22★
‘আচ্ছা আমি ভাবছি আরহাম কি আমাকে থাকতে দেবে?বাসায় তো কুমারী বউ।’
‘যদি বলো তাহলে মানা তো করবেন না।বাট হাফসাকে আড়াল করে দিবেন।’
‘তাহলে?কেমনে কি হবে?’
‘সেটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।’
রুদ্র আর কথা বাড়ালেন না।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন দোতলায় হাফসার রুমের দিকে।
_______
কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বাজলো।হাফসা কলিং বেলের শব্দে বারান্দায় বেরোলো।দোতলা থেকে দেখছে আশেপাশে কোনো ম্যাড নেই।কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে। দরজা কেন কেউ খুলছে না।মায়ের শরীর ভালো না,তাই শুয়ে আছেন।ওষুধ খেয়ে ঘুমালে উনি লম্বা ঘুম দেন।কিন্তু আপু তো গিয়ে খুলতে পারেন।আর সার্ভেন্ট?সবাই গেল কোথায়?
হাফসা তড়িঘড়ি করে আবায়া পড়ে মুখ ঢেকে নিচে নামলো।দরজা খুলতেই ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ নিয়ে ডুকলেন আরহাম।হাফসাকে দেখে সালাম বিনিময় করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে এসছে?’
হাফসা কিছু বলতে যাবে অমন সময় পাশের রুম থেকে ওই অপরিচিত আগন্তুক কে দেখে হাফসা চুপচাপ রুমে চলে গেলো।
আরহাম রুদ্রকে দেখে বেশ অবাক হলেন বটে।তবুও সালাম দিলেন।
‘সরি।চিনতে পারলাম না আপনাকে।’
‘আমি রুদ্র।মাইমুনার মামা।’
আরহাম কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করে পরক্ষণেই জোরপূর্বক হেসে বলেন, ‘ওও আই সী।অনেকদিন পর দেখলাম আপনাকে।’
‘হুমম তেহরান থেকে আসলাম গত সপ্তাহে।’
‘ওহ।আচ্ছা বসুন আপনি।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
‘ওকে।’
_______
আরহাম নিজের রুমে যাওয়ার আগে হাফসার রুমে গেলেন।জিজ্ঞেস করলেন,
‘উনি কখন আসছেন?’
‘একঘন্টা হবে।’
‘ডোর কে খুলে দিয়েছিলো?’
‘আ্ আ আমি।’
আরহাম রাগতস্বরে বললেন, ‘কেন?আপনিই কেন?সার্ভেন্ট ছিলো কেন?উনাদের কেন রাখা হলো তাহলে?’
‘শুনুন।শান্ত হোন আগে।’
‘কীভাবে শান্ত হবো?হাউ?’
‘আমি যেতে চাইনি।কারন এটা আপনার আসার সময় ছিলো না।কিন্তু আপু ডেকে বললেন, আপনি এসছেন ডোর খুলতে।আমি অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু কোনো ম্যাড আসেনি দরজা খুলতে,তাই আমি গিয়েছি।’
‘উনি আপনার ফেইস দেখেছেন?’
‘অস্পষ্ট দেখলে দেখতে পারেন।ভালো করে তাকানোর আগে মুখ ডেকে নিয়েছিলাম।’
আরহাম বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। উনি খুব রেগে আছেন বোঝাই যাচ্ছে।
____
‘কি রে তর হাজবেন্ড তো আমাকে চিনেই নি।তাহলে কি থাকতে দিবে?’
‘উফফ মামা তুমি টেনশন করো না তো।আরহাম খুবই ভালো।’
‘জানি।’
‘হাফসাকে ধরা মুখের কথা না।আমার ছাঁয়া দেখার আগেই পালিয়ে বেড়ায়।’
‘কতক্ষণ পালিয়ে বেড়াবে?আরহাম যখন বাইরে থাকেন তখন তো ও একা।’
‘তাহলে কেমনে কি করতে হবে?ভাবলি কিছু?’
‘প্ল্যান তো ফাইনাল মামা।বাট ভাবনা টা আরো পাকাপোক্ত করতে চাই।কারণ এক খেলা’ই যে হবে শেষ খেলা।প্রথম খেলায়ই বাজিমাত।’
‘প্ল্যানমতো যদি আরহাম হাফসাকে ডির্ভোস দিয়ে দেয়,তাহলে তো হাফসা আমার।’
‘বুঝলাম না মামা।’
‘প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে গিয়েছে তর মামা।যেকোনো মূল্যে ওকে চাই আমার।আমার স্বার্থের জন্য হলেও ওকে আমার লাগবে।’
‘কিন্তু আরহাম…
মাইমুনা কে মাঝ পথে আটকে যেতে দেখে রুদ্র বললেন, ‘কি হলো বল।আরহাম কী?’
মাইমুনা দরজার পানে একবার চেয়ে রুদ্রর পানে একবার চেয়ে তৎক্ষনাৎ মুখ ঢেকে নিলেন।
রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে দরজায় আরহামকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে বসলেন।সৌজন্যেমূলক হাসি দিয়ে মাইমুনার পাশ থেকে সরে আসলেন।খুব বেশী দূরত্ব ছিলো না এতক্ষণ দূজনের মাঝে।
‘ওহহ তুমি।মাইমুনার সাথে টুকটাক ভালোমন্দ কথা বলছিলাম।’
আরহাম শান্ত অথচ শক্ত কন্ঠে বললেন, ‘ড্রয়িংরুমে যান।’
রুদ্র মেকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে যেতেই আরহাম মাইমুনার দিকে এগিয়ে এলেন।
মাইমুনা ভয়ে কাঁপছে।আরহাম যে দৃশ্য দেখলেন তাতে উনার মাথা ঠিক রাখা সম্ভব নয় বটে।
আরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, ‘মুখটা কি আমায় দেখে ডাকলেন?’
‘ন্ না্ না মানে ওই ডেকেই রাখছিলাম কখন সরে গেলো টেরই পেলাম না।’
‘গল্পে এতই মজে ছিলেন।বাজে কথা..
৪১
‘গল্পে এতই মজে ছিলেন।বাজে কথা আমি বলতে
চাচ্ছি না।বাট আপনি আমার কথার অবাধ্য হয়েছেন,যেটা আমার কাছে সবচাইতে বেশী অপছন্দনীয়।’
মাইমুনা মাথা নিচু করে নিলেন।
‘আর আমাদের বেডরুম কি গল্প আর আড্ডা দেওয়ার জায়গা?শেইম অন ইউ।’
বলেই বেরিয়ে গেলেন আরহাম।কিন্তু মাইমুনার ভয় হচ্ছে আরহাম কি ওঁত পেতে ওদের বলা কথাগুলো শুনেছেন।যদিও আরহাম এমনটা করবেন না।তবুও ভয় হচ্ছে।
_________
‘কেমন আছো?এখন কি করছো?’
রুদ্রর প্রশ্নে আরহাম কাঠখোট্টা উত্তর দিলেন, ‘বসে আছি।’
‘না না বলতে চাচ্ছি প্যাশন কি?’
‘মাইমুনা বলেননি?উনার সাথে তো গল্প করছিলেন এতক্ষণ।’
আরহামের এমন কাঠখোট্টা জবাবে মিইয়ে গেলো রুদ্র।আমতা আমতা করে বলল, ‘ন্ না,আসলে এটা জিজ্ঞেস করা হয় নি।’
একজন সার্ভেন্ট এসে অরেন্জ দিতেই উনি হাফসার রুমের দিকে তাকালেন।ঢকঢক করে পুরো গ্লাস অরেন্জ খেয়ে নিজেকে শান্ত করলেন সময় নিয়ে।
অতপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কিছু খেয়েছেন?নাস্তা দিতে বলব?’
‘না না, আমি খেয়েছি।’
দিনকাল কেমন চলছে?বেয়াইনকে দেখলাম না আসার পর থেকে?উনি কোথায়?’
‘উনি পুরুষ মানুষের সামনে বের হন না।’
‘ওহ সরি।ভুলে গেছি।’
‘বলছিলাম একটা রিকুয়েষ্ট ছিলো।যদি তোমার আপত্তি না থাকে তাহলে মানে আপনার আপত্তি না থাকলে করতাম।’
‘আমকে ‘তুমি’ করে বলাটাই ভালো মানাচ্ছে।’
‘তা কী করে হয়?আপনি তো আমার বড় হবেন?’
‘কি যেন বলছিলেন?রিকুয়েষ্ট? কি রিকুয়েষ্ট বলুন?’
‘এখানে কিছুদিন থাকতে চাই।’
আরহাম ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।
‘মানে বলছিলাম ঢাকায় আমার কোনো রিলেটিভ নেই।আর কাজটা বেশ ক’দিনের।জার্নি করে যাওয়া আসা সম্ভব নয়।তাই ভাবলাম আপনাকে বলে দেখি।’
আরহাম কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলেন, ‘থাকুন যতদিন কাজ না শেষ হয়।’
রুদ্র উৎফুল্ল হয়ে বললেন, ‘সত্যি?’
‘আমি মিথ্যে বলি না।’
আরহামের সোজাসুজি এমন কথায় রুদ্র দমে গেলেন।
‘আপনার কী কাজ এখানে?জানতে পারি?যদি আপত্তি না থাকে?
‘ই ইয়ে মা মানে ওই ওই ওই…
‘ওই?’
‘ওই কিছু স্ সপিং ছিলো।’
‘ওহ আচ্ছা।থাকুন।যা লাগে বলবেন।’
‘ওকে।’
________
হাফসা আধশোয়া হয়ে শুয়ে শুয়ে সিরাতের বই পড়ছিলো এমন সময় আম্মু এসে হুট করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাসায় পুরুষ দেখলাম।তুমি দেখেছো?কে সে?’
‘চিনতে পারিনি আমি।উনি কথা বললেন দেখলাম।’
‘হুটহাট না জানিয়ে, চিনলাম ও তো না কে….’
‘মাইমুনার ছোটমামা।ইরান থাকতেন যে।’ পিছন থেকে আরহাম বলে উঠলেন।
‘ওহহ।একবার দেখেছিলাম অনেক আগে।এখন মনে পড়েছে।’
আরহাম বিছানায় বসতে বসতে বললেন, ‘উনি থাকবেন কয়েক দিন এখানে।’
‘মানে কি?তুমি থাকতে দিয়েছো?’
‘হুমম।’
‘কেন দিলে?বাসায় কোনো পুরুষ মানুষ নেই।তুমি বাইরে থাকো।যুবতী দূই মেয়ে নিয়ে আমি কীভাবে থাকবো?’
‘কিন্তু আমি কি করবো আম্মু?মুখের ওপর তো না করে দেয়া যায় না।আমি চাই না উনি থাকুক এখানে।’
‘এখন…
‘আপনি ফুপির বাসায় চলে যান উনাদের নিয়ে।আমি একা থাকব।’
‘কেন?তার জন্য আমরা ঘর ছাড়বো কেন?সে ও কি বুঝলো না ঘরে মেয়েমানুষ আছে?’
‘জানেন নিশ্চয়ই।’
‘তবুও?’
‘বাদ দিন।উনি আসছেন কদিন থেকে চলে যাবেন।আপনারা কাল চলে যাবেন ফুপির বাসায়।’
‘কিন্তু তুমি একা…
‘পারবো।’
________
মা চলে গিয়েছেন কিছুমুহুর্ত হলো। আরহাম বিছানার এক মাথায় আর হাফসা এক মাথায় বসে আছেন।
হাফসা আরহামের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায়।হাফসা চোখ নামিয়ে নেয় সাথে সাথে।আরহাম শীতল কন্ঠে বললেন, ‘আপনাকে না দেখে থাকতে কষ্ট হবে আমার।’
______
রুদ্র গেস্ট রুমে বসে ফোনে কিছু একটা করছিলেন। আরহাম নক করতেই বলে উঠলেন,
‘ওহ আপনি।আসেন ভেতরে।’
‘ডিনার রেডি করা হয়েছে আসুন।’
‘আসছি।’
_________
ডিনার করতে করতে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,, ‘বেয়াইন , হাফসা, মাইমুনা ওরা কোথায়?’
রুদ্রর মুখে ‘হাফসা’ নাম শুনে মাথায় আগুন ধরে গেলো আরহামের।গ্লাস থেকে পানি খেয়ে নিজেকে যথাসম্ভব সামলে বললেন, ‘ঘরে।’
‘ডিনার করবে না উনারা?’
‘পরে করবেন।’
‘ডাকতেন।একসাথে করে নিতাম।’
আরহামের চরম রাগ উঠলো।আগে ড্রয়িংরুমেও একবার বলেছেন উনারা পুরুষ মানুষের সামনে বের হন না।তবুও আবার একই প্রশ্ন?’
কিছুক্ষণ হলো আরহাম কোনো উত্তর দিচ্ছেন না দেখে রুদ্র পুনরায় একই প্রশ্ন করলো।
আরহাম এবার বেশ রূঢ় কন্ঠে বললেন, ‘আমার আম্মু আর ওয়াইফ উনারা দূইজনের কাছে আপনি নন-মাহরাম।আর মাইমুনা উনাদের সাথেই ডিনার করেন।’
‘ওহ সরি।’
*****
মাইমুনা আর রুদ্রকে একসাথে দেখার পর থেকে আর একটা কথাও বললেন না আরহাম।মাইমুনা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমন সময় তিনি আসলেন।
মাইমুনা কাতর কন্ঠে বললেন, ‘শাহ!আইএম সরি।প্লিজ মাফ করে দিন আমাকে।আমার ভুল হয়ে গেছে। আর এমনটা হবে না কখনো।প্লিজ ফরগিভ মি।’
‘আজ আমার রুমে থাকবেন।’বলেই আরহাম মাইমুনার মুখটা ওরনা দিয়ে ঢেকে কোলে তুলে নেন।
মাইমুনা ব্যস্তসুরে বলল, ‘উপরে কেন থাকবো?নিচে থাকলে কি সমস্যা?’
‘আমার সমস্যা।’
‘কেন?মামা নিচে থাকছেন বলে?শাহ বাই এনি চান্স আপনি কি মামাকে অবিশ্বাস করছেন?’
‘আমার ইচ্ছে হয়েছে আপনি আমার রুমে থাকবেন ব্যাস এর বেশী কিছু না।’
মাইমুনা যেতে যেতে দেখলো আম্মুও হাফসার রুমে ঘুমুচ্ছেন।এটা দেখে মাইমুনার যা বোঝার বুঝা হয়ে গেছে।কিন্তু চিন্তা হচ্ছে আরেকটা।প্ল্যানটা সাকসেসফুল হবে তো।আরহাম যথেষ্ট কেয়ারিং উনার প্রিয়জনদের প্রতি।
(৪২)
23★
তাহাজ্জুদের সময়টাও নিকটে।পানির তৃষ্ণাও পেয়েছে খুব।আরহাম দরজা খুলে বেরোতেই একটা অবয়ব চোখে পড়লো।রাতে করিডোরের লাইট তো জ্বালানো থাকে।তাহলে নিভানো কেন?আর অবয়ব টাই বা কে?আরহাম আর হাফসার রুমের দূরত্ব খুব বেশী নেই।হাফসার রুমের সামনে থেকে অবয়ব টা হুট করে কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো।অন্ধকারে সুইচ বোর্ড হাতড়েও লাভ হলো না।রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি ফোন এনে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে করিডোরের লাইট অন করলে কাউকে দেখলেন না।নিচে নেমে আশপাশ চেক করলেন। কিছু একটা ভেবে রুদ্রর রুমের দিকে গেলেন।কিন্তু রুম ভেতর থেকে লক করা।পানি খেয়ে সন্দেহী মন নিয়েই উপরে উঠলেন।হাফসার রুম খোলা রয়েছে, দরজা আটকানো।আরহাম ফ্ল্যাশ নিয়ে রুমে ডুকলেন।হাফসার মাথার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেন। নিশ্চিন্ত হয়ে বেরোতে চেয়েও আটকে গেলেন।
হাফসার কানের কাছে গিয়ে ডাকলেন, ‘উমায়ের।’
কয়েকবার ডাকার পর হাফসা চট করে চোখ খুলে উঠতে গেলেই আরহাম বলেন, ‘আমি আমি,ভয় পাবেন না।’
‘ক্ ক্ কয়টা বাজে?’
‘সাড়ে তিনটা।দরজা টা লক করে নিন ভেতরে থেকে।এটাই বলতে আসছিলাম।’
________
সকালবেলাও আলাদা নাস্তা হলো।মাইমুনা ছক কষছেন কু-বুদ্ধির।আরহাম বাসায় থাকতে থাকতেই যা করার করতে হবে।হাফসা ড্রয়িং রুমে এসছিলো কোনো প্রয়োজনে।হুট করে পাশের রুম থেকে মাইমুনার কন্ঠের মৃদু চিৎকার শুনতেই হাফসা ভয় পেয়ে যায়।আরহাম উপরে রুমে। আম্মু বাগানে।কাউকে ডেকেও পাওয়া যাবে না।গুটি গুটি পায়ে রুমের দিকে এগোলো।রুমটা অন্ধকার।ভয়ে ভয়ে ‘আ্ আ্ আপু’ বলে রুমের ভেতর পা রাখতেই একজোড়া শক্ত হাত ওকে টান মেরে ভেতরে ডুকিয়ে নিলো।চিৎকার করার আগেই মুখ চেপে ধরলো কেউ।হাফসার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।সবচেয়ে অভিশপ্ত মুহুর্ত যেনো সামনে পথ চেয়ে আছে।স্পর্শ টা খুব খারাপ।একহাত হাফসার দূহাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে চেপে আছে।আরেকহাতে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় মুখ চেপে আছে কেউ।একটু পরই দরজা লাগানোর শব্দ হলো।শক্তপোক্ত এক ধাক্কায় হাফসার শরীর গিয়ে ঠেকলো দেয়ালে।নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে কেউ ওর গালে আলতো হাত বুলাচ্ছে।হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে হাফসা নিস্তেজ হয়ে আসছে।চোখ বেয়ে পড়া পানি সেই মানবের হাতের পিঠ বেয়ে যাচ্ছে। একজোড়া অশুভ ওষ্ঠদ্বয় ওর গাল,কপালে ছুঁয়ে দিলো।ঠিক এইমুহুর্তে ওর মনে হলো, এ মুহুর্তের আগে মৃত্যু শ্রেয় ছিলো।
ওই শক্ত হাতজোড়া হাফসাকে আরো এগিয়ে নিলো টান দিয়ে। দেয়াল থেকে যেই সরে এলো অমনি পেছন থেকে কয়েকটা ফ্লাশ ভেসে গেলো।সেই ফ্লাশের আধো আলোয় হাফসা লোকটাকে স্পষ্ট দেখতে পেয়ে চমকে গেলো।
________
দরজা খোলার শব্দে হাফসার মনে আশার আলো জাগে।কিন্তু এটাই যে জীবনের সবচেয়ে কঠিন তিক্ততা আর মিথ্যের জাল সেটা জানা ছিলো না হাফসার।
কেউ রুমে আসার শব্দ শুনতেই হাফসার হাত আলগা করে দিলো।অতিরিক্ত রাগে,ভয়ে, ঘৃণায় সারা শরীর তিরতির করে কাঁপছে ওর।
আরহাম এগিয়ে এসে তাকে পরখ করে চমকে গেলেন।
কাঁদছেন কেন উমায়ের?ওর গালে হাত রেখে ব্যাকুল গলায় বলেন, ‘উমায়ের ঠিক আছেন?আপনি এখানে আসলেন কীভাবে?’
হাফসার মনে হলো এটা সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা আরহামের সামনে নিজেকে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা।গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।বলতে ইচ্ছে করছে, আমাকে একটা অশুভ গায়রে মাহরাম স্পর্শ করেছে!
হাফসা কান্না আটকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে মাইমুনার বিদ্রুপতা মিশানো কন্ঠে ভেসে আসে, ‘আমি হাফসাকে দেখলাম এই রুমে ডুকতে।তুমি তো জানতে হাফসা মামা যে এই রুমে থাকছেন।’
হাফসা তড়িৎ বেগে চোখ তুলে তাকালো মাইমুনার দিকে।এমন একটা মিথ্যে কথা বলতে পারলেন উনি।
রুদ্র মাথা নিচু করে বললেন, ‘আমার কোনো দোষ নেই।হাফসা আমার রুমে আসছিলো, আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই দরজা বন্ধ….
কথাগুলো একদমে বলে ওঠার পরপরই ঠাস করে বামের গালে পাঁচ আঙ্গুলের চড় পরে।
(৪৩)
কথাগুলো একদমে বলে ওঠার পরপরই ঠাস করে বামের গালে পাঁচ আঙ্গুলের চড় পরে রুদ্রের।আরহাম রুদ্রর কলার ধরে তেজী কন্ঠে বললেন, ‘হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ হার।উমায়ের কে স্পর্শ করার সাহস কি করে হলো আপনার।আপনাকে তো আমি মেরে ফেলবো…বলে রুদ্রর গলা টিপে ধরতে মাইমুনা আর হাফসা পেছন থেকে জোর করে টানতে টানতে একপর্যায়ে সরালো আরহামকে।রাগে উনার শরীর কাঁপছে,কপালের শিরাগুলো ফুলে ঢিপঢিপ করছে।
রুদ্র গলায় হাত দিয়ে খুঁসখুঁস করে কাশছে। মাইমুনার দিকে কয়েকবার অস্থির চাহনী দিয়ে আরহামকে ইশারায় পেছনের ক্যামেরা দেখালো।
রুদ্র ভাঙা গলায় বলে ওঠলো, ‘আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না?কাবার্ডের ওপর আমার ক্যামেরা রাখা আছে।আমি লাইভ রেডি করছিলাম।ছবি উঠলে উঠতে পারে।’
‘আই কিল ইউ ব্লাডি বিচ।আর একটা কথাও…
আরহাম আবারো রুদ্রর দিকে তেড়ে যেতে চাইলে দূজনে জোর করে উনার হাত ধরে আটকালো।
‘প্লিজ শান্ত হোন।রাগ কমান আপনার।’
মাইমুনা বললেন, ‘শাহ আপনি রাগ কমান।আমারও মনে হয় হাফসা অমন কিছু করবে না।ক্যামেরা দেখে সিউর তো হই আগে।’
_______
হাফসা আবায়া নিকাব পড়ে নিচে এসেছে।ও এখনো কাঁপছে।মিনিট কয়েক পর পর চোখের পড়া পানিগুলো মুছে নিচ্ছে তৎক্ষণাৎ।একটু আগের ঘটনাটা ওর জীবনের সবচেয়ে নৃশংস একটি ঘটনা।এত সহজে এর রেশ তো কাটবেই না।আরহাম রুদ্রকে সামনে আসতেও কঠোরভাবে মানা করেছেন।ক্যামেরার ছিপ ল্যাপটপে লাগাতেই কিছুক্ষণ পর ভাসমান হয় কিছু অনা*কাঙ্খিত ছবি।পেছন থেকে তুলা হয়েছে তাই বুঝা যাচ্ছে হাফসা রুদ্রকে হয়তো জড়িয়ে ধরেছে বা অন্যকিছু।আরহাম সাথে সাথে ল্যাপটপ বন্ধ করে নিলেন।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বুজে আছেন।উনি বিশ্বাস করেন না,উমায়ের এমন করতে পারেন।
মাইমুনা আরহামের রাগ বুঝে চলে যেতেই আরহাম হাফসার মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘ঠিক এই মুহুর্ত থেকে আমি আপনাকে হেইট করি।আমার একার পৃথিবীটা চুরমার করে দিয়েছেন উমায়ের।ইউ উইল নেভার কাম ইন ফ্রন্ট ওফ মি এগেইন।গেট এওয়ে ফ্রম মি প্লিজ প্লিজ।’
আরহাম রেগে কথাগুলো বললেও উনার চোখে পানি চিকচিক করছে।উনার ঝাপসা চোখগুলো দৃষ্টি দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে শত অভিযোগ,শত রাগ।হাফসা সোফায় বসে পড়েই দূহাতে মুখ ডেকে নিঃশব্দে কাঁদছে।
‘ও মাই আল্লাহ।বারেবার আমার সাথেই কেন এমন হয়?কেন উনি বারবার আমাকে ভুল বুঝেই চলেছেন।আমি এসবের থেকে মুক্তি চাই।আমাকে কেউ বিশ্বাস করবে না জানি।তবে আপনি তো জানেন আমি কিছু করিনি।একটু ধৈর্য দিন।আমি এখান থেকে মুক্তি চাই।সেই পর্যন্ত একটু ধৈর্য দিন প্লিজ।’
আম্মুকে বাইরে থেকে আসতে দেখে হাফসা রুমে চলে যায়।বিস্ময়কর হলেও মা এসবের কিছুই জানেন না।উনি এতক্ষণ গার্ডেনে ছিলেন।
আরহামে রাগে-জিদ্দে ঘরের সমস্ত জিনিস এলোমেলো করে ন্যস্ত হয়েছেন।বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঝড় বইছে।
‘উমায়ের কেন এমন করলেন?আমি কোনদিকে উনাকে কম দিচ্ছি।এরকম নিচ কাজ কেন করলেন। সবকিছুর পরেও আমি তো আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম।আর তাঁর বিনিময়ে আপনি আমাকে সবচেয়ে বড় আঘাতটা দিলেন।কেন?উমায়ের আপনাকে কঠিন কথা বলতে আমার খুব কষ্ট হয়।কথাগুলো গলাতে আটকে যায়।কথার আঘাতে আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি।বাট এইসব কীভাবে মেনে নিব?’
চোখ থেকে বেয়ে পড়া অবাধ্য জলগুলো কনুইয়ের পিঠ দিয়ে মুছে দেয়ালে মাথা ঠুকে রইলেন।বারবার নাক টানার শব্দ শোনা যাচ্ছে।দেট মিনস আরহাম এখনও কাঁদছেন।
নোট📌
(কারো প্ররোচনায়,বা কোনো প্রিয় জিনিসের লোভে বিবেক বিসর্জন দিবেন না।কজ মানুষের বিবেক বলতে যখন কিছুই অবশিষ্ট থাকে না,তখন সে নিচ কাজ করতেও দ্ধিধাবোধ করে না।গল্প থেকে কেউ ভুল শিক্ষা নিবেন না।)
(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)