অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ১০

15 Min Read

14★

(২৩)
অনেকক্ষণ হলো উনি জড়িয়ে ধরে আছেন।হাফসা স্বাভাবিক হয়।নিজ থেকে সরে আসতেই আরহাম গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে আসেন।

‘ঠিক আছেন এখন?পানি খাবেন?’

হাফসা পানি খাচ্ছে আর বারবার বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখছে।আরহাম ওকে পরখ করে নিজেও বারান্দার দিকে তাকালেন।কিন্তু গ্লাস আর পর্দা ছাড়া তো কিছুই দেখতে পেলেন না।

হাফসা ঢকঢক করে পুরো গ্লাস খেয়ে বলে, ‘ওখানে কেউ ছিল আমি দেখেছি।’

‘কোনখানে?’

‘ওইযে পর্দার আড়ালে।’

‘না তো।কে থাকবে এখানে?’

‘আমি দেখেছি।একটা অবয়ব ছিলো।’

আরহাম সন্দেহী নজরে তাকালেন।অতপর উঠে গিয়ে গ্লাস সরিয়ে বেলকনি, পর্দা সব চেক করে আসলেন।

‘আমি দেখে এসেছি এখানে কেউ নেই হোমাপাখি।আপনি ভুল দেখেছেন নাহলে হয়তো ব্যাডড্রিমস ছিলো।

‘ক্ কি কিন্তু কেউ তো..

‘উহু,ভুল ভাবছেন।বাড়িতে সিকিউরিটি আছে।চারপাশে কড়া গার্ড আছে।সিসিটিভি আছে,কেউ ডু্কার সাহস নেই।’

‘কিন্তু…

‘উহু শুধু মনের ভুল ধারণা আপনার।’

‘হ্ হতে পারে।’

‘আপনি একা ঘুমাতে ভয় পান?’

‘জ্ জ্বি না এখন পারবো।আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন গিয়ে।’

উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাফসার পাশে শুয়ে পড়তে পড়তে বললেন, ‘আপনাকে একা রেখে টেনশনে ঘুম হবে না আমার।আমি থাকছি আপনার পাশে।শুয়ে পড়ুন।’

‘জ্বি না।আমি এখন পারবো।আগে তো বাতাসের…

‘আর কোনো কথা না।শুয়ে পড়ুন।

হাফসা চুপচাপ লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে।

ঘুমানোর কিছুক্ষণ পর অনুভব করলো কেউ ওকে একদম কাছে নিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন।পারলে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলেন।গালে আর কানের লতিতে দূটো চুমু এঁকে দিলেন।হাফসা হাসলো।সব রাগ মিঠে গিয়ে একরাশ ভালোবাসা এসে ভর করলো বক্ষপিঞ্জরে।শান্তির জায়গা প্রিয় মানুষটার বুক।হালকা বাতাস এসে শিহরণ বইয়ে দিলো সারা শরীরে!

পরেরদিন_________________
রাদ কে কোর্ট থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।মাএ তিনদিন অবস্থান করেছে এই বন্দী কুঠিরে।জামিন দিয়েছেন স্বয়ং আরহাম।রাদ’এর বাবার সাথে আরহামের কথা হয়েছে। উনি ক্ষমা চেয়েছেন নিজের এবং নিজের ছেলের বাড়াবাড়ির জন্য।কোর্ট থেকে খালাস দেওয়ার পর রাদ যখন বের হলো তখন আরহাম সবে গিয়ে নিজের গাড়িতে উঠছিলেন।রাদ তখুনি পিছন থেকে ডাকলে আরহাম দাঁড়িয়ে গেলেন।
রাদ উনার কাছে গিয়ে অনুতপ্ত সুরে নিচু বলে, ‘সরি।

আরহাম হেসে ওর সাথে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন।রাদ আবারো অবাক হয় এ অমায়িক মানুষটাকে দেখে।

হ্যান্ডশেক করে হাসিমুখে বলেন, ‘নো নিড।প্রে ফর আস।
আল্লাহ হাফিজ।’

******
সকালে উনি প্রায় দশটার দিকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এসেছেন ১১ টা নাগাদ।এসেই নিজের রুমে গিয়ে রেডি হচ্ছিলেন।হাফসা উনার রুম গোচাচ্ছিলো।উনাকে রেডি হতে দেখে হাফসা উৎসুক নজরে তাকায়।

উনি বোধহয় হাফসার ভাবমূর্তি পরখ করলেন।আয়নায় ওর চোখে চোখ রেখে বললেন, ‘মাদ্রাসায় যাবো।ছুটি তিনদিন নিয়েছিলাম।’

‘মাদ্রাসা?কেন?আপনি মাদ্রাসায় পড়েন?’

হাফসার কথার পিঠক আরহাম হেসে ফেললে হাফসা ভড়কে যায়।

উনি একটা কার্ড এগিয়ে দিলে তাতে দেখলো উনি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল।হাফসা চমকায়।তবুও স্বাভাবিক হয়ে বলে, ‘আপনাকে এই পোষাকের প্যাশনে বেশি মানায়।’

‘তাই?তাহলে মাদ্রাসা ছেড়ে দিই?’

‘জ্বি না।আমি সেটা বলিনি।’

‘একটা কথা, আপনার প্রয়োজনীয় সবকিছু আম্মুকে বলবেন।আপনার সপিং টু অল,মাকে নিয়ে বেরোবেন।আর কাবার্ডের ফাস্ট ড্রয়ারে কিছু পেপারস আছে।আপনার নামে একটা একাউন্ট ওপেন করেছি।পেপারসের সাথে ক্রেডিট কার্ড আছে।’

হাফসা চুপচাপ সব শুনলো।আরহাম ফোনটা পকেটে ডুকিয়ে একহাতে ঘড়ি পরে হাফসাকে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘আসছি আমি।খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক করবেন।আম্মুর খেয়াল রাখবেন।টেক কেয়ার।’
বলে কপালে চুমু দেন।

‘আপনিও।’

উনি সালাম দিয়েই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলেন।হাফসা বেলকনি থেকে দেখলো উনি মাইমুনার রুমে ডুকলেন,তারপর আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

হাফসা নিচে নামতে নামতে উনাকে দেখছিলো।মানুষটা এত সুন্দর কেন।লাইট ব্রাউন জুব্বার সাথে কালো আর গলডেনের মিশ্রণে কূর্তি সাথে কালো টুপি।মারাত্মক লাগছে দেখতে!

কিচেনের দিকে পা বাড়াডেই পেছন থেকে মাইমুনার ডাক পড়লো।এগিয়ে যেতেই কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘আচ্ছা তোমরা কি রাতে একসাথে থাকো?’

(২৪)
‘এ্ এএই প্রশ্ন কেন…..

কথাটা শেষ করার আগেই মাইমুনা জোর গলায় বলে ওঠেন, ‘যেটা প্রশ্ন করেছি সেটার উত্তর দাও।’

মাইমুনার কঠিন ধমকে হাফসা ভয় পেয়ে যায়।গলা থেকে টেনে কথাগুলো জড়ো করে বলল,

‘কাল রাতে আমি ভয় পেয়েছিলাম তাই আমার পাশে ঘুমিয়েছিলেন।’

মাইমুনা বিদ্রুপের সুরে বলল, ‘আসলেই কি ভয় পেয়ে ছিলে না শাহকে কাছে পাওয়ার ধান্দা?’

মাইমুনার মিনমিনে বলা কথাটা হাফসার তীক্ষ্ণ কানে ঠিকই পৌঁছে গেলো।মুখের কথা যে মুহুর্তেই কারো হৃদয় ফালাফালা করে দিতে পারে সেই অনুভূতির স্বীকার হলো সে।রাগ আর কষ্টের মিশ্র অনুভূতিতে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসলো।নিজের মনকে বলল, ‘আমি তো সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম।আর উনার উপর তো আমারো সমান অধিকার।আপনি এত কঠিন কেনো আপু!’

মাইমুনা নিজে নিজে কিছু একটা চতুর পরিকল্পনা খসছেন সেটা উনার নীরব ভাবমূর্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।হাফসা তাড়া দেখিয়ে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে।

______________
সময়টা সন্ধ্যের পর।হাফসা মাএ তিলাওয়াত শেষে তাসবিহ ক্লক কাউন্ট করতে করতে নিচে নামছিলো।উনার জন্য টেনশন হচ্ছে খুব।কই সাতসকাল বেরিয়ে গেলেন আসছেন না কেন?লাঞ্চ টাইমে শুধু টেক্সট করে জেনেছেন হাফসা খেয়েছে কি না।এরপর থেকে আর কোনো কথাই হইনি।

এসব ভাবনার মধ্যেই কলিং বেলের আওয়াজ হয়।হাফসা দ্রুতপায়ে গিয়ে দরজা খোলে।ঘমার্ক্ত শরীরে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছেন।শুকনো হেসেই হাফসাকে সালাম দিলেন।

টুপি খুলে এসির পাওয়ার বাড়াতে বলে গা এলিয়ে দিলেন সোফায়।হাফসা ঠান্ডা অরেন্জ বানিয়ে আনলো চপটপ করে।
উনি মুচকি হেসে অরেন্জ খেয়ে বললেন, ‘শোকরান লাক।’

উনি সোফায় চোখ বুজে রয়েছেন।হাফসা সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছে।উনি ওকে হাত দিয়ে ইশারা করে বসতে বললেন।ও এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলল, ‘আপনি খেয়েছেন?খিদে লেগেছে? খাবার দিব?’

উনি সামনে থাকা অস্থির রমণীর দিকে কিছুক্ষণ তাকালেন।অতপর স্বাভাবিক ভাবে বললেন, ‘খাবো না।ফ্রেশ হবো রুমে গিয়ে। আম্মু কোথায়?’

‘রুমে তিলাওয়াত করছিলেন দেখলাম।’

‘ওহ।’

আর কোনো কথা বলে নিজের রুমে চলে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর…

উনি শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলেন।হাফসা দোতলার বারান্দার শেষ কিনারায় বসে আছে।মাইমুনা ড্রয়িং এই ছিলেন।উনি মাইমুনার সাথে কি কথা বললেন শোনা গেলো না।মাইমুনার সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বলতে হাসতে হাসতেই মায়ের রুমের দিকে চলে গেলেন।

*******
থানা থেকে ফিরার পর থেকে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে গোটা একটা দিন অন্ধকার রুমে পড়ে আছে।মিসেস সায়িদ প্রায় অস্থির হয়ে পড়েছেন ছেলের এমন অবস্থায়।হাসিখুশি ছেলেটা উনার কেন এমন চুপ হলো।কয়েকদিন আগেও তো হাফসার কথা বলতো,ওর গল্প করতো,কিভাবে কি কি সারপ্রাইজ দিবে তাকে সেসব ভাবতো।হাফসাকে তো উনারও ভীষণ পছন্দ ছিলো একমাএ ছেলের বউ হিসেবে।মাঝখান থেকে অনেক বছরের স্বপ্নগুলো ভেঙে গেলো।স্বপ্নের মতোই অন্যকেউ এসে তাকে ছুটে নিয়ে গেলো।

রুমের টিমটিমে জ্বলা হালকা আলোর নিচে হাফসার ছবিটা ধরে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।বাইরের কোনো শব্দ ওর কানে আসছে না।খুব প্রিয় কিছু হারানোর যন্ত্রণা ভেতরটা ক্ষণে ক্ষণে শেষ করে দিচ্ছে।বিচ্ছেদের যন্ত্রণা এত কষ্টকর কেন।হোক সেটা একতরফা।আমি তো মেনে নিয়েছি।তাহলে এত কষ্ট কেন হচ্ছে?তাকে হারানোর যন্ত্রণা পুরো পৃথিবীর সব কষ্ট থেকেও কষ্টকর কেন মনে হচ্ছে?আমি কীভাবে সহ্য করবো আর।আর কতটুক যন্ত্রণা সহ্য করলে একটু মুক্তি পাবো!

_________
আম্মুর কোলে শুয়ে শুয়ে একটা বই পড়ছিলেন আরহাম।পুরো পৃথিবীর শান্তি যেনো মায়ের কোলেই পাওয়া যায়।আরহাম যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক তবুও মায়ের কোলে ঘুমাতে,মায়ের গালে কপালে চুমু দিতে দ্বিধাবোধ করেন না।”আপনি” সম্বোধন গর্ভধারীণীর সাথে কখনোই দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে না।সন্তান যতই বড়ো হোক,মায়ের কাছে তো সে ছোট’ই।

‘বলছিলাম তুমি হাফসার সাথে থাকছো না কেন?’

(২৫)
মায়ের এমন প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকালেন আরহাম।বই বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলেন,

‘বুঝি নি।’

‘রাতে তুমি ওর সাথে থাকো।ও ভয় পাবে এটা কি স্বাভাবিক নয়।ও তো নতুন এখানে।’

আরহাম মায়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে আবারও বইপড়ায় মনোযোগী হলেন।

‘কি হলো বলো কিছু।’

‘আম্মু আমি যে দুইজনের দায়িত্ব নিয়েছি এটা উনাকে বুঝে নিতে হবে।একজনকে খুশি করতে আরেকজন কে তো আঘাত দিতে পারি না।অভ্যেস করে নিতে হবে উনার।’

আম্মু কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তখুনি দরজায় নক হয়।

‘আসো।’

আম্মুর অনুমতি পেয়ে আসতে নিলেও চোখতুলে তাকাতে আরহাম কে মায়ের কোলে দেখে চমকালো সে।মা ছেলের এমন বন্ডিং দেখে হাফসার মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো।মাঝে মাঝে হৃদয়টা ছিঁড়েফেড়ে যায় মা-বাবার কথা মনে হলে।আমিও এভাবে মায়ের কোলে ঘুমাতে পারতাম আমার মা থাকলে।আল্লাহর কাছে একটা আকুতি থেকে যাবে,দুনিয়ার সবচেয়ে দামি জিনিসগুলো কেনো আমার থেকে ছোটবেলা’ই নিয়ে নিলেন।নিঃস্বার্থ মায়া-মমতা দেওয়ার মানুষ গুলোর থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য,আপনি আল্লাহ আমার জন্য এর চেয়ে বেশী সুন্দর উপহার রাখবেন পরপারে।

‘কি হলো আসো।’

আম্মুর কন্ঠে ভাবনাচ্ছেদ হলেও সামনের দূজনকে ঝাপসা দেখতেই বুঝলো ওর চোখে পানি ভীড় করেছে।হাফসা দ্রুত বারকয়েক পলক ফেলে যথাসম্ভব স্বাভাবিক হয়ে বলে, ‘ডিনার রেডি করেছিলাম ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’

কথাগুলো একদমে বলতেই খেয়াল করলো আরহাম ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।হাফসা ফিরে এলো।এখানে থাকলে এই মানুষটা নির্ঘাত বুঝে যাবে মনের কথা।উনার অমায়িক একটা ক্ষমতা আছে অপ্রকাশিত মন খারাপ গুলো বুঝার।

মাইমুনার ঘরে গিয়ে উনাকে বিছানা থেকে তুলে ধীরভাবে হুইলচেয়ার বসিয়ে ড্রয়িং এ নিয়ে আসলো।হাফসার প্রতি রোড হয়েও এবার যেন দমে গেলেন মাইমুনা।মেয়ে টা সত্যি খুব অমায়িক।তার চোখে আমার জন্য কোনো রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা নেই।কিন্তু কি করার।আমি যে তোমাকে শাহ’য়ের সাথে সহ্য করতে পারি না।

হাফসা সবাইকে সার্ভ করে দিতে লাগলো মায়ের নিষেধাজ্ঞা না শুনে।এরই মধ্যে আরহামের সাথে চোখাচোখি হওয়ার বিষয়টা এড়াতে পারছে বা।বলা বাহুল্য উনি চোখ সরাচ্ছেন না ওর থেকে।আরহাম নিজে উঠে ওকে বসতে দিয়ে তারপর উল্টো ঘুরে এসে দূজনের মাঝে বসলেন।আজ খাবারের প্রথম লোকমা হাফসার মুখে তুলে ধরতেই হাফসার ঠোঁট কাঁপতে লাগলো।মাইমুনার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলে উনার চোখে দাবানল চলছে।

হাফসা এক লোকমা খেয়ে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘আপনি খান।আপুকে খাওয়ান।আমি খেয়ে নিতে পারবো।’

‘আমি জানি আপনি পারবেন।নো মোউর ওবজেকশন নেভার।মাইন্ড ইট।’

15★

‘আমি জানি আপনি পারবেন।নো মোউর ওবজেকশনস নেভার।মাইন্ড ইট।’

আরহামের শান্ত গলায় এমন ভারী কথা শুনে হাফসা একেবারে ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো।

খাবার শেষ হতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি ভয় পাবেন ঘুমাতে?’

‘জ্বি না।’

‘আজ মাইমুনার রুমে থাকবো।ভয় করলে যাস্ট কল করবেন আমায়।’

হাফসার “মাইমুনার সাথে থাকার কথাটা” হজম করতে বেশ কষ্ট হলো বটে।তবুও স্বাভাবিক ভাবে মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ উপরে চলে গেলো।

রুমে এসেছে কিছুক্ষণ হলো।খোঁপা করে রাখা লম্বা চুলগুলো খুললো আঁচড়ানোর জন্য।তখুনি দরজার ফ্যাচফ্যাচ শব্দে তড়িঘড়ি মাথায় কাপর দিলো এলেমেলো ভাবে।আরহাম এসেই হাফসার সামনে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ আপনার কি মন খারাপ?’

হলো তো।বুঝে গেলেন।কেনো মুখ ফুটে বলবো?কিছু কিছু কষ্ট থাকুক আমার ব্যাক্তিগত।

হাফসা স্বভাবসুলভ হেসে বলে, ‘জ্বি না।মন খারাপ না।’

মিথ্যে বলতে গলাটা কেমন ধরে যায়।হাফসা কাঁচের জগ থেকে একগ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।উনি এখনো দাঁড়িয়েই রয়েছেন।

‘দোতলায় যে আর কেউ থাকে না।ভয় করবে না তো?’

‘উহু।’

‘পর্দা সরলে ভয় পাবেন না তো।’

‘বারান্দায় যাওয়ার দরজা লাগিয়ে দিব।’

‘গুড।’

উনি বিছানার পাশের বক্সটায় এগিয়ে গেলেন।জগ থেকে পানি ঢেলে গ্লাসে কিছু একটা খুঁজলেন তীক্ষ্ণ নজরে।হাফসা বোকার মতো তাকিয়ে আছে উনার দিকে।অবশেষে কাঙ্ক্ষিত চিহ্নটা পেয়ে হাফসার ঠোঁট লাগানো গ্লাসের অংশে ঠোঁট লাগিয়ে পানি খেলেন।

উঠে এসে বললেন, ‘তাহলে যাই।ঘুমিয়ে পড়ুন আপনি।’

‘আচ্ছা।’

ফিরে গিয়েও উনি কাছে এগিয়ে আসলেন।মাথায় অগোছালো করে রাখা ওরনাটা একটু সরিয়ে ছোট চুলগুলো নিজের আঙ্গুল দিয়ে কপালে এলোমেলো ফেলে দেখলেন এখন বেশী সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে।কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে হুট করে কপালে উষ্ণ স্পর্শ এঁকে দিলেন।অতপর ওর কানের কাছে ওষ্ঠ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন,

‘আমি কিন্তু বুঝি আপনাকে।আমার থেকে মন খারাপ লুকানোর চেষ্টা করবেন না।যদিও আপনি খুব নিঁখুত অভিনয় করতে পারেন।’

হাফসা ধরা খেয়ে আর মাথা তুললো না।উনার হালকা হাসার শব্দ শোনা গেল।তারপর ধূপধাপ আওয়াজ শোনা গেলো।মানে উনি চলে গেলেন।হাফসা গালে হাত দিলো যেখানটায় উনি ঠোঁট ছুঁইয়ে গেলেন।একরাশ লজ্জা এসে ভর করলো মুহুর্তেই।অতপর নিজেকে কয়েকটা ঝাড়ি দিয়ে বলল,
‘ইসসস লজ্জা কেন পাচ্ছি।উনি তো এখন নেই।’

এসব ভেবে বিছানায় শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতেই হঠাৎ দিনে বলা মাইমুনার কথাগুলো মনে পড়তেই মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো।সয়ে নিলো,মেনে নিলে সব অপমান,অভিযোগ।নীরবে সব কষ্ট মেনে নেওয়ার এক অসীম ক্ষমতা নিয়ে যে সে জন্মিয়েছে।

(২৬)
______
আজ শুক্রবার।সবার একসাথে দেখা হলো নাস্তার টেবিলে।দূজনের পরনে সাদা রঙ্গের পোষাক।কাকতালীয়ভাবে হয়তো মিলে গেছে।কিন্তু একসাথে দারুণ মানাচ্ছে উনাকে আর আপুকে।

আরহাম মিষ্টি হেসে সালাম দিলেন।আজকে বেশীরভাগ আইটেমই বিফ মিক্সড।অথচ হাফসা বিফ খায় না।আরহাম এজন্য ভেজিটেবল স্যালাদ আর স্যান্ডউইচ মিক্স করে খাওয়াচ্ছেন তাকে।এই দৃশ্য টা সামনে থেকে সহ্য হলো না মাইমুনার।তাই রাগে অর্ধেক খাবার খেয়েই রুমে চলে গেলেন।

******
হাফসার রুমের ওয়াশরুম যথেষ্ট মাপের বড় হওয়ায় ওয়াশিং মেশীন ওয়াশরুমেই।এককোণায় ওয়াশিং মেশিন,তারপর বেসিন,তারপর সাওয়ারের জায়গা,বাথটব।তারপর দরজা খুললে ওয়াশরুম।

হাফসা একগাদা কাপর নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকতে দরজা আনলক করতে চাইলো কিন্তু খুললোই না।বালতি রেখে আবার একটু জোরে চাপ দিতেই খুলে গেলো। বালতি নিয়ে ভেতরে ডুকে সামনে তাকাতেই চরমভাবে হকচকিয়ে গেল।আরহাম ওয়াশরুমে ছিলেন।হাফসা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলে, ‘সরি সরি মিস্টেক।আমি চলে যাচ্ছি।’

‘উহু দাঁড়ান।’

হাফসা ওভাবেই চুপচাপ দাঁড়াতেই উনি এগিয়ে এলেন।একেবারে সামনে এসে একহাতে ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললেন, ‘ভয় পেয়েছেন?’

হাফসা চোখ খুলতেই সামনাসামনি উনার লোমশ বুক স্পষ্ট হলো।পরনে কালো গেবাটিন প্যান্ট।মাথায় শ্যাম্পু দেওয়া।কপাল পর্যন্ত ফেনা চলে আসছে।শ্যাম্পু চোখে লাগায় চোখমুখ কুঁচকে বললেন, ‘ডোর কি আনলক ছিলো?’

‘জ্বী একটু চাপ দিতেই খুলে গেল।’

চোখেমুখে পানি দিয়ে এসে বললেন,
‘ওহ তাহলে মে বি লক হয়নি।আমার রুমের লাইনে পানি আসছে না।তাই আসছি এখানে।’

‘যাই আমি?’

‘নাহ।আসছেন যখন থাকুন।’

‘ম্ মানে?’

‘আমার চুলে শ্যাম্পু ব্রুশ করে দিন।’

‘আমি?’

‘আপনি।’

উনার খালি বুকে তাকাতে হাফসা লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছিলো।উনি চিবুক ধরে বললেন, ‘লজ্জাবতী লাজুকলতা এত সাইনেস কই থাকে?এত্তো সাইনেস নিয়ে পিচ্চি হয়ে এত বড় মানুষকে বিয়ের চিঠি দিয়েছিলেন কীভাবে হুমম?’

‘জ্ জানিনা।আবেগ ছিলো।’

‘আবেগ ছিলো মানে?আমাকে ভালোবাসেন না?’

(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।