পষ্ট।অর্কের দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললো,
– আপনার ফোন কোথায়?
অর্ক নিশ্চুপ।কয়েক সেকেন্ড অতিক্রম হয়ে গেছে তবু অর্কের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই।সে নির্বিকার চিত্তে বসে আছে।মেহেনূর বিরক্ত হয়ে ধমকে বললো,
– কি হলো কথা বলছেন না কেন?
মেহেনূর ধমক খেয়ে শিউরে উঠলো।অর্ক এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে।মেহেনূরের চোখে মুখে রাগের আভাস।অর্ক আমতা আমতা করে মাথা নিচু রেখেই ক্ষীণ স্বরে বললো,
– টেবিলের উপরে।
মেহেনূর টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে ফের অর্কের সামনে এসে বললো,
– পাসওয়ার্ড?
– মিসেস রকস্টার!
অর্ক মিনমিনে স্বরে বললো।মেহেনূর আড়ঁচোখে অর্কের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে পুনরায় ফোনের উপর দৃষ্টি স্থির করে।পাসওয়ার্ড লিখে ফোনটা আনলক করতেই চমকে উঠলো।অর্কের ফোনের ওয়ালপেপারে ওর ছবি দেওয়া!ছবিটায় মেহেনূর হাটু গেড়ে বসে ডগিরার দুগালে হাত রেখে ডগিরার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে রেখেছে।মেহেনূর অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ছবিটার দিকে।ছবিটা বছর দেড়েক আগের তোলা।কয়েক মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়ার পর মেহেনূরের হুশ ফিরে।লম্বা একটা শ্বাস টেনে কল লিষ্ট থেকে দিহাদের নাম্বার বের করে দিহাদকে কল দেয়।অপর পাশ থেকে কল রিসিভ করতেই মেহেনূর ধীর কন্ঠে বললো,
– আমি চলে আসার পর হসপিটালে কি হয়েছিল ভাইয়া?
মেহেনূরের গলায় স্বর শুনতে পেয়ে কিঞ্চৎ বিস্মিত হয় দিহাদ।মেহেনূর অর্কের ফোন থেকে কল করবে এটা ওর কল্পনাতীত ছিল।দিহাদকে ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কলি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাস করলো,
– কে?
– মেহেনূর।
কলি মুচকি হেসে বললো,
– চুপ করে আছিস কেন?বলে দে।মেহেনূরের চোখকে ফাঁকি দেওয়া অর্কের সাধ্যের বাইরে!
কলির কথা মতো দিহাদ গলা খাঁকারি দিয়ে কোমল স্বরে বললো,
– সকালে অর্কের জ্ঞান ফেরার পর হসপিটালে তান্ডব করেছে ও।নিজের উপর রাগে ক্ষোভে সারা কেবিনে ভাংচুর করেছে।তোমার ফোনটাও অর্ক ভেঙে ফেলেছে।অবশ্য নিজের ফোন ভেবে!জানালার কাঁচ দিয়ে হাত কেটেছে।দুই হাতে পাঁচটা সেলাই লেগেছে।সরি মেহেনূর,আসলে অর্ক বারন করেছিল আমরা যাতে তোমাকে এই ব্যাপারে কিছু না বলি।মেহেনূর ওকে ভুল বুঝো না প্লিজ।ও তো জানতো না যে তুমিই কি………
মেহেনূর দিহাদের বাকি কথা না শুনেই ফোনটা কেটে দেয়।দাঁত কড়মড় করে এগিয়ে যায় অর্কের দিকে।শক্ত গলায় বললো,
– হাত দেখি!
অর্ক মাথা নিচু করে বসে আছে।মেহেনূরের কথা কর্ণপাত হওয়া সত্ত্বেও।মেহেনূর রাগে গলায় স্বর উঁচু করে বললো,
– আমার কথা কি শুনতে পান নি?
অর্ক শুকনো একটা ঢোক গিলে চোখ বুজে আস্তে আস্তে হাত দুটো মেহেনূরের সামনে এগিয়ে দেয়।পরক্ষণেই বাম গালে সজোরে চড় পরতেই তড়িৎ বেগে চোখ খুলে অর্ক।কিছু বুঝে উঠার আগেই ফের একই গালে চড় পরলো।ঘটনাটা অর্কের কাছে এক্কেবারে অপ্রত্যাশিত।তবে ও যা করেছে তার জন্য এটা ওর প্রাপ্যই ছিল!
– আপনি কি পাগল?নিজেকে কি মনে করেন?আলেকজান্ডার?
অর্ক একদৃষ্টে মেহেনূরের দিকে তাকিয়ে আছে।তবে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।মেহেনূরকে এই প্রথম রাগতে দেখল ও।মেহেনূরের নীলাক্ষী চোখে এখন আগ্নেয়গিরি! মসৃণ ঠোঁটে মৃদু কম্পন আর প্রশস্ত ললাটে ভোরের শিশির কণা!রাগলে তো ওকে বেশ লাগে।অর্ককে তাকিয়ে থাকতে দেখে সজ্ঞানে ফিরে মেহেনূর।ও এটা কি করলো?অর্কের গায়ে হাত তুলেছে?পরমুহূর্তেই মেহেনূর রাগ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।বেশ করেছে ও!এই ছেলে মার খাওয়ারই যোগ্য!অর্ক বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।অর্ক উঠে দাঁড়াতেই মেহেনূর কিছুটা পিছিয়ে যায়।মেহেনূর কিছু বুঝে উঠার আগেই অর্ক ওর দুটো হাত ধরে ওর গালে রেখে অসহায় গলায় বললো,
– থামলে কেন,মারো আমাকে!আরো মারো।আমি তো মার খাওয়ারই যোগ্য!
মেহেনূর নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
– আরে কি করছেন?আমার হাত ছাড়ুন।
অর্ক হাত ছেড়ে দিয়ে হুট করেই মেহেনূরকে জাপটে জড়িয়ে ধরলো।মেহেনূর বিস্ময়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় অর্কের দিকে।অর্ক ওর কাঁধে মুখ গুজে আছে।মেহেনূরের কেমন যেন লাগছে।অর্ক ওকে এইভাবে জড়িয়ে ধরবে বুঝতে পারে নি।মেহেনূর নিজেকে অর্কের আলিঙ্গন থেকে ছাড়ানোর জন্য জোর কাটাচ্ছে অর্ক ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাতর স্বরে বললো,
– আ’ম সরি মেহেনূর!সরি ফর এভ্রিথিং!প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
প্রিয় মানুষকে জড়িয়ে ধরলে যে শান্তি পাওয়া যায়, বিশ্বাস করুন তাবৎ দুনিয়া ঘুরেও আপনি এই শান্তি আর কোথাও খুঁজে পাবেন না।হয়তো প্রিয় মানুষটার সাথে আপনার রাগ চলছে, কিংবা মনমালিন্য কথা কাটাকাটি হচ্ছে, সব কিছু ঝেড়ে ফেলে একবার তাকে জড়িয়ে ধরুন।ব্যাস, দেখবেন এক নিমিষেই সব ঠান্ডা।হতে পারে কোনো কারণে আপনারা দুজনেই কিছুটা মানসিক চাপে আছেন,পারিবারিক কোনো কারণে বা নিজেদের ভুলে অশান্তিতে আছেন,তখন প্রিয় মানুষটাকে জড়িয়ে ধরলে দেখবেন কোনো অশান্তি আর অশান্তি মনে হচ্ছে না।তখন আপনার মনে হবে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবকিছু থমকে যাক।সেকেন্ড, মিনিট ঘন্টার কাটা বন্ধ হয়ে যাক।সব দুঃখ-কষ্ট, অশান্তি, যন্ত্রণা মানুষ ক্ষনিকের জন্য হলেও ভুলে থাকতে পারে আপন মানুষটাকে জড়িয়ে ধরলে।
এইমুহূর্তে অর্কের ক্ষেত্রেও তাই।যেখানে অনেক সংশয় আর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিজের প্রিয় মানুষটাকে খুঁজে পেয়েছে,কাছে পেয়েছে সেখানে এই মুহূর্তটাকে তো ধরে রাখতেই চাইবে।যদিও দুজনের মধ্যে অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে,তার প্রিয় মানুষটা আদৌ তাঁকে গ্রহণ করবে কি না সেটাও ও জানে না।তবু ও খুব তীব্র ভাবে চাইছে এই মুহূর্তটা যাতে এত দ্রুত শেষ না হয়,সময়টা যাতে থমকে দাঁড়ায়!
মেহেনূরের বুক দুরুদুরু করছে।অর্কের আলিঙ্গনে ওর খুব অস্বস্তিও হচ্ছে।যদিও অর্কের ছোঁয়ায় কোনো নোংরামো নেই তবে জীবনের প্রথম ওকে কেউ এতটা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরলো।ফলে অস্বস্তিটাও আকাশচুম্বী।মেহেনূর অর্কের মনে অবস্থা বুঝতে পারছে।অর্কের হয়তো ভালো লাগছে কিন্তু ওর তো ভালো লাগছে না।এতটা ঘনিষ্ঠ হওয়ার মতো সম্পর্ক নেই,আগেও ছিল না।মেহেনূর হাত মুঠি করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ক্ষণে ক্ষণেই বুক চিড়ে তপ্ত নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসছে।পরক্ষণেই কান গরম হয়ে আসে।চোখ রাঙিয়ে শক্ত গলায় বললো,
– এইসব করবেন বলেই কি বাসাটা খালি করিয়েছেন?
চলবে…